সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা পরিপূর্ণ হয়

যিহোবা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা পরিপূর্ণ হয়

যিহোবা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা পরিপূর্ণ হয়

 “আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই।” (যিশাইয় ৪৬:৯, ১০) যিহোবা এই কথাগুলো বলেন, যিনি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অব্যর্থভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সমর্থ।

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে মানুষের অক্ষমতার কথা সকলেই জানে। তাই, ভবিষ্যদ্বাণীর বই বাইবেল সকল সত্য অন্বেষণকারীকে এই দাবি পরীক্ষা করে দেখতে উদ্দীপিত করে থাকে যে, এটির গ্রন্থকার হলেন ঈশ্বর। আসুন আমরা বাইবেলের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বিবেচনা করি, যেগুলো ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়েছে।

প্রাচীন সভ্যতাগুলো

ঈশ্বর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ইদোম, মোয়াব, এবং অম্মোন চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে। (যিরমিয় ৪৮:৪২; ৪৯:১৭, ১৮; ৫১:২৪-২৬; ওবদিয় ৮, ১৮; সফনিয় ২:৮, ৯) স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে ওই লোকেদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া, ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যের সত্যতা প্রমাণ করে।

অবশ্য, কেউ হয়তো যুক্তি দেখাতে পারে যে, একটা জাতি যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, সেটা যে শেষপর্যন্ত অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে এই বিষয়ে যেকেউই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। কিন্তু, সেই যুক্তি এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকে উপেক্ষা করে যে, বাইবেল আরও বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে বাবিলের পতন হবে সেই বিষয়ে এটি বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেছিল। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, সেই নগর মাদীয়দের দ্বারা পরাজিত হবে, আক্রমণকারী সৈন্যরা কোরসের নেতৃত্বে আসবে এবং নগরের প্রতিরক্ষামূলক নদীগুলো শুকিয়ে যাবে।—যিশাইয় ১৩:১৭-১৯; ৪৪:২৭–৪৫:১.

তবে, সমস্ত ক্ষেত্রেই বাইবেল এই ভবিষ্যদ্বাণী করে না যে, পরাজিত জাতি বা লোকেরা চিরকালের জন্য অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। এর বিপরীতে, বাবিলীয়দের দ্বারা যিরূশালেমের পতন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় ঈশ্বর বলেছিলেন যে, সেই নগর পুনর্স্থাপিত হবে, যদিও বাবিলের নীতি ছিল বন্দিদের কখনো মুক্ত করা হবে না। (যিরমিয় ২৪:৪-৭; ২৯:১০; ৩০:১৮, ১৯) এটা পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং যিহুদি বংশধরেরা এখনও পর্যন্ত এক স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে অস্তিত্বে রয়েছে।

অধিকন্তু, যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বিশ্বশক্তি হিসেবে মিশরের পতন হবে কিন্তু “তৎপরে সেই দেশ পূর্ব্বকালের ন্যায় নিবাসবিশিষ্ট হইবে।” পরবর্তী সময়ে, এই প্রাচীন বিশ্বশক্তি “খর্ব্ব এক রাজ্য হইবে।” (যিরমিয় ৪৬:২৫, ২৬; যিহিষ্কেল ২৯:১৪, ১৫) এটাও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। এ ছাড়া, যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বিশ্বশক্তি হিসেবে গ্রিসের পতন হবে কিন্তু তিনি কখনোই বলেননি যে, এই জাতি অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। যে-সভ্যতাগুলো সম্বন্ধে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে, সেগুলোর বিলুপ্তি থেকে এবং অন্যান্য সভ্যতা যেগুলোর বিষয়ে তিনি এই ধরনের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করেননি, সেগুলোর অস্তিত্ব বজায় থাকা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? শিক্ষাটা হল ঈশ্বরের বাক্যে নিখুঁত, নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে।

বিস্ময়কর বিস্তারিত বিবরণ

ওপরে যেমন বলা হয়েছে, বাবিলের পতন যেভাবে হবে সেই সম্বন্ধে যিহোবা বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেছিলেন। একইভাবে, সোরের পতন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় যিহিষ্কেল বইটি বলে যে, এর পাথর, কাঠ এবং ধুলো “জলমধ্যে” নিক্ষেপ করা হবে। (যিহিষ্কেল ২৬:৪, ৫, ১২) সা.কা. ৩৩২ সালে এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন মহান আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনীকে দিয়ে পরাজিত নগরের মূল ভূখন্ডের ধ্বংসাবশেষ ব্যবহার করে সোরের দ্বীপ পর্যন্ত একটা পথ তৈরি করেছিলেন, যে-দ্বীপটাও পরে পরাজিত হয়েছিল।

এ ছাড়া, দানিয়েল ৮:৫-৮, ২১, ২২ এবং ১১:৩, ৪ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীও গ্রিস বা “যবন দেশের” মহান “রাজা” সম্পর্কে লক্ষণীয় বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করে। এই শাসককে তার ক্ষমতার শিখর থেকে বিচ্যুত করা হবে আর তারপর তার রাজ্য চার ভাগে বিভক্ত হবে, তবে তা তার বংশধরদের মধ্যে নয়। এই ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ করার ২০০ বছরেরও বেশি সময় পরে, মহান আলেকজান্ডার সেই বীর্যবান বা শক্তিশালী রাজা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। জগতের ইতিহাস আমাদের জানায় যে, তার অকালমৃত্যুর ফলে তিনি বিচ্যুত হয়েছিলেন আর তার সাম্রাজ্য শেষপর্যন্ত তার বংশধরদের মধ্যে নয় বরং তার চারজন সেনাপতির মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল।

সমালোচকরা দাবি করেছে যে, এই ভবিষ্যদ্বাণী নিশ্চয়ই সেই ঘটনাটা ঘটার পর লেখা হয়েছে। কিন্তু, দানিয়েল বই থেকে উদ্ধৃত ওপরের বিবরণটি আবারও লক্ষ করুন। ভবিষ্যদ্বাণীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটির বিস্তারিত বিবরণ অসাধারণ। কিন্তু এটাকে যখন এমন ইতিহাস হিসেবে দেখা হয় যেন ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করছে, তখন সেখানে কি বিস্তারিত বিবরণের প্রচুর অভাব রয়েছে বলে মনে হয় না? আলেকজান্ডারের পরে বেঁচে থাকা একজন প্রতারক যদি এক তথাকথিত ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বারা পাঠক-পাঠিকাদের অভিভূত করার চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে কেন তিনি এই বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত করেননি যে, আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর পরই তার দুই ছেলে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে কিন্তু তারা আততায়ীর হাতে নিহত হবে? কেন তিনি উল্লেখ করেননি যে, আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সেই চারজন সেনাপতি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার আগে বহু বছর কেটে যাবে? বস্তুতপক্ষে, কেন তিনি সেই মহান রাজা ও তার চারজন সেনাপতির নাম উল্লেখ করেননি?

বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ঘটনা ঘটার পর লেখা হয়েছে এই দাবি হল এমন এক দাবি, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত অথচ অপ্রমাণিত আর এই বিষয়টা এমন লোকেরা বলেছে, যারা প্রমাণ পরীক্ষা করার আগেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব। যেহেতু তারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য বলে মেনে নিতে অস্বীকার করে, তাই তারা সব বিষয়ে পুরোপুরি মানব ও বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা চায়। তা সত্ত্বেও, নিজেকে বাইবেলের গ্রন্থকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঈশ্বর বিজ্ঞতার সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেছেন। *

আপনি যদি নির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী ও সেগুলোর পরিপূর্ণতা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নেন, তাহলে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে অধ্যয়ন করুন না কেন? এই বিষয়ে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ২০০ পৃষ্ঠায় দেওয়া তালিকাটি আপনার জন্য সাহায্যকারী হতে পারে। * আপনি যদি এই পরামর্শ মেনে চলেন, তাহলে আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে এই অধ্যয়ন করুন। কেবল বিষয়বস্তু পড়ে শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। এর পরিবর্তে, উপলব্ধি সহকারে এই বিষয়টার ওপর চিন্তা করুন যে, যিহোবা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তা অব্যর্থভাবে পরিপূর্ণ হয়। (w০৮ ১/১)

[পাদটীকাগুলো]

^ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ঘটনা ঘটার পর লেখা হয়েছে এই দাবি খণ্ডন করতে আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত এমন একজন সৃষ্টিকর্তা কি আছেন যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন? (ইংরেজি) বইয়ের পৃষ্ঠা ১০৬-১১ দেখুন।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

জীবনযাপনের জন্য নীতিগুলো

এখানে চিন্তা করার জন্য আরেকটা বিষয় রয়েছে। যে-ঈশ্বর বিশ্বশক্তিগুলোর উত্থান-পতন সম্বন্ধে এত সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তিনি জীবনযাপনের জন্য বাইবেলে দেওয়া নীতিগুলোরও উৎস। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল:

আপনি যা বুনবেন, তা-ই কাটবেনগালাতীয় ৬:৭.

পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি “সুখ।”—প্রেরিত (শিষ্যচরিত) ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল।

আত্মাতে দীনহীন অবস্থা বা আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করার ওপর “সুখ” নির্ভর করে।মথি ৫:৩, NW.

আপনি যদি আপনার জীবনে এই নীতিগুলো কাজে লাগান, তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, এগুলো আপনার ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হবে।

[২২, ২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বরের বাক্য এই সভ্যতাগুলোর চিরস্থায়ী ধ্বংস সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল . . .

ইদোম

বাবিল

. . . কিন্তু এগুলো সম্বন্ধে করেনি

গ্রিস

মিশর

[সৌজন্যে]

Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.

WHO photo by Edouard Boubat

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

মহান আলেকজান্ডার