সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”

“ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”

“ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”

“ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর, এবং অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার অপেক্ষায় থাক।”—যিহূদা ২১.

১, ২. কীভাবে যিহোবা আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখিয়েছেন আর কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, তিনি এমন এমনি আমাদেরকে তাঁর প্রেমে রক্ষা করেন না?

 যিহোবা ঈশ্বর অগণিত উপায়ে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখিয়েছেন। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবার প্রেমের সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ হচ্ছে, মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থা। মানবজাতিকে তিনি এতটাই ভালোবাসেন যে, তিনি এমনকী তাঁর প্রিয় পুত্রকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যেন তিনি আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেন। (যোহন ৩:১৬) যিহোবা তা করেছিলেন কারণ তিনি চান যেন আমরা চিরকাল বেঁচে থাকি ও সেইসঙ্গে এও চান যেন আমরা চিরকাল তাঁর ভালোবাসা থেকে উপকৃত হই!

কিন্তু, আমরা কি এইরকম ধরে নিতে পারি যে আমরা যা-কিছু করাই বেছে নিই না কেন, যিহোবা এমনি এমনি আমাদেরকে তাঁর প্রেমে রক্ষা করবেন? না। কারণ যিহূদা ২১ পদে আমরা এই পরামর্শ পড়ি: “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর, এবং অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার অপেক্ষায় থাক।” “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” অভিব্যক্তিটি ইঙ্গিত করে যে, আমাদের দিক থেকে কিছু করা প্রয়োজন। তাহলে, ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে হলে আমাদের কী করতে হবে?

কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে পারি?

৩. তাঁর পিতার প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য যিশুর কাছে কী অপরিহার্য বলে তিনি বলেছিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তর আমরা স্বয়ং যিশুর বলা কথাগুলোতে পাই, যে-কথাগুলো তিনি পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষরাতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি।” (যোহন ১৫:১০) স্পষ্টতই যিশু বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর পিতার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যিহোবার আজ্ঞা সকল পালন করা অপরিহার্য। তাই, ঈশ্বরের সিদ্ধ পুত্রের বেলায় যদি তা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের বেলায়ও কি এটা সত্য হবে না?

৪, ৫. (ক) কোন প্রধান উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি? (খ) কেন যিহোবার আজ্ঞা সকল পালন করার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো কারণই আমাদের নেই?

প্রধানত, যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁকে ভালোবাসি। প্রেরিত যোহন এটাকে এভাবে প্রকাশ করেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” (১ যোহন ৫:৩) এটা ঠিক যে, বাধ্যতার ধারণা আজকের জগতে সবসময় জনপ্রিয় হয় না। কিন্তু, এই বাক্যাংশটি লক্ষ করুন: “আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” যিহোবা আমাদেরকে এমন কিছু করতে বলছেন না, যা করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন।

উদাহরণস্বরূপ: আপনি কি আপনার কোনো প্রিয় বন্ধুকে এমন কিছু বহন করতে বলবেন, যেটার বিষয়ে আপনি জানেন যে সেটা তোলা তার জন্য অনেক ভারী হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই না! যিহোবা আমাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি দয়ালু এবং আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে আমাদের চেয়ে আরও অনেক বেশি বোঝেন। বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়, “আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা” যিহোবার “স্মরণে আছে।” (গীত. ১০৩:১৪) তিনি কখনোই আমরা যা-কিছু করতে পারি, তার চেয়ে বেশি কিছু চাইবেন না। তাই, যিহোবার আজ্ঞা সকল পালন করার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো কারণই আমাদের নেই। অন্যদিকে, আমরা বাধ্য হই কারণ এটা হচ্ছে আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে দেখানোর এক চমৎকার সুযোগ যে, আমরা তাঁকে সত্যিই ভালোবাসি এবং আমরা তাঁর প্রেমে অবস্থিতি করতে চাই।

যিহোবার কাছ থেকে এক বিশেষ উপহার

৬, ৭. (ক) বিবেক কী? (খ) কীভাবে বিবেক আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য সাহায্য করতে পারে, তা উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।

আমরা যে-জটিল জগতে বাস করছি, সেখানে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বাধ্যতাকে জড়িত করে। কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, এই সিদ্ধান্তগুলো ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যিহোবা আমাদেরকে এমন একটা উপহার দিয়েছেন, যা আমাদেরকে বাধ্যতার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করতে পারে। এটা হল বিবেক। বিবেক কী? এটা হল এক বিশেষ ধরনের আত্মসচেতনতা। এটা আভ্যন্তরীণ এক বিচারকের মতো কাজ করে, আমরা জীবনে যে-বাছাইগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলোকে বিবেচনা করতে বা ইতিমধ্যেই আমরা যে-পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছি, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করতে এবং সেগুলো ভালো নাকি মন্দ, সঠিক নাকি ভুল, তা মূল্যায়ন করতে সমর্থ করে।—পড়ুন, রোমীয় ২:১৪, ১৫.

কীভাবে আমরা বিবেকের সদ্‌ব্যবহার করতে পারি? একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। একজন পথিক এক বিশাল প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে সুদীর্ঘ পথ হাঁটছেন। সেখানে গমনপথের কোনো চিহ্ন নেই, কোনো রাস্তা নেই, কোনো দিক নির্দেশকও নেই। তা সত্ত্বেও, তিনি ক্রমাগত তার গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। কীভাবে? তার কাছে একটা কম্পাস রয়েছে। এই কম্পাসে একটা স্থির ডায়াল রয়েছে, যেটা চারটে প্রধান দিকে চিহ্নিত এবং এটাতে একটা চুম্বকীয় কাঁটা রয়েছে, যা সবসময় উত্তরদিককে নির্দেশ করে থাকে। কম্পাস ছাড়া, এই পথিক সম্পূর্ণরূপে পথ হারিয়ে ফেলবেন। একইভাবে, বিবেকহীন একজন মানুষ যখন জীবনে নৈতিক ও ধার্মিক বাছাইগুলো করার চেষ্টা করবেন, তখন প্রায়ই তিনি সম্পূর্ণরূপে পথ হারিয়ে ফেলবেন।

৮, ৯. (ক) আমাদের বিবেকের কোন সীমাবদ্ধতার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে? (খ) আমাদের বিবেক যে সত্যিই আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

কিন্তু, একটা কম্পাসের মতো, বিবেকেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পথিক যদি তার কম্পাসের কাছেই একটা চুম্বক রাখেন, তাহলে কম্পাসের কাঁটা উত্তরদিক থেকে অন্য দিকে সরে আসার জন্য প্রভাবিত হবে। অনুরূপভাবে, আমরা যদি আমাদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে অত্যধিক প্রাধান্য দিই, তাহলে কী হবে? আমাদের স্বার্থপর প্রবণতাগুলো হয়তো বিবেককে বিকৃত করে দেবে। বাইবেল আমাদের সাবধান করে যে, “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য।” (যির. ১৭:৯; হিতো. ৪:২৩) অধিকন্তু, পথিকের কাছে যদি কোনো সঠিক, নির্ভরযোগ্য মানচিত্র না থাকত, তাহলে তার কম্পাস তার জন্য সামান্যই উপকার করত বা কোনো উপকারই করত না। একইভাবে, আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের সুনির্দিষ্ট, অপরিবর্তনীয় নির্দেশনার ওপর নির্ভর না করি, তাহলে আমাদের বিবেক হয়তো আমাদের কোনো সাহায্যই করবে না। (গীত. ১১৯:১০৫) দুঃখের বিষয় যে, এই জগতের অনেক লোক তাদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে অত্যধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকে আর এইভাবে ঈশ্বরের বাক্যে লিপিবদ্ধ মানগুলোর প্রতি সামান্যই মনোযোগ দেয় বা কোনো মনোযোগই দেয় না। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:১৭-১৯.) সেই কারণে, এত এত লোক বিবেক থাকা সত্ত্বেও, ভয়ংকর সব কাজ করে থাকে।—১ তীম. ৪:২.

কখনো সেইরকম না হওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত! বরং, আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা আমাদের বিবেককে ক্রমাগত শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত হতে দিই, যাতে এটা সত্যিই আমাদের জন্য উপকারজনক হতে পারে। আমাদের স্বার্থপর প্রবণতাগুলোর দ্বারা জর্জরিত হওয়ার পরিবর্তে, আমাদেরকে আমাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেকের কথা শুনতে হবে। একইসময়ে, আমাদের প্রিয় আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের বিবেকের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। আমরা তাদের বিঘ্ন জন্মানো এড়িয়ে চলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করি ও এই বিষয়টা মনে রাখি যে, আমাদের ভাইবোনদের বিবেক হয়তো আমাদের নিজেদের বিবেকের চেয়ে অধিক স্পর্শকাতর বা নিয়ন্ত্রণপ্রবণ হতে পারে।—১ করি. ৮:১২; ২ করি. ৪:২; ১ পিতর ৩:১৬.

১০. আমরা এখন জীবনের কোন তিনটে ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করব?

১০ আসুন এখন আমরা জীবনের তিনটে ক্ষেত্র বিবেচনা করি, যেখানে আমরা বাধ্যতার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রদর্শন করতে পারি। অবশ্য, সেগুলোর প্রত্যেকটাতে বিবেক জড়িত, তবে সবচেয়ে প্রথমে বিবেককে আচরণ সম্বন্ধীয় বাইবেলের অনুপ্রাণিত মানগুলোর দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। যে-তিনটে উপায়ে আমরা প্রেমের সঙ্গে যিহোবার বাধ্য হই, সেগুলো হল: (১) আমরা সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসি, যাদেরকে যিহোবা ভালোবাসেন, (২) আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি এবং (৩) আমরা ঈশ্বরের চোখে শুচি থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি।

সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসুন, যাদেরকে যিহোবা ভালোবাসেন

১১. কেন আমাদের সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসা উচিত, যাদেরকে যিহোবা ভালোবাসেন?

১১ প্রথমত, আমাদের সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসতে হবে, যাদেরকে যিহোবা ভালোবাসেন। মেলামেশার ক্ষেত্রে লোকেরা স্পঞ্জের মতো। আমাদের চারপাশে যা-কিছু রয়েছে, সেগুলোকে শুঁষে নেওয়ার প্রবণতা আমাদের রয়েছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা ভালোভাবেই জানেন যে, অসিদ্ধ মানুষদের জন্য মেলামেশা কতটা বিপদজনক—ও কতটা সাহায্যকারী—হতে পারে। আর সেই কারণেই তিনি আমাদের এই বিজ্ঞ পরামর্শ দেন: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতো. ১৩:২০; ১ করি. ১৫:৩৩) আমাদের মধ্যে কেউই “ভগ্ন” হতে চাই না। আমরা প্রত্যেকেই ‘জ্ঞানী হইতে’ চাই। যিহোবা হলেন সর্ববিজ্ঞ ব্যক্তি এবং তিনি কখনোই কারো দ্বারা কলুষিত হতে পারেন না। তা সত্ত্বেও, মেলামেশার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেন। এই বিষয়টা একটু চিন্তা করুন—অসিদ্ধ কোন মানুষদের যিহোবা তাঁর বন্ধু হিসেবে বেছে নেন?

১২. যিহোবা কোন ধরনের বন্ধুদের বাছাই করেন?

১২ কুলপতি অব্রাহামকে যিহোবা “আমার বন্ধু” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যিশা. ৪১:৮) এই ব্যক্তি উল্লেখযোগ্যরূপে বিশ্বস্ত, ধার্মিক ও বাধ্য ছিলেন—একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন। (যাকোব ২:২১-২৩) এই ধরনের লোকদেরই যিহোবা বন্ধু হিসেবে বেছে নেন। তিনি আজকেও সেই ধরনের লোকদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করে থাকেন। যিহোবা যদি সেই ধরনের বন্ধুদের বাছাই করে থাকেন, তাহলে অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদেরও কি একইভাবে উত্তম বন্ধু বাছাই করা, জ্ঞানীদের সহচর হয়ে জ্ঞানী হওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ নয়?

১৩. বন্ধুবান্ধব নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কী আমাদেরকে উত্তম বাছাইগুলো করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৩ এই ক্ষেত্রে কী আপনাকে উত্তম বাছাইগুলো করার জন্য সাহায্য করতে পারে? বাইবেলের উদাহরণগুলো অধ্যয়ন করা প্রেরণাদায়ক হতে পারে। রূৎ ও তার শাশুড়ি নয়মীর, দায়ূদ ও যোনাথনের কিংবা তীমথিয় ও পৌলের মধ্যে যে-বন্ধুত্ব ছিল, তা বিবেচনা করুন। (রূৎ. ১:১৬, ১৭; ১ শমূ. ২৩:১৬-১৮; ফিলি. ২:১৯-২২) অন্যান্য সব কারণের চেয়ে একটা যে-কারণে এই বন্ধুত্ব গভীর হয়েছিল, তা হচ্ছে: তাদের প্রত্যেকের যিহোবার প্রতি অকৃত্রিম প্রেম ছিল। আপনি কি এমন বন্ধুদের খুঁজে পেতে পারেন, যারা যিহোবাকে আপনার মতো করে ভালোবাসে? এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সেই ধরনের ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের বন্ধুরা আপনাকে আধ্যাত্মিক অর্থে ভগ্ন হতে পরিচালিত করবে না। এর পরিবর্তে, তারা আপনাকে যিহোবার প্রতি বাধ্য হতে, আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে এবং আত্মার উদ্দেশে বুনতে সাহায্য করবে। (পড়ুন, গালাতীয় ৬:৭, ৮.) তারা আপনাকে ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে সাহায্য করবে।

কর্তৃপক্ষকে সম্মান করুন

১৪. কোন বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানোকে প্রায়ই কঠিন করে তোলে?

১৪ দ্বিতীয় যে-উপায়ে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখাই, সেটার সঙ্গে কর্তৃপক্ষ জড়িত। কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে। মাঝে মাঝে তা করা আমাদের জন্য কেন এত কঠিন হয়? একটা কারণ হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিরা হচ্ছে অসিদ্ধ। সেইসঙ্গে আমরা নিজেরাও অসিদ্ধ। আমরা বিদ্রোহ করার এক সহজাত প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করি।

১৫, ১৬. (ক) যিহোবা তাঁর লোকেদের যত্ন নেওয়ার জন্য যাদের ওপর আস্থা সহকারে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে সম্মান করা কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? (খ) মোশির বিরুদ্ধে করা ইস্রায়েলীয়দের বিদ্রোহকে যিহোবা যেভাবে দেখেছিলেন, তা থেকে আমরা কোন মূল্যবান শিক্ষা পেতে পারি?

১৫ তাই আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখানো যদি আমাদের জন্য এত কঠিনই হয়, তাহলে কেন আমাদের তা দেখাতে হবে?’ এই উত্তরের সঙ্গে মূলত সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়টা জড়িত। কাকে আপনি আপনার সার্বভৌম কর্তা, আপনার শাসক হিসেবে বেছে নেবেন? যদি আমরা যিহোবাকে আমাদের সার্বভৌম কর্তা হিসেবে বেছে নিই, তাহলে আমাদের তাঁর কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যদি আমরা তা না করি, তাহলে আমরা কি সত্যি সত্যিই তাঁকে আমাদের শাসক বলতে পারি? অধিকন্তু, যিহোবা সাধারণত সেই অসিদ্ধ মানুষদের দ্বারা তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করে থাকেন, যাদের ওপর আস্থা সহকারে তিনি তাঁর লোকেদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা যদি সেই মানুষদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, তাহলে যিহোবা আমাদের কাজকে কীভাবে দেখবেন?—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩. *

১৬ উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যখন মোশির বিরুদ্ধে বচসা ও বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা তাদের বিদ্রোহী কাজকে নিজের প্রতি, যেন তাঁর বিরুদ্ধেই করা হয়েছে এমনভাবে নিয়েছিলেন। (গণনা. ১৪:২৬, ২৭) ঈশ্বর পরিবর্তিত হননি। যদি আমরা কখনো এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, যাদেরকে তিনি কর্তৃপক্ষের অবস্থানে থাকতে দিয়েছেন, তাহলে সেটা আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করা হবে!

১৭. মণ্ডলীতে যাদের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের কোন ধরনের মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত?

১৭ প্রেরিত পৌল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যাদের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে, তাদের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তোলার বিষয় প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন,—যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) এটা ঠিক যে, এই ধরনের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হওয়ার এক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রকৃত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কিন্তু মনে রাখবেন যে, আমরা ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য কাজ করছি। সেই লক্ষ্য কি আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার জন্য উপযুক্ত নয়?

যিহোবার চোখে শুচি থাকুন

১৮. কেন যিহোবা চান যেন আমরা শুচি থাকি?

১৮ তৃতীয় যে-উপায়ে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রদর্শন করি তা হল, আমরা তাঁর চোখে শুচি থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। বাবা-মায়েরা সাধারণত এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকে যে, তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। কেন? একটা কারণ হল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা বাচ্চার স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের জন্য অপরিহার্য বিষয়। অধিকন্তু, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাচ্চা পরিবারের সুনাম নিয়ে আসে এবং বাবা-মা যে তাকে ভালোবাসে ও তার প্রতি মনোযোগ দেয়, সেই বিষয় প্রকাশ করে। অনুরূপ কারণগুলোর জন্য যিহোবাও চান যেন আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি। তিনি জানেন যে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের মঙ্গলের জন্য অপরিহার্য। তিনি এও জানেন যে, আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তাঁর অর্থাৎ আমাদের স্বর্গীয় পিতার সুনাম নিয়ে আসে। এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা কীভাবে এই কলুষিত জগতের এত লোকেদের ভিড়ে আলাদা হিসেবে বিশিষ্ট হই, তা লক্ষ করে লোকেরা হয়তো আমরা যে-ঈশ্বরের সেবা করি, তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।

১৯. কীভাবে আমরা জানি যে, শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?

১৯ কোন কোন দিক দিয়ে আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন? সত্যি বলতে কী, জীবনের সমস্ত দিক দিয়েই। প্রাচীন ইস্রায়েলে, যিহোবা তাঁর লোকেদের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ছিল অপরিহার্য বিষয়। (লেবীয়. ১৫:৩১) মোশির ব্যবস্থা মলত্যাগ, জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং হাত-পা ও কাপড়চোপড় ধোয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছিল। (যাত্রা. ৩০:১৭-২১; লেবীয় ১১:৩২; গণনা. ১৯:১৭-২০; দ্বিতীয়. ২৩:১৩, ১৪) ইস্রায়েলীয়দের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তাদের ঈশ্বর যিহোবা হলেন পবিত্র—যেটার অর্থ হচ্ছে, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন,” “শুচি” ও “পবিত্র।” একইভাবে, পবিত্র ঈশ্বরের সেবকদেরও পবিত্র হতে হবে।—পড়ুন, লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪, ৪৫.

২০. কোন কোন দিক দিয়ে আমাদের শুচি থাকতে হবে?

২০ তাই, আমাদের ভিতরে ও বাইরে উভয় দিক দিয়ে পবিত্র হতে হবে। আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে শুচি রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমাদের চারপাশের জগতের যৌন সংক্রান্ত অধঃপতন সত্ত্বেও, আমরা নৈতিক শুচিতা সম্বন্ধীয় যিহোবার মানগুলোকে বিশ্বস্তভাবে মেনে চলি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা ক্রমাগত আমাদের উপাসনাকে শুচি রাখি, মিথ্যা ধর্মের যেকোনো কলুষতাকে এড়িয়ে চলি। আমরা যিশাইয় ৫২:১১ পদে লিপিবদ্ধ অনুপ্রাণিত এই সতর্কবাণী সবসময় মনে রাখি: “চল চল, সেই স্থান হইতে বাহির হও, অশুচি কোন বস্তু স্পর্শ করিও না, উহার মধ্য হইতে বাহির হও; . . . তোমরা বিশুদ্ধ হও।” আমাদের স্বর্গীয় পিতা যে-বিষয়টাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অশুচি হিসেবে দেখে থাকেন, সেটাকে এমনকী স্পর্শ করা থেকে বিরত থেকে বর্তমানে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে শুচি থাকি। উদাহরণস্বরূপ, সেই কারণেই আমরা মিথ্যা ধর্মীয় উদ্‌যাপন ও ছুটির দিনগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে চলি, যেগুলো আজকের জগতে খুবই জনপ্রিয়। এটা ঠিক যে, শুচি থাকা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু, যিহোবার লোকেরা তা থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, কারণ তা তাদেরকে ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে সাহায্য করে।

২১. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করব?

২১ যিহোবা চান যাতে আমরা চিরকাল তাঁর প্রেমে অবস্থিতি করি। কিন্তু, ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে যে, ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোত্তমটা করছি কি না। আর যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি এবং যিহোবার আজ্ঞা সকল পালন করার দ্বারা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পারি। আমরা যদি তা করি, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, কোনো কিছুই “আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্‌ করিতে পারিবে না।”—রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯.

[পাদটীকা]

^ ১ থিষলনীকীয় ৫:১২, ১৩ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন): “ভাইয়েরা, আমরা তোমাদের অনুরোধ করছি, যাঁরা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন, প্রভুর হয়ে তোমাদের পরিচালনা করেন এবং তোমাদের উপদেশ দিয়ে থাকেন, তাঁদের সম্মান কোরো। তাঁরা যা করছেন তার জন্য ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তাঁদের তোমরা বিশেষভাবে শ্রদ্ধা কোরো।”

আপনার কি মনে আছে?

• কীভাবে আমাদের বিবেক আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

• কেন আমাদের সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসা উচিত, যাদেরকে যিহোবা ভালোবাসেন?

• কেন কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

• ঈশ্বরের লোকেদের কাছে শুচিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

যে-প্রকাশনাটি উত্তম আচরণকে তুলে ধরে

২০০৮ সালের জেলা সম্মেলনের কার্যক্রমে, ২২৪ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল, যেটির শিরোনাম হল, “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” (ইংরেজি)। এই নতুন বইটির উদ্দেশ্য কী? এটি খ্রিস্টানদেরকে যিহোবার মানগুলো সম্বন্ধে জানতে এবং সেগুলোকে ভালোবাসতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত খ্রিস্টীয় আচরণের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” নামক বইটি মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করলে তা আমাদের এই দৃঢ়প্রত্যয়কে গভীর করবে যে, যিহোবার মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা এখন বেঁচে থাকার জন্য সর্বোত্তম উপায় এবং তা ভবিষ্যতে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করবে।

এ ছাড়া, এই বইটি আমাদের এটাও দেখতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যে, যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকা দুর্বহ নয়। এর বিপরীতে, আমরা যিহোবাকে কতখানি ভালোবাসি, এটা হল তা দেখানোর একটা উপায়। তাই, এই বইটি নিজেদেরকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে আমাদের পরিচালিত করবে যে, ‘কেন আমি যিহোবার বাধ্য হই?’

কেউ যখন যিহোবার প্রেমকে ত্যাগ করার মতো দুঃখজনক ভুল করে, তখন সমস্যাটার সঙ্গে সাধারণত আচরণ জড়িত থাকে, মতবাদ নয়। তাই, যিহোবার সেইসমস্ত আইন ও নীতির প্রতি আমাদের প্রেম ও উপলব্ধিকে শক্তিশালী করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো আমাদের রোজকার জীবনে নির্দেশনা দেয়! আমরা নিশ্চিত যে, এই নতুন প্রকাশনাটি বিশ্বব্যাপী যিহোবার মেষদেরকে সঠিক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় থাকতে, শয়তানকে একজন মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে এবং সর্বোপরি ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে সাহায্য করবে!—যিহূদা ২১.

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

“তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি”