সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞ হোন

বৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞ হোন

বৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞ হোন

 উফ্‌, বৃষ্টি না হলে যে, কী হতো! এটা ঠিক যে, অতিবৃষ্টি ধ্বংসাত্মক বন্যার কারণ হতে পারে। আর যে-লোকেরা ঠাণ্ডা, আর্দ্র আবহাওয়া বা এইরকম ঋতুগুলোতে বাস করে, তারা হয়তো সবসময় বৃষ্টি পছন্দ করে না। (ইষ্রা ১০:১০) কিন্তু সেই লক্ষ লক্ষ লোকের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদেরকে বেশিরভাগ সময়েই গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া সহ্য করতে হয়? শেষপর্যন্ত যখন বৃষ্টি নামে, উহ্‌ তখন কতই না সতেজ লাগে!

বাইবেলে বর্ণিত দেশগুলো, যেমন এশিয়া মাইনরের অন্তবর্তী এলাকা, যেখানে প্রেরিত পৌল মিশনারি কাজ করেছিলেন, সেখানে এই বিষয়টা সত্য ছিল। সেখানে থাকাকালীন পৌল প্রাচীন লুকায়নীয়দের উদ্দেশে বলেছিলেন: “[ঈশ্বর] আপনাকে সাক্ষ্যবিহীন রাখেন নাই, কেননা তিনি মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে আপনাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) লক্ষ করুন যে, পৌল প্রথমে বৃষ্টি সম্বন্ধে বলেছিলেন কারণ বৃষ্টি ছাড়া কোনোকিছুই বৃদ্ধি পেতে পারে না এবং “ফলোৎপাদক ঋতুগণ” থাকবে না।

বৃষ্টি সম্বন্ধে বাইবেল অনেক কিছু বলে। বাইবেলে বৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দগুলো এক-শোরও বেশি বার এসেছে। আপনি কি এই উল্লেখযোগ্য উপহার, বৃষ্টির সম্বন্ধে আরও কিছু জানতে চান? একইসময়ে, আপনি কি বাইবেলের বৈজ্ঞানিক সঠিকতার ওপর আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে চান?

বৃষ্টি সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে

যিশু খ্রিস্ট একটা অপরিহার্য ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলেন, যেটা ছাড়া বৃষ্টিই হতো না। যিশু বলেছিলেন, ‘তোমাদের পিতা ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।’ (মথি ৫:৪৫) আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, যিশু বৃষ্টি সম্পর্কে বলার আগে সূর্যের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন? এই বিষয়টা উপযুক্ত কারণ সূর্য শুধুমাত্র গাছপালাকে বেড়ে ওঠার জন্য শক্তিই প্রদান করে না কিন্তু পৃথিবীর জলচক্রকেও সক্রিয় রাখে। হ্যাঁ, সূর্য থেকে নির্গত তাপ প্রতি বছর প্রায় ৪,০০,০০০ ঘন কিলোমিটার সমুদ্রের নোনাজলকে বাষ্পীভূত করে মিঠা জলের বাষ্পে পরিণত করে। যিহোবা ঈশ্বর যেহেতু সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন, তাই উপযুক্তভাবেই বলা যেতে পারে যে, তিনি বৃষ্টি উৎপাদন করার জন্য জলকে আকর্ষণ করেন।

বাইবেল জলচক্রকে এই কথাগুলোর মাধ্যমে বর্ণনা করে: “ঈশ্বর . . . জলের বিন্দু সকল আকর্ষণ করেন, সেগুলি তাঁহার বাষ্প হইতে বৃষ্টিরূপে পড়ে; জলদপটল [“মেঘ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] তাহা ঢালিয়া দেয়, তাহা মনুষ্যদের উপরে প্রচুররূপে পতিত হয়।” (ইয়োব ৩৬:২৬-২৮) হাজার হাজার বছর আগে, বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক এই কথাগুলো লেখার সময় থেকে জলচক্র সম্বন্ধে বুঝতে চেষ্টা করার জন্য মানুষ অনেক সময় পেয়েছে। জলবিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিদ্যা (ইংরেজি) নামক ২০০৩ সালের পাঠ্যপুস্তকটি বলে, “বর্তমানে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর গঠনপদ্ধতি নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।”

বিজ্ঞানীরা যা জানে তা হল, বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গঠিত হয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অসংখ্য কণা দিয়ে, যেগুলো মেঘের মধ্যে থাকা অতি ক্ষুদ্র জলকণার নিউক্লিয়াস গঠন করে। এই জলকণার প্রতিটা বিন্দুকে এক ফোঁটা বৃষ্টিতে পরিণত হওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ বা তারও বেশি গুণ বৃদ্ধি পেতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া, যেটার জন্য কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। জলবিজ্ঞানের অনুশীলন (ইংরেজি) নামক বিজ্ঞানের একটি পাঠ্যপুস্তক বলে: “মেঘের মধ্যে থাকা জলকণাগুলো কীভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বৃষ্টির ফোঁটায় পরিণত হয়, সেই বিষয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে আর প্রস্তাবিত কয়েকটা পদ্ধতির বিশদ বর্ণনা সম্বন্ধে অনুসন্ধান এখনও গবেষণা কর্মীদের মনোযোগের দাবি রাখে।”

যে-পদ্ধতিগুলো বৃষ্টি উৎপন্ন করে, সেগুলোর সৃষ্টিকর্তা তাঁর দাস ইয়োবকে এই বিস্ময়কর প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন: “বৃষ্টির পিতা কেহ কি আছে? শিশির-বিন্দুসমূহের জনকই বা কে? কে ঘোর ঘনমালাকে জ্ঞান দিয়াছে? . . . কে প্রজ্ঞাবলে মেঘসমূহ গণিতে পারে? আকাশের কুপাগুলি কে উল্টাইতে পারে?” (ইয়োব ৩৮:২৮, ৩৬, ৩৭) প্রায় ৩,৫০০ বছর পরেও, বিজ্ঞানীরা এখনও এই কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

জলচক্র কোন দিকে আবর্তিত হয়?

গ্রিক দার্শনিকরা শিক্ষা দিয়েছিল যে, নদীর জলের উৎস বৃষ্টি নয় কিন্তু সমুদ্রের নোনাজল, যা ভূগর্ভ থেকে যেকোনোভাবেই প্রবাহিত হয়ে পর্বতরাশির ওপরে উঠে যায় এবং বিশুদ্ধ ঝরনার জলে পরিণত হয়। বাইবেল সংক্রান্ত একটি মন্তব্য দাবী করে যে, শলোমন এইরকম এক ধারণায় বিশ্বাস করতেন। শলোমনের অনুপ্রাণিত এই কথাগুলোকে বিবেচনা করুন: “জলস্রোত সকল সমুদ্রে প্রবেশ করে, তথাচ সমুদ্র পূর্ণ হয় না; জলস্রোত সকল যে স্থানে যায়, সেই স্থানে পুনরায় চলিয়া যায়।” (উপদেশক ১:৭) শলোমন কি আসলেই বলতে চেয়েছিলেন যে, সমুদ্রের নোনাজল কোনোভাবে পর্বতরাশির মধ্যে দিয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়? এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার জন্য আসুন আমরা দেখি যে, শলোমনের দেশের লোকেরা জলচক্র সম্বন্ধে কী বিশ্বাস করত। তারা কি ভুল ধারণাগুলোর দ্বারা আবদ্ধ ছিল?

শলোমনের সময়ের এক-শো বছরের চেয়ে কম সময় পরে, ঈশ্বরের ভাববাদী এলিয় কোন দিক থেকে বৃষ্টি আসবে বলে আশা করা যায়, সেই বিষয়ে তার বোধগম্যতা প্রকাশ করেছিলেন। তার সময়ে, তিন বছর ধরে দেশে সাংঘাতিক অনাবৃষ্টি চলছিল। (যাকোব ৫:১৭) যিহোবা ঈশ্বর তাঁর লোকেদের ওপর এই দুর্দশা নিয়ে এসেছিলেন কারণ তারা কনানীয় বৃষ্টির দেবতা বালের জন্য তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল। কিন্তু এলিয় ইস্রায়েলীয়দেরকে অনুতাপ করার দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করেছিলেন, তাই এখন তিনি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। প্রার্থনা করার সময় এলিয় তার পরিচারককে “সমুদ্রের দিকে” দৃষ্টিপাত করতে বলেছিলেন। “মনুষ্যহস্তের ন্যায় ক্ষুদ্র একখানি মেঘ সমুদ্র হইতে উঠিতেছে” খবর পেয়ে এলিয় বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেটা ছিল তার প্রার্থনার উত্তর। শীঘ্র, “মেঘে ও বায়ুতে আকাশ ঘোর হইয়া উঠিল ও ভারী বৃষ্টি হইল।” (১ রাজাবলি ১৮:৪৩-৪৫) এইভাবে এলিয় দেখিয়েছিলেন যে, জলচক্র সম্বন্ধে তার জ্ঞান রয়েছে। তিনি জানতেন যে, সমুদ্রের ওপর মেঘগুলো সৃষ্টি হয়ে পূর্বদিকে প্রতিজ্ঞাত দেশের ওপর বাতাস দ্বারা প্রবাহিত হবে। আজও, এই পদ্ধতিতে সেই দেশে বৃষ্টি হয়ে থাকে।

বৃষ্টির জন্য এলিয় প্রার্থনা করার প্রায় এক-শো বছর পরে, আমোষ নামে একজন সাধারণ কৃষক জলচক্রের উৎস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ এক বিশদ বিবরণের ওপর জোর দিয়েছিলেন। দরিদ্রদের ওপর অত্যাচার এবং মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করার কারণে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে ভাববাণী বলার জন্য আমোষ ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিলেন। পাছে তারা ঈশ্বরের হাতে বিনষ্ট হয়, সেই কারণে আমোষ তাদেরকে এই কথা বলে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, “সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, তাহাতে বাঁচিবে।” তারপর আমোষ ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একমাত্র যিহোবাকেই উপাসনা করা উচিত কারণ তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা, যিনি “সমুদ্রের জলসমূহকে ডাকিয়া স্থলের উপরে ঢালিয়া দেন।” (আমোষ ৫:৬,) পরে আমোষ জলচক্র এবং এর আবর্তন দিক সম্বন্ধীয় এই আশ্চর্য ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। (আমোষ ৯:৬) এইভাবে আমোষ দেখিয়েছিলেন যে, পৃথিবীতে বৃষ্টির প্রধান উৎস হল মহাসাগরগুলো।

এই তথ্যটি ১৬৮৭ সালে এডমন্ড হ্যালির দ্বারা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও, অন্যদের কাছে হ্যালির এই প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হতে যথেষ্ট সময় লেগেছিল। “অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিক পর্যন্ত এই ধারণাটা প্রচলিত ছিল যে, পৃথিবীর মধ্যে একটা আবর্তন ব্যবস্থার অস্তিত্ব রয়েছে, যেটার দ্বারা সমুদ্রের নোনাজল পর্বতের চূড়ায় গিয়ে ওঠে আর সেখানে নির্গত হয়,” এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনলাইন মন্তব্য করে। বর্তমানে জলচক্রের আবর্তন সম্বন্ধীয় সত্যটি সকলেই জানে। সেই একই উৎস ব্যাখ্যা করে: “সমুদ্রের নোনাজল বাষ্পীভূত হয় আর এরপর বায়ুমণ্ডলের মধ্যেই ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টির আকারে পৃথিবীতে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত নদীতে এসে মেশে আর নদী সমুদ্রে গিয়ে মেশে।” তাই এটা স্পষ্ট যে, উপদেশক ১:৭ পদে লিপিবদ্ধ বৃষ্টিচক্র সম্বন্ধে শলোমনের কথাগুলো, মেঘ ও বৃষ্টির সঙ্গে জড়িত এই একই প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে।

এটার দ্বারা আপনার কী করতে পরিচালিত হওয়া উচিত?

বাইবেলের বিভিন্ন লেখক যে এতটা সঠিকভাবে জলচক্র সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, সেটা হচ্ছে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রমাণের মধ্যে একটা যে, বাইবেল মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রণিত। (২ তীমথিয় ৩:১৬) এটা ঠিক যে, পৃথিবীর বিষয়ে মানুষের অব্যবস্থা স্পষ্টতই আবহাওয়ার গতি প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে, যার ফলে কিছু জায়গায় ভয়ংকর বন্যা হয় আর অন্য জায়গাগুলোতে খরা হয়। কিন্তু, জলচক্রের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বর বহু বছর আগে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি শেষপর্যন্ত হস্তক্ষেপ করবেন এবং ‘পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ করিবেন।’—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.

এই সময়ের মধ্যে, কীভাবে আপনি ঈশ্বরের দেওয়া বিভিন্ন উপহার, যেমন বৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারেন? তাঁর বাক্য বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং যা শেখেন, তা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার দ্বারা আপনি তা করতে পারেন। তাহলেই, ঈশ্বরের নতুন জগতে আপনার রক্ষা পাওয়ার আশা থাকবে, যেখানে ঈশ্বরের দেওয়া সব উপহারকে আপনি চিরকাল ধরে উপভোগ করতে পারবেন। কারণ বস্তুতপক্ষে, “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর” বৃষ্টির উৎস যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে।—যাকোব ১:১৭. (w০৯ ১/১)

[২৬, ২৭ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম/চিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ঘনীভবন

বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের বাষ্পত্যাগ বাষ্পীভবন

জলনিকাশ

ভূগর্ভস্থ জল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

এলিয় যখন প্রার্থনা করেছিলেন, তখন তার পরিচারক “সমুদ্রের দিকে” দৃষ্টিপাত করেছিলেন