সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্টের মতো বাধ্য ও সাহসী হোন

খ্রিস্টের মতো বাধ্য ও সাহসী হোন

খ্রিস্টের মতো বাধ্য ও সাহসী হোন

“সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।”—যোহন ১৬:৩৩.

১. ঈশ্বরের প্রতি যিশু কতখানি বাধ্য ছিলেন?

 যিশু খ্রিস্ট সবসময় ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন। এমনকী একটিবারের জন্যও তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার অবাধ্য হওয়ার কথা ভাবেননি। (যোহন ৪:৩৪; ইব্রীয় ৭:২৬) কিন্তু, পৃথিবীতে তাঁর পরিস্থিতিগুলো বাধ্য হওয়ার পক্ষে অনুকূল ছিল না। যিশুর প্রচার কাজের শুরু থেকেই স্বয়ং শয়তানসহ যিশুর শত্রুরা তাঁর বিশ্বস্ত পথ পরিত্যাগ করতে তাঁকে প্রলোভিত করার, তাঁর ওপর জোর খাটানোর বা তাঁকে প্রতারিত করার চেষ্টা করেছিল। (মথি ৪:১-১১; লূক ২০:২০-২৫) এই শত্রুরা যিশুর তীব্র মানসিক, আবেগগত ও শারীরিক কষ্টের কারণ হয়েছিল। শেষপর্যন্ত, তারা ‘যাতনাদণ্ডে’ তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিতে সফল হয়েছিল। (মথি ২৬:৩৭, ৩৮; লূক ২২:৪৪: যোহন ১৯:১, ১৭, ১৮, NW) তীব্র কষ্ট সত্ত্বেও, এই সমস্তকিছুর মধ্যে দিয়ে যিশু “মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।”ফিলি. ২:৮.

২, ৩. কষ্টভোগ করা সত্ত্বেও যিশুর বাধ্য থাকা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

পৃথিবীতে একজন মানুষ হিসেবে যিশুর অভিজ্ঞতা বাধ্যতার ক্ষেত্রে তাঁকে নতুন নতুন বিষয় শিখিয়েছিল। (ইব্রীয় ৫:৮) আপাতদৃষ্টিতে এইরকম মনে হতে পারে যে, যিহোবাকে সেবা করা সম্বন্ধে যিশুর আর কিছু শেখার থাকতে পারে না। কারণ, অগণিত সময় ধরে তিনি যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছেন এবং সৃষ্টির সময়কালে ঈশ্বরের ‘দক্ষ কর্মী’ ছিলেন। (হিতো. ৮:৩০, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) তবে কষ্ট সত্ত্বেও, একজন মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাসে স্থির থাকাটা তাঁর পূর্ণ নীতিনিষ্ঠাকে প্রমাণ করেছিল। ঈশ্বরের পুত্র যিশুর তাঁর পিতার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যদিও তিনি একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু যিশু তাঁর নিজের ইচ্ছামতো সম্পূর্ণরূপে বাধ্য হওয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি বাধ্য থাকার জন্য ঈশ্বরের সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:৭.) বাধ্য থাকার জন্য আমাদেরও নম্র হতে হবে এবং নিয়মিত ঈশ্বরের সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করতে হবে। এই কারণে, প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক,” যিনি “আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত . . . আজ্ঞাবহ হইলেন।” (ফিলি. ২:৫-৮) যিশুর জীবনধারা প্রমাণ করেছিল যে, এমনকী এক দুষ্ট সমাজের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও মানুষের পক্ষে বাধ্য থাকা সম্ভব। তবে, যিশু সিদ্ধ ছিলেন কিন্তু আমাদের মতো অসিদ্ধ মানুষদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?

অসিদ্ধতা সত্ত্বেও বাধ্য

৪. নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে সৃষ্ট হওয়া আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে?

ঈশ্বর আদম ও হবাকে বুদ্ধিবিশিষ্ট ও নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন। তাদের বংশধর হিসেবে আমরাও নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি। এই কথার অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে, আমরা নিজেরা ভালো বা মন্দ কাজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। অন্য কথায়, ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর বাধ্য বা অবাধ্য হওয়ার বিষয়টা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। এইরকম গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ব ও নিকাশ দেওয়ার বিষয়টা আসে। বস্তুতপক্ষে, আমাদের নৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর অর্থ হল আমাদের জন্য জীবন অথবা মৃত্যু। এ ছাড়া, সেগুলো আমাদের আশেপাশের লোকেদের ওপরও প্রভাব ফেলে।

৫. আমাদের সকলকে কোন লড়াই করতে হয় আর কীভাবে আমরা তাতে সফল হতে পারি?

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অসিদ্ধতার কারণে বাধ্যতা এমনি এমনিই আসে না। ঈশ্বরের আইনগুলোর বাধ্য হওয়াটা সবসময় সহজ নয়। পৌল এই লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে।” (রোমীয় ৭:২৩) অবশ্য, বাধ্য থাকা তখন সহজ হয়, যখন এর সঙ্গে কোনো ত্যাগস্বীকার, কষ্ট বা অসুবিধা জড়িত থাকে না। কিন্তু, যখন বাধ্য হওয়ার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষার এবং ‘মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষের’ মধ্যে এক দ্বন্দ্ব দেখা যায়, তখন আমরা কীভাবে সাড়া দিই? এই নেতিবাচক আকাঙ্ক্ষা আমাদের অসিদ্ধতা থেকে ও সেইসঙ্গে আমাদের চারপাশে বিদ্যমান ‘জগতের আত্মার’ প্রভাব থেকে উদ্ভূত হয় এবং সেগুলো খুবই প্রভাবশালী। (১ যোহন ২:১৬; ১ করি. ২:১২) সেগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য কোনো সংকট বা প্রলোভনের মুখোমুখি হওয়ার আগেই আমাদের ‘চিত্ত স্থির [“প্রস্তুত,” NW] করিতে’ হবে এবং এই বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে যে, যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকব। (গীত. ৭৮:৮) আমাদের কাছে বাইবেলে বর্ণিত সেই ব্যক্তিদের অনেক উদাহরণ রয়েছে, যারা তাদের হৃদয়কে “প্রস্তুত” করার কারণে সফল হয়েছিল।—ইষ্রা ৭:১০, NW; দানি. ১:৮.

৬, ৭. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন আমাদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।

আমাদের হৃদয়কে প্রস্তুত করার একটা উপায় হচ্ছে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে শাস্ত্র ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করা। নীচের পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করুন। ধরুন, আজ সন্ধ্যায় আপনি আপনার ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার জন্য বসেছেন। আপনি সবেমাত্র যিহোবার আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করেছেন, যাতে তিনি আপনাকে তাঁর বাক্য থেকে আপনি যা শেখেন, তা কাজে লাগাতে সাহায্য করেন। পরদিন সন্ধ্যায় আপনি টেলিভিশনে একটা নির্দিষ্ট সিনেমা দেখার পরিকল্পনা করেছেন। আপনি এই সিনেমাটা সম্বন্ধে ভালো ভালো মন্তব্য শুনেছেন; কিন্তু আপনি এও জানেন যে, এটার মধ্যে কিছু অনৈতিকতা এবং দৌরাত্ম্য রয়েছে।

আপনি ইফিষীয় ৫:৩ পদে বর্ণিত পৌলের এই পরামর্শ নিয়ে চিন্তা করেন: “কিন্তু বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত।” এ ছাড়া, আপনি ফিলিপীয় ৪:৮ পদে পৌলের উপদেশও স্মরণ করেন। (পড়ুন।) যখন আপনি এই অনুপ্রাণিত পরামর্শ নিয়ে ধ্যান করেন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘যদি আমি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার হৃদয় ও মনকে এমন সব অনুষ্ঠান দেখার দিকে পরিচালিত করি, তাহলে আমি কি ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণরূপে বাধ্য হওয়ার বিষয়ে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করছি?’ আপনি কী করবেন? আপনি কি এরপরও সেই সিনেমাটা দেখবেন?

৮. কেন আমাদের উচ্চ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মানগুলো বজায় রাখতে হবে?

হিংস্র ও অনৈতিক আমোদপ্রমোদের আকারে আসা সংসর্গসহ কুসংসর্গের প্রভাবগুলোকে প্রতিরোধ করার মতো আমরা যথেষ্ট বলবান, এইরকম মনে করে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মানগুলো মেনে চলার বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে হালকা করে ফেলা একটা ভুল কাজ হবে। এর পরিবর্তে, আমাদের নিজেদেরকে ও আমাদের সন্তানদেরকে শয়তানের আত্মার কলুষিত প্রভাবগুলো থেকে রক্ষা করতে হবে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা তাদের কম্পিউটারকে সেইসব ক্ষতিকর ভাইরাসগুলো থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর চেষ্টা করে, যেগুলো তথ্যকে নষ্ট করে দিতে পারে, কার্যকারিতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, এমনকী মেশিনটাকে ত্রুটিযুক্ত করতে পারে আর অন্য কম্পিউটারগুলোকেও আক্রমণ করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তাহলে, শয়তানের “নানাবিধ চাতুরীর” হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের কি কোনোভাবে কম সতর্ক হওয়া উচিত?—ইফি. ৬:১১.

৯. কেন আমাদের প্রতিদিন যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে?

মূলত প্রতিদিন, কোনো না কোনোভাবে আমাদের বাছাই করতে হয় যে, আমরা যিহোবার পথে কাজ করব কি না। পরিত্রাণ লাভ করার জন্য, আমাদের ঈশ্বরের বাধ্য হতে হবে এবং তাঁর ধার্মিক নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। বাধ্যতার বিষয়ে খ্রিস্টের উদাহরণকে এমনকী “মৃত্যু পর্যন্ত” অনুসরণ করার দ্বারা আমরা দেখাই যে, আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে বাস্তব। যিহোবা আমাদের বিশ্বস্ত কাজের পুরস্কার দেবেন। যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) স্পষ্টতই, এর জন্য প্রকৃত সাহস গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেমনটা যিশু দেখিয়েছিলেন।—গীত. ৩১:২৪.

যিশু—সাহসের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ

১০. আমাদের ওপর কোন ধরনের চাপ আসতে পারে আর কীভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১০ এই জগতের মনোভাব ও আচরণের দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায়, কলুষতাকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাহসের প্রয়োজন। খ্রিস্টানরা নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় চাপগুলো ভোগ করে থাকে, যেগুলো তাদেরকে যিহোবার ধার্মিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। অনেকে পারিবারিক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়। কিছু কিছু দেশে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন আরও গ্রহণযোগ্যভাবে বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছে এবং নাস্তিকতা ক্রমশ স্বীকৃতি পাচ্ছে। এইরকম চাপের মুখে, আমরা শুধু চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। প্রতিরোধ করার ও নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। যিশুর উদাহরণ আমাদের দেখায় যে, কীভাবে আমরা সফল হতে পারি।

১১. কীভাবে যিশুর উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করা আমাদের অধিক সাহস প্রদান করতে পারে?

১১ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।” (যোহন ১৬:৩৩) তিনি জগতের চাপের কাছে কখনোই নতিস্বীকার করেননি। তিনি কখনোই জগৎকে তাঁর প্রচারের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার সুযোগ দেননি বা সত্য উপাসনা ও সঠিক আচরণের বিষয়ে দেওয়া মানগুলো মেনে চলার বিষয়ে তাঁর দৃঢ়সংকল্পকে হালকা করেননি; আমাদেরও তা করা উচিত নয়। প্রার্থনায় যিশু তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৬) খ্রিস্টের সাহসী উদাহরণ অধ্যয়ন করা ও তা নিয়ে চিন্তা করা আমাদেরকে জগৎ থেকে পৃথক থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সাহস প্রদান করতে পারে।

যিশুর কাছ থেকে সাহস দেখাতে শিখুন

১২-১৪. যিশুর সাহস প্রদর্শন করার বিষয়ে কয়েকটা উদাহরণ বলুন।

১২ যিশু তাঁর পরিচর্যার সময় প্রচুর সাহস প্রদর্শন করেছিলেন। ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে, তাঁর কর্তৃত্ব অনুশীলন করে তিনি নির্ভীকভাবে “ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিলেন, এবং যত লোক ধর্ম্মধামে ক্রয়বিক্রয় করিতেছিল, সেই সকলকে বাহির করিয়া দিলেন, এবং পোদ্দারদের মেজ ও যাহারা কপোত বিক্রয় করিতেছিল, তাহাদের আসন সকল উল্টাইয়া ফেলিলেন।” (মথি ২১:১২) পৃথিবীতে যিশুর শেষরাতে সৈন্যরা যখন তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল, তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের রক্ষা করার জন্য সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছিলেন, এই কথা বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার অন্বেষণ কর, তবে ইহাদিগকে যাইতে দেও।” (যোহন ১৮:৮) কিছুক্ষণ পর, তিনি পিতরকে তার খড়্গ সরিয়ে রাখতে বলেছিলেন আর এভাবে দেখিয়েছিলেন যে, যিশুর আস্থার উৎস পার্থিব অস্ত্র নয় কিন্তু যিহোবার ওপর নির্ভর করা।—যোহন ১৮:১১.

১৩ যিশু নির্ভীকভাবে তাঁর দিনের নির্দয় মিথ্যা শিক্ষকদেরকে ও তাদের ভুল শিক্ষাগুলোকে উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা মনুষ্যদের সম্মুখে স্বর্গরাজ্য রুদ্ধ করিয়া থাক,” যিশু তাদেরকে বলেছিলেন। “তোমরা . . . ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ; . . . তোমরা পানপাত্র ও ভোজনপাত্র বাহিরে পরিষ্কার করিয়া থাক, কিন্তু সেগুলির ভিতরে দৌরাত্ম্য ও অন্যায় ভরা।” (মথি ২৩:১৩, ২৩, ২৫) যিশুর শিষ্যদেরও একইরকম সাহসের প্রয়োজন হবে কারণ মিথ্যা ধর্মীয় নেতারা তাদেরকেও তাড়না করবে এবং তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হত্যা করবে।—মথি ২৩:৩৪; ২৪:৯.

১৪ যিশু এমনকী মন্দদূতদের বিরুদ্ধেও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। একবার তিনি মন্দদূতদের দ্বারা আক্রান্ত এমন একজন ব্যক্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন, যে কিনা এত শক্তিশালী ছিল যে, কেউ তাকে শেকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারত না। ভয় না পেয়ে, যিশু ওই মন্দদূতদের বের করে দিয়েছিলেন, যারা সেই ব্যক্তিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। (মার্ক ৫:১-১৩) আজকে, ঈশ্বর খ্রিস্টানদের এইরকম অলৌকিক কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা দেননি। তা সত্ত্বেও, প্রচার ও শিক্ষাদানে আমাদেরও শয়তানের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক যুদ্ধ করতে হয়, যে “অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে।” (২ করি. ৪:৪) যিশুর ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল, তেমনই আমাদের অস্ত্রশস্ত্র “মাংসিক নহে, কিন্তু দুর্গসমূহ”—দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা কিন্তু ভুল ধর্মীয় ধারণাগুলো—“ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে পরাক্রমী।” (২ করি. ১০:৪) এই আধ্যাত্মিক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা যিশুর উদাহরণ থেকে অনেক কিছু শিখি।

১৫. যিশুর সাহসের ভিত্তি কী ছিল?

১৫ যিশুর সাহসের ভিত্তি ছিল বিশ্বাস, দুঃসাহসিকতা নয়। আমাদের সাহসের ভিত্তিও তা-ই হতে হবে। (মার্ক ৪:৪০) কীভাবে আমরা প্রকৃত বিশ্বাস অর্জন করতে পারি? আবারও, যিশুর উদাহরণ আমাদের পরিচালনা দেয়। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, শাস্ত্র সম্বন্ধে তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান রয়েছে এবং সেগুলোর ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। যিশু কোনো আক্ষরিক খড়্গ নয় কিন্তু আত্মার খড়্গ অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। বার বার তিনি শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর শিক্ষাগুলোকে সমর্থন করেছিলেন। প্রায়ই তিনি তাঁর কথাগুলোর শুরুতে এই বিবৃতি দিয়েছিলেন: “লেখা আছে” অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যে লেখা আছে। *

১৬. কীভাবে আমরা অধিক বিশ্বাস অর্জন করতে পারি?

১৬ শিষ্যত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে যে-পরীক্ষাগুলো অনিবার্যভাবে আসে, সেগুলোকে প্রতিরোধ করার মতো বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়তে ও অধ্যয়ন করতে হবে এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে হবে, আমাদের মনের মধ্যে সেই সত্যগুলোকে রাখতে হবে, যেগুলো হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি। (রোমীয় ১০:১৭) এ ছাড়া আমরা যা শিখি, তা নিয়ে আমাদের ধ্যান—গভীরভাবে চিন্তা—করতে হবে, তা যেন আমাদের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে আমাদের প্রভাবিত করে। একমাত্র জীবন্ত বিশ্বাসই আমাদের সাহসী পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করতে পারে। (যাকোব ২:১৭) আর আমাদের পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করতে হবে কারণ বিশ্বস্ততা বা বিশ্বাস হচ্ছে আত্মার ফলের একটা অংশ।—গালা. ৫:২২, ২৩.

১৭, ১৮. একজন অল্পবয়সি বোন কীভাবে স্কুলে সাহস দেখিয়েছিল?

১৭ কিটি নামে একজন অল্পবয়সি বোনের এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছিল যে, প্রকৃত বিশ্বাস কীভাবে সাহস প্রদান করে। একেবারে ছোটোবেলা থেকেই সে জানত যে, স্কুলে তার “সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত” হওয়া উচিত নয় আর তার সহপাঠীদের কাছে সে সত্যি সত্যি উত্তমভাবে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিল। (রোমীয় ১:১৬) প্রতি বছরই সে অন্যদের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংকল্প গ্রহণ করত, কিন্তু সাহসের অভাবে পিছিয়ে আসত। কয়েক বছর পর, সে সেই স্কুল পালটে অন্য স্কুলে চলে যায়। সে বলেছিল, “এতদিন যে-সুযোগগুলোকে আমি নষ্ট করেছি, এবারে আমি সেই সুযোগগুলো নেব।” কিটি খ্রিস্টতুল্য সাহস, বিচক্ষণতা ও উপযুক্ত সুযোগের জন্য প্রার্থনা করেছিল।

১৮ স্কুলের প্রথম দিন ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেককে এক এক করে নিজেদের পরিচয় দিতে বলা হয়েছিল। কয়েক জন তাদের নিজেদের ধর্মীয় পটভূমি সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিল ও সেইসঙ্গে এও বলেছিল যে, তারা আসলে তাদের ধর্ম তেমন একটা পালন করে না। কিটি বুঝতে পেরেছিল যে, এই সুযোগটার জন্যই সে প্রার্থনা করছিল। তার পালা যখন এসেছিল, তখন সে আস্থা সহকারে বলেছিল, “আমি একজন যিহোবার সাক্ষি আর আমার আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিষয়গুলোর নির্দেশনার উৎস হচ্ছে বাইবেল।” সে যখন কথা বলছিল, তখন কিছু ছাত্রছাত্রী তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তার দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু, অন্যেরা মন দিয়ে শুনেছিল ও পরে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল। কিটি তার বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করেছিল বলে শিক্ষক এমনকী কিটির উত্তম উদাহরণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিটি যিশুর সাহসী উদাহরণ থেকে শিখতে পেরে খুবই খুশি।

খ্রিস্টতুল্য বিশ্বাস ও সাহস দেখান

১৯. (ক) প্রকৃত বিশ্বাস থাকার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবাকে আনন্দিত করতে পারি?

১৯ প্রেরিতরাও উপলব্ধি করেছিল যে, তাদের সাহসী পদক্ষেপের ভিত্তি হতে হবে বিশ্বাস। তারা যিশুর কাছে মিনতি করেছিল: “আমাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন।” (পড়ুন, লূক ১৭:৫, ৬.) প্রকৃত বিশ্বাস থাকার মানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে, কেবল তা বিশ্বাস করার চেয়ে আরও বেশি কিছু। এর অন্তর্ভুক্ত যিহোবার সঙ্গে এক গভীর, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা, যেমনটা একটা ছোটো বাচ্চার তার সদয় ও প্রেমময় বাবার সঙ্গে থাকে। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় শলোমন লিখেছিলেন: “বৎস, তোমার চিত্ত যদি জ্ঞানশালী হয়, তবে আমারও চিত্ত আনন্দিত হইবে; বাস্তবিক আমার চিত্ত উল্লাসিত হইবে। যখন তোমার ওষ্ঠ ন্যায়বাদী হয়।” (হিতো. ২৩:১৫, ১৬) একইভাবে, সাহসের সঙ্গে ধার্মিক নীতিগুলোর পক্ষসমর্থন করা যিহোবাকে আনন্দিত করে এবং তা জানা আমাদের সাহসকে বৃদ্ধি করে। তাই, আসুন আমরা সবসময় যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করি, ধার্মিকতার পক্ষে এক সাহসী পদক্ষেপ নিই!

[পাদটীকা]

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কী আমাদেরকে অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, বাধ্য থাকতে সমর্থ করবে?

• প্রকৃত বিশ্বাসের ভিত্তি কী আর এটা আমাদের কীভাবে সাহসী হতে সাহায্য করতে পারে?

• আমাদের বাধ্য হওয়ার ও খ্রিস্টতুল্য সাহস দেখানোর ফল কী হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রলোভনগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য আপনি কি ‘আপনার চিত্তকে প্রস্তুত করিতেছেন’?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর মতো, আমরাও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করা সাহস দেখাতে পারি