সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দিয়াবল কি বাস্তব?

দিয়াবল কি বাস্তব?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

দিয়াবল কি বাস্তব?

হ্যাঁ, বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, শয়তান দিয়াবল সত্যিই একজন বাস্তব ব্যক্তি। কিন্তু, বাইবেলের সমালোচকরা দিয়াবল সম্বন্ধীয় এই ধরনের বর্ণনাকে উপহাস করে। তারা বলে থাকে যে, শয়তান কেবলমাত্র সেই মন্দ গুণকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা মানুষের মধ্যেই থাকে।

শয়তানের প্রকৃত পরিচয় সম্বন্ধে বিভ্রান্তির কারণে কি আমাদের অবাক হওয়া উচিত? কখনোই না। উদাহরণস্বরূপ: একজন অপরাধী হয়তো অপরাধের ঘটনাস্থল থেকে তার আঙুলের ছাপ মুছে ফেলতে পারেন, যাতে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারেন আর এভাবে লোকচক্ষুর অগোচরে তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন। একইভাবে, শয়তান হল এক সুনিপুণ অপরাধী, যে নৈতিক কলুষিতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গোপনে কাজ করে আনন্দিত। যিশু স্পষ্টভাবে মানুষের কাজকর্মের মন্দ অবস্থার জন্য দায়ী হিসেবে শয়তানকে শনাক্ত করেছিলেন। যিশু শয়তানকে “এ জগতের অধিপতি” বলে অভিহিত করেছিলেন।—যোহন ১২:৩১.

দিয়াবল কোথা থেকে এসেছে? প্রথমে স্বর্গে একজন সিদ্ধ আত্মিক প্রাণী হিসেবে সৃষ্ট এই বিদ্রোহী দূত নিজেকে দিয়াবলে পরিণত করেছিল, যখন সে এমন আকাঙ্ক্ষার দ্বারা মত্ত হয়ে উঠেছিল যে, মানুষ ঈশ্বরের পরিবর্তে তাকে উপাসনা করবে। এই পৃথিবীতে শয়তান ও যিশুর মধ্যে হওয়া এক কথোপকথন সম্বন্ধে বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে দিয়াবল তার সেই স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। শয়তান যিশুকে তার সামনে ‘ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম’ করানোর চেষ্টা করেছিল।—মথি ৪:৮, ৯.

একইভাবে, শয়তান তার অভিসন্ধিগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে কথোপকথনের সময় প্রকাশ করেছিল, যা ইয়োব বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করার জন্য মানুষকে প্ররোচিত করতে সে যেকোনোকিছু করতে পারে।—ইয়োব ১:১৩-১৯; ২:৭, ৮.

বিবেচনা করুন: শয়তান যদি যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে কথোপকথন করে থাকে, তাহলে কীভাবে শয়তান কেবল সেই মন্দ গুণ হতে পারে, যা অন্যদের মধ্যে থাকে? নিঃসন্দেহে, ঈশ্বর কিংবা তাঁর পুত্রের মধ্যে কোনো মন্দতা নেই! তাই, স্পষ্টতই শয়তান হচ্ছে একজন বাস্তব ব্যক্তি—একজন মন্দ আত্মিক প্রাণী, যার যিহোবা কিংবা যিশুর প্রতি কোনো সম্মান নেই।

মানুষের কাজকর্মের কলুষিত অবস্থা এক বাস্তব দিয়াবলের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। এই জগতের জাতিগুলো তাদের বাড়তি খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হতে দেয়, যদিও তাদের ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠী না খেয়ে মারা যায়। জাতিগুলো একে অপরকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্র মজুত করে। তারা পৃথিবীর পরিবেশকে দূষিত করে। তা সত্ত্বেও, অধিকাংশ লোক এই ধরনের ঘৃণ্য, আত্মঘাতী আচরণের কারণটা জানে না। কেন?

বাইবেল জানায় যে, শয়তান “অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে।” (২ করিন্থীয় ৪:৪) মানবসমাজকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য সে এক অদৃশ্য সংগঠনকে ব্যবহার করে। সে “ভূতগণের” বা মন্দদূতদের “অধিপতি।” (মথি ১২:২৪) একটা সংগঠিত অপরাধচক্রের নেতা যেমন এর সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তির কাছে নিজেকে প্রকাশ না করেই এক বিশাল অবৈধ সাম্রাজ্য চালাতে পারেন, তেমনই শয়তান বিরাট সংখ্যক লোক, যারা তার ভূমিকা বা প্ররোচনা সম্বন্ধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজানা থাকে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুষ্ট দূতদের নিয়ে গঠিত তার গুপ্ত সংগঠনকে ব্যবহার করে।

বাইবেল দিয়াবল এবং তার সংগঠনের মুখোশ খুলে দিয়েছে বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! ফলে আমরা দিয়াবলের প্ররোচনাকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারি। বাইবেল আমাদের এই পরামর্শ দেয়: “তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।”—যাকোব ৪:৭. (w০৯-E ১০/০১)