সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

“তুমি . . . তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।”—মার্ক ১২:৩০.

১. মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য কী ছিল?

 মানব সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্যের মধ্যে অসুস্থতা ও মৃত্যু ছিল না। আদম ও হবাকে “কৃষিকর্ম্ম ও রক্ষার্থে” এদন উদ্যানে বা আনন্দদায়ক পরমদেশে রাখা হয়েছিল, তবে কেবল ৭০ বা ৮০ বছরের জন্য নয় কিন্তু চিরকালের জন্য। (আদি. ২:৮, ১৫; গীত. ৯০:১০) সেই প্রথম মানব দম্পতি যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকত এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রেমের সঙ্গে বশীভূত হতো, তাহলে তারা কখনোই দুর্বল স্বাস্থ্য, জীর্ণ অবস্থা ও মৃত্যুর শিকার হতো না।

২, ৩. (ক) উপদেশক পুস্তকে বার্ধক্যকে কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে? (খ) আদমজাত মৃত্যুর জন্য কে দায়ী আর এর প্রভাবগুলোকে কীভাবে দূর করা হবে?

উপদেশক ১২ অধ্যায় ‘দুঃসময়ের’ এক সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে, যা বার্ধক্যের ফলে অসিদ্ধ মানুষের ওপর এসে থাকে। (পড়ুন, উপদেশক ১২:১-৭.) পাকা চুলকে “কদম্ব” পুষ্পিত হওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পা-কে ‘পরাক্রমী ব্যক্তিগণের’ সদৃশ বলা হয়েছে, যা এখন নত ও টলমল হয়ে পড়েছে। যে-মহিলারা আলোর সন্ধানে গবাক্ষ বা জানালার কাছে যায় এবং কেবল অন্ধকারই দেখতে পায়, তারা ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির এক উপযুক্ত দৃষ্টান্ত। যেহেতু কিছু দাঁত পড়ে যায়, তাই ‘পেষণকারী লোকেরা অল্প হইয়াছে বলিয়া কর্ম্ম ত্যাগ করে।’

কম্পিত পা, ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি এবং দাঁতহীন মাঢ়ি নিশ্চিতভাবেই মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য ছিল না। অধিকন্তু, আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মৃত্যু হচ্ছে ‘দিয়াবলের কার্য্য সকলের’ মধ্যে একটা, যা ঈশ্বরের পুত্র তাঁর মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে দূর করবেন। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের পুত্ত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করেন।”—১ যোহন ৩:৮.

ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা স্বাভাবিক

৪. কেন যিহোবার দাসেরা তাদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ভারসাম্যপূর্ণভাবে চিন্তা করে থাকে কিন্তু সেইসঙ্গে তারা কী জানে?

বর্তমানে, যিহোবার কিছু দাস দুর্বল স্বাস্থ্য ও বার্ধক্যের ফলে আসা সেইসমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়, যেগুলো পাপপূর্ণ মানবজাতির জন্য স্বাভাবিক বিষয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যুক্তিযুক্ত বা ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা করা স্বাভাবিক আর তা এমনকি উপকারজনকও। আমরা কি ‘আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়া’ যিহোবাকে সেবা করতে চাই না? (মার্ক ১২:৩০) কিন্তু, মোটামুটিভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাস্তববাদী হওয়া ও বোঝা উচিত যে, বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করার অথবা সমস্ত ধরনের অসুস্থতা এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে আমরা খুব সামান্যই করতে পারি।

৫. ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা অসুস্থতার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করেছে, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাসকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে ইপাফ্রদীত ছিলেন একজন। (ফিলি. ২:২৫-২৭) প্রেরিত পৌলের একজন অনুগত সঙ্গী তীমথিয়ের বার বার পেটের অসুখ হতো, যেকারণে পৌল তাকে “কিঞ্চিত দ্রাক্ষারস” পান করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ তীম. ৫:২৩) স্বয়ং পৌলকেও ‘মাংসের একটা কন্টকের’ সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল, সম্ভবত চোখের কোনো সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতা, যেটার সেই সময়ে কোনো চিকিৎসা ছিল না। (২ করি. ১২:৭; গালা. ৪:১৫; ৬:১১) তার ‘মাংসের কন্টকের’ সম্বন্ধে পৌল যিহোবার কাছে কয়েক বার ঐকান্তিকভাবে বিনতি করেছিলেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১২:৮-১০.) ঈশ্বর অলৌকিকভাবে পৌলকে ‘মাংসের কন্টক’ থেকে মুক্ত করেননি। পরিবর্তে, ঈশ্বর তাকে এটা সহ্য করার জন্য শক্তি জুগিয়েছিলেন। এভাবে পৌলের দুর্বলতায় যিহোবার শক্তি প্রকাশ পেয়েছিল। নিশ্চিতভাবেই, এই ঘটনা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।

স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত চিন্তা করা এড়িয়ে চলুন

৬, ৭. কেন আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা এড়িয়ে চলা উচিত?

আপনি যেমন জানেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের সচেতন থাক! পত্রিকা, যেটি কয়েকটা ভাষায় প্রকাশিত হয়, সেটিতে প্রায়ই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ থাকে। আর যদিও আমরা নির্দিষ্ট কোনো একটা চিকিৎসা সম্বন্ধে সুপারিশ করি না কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। অবশ্য, এই বিষয়ে আমরা অবগত যে, নিখুঁত স্বাস্থ্য এখনই অর্জন করা যাবে না। তাই, আমরা জানি যে, স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তার দ্বারা মনকে আচ্ছন্ন করা এড়িয়ে চলা বা তা নিয়ে সবসময় চিন্তিত হওয়া পরিহার করা হবে বিজ্ঞতার কাজ। আমাদের মনোভাব সেই লোকেদের থেকে ভিন্ন হওয়া উচিত, যাদের কোনো ‘আশা নাই,’ যারা মনে করে যে, এই জীবনই সবকিছু এবং যারা তাদের অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য যেকোনো চিকিৎসার আশ্রয় নেয়। (ইফি. ২:২, ১২) আমাদের বর্তমান জীবনকে বাঁচাতে গিয়ে যিহোবার অনুমোদন না হারানোর বিষয়ে আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ কারণ আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, আমরা যদি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে আমরা “যাহা প্রকৃতরূপে জীবন” অর্থাৎ তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন বিধিব্যবস্থায় অনন্তজীবন “ধরিয়া রাখিতে” পারব।—১ তীম. ৬:১২, ১৯; ২ পিতর ৩:১৩.

আরেকটা কারণে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা এড়িয়ে চলি। আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যধিক চিন্তিত হওয়া আমাদেরকে আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলতে পারে। পৌল এই বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করেছিলেন, যখন তিনি ফিলিপীয়দেরকে জোরালোভাবে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন, “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।” (ফিলি. ২:৪) নিজেদের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণভাবে যত্ন নেওয়া উপযুক্ত কিন্তু আমাদের ভাইবোনদের ও যে-লোকেদের কাছে আমরা “রাজ্যের এই সুসমাচার” নিয়ে যাই, তাদের প্রতি আমরা যে-গভীর আগ্রহ দেখাই, তা আমাদেরকে নিজেদের শারীরিক মঙ্গলের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়া থেকে বিরত করবে।—মথি ২৪:১৪.

৮. আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অযথা চিন্তা করা আমাদেরকে কী করতে পরিচালিত করতে পারে?

যে-বিপদটা রয়েছে তা হল, একজন খ্রিস্টান হয়তো স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণে রাজ্যের বিষয়গুলোকে অবহেলা করতে পারেন। এ ছাড়া, স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের মনকে আচ্ছন্ন করা আমাদেরকে কিছু খাদ্যতালিকার, থেরাপির বা সম্পূরক খাদ্যের গুরুত্ব সম্বন্ধে ব্যক্তিগত মতামতগুলো অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, পৌলের কথাগুলোতে প্রকাশিত নীতিটি বিবেচনা করুন: “যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পার, খ্রীষ্টের দিন পর্য্যন্ত যেন তোমরা সরল ও বিঘ্নরহিত থাক।”—ফিলি. ১:১০.

কী বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

৯. বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটা কী, যা আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং কেন?

যদি আমরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরীক্ষা করি, তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক আরোগ্যকরণের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেব। এটা ঈশ্বরের বাক্য প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার দ্বারা সম্পাদিত হয়। এই আনন্দদায়ক কাজ আমাদের নিজেদের ও সেইসঙ্গে আমরা যাদেরকে শিক্ষা দিই, তাদের উপকার করে। (হিতো. ১৭:২২; ১ তীম. ৪:১৫, ১৬) প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকার মধ্যে প্রায়ই আমাদের সেই আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রবন্ধ থাকে, যারা গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছে। এই বিবরণগুলো মাঝে মাঝে ব্যাখ্যা করে যে, কীভাবে এই ব্যক্তিরা তাদের পরিস্থিতিকে সহ্য করে অথবা অন্যদেরকে যিহোবা ও তাঁর অপূর্ব প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ খোঁজার মাধ্যমে সাময়িকভাবে তাদের সমস্যাগুলোকে ভুলে থাকে। *

১০. আমরা কোন চিকিৎসাপদ্ধতি বাছাই করি, তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১০ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে, চিকিৎসা বাছাই করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক খ্রিস্টানের “নিজ নিজ” দায়িত্বের ‘ভার বহন করিতে’ হবে। (গালা. ৬:৫) কিন্তু, আমাদের মনে রাখা উচিত যে, আমরা কোন চিকিৎসাপদ্ধতি বাছাই করি, সেই বিষয়টা যিহোবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক যেমন বাইবেলের নীতিগুলোর প্রতি সম্মান আমাদেরকে “রক্ত . . . হইতে পৃথক্‌” থাকতে পরিচালিত করে, তেমনই ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি গভীর সম্মান আমাদেরকে এমন চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া এড়িয়ে চলতে পরিচালিত করে, যা আধ্যাত্মিকভাবে আমাদের ক্ষতি করতে পারে অথবা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে। (প্রেরিত ১৫:২০) কিছু রোগনির্ণয়পদ্ধতি এবং চিকিৎসাপদ্ধতি ভূতুড়ে বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে হয়। যে-ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েলীয়রা প্রেতচর্চার আশ্রয় নিয়েছিল, যিহোবা তাদেরকে অনুমোদন করেননি। তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “অসার নৈবেদ্য আর আনিও না; ধূপদাহ আমার ঘৃণিত; অমাবস্যা, বিশ্রামবার, সভার ঘোষণা—আমি অধর্ম্মযুক্ত [“ভূতুড়ে শক্তির ব্যবহার এবং,” NW] পর্ব্বসভা সহিতে পারি না।” (যিশা. ১:১৩) অসুস্থতার সময়কাল নিশ্চিতভাবেই এমন কোনোকিছু করার সময় নয়, যা আমাদের প্রার্থনাকে রোধ করে দিতে পারে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।—বিলাপ ৩:৪৪.

‘সংযত ভাব’ অপরিহার্য

১১, ১২. স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার বিষয়টা বাছাই করার সময় ‘সংযত ভাব’ কীভাবে ভূমিকা পালন করে?

১১ আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন আমরা আশা করতে পারি না যে, যিহোবা অলৌকিকভাবে আমাদের সুস্থ করে দেবেন কিন্তু আমরা চিকিৎসা বেছে নেওয়ার জন্য ঐশিক প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করতে পারি। বাছাই করার ক্ষেত্রে আমাদের বাইবেলের বিভিন্ন নীতি ও উত্তম বিচারবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। অসুস্থতা যখন গুরুতর হয়, তখন হিতোপদেশ ১৫:২২ পদে প্রকাশিত ধারণার সঙ্গে মিল রেখে যদি সম্ভব হয় কয়েক জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে মন্ত্রণা বা আলোচনা করা বিজ্ঞতার কাজ হতে পারে, যে-পদে বলা হয়েছে: “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়; কিন্তু মন্ত্রিরাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়।” প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন কর।’—তীত ২:১২.

১২ অনেকে যিশুর দিনের একজন অসুস্থ মহিলার মতো একই পরিস্থিতিতে রয়েছে। মার্ক ৫:২৫, ২৬ পদে আমরা পড়ি: “একটী স্ত্রীলোক বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত হইয়াছিল, অনেক চিকিৎসকের দ্বারা বিস্তর ক্লেশ ভোগ করিয়াছিল, এবং সর্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও কিছু উপশম পায় নাই, বরং আরও পীড়িত হইয়াছিল।” যিশু সেই মহিলাকে সুস্থ করেছিলেন ও তার সঙ্গে সমবেদনাপূর্ণ আচরণ করেছিলেন। (মার্ক ৫:২৭-৩৪) হতাশ হয়ে কিছু খ্রিস্টান হয়তো এমন রোগনির্ণয়পদ্ধতি অথবা চিকিৎসাপদ্ধতি বেছে নেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হয়েছে, যা বিশুদ্ধ উপাসনার নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করে।

১৩, ১৪. (ক) কীভাবে শয়তান আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার জন্য আমাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বাছাইগুলোকে ব্যবহার করতে পারে? (খ) কেন আমাদের এমন যেকোনো কিছু থেকে দূরে থাকা উচিত, যেগুলো জাদুমন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১৩ আমাদেরকে সত্য উপাসনা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শয়তান যেকোনো পদ্ধতির আশ্রয় নেবে। ঠিক যেমন শয়তান কাউকে কাউকে অন্যায় করানোর জন্য যৌন অনৈতিকতা এবং বস্তুবাদিতাকে কাজে লাগায়, তেমনই সে সেই আপত্তিকর চিকিৎসাগুলোর মাধ্যমে অন্যদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে, যেগুলো জাদুমন্ত্র ও প্রেতচর্চার ব্যবহারের মতোই। আমাদেরকে ‘দুষ্ট ব্যক্তি’ ও “সমস্ত অধর্ম্ম” থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। তাই, প্রেতচর্চা ও জাদুমন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনোকিছুর সংস্পর্শে নিজেদেরকে নিয়ে এসে আমাদের শয়তানের হাতের পুতুল হওয়া উচিত নয়।—মথি ৬:১৩, NW; তীত ২:১৪.

১৪ যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে মন্ত্র ব্যবহার করতে ও গণনা বা জাদুবিদ্যা চর্চা করতে নিষেধ করেছিলেন। (দ্বিতী. ১৮:১০-১২) প্রেরিত পৌল “কুহক” বা প্রেতচর্চাকে ‘মাংসের কার্য্য সকলের’ মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছেন। (গালা. ৫:১৯, ২০) অধিকন্তু, যারা “মায়াবী” বা প্রেতচর্চা করে, তারা যিহোবার নতুন বিধিব্যবস্থায় কোনো অংশ পাবে না। (প্রকা. ২১:৮) তাই এটা স্পষ্ট যে, প্রেতচর্চার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া রয়েছে এমন যেকোনো কিছুই যিহোবার চোখে ঘৃণিত।

“তোমাদের যুক্তিবাদিতা মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক”

১৫, ১৬. স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার বিষয় বাছাই করার সময় কেন আমাদের প্রজ্ঞার প্রয়োজন এবং প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠী কোন বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিল?

১৫ উপরোক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, কিছু রোগনির্ণয়পদ্ধতি বা চিকিৎসাপদ্ধতি সম্বন্ধে যদি আমাদের সন্দেহ থাকে, তাহলে সেটা প্রত্যাখ্যান করা আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে। অবশ্য, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে, তা আমরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ হলেই তার অর্থ এই নয় যে, এটা কোনো ধরনের প্রেতচর্চার সঙ্গে জড়িত। স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য আমাদের ঐশিক বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার এবং উত্তম বিচারবুদ্ধির প্রয়োজন। হিতোপদেশ ৩ অধ্যায়ে আমরা এই উপদেশ পাই: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন। . . . তুমি সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর। তাহাতে সে সকল তোমার প্রাণের জীবনস্বরূপ হইবে।”—হিতো. ৩:৫, ৬, ২১, ২২.

১৬ যতটা সম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যখন অসুস্থতা অথবা বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করি, তখন আমাদেরকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ না হারানোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যান্য বিষয়ের মতো স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার সময়ও বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার মাধ্যমে ‘আমাদের শান্ত ভাব [“যুক্তিবাদিতা,” NW] মনুষ্যমাত্রের বিদিত’ হতে দেওয়া উচিত। (ফিলি. ৪:৫) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চিঠিতে, প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠী খ্রিস্টানদেরকে প্রতিমাপূজা, রক্ত ও ব্যভিচার থেকে পৃথক থাকার নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই চিঠিতে এই আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল: “এই সকল হইতে আপনাদিগকে সযত্নে রক্ষা করিলে তোমাদের কুশল হইবে।” (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) কীভাবে?

নিখুঁত স্বাস্থ্যের দিকে দৃষ্টি রেখে ভারসাম্যপূর্ণ যত্ন

১৭. বাইবেলের নীতিগুলো অনুযায়ী চলার কারণে আমরা শারীরিক দিক দিয়ে কীভাবে উপকার লাভ করেছি?

১৭ আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘রক্ত ও ব্যভিচারের বিষয়ে বাইবেলের নীতিগুলো দৃঢ়ভাবে পালন করার ফলে ব্যক্তিগতভাবে আমি যতটা উপকার লাভ করেছি, তা কি আমি পুরোপুরি উপলব্ধি করি?’ এ ছাড়া, ‘মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করিবার’ জন্য আমাদের প্রচেষ্টার ফলে যে-উপকারগুলো আমরা পেয়েছি, সেগুলো সম্বন্ধেও চিন্তা করুন। (২ করি. ৭:১) ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বাইবেলের মান অনুযায়ী চলার মাধ্যমে আমরা অনেক শারীরিক অসুস্থতা এড়াতে পারি। তামাক ও অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার, যেগুলো আধ্যাত্মিক ও শারীরিক দিক দিয়ে কলুষিত করে, সেগুলো পরিহার করার ফলে আমরা সমৃদ্ধি লাভ করি। এ ছাড়া, পরিমিত মাত্রায় খাওয়াদাওয়া ও পান করার কারণে স্বাস্থ্যের যে-উপকারগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোও বিবেচনা করুন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৩:২০; তীত ২:২, ৩.) বিশ্রাম নেওয়া ও ব্যায়াম করা যদিও আমাদের স্বাভাবিক মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবদান রাখে কিন্তু শাস্ত্রীয় নির্দেশনা মেনে চলার কারণেই আমরা বিশেষ করে শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করেছি।

১৮. আমাদের প্রধান চিন্তা কী হওয়া উচিত এবং স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কোন ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার জন্য আমরা সানন্দে অপেক্ষা করতে পারি?

১৮ সর্বোপরি, আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ককে শক্তিশালী করা উচিত, যিনি আমাদের “বর্ত্তমান ও” তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে “ভবিষ্যৎ জীবনের” উৎস। (১ তীম. ৪:৮; গীত. ৩৬:৯) ঈশ্বরের নতুন জগতে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে পাপ ক্ষমার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে আধ্যাত্মিক ও শারীরিক আরোগ্য করা হবে। ঈশ্বরের মেষশাবক যিশু খ্রিস্ট আমাদেরকে “জীবন-জলের উনুইয়ের” দিকে পরিচালিত করবেন আর ঈশ্বর আমাদের সমস্ত নেত্রজল মুছে দেবেন। (প্রকা. ৭:১৪-১৭; ২২:১, ২) তখন আমরা এই রোমাঞ্চকর ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখব: “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।”—যিশা. ৩৩:২৪.

১৯. আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণভাবে যত্ন নেওয়ার সময় আমরা কোন আশ্বাস পেতে পারি?

১৯ আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, আমাদের মুক্তি সন্নিকট আর আমরা আকুলভাবে সেই দিনের অপেক্ষা করে আছি, যখন যিহোবা মানব অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রক্রিয়াকে বিপরীতমুখী করবেন। সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, আমাদের ব্যথা ও কষ্টের বোঝা সহ্য করতে আমাদের প্রেমময় পিতা আমাদেরকে সাহায্য করবেন কারণ ‘তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৭) অতএব, আসুন আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিই, তবে সবসময় ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ স্পষ্ট নির্দেশনাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে!

[পাদটীকা]

^ এই ধরনের কিছু প্রবন্ধের একটা তালিকা ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৭ পৃষ্ঠার বাক্সে রয়েছে।

পুনরালোচনার মাধ্যমে

• অসুস্থতার জন্য কে দায়ী আর কে আমাদেরকে পাপের প্রভাবগুলো থেকে মুক্ত করবেন?

• আমাদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে চিন্তিত হওয়া যদিও স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত?

• আমরা কোন চিকিৎসাপদ্ধতি বাছাই করি, তা কেন যিহোবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ?

• বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলে কীভাবে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে উপকার লাভ করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

মানবজাতিকে অসুস্থতার ও বার্ধক্যের শিকার হওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সত্ত্বেও, যিহোবার লোকেরা পরিচর্যায় আনন্দ খুঁজে পায়