সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হোন কারণ “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী”

পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হোন কারণ “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী”

পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হোন কারণ “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী”

“আইস, আমরা . . . সিদ্ধির চেষ্টায় [“পরিপক্বতার দিকে,” NW] অগ্রসর হই।”—ইব্রীয় ৬:১.

১, ২. প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেম ও যিহূদিয়াতে বসবাসরত খ্রিস্টানদের ‘পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করিবার’ জন্য কোন সুযোগ খুলে গিয়েছিল?

 যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছিল: “আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” তাদের প্রশ্নের উত্তরে যিশু যে-ভবিষ্যদ্‌বাণী বলেছিলেন, তার প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছিল প্রথম শতাব্দীতে। যিশু এক অস্বাভাবিক ঘটনার কথা বলেছিলেন, যা সংকেত দেবে যে, শেষ খুবই সন্নিকট। সেই ঘটনা দেখার পর, ‘যাহারা যিহূদিয়াতে থাকিবে, তাহাদিগকে পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করিতে হইবে।’ (মথি ২৪:১-৩, ১৫-২২) যিশুর শিষ্যরা কি সেই চিহ্ন বুঝতে এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে পেরেছিল?

প্রায় ৩০ বছর পর, সা.কা. ৬১ সালে প্রেরিত পৌল, যিরূশালেম ও এর আশেপাশে বসবাসরত ইব্রীয় খ্রিস্টানদের কাছে এক জোরালো ও গুরুগম্ভীর বার্তা লিখেছিলেন। পৌল এবং তার সহবিশ্বাসীরা উভয়েই এই বিষয়টা জানত না যে, যে-সংকেত এক ‘মহাক্লেশের’ শুরুর ধাপকে চিহ্নিত করে, তা আর মাত্র পাঁচ বছর পরেই দেখা যাবে। (মথি ২৪:২১) সা.কা. ৬৬ সালে, সেস্টিয়াস গ্যালাস রোমীয় সেনাবাহিনীকে যিরূশালেমের ওপর প্রায় সফল এক আক্রমণ করতে পরিচালনা দিয়েছিলেন। কিন্তু, এরপর তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন আর এভাবে বিপদগ্রস্ত লোকেদেরকে সুরক্ষার জন্য পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

৩. ইব্রীয় খ্রিস্টানদেরকে পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং কেন?

ঘটনাগুলোর প্রবাহ বুঝে পালিয়ে যাওয়ার জন্য খ্রিস্টানদের সূক্ষ্ম বিচক্ষণতা এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধিবোধের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, কেউ কেউ “শ্রবণে শিথিল” হয়ে পড়েছিল। তারা আধ্যাত্মিকভাবে শিশুর মতো ছিল, যাদের ‘দুগ্ধের’ প্রয়োজন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:১১-১৩.) এমনকী, যারা দশকের পর দশক ধরে সত্যের পথে চলেছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘জীবন্ত ঈশ্বর হইতে সরিয়া পড়িবার’ লক্ষণগুলো প্রকাশ করেছিল। (ইব্রীয় ৩:১২) কারো কারো জন্য সেই সময়ে খ্রিস্টীয় সভাগুলো বাদ দেওয়া ‘অভ্যাসে’ পরিণত হয়েছিল, যখন এই বিপর্যয়মূলক ‘দিন অধিক সন্নিকট হইতেছিল।’ (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) পৌল এই বলে তাদেরকে সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমরা খ্রীষ্ট-বিষয়ক আদিম কথা পশ্চাৎ ফেলিয়া পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হই।”—ইব্রীয় ৬:১.

৪. কেন আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ আর কী আমাদেরকে সতর্ক থাকতে সাহায্য করবে?

আমরা যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর চূড়ান্ত পরিপূর্ণতার সময়কালে বাস করছি। “সদাপ্রভুর মহাদিন”—শয়তানের সম্পূর্ণ বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসার দিন—“নিকটবর্ত্তী।” (সফ. ১:১৪) আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে আগের চেয়ে আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। (১ পিতর ৫:৮) আমরা কি আসলেই সেইরকম আছি? খ্রিস্টীয় পরিপক্বতা আমাদেরকে সময়ের প্রবাহে আমরা কোথায় আছি, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে।

খ্রিস্টীয় পরিপক্বতা বলতে যা বোঝায়

৫, ৬. (ক) আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য কোন দুটো ক্ষেত্রে প্রচেষ্টার প্রয়োজন?

পৌল কেবল প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রিস্টানদেরকে পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিতই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার সঙ্গে কী জড়িত, সেটাও বলেছেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:১৪.) ‘সিদ্ধবয়স্ক’ বা পরিপক্ব ব্যক্তিরা কেবল ‘দুগ্ধ’ গ্রহণ করেই পরিতৃপ্ত থাকে না। তারা “কঠিন খাদ্য” গ্রহণ করে থাকে। তাই, তারা সত্যের “আদিম কথার অক্ষরমালা” বা মৌলিক বিষয়গুলো ও ‘গভীর বিষয় সকল’ উভয়ই জানে। (১ করি. ২:১০) অধিকন্তু, তাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়সকল অভ্যাস প্রযুক্ত—তারা যা জানে, সেটা প্রয়োগ করার দ্বারা—পটু বা প্রশিক্ষিত হয় আর তা তাদেরকে সদসৎ বিষয়ের বিচার করতে বা ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করতে সাহায্য করে। তারা যখন কোনো সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়, তখন এই প্রশিক্ষণ তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে, এর সঙ্গে কোন শাস্ত্রীয় নীতিগুলো জড়িত রয়েছে এবং কীভাবে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে।

“যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই,” পৌল লিখেছিলেন। (ইব্রীয় ২:১) বিশ্বাস থেকে এইরকম ভেসে যাওয়া এমনকী আমরা বোঝার আগেই ঘটতে পারে।। আধ্যাত্মিক সত্যগুলো নিয়ে বিবেচনা করার সময় “অধিক আগ্রহের সহিত” মনোযোগ করার মাধ্যমে আমরা এই বিষয়টা এড়াতে পারি। তাই, আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘আমি কি এখনও কেবল মৌলিক বিষয়গুলো বিবেচনা করছি? আমি কি সত্যের সঙ্গে আমার হৃদয়কে পূর্ণরূপে জড়িত না করে কেবল আন্তরিকতাহীনভাবে কাজ করছি এবং রূপকভাবে বলতে গেলে ভেসে চলছি? কীভাবে আমি প্রকৃত আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করতে পারি?’ পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমাদেরকে অন্ততপক্ষে দুটো ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে যথেষ্ট ভালোভাবে জানতে হবে। আর আমাদেরকে বাধ্য হতে শিখতে হবে।

বাক্য সম্বন্ধে যথেষ্ট ভালোভাবে জানুন

৭. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জেনে উপকার লাভ করতে পারি?

“যে দুগ্ধপোষ্য, সে ত ধার্ম্মিকতার বাক্যে অভ্যস্ত নয়; কারণ সে শিশু,” পৌল লিখেছিলেন। (ইব্রীয় ৫:১৩) পরিপক্বতা অর্জনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যে অর্থাৎ আমাদেরকে দেওয়া তাঁর বার্তায় অভ্যস্ত হতে বা সেই সম্বন্ধে যথেষ্ট ভালোভাবে জানতে হবে। যেহেতু তাঁর বাক্য বাইবেলে এই বার্তা রয়েছে, তাই আমাদের শাস্ত্র এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা জোগানো প্রকাশনাদির উত্তম ছাত্র হওয়া উচিত। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এভাবে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা আত্মভূত করা আমাদেরকে নিজেদের জ্ঞানেন্দ্রিয়সকল প্রশিক্ষিত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। অর্কিড নামে একজন খ্রিস্টান বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন। * তিনি বলেন: “যে-অনুস্মারকটি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছিল, সেটি হল নিয়মিত বাইবেল পাঠ করা। পুরো বাইবেল শেষ করতে আমার প্রায় দুই বছর লেগেছিল কিন্তু মনে হয়েছিল যেন প্রথমবারের মতো আমি আমার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছি। আমি তাঁর পথ, তাঁর পছন্দ-অপছন্দ, তাঁর শক্তির মাত্রা এবং তাঁর প্রজ্ঞার গভীরতা সম্বন্ধে শিখেছি। প্রতিদিন বাইবেল পাঠ আমাকে আমার জীবনের কিছু অন্ধকারময় মুহূর্তগুলোর মধ্যেও টিকিয়ে রেখেছিল।”

৮. ঈশ্বরের বাক্য আমাদের ওপর কোন কার্য সাধন করতে পারে?

নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্যের কিছু অংশ পড়া, এর বার্তাকে আমাদের ওপর ‘কার্য্য সাধন’ করার সুযোগ দেয়। (পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১২.) এই ধরনের পাঠ আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্বকে গঠন করতে এবং আমাদেরকে যিহোবার আরও প্রিয় করে তুলতে পারে। বাইবেল পাঠ ও এটি যা বলে, তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে কি আরও সময় তালিকাবদ্ধ করতে হবে?

৯, ১০. ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার সঙ্গে কী জড়িত? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

বাইবেল সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার সঙ্গে, এটি যা বলে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। পৌলের দিনের আধ্যাত্মিক শিশুরা ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের সঙ্গে যে সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত ছিল, তা নয়। কিন্তু, তারা ব্যক্তিগতভাবে তা ব্যবহার করেনি এবং কাজে লাগানোর মাধ্যমে এটির মূল্য পরীক্ষা করে দেখেনি। তারা তাদের জীবনে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে এটিকে তাদের পরিচালনা করতে দিয়ে নিজেরা সেই বার্তা সম্বন্ধে ভালোভাবে জানেনি।

১০ ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার অর্থ হল, এটি কী বলে, তা জানা ও সেই জ্ঞানকে কাজে লাগানো। কাইল নামে একজন খ্রিস্টান বোনের অভিজ্ঞতা দেখায় যে, কীভাবে তা করা যেতে পারে। কাইলের সঙ্গে তার একজন সহকর্মীর কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য তিনি কী করেছিলেন? তিনি ব্যাখ্যা করেন: “সঙ্গেসঙ্গে যে-শাস্ত্রপদটি আমার মনে এসেছিল, সেটি ছিল রোমীয় ১২:১৮ পদ, যেখানে বলা আছে: ‘তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।’ তাই, আমি কাজের পরে সেই সহকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করি।” সেই সাক্ষাৎ খুবই সফল হয়েছিল আর কাইল সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে তা তার সহকর্মীর ওপর ছাপ ফেলেছিল। “আমি শিখতে পেরেছিলাম যে, বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানো সবসময়ই উপযুক্ত,” কাইল বলেন।

বাধ্য হতে শিখুন

১১. কী দেখায় যে, কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে বাধ্য হওয়া এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে?

১১ শাস্ত্র থেকে আমরা যা শিখেছি, তা কাজে লাগানো এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে, বিশেষভাবে পরিস্থিতি যখন কঠিন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা ইস্রায়েল সন্তানদেরকে মিশরীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করার কিছুদিন পর, তারা ‘মোশির সহিত বিবাদ করিয়াছিল’ এবং ‘সদাপ্রভুর পরীক্ষা করিয়াছিল।’ কেন? পানীয় জলের অভাবের কারণে। (যাত্রা. ১৭:১-৪) ঐশিক চুক্তিতে প্রবেশ করার এবং ‘সদাপ্রভু যে যে কথা বলিয়াছিলেন সেই সমস্তই’ পালন করার বিষয়ে একমত হওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, তারা প্রতিমাপূজার বিষয়ে তাঁর আইন লঙ্ঘন করেছিল। (যাত্রা. ২৪:৩, ১২-১৮; ৩২:১, ২, ৭-৯) এটা কি হতে পারে যে, মোশিকে যখন হোরেব পর্বতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল, তখন দীর্ঘসময় ধরে তার অনুপস্থিতি তাদেরকে ভীত করে তুলেছিল? সম্ভবত তারা কি এইরকম মনে করেছিল যে, অমালেকীয়রা আবারও আক্রমণ করবে এবং মোশিকে ছাড়া ইস্রায়েলীয়রা অসহায় হয়ে পড়বে, যার উত্তোলিত হাত এর আগে তাদের জন্য বিজয় নিয়ে এসেছিল? (যাত্রা. ১৭:৮-১৬) তা হতে পারে, তবে যা-ই হোক না কেন, ইস্রায়েলীয়রা “আজ্ঞাবহ হইতে চাহিলেন না।” (প্রেরিত ৭:৩৯-৪১) পৌল খ্রিস্টানদেরকে ‘যত্ন করিবার’ বা যথাসাধ্য করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে “অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত” হওয়া এড়াতে পারে, যে-দৃষ্টান্ত ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে ভয় পেয়ে দেখিয়েছিল।—ইব্রীয় ৪:৩, ১১.

১২. কীভাবে যিশু বাধ্য হতে শিখেছিলেন আর এর উপকার কী ছিল?

১২ পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হতে হলে, আমাদেরকে যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করতে হবে। যিশু খ্রিস্টের উদাহরণের মাধ্যমে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, বাধ্যতা প্রায়ই কষ্টভোগের দ্বারা শেখা যায়। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:৮, ৯.) পৃথিবীতে আসার আগে যিশু তাঁর পিতার বাধ্য ছিলেন। কিন্তু, পৃথিবীতে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক কষ্টভোগ জড়িত ছিল। চরম দুর্দশার মধ্যে বাধ্যতা দেখানোর মাধ্যমে যিশু সেই নতুন পদমার্যাদার জন্য ‘সিদ্ধ হইয়াছিলেন,’ যে-বিষয়টার কথা যিহোবার মনে তাঁর জন্য ছিল আর তা হল, রাজা ও মহাযাজক হওয়া।

১৩. কী দেখায় যে, আমরা বাধ্য হতে শিখেছি কি না?

১৩ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি সেই সময়েও যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ, যখন আমরা দুর্দশামূলক সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই? (পড়ুন, ১ পিতর ১:৬, ৭.) নৈতিকতা, সততা, জিহ্বার সঠিক ব্যবহার, ব্যক্তিগত পাঠ এবং শাস্ত্র অধ্যয়ন, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিতি ও প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে ঈশ্বরের পরামর্শ স্পষ্ট। (যিহো. ১:৮; মথি ২৮:১৯, ২০; ইফি. ৪:২৫, ২৮, ২৯; ৫:৩-৫; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমরা কি দুর্দশার মধ্যেও এই ক্ষেত্রগুলোতে যিহোবার বাধ্য থাকি? আমাদের বাধ্যতা ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা পরিপক্বতার দিকে অগ্রগতি লাভ করেছি।

খ্রিস্টীয় পরিপক্বতা—কেন উপকারী?

১৪. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়া এক সুরক্ষা হতে পারে।

১৪ ‘নীতিবোধ হারিয়ে ফেলেছে’ এমন এক জগতে ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করার জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত জ্ঞানেন্দ্রিয়সকল থাকা একজন খ্রিস্টানের জন্য এক প্রকৃত সুরক্ষা। (ইফি. ৪:১৯, NW) উদাহরণস্বরূপ, জেমস নামে একজন ভাই, যিনি নিয়মিতভাবে শাস্ত্রীয় প্রকাশনাগুলো পাঠ করতেন ও সেগুলোকে অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করতেন, তিনি এমন একটা চাকরি নেন, যেখানে তার সমস্ত সহকর্মী ছিল মহিলা। “যদিও তাদের মধ্যে অনেকে নীতিবোধের স্পষ্ট অভাব দেখিয়েছিল,” জেমস বলেন, “তবে একজন সহকর্মীকে উত্তম চরিত্রের বলে মনে হয়েছিল এবং তিনি বাইবেলের সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু, আমরা যখন একা একটা রুমে কাজ করছিলাম, তখন তিনি যৌন আবেদন সৃষ্টি করতে শুরু করেছিলেন। আমি মনে করেছিলাম যে, তিনি মজা করছেন কিন্তু তাকে থামানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল। ঠিক সেই সময় প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বর্ণিত এক ভাই সম্বন্ধে একটা অভিজ্ঞতার কথা আমার মাথায় আসে, যিনি তার কর্মক্ষেত্রে একই ধরনের প্রলোভনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই প্রবন্ধে যোষেফ ও পোটীফরের স্ত্রীর উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। * আমি সঙ্গেসঙ্গে সেই মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিই আর সে তাড়াতাড়ি চলে যায়।” (আদি. ৩৯:৭-১২) জেমস খুবই কৃতজ্ঞ ছিল যে, পরে আর কিছুই ঘটেনি এবং তিনি এক উত্তম বিবেক বজায় রাখতে পেরেছিলেন।—১ তীম. ১:৫.

১৫. কীভাবে পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়া আমাদের রূপক হৃদয়কে শক্তিশালী করতে পারে?

১৫ পরিপক্বতা এই অর্থেও উপকারী যে, এটা আমাদের রূপক হৃদয়কে শক্তিশালী করে ও “বহুবিধ এবং বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা বিপথে চালিত” হওয়া থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৯.) আমরা যখন আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করার প্রচেষ্টা করি, তখন আমাদের মন ‘বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর’ ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে। (ফিলি. ১:৯, ১০, NW) এভাবে ঈশ্বর ও আমাদের উপকারের জন্য তিনি যেসমস্ত ব্যবস্থা জুগিয়েছেন, সেই সমস্তকিছুর জন্য আমাদের উপলব্ধি বৃদ্ধি পায়। (রোমীয় ৩:২৪) যে-খ্রিস্টান “বুদ্ধিতে পরিপক্ব,” তিনি এই ধরনের কৃতজ্ঞতা গড়ে তোলেন এবং যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করেন।—১ করি. ১৪:২০.

১৬. কী একজন বোনকে ‘সুস্থির হৃদয়’ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল?

১৬ লুইজ নামে একজন বোন স্বীকার করেন যে, তার বাপ্তিস্মের পর কিছু সময় তার প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল, অন্যদের ওপর তিনি কেমন ছাপ ফেলেছেন। “আমি অন্যায় কিছু করছিলাম না,” তিনি বলেছিলেন, “কিন্তু যিহোবাকে সেবা করার ব্যাপারে আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা বোধ করিনি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি যদি যিহোবাকে আমার যথাসাধ্য দেওয়ার অনুভূতি লাভ করতে চাই, তাহলে আমাকে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ছিল, আমার সম্পূর্ণ হৃদয় উজাড় করে দিয়ে তাঁর উপাসনা করা।” এই ধরনের প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে লুইজ ‘সুস্থির হৃদয়’ গড়ে তুলেছিলেন এবং তিনি যখন চরম স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছিল। (যাকোব ৫:৮) লুইজ বলেছিলেন, “আমি অনেক লড়াই করেছিলাম কিন্তু প্রকৃতই যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিলাম।”

‘অন্তঃকরণের সহিত আজ্ঞাবহ হোন’

১৭. কেন প্রথম শতাব্দীতে বাধ্যতা বিশেষভাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

১৭ ‘পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হইবার’ বিষয়ে পৌলের পরামর্শ, প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেম ও যিহূদিয়াতে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জন্য জীবনরক্ষাকারী বলে প্রমাণিত হয়েছিল। যারা এতে মনোযোগ দিয়েছিল, তাদের সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা ছিল, যা যিশু তাদেরকে ‘পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করিবার’ বিষয়ে যে-চিহ্ন দিয়েছিলেন, তা বোঝার জন্য প্রয়োজন ছিল। তারা যখন দেখেছিল যে, ‘ধ্বংসের ঘৃণার্হ বস্তু পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে’ অর্থাৎ রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেমকে অবরোধ ও আক্রমণ করতে যাচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এটা পালানোর সময়। (মথি ২৪:১৫, ১৬) যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিয়ে খ্রিস্টানরা যিরূশালেম শহর ধ্বংসের আগেই সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আর গির্জার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইতিহাসবেত্তা ইউসেবিয়াসের কথা অনুসারে তারা গিলিয়দের পার্বত্য অঞ্চল পেল্লায় বাস করেছিল। এভাবে তারা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ যিরূশালেমের সবচেয়ে চরম দুর্দশা এড়াতে পেরেছিল।

১৮, ১৯. (ক) কেন বাধ্যতা আমাদের দিনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ? (খ) পরের প্রবন্ধ কী বিবেচনা করা হবে?

১৮ বাধ্যতা, যা পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে আসে, তা সেই সময়েও জীবনরক্ষাকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে, যখন আমরা যিশুর এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর মহৎ পরিপূর্ণতার মুখোমুখি হব যে, ব্যাপক “মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে,” যার সমতুল্য আর কিছু হতে পারে না। (মথি ২৪:২১) ভবিষ্যতে আমরা ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষের’ কাছ থেকে জরুরি যে-নির্দেশনাই লাভ করি না কেন, আমরা কি বাধ্য বলে প্রমাণিত হব? (লূক ১২:৪২) ‘অন্তঃকরণের সহিত আজ্ঞাবহ হইতে’ শেখা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!—রোমীয় ৬:১৭.

১৯ পরিপক্বতা অর্জন করতে হলে, আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়সকল প্রশিক্ষিত করতে হবে। আর আমরা ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে যথেষ্ট ভালোভাবে জানার জন্য প্রচেষ্টা করার ও বাধ্য হতে শেখার দ্বারা তা করে থাকি। খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার দিকে বৃদ্ধি পাওয়া অল্পবয়সিদের জন্য বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে। কীভাবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে, তা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ ১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “অন্যায় কাজকে না বলার জন্য শক্তিশালী হওয়া” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।

আপনি কী শিখেছেন?

• আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা কী আর কীভাবে আমরা তা অর্জন করে থাকি?

• আমাদের পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা কোন ভূমিকা পালন করে?

• কীভাবে আমরা বাধ্য হতে শিখি?

• কোন কোন উপায়ে পরিপক্বতা আমাদের উপকৃত করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানো আমাদেরকে সমস্যাগুলো পরিপক্ব উপায়ে সমাধান করতে সাহায্য করে

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর পরামর্শ মেনে চলা প্রাথমিক খ্রিস্টানদের জন্য জীবনরক্ষাকারী ছিল