সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ওবদিয়, যোনা ও মীখা বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

ওবদিয়, যোনা ও মীখা বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

ওবদিয়, যোনা ও মীখা বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

 “ওবদিয়ের দর্শন।” (ওবদিয় ১) এই কথাগুলো দিয়েই বাইবেলের ওবদিয় বইটি শুরু হয়। ভাববাদী তার নাম ছাড়া নিজের বিষয়ে এই বইয়ে আর কিছুই প্রকাশ করেননি, যে-বইটি তিনি সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে লিখেছিলেন। এর ২০০ বছরেরও বেশি আগে লেখা সম্পূর্ণ হওয়া একটি বইয়ে ভাববাদী যোনা তার মিশনারি কার্যভারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অকপটভাবে বর্ণনা করেন। মীখার ৬০ বছরের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কাজ ওবদিয় ও যোনার সময়ের মাঝে সংঘটিত হয়েছে, যা সা.কা.পূ. ৭৭৭ সাল থেকে সা.কা.পূ. ৭১৭ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বইয়ে, মীখা নিজের সম্বন্ধে কেবল এইটুকুই বলেন যে, তিনি “মোরেষ্টীয় [গ্রামের]” আর “যিহূদা-রাজ যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের সময়ে” যিহোবার বাক্য তার কাছে উপস্থিত হয়েছিল। (মীখা ১:১) তার বার্তার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য তিনি যেধরনের দৃষ্টান্তগুলো ব্যবহার করেন, সেগুলোতে ভাববাদী যে গ্রাম্য জীবনের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, তা স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়।

ইদোম “চিরকালের জন্য উচ্ছিন্ন হইবে”

(ওবদিয় ১-২১)

ইদোমের বিষয়ে ওবদিয় বলেন: “তোমার ভ্রাতা যাকোবের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্য প্রযুক্ত তুমি লজ্জায় আচ্ছন্ন হইবে ও চিরকালের জন্য উচ্ছিন্ন হইবে।” যাকোবের সন্তানদের অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে ইদোমীয়দের সাম্প্রতিক দৌরাত্ম্যমূলক কাজগুলোর বিষয় ভাববাদীর মনে স্পষ্টভাবে গেঁথে রয়েছে। সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলীয়রা যখন যিরূশালেম ধ্বংস করেছিল, তখন ইদোমীয়রা ‘অন্য পক্ষে দাঁড়াইয়াছিল’ এবং তারা আক্রমণকারী ‘বিজাতিদের’ সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছিল।—ওবদিয় ১০, ১১.

এর বিপরীতে, যাকোবের কুলের জন্য এক পুনর্স্থাপন অপেক্ষা করছে। ওবদিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী এভাবে বলে: “সিয়োন পর্ব্বতে পলাতক দল থাকিবে, আর তাহা পবিত্র হইবে।”—ওবদিয় ১৭.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৫-৮—রাত্রিকালীন বিনাশকদের এবং দ্রাক্ষা-সংগ্রহকারীদের আসার সঙ্গে ইদোমের ধ্বংস সম্বন্ধে তুলনা করার তাৎপর্য কী? যদি ইদোমে চোর আসত, তা হলে তারা শুধুমাত্র ততটুকুই নিয়ে যেত, যতটুকু তারা নিতে চাইত। যদি শস্য ছেদকরা আসত, তা হলে তারা কুড়ানোর জন্য কিছু পতিত শস্য রেখে যেত। কিন্তু, যখন ইদোমের পতন হবে, তখন তার ধনসম্পদ পুরোপুরি অন্বেষণ করা হবে এবং “যে সকল লোক [তাহার] সহিত নিয়ম করিয়াছে” অর্থাৎ তার মিত্র বাবিলীয়রা তাকে সম্পূর্ণরূপে লুট করবে।—যিরমিয় ৪৯:৯, ১০.

১০—কীভাবে ইদোম “চিরকালের জন্য উচ্ছিন্ন” হয়েছিল? ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, পৃথিবীর একটা অঞ্চলে এক সরকার ও জনসাধারণসহ বিদ্যমান ইদোম জাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাবিলের রাজা নেবোনাইডাস সা.কা.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি সময়ে ইদোমকে জয় করেছিলেন। সা.কা.পূ. চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে নাবাটিয়ার লোকেরা ইদোমের এলাকা দখল করেছিল এবং ইদোমীয়দেরকে যিহূদিয়ার দক্ষিণ অংশে বসবাস করতে হয়েছিল। রোমীয়রা সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেম ধ্বংস করার পর ইদোমীয়রা অস্তিত্বহীন হয়ে গিয়েছিল।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৩, ৪. যেহেতু তারা উচ্চ পর্বতের এক এবড়োখেবড়ো অঞ্চল ও গভীর সংকীর্ণ উপত্যকায় বাস করত, যা যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শত্রুদের বাধা দিত, তাই ইদোমীয়রা হয়তো উদ্ধতভাবে নিজেদের সুরক্ষিত ও নিরাপদ মনে করত। কিন্তু, যিহোবার বিচার থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাওয়া যায় না।

৮, ৯, ১৫. মানব প্রজ্ঞা এবং বীরত্ব ‘সদাপ্রভুর দিনে’ কোনো সুরক্ষা জোগায় না।—যিরমিয় ৪৯:৭, ২২.

১২-১৪. ইদোমীয়রা সেই ব্যক্তিদের জন্য এক সতর্কতামূলক উদাহরণ, যারা ঈশ্বরের দাসেরা হয়তো যে-সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়, তাতে আনন্দ করে। তাঁর লোকেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হলে যিহোবা সেটাকে হালকাভাবে দেখেন না।

১৭-২০. যাকোবের সন্তানদের পুনর্স্থাপনের এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময়ে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল, যখন এক অবশিষ্টাংশ সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিল থেকে যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল। যিহোবার বাক্য সবসময়ই সত্য হয়। তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি।

“নীনবী উৎপাটিত হইবে”

(যোনা ১:১–৪:১১)

“নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর নগরের বিরুদ্ধে” এক বিচারের বার্তা “ঘোষণা কর,” ঈশ্বরের এই আদেশ পালন করার পরিবর্তে যোনা উলটো দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। “সমুদ্রে প্রচণ্ড বায়ু” পাঠিয়ে এবং “একটা বৃহৎ মৎস্য” ব্যবহার করে যিহোবা যোনার পথ পরিবর্তন করেন এবং অশূরের রাজধানীতে যাওয়ার জন্য তাকে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব দেন।—যোনা ১:২, ৪, ১৭; ৩:১, ২.

যোনা নীনবীতে প্রবেশ করেন এবং এক স্পষ্ট বার্তা ঘোষণা করতে আরম্ভ করেন: “আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।” (যোনা ৩:৪) তার প্রচার কাজের অপ্রত্যাশিত ফলাফলে যোনা “ক্রুদ্ধ” হন। যিহোবা যোনাকে করুণার বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য “এক এরণ্ড গাছ” ব্যবহার করেন।—যোনা ৪:১, ৬.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৩:৩—নীনবীর আয়তন কি আসলেই “যাতায়াত করিতে [“এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে সমস্ত জায়গায় যেতে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] তিন দিন লাগিত,” এমন পরিমাণ ছিল? হ্যাঁ। প্রাচীনকালে, উত্তরের খোরসাবাদ থেকে দক্ষিণে নিমরুদ পর্যন্ত অন্যান্য উপনিবেশ সম্ভবত নীনবীর অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে মনে করা হতো। নীনবীর অবিচ্ছেদ্য এইসমস্ত উপনিবেশ ১০০ কিলোমিটার পরিধির এক চতুর্ভুজাকার ক্ষেত্র গঠন করেছিল।

৩:৪—নীনবীর লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য যোনাকে কি অশূরীয় ভাষা শিখতে হয়েছিল? যোনা হয়তো আগে থেকেই অশূরীয় ভাষা জানতেন অথবা তিনি হয়তো অলৌকিকভাবে এই ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। আরেকটা সম্ভাবনা হল যে, তিনি তার সংক্ষিপ্ত বার্তা ইব্রীয় ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন আর কেউ একজন তার জন্য অনুবাদ করেছিলেন। যদি শেষের বিষয়টা ঘটে থাকে, তা হলে তার কথাগুলো তার বার্তার বিষয়ে আরও বেশি কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছিল।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:১-৩. রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করা এড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যান্য কাজের তালিকা করাটা এক খারাপ উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়। রূপক অর্থে বললে, যে-ব্যক্তি তা করেন, তিনি ঈশ্বরদত্ত কার্যভার থেকে পলায়ন করেন।

১:১, ২; ৩:১০. যিহোবার করুণা কোনো জাতি বা বর্ণ অথবা কোনো বিশেষ দলের লোকেদের প্রতি সীমাবদ্ধ নয়। “সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।”—গীতসংহিতা ১৪৫:৯.

১:১৭; ২:১০. একটা বৃহৎ মৎস্যের পেটে যোনার তিন দিন ও তিন রাতের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে যিশুর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানকে নির্দেশ করে।—মথি ১২:৩৯, ৪০; ১৬:২১.

১:১৭; ২:১০; ৪:৬. যিহোবা যোনাকে উত্তাল সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এ ছাড়া, ঈশ্বর “এক এরণ্ড গাছ নিরূপণ করিলেন; আর সেই গাছটী বাড়াইয়া যোনার উপরে আনিলেন, যেন তাঁহার মস্তকের উপরে ছায়া হয়, যেন তাঁহার দুর্ম্মতি হইতে তাঁহাকে উদ্ধার করা হয়।” যিহোবার বর্তমান দিনের উপাসকরা তাদের সুরক্ষা ও উদ্ধারের জন্য তাদের ঈশ্বরের ওপর এবং তাঁর দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়ার ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করতে পারে।—গীতসংহিতা ১৩:৫; ৪০:১১.

২:১, ২, ৯, ১০. যিহোবা তাঁর দাসদের প্রার্থনা শোনেন এবং তাদের বিনতির প্রতি মনোযোগ দেন।—গীতসংহিতা ১২০:১; ১৩০:১, ২.

৩:৮, ১০. সত্য ঈশ্বর যে-অমঙ্গলের বিষয়ে বলেছিলেন, “তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন” বা তাঁর মন পরিবর্তন করেছিলেন আর তিনি “তাহা করিলেন না।” কেন? কারণ নীনবীর লোকেরা “আপন আপন কুপথ হইতে বিমুখ হইল।” একইভাবে আজকে, ঈশ্বরের প্রতিকূল বিচার এড়ানো যেতে পারে, যদি একজন পাপী অকৃত্রিম অনুতাপ প্রকাশ করেন।

৪:১-৪. কোনো মানুষই ঈশ্বরের স্নেহ বা করুণাকে সীমিত করতে পারে না। আমাদেরকে যিহোবার করুণাপূর্ণ পথের বিষয়ে সমালোচনামূলক না হওয়ার জন্য সতর্ক থাকা উচিত।

৪:১১. যিহোবা ধৈর্যের সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের বার্তা প্রচার করতে দিচ্ছেন—যেমনটা তিনি নীনবীর ১,২০,০০০ লোকের জন্য করতে দিয়েছিলেন—কারণ তিনি সেই ব্যক্তিদের জন্য দয়া অনুভব করেন, “যাহারা দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না।” আমাদেরও কি আমাদের এলাকার লোকেদের জন্য দয়া অনুভব করা এবং রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়?—২ পিতর ৩:৯.

‘তাহাদের টাক বৃদ্ধি করা হইবে’

(মীখা ১:১–৭:২০)

মীখা ইস্রায়েল ও যিহূদার পাপগুলো প্রকাশ করেন, তাদের রাজধানীর জনশূন্য অবস্থার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন এবং পুনর্স্থাপনের প্রতিজ্ঞা করেন। শমরিয়া ‘ক্ষেত্রস্থ কাঁথড়ার ঢিবীতে’ পরিণত হবে। তাদের প্রতিমাপূজারূপ কাজের কারণে ইস্রায়েল এবং যিহূদা “টাক” বা লজ্জিত হওয়ার যোগ্য। বন্দিত্বে পাঠানোর মাধ্যমে তাদের টাক “শকুনীর ন্যায়” বৃদ্ধি করা হবে। যিহোবা এই প্রতিজ্ঞা করেন: ‘হে যাকোব, আমি নিশ্চয়ই সমবেত করিব।’ (মীখা ১:৬, ১৬; ২:১২) অসৎ নেতাদের এবং কর্তব্য অবহেলাকারী ভাববাদীদের কারণে যিরূশালেমও “কাঁথড়ার ঢিবী হইয়া যাইবে।” কিন্তু, যিহোবা ‘[তাঁহার লোকদিগকে] সংগ্রহ’ করিবেন। “বৈৎলেহম-ইফ্রাথা” থেকে ‘ইস্রায়েলের মধ্যে কর্ত্তা হইবার জন্য এক ব্যক্তি’ উৎপন্ন হবেন।—মীখা ৩:১২; ৪:১২; ৫:২.

যিহোবা কি ইস্রায়েলের প্রতি অন্যায্য আচরণ করেছেন? তাঁর চাহিদাগুলো কি অত্যন্ত কঠোর? না। মূলত যিহোবা তাঁর উপাসকদের কাছ থেকে যা চান তা হল, তারা যেন “ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে” তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে। (মীখা ৬:৮) কিন্তু, মীখার সমসাময়িক লোকেরা এতটাই মন্দ হয়ে গিয়েছে যে, “তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম, সে শ্যাকুলের ন্যায়; আর যে অতি সরল, সে কন্টকময় বেড়া হইতে [মন্দ]” আর যেকেউ নিকটে আসে, তাদের কষ্ট ও যন্ত্রণা দিয়ে থাকে। কিন্তু ভাববাদী জিজ্ঞেস করেন: “কে তোমার তুল্য ঈশ্বর [সদাপ্রভু]?” ঈশ্বর পুনরায় তাঁর লোকেদের প্রতি করুণা দেখাবেন এবং ‘আপন লোকদের সমস্ত পাপ সমুদ্রের অগাধ জলে নিক্ষেপ করিবেন।’—মীখা ৭:৪, ১৮, ১৯.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২:১২—‘ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে সংগ্রহ করা’ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী কখন পরিপূর্ণ হয়েছিল? এর প্রথম পরিপূর্ণতা হয়েছিল সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে, যখন যিহুদিদের অবশিষ্টাংশ বাবিলের বন্দিত্ব থেকে তাদের নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল। আধুনিক সময়ে, এই ভবিষ্যদ্বাণী ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়। (গালাতীয় ৬:১৬) ১৯১৯ সাল থেকে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “বস্রার মেষগণের ন্যায়” একত্রে সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৩৫ সাল থেকে, ‘আরও মেষের’ “বিস্তর লোক” তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় তারা “মনুষ্য-বাহুল্যে কোলাহল” করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যোহন ১০:১৬) তারা একত্রে উদ্যোগের সঙ্গে সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

৪:১-৪—“শেষকালে” কীভাবে যিহোবা “অনেক জাতির মধ্যে বিচার করিবেন, এবং দূরস্থ বলবান জাতিদের সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করিবেন”? “অনেক জাতি” এবং ‘বলবান জাতি’ অভিব্যক্তিগুলো জাতীয় দল বা রাজনৈতিক সত্তাকে নির্দেশ করে না। এর পরিবর্তে, এই অভিব্যক্তিগুলো সমস্ত জাতির মধ্য থেকে আসা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, যারা যিহোবার উপাসক হয়েছে। যিহোবা তাদের সম্বন্ধে আধ্যাত্মিক উপায়ে বিচার ও নিষ্পত্তি করেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:৬, ৯; ৩:১২; ৫:২. যেমনটা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, শমরিয়া সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে—মীখার জীবনকালে—অশূরীয়দের দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল। (২ রাজাবলি ১৭:৫, ৬) অশূরীয়রা হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময়ে যিরূশালেম পর্যন্ত আসে। (২ রাজাবলি ১৮:১৩) সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলীয়রা যিরূশালেমকে পুড়িয়ে দিয়েছিল। (২ বংশাবলি ৩৬:১৯) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, মশীহ ‘বৈৎলেহম-ইফ্রাথায়’ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। (মথি ২:৩-৬) যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য কখনো বিফল হয় না।

২:১, ২. আমাদের পক্ষে এটা কত বিপদজনক হবে, যদি কিনা আমরা ঈশ্বরকে সেবা করি বলে দাবি করি অথচ “তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার” পরিবর্তে প্রথমে ধনের বিষয়ে চেষ্টা করি।—মথি ৬:৩৩; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

৩:১-৩, ৫. যিহোবা আশা করেন যে, তাঁর লোকেদের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ন্যায্যভাবে কাজ করবে।

৩:৪. যদি আমরা যিহোবার কাছ থেকে আমাদের প্রার্থনার উত্তর পেতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই পাপ এবং দ্বৈত জীবনযাপন করা থেকে বিরত হতে হবে।

৩:৮. আমাদের সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্ব, যার মধ্যে বিচারের বার্তাগুলোও রয়েছে, তা একমাত্র তখনই পরিপূর্ণ হতে পারে, যদি আমরা যিহোবার পবিত্র আত্মার মাধ্যমে শক্তিশালী হই।

৫:৫. মশীহ সংক্রান্ত এই ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যখন ঈশ্বরের লোকেরা তাদের শত্রুদের কাছ থেকে আক্রমণের সম্মুখীন হয়, তখন “সাত [পূর্ণতাকে চিত্রিত করে] জন পালরক্ষক” এবং ‘আট জন নরপতি’—এক বিরাট সংখ্যক যোগ্য পুরুষ—যিহোবার লোকেদের মাঝে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ওঠে।

৫:৭, ৮. অনেক লোকের কাছে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা আজকে “সদাপ্রভুর নিকট হইতে আগত শিশিরের ন্যায়”—ঈশ্বরের কাছ থেকে এক আশীর্বাদস্বরূপ। এর কারণ হল, তিনি অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার জন্য ব্যবহার করেন। “আরও মেষ” প্রচার কাজে সক্রিয়ভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সমর্থন করার মাধ্যমে লোকেদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। (যোহন ১০:১৬) এই কাজে অংশ নেওয়া কী এক বিশেষ সুযোগ, যা অন্যদের জন্য প্রকৃত সতেজতা নিয়ে আসে!

৬:৩, ৪. আমাদের যিহোবা ঈশ্বরকে অনুকরণ করা আর এমনকি সেই ব্যক্তিদের প্রতিও দয়ালু এবং সমবেদনাপূর্ণ হওয়া উচিত, যাদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন বা যারা আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল।

৭:৭. এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষে সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়ে, আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদেরকে মীখার মতো ‘আমাদের ঈশ্বরের অপেক্ষা’ করতে হবে।

৭:১৮, ১৯. যেহেতু যিহোবা আমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করতে ইচ্ছুক, তাই আমাদেরও সেই ব্যক্তিদের ক্ষমা করার জন্য ইচ্ছুক হওয়া উচিত, যারা আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করে।

ক্রমাগত ‘যিহোবার নামে চলুন’

যারা ঈশ্বর এবং তাঁর লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা “চিরকালের জন্য উচ্ছিন্ন হইবে।” (ওবদিয় ১০) কিন্তু, আমরা যদি ঐশিক সতর্কবাণীর প্রতি মনোযোগ দিই এবং ‘কুপথ হইতে বিমুখ হই,’ তা হলে যিহোবা তাঁর ক্রোধ থেকে নিবৃত্ত হবেন। (যোনা ৩:১০) এই “শেষকালে” বা শেষ সময়ে সত্য উপাসনা সমস্ত মিথ্যা ধর্মের ওপর উচ্চীকৃত হচ্ছে এবং বাধ্য লোকেরা স্রোতের ন্যায় এর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। (মীখা ৪:১; ২ তীমথিয় ৩:১) তাই, আমরা যেন ‘যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে চলিবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।—মীখা ৪:৫.

ওবদিয়, যোনা ও মীখার বই আমাদেরকে কত মূল্যবান শিক্ষাই না প্রদান করে! যদিও ২,৫০০ বছরের বেশি আগে লিখিত হয়েছে কিন্তু এমনকি আজকেও তাদের বার্তা “জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।”—ইব্রীয় ৪:১২.

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওবদিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “[ইদোম] চিরকালের জন্য উচ্ছিন্ন হইবে”

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মীখা ‘সদাপ্রভুর অপেক্ষা করিয়াছিলেন’ আর আপনিও তা করতে পারেন

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রচার কাজ হচ্ছে এমন একটা সুযোগ, যেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করতে হবে