সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের প্রেম একজন মায়ের ভালবাসায় প্রত্যক্ষ হয়

ঈশ্বরের প্রেম একজন মায়ের ভালবাসায় প্রত্যক্ষ হয়

ঈশ্বরের প্রেম একজন মায়ের ভালবাসায় প্রত্যক্ষ হয়

“স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ব্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।”—যিশাইয় ৪৯:১৫.

 একটা নবজাত শিশুকে যখন তার মা স্তন্যদান করায়, তখন সে মায়ের কোলে আরাম করে শুয়ে থাকে। এই দৃশ্যটা কোমলতা ও ভালবাসার এক দৃশ্য। “আমি যখন প্রথম আমার সন্তানকে কোলে নিই,” প্যাম নামে একজন মা বলেন, “তখন আমি এই নতুন জীবনের জন্য গভীর ভালবাসা ও দায়িত্ববোধ অনুভব করেছিলাম।”

এটা একটা সাধারণ বিষয় বলে মনে হতে পারে, তবে গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে, একজন মায়ের ভালবাসা তার শিশুর বিকাশকে নিবিড়ভাবে প্রভাবিত করে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কার্যক্রম দ্বারা প্রকাশিত একটা প্রমাণপত্র এভাবে বলে: “বিভিন্ন গবেষণা দেখিয়েছে যে, মায়েদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত ও বিচ্ছিন্ন শিশুরা অসুখী এবং হতাশ, কখনো কখনো আতঙ্কগ্রস্ত পর্যন্ত হয়ে থাকে।” সেই একই প্রমাণপত্রে একটা গবেষণার বিষয় উল্লেখ করা হয় যে, ছোটোবেলা থেকে ভালবাসা ও মনোযোগ পায় এমন ছেলেমেয়েদের বুদ্ধিমত্তা খুব সম্ভবত সেই ছেলেমেয়েদের চেয়ে যথেষ্ট উচ্চ পর্যায়ের, যারা উপেক্ষিত হয়ে থাকে।

একজন মায়ের ভালবাসার গুরুত্ব সম্বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিএলএ স্কুল অভ্‌ মেডিসিন এর মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক অ্যালেন সর বলেন: “মায়ের সঙ্গে শিশুর প্রথম যে-সম্পর্ক, তা এক আদর্শ হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে সমস্ত আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে।”

দুঃখের বিষয় হল, হতাশা, অসুস্থতা কিংবা অন্যান্য চাপ একজন মাকে তার সন্তানকে উপেক্ষা করতে অথবা এমনকি “আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে” বাধ্য করতে পারে। (যিশাইয় ৪৯:১৫) কিন্তু এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা, কোনো মানদণ্ড নয়। বস্তুতপক্ষে, মায়েরা সহজাতভাবেই তাদের সন্তানদের ভালবাসে বলে মনে হয়। গবেষকরা আবিষ্কার করেছে যে, সন্তান প্রসব করার সময় মায়েদের মধ্যে অক্সিটোসিন নামক হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা জরায়ুকে সংকুচিত করে এবং পরবর্তী সময়ে শিশুর জন্য দুগ্ধ নিঃসরণে ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া, পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে নিঃসৃত এই একই হরমোন প্রেমময় ও নিঃস্বার্থ উপায়ে কাজ করতে পরিচালিত করায় এক ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়।

প্রেমের উৎস কী?

যারা বিবর্তনবাদকে উৎসাহিত করে তারা শিক্ষা দেয় যে, নিঃস্বার্থ ভালবাসা যেমন, মা ও তার সন্তানের মধ্যে ভালবাসা, হঠাৎ করেই জেগে উঠেছিল আর এরপর তা প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা সংরক্ষিত হয়েছিল কারণ প্রজাতিগুলো এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন জার্নাল মাদারিং ম্যাগাজিন বলে: “উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সরীসৃপের মস্তিষ্কের ওপরেই বিকশিত আমাদের মস্তিষ্কের প্রথম অংশ হচ্ছে, সমস্ত স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সাধারণভাবে বর্তমান মস্তিষ্ক গঠনের একটি শ্রেণী, যা আবেগঅনুভূতি জাগিয়ে তোলে। মস্তিষ্কের এই অংশই মা ও তার শিশুর মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলে।”

এটা ঠিক যে, গবেষণা প্রকাশ করেছে, মস্তিষ্ক গঠনের সেই শ্রেণী আমাদের আবেগঅনুভূতিতে এক উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু, এটা কি আপনার কাছে যুক্তিসংগত বলে মনে হয় যে, সন্তানের জন্য একজন মায়ের ভালবাসা একটা সরীসৃপের মস্তিষ্কের আকস্মিক বিকাশের ফল?

বিকল্পটা বিবেচনা করুন। বাইবেল বলে যে, মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে অর্থাৎ ঈশ্বরের গুণাবলি প্রতিফলিত করার ক্ষমতাসহ সৃষ্টি করা হয়েছে। (আদিপুস্তক ১:২৭) ঈশ্বরের প্রধান গুণ হল প্রেম। “যে প্রেম করে না, সে ঈশ্বরকে জানে না,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন। কেন? “কারণ ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) দয়া করে লক্ষ করুন, বাইবেলের এই পদ বলে না যে ঈশ্বরের প্রেম আছে। এর পরিবর্তে, এটি বলে যে, ঈশ্বর হলেন প্রেম। তিনি প্রেমের উৎস।

বাইবেল প্রেমকে এভাবে বর্ণনা করে: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮) এটা বিশ্বাস করা কি যুক্তিসংগত বলে মনে হয় যে, এই সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলি হঠাৎ করেই উদ্ভূত হয়েছে?

আপনি কীভাবে প্রভাবিত হন?

আগের অনুচ্ছেদে প্রেমের বর্ণনা সম্বন্ধে পড়ার সময় আপনার হৃদয় কি এমন কারো জন্য আকাঙ্ক্ষা করেছে, যিনি আপনার প্রতি এই ধরনের প্রেম দেখাবেন? আপনার এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা বোধ করা স্বাভাবিক। কেন? কারণ “আমরা . . . ঈশ্বরের বংশ” বা বংশধর। (প্রেরিত ১৭:২৯) আমাদেরকে এই ধরনের প্রেম প্রকাশ ও লাভ করার মতো করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের জন্য ঈশ্বরের গভীর প্রেম রয়েছে। (যোহন ৩:১৬; ১ পিতর ৫:৬, ৭) এই প্রবন্ধের শুরুতে উদ্ধৃত শাস্ত্রপদ প্রকাশ করে যে, আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা এমনকি সন্তানের জন্য একজন মায়ের ভালবাসার চেয়ে আরও বেশি জোরালো, আরও বেশি স্থায়ী!

তবে, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন: ‘ঈশ্বর যদি প্রজ্ঞাবান, শক্তিশালী এবং প্রেমময় হয়ে থাকেন, তাহলে কেন তিনি দুঃখকষ্ট শেষ করছেন না? কেন তিনি সন্তানদের মারা যেতে দেন, অন্যায় থাকতে দেন আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও লোভের দ্বারা এই পৃথিবীকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেন?’ এগুলো যুক্তিসংগত প্রশ্ন, যেগুলোর সদুত্তর পাওয়া প্রয়োজন।

অজ্ঞেয়বাদীরা যা বলতে পারে, সেটার বিপরীতে এই প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। শত শত দেশের লক্ষ লক্ষ লোক যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে এই ধরনের উত্তর খুঁজে পেয়েছে। এই পত্রিকার প্রকাশকরা আপনাকেও একই বিষয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তাঁর বাক্য এবং তাঁর সৃষ্টি সম্বন্ধে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে যতই ঈশ্বর সম্বন্ধে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে, ততই আপনি উপলব্ধি করবেন যে, তিনি দূরে নন এবং এমন নন যাঁকে জানা যায় না। এর পরিবর্তে, আপনি সম্ভবত এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হবেন যে, ঈশ্বর “আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।”—প্রেরিত ১৭:২৭. (w০৮ ৫/১)

[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা, সন্তানের জন্য একজন মায়ের ভালবাসার চেয়ে আরও বেশি স্থায়ী