সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি রাখুন

পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি রাখুন

পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি রাখুন

“লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি . . . পণ [“পুরস্কার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।”—ফিলি. ৩:১৪.

১. প্রেরিত পৌলের সামনে কোন পুরস্কার ছিল?

 প্রেরিত পৌল, যিনি তার্ষের শৌল হিসেবেও পরিচিত ছিলেন, তিনি এক বিশিষ্ট পরিবার থেকে এসেছিলেন। তিনি বিখ্যাত ব্যবস্থাবেত্তা গমলীয়েলের কাছ থেকে তার পিতৃপুরুষদের ধর্ম সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। (প্রেরিত ২২:৩) পৌলের সামনে উত্তম হিসেবে বিবেচ্য এক বৃত্তি ছিল; তা সত্ত্বেও তিনি তার ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন এবং একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন। এরপর তিনি অনন্তজীবনরূপ পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন, যা তার সামনে ছিল—আর সেটা হল ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে এক অমর রাজা ও যাজক হওয়া। সেই রাজ্য এক পরমদেশ পৃথিবীর ওপর শাসন করবে।—মথি ৬:১০; প্রকা. ৭:৪; ২০:৬.

২, ৩. স্বর্গীয় জীবনরূপ পুরস্কারকে পৌল কতটা উচ্চমূল্য দিয়েছিলেন?

পৌল সেই পুরস্কারকে কতটা মূল্যবান বলে গণ্য করতেন, তা দেখাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সে সমস্ত খ্রীষ্টের নিমিত্ত ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। আর বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি।” (ফিলি. ৩:৭, ৮) যে-বিষয়গুলোকে অধিকাংশ লোক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে—পদমর্যাদা, ধনসম্পদ, বৃত্তি, প্রতিপত্তি—সেগুলোকে পৌল মানবজাতির জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সত্য জানার পর মলবৎ গণ্য করেছিলেন।

সেই সময় থেকে, পৌলের কাছে যে-বিষয়টা আসলেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হল, যিহোবা ও খ্রিস্ট সম্বন্ধে জানা বা মূল্যবান জ্ঞান নেওয়া, যে-বিষয়ে যিশু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) অনন্তজীবন লাভ করার বিষয়ে পৌলের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ফিলিপীয় ৩:১৪ পদে লিপিবদ্ধ তার এই কথাগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়: “লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্‌স্থ আহ্বানের পুরস্কার পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।” হ্যাঁ, ঈশ্বরের রাজ্য সরকারের অংশ হিসেবে স্বর্গে অনন্তজীবন লাভ করার পুরস্কারের প্রতি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল।

পৃথিবীতে চিরকাল বাস করা

৪, ৫. লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির সামনে কোন পুরস্কার রয়েছে, যারা আজকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছে?

ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা বেছে নেয় এমন অধিকাংশ লোকের যে-পুরস্কারের জন্য কাজ করা উপযুক্ত তা হল, ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তজীবন। (গীত. ৩৭:১১, ২৯) যিশু নিশ্চিত করেছিলেন যে, এটা ছিল এক উপযুক্ত আশা। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) গীতসংহিতা ২:৮ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয় যে, যিশুই হলেন সেই প্রধান ব্যক্তি, যিনি আমাদের দেশ বা পৃথিবীর অধিকারী হবেন আর স্বর্গে তাঁর সঙ্গে ১,৪৪,০০০ জন সহশাসক থাকবে। (দানি. ৭:১৩, ১৪, ২২, ২৭) সেই মেষতুল্য ব্যক্তিরা, যারা আসলে পৃথিবীতে বাস করবে, তারা পার্থিব রাজ্যের “অধিকারী” হবে, যে-রাজ্য ‘জগতের পত্তনাবধি তাহাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে।’ (মথি ২৫:৩৪, ৪৬) আর আমাদেরকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, এটা পরিপূর্ণ হবেই কারণ ঈশ্বর, যিনি এই প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।” (তীত ১:২) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার ওপর আমরাও যিহোশূয়ের মতো সেই একই আস্থা রাখতে পারি, যে-আস্থা ইস্রায়েলীয়দের এই কথা বলার সময় তার ছিল: “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।”—যিহো. ২৩:১৪.

ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবন আজকের পরিতৃপ্তিহীন জীবনের মতো হবে না। সেই জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে: অপরাধ, দারিদ্র, অবিচার, অসুস্থতা ও মৃত্যু থাকবে না। সেই সময় লোকেদের নিখুঁত স্বাস্থ্য থাকবে এবং তারা এমন এক পৃথিবীতে বাস করবে, যা এক পরমদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। সেই জীবন আমাদের সবচেয়ে প্রিয় স্বপ্নগুলোর চেয়ে আরও বেশি পরিতৃপ্তিদায়ক হবে। হ্যাঁ, সেই সময় প্রতিটা দিনই এক আমোদজনক দিন হবে। কী বিস্ময়কর এক পুরস্কার!

৬, ৭. (ক) ঈশ্বরের নতুন জগতে যা ঘটবে বলে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি, তা যিশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে এমনকী মৃত ব্যক্তিদেরও এক নতুন সূচনা দেওয়া হবে?

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি নতুন জগতে পৃথিবীব্যাপী যে-ধরনের অপূর্ব বিষয় ঘটবে, সেগুলো করে দেখানোর জন্য পবিত্র আত্মার দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যিশু এমন একজন ব্যক্তিকে হাঁটতে বলেছিলেন, যিনি ৩৮ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন। বাইবেল জানায় যে, সেই ব্যক্তি তা করেছিলেন। (পড়ুন, যোহন ৫:৫-৯.) আরেকবার ‘জন্মাবধি অন্ধ একটী লোকের’ সঙ্গে যিশুর দেখা হয়েছিল আর তিনি তাকে সুস্থ করেছিলেন। পরে সেই ব্যক্তিকে, যিনি আগে অন্ধ ছিলেন, যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে কে তাকে সুস্থ করেছেন, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “কখনও শুনা যায় নাই যে, কেহ জন্মান্ধের চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে। তিনি যদি ঈশ্বর হইতে না আসিতেন, তবে কিছুই করিতে পারিতেন না।” (যোহন ৯:১, ৬, ৭, ৩২, ৩৩) যিশু এই সমস্তকিছু করতে পেরেছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরের দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি যেখানেই গিয়েছিলেন, সেখানেই ‘যাহাদের সুস্থ হইবার প্রয়োজন ছিল, তাহাদিগকে সুস্থ করিয়াছিলেন।’—লূক ৯:১১.

যিশু কেবল অসুস্থ এবং খঞ্জ লোকেদের সুস্থই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে মৃত ব্যক্তিদের উত্থিতও করতে পারতেন। উদাহরণস্বরূপ, ১২ বছর বয়সি একটা মেয়ে মারা গিয়েছিল, যার ফলে তারা বাবা-মা অনেক দুঃখ পেয়েছিল। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন: “বালিকে, তোমাকে বলিতেছি, উঠ।” আর সে তা-ই করেছিল! আপনি কি বাবা-মা ও সেখানে উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার কথা কল্পনা করতে পারেন? তারা “বড়ই বিস্ময়ে [“অতিশয় আনন্দে,” NW] একেবারে চমৎকৃত” হয়েছিল। (পড়ুন, মার্ক ৫:৩৮-৪২.) ঈশ্বরের নতুন জগতে যখন লক্ষ লক্ষ লোক পুনরুত্থিত হবে, তখন ‘অতিশয় আনন্দ’ হবে কারণ “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫; যোহন ৫:২৮, ২৯) এই ব্যক্তিদেরকে সেই সময়ের পর থেকে এমনকী চিরকাল ধরে বেঁচে থাকার আশাসহ জীবনের এক নতুন সূচনার সুযোগ দেওয়া হবে।

৮, ৯. (ক) খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্বের সময়, আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপের কী হবে? (খ) কীসের ভিত্তিতে মৃতেরা বিচারিত হবে?

পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের জীবন লাভ করার এক সুযোগ থাকবে। যারা পুনরুত্থানে ফিরে আসবে, তারা মারা যাওয়ার আগে যে-পাপগুলো করেছিল, সেগুলোর জন্য তাদেরকে দোষারোপ করা হবে না। (রোমীয় ৬:৭) খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্বের সময়, যখন মুক্তির মূল্যের উপকারগুলো প্রয়োগ করা হবে, তখন রাজ্যের বাধ্য প্রজারা ধীরে ধীরে সিদ্ধ হবে এবং অবশেষে আদমের পাপের সমস্ত প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হবে। (রোমীয় ৮:২১) যিহোবা “মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট [করিবেন], ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” (যিশা. ২৫:৮) ঈশ্বরের বাক্য এও বলে যে, “কয়েকখান পুস্তক খোলা [হইবে]” আর এটা ইঙ্গিত দেয় যে, সেই সময়ে যারা বেঁচে থাকবে, তাদেরকে নতুন তথ্য দেওয়া হবে। (প্রকা. ২০:১২) পৃথিবী যখন এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে, তখন “জগন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে।”—যিশা. ২৬:৯.

পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা, আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপের ভিত্তিতে নয় বরং তারা যা করা বেছে নেবে, সেটার ভিত্তিতে বিচারিত হবে। প্রকাশিত বাক্য ২০:১২ পদ বলে: “মৃতেরা পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে ‘আপন আপন কার্য্যানুসারে’” অর্থাৎ পুনরুত্থানের পর তাদের কাজ অনুসারে “বিচারিত হইল।” যিহোবার ন্যায়বিচার, করুণা ও প্রেমের কী এক বিস্ময়কর উদাহরণ! অধিকন্তু, এই পুরোনো জগতে তাদের অতীত জীবনের বেদনাদায়ক বিষয়গুলো “স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশা. ৬৫:১৭) সেই সময়ে প্রাপ্ত গঠনমূলক নতুন তথ্য ও উত্তম উত্তম বিষয়ে পূর্ণ এক জীবন লাভ করে, তারা আর অতীতের মন্দ বিষয়গুলোর দ্বারা যন্ত্রণা ভোগ করবে না। অতীতের সেই অভিজ্ঞতাগুলো তাদের মন থেকে মুছে ফেলা হবে। (প্রকা. ২১:৪) সেই ‘বিস্তর লোকের’ ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য হবে, যারা আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পাবে।—প্রকা. ৭:৯, ১০, ১৪.

১০. (ক) ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবন কেমন হবে? (খ) পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি রাখার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১০ ঈশ্বরের নতুন জগতে লোকেরা পুনরায় অসুস্থ না হয়ে বা মারা না গিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশা. ৩৩:২৪) অবশেষে, নতুন পৃথিবীর অধিবাসীরা প্রতিদিন সকালে নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে জেগে উঠবে, আরেকটা বিস্ময়কর দিনের প্রত্যাশায় রোমাঞ্চিত হবে। তারা পরিতৃপ্তিদায়ক কাজের এবং সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য প্রতীক্ষা করবে, যারা শুধু তাদের মঙ্গলের বিষয় চিন্তা করে। এই ধরনের এক জীবন সত্যিই চমৎকার এক পুরস্কার! একটা প্রস্তাব হিসেবে আপনার বাইবেল থেকে যিশাইয় ৩৩:২৪ এবং ৩৫:৫-৭ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো খুলুন না কেন? নিজেকে সেই দৃশ্যপটে স্থাপন করার চেষ্টা করুন। সেটা আপনাকে পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি রাখতে সাহায্য করবে।

পুরস্কার প্রতি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলা

১১. শলোমনের রাজত্বের উত্তম সূচনা সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।

১১ একবার আমরা পুরস্কার সম্বন্ধে জানার পর, এর প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে কারণ আমরা এর প্রতি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, শলোমন যখন প্রাচীন ইস্রায়েলে রাজা হয়েছিলেন, তখন তিনি বুদ্ধি বা বোধগম্যতা এবং বিচক্ষণতার জন্য নম্রভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যেন তিনি তাঁর লোকেদের সঠিকভাবে বিচার করতে পারেন। (পড়ুন, ১ রাজাবলি ৩:৬-১২.) এর ফলস্বরূপ, বাইবেল বলে, “ঈশ্বর শলোমনকে বিপুল জ্ঞান ও সূক্ষ্মবুদ্ধি . . . দিলেন।” বস্তুতপক্ষে, “পূর্ব্বদেশের সমস্ত লোকের জ্ঞান ও মিস্রীয়দের যাবতীয় জ্ঞান হইতে শলোমনের অধিক জ্ঞান হইল।”—১ রাজা. ৪:২৯-৩২.

১২. যারা ইস্রায়েলে রাজা হতো, তাদেরকে যিহোবা কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১২ কিন্তু, পূর্বে যিহোবা সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, যে-কেউ রাজা হন, তিনি ‘আপনার জন্য অনেক অশ্ব রাখিবেন না’ এবং তিনি ‘অনেক স্ত্রী গ্রহণ করিবেন না, পাছে তাহার হৃদয় বিপথগামী হয়।’ (দ্বিতীয়. ১৭:১৪-১৭) অনেক অশ্ব রাখা দেখাবে যে, রাজা জাতিকে রক্ষা করা জন্য রক্ষাকর্তা যিহোবার ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করেন। আর অনেক স্ত্রী গ্রহণ করা বিপদজনক হবে কারণ তাদের মধ্যে কেউ কেউ আশেপাশের এমন পৌত্তলিক জাতি থেকে হতে পারে, যে-জাতি মিথ্যা উপাসনায় রত এবং সেই স্ত্রীরা রাজাকে যিহোবার সত্য উপাসনা থেকে সরিয়ে নিতে পারে।

১৩. শলোমনকে যা দেওয়া হয়েছিল, সেটার প্রতি কীভাবে তিনি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিলেন?

১৩ শলোমন সেই সাবধানবাণীগুলোতে কান দেননি। বরং, তিনি তা-ই করেছিলেন, যে-বিষয়ে যিহোবা নির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন যে, রাজাদের তা করা উচিত নয়। তিনি হাজার হাজার অশ্ব ও অশ্বারোহী সংগ্রহ করেছিলেন। (১ রাজা. ৪:২৬) এ ছাড়া, তিনি ৭০০ স্ত্রী ও ৩০০ উপপত্নী রেখেছিলেন, যাদের অনেকে আশেপাশের পৌত্তলিক জাতি থেকে ছিল। এরা “তাঁহার হৃদয়কে অন্য দেবগণের অনুগমনে বিপথগামী করিল; . . . তাঁহার অন্তঃকরণ তেমনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর ভক্তিতে একাগ্র ছিল না।” শলোমন পৌত্তলিক জাতিগুলোর সেই জঘন্য মিথ্যা উপাসনায় রত হয়েছিলেন, যে-সম্বন্ধে তার বিদেশি স্ত্রীরা তাকে শিখিয়েছিল। এর ফলে যিহোবা বলেছিলেন যে, তিনি শলোমন “হইতে রাজ্য চিরিয়া” নিবেন।—১ রাজা. ১১:১-৬, ১১.

১৪. শলোমন ও ইস্রায়েল জাতির অবাধ্যতার ফল কী হয়েছিল?

১৪ সত্য ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করার যে-অমূল্য সুযোগ শলোমনের ছিল, সেটার প্রতি তিনি আর তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখেননি। রাজা মিথ্যা উপাসনায় পুরোপুরি জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, সম্পূর্ণ জাতি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল আর এর ফলে সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যদিও যিহুদিরা অবশেষে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপন করেছিল কিন্তু কয়েক শতাব্দী পরে যিশু এই ঘোষণা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” আর ঠিক তা-ই হয়েছিল। যিশু ঘোষণা করেছিলেন: “দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” (মথি ২১:৪৩; ২৩:৩৭, ৩৮) তাদের অবিশ্বস্ততার কারণে সেই জাতি সত্য ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করার মহান সুযোগ হারিয়েছিল। সাধারণ কাল ৭০ সালে রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেম ও এর মন্দির ধ্বংস করে দিয়েছিল আর অবশিষ্ট অনেক যিহুদি দাসে পরিণত হয়েছিল।

১৫. সেই পুরুষদের উদাহরণ দিন, যারা প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিল।

১৫ ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা যিশুর ১২ জন প্রেরিতের মধ্যে একজন ছিলেন। যিহূদা যিশুর চমৎকার শিক্ষাগুলো শুনেছিলেন এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে যিশু যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো দেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিহূদা তার হৃদয়কে রক্ষা করেননি। তাকে আস্থা সহকারে টাকার থলি রাখতে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে যিশু ও ১২ জন প্রেরিতের টাকাপয়সা থাকত। কিন্তু “সে চোর, আর তাহার নিকটে টাকার থলী থাকাতে তাহার মধ্যে যাহা রাখা যাইতে, তাহা হরণ করিত।” (যোহন ১২:৬) তার লোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল, যখন তিনি ৩০ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য কপটতাপূর্ণ প্রধান যাজকদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। (মথি ২৬:১৪-১৬) আরও একজন ব্যক্তি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছিলেন আর তিনি ছিলেন দীমা, যিনি প্রেরিত পৌলের একজন সঙ্গী ছিলেন। দীমা তার হৃদয়কে রক্ষা করেননি। পৌল বলেছিলেন: “দীমা এই বর্ত্তমান যুগ ভালবাসাতে আমাকে ত্যাগ করিয়াছে।”—২ তীম. ৪:১০; পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২৩.

আমাদের প্রত্যেকের জন্য এক শিক্ষা

১৬, ১৭. (ক) আমাদের সম্মুখে আসা বিরোধিতা কতটা শক্তিশালী? (খ) শয়তান আমাদের বিরুদ্ধে যা-কিছুই নিয়ে আসুক না কেন, কী আমাদেরকে সেগুলো প্রতিহত করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৬ ঈশ্বরের সমস্ত দাসের সেই উদাহরণগুলো নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা উচিত, যেগুলো বাইবেলে রয়েছে কারণ আমাদের বলা হয়েছে: “এই সকল তাহাদের প্রতি দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, এবং আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।” (১ করি. ১০:১১) আজকে আমরা এই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যস্থার শেষ সময়ে বাস করছি।—২ তীম. ৩:১, ১৩.

১৭ “এই যুগের দেব” শয়তান দিয়াবল জানে যে, “তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” (২ করি. ৪:৪; প্রকা. ১২:১২) যিহোবার দাসেরা যাতে খ্রিস্টান হিসেবে তাদের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলে, সেইজন্য তাদেরকে প্রলুব্ধ করতে শয়তান তার যথাসাধ্য করবে। শয়তান এই জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে এর অপপ্রচার মাধ্যমগুলোও রয়েছে। কিন্তু, যিহোবার লোকেদের আরও শক্তিশালী কিছু রয়েছে—“পরাক্রমের উৎকর্ষ।” (২ করি. ৪:৭) শয়তান আমাদের বিরুদ্ধে যা-কিছুই নিয়ে আসুক না কেন, সেগুলোকে প্রতিহত করার জন্য সাহায্য পেতে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা এই পরাক্রম বা শক্তির ওপর নির্ভর করতে পারি। তাই, আমাদেরকে ক্রমাগত প্রার্থনা করার জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এই আস্থা রেখে যে, যিহোবা “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১৩.

১৮. এই বর্তমান জগতের প্রতি আমাদের কেমন মনোভাব রাখা উচিত?

১৮ এ ছাড়া, এটা জেনেও আমরা শক্তিশালী হই যে, শয়তানের সম্পূর্ণ বিধিব্যবস্থা শীঘ্র ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু সত্য খ্রিস্টানরা রক্ষা পাবে। “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) এর পরিপ্রেক্ষিতে, ঈশ্বরের একজন দাসের পক্ষে এইরকম চিন্তা করা কতই না বোকামী হবে যে, এই বর্তমান বিধিব্যবস্থায় এমন কিছু রয়েছে, যেটার যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্কের চেয়ে আরও বেশি স্থায়ী মূল্য থাকতে পারে! শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন এই জগৎ ডুবন্ত একটা জাহাজের মতো। যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্য এক “জীবন রক্ষাকারী নৌকা” হিসেবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী জুগিয়েছেন। নতুন জগতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তারা এই প্রতিজ্ঞায় আস্থা রাখতে পারে: “দুরাচারগণ উচ্ছিন্ন হইবে, কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারাই দেশের অধিকারী হইবে।” (গীত. ৩৭:৯) তাই, এই অপূর্ব পুরস্কারের প্রতি আপনার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন!

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• পৌলের সামনে যে-পুরস্কার ছিল, সেটার প্রতি তিনি কেমন বোধ করেছিলেন?

• যারা চিরকাল পৃথিবীতে বাস করবে, তারা কীসের ভিত্তিতে বিচারিত হবে?

• আপনার জন্য এখনই বিজ্ঞতার পথ কোনটি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি যখন বাইবেলের বিবরণগুলো পড়েন, তখন কি আপনি মনশ্চক্ষে নিজেকে পুরস্কার লাভ করতে দেখেন?