সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ এবং এর পরিচালকগোষ্ঠী

বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ এবং এর পরিচালকগোষ্ঠী

বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ এবং এর পরিচালকগোষ্ঠী

“সেই বিশ্বস্ত, সেই বুদ্ধিমান্‌ গৃহাধ্যক্ষ কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনদের উপরে নিযুক্ত করিবেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্যের নিরূপিত অংশ দেয়?”—লূক ১২:৪২.

১, ২. শেষকালের যৌগিক চিহ্ন দেওয়ার সময় যিশু কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন?

 শেষকালের যৌগিক চিহ্ন দেওয়ার সময় যিশু এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন: “এখন, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়?” এরপর যিশু আরও বলেছিলেন যে, এই দাসকে তার বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে প্রভুর সর্বস্বের ওপর অধ্যক্ষ করা হবে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

এই কথা বলার কয়েক মাস আগে যিশু প্রায় একই ধরনের একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। (পড়ুন, লূক ১২:৪২-৪৪.) তিনি সেই দাসকে একজন “গৃহাধ্যক্ষ” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং দু-জায়গাতেই ‘পরিজনের’ বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। একজন গৃহাধ্যক্ষ হলেন গৃহের পরিচালক অথবা তত্ত্বাবধায়ক, যাকে দাসদের ওপর নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু, সেই গৃহাধ্যক্ষ একইসময়ে একজন দাসও। কে এই দাস অথবা গৃহাধ্যক্ষ আর কীভাবে তিনি “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” জোগান? আধ্যাত্মিক খাদ্য বিতরণ করার জন্য যে-মাধ্যম ব্যবহৃত হয়, সেটাকে শনাক্ত করা আমাদের সকলের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

৩. (ক) খ্রিস্টীয়জগতের সমালোচকরা “দাস” সম্বন্ধে যিশুর বিবৃতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে? (খ) “গৃহাধ্যক্ষ” অথবা “দাস” কে আর ‘পরিজন’ কারা?

খ্রিস্টীয়জগতের সমালোচকরা, যিশুর এই কথাগুলো প্রায়ই সেই ব্যক্তিদের নির্দেশ করে বলে মনে করে, যাদের নামধারী খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদ রয়েছে। কিন্তু, দৃষ্টান্তের “প্রভু” অর্থাৎ যিশু এইরকম বলেননি যে, বহুসংখ্যক দাস খ্রিস্টীয়জগতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে। এর পরিবর্তে, তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, মাত্র একজন “গৃহাধ্যক্ষ” অথবা “দাস” থাকবে, যাকে তিনি তাঁর সর্বস্বের অধ্যক্ষ করবেন। তাই, এই পত্রিকায় যেমন প্রায়ই ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, গৃহাধ্যক্ষ অবশ্যই এক সমষ্টিগত গোষ্ঠী বা দল হিসেবে অভিষিক্ত শিষ্যদের ‘ক্ষুদ্র মেষপালকে’ প্রতিনিধিত্ব করে। লূকের সুসমাচারের বিবরণের প্রসঙ্গে, যিশু ঠিক এই ব্যক্তিদেরই নির্দেশ করেছিলেন। (লূক ১২:৩২) ‘পরিজন’ ঠিক সেই একই দলকে নির্দেশ করে, তবে ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে তাদের ভূমিকাকে তুলে ধরে। তাই, এক আগ্রহজনক প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, এই দাস শ্রেণীর আলাদা আলাদা প্রত্যেক সদস্যই কি উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর ব্যাপারে এক ভূমিকা পালন করে? এর উত্তর স্পষ্ট হবে, যখন আমরা এই সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখব।

অতীতে যিহোবার দাস

৪. প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে যিহোবা কী বলে উল্লেখ করেছিলেন আর সেই জাতি সম্বন্ধে কী লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ?

যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে, প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে, এক সমষ্টিগত দাস হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। “তোমরাই [বহুবচন] আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস [একবচন]।” (যিশা. ৪৩:১০) সেই জাতির সমস্ত সদস্য ওই একটা দাস শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু, এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ন-যাজকীয় লেবীয়রাসহ কেবলমাত্র যাজকরাই সেই জাতিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত ছিল।—২ বংশা. ৩৫:৩; মালাখি ২:৭.

৫. যিশুর কথা অনুসারে, কোন বিরাট পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল?

ইস্রায়েল জাতিই কি সেই দাস ছিল, যার সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন? না। তাঁর দিনের যিহুদিদের প্রতি বলা যিশুর এই কথাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তা বলতে পারি: “তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪৩) স্পষ্টতই, এই ক্ষেত্রে এক পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল। যিহোবা এক নতুন জাতিকে ব্যবহার করবেন। যাই হোক, আধ্যাত্মিক নির্দেশনা প্রদান করার সময় যিশুর দৃষ্টান্তে বর্ণিত দাসের কাজ, প্রাচীন ইস্রায়েলে ঈশ্বরের ‘দাসের’ সমরূপ আদর্শ অনুসরণ করে।

বিশ্বস্ত দাস প্রকাশিত হয়

৬. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে কোন নতুন জাতি অস্তিত্বে আসে আর কারা এর অংশ হয়ে ওঠে?

নতুন জাতি অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে গঠিত। (গালা. ৬:১৬; রোমীয় ২:২৮, ২৯; ৯:৬) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে ঈশ্বরের আত্মার সেচনের মাধ্যমে এটি অস্তিত্বে আসে। এরপর, আত্মায় অভিষিক্ত সমস্ত খ্রিস্টান সেই জাতির অংশ হয়ে ওঠে, যা তখন প্রভু যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে নিযুক্ত দাস শ্রেণী হিসেবে সেবা করছিল। সেই জাতির প্রত্যেক সদস্যকে সুসমাচার প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। (মথি ২৮:১৯, ২০) কিন্তু, সেই দলের প্রত্যেক সদস্য কি উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর ব্যাপারে জড়িত ছিল? আসুন আমরা দেখি যে, শাস্ত্র কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়।

৭. প্রথমে প্রেরিতদের প্রধান কাজ কী ছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই কাজ কীভাবে প্রসারিত হয়েছিল?

যিশু যখন তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে নিযুক্ত করেছিলেন, তখন তাদের প্রধান কাজের সঙ্গে অন্যদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য প্রেরিত হওয়া জড়িত ছিল। (পড়ুন, মার্ক ৩:১৩-১৫.) এই কার্যভার গ্রিক শব্দ আ্যপোস্টোলোস-এর মূল অর্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, যা এমন একটি ক্রিয়াপদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেটির অর্থ সহজভাবে বললে হয় “পাঠানো।” কিন্তু, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল, তখন একজন প্রেরিতের ভূমিকা “অধ্যক্ষ-পদ” হয়ে উঠেছিল।—প্রেরিত ১:২০-২৬.

৮, ৯. (ক) ১২ জন প্রেরিতের প্রধান চিন্তার বিষয় কী ছিল? (খ) আরও কাদেরকে বাড়তি দায়িত্বগুলো দেওয়া হয়েছিল, যা পরিচালকগোষ্ঠীর দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল?

বারো জন প্রেরিতের প্রধান চিন্তার বিষয় কী ছিল? পঞ্চাশত্তমীর দিনের পরে যে-ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলোর মধ্যে এর উত্তর পাওয়া যেতে পারে। বিধবাদের দৈনিক খাদ্য বন্টন সম্বন্ধীয় পরিচর্যার বিষয়টা নিয়ে যখন তর্কবিতর্ক দেখা দিয়েছিল, তখন ১২ জন প্রেরিত শিষ্যদেরকে একত্রিত করে বলেছিল: “আমরা যে ঈশ্বরের বাক্য ত্যাগ করিয়া ভোজনের পরিচর্য্যা করি, ইহা উপযুক্ত নহে।” (পড়ুন, প্রেরিত ৬:১-৬.) এরপর প্রেরিতরা এই “কার্য্যের ভার” দেখাশোনা করার জন্য আধ্যাত্মিক যোগ্যতাসম্পন্ন অন্যান্য ভাইকে নিযুক্ত করেছিল, যাতে প্রেরিতরা “বাক্যের পরিচর্য্যায়” নিবিষ্ট থাকতে পারে। এই ব্যবস্থা যিহোবার আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল কারণ “ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, এবং যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল।” (প্রেরিত ৬:৭) সুতরাং, আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদানের প্রধান দায়িত্ব প্রেরিতদের ওপরে ছিল।—প্রেরিত ২:৪২.

পরে, অন্যদের ওপর আস্থা সহকারে গুরু দায়িত্বগুলো অর্পণ করা হয়েছিল। পবিত্র আত্মার নির্দেশে পৌল ও বার্ণবাকে আন্তিয়খিয়া মণ্ডলী থেকে অন্য জায়গায় মিশনারি হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারাও প্রেরিত হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, যদিও তারা প্রথম ১২ জন প্রেরিতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। (প্রেরিত ১৩:১-৩; ১৪:১৪; গালা. ১:১৯) পরবর্তী সময়ে তাদের নিযুক্তিকরণের বিষয়টা যিরূশালেমের পরিচালকগোষ্ঠীর দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল। (গালা. ২:৭-১০) এর কিছু সময় পরই, পৌল আধ্যাত্মিক খাদ্য বিতরণে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি তার প্রথম অনুপ্রাণিত চিঠি লিখেছিলেন।

১০. প্রথম শতাব্দীতে, আত্মায় অভিষিক্ত সমস্ত খ্রিস্টানই কি আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রস্তুত করায় জড়িত ছিল? ব্যাখ্যা করুন।

১০ কিন্তু, আত্মায় অভিষিক্ত সব খ্রিস্টানই কি প্রচার কাজ দেখাশোনা ও আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রস্তুত করায় জড়িত ছিল? না। প্রেরিত পৌল আমাদেরকে বলেন: “সকলেই কি প্রেরিত? সকলেই কি ভাববাদী? সকলেই কি উপদেশক? সকলেই কি পরাক্রম-কার্য্যকারী?” (১ করি. ১২:২৯) যদিও আত্মায়জাত সমস্ত খ্রিস্টান প্রচার কাজে রত ছিল কিন্তু কেবল খুবই সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিকে—মাত্র আট জন পুরুষকে—খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর ২৭টি বই লেখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।

আধুনিক সময়ে বিশ্বস্ত দাস

১১. দাসকে কোন “সর্ব্বস্বের” ওপর নিযুক্ত করা হয়েছিল?

১১ মথি ২৪:৪৫ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, শেষকালেও পৃথিবীতে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী থাকবে। প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭ পদ এই ব্যক্তিদেরকে স্ত্রীলোকটির বংশের ‘অবশিষ্ট লোক’ বলে উল্লেখ করে। একটা দল হিসেবে, এই অবশিষ্টাংকে পৃথিবীতে খ্রিস্টের সর্বস্বের ওপর নিযুক্ত করা হয়ছে। বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষকে যে-“সর্ব্বস্বের” যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, তা হল পৃথিবীতে প্রভুর সেইসমস্ত বিষয়বস্তু, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত রাজ্যের পার্থিব প্রজারা এবং সুসমাচার প্রচার কাজে ব্যবহৃত বস্তুগত সুযোগসুবিধাগুলো।

১২, ১৩. কীভাবে একজন খ্রিস্টান জানতে পারেন যে, তার স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে?

১২ কীভাবে একজন খ্রিস্টান জানেন যে, তার স্বর্গীয় আশা রয়েছে কি না এবং তিনি এই আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশের অন্তর্ভুক্ত কি না? এর উত্তর তার মতো একই স্বর্গীয় আশা ছিল এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোর মধ্যে পাওয়া যায়: “যত লোক ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা চালিত হয়, তাহারাই ঈশ্বরের পুত্ত্র। বস্তুতঃ তোমরা দাসত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ—যদি বাস্তবিক আমরা তাঁহার সহিত দুঃখভোগ করি, যেন তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিতও হই।”—রোমীয় ৮:১৪-১৭.

১৩ সহজভাবে বললে, এই ব্যক্তি বিশেষরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত এবং তারা ‘স্বর্গীয় আহ্বান’ বা আমন্ত্রণ লাভ করে। (ইব্রীয় ৩:১) এই ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে। ফল স্বরূপ, তারা কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ অথবা ভয় ছাড়াই ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে জাত হওয়ার এই আমন্ত্রণে সঙ্গেসঙ্গে সাড়া দেয়। (পড়ুন, ১ যোহন ২:২০, ২১.) তাই, তারা নিজেরা এই আশা নির্বাচন করে না কিন্তু যিহোবা তাদেরকে মুদ্রাঙ্কিত করেন বা তাদের ওপর পবিত্র আত্মা দেন।—২ করি. ১:২১, ২২; ১ পিতর ১:৩, ৪.

সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি

১৪. অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের আহ্বানকে কীভাবে দেখে?

১৪ এই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের তাদের স্বর্গীয় পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করার সময়, নিজেদের প্রতি কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত? তারা উপলব্ধি করে যে, যদিও তারা এক অপূর্ব আমন্ত্রণ লাভ করেছে কিন্তু তা কেবলই এক আমন্ত্রণ। এই পুরস্কার লাভ করার জন্য তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে হবে। নম্রভাবে তারা পৌলের এই কথাগুলোর সঙ্গে সুর মেলায়: “ভ্রাতৃগণ, আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটী কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্‌স্থ আহ্বানের পণ [“পুরস্কার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।” (ফিলি. ৩:১৩, ১৪) অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশকে ‘সম্পূর্ণ নম্রতা সহকারে, তাঁহারা যে আহ্বানে আহূত হইয়াছে, তাহার যোগ্যরূপে চলিবার’ জন্য যথাসাধ্য করতে হবে আর তা “সভয়ে ও সকম্পে” করতে হবে।—ইফি. ৪:১, ২; ফিলি. ২:১২; ১ থিষল. ২:১২.

১৫. সেই ব্যক্তিদেরকে খ্রিস্টানদের কীভাবে দেখা উচিত, যারা স্মরণার্থের সময় প্রতীকগুলো গ্রহণ করে আর অভিষিক্ত ব্যক্তিরা নিজেদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখে থাকে?

১৫ অন্যদিকে, এমন এক ব্যক্তিকে অন্য খ্রিস্টানদের কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত, যিনি এই অভিষেক লাভ করেছেন বলে দাবি করেন এবং স্মরণার্থের সময় প্রতীকগুলো গ্রহণ করতে শুরু করেন? কারো সেই ব্যক্তির বিচার করা উচিত নয়। বিষয়টা সেই ব্যক্তির এবং যিহোবার মধ্যে। (রোমীয় ১৪:১২) কিন্তু, যে-খ্রিস্টানরা সত্যিই এই অভিষেক লাভ করেছেন, তারা কোনো বিশেষ মনোযোগ দাবি করে না। তারা এইরকম মনে করে না যে, অভিষিক্ত হওয়ায় তারা এমন বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, যা এমনকী ‘বিস্তর লোকের’ কিছু অভিজ্ঞ সদস্যেরও নেই। (প্রকা. ৭:৯) তারা এরকমও মনে করে না যে, “আরও মেষ” সহযোগীদের চেয়ে তাদের অবশ্যই আরও বেশি পবিত্র আত্মা রয়েছে। (যোহন ১০:১৬) তারা বিশেষ আচরণ আশা করে না; কিংবা এইরকমও দাবি করে না যে, স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করা তাদেরকে মণ্ডলীর নিযুক্ত প্রাচীনদের চেয়ে ওপরের অবস্থানে রাখে।

১৬-১৮. (ক) সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিই কি নতুন আধ্যাত্মিক সত্য উপস্থাপন করায় জড়িত? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) কেন পরিচালকগোষ্ঠীর এমন সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই, যারা নিজেদের অভিষিক্ত ব্যক্তি বলে দাবি করে?

১৬ পৃথিবীব্যাপী সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিই কি পৃথিবীজুড়ে পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে এমন এক দলের অংশ, যা কোনো না কোনোভাবে নতুন আধ্যাত্মিক সত্যগুলো প্রকাশ করায় জড়িত? না। যদিও এক সমষ্টিগতগোষ্ঠী হিসেবে, দাস শ্রেণীই আধ্যাত্মিক পরিজনদের খাদ্য প্রদান করে থাকে, কিন্তু দাস শ্রেণীর সমস্ত ব্যক্তি বিশেষেরই একই দায়িত্ব অথবা কার্যভার নেই। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১২:১৪-১৮.) আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রথম শতাব্দীতে সকলে অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রচার কাজে জড়িত ছিল। কিন্তু কেবল খুবই অল্প সংখ্যক ব্যক্তি বাইবেলের বইগুলো লেখার এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলী দেখাশোনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

১৭ উদাহরণস্বরূপ: শাস্ত্র মাঝে মাঝে বিচার সংক্রান্ত বিষয় মীমাংসা করার জন্য ‘মণ্ডলীর’ নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলে। (মথি ১৮:১৭) কিন্তু, আসলে কেবল প্রাচীনরাই মণ্ডলীর প্রতিনিধি হিসেবে তাদের ভূমিকায় এই পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিভিন্ন মতামত জানার জন্য প্রাচীনরা মণ্ডলীর সমস্ত সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। ঈশতান্ত্রিকভাবে, তারা সেই ভূমিকা পালন করে থাকে, যে-দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে; তারা সমগ্র মণ্ডলীর পক্ষ হয়ে কাজ করে।

১৮ একইভাবে, আজকেও সীমিত সংখ্যক অভিষিক্ত পুরুষের দাস শ্রেণীকে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে নিয়ে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী গঠিত। আত্মায় অভিষিক্ত এই পুরুষরা রাজ্যের কাজ ও আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদানের কার্যক্রম দেখাশোনা করে থাকে। কিন্তু, প্রথম শতাব্দীর মতো পরিচালকগোষ্ঠী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দাস শ্রেণীর প্রত্যেক আলাদা আলাদা সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে নেয় না। (পড়ুন, প্রেরিত ১৬:৪, ৫.) তবে, সমস্ত অভিষিক্ত সাক্ষি অতীব গুরুত্বপূর্ণ শস্যচ্ছেদনের কাজে গভীরভাবে জড়িত রয়েছে, যা এখন হচ্ছে। এক শ্রেণী হিসেবে, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” হল একটা দেহ কিন্তু ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে তাদের বিভিন্ন কার্যভার রয়েছে।—১ করি. ১২:১৯-২৬.

১৯, ২০. “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এবং এর পরিচালকগোষ্ঠীর প্রতি বিস্তর লোকের কোন ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?

১৯ ওপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো, দিন দিন বেড়ে চলা সেই বিস্তর লোকের ওপর কোন প্রভাব ফেলা উচিত, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে? রাজার সর্বস্বের অংশ হিসেবে তারা পরিচালকগোষ্ঠীর দ্বারা গৃহীত ব্যবস্থার সঙ্গে পূর্ণরূপে সহযোগিতা করতে পেরে আনন্দিত, যারা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ প্রতিনিধিত্ব করে। বিস্তর লোকের সদস্যরা পরিচালকগোষ্ঠীর নির্দেশাধীনে উৎপন্ন আধ্যাত্মিক খাদ্যকে মূল্যবান বলে গণ্য করে। কিন্তু, একইসময়ে দাসকে একটা শ্রেণী হিসেবে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তর লোকের সদস্যরা এই ব্যাপারে সতর্ক থাকে যেন সেই দাসের অংশ বলে দাবি করে এমন কোনো ব্যক্তি বিশেষকে তারা উচ্চীকৃত না করে। ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা সত্যিই অভিষেক লাভ করেছেন এমন কোনো খ্রিস্টানই এইরকম ব্যবহার চান না বা আশা করেন না।—প্রেরিত ১০:২৫, ২৬; ১৪:১৪, ১৫.

২০ আমরা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশের অংশ এমন ‘পরিজন’ অথবা বিস্তর লোকের সদস্য, যে-ই হই না কেন, আসুন আমরা বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষ এবং এর পরিচালকগোষ্ঠীর সঙ্গে পূর্ণরূপে সহযোগিতা করাকে আমাদের দৃঢ়সংকল্প করে তুলি। আমরা প্রত্যেকে যেন ‘জাগিয়া থাকি’ এবং নিজেদেরকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত প্রমাণ করি।—মথি ২৪:১৩, ৪২.

আপনার কি মনে আছে?

• “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” কে আর পরিজন কারা?

• কীভাবে একজন ব্যক্তি জানতে পারেন যে, তার স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে?

• নতুন আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রস্তুত করার প্রধান দায়িত্ব কার?

• একজন অভিষিক্ত ব্যক্তির নিজের প্রতি কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আজকে, পরিচালকগোষ্ঠী বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম শতাব্দীতেও একইরকম ব্যবস্থা ছিল