সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সাক্ষিরা কি প্রোটেস্টান্ট ধর্মের অন্তর্ভুক্ত?

যিহোবার সাক্ষিরা কি প্রোটেস্টান্ট ধর্মের অন্তর্ভুক্ত?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

যিহোবার সাক্ষিরা কি প্রোটেস্টান্ট ধর্মের অন্তর্ভুক্ত?

যিহোবার সাক্ষিরা নিজেদেরকে প্রোটেস্টান্ট ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে না। কেন?

রোমান ক্যাথলিক গির্জা-র সংস্কারসাধনের প্রচেষ্টায় ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপে প্রোটেস্টান্ট মতবাদের সূত্রপাত হয়েছিল। ১৫২৯ সালে স্পায়ারের সম্মেলনে মার্টিন লুথারের অনুসারীদের প্রতি সর্বপ্রথম “প্রোটেস্টান্ট” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সময় থেকে, এই অভিব্যক্তিটি সাধারণত সেইসমস্ত লোককে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে এসেছে, যারা সংস্কারসাধনের নীতি ও লক্ষ্যগুলোকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে থাকে। মেরিয়াম-ওয়েবস্টারস্‌ কলিজিয়েট ডিকশনারি-র ১১তম সংস্করণ তাই একজন প্রোটেস্টান্ট ব্যক্তিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করে, “গির্জার সেই সম্প্রদায়গুলোর একজন সদস্য, যেগুলো পোপের সর্বজনীন কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে আর শুধুমাত্র বিশ্বাস, সকল বিশ্বাসীর যাজক পদলাভ ও প্রকাশিত সত্যের একমাত্র উৎস হিসেবে বাইবেলের প্রাধান্যতার দ্বারা সত্যতা প্রতিপাদনের সংস্কারমূলক নীতিগুলোকে সমর্থন করে।”

যদিও যিহোবার সাক্ষিরা পোপের সর্বজনীন অধিকারকে অস্বীকার করে এবং বাইবেলের প্রাধান্যতাকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করে, তবুও তারা অনেক উল্লেখযোগ্য দিক দিয়ে প্রোটেস্টান্ট ধর্ম থেকে আলাদা। বস্তুতপক্ষে, দি এনসাইক্লোপিডিয়া অভ্‌ রিলিজিয়ন যিহোবার সাক্ষিদের “স্বতন্ত্র” বলে উল্লেখ করে। যে-তিনটে উপায়ে তারা আলাদা, সেগুলো বিবেচনা করুন।

প্রথমত, যদিও প্রোটেস্টান্ট বিশ্বাসের অনুসারীরা ক্যাথলিক ধর্মের উপাসনার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে সংস্কারবাদী নেতারা নির্দিষ্ট কিছু ক্যাথলিক মতবাদ যেমন, ত্রিত্ব, নরকাগ্নি ও আত্মার অমরত্বের বিশ্বাসকে ধরে রেখেছে। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বাস করে যে, এই মতবাদগুলো কেবল বাইবেলের বিপরীতই নয় বরং সেইসঙ্গে ঈশ্বর সম্বন্ধে এক বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।

দ্বিতীয়ত, যিহোবার সাক্ষিরা যে-ধর্মকে সমর্থন করে, সেটা কোনো নেতিবাচক প্রতিবাদমূলক ধর্ম নয় বরং এক ইতিবাচক নির্দেশনামূলক ধর্ম। তারা বাইবেলের এই পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়: “যিনি প্রভুর দাস, তাঁর ঝগড়া করা উচিত নয়, বরং তাঁকে সকলের প্রতি দয়ালু হতে হবে। তাঁর অন্যদের শিক্ষাদানের ক্ষমতা এবং সহ্যগুণ থাকতে হবে। যারা তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাদের তাঁকে নম্রভাবে শিক্ষা দিতে হবে।” (২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেল যা বলে এবং অনেক ধর্মীয় দল যা শিক্ষা দেয়, সেগুলোর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে। কিন্তু, এটা করার পিছনে তাদের লক্ষ্য এই নয় যে, তারা অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের সংস্কারসাধন করে। এর পরিবর্তে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আন্তরিক ব্যক্তিদের ঈশ্বর এবং তাঁর বাক্য বাইবেল সম্বন্ধে তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করা। (কলসীয় ১:৯, ১০) ভিন্ন বিশ্বাসের লোকেরা যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দ্বিমত পোষণ করে, তখন তারা অর্থহীন তর্কবিতর্কে রত হওয়া এড়িয়ে চলে।—২ তীমথিয় ২:২৩.

তৃতীয়ত, প্রোটেস্টান্ট আন্দোলন, যা শত শত সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে, সেটার বিপরীতে যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বব্যাপী এক ঐক্যবদ্ধ ভ্রাতৃসমাজ বজায় রেখেছে। যখন বাইবেলের মতবাদের বিষয় আসে, তখন ২৩০টারও বেশি দেশের যিহোবার সাক্ষিরা ‘একই কথা বলিবার’ বিষয়ে প্রেরিত পৌলের পরামর্শ মেনে চলে। তাদের মধ্যে কোনো দলাদলি বা বিভেদ নেই। এর পরিবর্তে, তারা প্রকৃতপক্ষেই ‘এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ব [“এক,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] হইয়াছে।’ (১ করিন্থীয় ১:১০) তারা সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে “শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে” প্রচেষ্টা করে থাকে।—ইফিষীয় ৪:৩. (w০৯-E ১১/০১)