সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পৃথিবীতে অনন্তজীবন —পুনরায় উন্মোচিত এক আশা

পৃথিবীতে অনন্তজীবন —পুনরায় উন্মোচিত এক আশা

পৃথিবীতে অনন্তজীবন —পুনরায় উন্মোচিত এক আশা

“হে দানিয়েল, তুমি শেষকাল পর্য্যন্ত এই বাক্য সকল রুদ্ধ করিয়া রাখ . . . অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের [“সত্যিকারের জ্ঞানের,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] বৃদ্ধি হইবে।”—দানি. ১২:৪.

১, ২. এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

 আজকে লক্ষ লক্ষ লোক এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশার বিষয়ে শাস্ত্রীয় ভিত্তি সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। (প্রকা. ৭:৯, ১৭) মানব ইতিহাসের শুরুতে ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে, মানুষকে কয়েক বছর বেঁচে থেকে তারপর মারা যাওয়ার জন্য নয় কিন্তু চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল।—আদি. ১:২৬-২৮.

আদম যে-সিদ্ধতা হারিয়েছিল, মানবজাতির সেই সিদ্ধতায় পুনর্স্থাপিত হওয়া ইস্রায়েলীয়দের আশার অংশ ছিল। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে যে, কীসের মাধ্যমে ঈশ্বর পরমদেশ পৃথিবীতে মানবজাতির জন্য অনন্তজীবন সম্ভবপর করবেন। তাহলে, কেন মানুষের আশাকে পুনরায় উন্মোচন করতে হবে? এটাকে কীভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল ও কীভাবে লক্ষ লক্ষ লোককে এই সম্বন্ধে জানানো হয়েছিল?

এক আশাকে অস্পষ্ট রাখা হয়েছিল

৩. কেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৃথিবীতে অনন্তজীবন পাওয়ার বিষয়ে মানবজাতির আশাকে অস্পষ্ট রাখা হয়েছিল?

যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, ভাক্ত ভাববাদীরা তাঁর শিক্ষাগুলোকে বিকৃত করবে এবং অধিকাংশ লোক ভ্রান্ত হবে। (মথি ২৪:১১) প্রেরিত পিতর খ্রিস্টানদের সাবধান করেছিলেন: “তোমাদের মধ্যেও ভাক্ত গুরুরা উপস্থিত হইবে।” (২ পিতর ২:১) প্রেরিত পৌল ‘এমন সময়ের’ কথা বলেছিলেন, “যে সময় লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্তু কাণচুল্‌কানি-বিশিষ্ট হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে।” (২ তীম. ৪:৩, ৪) শয়তান লোকেদেরকে ভ্রান্ত করায় রত আর সে মানুষ ও পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে হৃদয়গ্রাহী সত্যকে অস্পষ্ট রাখতে ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্ট ধর্মকে ব্যবহার করেছে।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪.

৪. ধর্মভ্রষ্ট ধর্মীয় নেতারা মানবজাতির কোন আশাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?

শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে যে, ঈশ্বরের রাজ্য হল স্বর্গে অবস্থিত এক সরকার, যেটা মনুষ্যনির্মিত সমস্ত শাসনকে চূর্ণ করবে। (দানি. ২:৪৪) খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বের সময়ে শয়তানকে অগাধলোকে বন্দি করে রাখা হবে, মৃতদের পুনরুত্থিত করা হবে এবং মানবজাতিকে পৃথিবীতে সিদ্ধতায় উন্নীত করা হবে। (প্রকা. ২০:১-৩, ৬, ১২; ২১:১-৪) কিন্তু, খ্রিস্টীয়জগতের ধর্মভ্রষ্ট ধর্মীয় নেতারা অন্যান্য ধারণা গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, তৃতীয় শতাব্দীর গির্জার ফাদার আলেকজান্দ্রিয়ার ওরিজেন সহস্র বছরের রাজত্বে পার্থিব আশীর্বাদগুলোতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদেরকে নিন্দা করেছিলেন। ক্যাথলিক ঈশ্বরতত্ত্ববিদ হিপ্পোর অগাস্টিন (সা.কা. ৩৫৪-৪৩০) “দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সহস্র বছরের রাজত্ব বলে কিছু নেই,” দ্য ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে। *

৫, ৬. কেন ওরিজেন এবং অগাস্টিন সহস্র বছরের রাজত্ব সম্বন্ধীয় মতবাদের বিরোধিতা করেছিল?

কেন ওরিজেন ও অগাস্টিন সহস্র বছর রাজত্ব সম্বন্ধীয় মতবাদের বিরোধিতা করেছিল? ওরিজেন গ্রিক পরম্পরাগত বিশ্বাস থেকে অমর আত্মার ধারণাকে গ্রহণ করেছিলেন। আত্মা সম্বন্ধে প্লেটোর ধারণাগুলোর দ্বারা জোরালোভাবে প্রভাবিত হওয়ায় ওরিজেন “খ্রিস্টীয় মতবাদে আত্মা সম্বন্ধীয় সমস্ত শিক্ষার সূচনা করেছিলেন, যা তিনি প্লেটোর কাছে থেকে গ্রহণ করেছিলেন,” ঈশ্বরতত্ত্ববিদ ভারনার ইয়েগা বলেন। এই কারণে, ওরিজেন শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, সহস্র বছরের রাজত্বের আশীর্বাদগুলো আত্মিক রাজ্যে গিয়ে লাভ করা যাবে।

অগাস্টিন ৩৩ বছর বয়সে তথাকথিত ‘খ্রিস্ট ধর্মে’ ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে একজন নিওপ্লেটোনিস্ট—তৃতীয় শতাব্দীতে প্লটিনাসের দ্বারা প্রবর্তিত প্লেটোর দর্শনবিদ্যার এক সংস্করণের একজন সমর্থক—হয়েছিলেন। অগাস্টিন ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও তার চিন্তাভাবনা নিওপ্লেটোনিকই রয়ে গিয়েছিল। “তিনিই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নতুন নিয়ম-এর শিক্ষার সঙ্গে প্লেটোর শিক্ষাগুলোকে মেশানোর ক্ষেত্রে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন,” দ্য নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে। অগাস্টিন প্রকাশিত বাক্য ২০ অধ্যায়ে বর্ণিত সহস্র বছরের রাজত্বকে “এক রূপক বর্ণনা” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, দ্য ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে। এটি আরও বলে: “এই ব্যাখ্যাকে . . . পরবর্তী সময়ের পশ্চিমা ঈশ্বরতত্ত্ববিদরা গ্রহণ করে নিয়েছিল এবং সহস্র বছরের রাজত্বের বিষয়ে প্রথমে যে-বিশ্বাস ছিল, সেটা আর কোনো সমর্থন লাভ করতে পারেনি।”

৭. কোন মিথ্যা বিশ্বাস পৃথিবীতে অনন্তজীবন সম্বন্ধে মানুষের আশাকে নষ্ট করেছে এবং কীভাবে?

পৃথিবীতে অনন্তজীবন সম্বন্ধে মানবজাতির আশা এমন এক ধারণার দ্বারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যেটা প্রাচীন বাবিলে প্রচলিত ছিল ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল আর সেই ধারণাটা হচ্ছে, মানুষের এক অমর আত্মা রয়েছে, যা শুধু মাংসিক দেহে বাস করে। খ্রিস্টীয়জগৎ যখন সেই ধারণাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল, তখন ঈশ্বরতত্ত্ববিদরা এমন পাঠ্যাংশ তৈরি করার জন্য শাস্ত্রকে বিকৃত করেছিল, যেগুলো বর্ণনা করে যে, স্বর্গীয় আশা আপাতদৃষ্টিতে এই শিক্ষা দেয় যে, সব ভালো লোকই স্বর্গে যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, পৃথিবীতে একজন ব্যক্তির জীবন ক্ষণস্থায়ী আর সেই সময়টা এটা নির্ণয় করার জন্য এক পরীক্ষা যে, তিনি স্বর্গে জীবন লাভ করার জন্য যোগ্য কি না। পৃথিবীতে অনন্তজীবন সম্বন্ধে যিহুদিদের প্রথমে যে-আশা ছিল, সেটার ক্ষেত্রেও পূর্বোল্লিখিত অনুরূপ কিছুই ঘটেছিল। ধীরে ধীরে যিহুদিরা যখন গ্রিকদের মানব আত্মার সহজাত অমরত্বের ধারণাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল, তখন পৃথিবীতে জীবন লাভের বিষয়ে তাদের আদি আশা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাইবেলে মানুষকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তার চেয়ে এই ধারণা কতই না আলাদা! মানুষ হল এক ভৌত বা মাংসিক সৃষ্টি, কোনো আত্মা নয়। যিহোবা প্রথম মানুষকে বলেছিলেন: “তুমি ধূলি।” (আদি. ৩:১৯) স্বর্গ নয় বরং পৃথিবী হচ্ছে মানুষের অনন্তকালীন গৃহ।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৪:৫; ১১৫:১৬.

অন্ধকারের মধ্যে সত্য প্রকাশিত হয়

৮. মানুষের আশা সম্বন্ধে ১৬০০ সালের কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি কী বলেছিল?

যদিও নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন অধিকাংশ ধর্মই পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশাকে অস্বীকার করে কিন্তু সত্যকে অস্পষ্ট করে রাখার ক্ষেত্রে শয়তান সবসময় সফল হয়নি। যুগ যুগ ধরে, অল্পসংখ্যক মনোযোগী বাইবেল পাঠক, কীভাবে ঈশ্বর মানবজাতিকে সিদ্ধতায় পুনর্স্থাপন করবেন, সেই বিষয়টার কিছু দিক যখন বুঝতে পারে, তখন তারা সত্যের ঝলক দেখতে পায়। (গীত. ৯৭:১১; মথি ৭:১৩, ১৪; ১৩:৩৭-৩৯) ১৬০০ সালের মধ্যে, বাইবেলের অনুবাদ ও মুদ্রণের ফলে পবিত্র শাস্ত্র ব্যাপকভাবে প্রাপ্তিসাধ্য হয়ে উঠেছিল। ১৬৫১ সালে, একজন পণ্ডিত ব্যক্তি লিখেছিলেন যে, আদমের মাধ্যমে যেহেতু মানুষ “পরমদেশ এবং পৃথিবীতে অনন্তজীবনের অধিকার স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছে,” তাই খ্রিস্টেই “সব মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবে; তা না হলে দুজনের মধ্যে এই তুলনা যথার্থ হতো না।” (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:২১, ২২.) ইংরেজিভাষী বিশ্বের বিখ্যাত কবিদের মধ্যে একজন, জন মিলটন (১৬০৮-১৬৭৪) প্যারাডাইস লস্ট ও এর পরবর্তী ধারাবাহিক কবিতা প্যারাডাইস রিগেইনড্‌ লিখেছিলেন। তার কবিতাগুলোতে মিলটন বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা এক পার্থিব পরমদেশে যে-পুরস্কার লাভ করবে, সেই বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। যদিও মিলটন তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই বাইবেল অধ্যয়ন করায় নিয়োজিত ছিলেন কিন্তু তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, খ্রিস্টের উপস্থিতি না হওয়া পর্যন্ত শাস্ত্রীয় সত্য পুরোপুরি বোঝা যাবে না।

৯, ১০. (ক) মানবজাতির আশা সম্বন্ধে আইজাক নিউটন কী লিখেছিলেন? (খ) খ্রিস্টের উপস্থিতি নিউটনের কাছে কেন দূরের বিষয় বলে মনে হয়েছিল?

বিখ্যাত গণিতবিদ স্যার আইজাক নিউটনেরও (১৬৪২-১৭২৭) বাইবেলের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পবিত্র ব্যক্তিরা স্বর্গীয় জীবনে উত্থিত হবে এবং তারা অদৃশ্যভাবে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করবে। (প্রকা. ৫:৯, ১০) রাজ্যের প্রজাদের বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন: “বিচার-দিনের পর পৃথিবীতে মানুষ বাস করবে আর তা কেবল ১,০০০ বছরের জন্য নয় কিন্তু চিরকালের জন্য।”

১০ নিউটন ভেবেছিলেন যে, খ্রিস্টের উপস্থিতি আরও কয়েক শতাব্দী দূরের ব্যাপার। “একটা যে-কারণে নিউটন ঈশ্বরের রাজ্যকে সুদূর ভবিষ্যতের এক বিষয় বলে মনে করেছিলেন, তা হল তার চারিদিকে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান ত্রিত্ববাদের ধর্মভ্রষ্টতা দেখে তিনি খুবই নিরাশ হয়ে গিয়েছিলেন,” ইতিহাসবেত্তা স্টিভেন স্নোবেলিন বলেছিলেন। সুসমাচার তখনও পর্যন্ত আবৃত ছিল। আর নিউটন এমন কোনো খ্রিস্টান দলকে দেখতে পাননি, যারা তা প্রচার করতে পারত। তিনি লিখেছিলেন: “দানিয়েল ও যোহনের [পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লিপিবদ্ধ] ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো শেষ কাল না আসা পর্যন্ত বুঝতে পারা যাবে না।” নিউটন ব্যাখ্যা করেছিলেন: “‘সেইসময়ে,’ দানিয়েল বলেছিলেন, ‘অনেকে ইতস্তত দৌড়াদৌড়ি করবে ও জ্ঞানের বৃদ্ধি হবে।’ কারণ মহাক্লেশ ও জগতের শেষ আসার আগে সুসমাচার সমস্ত জাতির কাছে প্রচারিত হতে হবে। খেজুর পাতা হাতে জনতা, যারা কিনা এই মহাক্লেশ থেকে বের হয়ে আসবে, সমস্ত জাতি থেকে আসা এই জনতার সংখ্যা অগণিত হতে পারে না, যদি না মহাক্লেশ আসার আগে তাদের কাছে সুসমাচার প্রচারিত হয়।”—দানি. ১২:৪; মথি ২৪:১৪; প্রকা. ৭:৯, ১০.

১১. কেন মিলটন ও নিউটনের দিনের অধিকাংশ লোকের কাছে মানবজাতির আশা অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছিল?

১১ মিলটন ও নিউটনের দিনে, গির্জার অনুমোদিত মতবাদের বিরুদ্ধ ধারণাগুলো প্রকাশ করা বিপদজনক ছিল। তাই, বাইবেল নিয়ে গবেষণা করে লেখা তাদের অধিকাংশ তথ্যই তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা যায়নি। ১৬ শতকে কিছু লোক ক্যাথলিক গির্জা ও এর কিছু শিক্ষা ত্যাগ করেছিল। তাদেরকে বলা হতো প্রোটেস্টান্ট। কিন্তু, তারা মানব আত্মার সহজাত অমরত্বের শিক্ষাকে দূর করতে ব্যর্থ হয়েছিল আর প্রভাবশালী প্রোটেস্টান্ট গির্জাগুলো অগাস্টিনের এই ধারণাকে শিক্ষা দিয়ে চলেছিল যে, সহস্র বছরের রাজত্ব ছিল অতীতের বিষয়, ভবিষ্যতের নয়। কিন্তু, শেষকালে কি জ্ঞানের বৃদ্ধি হয়েছে?

“সত্যিকারের জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে”

১২. কখন সত্য জ্ঞানের বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল?

১২ “শেষকাল” সম্বন্ধে দানিয়েল খুবই ইতিবাচক এক ঘটনার বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। (পড়ুন, দানিয়েল ১২:৩, ৪, ৯, ১০.) “তখন ধার্ম্মিকেরা . . . সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ১৩:৪৩) শেষকালে কীভাবে সত্য জ্ঞানের বৃদ্ধি হয়েছিল? ১৯১৪ সাল, যে-বছর শেষকাল শুরু হয়েছে, সেই বছরের আগের দশকগুলোতে ঘটা কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা বিবেচনা করুন।

১৩. আদম যেরকম সিদ্ধ ছিল, মানবজাতিকে সেই অবস্থায় পুনর্স্থাপন করার বিষয়টা নিয়ে পরীক্ষা করার পর চার্লস টেজ রাসেল কী লিখেছিলেন?

১৩ আঠারো-শো সালের শেষের দিকে, বেশ কিছু আন্তরিক ব্যক্তি “নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ” সম্বন্ধে বোধগম্যতা লাভ করার জন্য অনুসন্ধান করছিল। (২ তীম. ১:১৩) এই ধরনের একজন ব্যক্তি ছিলেন চার্লস টেজ রাসেল। ১৮৭০ সালে, তিনি এবং আরও কয়েক জন সত্য অন্বেষণকারী ব্যক্তি বাইবেল অধ্যয়নের জন্য একটা দল গঠন করেছিলেন। ১৮৭২ সালে, তারা আদম যেরকম সিদ্ধ ছিল, মানবজাতিকে সেই অবস্থায় পুনর্স্থাপন করার বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করেছিল। পরে রাসেল লিখেছিলেন: “সেই সময় পর্যন্ত আমরা স্পষ্টভাবে এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম যে, এখন যেটা পরীক্ষিত হচ্ছে, সেই গির্জার (অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলীর) পুরস্কার এবং জগতের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পুরস্কারের মধ্যে এক বিরাট পার্থক্য রয়েছে।” পরের দল অর্থাৎ জগতের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পুরস্কার হবে “মানব স্বভাবকে সেই সিদ্ধতায় পুনর্স্থাপন করা, যা তাদের জনক ও মস্তক আদম একসময় এদনে উপভোগ করেছিল।” রাসেল স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন। তারা কারা ছিল?

১৪. (ক) হেনরি ডান্‌ প্রেরিত ৩:২১ পদের অর্থ কীভাবে বুঝেছিলেন? (খ) কারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে বলে ডান্‌ বলেছিলেন?

১৪ হেনরি ডান্‌ ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি “সমস্ত বিষয়ের পুনঃস্থাপনের কাল” সম্বন্ধে লিখেছিলেন, “যে কালের বিষয় ঈশ্বর নিজ পবিত্র ভাববাদিগণের মুখ দ্বারা বলিয়াছেন, যাঁহারা পূরাকাল হইতে হইয়া গিয়াছেন।” (প্রেরিত ৩:২১) ডান্‌ জানতেন যে, এই পুনর্স্থাপনের অন্তর্ভুক্ত ছিল, খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বের সময় মানবজাতিকে এই পৃথিবীতে সিদ্ধতায় উন্নীত করা। এ ছাড়া, ডান্‌ এমন একটা প্রশ্নের ওপর গবেষণা করেছিলেন, যে-প্রশ্নটা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল আর সেটা হচ্ছে, কারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে? তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি পুনরুত্থিত হবে, তাদেরকে সত্য শেখানো হবে এবং তারা খ্রিস্টে বিশ্বাস অনুশীলন করার সুযোগ লাভ করবে।

১৫. জর্জ স্টর্জ পুনরুত্থান সম্বন্ধে কী বুঝতে পেরেছিলেন?

১৫ আঠারো-শো সত্তর সালে জর্জ স্টর্জও এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, অধার্মিক ব্যক্তিদের অনন্তজীবন লাভের একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। এ ছাড়া, শাস্ত্র অধ্যয়ন করে তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন যে, পুনরুত্থিত একজন ব্যক্তি যদি এই সুযোগের প্রতি সাড়া না দেয়, তাহলে সে “মৃত্যুতে শেষ হয়ে যাবে, এমনকী সেই ‘পাপী এক-শো বছর বয়স্ক হলেও।’” (যিশা. ৬৫:২০) স্টর্জ নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে থাকতেন আর তিনি বাইবেল পরীক্ষক (ইংরেজি) নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

১৬. কী বাইবেল ছাত্রদেরকে খ্রিস্টীয়জগতের থেকে আলাদা করেছিল?

১৬ রাসেল বাইবেল অধ্যয়ন করে বুঝতে পেরেছিলেন যে, সুসমাচার ব্যাপকভাবে জানানোর সময় এসে গিয়েছিল। তাই ১৮৭৯ সালে, তিনি জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার আ্যন্ড হেরাল্ড অভ্‌ ক্রাইস্টস প্রেজেন্স, যেটি এখন প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে নামে পরিচিত, সেই পত্রিকা ছাপাতে শুরু করেছিলেন। এর আগে, খুব কম সংখ্যক লোক মানবজাতির আশা সম্বন্ধে সত্য বুঝতে পেরেছিল কিন্তু এরপর থেকে অনেক দেশে বাইবেল ছাত্রদের দলগুলো প্রহরীদুর্গ পত্রিকা পাচ্ছিল ও অধ্যয়ন করছিল। কেবল অল্প কিছু সংখ্যক লোক স্বর্গে যাবে কিন্তু লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে পৃথিবীতে সিদ্ধ মানব জীবন দেওয়া হবে, এই বিশ্বাসই বাইবেল ছাত্রদেরকে খ্রিস্টীয়জগতের অধিকাংশ ধর্মের চেয়ে আলাদা করেছিল।

১৭. কীভাবে সত্য জ্ঞানের বৃদ্ধি হয়েছিল?

১৭ ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত “শেষকাল” ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল। মানবজাতির আশা সম্বন্ধে সত্য জ্ঞানের কি বৃদ্ধি হয়েছিল? (দানি. ১২:৪) ১৯১৩ সালের মধ্যে, রাসেলের বক্তৃতাগুলো ২,০০০টি খবরের কাগজে ছাপানো হয়েছিল এবং সেগুলোর মোট পাঠক সংখ্যা ছিল ১,৫০,০০,০০০ জন। ১৯১৪ সালের শেষে, তিনটে মহাদেশের ৯০,০০,০০০-এরও বেশি লোক “ফটো-ড্রামা অভ্‌ ক্রিয়েশন”—চলচ্চিত্র ও স্লাইডসহ একটা কার্যক্রম, যেটা খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বকে ব্যাখ্যা করেছিল—দেখতে পেয়েছিল। ১৯১৮ সাল থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত “লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, যারা এখন জীবিত আছে, তারা কখনো মরবে না” শিরোনামের বক্তৃতা, যেটি পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশার বিষয় ব্যাখ্যা করেছিল, সেটি পৃথিবীব্যাপী ৩০টারও বেশি ভাষায় যিহোবার দাসেরা উপস্থাপন করেছিল। ১৯৩৪ সালের মধ্যে, যিহোবার সাক্ষিরা বুঝতে পেরেছিল যে, যারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা করে, তাদের বাপ্তাইজিত হতে হবে। পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা সম্বন্ধে বোধগম্যতা তাদেরকে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য নব উদ্যোগে পূর্ণ করেছিল। আজকে, পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির হৃদয়কে যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ করে।

“প্রতাপের স্বাধীনতা” সামনেই!

১৮, ১৯. যিশাইয় ৬৫:২১-২৫ পদে কী ধরনের জীবন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছে?

১৮ ঈশ্বরের লোকেরা পৃথিবীতে যে-ধরনের জীবন উপভোগ করবে, ভাববাদী যিশাইয় সেই বিষয়ে লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:২১-২৫.) প্রায় ২,৭০০ বছর আগে যিশাইয় যখন এই কথাগুলো লিখেছিলেন, সেইসময়ে যে-নির্দিষ্ট কিছু বৃক্ষ বেঁচে ছিল, সেগুলো এখনও বেঁচে আছে। আপনি কি শক্তি ও উত্তম স্বাস্থ্য নিয়ে এত দীর্ঘসময় বেঁচে থাকার কথা কল্পনা করতে পারেন?

১৯ মানুষের জীবনকাল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এক সংক্ষিপ্ত যাত্রা না হয়ে বরং নির্মাণ করার, রোপণ করার ও শেখার অফুরন্ত সুযোগ প্রদান করবে। এমন বন্ধুত্বগুলোর কথা চিন্তা করুন, যেগুলো আপনি গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। সেই প্রেমময় সম্পর্কগুলো অনন্তকাল ধরে অটুট থাকবে। সেই সময় ‘ঈশ্বরের সন্তানগণ’ পৃথিবীতে কত ‘প্রতাপের স্বাধীনতাই’ না উপভোগ করবে!—রোমীয় ৮:২১.

[পাদটীকা]

^ অগাস্টিন দাবি করেছিলেন যে, ঈশ্বরের রাজ্যের সহস্র বছরের রাজত্ব ভবিষ্যতের কোনো বিষয় ছিল না, বরং গির্জা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে ইতিমধ্যেই তা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কীভাবে পৃথিবীতে মানবজাতির আশা অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল?

• ১৬০০ সালে কিছু বাইবেল পাঠক কোন বোধগম্যতা অর্জন করেছিল?

• ১৯১৪ সাল এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির প্রকৃত আশা কীভাবে আরও স্পষ্ট হয়েছিল?

• কীভাবে পার্থিব আশা সম্বন্ধে জ্ঞানের বৃদ্ধি হয়েছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কবি জন মিলটন (বামে) এবং গণিতবিদ আইজাক নিউটন (ডানে) পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা সম্বন্ধে জানতেন

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রাথমিক বাইবেল ছাত্ররা শাস্ত্র থেকে বুঝতে পেরেছিল যে, মানবজাতির প্রকৃত আশা সম্বন্ধে পৃথিবীব্যাপী জানানোর সময় হয়েছে