সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন

ঈশ্বর আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

ঈশ্বর আমাদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন

লূক ১২:৬, ৭

 “আমাদের হৃদয় . . . আমাদিগকে দোষী করে।” এই কথাগুলোর দ্বারা বাইবেল স্বীকার করে যে, মাঝে মাঝে আমাদের হৃদয় হয়তো আমাদেরকে অন্যদের সম্বন্ধে অতিরিক্ত সমালোচক হতে পরিচালিত করতে পারে। বস্তুতপক্ষে, আমাদের হয়তো সবসময় এইরকম অনুভূতি থাকতে পারে যে, আমরা ঈশ্বরের প্রেমের ও যত্নের অযোগ্য। কিন্তু, বাইবেল আমাদের পুনরায় আশ্বাস দেয়: “ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌, এবং সকলই জানেন।” (১ যোহন ৩:১৯, ২০) আমরা নিজেদেরকে যতখানি জানি, তার চেয়েও হাজার গুণ ভালভাবে ঈশ্বর আমাদের জানেন। আমাদের সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো আমরা নিজেদেরকে যে-দৃষ্টিতে দেখি, তার চেয়ে একেবারে ভিন্ন হতে পারে। তাহলে, যিহোবা ঈশ্বর যাঁর কাছে বিষয়টা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ তাঁর দৃষ্টিতে আমরা কতটা মূল্যবান? এক মর্মস্পর্শী দৃষ্টান্তে উত্তরটা পাওয়া যেতে পারে, যা যিশু দুটো পৃথক ঘটনায় উল্লেখ করেছিলেন।

একটা ঘটনায় যিশু বলেছিলেন যে, “দুইটী চড়াই পাখী . . . এক পয়সায় বিক্রয় হয়।” (মথি ১০:২৯, ৩১) লূক ১২:৬, ৭ পদ অনুসারে, যিশু এও বলেছিলেন: “পাঁচটী চড়াই পাখী কি দুই পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তাহাদের মধ্যে একটীও ঈশ্বরের দৃষ্টিগোচরে গুপ্ত নয়। . . . ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ” বা মূল্যবান। এই সহজ-সরল অথচ জোরালো দৃষ্টান্ত আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক উপাসককে কীভাবে দেখেন।

খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত সব পাখির মধ্যে চড়ুই পাখি ছিল সবচেয়ে সস্তা। কোনো সন্দেহ নেই যে, যিশু দরিদ্র স্ত্রীলোকেদেরকে—সম্ভবত এমনকি তাঁর নিজের মাকে—তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য বাজার থেকে এই অতি ক্ষুদ্র পাখিগুলোকে কিনতে দেখেছিলেন। বর্তমান মূল্য অনুযায়ী, পাঁচ সেন্টেরও কম মূল্যের একটা অ্যাসারিয়ান মুদ্রা দিয়ে একজন ক্রেতা দুটো চড়ুই পাখি কিনতে পারতেন। এই পাখিগুলো এতই সস্তা ছিল যে, দুটো মুদ্রা দিয়ে একজন ক্রেতা চারটে নয় বরং পাঁচটা চড়ুই পাখি পেতেন আর বাড়তি পাখিটার জন্য অতিরিক্ত কোনো দাম দিতে হতো না।

যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একটা চড়ুই পাখিও “ঈশ্বরের দৃষ্টিগোচরে গুপ্ত” নয় অথবা “পিতার অনুমতি বিনা . . . ভূমিতে” পড়ে না। (মথি ১০:২৯) খাদ্যের সন্ধানে একটা চড়ুই পাখি যখন আহত হয় অথবা ভূমিতে পড়ে, তখন প্রতিবার তার ভূমিতে পড়া যিহোবা লক্ষ করেন। আপাতদৃষ্টিতে নগণ্য এই পাখিগুলোকে সৃষ্টি করা যিহোবার কাছে খুব কঠিন কাজ ছিল না আর তাই সেগুলোকে তাঁর স্মরণে রাখাও খুব কঠিন কাজ নয়। বস্তুতপক্ষে, তিনি তাদেরকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, কারণ তারা খুবই মূল্যবান সজীব প্রাণী। যিশুর দৃষ্টান্তের শিক্ষণীয় বিষয়টা কি আপনি বুঝতে পেরেছেন?

তাঁর শিক্ষার মধ্যে, যিশু প্রায়ই তুলনা ব্যবহার করতেন আর একটা ছোটো শিক্ষাকে কীভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ের প্রতি প্রয়োগ করা যেতে পারে, তা দেখাতেন। উদাহরণস্বরূপ, যিশু এও বলেছিলেন: ‘কাকেরা বুনেও না, কাটেও না; তাহাদের ভাণ্ডারও নাই, গোলাঘরও নাই; আর ঈশ্বর তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; পক্ষিগণ হইতে তোমরা কত অধিক শ্রেষ্ঠ!’ (লূক ১২:২৪) চড়ুই পাখিদের সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলোর অর্থ এখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে: যিহোবা যদি এই অতি ক্ষুদ্র পাখিগুলোর জন্য চিন্তা করে থাকেন, তাহলে তিনি মানুষের জন্য আরও কত বেশিই না চিন্তা করবেন, যারা তাঁকে ভালবাসে ও উপাসনা করে!

যিশুর কথাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এইরকম মনে করব না যে, আমরা এতটাই অযোগ্য যে, ঈশ্বর যিনি “আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌,” তিনি আমাদের দেখতে পান না ও আমাদের জন্য চিন্তা করেন না। এটা জানা কি সান্ত্বনাদায়ক নয় যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের মধ্যে সেই বিষয়গুলো দেখতে পান, যা হয়তো আমরা দেখতে অসমর্থ? (w০৮ ৪/১)

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

চড়ুই পাখিগুলো: © ARCO/D. Usher/age fotostock