সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাল থেকে বিপথে যায় এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করুন

পাল থেকে বিপথে যায় এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করুন

পাল থেকে বিপথে যায় এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করুন

“আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটী হারাইয়া গিয়াছিল, তাহা পাইয়াছি।”—লূক ১৫:৬.

১. কীভাবে যিশু একজন প্রেমময় পালক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন?

 যিহোবার একজাত পুত্র যিশু খ্রিস্টকে ‘মহান্‌ পাল-রক্ষক’ বলা হয়। (ইব্রীয় ১৩:২০) শাস্ত্র তাঁর আসার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল আর দেখিয়েছিল যে, তিনি ছিলেন এক অদ্বিতীয় পালক, যিনি ইস্রায়েলের “হারান মেষ” অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছিলেন। (মথি ২:১-৬; ১৫:২৪) অধিকন্তু, একজন আক্ষরিক মেষপালক যেমন তার মেষদের রক্ষা করার জন্য তার জীবন দিতে পারেন, তেমনই যিশু সেইসমস্ত মেষতুল্য ব্যক্তির জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে মারা গিয়েছেন, যারা তাঁর বলিদান থেকে উপকার লাভ করবে।—যোহন ১০:১১, ১৫; ১ যোহন ২:১, ২.

২. কোন কারণগুলোর জন্য হয়তো কিছু খ্রিস্টান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে?

দুঃখের বিষয় হল, যিশুর বলিদানের প্রতি উপলব্ধি রয়েছে বলে মনে হয়েছিল এবং ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণ করেছিল এমন কিছু ব্যক্তি এখন আর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করে না। নিরুৎসাহিতা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা অথবা অন্যান্য বিষয়ের কারণে তাদের উদ্যোগ হয়তো কমে গিয়েছে এবং এর ফলে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু, কেবল ঈশ্বরের পালের অংশ হিসেবেই তারা সেই প্রশান্তি ও সুখ উপভোগ করতে পারে, যেগুলোর বিষয়ে দায়ূদ ২৩ গীতে উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু আমার পালক, আমার অভাব হইবে না।” (গীত. ২৩:১) যারা ঈশ্বরের পালের মধ্যে রয়েছে, তাদের আধ্যাত্মিকভাবে কোনোকিছুরই অভাব নেই কিন্তু সেই মেষদের বেলায় বিষয়টা এমন নয়, যারা বিপথগামী হয়েছে। কারা তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারে? কীভাবে সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে? বস্তুতপক্ষে, তাদেরকে পালের মধ্যে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে?

কারা সাহায্য করতে পারে?

৩. ঈশ্বরের চারণভূমি থেকে হারিয়ে যাওয়া মেষকে উদ্ধার করার জন্য যা প্রয়োজন, তা যিশু কীভাবে দেখিয়েছেন?

ঈশ্বরের চরাণির বা চারণভূমির হারানো মেষকে উদ্ধার করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। (গীত. ১০০:৩) যিশু এই বিষয়টা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “কোন ব্যক্তির যদি এক শত মেষ থাকে, আর তাহাদের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটা ছাড়িয়া পর্ব্বতে গিয়া ঐ হারান মেষটীর অন্বেষণ করে না? আর যদি সে কোন ক্রমে সেটী পায়, তবে আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত সে অধিক আনন্দ করে। সেইরূপ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।” (মথি ১৮:১২-১৪) কারা সেই মেষতুল্য ব্যক্তি বিশেষদের সাহায্য করতে পারে, যারা পাল থেকে হারিয়ে গিয়েছে বা বিপথে গিয়েছে?

৪, ৫. ঈশ্বরের পালের প্রতি প্রাচীনদের কোন মনোভাব রাখতে হবে?

খ্রিস্টান প্রাচীনরা যদি সেই মেষদের সাহায্য করতে চায়, যারা বিপথগামী হয়েছে, তাহলে তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ঈশ্বরের পাল হল যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত লোকেদের নিয়ে গঠিত একটা মণ্ডলী—হ্যাঁ, ‘ঈশ্বরের চারণভূমির’ মূল্যবান “মেষপাল।” (গীত. [সামসঙ্গীত-মালা] ৭৯:১৩, বাংলা জুবিলী বাইবেল) এই ধরনের প্রিয় মেষদের কোমল যত্নের প্রয়োজন আর এর অর্থ হল, তাদের প্রতি প্রেমময় পালকদের ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাতে হবে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পালকীয় সাক্ষাৎ করা অনেক কার্যকারী হতে পারে। একজন পালক তাদেরকে যে-প্রেমময় উৎসাহ প্রদান করেন, তা হয়তো তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে গেঁথে তোলে এবং পালের মধ্যে ফিরে আসার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধি করে।—১ করি. ৮:১.

ঈশ্বরের পালের পালকদের সেই মেষদের অন্বেষণ করার এবং এরপর তাদেরকে সাহায্য করতে প্রচেষ্টা করার দায়িত্ব রয়েছে, যারা বিপথগামী হয়েছে। প্রেরিত পৌল তার সময়ের ইফিষের খ্রিস্টান প্রাচীনদেরকে তাদের পালকীয় দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও, ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন কর, যাহাকে তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন।” (প্রেরিত ২০:২৮) একইভাবে, প্রেরিত পিতর অভিষিক্ত প্রাচীনবর্গকে এই বিনতি করেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে কর; নিরূপিত অধিকারের উপরে কর্ত্তৃত্বকারীরূপে নয়, কিন্তু পালের আদর্শ হইয়াই কর।”—১ পিতর ৫:১-৩.

৬. কেন বর্তমানে ঈশ্বরের মেষদের জন্য বিশেষভাবে পালকদের যত্নের প্রয়োজন রয়েছে?

খ্রিস্টান প্রাচীনদেরকে “উত্তম মেষপালক” যিশুকে অনুকরণ করতে হবে। (যোহন ১০:১১) তিনি ঈশ্বরের মেষদের জন্য গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন এবং তাদেরকে যত্ন নেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন, যখন তিনি শিমোন পিতরকে বলেছিলেন, “আমার মেষগণকে পালন কর।” (পড়ুন, যোহন ২১:১৫-১৭.) বিশেষভাবে বর্তমানে মেষদের এইরকম যত্নের প্রয়োজন রয়েছে কারণ দিয়াবল সেই ব্যক্তিদের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলার জন্য তার প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করেছে, যারা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছে। যিহোবার মেষদেরকে পাপপূর্ণ কার্যকলাপে জড়িত করার প্রচেষ্টায় শয়তান মাংসিক দুর্বলতাগুলোর সুযোগ নেয় এবং জগৎকে ব্যবহার করে। (১ যোহন ২:১৫-১৭; ৫:১৯) বিশেষভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে আর তাই ‘আত্মার বশে চলিবার’ উপদেশ কাজে লাগানোর জন্য তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন। (গালা. ৫:১৬-২১, ২৫) এই ধরনের মেষদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের ওপর প্রার্থনাপূর্ণ নির্ভরতা, তাঁর আত্মার নির্দেশনা এবং তাঁর বাক্য দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা প্রয়োজন।—হিতো. ৩:৫, ৬; লূক ১১:১৩; ইব্রীয় ৪:১২.

৭. প্রাচীনদের জন্য তাদের যত্নাধীন মেষতুল্য ব্যক্তিদের পালন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রাচীন ইস্রায়েলে একজন মেষপালক তার পালকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য একটা লম্বা বাঁকানো লাঠি বা পাঁচনি ব্যবহার করতেন। মেষেরা যখন বস্রায় বা খোঁয়াড়ে প্রবেশ করত অথবা সেখান থেকে বের হতো, তখন সেগুলোকে ‘পাঁচনির নীচে দিয়া যাইতে’ হতো আর এভাবে মেষপালক সেগুলোকে গণনা করতে পারতেন। (লেবীয়. ২৭:৩২; মীখা ২:১২; ৭:১৪) একইভাবে, একজন খ্রিস্টান পালককেও তার যত্নাধীন ঈশ্বরের পালকে ভালভাবে জানতে ও প্রত্যেকে কী করছে, সেই সম্বন্ধে অবগত হতে হবে। (তুলনা করুন, হিতোপদেশ ২৭:২৩.) তাই পালকীয় কাজ হল, প্রাচীনগোষ্ঠীর দ্বারা আলোচ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটা। এর অন্তর্ভুক্ত সেই মেষদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করা, যারা বিপথগামী হয়েছে। যিহোবা নিজে বলেছেন যে, তিনি তাঁর মেষদের অন্বেষণ করবেন এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের “দেখাশোনা” করবেন। (যিহি. ৩৪:১১, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) তাই, পালকরা যখন বিপথগামী হয়েছে এমন মেষদেরকে পালের মধ্যে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য একইরকম প্রচেষ্টা করে থাকে, তখন ঈশ্বর খুশি হন।

৮. কোন কোন উপায়ে প্রাচীনরা মেষদের প্রতি ব্যক্তিগত মনোযোগ দিতে পারে?

একজন সহবিশ্বাসী যখন দৈহিকভাবে অসুস্থ হন, তখন ঈশ্বরের পালের একজন পালকের সাক্ষাৎ, আনন্দ ও উৎসাহের এক উৎস হতে পারে। এটা সেই সময়েও সত্য হতে পারে, যখন আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ একজন মেষের প্রতি ব্যক্তিগত মনোযোগ দেওয়া হয়। প্রাচীনরা হয়তো বিভিন্ন শাস্ত্রপদ পড়তে, একটা প্রবন্ধ পুনরালোচনা করতে, সভার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে, নিষ্ক্রিয় ব্যক্তির সঙ্গে প্রার্থনা করতে অথবা অন্যান্য বিষয় করতে পারে। তারা উল্লেখ করতে পারে যে, মণ্ডলীর সদস্যরা তাকে মণ্ডলীর সভাগুলোতে ফিরে আসতে দেখে আনন্দিত হবে। (২ করি. ১:৩-৭; যাকোব ৫:১৩-১৫) একটা সাক্ষাৎ, একটা টেলিফোন কল অথবা একটা চিঠি অনেক অর্থ বহন করতে পারে! এ ছাড়া, পাল থেকে হারিয়ে গিয়েছে এমন একটা মেষকে ব্যক্তিগত সাহায্য প্রদান করা সমবেদনাময় খ্রিস্টান পালকের আনন্দকেও বৃদ্ধি করতে পারে।

এক সম্মিলিত প্রচেষ্টা

৯, ১০. কেন আপনি বলবেন যে, বিপথগামী একটা মেষের প্রতি আগ্রহ দেখানোর দায়িত্ব শুধু প্রাচীনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়?

আমরা এক ব্যস্ত ও বিষম সময়ে বাস করছি আর তাই কোনো সহবিশ্বাসী যে মণ্ডলী থেকে ভেসে চলে যাচ্ছে, তা হয়তো আমরা লক্ষ না-ও করতে পারি। (ইব্রীয় ২:১) তবে, যিহোবার মেষেরা তাঁর দৃষ্টিতে অনেক মূল্যবান। তাদের প্রত্যেকের মূল্য রয়েছে, ঠিক যেমন মানবদেহের প্রতিটা অঙ্গ বা অংশের মূল্য রয়েছে। তাই, আমাদের সকলকে আমাদের ভাইবোনদের প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে এবং পরস্পরের প্রতি প্রকৃতই চিন্তা করতে হবে। (১ করি. ১২:২৫) আপনার কি এই ধরনের মনোভাব রয়েছে?

১০ যদিও বিপথগামী মেষদের অন্বেষণ ও সাহায্য করার প্রধান দায়িত্ব হল প্রাচীনদের কিন্তু হারিয়ে যাওয়া সহবিশ্বাসীদের প্রতি আগ্রহ কেবল খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যেরাও এই পালকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে। পালের মধ্যে ফিরে আসার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন সমস্ত ভাইবোনকে আমরা উৎসাহ ও আধ্যাত্মিক সহযোগিতা প্রদান করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত। কীভাবে এই ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা যেতে পারে?

১১, ১২. যাদের কিছু আধ্যাত্মিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে, তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য আপনি কীভাবে বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত হতে পারেন?

১১ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাচীনরা হয়তো সহযোগিতা লাভ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে এমন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য অভিজ্ঞ রাজ্য প্রকাশকদের দায়িত্ব দিতে পারে। এই ধরনের প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হল, এইরকম ব্যক্তিদের ‘আপন প্রথম প্রেমকে’ পুনরুজ্জীবিত করা। (প্রকা. ২:১, ৪) এই ধরনের সহবিশ্বাসীরা মণ্ডলীতে অনুপস্থিত থাকাকালীন যে-বিষয়বস্তু শুনতে পারেনি, সেগুলো বিবেচনা করার দ্বারা গেঁথে উঠতে এবং আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে।

১২ প্রাচীনরা যদি আপনাকে এমন কোনো সহবিশ্বাসীর সঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যার আধ্যাত্মিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে যিহোবা যাতে আপনাকে নির্দেশনা দেন এবং আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন, সেইজন্য প্রার্থনা করুন। বস্তুতপক্ষে, ‘আপনার কার্য্যের ভার সদাপ্রভুতে অর্পণ করুন, তাহাতে আপনার সঙ্কল্প সকল সিদ্ধ হইবে।’ (হিতো. ১৬:৩) সেইসমস্ত শাস্ত্রপদ ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধ্যান করুন, যেগুলো আপনি আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যবহার করতে পারেন। প্রেরিত পৌলের চমৎকার উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করুন। (পড়ুন, রোমীয় ১:১১, ১২.) পৌল রোমের খ্রিস্টানদের দেখার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন, যাতে তিনি তাদেরকে কিছু আত্মিক বর দান করতে পারেন আর এর ফলে তারা স্থিরীকৃত থাকে। এ ছাড়া, তিনি উভয় পক্ষের আশ্বাস বা উৎসাহ লাভ করার জন্যও প্রতীক্ষা করেছিলেন। আমরা যখন ঈশ্বরের পাল থেকে বিপথে গিয়েছে এমন মেষদের সাহায্য করার প্রচেষ্টা করি, তখন কি আমাদের সেই মনোভাব রাখা উচিত নয়?

১৩. একজন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তির সঙ্গে আপনি হয়তো কী আলোচনা করতে পারেন?

১৩ আপনাদের আলোচনার সময় আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: “আপনি কীভাবে সত্য জেনেছেন?” অতীতের আনন্দগুলো স্মরণ করতে সাহায্য করুন এবং নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে সভাগুলোতে, প্রচার কাজে ও সম্মেলনগুলোতে তার যে-আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে বলার জন্য উৎসাহিত করুন। যিহোবার সেবায় আপনারা হয়তো একত্রে যে-আনন্দময় সময়গুলো কাটিয়েছেন, সেই সম্বন্ধে মন্তব্য করুন। যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়ে আপনার নিজের আনন্দ সম্বন্ধে বলুন। (যাকোব ৪:৮) ঈশ্বর যে-উপায়ে তাঁর লোক হিসেবে আমাদের যত্ন নেন—বিশেষভাবে আমাদের ক্লেশের সময় আমাদেরকে সান্ত্বনা ও প্রত্যাশা দেওয়ার মাধ্যমে—সেটার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।—রোমীয় ১৫:৪; ২ করি. ১:৩, ৪.

১৪, ১৫. নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা একসময় উপভোগ করেছে এমন কোন আশীর্বাদগুলো তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া উপকারী হতে পারে?

১৪ খুব সম্ভবত, নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে এমন কিছু আশীর্বাদ সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেওয়া উপকারজনক হবে, যা তিনি মণ্ডলীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করার ফলে একসময় উপভোগ করতেন। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের বাক্য ও উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান বৃদ্ধি করার আশীর্বাদ তার ছিল। (হিতো. ৪:১৮) তিনি যখন ‘আত্মার বশে চলিতেন,’ তখন নিঃসন্দেহে তার পক্ষে পাপের প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করা সহজ ছিল। (গালা. ৫:২২-২৬) ফলস্বরূপ, এক শুদ্ধ বিবেক তাকে প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হতে সমর্থ করত এবং তিনি “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা” উপভোগ করতেন, যা ‘আমাদের হৃদয় ও মন রক্ষা করে।’ (ফিলি. ৪:৬, ৭) এই বিষয়গুলো মনে রাখুন, আন্তরিক আগ্রহ দেখান এবং সর্বোপরি আপনার আধ্যাত্মিক ভাই অথবা বোনকে পালের মধ্যে ফিরে আসার জন্য প্রেমের সঙ্গে উৎসাহিত করুন।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৪.

১৫ ধরুন, একজন প্রাচীন হিসেবে আপনি একটা পালকীয় সাক্ষাৎ করছেন। আপনি হয়তো নিষ্ক্রিয় এক দম্পতিকে সেই সময় সম্বন্ধে চিন্তা করার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন, যখন তারা ঈশ্বরের বাক্য থেকে প্রথম সত্য জেনেছিল। সেই সত্য কতই না অপূর্ব, যুক্তিযুক্ত ও পরিতৃপ্তিদায়ক ছিল এবং তা আধ্যাত্মিকভাবে কত স্বাধীনই না করেছিল! (যোহন ৮:৩২) যিহোবা, তাঁর প্রেম এবং তাঁর চমৎকার উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে তারা যা জেনেছিল, সেটার জন্য তারা কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিল! (তুলনা করুন, লূক ২৪:৩২.) তাদেরকে মনে করিয়ে দিন যে, উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানরা যিহোবার সঙ্গে নিকট সম্পর্ক ও প্রার্থনা করার অপূর্ব সুযোগ উপভোগ করে। ‘পরম ধন্য ঈশ্বর’ যিহোবার “গৌরবের সুসমাচারের” প্রতি পুনরায় সাড়া দেওয়ার জন্য নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের আন্তরিকভাবে উৎসাহিত করুন।—১ তীম. ১:১১.

তাদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলুন

১৬. একটা উদাহরণ দিন, যা দেখায় যে, আধ্যাত্মিক সাহায্য জোগানোর প্রচেষ্টাগুলো সত্যিই কার্যকারী।

১৬ উল্লেখিত পরামর্শগুলো কি সত্যিই কার্যকারী? হ্যাঁ। উদাহরণস্বরূপ, ১২ বছর বয়সে রাজ্যের প্রকাশক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন এমন একজন অল্পবয়সি, ১৫ বছর বয়সে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, পরে তিনি সক্রিয় হয়েছিলেন এবং ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত আছেন। তার আধ্যাত্মিক আরোগ্য অনেকাংশে একজন খ্রিস্টান প্রাচীনের দ্বারা প্রদত্ত সহযোগিতার কারণে হয়েছিল। সেই আধ্যাত্মিক সাহায্যের জন্য তিনি কত কৃতজ্ঞতই না হয়েছিলেন!

১৭, ১৮. কোন গুণাবলি আপনাকে এমন কাউকে সহযোগিতা করতে সাহায্য করবে, যিনি ঈশ্বরের পাল থেকে বিপথে গিয়েছেন?

১৭ নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের মণ্ডলীতে ফিরে আসার জন্য সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে প্রেমই খ্রিস্টানদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর অনুসারীদের বিষয়ে যিশু বলেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) হ্যাঁ, প্রেম হল সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্তকারী চিহ্ন। এই প্রেম কি সেই বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানদের প্রতি দেখানো উচিত নয়, যারা হয়তো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে? অবশ্যই দেখানো উচিত! কিন্তু, প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগানোর জন্য হয়তো বিভিন্ন ধরনের ঈশ্বরীয় গুণ প্রদর্শন করা প্রয়োজন।

১৮ আপনি যদি এমন কাউকে সাহায্য করতে চান, যিনি ঈশ্বরের পাল থেকে বিপথগামী হয়েছেন, তাহলে আপনাকে হয়তো কোন গুণাবলি প্রদর্শন করতে হবে? প্রেম দেখানোর পাশাপাশি আপনাকে করুণা বা সমবেদনা, মধুরভাব বা দয়া, মৃদুতা এবং দীর্ঘসহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আপনাকে হয়তো ক্ষমাশীলও হতে হবে। পৌল লিখেছিলেন: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [“যিহোবা,” NW] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কল. ৩:১২-১৪.

১৯. মেষতুল্য ব্যক্তিদের খ্রিস্টীয় পালের মধ্যে ফিরে আসতে সাহায্য করার প্রচেষ্টা করা কেন যথার্থ?

১৯ এই সংখ্যার পরবর্তী অধ্যয়ন প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে যে, কেন কিছু ব্যক্তি ঈশ্বরের পাল থেকে বিপথে যায়। এ ছাড়া, এটি এও দেখাবে, যে-ব্যক্তিরা ফিরে আসে তারা কীভাবে আশা করতে পারে যে, তাদেরকে গ্রহণ করা হবে। আপনি যখন সেই প্রবন্ধ অধ্যয়ন করবেন এবং এই প্রবন্ধ নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন নিশ্চিত থাকুন যে, মেষতুল্য ব্যক্তিদের খ্রিস্টীয় পালের মধ্যে ফিরে আসতে সাহায্য করার আশা নিয়ে আপনি যে-প্রচেষ্টাই করুন না কেন, তা যথার্থ। বর্তমান বিধিব্যবস্থায়, অনেক ব্যক্তি বস্তুগত ধনসম্পদ অর্জন করার প্রচেষ্টায় তাদের সম্পূর্ণ জীবন ব্যয় করে কিন্তু জগতের সমস্ত টাকাপয়সার চেয়ে কেবলমাত্র একটা জীবন আরও বেশি মূল্যবান। যিশু তাঁর হারানো মেষের দৃষ্টান্তে এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিলেন। (মথি ১৮:১২-১৪) আপনি যখন বিপথগামী হয়েছে যিহোবার এমন মেষতুল্য প্রিয় লোকদের পালের মধ্যে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক ও সনির্বন্ধ প্রচেষ্টা করেন, তখন যেন এই বিষয়টা সর্বদা মনে রাখেন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সেই মেষতুল্য ব্যক্তিদের প্রতি খ্রিস্টান পালকদের কোন দায়িত্ব রয়েছে, যারা পাল থেকে বিপথে গিয়েছে?

• কীভাবে আপনি সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারেন, যারা এখন মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করছে না?

• কোন গুণাবলি আপনাকে সেই ব্যক্তিদের সহযোগিতা করার জন্য সাহায্য করতে পারে, যারা পাল থেকে বিপথে গিয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টান পালকরা সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য প্রেমের সঙ্গে প্রচেষ্টা করে, যারা ঈশ্বরের পাল থেকে বিপথে গিয়েছে