সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার প্রতিবেশীর কাছে সত্য বলুন

আপনার প্রতিবেশীর কাছে সত্য বলুন

আপনার প্রতিবেশীর কাছে সত্য বলুন

“তোমরা, যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও।”—ইফি. ৪:২৫.

১, ২. অনেক লোক সত্যকে কীভাবে দেখে থাকে?

 যুগ যুগ ধরে সত্য এক বিতর্কিত বিষয় হয়ে এসেছে। সা.কা.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে, গ্রিক কবি আ্যলসিয়াস বলেছিলেন: “মদের মধ্যে সত্য রয়েছে।” এই কথা ইঙ্গিত করেছিল যে, সত্য একমাত্র তখনই প্রকাশিত হয়, যখন কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত মদ খেয়ে মাতাল হয়ে যায় আর সম্ভবত বেশি কথা বলতে চায়। প্রথম শতাব্দীর রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাতও সত্য সম্বন্ধে এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন, যখন তিনি উদাসীনভাবে যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “সত্য কি?”—যোহন ১৮:৩৮.

সত্য নিয়ে মতপার্থক্য আমাদের দিনেও রয়েছে। অনেক লোক বলে থাকে যে, “সত্য” শব্দটির বিভিন্ন অর্থ রয়েছে অথবা সত্য একেক জনের কাছে একেকরকম। অন্যেরা কেবল তাদের সুবিধাজনক বা উপযোগী সময়েই সত্য বলে থাকে। মিথ্যা বলার গুরুত্ব (ইংরেজি) নামক বইটি বলে: “সততা হয়তো এক মহৎ আদর্শ কিন্তু টিকে থাকার ও নিরাপত্তার জন্য জীবন-মরণ লড়াইয়ে এর খুব সামান্যই মূল্য রয়েছে। এই ক্ষেত্রে মানুষের পছন্দ খুব সীমিত—বেঁচে থাকার জন্য তাকে মিথ্যা বলতেই হয়।”

৩. কেন সত্য বলার ক্ষেত্রে যিশু এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ছিলেন?

খ্রিস্টের শিষ্যদের ক্ষেত্রে এটা কতই না আলাদা! সত্য সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি দার্শনিকদের মতো ছিল না। তিনি সবসময় সত্য বলতেন। এমনকী তাঁর শত্রুরাও স্বীকার করেছিল: “গুরু, আমরা জানি আপনি সত্য, এবং সত্যরূপে ঈশ্বরের পথের বিষয় শিক্ষা দিতেছেন।” (মথি ২২:১৬) একইভাবে আজকেও, প্রকৃত খ্রিস্টানরা যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করে থাকে। তারা সত্য বলতে দ্বিধা করে না। তারা সর্বান্তঃকরণে প্রেরিত পৌলের সঙ্গে একমত, যিনি সহবিশ্বাসীদের উপদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা, যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও।” (ইফি. ৪:২৫) আসুন আমরা পৌলের কথাগুলোর তিনটে দিক বিবেচনা করি। প্রথমত, কে আমাদের প্রতিবেশী? দ্বিতীয়ত, সত্য বলার অর্থ কী? আর তৃতীয়ত, কীভাবে আমরা আমাদের রোজকার জীবনে এটা কাজে লাগাতে পারি?

কে আমাদের প্রতিবেশী?

৪. কে আমাদের প্রতিবেশী, সেই সম্বন্ধে প্রথম শতাব্দীর যিহুদি নেতাদের বিপরীতে, কীভাবে যিশু যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করেছিলেন?

সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে, কিছু যিহুদি নেতা শিক্ষা দিয়েছিল যে, কেবল সহযিহুদি অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবকেই ‘প্রতিবাসী’ বলে অভিহিত করা উপযুক্ত। কিন্তু, যিশু তাঁর পিতার ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাভাবনা নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন। (যোহন ১৪:৯) লক্ষণীয়ভাবে, তিনি তাঁর শিষ্যদের দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর একটা বর্ণ বা জাতিকে অন্য বর্ণের বা জাতির চেয়ে বেশি অনুগ্রহ দেখান না। (যোহন ৪:৫-২৬) অধিকন্তু, পবিত্র আত্মা প্রেরিত পিতরের কাছে প্রকাশ করেছিল যে, “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:২৮, ৩৪, ৩৫) তাই, সমস্ত লোককে আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য করা উচিত, এমনকী সেই ব্যক্তিদের প্রতিও প্রেম প্রকাশ করা উচিত, যারা শত্রুর মতো আচরণ করে।—মথি ৫:৪৩-৪৫.

৫. আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সত্য বলার অর্থ কী?

কিন্তু, পৌল যখন বলেছিলেন যে, আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সত্য বলা উচিত, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? সত্য বলার অর্থ হল এমন বাস্তব তথ্য জানানো, যা যেকোনো প্রতারণা থেকে মুক্ত। সত্য খ্রিস্টানরা অন্যদেরকে ভ্রান্ত করার জন্য প্রকৃত ঘটনাকে বিকৃত করে না অথবা ভুলভাবে তুলে ধরে না। তারা ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করে’ এবং ‘যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হয়।’ (রোমীয় ১২:৯) ‘সত্যের ঈশ্বরকে’ অনুকরণ করে, আমাদের সমস্ত ব্যাপারে সৎ ও স্পষ্টবাদী হওয়ার প্রচেষ্টা করা উচিত। (গীত. ১৫:১, ২; ৩১:৫) সতর্কতার সঙ্গে শব্দ বাছাই করার মাধ্যমে, এমনকী বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিগুলোতেও প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে কৌশলে সেগুলোকে সমাধান করা যেতে পারে।—পড়ুন, কলসীয় ৩:৯, ১০.

৬, ৭. (ক) সত্যবাদী হওয়ার অর্থ কি এই যে, প্রত্যেক প্রশ্নকারীর উত্তরে আমাদের, এমনকী ব্যক্তিগত বিষয়গুলোও বিস্তারিতভাবে বলতে হবে? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কাদের ওপর নির্ভর করে আমরা সত্য বলতে পারি?

অন্যদের কাছে সত্যবাদী হওয়ার অর্থ কি এই যে, যে-ই আমাদের প্রশ্ন করুক না কেন, তাকে বিস্তারিত সমস্তকিছু বলতে হবে? অবশ্যই না। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু দেখিয়েছিলেন যে, কিছু লোক সরাসরি উত্তর পাওয়ার অথবা নির্দিষ্ট তথ্য জানার যোগ্য নয়। কপট ধর্মীয় নেতারা যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, কোন শক্তিতে বা ক্ষমতায় তিনি নানা চিহ্ন ও অলৌকিক কাজ করেন, তখন যিশু বলেছিলেন: “আমিও তোমাদিগকে একটী কথা জিজ্ঞাসা করিব, আমাকে উত্তর দেও, তাহা হইলে আমি তোমাদিগকে বলিব, কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি।” অধ্যাপক ও প্রাচীনবর্গ যখন উত্তর দিতে চায়নি, তখন যিশু বলেছিলেন: “তবে আমিও কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি, তাহা তোমাদিগকে বলিব না।” (মার্ক ১১:২৭-৩৩) তাদের কলুষিত অভ্যাসগুলো ও অবিশ্বস্ত উদাহরণের পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা বোধ করেননি। (মথি ১২:১০-১৩; ২৩:২৭, ২৮) একইভাবে আজকেও, যিহোবার লোকেদেরকে ধর্মভ্রষ্টদের এবং অন্যান্য দুষ্ট লোকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যারা বিভিন্ন স্বার্থপর উদ্দেশ্যে ঠকামি বা ধূর্ততা ব্যবহার করে থাকে।—মথি ১০:১৬; ইফি. ৪:১৪.

একইভাবে, পৌলও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, কিছু লোকের হয়তো সম্পূর্ণ বা পুরো উত্তর পাওয়ার অধিকার নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘বাচাল ও অনধিকারচর্চ্চাকারিণীরা অনুচিত কথা কহিতে শিখে।’ (১ তীম. ৫:১৩) হ্যাঁ, যে-ব্যক্তিরা অন্যদের ব্যাপারে নাক গলায় অথবা কোনো কিছু গোপন রাখার ব্যাপারে যে-ব্যক্তির ওপর নির্ভর করা যায় না, তাদেরকে অন্যেরা কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে চায় না। তাই, পৌলের এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া কতই না উত্তম: “শান্ত ভাবে থাকিতে ও আপন আপন কার্য্য করিতে . . . সযত্ন হও।” (১ থিষল. ৪:১১) কিন্তু, মাঝে মাঝে মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে হয়তো তাদের নির্ধারিত দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য অন্যদের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হতে পারে। এইরকম ক্ষেত্রে, সত্য বলার ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতাকে অনেক উপলব্ধি করা হয় এবং তা এক বিরাট সাহায্য হয়ে থাকে।—১ পিতর ৫:২.

পারিবারিক ব্যাপারগুলোতে সত্য বলুন

৮. কীভাবে সত্য বলা পরিবারের সদস্যদেরকে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হতে সাহায্য করে?

সাধারণত পরিবারের সঙ্গেই আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধন রয়েছে। এই বন্ধনকে দৃঢ় করার জন্য আমাদের একে অন্যের কাছে সত্য বলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে খোলাখুলি, সৎ এবং সদয় হওয়ার মাধ্যমে অনেক সমস্যা ও ভুলবোঝাবুঝি কমানো বা দূর করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন কোনো ভুল করি, তখন আমরা কি আমাদের সাথি, আমাদের সন্তান অথবা পরিবারের অন্য ঘনিষ্ঠ সদস্যদের কাছে তা স্বীকার করতে দ্বিধা করি? হৃদয় থেকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, পরিবারের মধ্যে শান্তি ও একতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮-১০.

৯. কেন সত্য বলা, আমাদের কাঠখোট্টা অথবা রূঢ় হওয়াকে ন্যায্য বলে প্রতিপন্ন করে না?

সত্য বলার অর্থ এই নয় যে, আমাদের কাঠখোট্টা ও কাণ্ডজ্ঞানহীন হওয়া উচিত। রূঢ় হওয়া সত্যের মূল্যকে বা এর প্রভাবকে বৃদ্ধি করে না। পৌল বলেছিলেন: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক। তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।” (ইফি. ৪:৩১, ৩২) আমরা যখন মধুরস্বভাব দেখিয়ে বা সদয়ভাবে ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে কথা বলি, তখন তা আমাদের বার্তাকে আরও মূল্যবান করে তোলে এবং যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলি, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।—মথি ২৩:১২.

মণ্ডলীর ব্যাপারগুলোতে সত্য বলুন

১০. সত্য বলার ক্ষেত্রে যিশুর চমৎকার উদাহরণ থেকে খ্রিস্টান প্রাচীনরা কী শিখতে পারে?

১০ যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে সহজ-সরল ও স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তাঁর পরামর্শ সবসময়ই প্রেমময় ছিল কিন্তু তাই বলে তিনি তাঁর শ্রোতাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য সত্যকে হালকা করে ফেলেননি। (যোহন ১৫:৯-১২) উদাহরণস্বরূপ, কে শ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে তাঁর প্রেরিতরা যখন বার বার নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক করেছিল, তখন যিশু দৃঢ়ভাবে অথচ ধৈর্যের সঙ্গে তাদেরকে নম্রতার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭; লূক ৯:৪৬-৪৮; ২২:২৪-২৭; যোহন ১৩:১৪) একইভাবে, যদিও খ্রিস্টান প্রাচীনরা ধার্মিকতার পক্ষে দৃঢ় থাকে কিন্তু তারা ঈশ্বরের পালের ওপর প্রভুত্ব করে না। (মার্ক ১০:৪২-৪৪) অন্যদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে “পরস্পর মধুরস্বভাব” বা সদয় ও “করুণচিত্ত” হওয়ার মাধ্যমে তারা খ্রিস্টকে অনুকরণ করে।

১১. আমাদের ভাইবোনদের প্রতি প্রেম, আমরা যেভাবে আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করি, সেই সম্বন্ধে কী করার জন্য আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে?

১১ আমাদের ভাইদের সঙ্গে খোলাখুলি হয়ে—তবে তা অতিরিক্ত মাত্রায় নয়—আমরা আমাদের মনের কথা অন্যদেরকে অসন্তুষ্ট না করে প্রকাশ করতে পারি। বস্তুতপক্ষে, আমরা কখনোই আমাদের জিহ্বাকে “শাণিত ক্ষুরের সদৃশ” করতে চাইব না, অপমানজনক বা মানহানিকর কথার্বাতা বলে বেদনাদায়ক আঘাত দেওয়ার জন্য এটাকে ব্যবহার করব না। (গীত. ৫২:২; হিতো. ১২:১৮) আমাদের ভাইবোনদের প্রতি প্রেম “হিংসা হইতে [আমাদের] জিহ্বাকে, ছলনা-বাক্য হইতে [আমাদের] ওষ্ঠকে সাবধানে” রাখতে অনুপ্রাণিত করবে। (গীত. ৩৪:১৩) এভাবে, আমরা ঈশ্বরকে সম্মান করি এবং মণ্ডলীতে একতা বৃদ্ধি করি।

১২. কখন মিথ্যা বলার জন্য বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করুন।

১২ যারা বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা বলে, তাদের কাছ থেকে মণ্ডলীকে সুরক্ষা করার জন্য প্রাচীনরা অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করে। (পড়ুন, যাকোব ৩:১৪-১৬.) এক বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বলা হয়ে থাকে; এর উদ্দেশ্য হল সেই ব্যক্তিকে কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া অথবা যন্ত্রণা দেওয়া। এর সঙ্গে তুচ্ছ, বিভ্রান্তিকর বিবৃতি বলা অথবা তথ্যকে অতিরঞ্জিত করার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। অবশ্য, যদিও সব মিথ্যাই অন্যায়, কিন্তু তাই বলে সব অসত্যের জন্যই বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাই যে-ব্যক্তি অসত্য বিবৃতিগুলো বলেছে, সেগুলো এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষপরায়ণ মিথ্যার নমুনা প্রতিষ্ঠা করেছে কি না আর এর জন্য বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, তা নির্ণয় করার জন্য প্রাচীনদের ভারসাম্যতা, যুক্তিবাদিতা এবং উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করতে হবে। নাকি এই ক্ষেত্রে শাস্ত্র থেকে দৃঢ় ও প্রেমময় উপদেশই যথেষ্ট হবে?

ব্যবসায়িক লেনদেনের ব্যাপারে সত্য বলুন

১৩, ১৪. (ক) কীভাবে কিছু লোক তাদের নিয়োগকর্তার সঙ্গে সত্যবাদী হতে ব্যর্থ হয়? (খ) কর্মক্ষেত্রে সৎ ও সত্যবাদী হওয়ায় কোন উত্তম ফল আসতে পারে?

১৩ আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে সর্বত্রই অসততা বিরাজমান, তাই একজন নিয়োগকর্তার সঙ্গে অসৎ হওয়ার প্রলোভনকে প্রতিরোধ করা কঠিন হতে পারে। কোনো চাকরির জন্য আবেদন করার সময়ে অনেকে সরাসরি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটা ভালো অথবা উচ্চবেতনের চাকরি পাওয়ার জন্য তারা হয়তো তাদের বায়োডাটায় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে বলে। অন্যদিকে, অনেক কর্মচারী কাজ করে বলে দাবি করে কিন্তু আসলে তারা তখন তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো করে থাকে, যদিও তা করা কোম্পানির নিয়মবিরুদ্ধ। তারা হয়তো তাদের কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন বিষয়বস্তু পড়ে, ব্যক্তিগত ফোন করে, ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক মেসেজ পাঠায় অথবা ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে।

১৪ সত্য খ্রিস্টানরা সততা ও সত্যবাদিতাকে ঐচ্ছিক কোনো বিষয় হিসেবে দেখে না। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯.) পৌল বলেছিলেন: “আমরা . . . সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করিতেছি।” (ইব্রীয় ১৩:১৮) তাই, খ্রিস্টানরা তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে পূর্ণ দিনের বেতনের বিনিময়ে পূর্ণ দিন কাজ করে থাকে। (ইফি. ৬:৫-৮) এ ছাড়া, একজন পরিশ্রমী কর্মী হওয়া আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রশংসা নিয়ে আসতে পারে। (১ পিতর ২:১২) উদাহরণস্বরূপ, একজন সৎ ও দায়িত্ববান কর্মী হওয়ার কারণে স্পেনের রোবের্তোর নিয়োগকর্তা তার প্রশংসা করেছিলেন। রোবের্তোর উত্তম আচরণের জন্য কোম্পানি আরও সাক্ষিদেরকে কাজে নিয়েছিল। তারাও চমৎকার কর্মী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। কয়েক বছরের মধ্যে রোবের্তো ২৩ জন বাপ্তাইজিত ভাই ও ৮ জন বাইবেল ছাত্রকে কাজ দিতে পেরেছিলেন!

১৫. কীভাবে একজন খ্রিস্টান ব্যবসায়ীর দেখানো উচিত যে, তিনি সত্য বলেন?

১৫ নিজের ব্যাবসা থাকলে, আমরা কি আমাদের সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেনের ব্যাপারে সত্যবাদী, নাকি মাঝে মাঝে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সত্য বলতে ব্যর্থ হই? একজন খ্রিস্টান ব্যবসায়ীর কোনো পণ্যকে দ্রুত বিক্রি করে দেওয়ার জন্য সেটাকে বা কার্যকারিতাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়; কিংবা তার ঘুস দেওয়া বা নেওয়া কোনোটাই করা উচিত নয়। আমরা অন্যদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে চাই, যেমনটা অন্যেরা আমাদের প্রতি করুক বলে আমরা চাই।—হিতো. ১১:১; লূক ৬:৩১.

সরকারি কর্তৃপক্ষদের কাছে সত্য বলুন

১৬. খ্রিস্টানরা কী প্রদান করে থাকে (ক) সরকারি কর্তৃপক্ষদেরকে? (খ) যিহোবাকে?

১৬ যিশু বলেছিলেন: “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” (মথি ২২:২১) এই “যাহা যাহা” কী, যেগুলো আমরা কৈসরকে অর্থাৎ সরকারি কর্তৃপক্ষদের দিতে বাধ্য? যিশু যখন এই কথাগুলো বলেছিলেন, তখন সেই আলোচনা করের ওপর ভিত্তি করে ছিল। তাই, ঈশ্বর ও মানুষদের সামনে এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখার জন্য খ্রিস্টানরা দেশের আইনকানুন মেনে চলে, যেগুলোর মধ্যে কর দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোও রয়েছে। (রোমীয় ১৩:৫, ৬) কিন্তু, আমরা স্বীকার করি যে, যিহোবা হলেন সর্বোচ্চ সার্বভৌম, একমাত্র সত্য ঈশ্বর, যাঁকে আমরা আমাদের পূর্ণ হৃদয়, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে ভালোবাসি। (মার্ক ১২:৩০; প্রকা. ৪:১১) তাই, আমরা নিঃশর্তে যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বশ্যতা প্রদান করে থাকি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৬:১১, ১২.

১৭. সরকারি সাহায্য লাভ করাকে যিহোবার লোকেরা কোন দৃষ্টিতে দেখে?

১৭ অনেক দেশে, যাদের বস্তুগত সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সামাজিক কর্মসূচী অথবা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। একজন খ্রিস্টানের পক্ষে এই ধরনের সাহায্য গ্রহণ করা দোষের কিছু নয়—যদি তিনি তা লাভ করার যোগ্য হয়ে থাকেন। আমাদের প্রতিবেশীর কাছে সত্য বলার অর্থ হল যে, আমরা সরকারি সাহায্য লাভ করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষদের কাছে কোনো মিথ্যা অথবা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেশ করব না।

সত্যবাদী হওয়ার আশীর্বাদগুলো

১৮-২০. আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সত্যবাদী হওয়ায় কোন আশীর্বাদগুলো আসে?

১৮ সত্যবাদী হওয়ার আশীর্বাদ অনেক। আমরা এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে পারি, যা আমাদেরকে মনের শান্তি ও শান্ত হৃদয় প্রদান করে। (হিতো. ১৪:৩০; ফিলি. ৪:৬, ৭) এক শুদ্ধ বিবেক থাকা ঈশ্বরের চোখে অনেক মূল্যবান। এ ছাড়া, সমস্ত বিষয়ে আমরা যখন সত্যবাদী হই, তখন আমাদের মানুষের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার কোনো ভয় থাকে না।—১ তীম. ৫:২৪.

১৯ আরেকটা আশীর্বাদের কথা বিবেচনা করুন। পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি, . . . সত্যের বাক্যে।” (২ করি. ৬:৪,) ব্রিটেনে বসবাসরত একজন সাক্ষির বেলায় তা নিশ্চিতভাবেই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। একজন সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে একটা গাড়ি বিক্রি করার সময় তিনি সেটার সমস্ত ভালো ও সেইসঙ্গে মন্দ দিক বর্ণনা করেছিলেন, যার মধ্যে সেই বিষয়গুলোও ছিল, যেগুলো দেখা যায় না। গাড়ি চালিয়ে পরীক্ষা করে দেখার পর, সেই ক্রেতা এই ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি কি না। কেন তিনি এইরকম মনে করেছিলেন? সেই ব্যক্তি ওই ভাইয়ের সততা ও পরিচ্ছন্ন বেশভূষা লক্ষ করেছিলেন। সেই আলোচনা এক উত্তম সাক্ষ্য প্রদান করতে সাহায্য করেছিল।

২০ একইভাবে, আমরাও কি আমাদের উত্তম নৈতিক চরিত্রের দ্বারা আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা নিয়ে আসি? পৌল বলেছিলেন: ‘আমরা লজ্জার গুপ্ত কার্য্যসমূহে জলাঞ্জলি দিয়াছি, ধূর্ত্ততায় চলি না।’ (২ করি. ৪:১, ২) তাই, আসুন আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সত্য বলার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি। তা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার ও তাঁর লোকেদের গৌরব নিয়ে আসব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কে আমাদের প্রতিবেশী?

• আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সত্য বলার অর্থ কী?

• কীভাবে সত্যবাদী হওয়া ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসতে পারে?

• সত্যবাদী হওয়ায় কোন আশীর্বাদগুলো আসে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি ছোটোখাটো ভুলগুলোকে সহজেই স্বীকার করেন?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

চাকরির জন্য আবেদন করার সময় আপনি কি সত্য বলেন?