সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক রাজ্য লাভ করার যোগ্য বলে গণ্য

এক রাজ্য লাভ করার যোগ্য বলে গণ্য

এক রাজ্য লাভ করার যোগ্য বলে গণ্য

“উহা ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের স্পষ্ট লক্ষণ, যাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সেই রাজ্যের যোগ্য বলিয়া গণ্য হইবে।”—২ থিষল. ১:৫.

১, ২. বিচার করার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী এবং কে বিচার করবেন?

 আমাদের সাধারণ কালের প্রায় ৫০ সালে প্রেরিত পৌল আথীনীতে ছিলেন। সেখানে ব্যাপক প্রতিমাপূজা দেখে বিরক্ত হয়ে তিনি এক চমৎকার সাক্ষ্য দিতে পরিচালিত হয়েছিলেন। তিনি একটা ঘোষণা দিয়ে তার কথা শেষ করেন, যা নিশ্চয়ই তার পৌত্তলিক শ্রোতাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বলেছিলেন: “[ঈশ্বর] এখন সর্ব্বস্থানের সকল মনুষ্যকে মনপরিবর্ত্তন করিতে আজ্ঞা দিতেছেন; কেননা একটী দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎসংসারের বিচার করিবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন।”—প্রেরিত ১৭:৩০, ৩১.

এই বিষয়টা বিবেচনা করা করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, ঈশ্বর মানবজাতির জন্য একটা ভাবী বিচার-দিন স্থির করেছেন! সেই বিচার এমন একজন ব্যক্তির দ্বারা হবে, যাঁর নাম পৌল আথীনীতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় উল্লেখ করেননি কিন্তু যাঁর সম্বন্ধে আমরা জানি যে, তিনি হলেন পুনরুত্থিত যিশু খ্রিস্ট। যিশুর দ্বারা বিচারের অর্থ হবে, হয় জীবন না হয় মৃত্যু।

৩. কেন যিহোবা অব্রাহামের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন এবং কে এর পরিপূর্ণতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে?

সেই বিচার-দিন ১,০০০ বছর দীর্ঘ হবে। যিশু ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে যিহোবার নামে এর তত্ত্বাবধান করবেন কিন্তু তিনি কেবল একাই থাকবেন না। যিহোবা মানবজাতির মধ্যে থেকে অন্যদের যিশুর সঙ্গে রাজত্ব করার ও সেই সহস্র বছর দীর্ঘ সময়ে বিচার করার জন্য বেছে নিয়েছেন। (তুলনা করুন, লূক ২২:২৯, ৩০.) প্রায় ৪,০০০ বছর আগে যিহোবা সেই বিচার-দিনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর বিশ্বস্ত দাস অব্রাহামের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮.) সেই চুক্তি স্পষ্টতই সা.কা.পূ. ১৯৪৩ সালে কার্যকর হয়েছিল। অবশ্য অব্রাহাম পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেননি যে, মানবজাতির জন্য সেই চুক্তির অর্থ কী। কিন্তু, আজকে আমরা দেখতে পাই যে, অব্রাহামের চুক্তির শর্তগুলোতে, মানবজাতিকে বিচার করার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় অব্রাহামের বংশ এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৪, ৫. (ক) অব্রাহামের বংশের প্রধান অংশ কে আর রাজ্য সম্বন্ধে তিনি কী বলেছিলেন? (খ) কখন রাজ্যের ব্যবস্থার অংশ হওয়ার আশা উন্মুক্ত হয়েছিল?

অব্রাহামের বংশের প্রধান অংশ হয়েছিলেন যিশু, যিনি সা.কা. ২৯ সালে পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন এবং প্রতিজ্ঞাত মশীহ বা খ্রিস্ট হয়ে উঠেছিলেন। (গালা. ৩:১৬) যিশু পরবর্তী সাড়ে তিন বছর যিহুদি জাতির কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। যোহন বাপ্তাইজক গ্রেপ্তার হওয়ার পর যিশু দেখিয়েছিলেন যে, অন্যেরা সেই রাজ্যের সদস্য হওয়ার আশা করতে পারে, যখন তিনি বলেছিলেন: “যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।”—মথি ১১:১২.

আগ্রহের বিষয় হল, যারা স্বর্গরাজ্য ‘অধিকার করিবে,’ তাদের সম্বন্ধে বলার ঠিক আগেই যিশু বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, স্ত্রীলোকের গর্ব্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান্‌ কেহই উৎপন্ন হয় নাই, তথাপি স্বর্গ-রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র যে ব্যক্তি, সে তাঁহা হইতে মহান্‌।” (মথি ১১:১১) কেন এই উক্তি করা হয়েছিল? কারণ রাজ্যের ব্যবস্থার অংশ হওয়ার আশা, সা.কা. ৩৩ সালে পবিত্র আত্মা বর্ষিত হওয়ার আগে পর্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য পুরোপুরিভাবে উন্মুক্ত হয়নি। সেই সময়ের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক মারা গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২:১-৪.

অব্রাহামের বংশ ধার্মিক গণিত হয়

৬, ৭. (ক) কীভাবে অব্রাহামের বংশ “আকাশের তারাগণের . . . ন্যায়” হয়েছিল? (খ) অব্রাহাম কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন এবং তার বংশ একই ধরনের কোন আশীর্বাদ লাভ করে?

অব্রাহামকে বলা হয়েছিল যে, তার বংশ অতিশয় বৃদ্ধি পাবে এবং “আকাশের তারাগণের” ও সমুদ্রতীরস্থ বালুর মতো হবে। (আদি. ১৩:১৬; ২২:১৭) অন্য কথায়, অব্রাহামের সময়ে মানুষের পক্ষে এটা জানা অসম্ভব ছিল যে, কত জনকে নিয়ে এই বংশ গঠিত হবে। যাই হোক, তার আত্মিক বংশের একেবারে সঠিক সংখ্যা পরিশেষে প্রকাশ করা হয়েছিল। যিশু ছাড়াও সেই সংখ্যা ছিল ১,৪৪,০০০ জন।—প্রকা. ৭:৪; ১৪:১.

অব্রাহামের বিশ্বাস সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য বলে: “[অব্রাহাম] সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন।” (আদি. ১৫:৫, ৬) এটা ঠিক যে, কোনো মানুষই সম্পূর্ণরূপে ধার্মিক নয়। (যাকোব ৩:২) তা সত্ত্বেও, অব্রাহামের উল্লেখযোগ্য বিশ্বাসের কারণে যিহোবা তার সঙ্গে এমনভাবে ব্যবহার করেছিলেন যেন তিনি ধার্মিক ছিলেন এবং এমনকি তাকে বন্ধু বলেও সম্বোধন করেছিলেন। (যিশা. ৪১:৮) যিশুর সঙ্গে অন্য আর যেসব ব্যক্তিকে নিয়ে অব্রাহামের আত্মিক বংশ গঠিত, তারাও ধার্মিক বলে গণিত হয়েছে আর এটা তাদের জন্য অব্রাহাম যে-আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন, তার চেয়েও বেশি আশীর্বাদ নিয়ে আসে।

৮. অব্রাহামের বংশের সদস্যদের জন্য কোন আশীর্বাদগুলো উন্মুক্ত রয়েছে?

অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ধার্মিক গণিত হয়েছে কারণ তারা যিশুর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলে। (রোমীয় ৩:২৪, ২৮) যিহোবার চোখে তারা পাপ থেকে ধার্মিক গণিত হয়েছে আর তারা ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র ও যিশু খ্রিস্টের ভ্রাতা হওয়ার জন্য পবিত্র আত্মায় অভিষিক্ত হতে পারে। (যোহন ১:১২, ১৩) তারা নতুন চুক্তিতে প্রবেশ করে এবং এক নতুন জাতি, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ গঠন করে। (গালা. ৬:১৬; লূক ২২:২০) এই সমস্তকিছু কত চমৎকার সম্মানকেই না প্রতিনিধিত্ব করে! তাদের পক্ষে কৃত ঈশ্বরের এই কাজগুলোর ফলে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা করে না। বিচার-দিন চলাকালে যিশুর সহযোগী হওয়ার ও স্বর্গে তাঁর সঙ্গে শাসন করার অবর্ণনীয় আনন্দের জন্য তারা সেই প্রত্যাশাকে বিসর্জন দেয়।—পড়ুন, রোমীয় ৮:১৭.

৯, ১০. (ক) কখন খ্রিস্টানরা প্রথম পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল এবং তাদের জন্য সামনে কী রয়েছে? (খ) অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কোন সাহায্য লাভ করেছিল?

সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, একদল বিশ্বস্ত মানুষকে সেই ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, যারা বিচার-দিন চলাকালে যিশুর সঙ্গে শাসন করবে। যিশুর প্রায় ১২০ জন শিষ্য পবিত্র আত্মা দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছিল আর এভাবে প্রথম অভিষিক্ত খ্রিস্টান হয়েছিল। কিন্তু, তাদের জন্য সেটা ছিল কেবল এক শুরু। তখন থেকে তাদেরকে, তাদের ওপর আনা শয়তানের সমস্ত পরীক্ষা সত্ত্বেও যিহোবার প্রতি আনুগত্য দেখাতে হয়েছিল। তারা যদি স্বর্গীয় জীবনের মুকুট লাভ করতে চায়, তাহলে তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে হতো।—প্রকা. ২:১০.

১০ এই কারণে যিহোবা তাঁর বাক্য ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল থিষলনীকীর অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “পিতা যেমন আপন সন্তানদিগকে, তেমনি আমরা তোমাদের প্রত্যেক জনকে আশ্বাস দিতাম, সান্ত্বনা করিতাম, ও দৃঢ়রূপে আদেশ দিতাম, যেন তোমরা ঈশ্বরের যোগ্য রূপে চল, যিনি আপন রাজ্যে ও প্রতাপে তোমাদিগকে আহ্বান করিতেছেন।”—১ থিষল. ২:১১, ১২.

১১. ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ সদস্যদের জন্য যিহোবা কোন লিখিত নথি জুগিয়েছিলেন?

১১ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলীর প্রথম সদস্যদের বাছাই করার পর, ৬০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে যিশুর পার্থিব পরিচর্যা ও সেইসঙ্গে প্রথম শতাব্দীর অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সঙ্গে তাঁর আচরণ ও পরমর্শের স্থায়ী নথি রাখাকে যিহোবা উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেছিলেন। তাই, যিহোবা ইতিমধ্যেই বিদ্যমান অনুপ্রাণিত ইব্রীয় শাস্ত্রের সঙ্গে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র যুক্ত করেছিলেন। ইব্রীয় শাস্ত্র প্রাথমিকভাবে সেই সময়কার মাংসিক ইস্রায়েল জাতির জন্য লেখা হয়েছিল, যাদের ঈশ্বরের সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র মূলত ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ জন্য লেখা হয়েছিল, যারা খ্রিস্টের ভাই ও ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিল। অবশ্য, এটা কোনোভাবেই ইঙ্গিত করে না যে, ন-ইস্রায়েলীয়রা ইব্রীয় শাস্ত্র অধ্যয়ন করে প্রচুর উপকার লাভ করতে পারত না। একইভাবে, যে-খ্রিস্টানরা পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত নয়, তারাও খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে প্রাপ্ত পরামর্শ অধ্যয়ন করে ও সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করে অপরিমেয় উপকার লাভ করে থাকে।—পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭.

১২. অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পৌল কী মনে করিয়ে দিয়েছিলেন?

১২ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা এই উদ্দেশ্যে ধার্মিক গণিত ও পবিত্র আত্মায় অভিষিক্ত হয়েছিল, যেন তারা তাদের স্বর্গীয় উত্তরাধিকার লাভ করতে পারে। তাদের এই অভিষিক্ত হওয়া তাদেরকে পৃথিবীতে এখনও বিদ্যমান সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ওপর রাজা হিসেবে উচ্চীকৃত করেনি। স্পষ্টতই, কিছু প্রাথমিক খ্রিস্টান এই বিষয়টা ভুলে গিয়েছিল এবং মণ্ডলীতে তাদের ভাইদের মধ্যে অনুপযুক্ত প্রাধান্য লাভ করার প্রচেষ্টা করতে শুরু করেছিল। এর ফলে পৌল এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “তোমরা এখন পূর্ণ হইয়াছ! এখন ধনবান্‌ হইয়াছ! আমাদের ছাড়া রাজত্ব পাইয়াছ! আর রাজত্ব পাইলে ভালই হইত, তোমাদের সহিত আমরাও রাজত্ব পাইতাম।” (১ করি. ৪:৮) তাই, পৌল তার দিনের অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “আমরা যে তোমাদের বিশ্বাসের উপরে প্রভুত্ব করি, এমন নয়, বরং তোমাদের আনন্দের সহকারী হই।”—২ করি. ১:২৪.

ভবিষ্যদ্বাণীকৃত সংখ্যা পূর্ণ করা

১৩. কীভাবে সা.কা. ৩৩ সালের পর অভিষিক্তদের আহ্বান এগিয়ে চলেছিল?

১৩ এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সকলকেই প্রথম শতাব্দীতে বাছাই করা হয়নি। তাদের আহ্বান প্রেরিতদের সময়কাল ধরে চলেছিল এবং এরপর স্পষ্টতই ধীর হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, এই আহ্বান পরবর্তী শতাব্দীগুলো থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত চলতে থাকে। (মথি ২৮:২০) অবশেষে, যিশু ১৯১৪ সালে রাজত্ব করতে শুরু করার পর, ঘটনাগুলো দ্রুত ঘটেছিল।

১৪, ১৫. অভিষিক্তদের আহ্বানের বিষয়ে আমাদের সময়ে কী ঘটেছে?

১৪ প্রথমে, যিশু ঈশ্বরীয় শাসনের বিরুদ্ধাচারী সমস্ত চিহ্ন থেকে স্বর্গকে পরিষ্কৃত করেছিলেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:১০, ১২.) এরপর তিনি তাঁর রাজ্য সরকারের অবশিষ্ট সম্ভাব্য সদস্যদের একত্রীকরণের ওপর মনোযোগ দিয়েছিলেন যেন ১,৪৪,০০০ সংখ্যা পূর্ণ হয়। ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সেই কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছিল এবং যারা প্রচার কাজে সাড়া দিয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেকেরই স্বর্গে যাওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না। আত্মা তাদের পক্ষে এই সাক্ষ্য দেয়নি যে, তারা ঈশ্বরের সন্তান ছিল। (তুলনা করুন, রোমীয় ৮:১৬.) এর পরিবর্তে, তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তারা ‘আরও মেষের’ অংশ, যাদের এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। (যোহন ১০:১৬) তাই, ১৯৩৫ সালের পরে প্রচার কাজের মনোযোগ ‘বিস্তর লোককে’ সংগ্রহ করার দিকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল, যাদেরকে প্রেরিত যোহন দর্শনে দেখেছিলেন এবং যারা “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে রক্ষা পাবে।—প্রকা. ৭:৯, ১০, ১৪.

১৫ কিন্তু, ১৯৩০ এর দশকের পর থেকে মাত্র অল্প কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে স্বর্গীয় আশার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। কেন? কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে যে, তারা পূর্বে আহ্বানকৃত এমন ব্যক্তিদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, যারা অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। (তুলনা করুন, প্রকাশিত বাক্য ৩:১৬.) পৌল এমনকি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত এমন কিছু ব্যক্তির বিষয়ে বলেছিলেন, যারা সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছিল। (ফিলি. ৩:১৭-১৯) এই ধরনের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য যিহোবা কাদেরকে আহ্বান করবেন? অবশ্যই, এটা তাঁর সিদ্ধান্ত। তা সত্ত্বেও, এটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় যে, তিনি নতুন ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের নয় বরং সেই ব্যক্তি বিশেষকে আহ্বান করবেন, যারা—যিশু স্মরণার্থ উদ্‌যাপন প্রবর্তন করার সময় যে-শিষ্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন, তাদের মতো—ইতিমধ্যেই যুক্তিযুক্ত মাত্রায় তাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছে। *লূক ২২:২৮.

১৬. অভিষিক্তদের বিষয়ে আমরা কীসের জন্য কৃতজ্ঞ এবং আমরা আস্থার সঙ্গে কী বিশ্বাস করতে পারি?

১৬ কিন্তু, এইরকম মনে হয় যে, ১৯৩০ এর দশক থেকে যাদেরকে স্বর্গীয় আশার জন্য আহ্বান করা হয়েছে, তারা সকলে সেই ব্যক্তিদের স্থলাভিষিক্ত নয়, যারা সরে গিয়েছে। স্পষ্টতই, যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন যে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় জুড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না “মহতী বাবিল” ধ্বংস হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মাঝে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা থাকবে। * (প্রকা. ১৭:৫) আর আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, ১,৪৪,০০০ সদস্যদের পূর্ণ সংখ্যা যিহোবার নিরূপিত সময়ে সম্পূর্ণ হবে এবং সকলে অবশেষে রাজ্য সরকারে শাসন করবে। এ ছাড়া, আমরা ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এই বাক্যে বিশ্বাস করতে পারি যে, চিরবৃদ্ধিরত বিস্তর লোক একটা দল হিসেবে সবসময় বিশ্বস্ত প্রমাণিত হবে। শীঘ্রই এই বিস্তর লোক শয়তানের জগতের ওপর আসা “মহাক্লেশের মধ্য হইতে” আসবে এবং আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরের নতুন জগতের দিকে এগিয়ে যাবে।

ঈশ্বরের স্বর্গীয় সরকার প্রায় সম্পূর্ণ!

১৭. প্রথম থিষলনীকীয় ৪:১৫-১৭ পদ এবং প্রকাশিত বাক্য ৬:৯-১১ পদ অনুসারে সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতি কী ঘটেছে, যারা বিশ্বস্তভাবে মারা গিয়েছে?

১৭ সাধারণ কাল ৩৩ সাল থেকে হাজার হাজার অভিষিক্ত খ্রিস্টান দৃঢ় বিশ্বাস দেখিয়েছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে স্থির থেকেছে। তাদেরকে ইতিমধ্যেই রাজ্য লাভ করার যোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছে এবং—স্পষ্টতই খ্রিস্টের উপস্থিতির প্রাথমিক সময় থেকে—সেই অনুযায়ী পুরস্কৃত করা হয়েছে।—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৪:১৫-১৭; প্রকাশিত বাক্য ৬:৯-১১.

১৮. (ক) যে-অভিষিক্তরা এখনও রয়েছে, তাদের কোন আস্থা রয়েছে? (খ) আরও মেষেরা তাদের অভিষিক্ত খ্রিস্টান ভাইদের কীভাবে দেখে?

১৮ যে-অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে, তাদের এই বিষয়ে সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে, তারা যদি বিশ্বস্ত থাকে, তাহলে তারা তাদের বিশ্বস্ত কাজের জন্য শীঘ্রই পুরস্কার লাভ করবে। লক্ষ লক্ষ আরও মেষ যখন তাদের অভিষিক্ত ভাইদের বিশ্বাস সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করে, তখন প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোর সঙ্গে একমত হয়, যিনি থিষলনীকীর অভিষিক্ত ভাইদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তোমরা যে সকল তাড়না ও ক্লেশ সহ্য করিতেছ, সেই সকলের মধ্যে তোমাদের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস থাকায় আমরা আপনারা ঈশ্বরের মণ্ডলী সকলের মধ্যে তোমাদের শ্লাঘা করিতেছি। আর উহা ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের স্পষ্ট লক্ষণ, যাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সেই রাজ্যের যোগ্য বলিয়া গণ্য হইবে, যাহার নিমিত্ত দুঃখভোগও করিতেছ।” (২ থিষল. ১:৩-৫) পৃথিবী থেকে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের শেষ সদস্যের মৃত্যুর পর, তা সেটা যখনই হোক না কেন, ঈশ্বরের স্বর্গীয় সরকার সম্পূর্ণ হবে। এটা আনন্দ করার কী এক কারণই না হবে আর তা স্বর্গ ও পৃথিবী উভয় স্থানেই!

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯২ সালের ১ মার্চ প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২০ পৃষ্ঠার ১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন।

^ ২০০৭ সালের ১ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে কী প্রকাশ করেছিলেন, যা বিচার-দিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল?

• কেন অব্রাহামকে ধার্মিক বলে গণিত করা হয়েছে?

• ধার্মিক বলে গণিত হওয়া অব্রাহামের বংশের লোকেদের কীসের দিকে পরিচালিত করে?

• সমস্ত খ্রিস্টানের কোন আস্থা রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে রাজ্যের জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে উৎসাহিত করেছিলেন

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিহোবা অব্রাহামের বংশের গৌণ সদস্যদের বাছাই করতে শুরু করেন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আরও মেষ কৃতজ্ঞ যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা শেষকালে তাদের সঙ্গে রয়েছে