সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুকে অনুকরণ করুন ঈশ্বরকে গ্রহণযোগ্য উপাসনা প্রদান করুন

যিশুকে অনুকরণ করুন ঈশ্বরকে গ্রহণযোগ্য উপাসনা প্রদান করুন

যিশুকে অনুকরণ করুন ঈশ্বরকে গ্রহণযোগ্য উপাসনা প্রদান করুন

 ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” লোকেদের তাঁকে উপাসনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। (প্রকা. ৭:৯, ১০; ১৫:৩, ৪) যারা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে, তারা ‘সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিতে’ পারে। (গীত. ২৭:৪; ৯০:১৭) গীতরচকের মতো, তারা এই বলে উচ্চৈঃস্বরে যিহোবার প্রশংসা করে: “আইস, আমরা প্রণিপাত করি, প্রণত হই, আমাদের নির্ম্মাতা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে জানু পাতি।”—গীত. ৯৫:৬.

যে-উপাসনাকে উচ্চমূল্য দেওয়া হয়েছে

ঈশ্বরের একজাত পুত্র হিসেবে, তাঁর পিতার চিন্তাধারা, বিভিন্ন নীতি ও মান শেখার পর্যাপ্ত সুযোগ যিশুর ছিল। তাই, যিশু আস্থার সঙ্গে অন্যদেরকে সত্য উপাসনার পথ বা উপায় সম্বন্ধে বলতে পারতেন। তিনি বলেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।”—যোহন ১:১৪; ১৪:৬.

যিশু তাঁর পিতার প্রতি নম্রভাবে বশীভূত থাকার নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি আপনা হইতে কিছুই করি না, কিন্তু পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি।” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি।” (যোহন ৮:২৮, ২৯) যিশু কোন কোন উপায়ে তাঁর পিতাকে সন্তুষ্ট করেছিলেন?

একটা উপায় হল, তিনি তাঁর পিতার প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত ছিলেন আর এটাই হচ্ছে ঈশ্বরকে উপাসনা করা বলতে যা বোঝায়, সেটার মূল বিষয়। যিশু তাঁর পিতার বাধ্য হওয়ার, তাঁর ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে পিতার প্রতি ব্যক্তিগত আসক্তি প্রদর্শন করেছিলেন, এমনকি সেই সময়েও, যখন সেটার সঙ্গে অনেক ব্যক্তিগত কষ্টভোগও জড়িত ছিল। (ফিলি. ২:৭, ৮) যিশুর উপাসনার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল শিষ্য তৈরির কাজ, যে-কাজে তিনি এতটাই রত ছিলেন যে, বিশ্বাসীরা ও অবিশ্বাসীরা উভয়েই তাঁকে গুরু বা শিক্ষক বলে সম্বোধন করত। (মথি ২২:২৩, ২৪; যোহন ৩:২) অধিকন্তু, যিশু অন্যদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের কারণে তিনি নিজের জন্য খুব একটা সময় ব্যয় করেননি কিন্তু তিনি অন্যদের পরিচর্যা করে আনন্দিত ছিলেন। (মথি ১৪:১৩, ১৪; ২০:২৮) ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও, যিশু প্রার্থনায় তাঁর পিতার সঙ্গে কথা বলার জন্য সর্বদা সময় বের করে নিতেন। (লূক ৬:১২) যিশুর প্রদানকৃত উপাসনা ঈশ্বরের কাছে কত অমূল্যই না ছিল!

ঈশ্বরের প্রীতিপাত্র হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা

যিহোবা তাঁর পুত্রের আচরণ লক্ষ করেছিলেন এবং তাঁর অনুমোদন প্রকাশ করেছিলেন। (মথি ১৭:৫) কিন্তু, শয়তান দিয়াবলও যিশুর বিশ্বস্ত জীবনধারা লক্ষ করেছিল। তাই, যিশু শয়তানের এক বিশেষ লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছিলেন। কেন? কারণ কোনো মানুষই তখন পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি একেবারে নিখুঁতভাবে বাধ্যতা বজায় রাখতে ও এর মাধ্যমে তাঁকে পূর্ণরূপে উপাসনা করতে পারেনি। আর দিয়াবল যিশুকে সেই উপাসনা প্রদান করা থেকে বিরত করতে চেয়েছিল, যেটা উপযুক্তভাবেই যিহোবার প্রাপ্য ছিল।—প্রকা. ৪:১১.

যিশুকে কলুষিত করার চেষ্টায় শয়তান এক লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। সে যিশুকে “অতি উচ্চ এক পর্ব্বতে লইয়া গেল, এবং জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ দেখাইল।” তারপর সে বলেছিল: “তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম কর, এই সমস্তই আমি তোমাকে দিব।” যিশু কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “দূর হও, শয়তান; কেননা লেখা আছে, ‘তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই [“যিহোবাকেই,” NW] প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।’” (মথি ৪:৮-১০) হ্যাঁ, যিশু উপলব্ধি করেছিলেন যে, শয়তানের সামনে প্রণিপাত করা প্রতিমাপূজার তুল্য হবে, তা সেটা যে-উপকারই নিয়ে আসে বলে মনে হোক না কেন। তিনি যিহোবা ছাড়া অন্য কাউকে এমনকি একবারের জন্যও উপাসনার অঙ্গভঙ্গি প্রদান করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

আমাদের ক্ষেত্রে, শয়তান হয়তো আমাদের উপাসনার বিনিময়ে আমাদেরকে জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেগুলোর প্রতাপ দেওয়ার প্রস্তাব দেবে না। কিন্তু, সে এখনও সেই উপাসনাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে, যা আন্তরিক খ্রিস্টানরা ঈশ্বরকে প্রদান করে থাকে। দিয়াবল চায় যেন আমরা অন্য কাউকে কিংবা অন্য কোনোকিছুকে উপাসনা করি।—২ করি. ৪:৪.

খ্রিস্ট যিশু এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত নিজেকে বিশ্বস্ত প্রমাণ করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখে যিশু যিহোবাকে এমন এক উপায়ে গৌরবান্বিত করেছিলেন, যে-উপায়ে অন্য কোনো মানুষ কখনো করেনি। আজকে সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করাকে অন্য সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার মাধ্যমে যিশুর বিশ্বস্ত জীবনধারা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক হল আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।

গ্রহণযোগ্য উপাসনা প্রদান করার আশীর্বাদগুলো

ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে “শুচি ও বিমল ধর্ম্ম” বা উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করা অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। (যাকোব ১:২৭) উদাহরণস্বরূপ, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে অনেক লোক “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী” এবং “সদ্‌বিদ্বেষী।” (২ তীম. ৩:১-৫) কিন্তু, ঈশ্বরের গৃহে আমাদের সেই শুদ্ধ, গঠনমূলক লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে, যারা ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য তাঁর মানগুলোকে সমর্থন করে। এটা কি সতেজতার এক উৎস নয়?

এ ছাড়া, এই জগৎ থেকে বিমল থাকার ফলে আশীর্বাদ হিসেবে আমাদের এক শুদ্ধ বিবেক রয়েছে। ঈশ্বরের ধার্মিক নীতিগুলোর বশীভূত থাকার এবং কৈসরের আইনগুলো, যেগুলো ঈশ্বরের আইনের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে না, সেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে চাই।—মার্ক ১২:১৭; প্রেরিত ৫:২৭-২৯.

পূর্ণহৃদয়ের উপাসনা আরেক ধরনের আশীর্বাদ নিয়ে আসে। আমরা যখন নিজেদের ইচ্ছার পরিবর্তে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি, তখন আমাদের জীবন অর্থপূর্ণ ও পরিতৃপ্তিদায়ক হয়ে ওঠে। “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব” বলার পরিবর্তে, আমাদের এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভের নিশ্চিত প্রত্যাশা রয়েছে।—১ করি. ১৫:৩২.

প্রকাশিত বাক্য বইটি এমন এক সময় সম্বন্ধে মনোযোগ আকর্ষণ করে, যখন যিহোবার সামনে এক শুদ্ধ মান বজায় রাখে এমন ব্যক্তিরা ‘মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিবে।’ সেই বিবরণ বলে যে, “যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি ইহাদের উপরে আপন তাম্বু বিস্তার করিবেন।” (প্রকা. ৭:১৩-১৫) যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, তিনি নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে গৌরবান্বিত ব্যক্তি যিহোবা ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ নন। যখন তিনি তাঁর তাঁবুতে অতিথি হিসেবে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাবেন, আপনার সুরক্ষামূলক যত্ন নেবেন যাতে আপনার ওপর কোনো ক্ষতি না আসে, তখন কত আনন্দই না হবে, তা একটু কল্পনা করার চেষ্টা করুন! আর এমনকি এখনই আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে তাঁর সুরক্ষা ও যত্ন উপভোগ করতে পারি।

অধিকন্তু, ঈশ্বরকে গ্রহণযোগ্য উপাসনা প্রদান করে এমন সকলকে “জীবন-জলের উনুইয়ের” দিকে গমন করানো হচ্ছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সতেজতাদায়ক জলের উনুই যিহোবার জোগানো সেইসমস্ত ব্যবস্থাকে চিত্রিত করে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারি। হ্যাঁ, খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে “ঈশ্বর ইহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” (প্রকা. ৭:১৭) মানবজাতি সিদ্ধতায় উন্নীত হবে, যা পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য অবর্ণনীয় আনন্দ নিয়ে আসবে। এমনকি এখনই, ঈশ্বরের সুখী উপাসকরা আনন্দ করে, সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে যিহোবার প্রতি আন্তরিক উপলব্ধি প্রকাশ করে ও তাঁর প্রশংসা করে, যারা এই গান গায়: “মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু [“যিহোবা,” NW] ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্‌; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন! হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু, কেননা সমস্ত জাতি আসিয়া তোমার সম্মুখে ভজনা করিবে, কেননা তোমার ধর্ম্মক্রিয়া সকল প্রকাশিত হইয়াছে।”—প্রকা. ১৫:৩, ৪.

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের উপাসনার বিনিময়ে শয়তান আমাদের কী দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে?