সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যুবক-যুবতীরা—তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করো

যুবক-যুবতীরা—তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করো

যুবক-যুবতীরা—তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করো

“এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” —১ তীম. ৪:১৫.

১. যুবক-যুবতীদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী?

 “হে যুবক তুমি তোমার তরুণ বয়সে আনন্দ কর, যৌবনকালে তোমার হৃদয় তোমাকে আহলাদিত করুক।” (উপ. ১১:৯) প্রাচীন ইস্রায়েলের বিজ্ঞ রাজা শলোমন এভাবেই লিখেছিলেন। এই বার্তার উৎস, যিহোবা ঈশ্বর নিশ্চিতভাবে চান যেন তোমরা, যুবক-যুবতীরা, সুখী হও। এর চেয়েও বড় কথা হল, যিহোবা চান যেন তোমাদের আনন্দ যুবক বয়স ছাড়িয়েও দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু, যৌবনকালের সেই বছরগুলোতে যুবক-যুবতীরা প্রায়ই বিভিন্ন ভুল করে থাকে, যার ফলে একজন ব্যক্তির ভবিষ্যতের সুখ হয়তো প্রভাবিত হতে পারে। এমনকী বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবও ‘তাহার যৌবনের অপরাধের ফলভোগ’ করা নিয়ে শোক করেছিলেন। (ইয়োব ১৩:২৬) বয়ঃসন্ধিকালে এবং সদ্য প্রাপ্তবয়সে পা দেওয়ার পরের বছরগুলোতে, একজন খ্রিস্টানকে প্রায়ই গুরুতর সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়। ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে গভীর আবেগগত ক্ষত দেখা দিতে পারে আর এমন সব সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেগুলো হয়তো বাকি জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।—উপ. ১১:১০.

২. বাইবেলের কোন পরামর্শ কাজে লাগিয়ে যুবক-যুবতীরা গুরুতর ভুলগুলো এড়াতে পারে?

যুবক-যুবতীদের উত্তম বিচারবুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে। প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের যে-উপদেশ দিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করো। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা বুদ্ধিতে বালক হইও না, . . . বুদ্ধিতে পরিপক্ব হও।” (১ করি. ১৪:২০) পরিপক্ব বা পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির মতো চিন্তা ও যুক্তি করার ক্ষমতা অর্জন করার পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া, যুবক-যুবতীদেরকে গুরুতর ভুলগুলো করা এড়াতে সাহায্য করবে।

৩. পরিপক্ব হয়ে ওঠার জন্য তুমি কী করতে পারো?

তুমি যদি একজন যুবক বা যুবতী হয়ে থাকো, তাহলে মনে রাখবে যে, পরিপক্ব হওয়ার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন: “তোমার যৌবন কাহাকেও তুচ্ছ করিতে দিও না; কিন্তু বাক্যে, আচার ব্যবহারে, প্রেমে, বিশ্বাসে, ও শুদ্ধতায় বিশ্বাসিগণের আদর্শ হও। . . . তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক। . . . এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” (১ তীম. ৪:১২-১৫) খ্রিস্টান যুবক-যুবতীদেরকে অগ্রগতি করতে হবে এবং তাদের উন্নতি যেন অন্যদের কাছে প্রত্যক্ষ বা প্রকাশ হয়।

উন্নতি বলতে কী বোঝায়?

৪. আধ্যাত্মিক উন্নতি করার সঙ্গে কী জড়িত?

উন্নতি করার অর্থ হল “অগ্রগতি করা, আরও ভালো করা।” পৌল তীমথিয়কে জোরালো পরামর্শ দিচ্ছিলেন যেন তিনি বাক্যে বা কথাবার্তায়, আচারব্যবহারে, প্রেমে, বিশ্বাসে এবং শুদ্ধতায় ও সেইসঙ্গে তিনি যেভাবে তার পরিচর্যাকে সম্পন্ন করেন, সেই ক্ষেত্রে অগ্রগতি করায় নিবিষ্ট থাকেন। তার জীবনধারাকে উদাহরণযোগ্য করার জন্য তাকে আপ্রাণ প্রচেষ্টা করতে হয়েছিল। এভাবে তীমথিয়কে ক্রমাগত আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে হয়েছিল।

৫, ৬. (ক) কখন থেকে তীমথিয়ের উন্নতি প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল? (খ) উন্নতি করার ক্ষেত্রে আজকে যুবক-যুবতীরা কীভাবে তীমথিয়কে অনুকরণ করতে পারে?

পৌল যখন সা.কা. ৬১ থেকে ৬৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এই পরামর্শের বিষয়ে লিখেছিলেন, তখন তীমথিয় ইতিমধ্যেই একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন ছিলেন। তিনি যে সবেমাত্র আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে শুরু করেছিলেন, তা নয়। সা.কা. ৪৯ অথবা ৫০ সালে, তীমথিয়ের বয়স সম্ভবত যখন প্রায় ২০-র কোঠায়, তখন “লুস্ত্রা ও ইকনীয় নিবাসী ভ্রাতৃগণ তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিত [“সুখ্যাতি করত,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” যারা তার আধ্যাত্মিক অগ্রগতি লক্ষ করেছিল। (প্রেরিত ১৬:১-৫) সেই সময়ে পৌল তার মিশনারি যাত্রায় তীমথিয়কে সঙ্গে নিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে তীমথিয়ের আরও অগ্রগতি লক্ষ করার পর, পৌল তাকে থিষলনীকীতে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি সেই নগরের খ্রিস্টানদের আশ্বাস বা সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং সুস্থির করেন। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৩:১-৩, .) স্পষ্টতই, তীমথিয় যখন যুবক ছিলেন, তখন থেকেই তিনি অন্যদের সামনে তার উন্নতি প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন।

মণ্ডলীতে তোমরা যারা যুবক-যুবতী রয়েছ, তোমরা এখনই প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার জন্য কাজ করো, যাতে খ্রিস্টীয় জীবনযাপনে এবং বাইবেলের সত্য শেখানোর ব্যাপারে তোমাদের ক্ষমতায় স্পষ্টভাবে উন্নতি দেখা যায়। ১২ বছর বয়স থেকেই যিশু “জ্ঞানে . . . বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন।” (লূক ২:৫২) তাহলে এসো আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কীভাবে তোমরা তোমাদের জীবনের তিনটে ক্ষেত্রে তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারো: (১) তোমরা যখন দুর্দশার মুখোমুখি হও, (২) তোমরা যখন বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও এবং (৩) তোমরা যখন এক “উত্তম পরিচারক” হওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করো।—১ তীম. ৪:৬.

‘সুস্থ মন’ নিয়ে দুর্দশার মোকাবিলা করো

৭. কীভাবে দুর্দশা যুবক-যুবতীদেরকে প্রভাবিত করতে পারে?

ক্যারল নামে ১৭ বছর বয়সি একজন খ্রিস্টান বলেছিল: “মাঝে মাঝে আমি আবেগত, দৈহিক ও মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি যে, সকাল বেলা আমার আর ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না।” * কেন সে এতটা হতাশাগ্রস্ত ছিল? ক্যারলের বয়স যখন দশ বছর ছিল, তখন তার পরিবার বিবাহবিচ্ছেদের কারণে ভেঙে গিয়েছিল আর তাই তাকে তার মায়ের সঙ্গে বাস করতে হয়েছিল, যিনি বাইবেলের নৈতিক মানগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ক্যারলের মতো, তোমরাও হয়তো চরম কোনো চাপপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছ, যেগুলোর উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব সামান্যই রয়েছে।

৮. তীমথিয় কোন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন?

আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করার সময় তীমথিয়ও প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, পেটের সমস্যার কারণে তীমথিয়ের “বার বার অসুখ” হতো। (১ তীম. ৫:২৩) পৌলের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এমন কয়েক জন ব্যক্তির দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা সমাধান করার জন্য পৌল যখন তীমথিয়কে করিন্থে পাঠিয়েছিলেন, তখন পৌল সহযোগিতা করার জন্য মণ্ডলীকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে তীমথিয় তাদের কাছে “নির্ভয়ে” থাকেন। (১ করি. ৪:১৭; ১৬:১০, ১১) স্পষ্টতই, তীমথিয় লাজুক বা আড়ষ্ট প্রকৃতির ছিলেন।

৯. সুস্থ মন কী আর কীভাবে তা ভীরুতার আত্মা থেকে পৃথক?

তীমথিয়কে সাহায্য করার জন্য পৌল তাকে পরে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির [“সুস্থ মনের,” NW] আত্মা দিয়াছেন।” (২ তীম. ১:৭) “সুস্থ মনের” সঙ্গে যথাযথভাবে চিন্তা ও যুক্তি করার ক্ষমতা জড়িত। এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো যেমন, ঠিক তেমনই এর মুখোমুখি হতে সমর্থ হওয়া—তুমি সেগুলোকে যেমন হোক বলে চাও সেইরূপে নয়। কিছু অপরিপক্ব যুবক-যুবতী ভীরুতার আত্মা প্রদর্শন করে এবং অতিরিক্ত ঘুমানোর অথবা টিভি দেখার, নেশাকর ওষুধ বা মদ্য-জাতীয় পানীয়ের অপব্যবহার, সবসময় পার্টি করার অথবা যৌন অনৈতিকতার মাধ্যমে চাপপূর্ণ পরিস্থিতিগুলো থেকে মানসিকভাবে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করে। খ্রিস্টানদেরকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা “ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত [“সুস্থ মন সহকারে,” NW], ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন” করে।—তীত ২:১২.

১০, ১১. কীভাবে সুস্থ মন আমাদেরকে আধ্যাত্মিক শক্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে?

১০ বাইবেল “যুবকদিগকে সংযত [“সুস্থ মনের,” NW] হইতে” আদেশ দেয়। (তীত ২:৬) এই পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার অর্থ হল যে, তোমরা প্রার্থনাপূর্বক সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করবে এবং ঈশ্বরদত্ত শক্তির ওপর নির্ভর করবে। (পড়ুন, ১ পিতর ৪:৭.) * এভাবে, তোমরা ‘ঈশ্বর-দত্ত শক্তির’ ওপর আন্তরিক আস্থা গড়ে তুলবে।—১ পিতর ৪:১১.

১১ সুস্থ মন ও প্রার্থনাই ক্যারলকে সাহায্য করেছিল। “আমার মায়ের অনৈতিক জীবনধারার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন একটা কাজ ছিল,” সে বলে। “কিন্তু, প্রার্থনা সত্যিই অনেক সাহায্য করেছে। আমি জানি যে, যিহোবা আমার সঙ্গে আছেন, তাই আমি আর ভয় পাইনি।” মনে রাখবে যে, প্রতিকূল পরিস্থিতি তোমাদেরকে ‘পরিশোধিত’ ও শক্তিশালী করতে পারে। (গীত. ১০৫:১৭, ১৮, ১৯, NW; বিলাপ ৩:২৭) তোমরা যে-বিষয়ের মুখোমুখিই হও না কেন, ঈশ্বর কখনো তোমাদেরকে পরিত্যাগ করবেন না। তিনি “তোমার সাহায্য” করবেন।—যিশা. ৪১:১০.

এক সফল বিয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া

১২. বিয়ে করার বিষয়টা বিবেচনা করছে এমন একজন খ্রিস্টানের কেন হিতোপদেশ ২০:২৫ পদে প্রাপ্ত নীতি কাজে লাগানো উচিত?

১২ সদ্য প্রাপ্তবয়সে পা দেওয়া কিছু ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে, এই মনে করে যে, এটা হল অসুখী, একাকিত্ব, একঘেয়েমি এবং ঘরের সমস্যাগুলোর একটা সমাধান। কিন্তু, বিয়ের অঙ্গীকার করা এক গুরুতর বিষয়। বাইবেলের সময়ে কিছু ব্যক্তি পবিত্র মানত বা অঙ্গীকারের সঙ্গে কী কী জড়িত রয়েছে, সেগুলো সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ না করেই তাড়াহুড়ো করে অঙ্গীকার করেছিল। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২০:২৫.) মাঝে মাঝে, সদ্য প্রাপ্তবয়সে পা দেওয়া ব্যক্তিরা বিয়ের চাহিদাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না। পরবর্তী সময়ে তারা দেখে যে, তারা যতটা চিন্তা করেছিল, তার চেয়েও বেশি কিছু জড়িত রয়েছে।

১৩. যারা বিবাহপূর্ব মেলামেশার কথা ভাবছে, তাদের কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত আর তাদের জন্য কোন উপকারী পরামর্শ রয়েছে?

১৩ তাই, বিবাহপূর্ব মেলামেশা শুরু করার আগে, নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘কেন আমি বিয়ে করতে চাই? আমার কোন কোন প্রত্যাশা রয়েছে? এই ব্যক্তি কি আমার জন্য উপযুক্ত? একজন বিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে আমি কি আমার দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য আসলেই প্রস্তুত?’ অন্তর্দৃষ্টিমূলক পরীক্ষা করতে তোমাকে সাহায্য করার জন্য “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। * (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এই বিষয়বস্তুকে এমনভাবে দেখো যেন যিহোবা তোমাকে উপদেশ দিচ্ছেন। সেখানে যা রয়েছে, তা সর্তকতার সঙ্গে মূল্যায়ন করো এবং কাজে লাগাও। নিজেকে কখনো “অশ্ব ও অশ্বতরের ন্যায়” হতে দিও না, “যাহাদের বুদ্ধি নাই।” (গীত. ৩২:৮, ৯) বিয়ের চাহিদাগুলো বোঝার ব্যাপারে পরিপক্ব হও। তুমি যদি মনে করো যে, তুমি বিবাহপূর্ব মেলামেশা করার জন্য তৈরি, তাহলে সবসময় “শুদ্ধতায় . . . আদর্শ” হওয়ার কথা স্মরণে রাখো।—১ তীম. ৪:১২.

১৪. তোমরা যদি বিয়ে করো, তাহলে কীভাবে আধ্যাত্মিক উন্নতি তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

১৪ এ ছাড়া, আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা বিয়ের পরেও সাফল্য নিয়ে আসে। একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান “খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ” অর্জন করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে থাকেন। (ইফি. ৪:১১-১৪) তিনি এক খ্রিস্টতুল্য ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন। ঠিক যেমন, আমাদের আদর্শ “খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না।” (রোমীয় ১৫:৩) যখন উভয় সাথিই নিজের স্বার্থ চেষ্টা না করে বরং অন্যের মঙ্গল চেষ্টা করে, তখন পারিবারিক জীবন শান্তি ও সান্ত্বনার এক আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। (১ করি. ১০:২৪) একজন স্বামী আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখাবেন আর একজন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি বশ্যতা দেখানোর জন্য সংকল্পবদ্ধ হবেন, যেমন যিশু তাঁর মস্তকের প্রতি দেখিয়ে থাকেন।—১ করি. ১১:৩; ইফি. ৫:২৫.

“তোমার পরিচর্য্যা সম্পন্ন কর”

১৫, ১৬. কীভাবে তোমরা পরিচর্যায় তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারো?

১৫ তীমথিয়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যভারের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “আমি ঈশ্বরের সাক্ষাতে, এবং . . . খ্রীষ্ট যীশুর সাক্ষাতে, . . . তোমাকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিতেছি; তুমি বাক্য প্রচার কর, . . . কার্য্যে অনুরক্ত হও।” তিনি আরও বলেছিলেন: “সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর, তোমার পরিচর্য্যা সম্পন্ন কর।” (২ তীম. ৪:১, ২,) এই কার্যভার পূর্ণ করার জন্য তীমথিয়কে “বিশ্বাসের . . . বাক্যে পোষিত” থাকতে হয়েছিল।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:৬.

১৬ কীভাবে তোমরা “বিশ্বাসের . . . বাক্যে পোষিত” থাকতে পারো? পৌল লিখেছিলেন: “তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক। এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর।” (১ তীম. ৪:১৩, ১৫) উন্নতির জন্য অধ্যবসায়ী ব্যক্তিগত অধ্যয়নের প্রয়োজন। “স্থিতি কর” অভিব্যক্তিটি কোনো একটা কাজে নিমগ্ন থাকার ধারণা প্রকাশ করে। তোমার অধ্যয়নের অভ্যাস সম্বন্ধে কী বলা যায়? তুমি কী ‘ঈশ্ববের গভীর বিষয় সকলে’ স্থিতি কর? (১ করি. ২:১০) নাকি তুমি কেবল সামান্য প্রচেষ্টা করো? তুমি যা অধ্যয়ন করো, তা নিয়ে চিন্তা করা তোমাকে অনুপ্রাণিত করবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২:১-৫.

১৭, ১৮. (ক) তোমাদের কোন কোন ক্ষমতা গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত? (খ) কীভাবে তীমথিয়ের মতো একই মনোভাব গড়ে তোলা তোমাদেরকে পরিচর্যায় সাহায্য করবে?

১৭ মিশেল নামে একজন অগ্রগামী যুবতী বলেছিল: “পরিচর্যায় সত্যিই কার্যকারী হওয়ার জন্য আমার ব্যক্তিগত অধ্যয়নের এক উত্তম তালিকা রয়েছে আর আমি নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগদান করে থাকি। এর ফলে আমি সবসময় আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছি।” একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করা, পরিচর্যায় বাইবেল ব্যবহার করার বিষয়ে তোমার ক্ষমতাকে উন্নত এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে সত্যিই তোমাকে সাহায্য করবে। একজন উত্তম পাঠক হওয়ার এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে অর্থপূর্ণ মন্তব্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করো। আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব একজন যুবক হিসেবে, তুমি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ নির্ধারিত বিষয়বস্তুর সঙ্গে লেগে থেকে ছাত্ররা যে-নির্দেশনামূলক বক্তৃতাগুলো দেয়, সেগুলো প্রস্তুত করতে চাইবে।

১৮ ‘সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য করিবার’ অর্থ হল, তোমাদের পরিচর্যাকে আরও কার্যকারী করা এবং পরিত্রাণ লাভ করার জন্য অন্যদের সাহায্য করা। এর জন্য “শিক্ষা দেওয়ার কৌশল” গড়ে তুলতে হবে। (২ তীম. ৪:২, NW) পরিচর্যায় যারা অভিজ্ঞ, তাদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে তোমরা তাদের শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি থেকে শিখতে সমর্থ হবে, ঠিক যেমন তীমথিয় পৌলের সঙ্গে কাজ করে শিখেছিলেন। (১ করি. ৪:১৭) যাদেরকে তিনি সাহায্য করেছিলেন, তাদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে পৌল বলেছিলেন যে, তিনি কেবল তাদেরকে সুসমাচারই জানাননি কিন্তু সেইসঙ্গে তার “আপন প্রাণও” দিয়েছিলেন অথবা তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তার জীবনকে ব্যবহার করেছিলেন, কারণ তারা তার কাছে প্রিয়পাত্র ছিল। (১ থিষল. ২:৮) পরিচর্যায় পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করতে চাইলে তোমাদেরও তীমথিয়ের মতো একই মনোভাব রাখতে হবে, যিনি প্রকৃতই অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন এবং ‘সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছিলেন।’ (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১৯-২৩.) তোমরা কি তোমাদের পরিচর্যায় এইরকম আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাও?

উন্নতি প্রকৃত পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে

১৯, ২০. কেন আধ্যাত্মিক উন্নতি করা আনন্দ নিয়ে আসে?

১৯ আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কিন্তু, ধৈর্যের সঙ্গে তোমার শিক্ষা দেওয়ার দক্ষতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে এক সময় তুমি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে “অনেককে ধনী করার” বিশেষ সুযোগ পাবে এবং তারা তোমার “আনন্দ, বা শ্লাঘার মুকুট” হয়ে উঠবে। (২ করি. ৬:১০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন; ১ থিষল. ২:১৯) “আমি অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য আমার সময়কে আগের চেয়ে আরও বেশি করে ব্যয় করছি,” একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক ফ্রেড ব্যাখ্যা করেছিলেন। “এটা খুবই সত্য যে, গ্রহণ করার চেয়ে বরং দান করার মধ্যে আরও বেশি সুখ রয়েছে।”

২০ আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব হওয়ার ফলে সে যে-আনন্দ ও পরিতৃপ্তি লাভ করেছে, সেই সম্বন্ধে ড্যাফনি নামে একজন অল্পবয়সি অগ্রগামী বোন বলেছিল: “আমি যখন যিহোবাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলাম, তখন তাঁর সঙ্গে আমি আরও নিকট এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম। তুমি যখন তোমার ক্ষমতাকে সাধ্যমতো ব্যবহার করে যিহোবাকে খুশি করার চেষ্টা করবে, তখন তোমার অনেক ভালো লাগবে—সত্যিই পরিতৃপ্তি লাভ করবে!” যদিও মানুষেরা সবসময় আধ্যাত্মিক উন্নতি লক্ষ করে না কিন্তু যিহোবা সবসময় তা দেখেন এবং সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন। (ইব্রীয় ৪:১৩) নিঃসন্দেহে, তোমরা খ্রিস্টান যুবক-যুবতীরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার গৌরব ও প্রশংসা নিয়ে আসতে পারো। অকৃত্রিমভাবে তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করে চলার সময় ক্রমাগত তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে চলো।—হিতো. ২৭:১১.

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ ১ পিতর ৪:৭ (NW): “কিন্তু সমস্ত বিষয়ের শেষ সন্নিকট; অতএব সুস্থ মনের হও এবং প্রার্থনার উদ্দেশে সতর্ক থাক।”

^ যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ২ (ইংরেজি) বইয়ের “এই ব্যক্তি কি আমার জন্য উপযুক্ত?”; ২০০১ সালের ১৫ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “জীবনসাথি বাছাই করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নির্দেশনা”; এবং ১৯৮৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “কিশোর বিবাহ কতটা বিজ্ঞতার কাজ?”

আপনি কী শিখেছেন?

• আধ্যাত্মিক উন্নতি করার সঙ্গে কী জড়িত?

• কীভাবে তোমরা তোমাদের উন্নতি প্রকাশ করতে পারো . . .

প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সময়?

বিয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়?

পরিচর্যায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রার্থনা তোমাদেরকে সফলভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে যুবক বয়সি প্রকাশকরা কার্যকারী শিক্ষাদানের পদ্ধতিগুলো গড়ে তুলতে পারে?