সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করুন

বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করুন

বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করুন

“হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], বিনয় করি, তোমার এই দাসের প্রার্থনাতে, . . . তোমার কর্ণ অবহিত হউক।”—নহি. ১:১১.

১, ২. বাইবেলে লিপিবদ্ধ কয়েকটা প্রার্থনা বিবেচনা করা কেন উপকারজনক হবে?

 প্রার্থনা এবং বাইবেল অধ্যয়ন হল সত্য উপাসনার অপরিহার্য দিক। (১ থিষল. ৫:১৭; ২ তীম. ৩:১৬, ১৭) অবশ্য, বাইবেল প্রার্থনার কোনো বই নয়। তবে এটিতে অসংখ্য প্রার্থনা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অনেক প্রার্থনা গীতসংহিতা বইয়ে পাওয়া যায়।

আপনি যখন বাইবেল পড়েন ও অধ্যয়ন করেন, তখন আপনি সম্ভবত সেই প্রার্থনাগুলো খুঁজে পান, যেগুলো আপনি যে-পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হয়ে থাকেন, সেগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। বস্তুতপক্ষে, আপনি যখন শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ প্রার্থনার অভিব্যক্তিগুলোকে যুক্ত করেন, তখন আপনার প্রার্থনার মান উন্নত হয়। সাহায্যের জন্য করা অনুরোধগুলোর উত্তর দেওয়া হয়েছিল এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে এবং তাদের প্রার্থনার বিষয়বস্তু থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

ঈশ্বরের নির্দেশনা খুঁজুন এবং তা মেনে চলুন

৩, ৪. অব্রাহামের দাসকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং যিহোবা যে-ফলাফল এনে দিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

বাইবেল অধ্যয়ন থেকে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ঈশ্বরের নির্দেশনার জন্য আপনার সবসময় প্রার্থনা করা উচিত। কুলপতি অব্রাহাম যখন তার সবচেয়ে প্রাচীন দাসকে—খুব সম্ভবত ইলীয়েষরকে—ইস্‌হাকের জন্য একজন ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রী খুঁজে আনতে আরম-নহরয়িমে পাঠিয়েছিলেন, তখন কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। স্ত্রীলোকেরা যখন একটা কুয়ো থেকে জল তুলছিল, তখন সেই দাস প্রার্থনা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, . . . যে কন্যাকে আমি বলিব, আপনার কলশ নামাইয়া আমাকে জল পান করাউন, সে যদি বলে, পান কর, তোমার উষ্ট্রদিগকেও পান করাইব, তবে তোমার দাস ইস্‌হাকের জন্য তোমার নিরূপিত কন্যা সেই হউক; ইহাতে আমি জানিব যে, তুমি আমার প্রভুর প্রতি দয়া করিলে।”—আদি. ২৪:১২-১৪.

অব্রাহামের দাসের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল, যখন রিবিকা তার উটগুলোকে জল পান করিয়েছিলেন। শীঘ্র রিবিকা তার সঙ্গে কনানে গিয়েছিলেন এবং ইস্‌হাকের প্রিয়তমা স্ত্রী হয়েছিলেন। অবশ্য, আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো বিশেষ চিহ্নের আশা করতে পারেন না। তবে, আপনি যদি প্রার্থনা করেন এবং তাঁর আত্মার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হন, তাহলে তিনি আপনাকে জীবনের পথে নির্দেশনা দেবেন।—গালা. ৫:১৮.

প্রার্থনা উদ্‌বেগ কমাতে সাহায্য করে

৫, ৬. এষৌর সঙ্গে মিলিত হতে যাওয়ার আগে করা যাকোবের প্রার্থনার উল্লেখযোগ্য বিষয়টা কী?

প্রার্থনা উদ্‌বেগ কমাতে পারে। তারই যমজ ভাই এষৌর কাছ থেকে বিপদ ঘটতে পারে, এইরকম আশঙ্কা করে যাকোব প্রার্থনা করেছিলেন: “হে . . . সদাপ্রভু . . . তুমি এই দাসের প্রতি যে সমস্ত দয়া ও যে সমস্ত সত্যাচরণ করিয়াছ, আমি তাহার কিছুরই যোগ্য নই; . . . বিনয় করি, আমার ভ্রাতার হস্ত হইতে, এষৌর হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর, কেননা আমি তাহাকে ভয় করি, পাছে সে আসিয়া আমাকে, ছেলেদের সহিত মাতাকে বধ করে। তুমিই ত বলিয়াছ, আমি অবশ্য তোমার মঙ্গল করিব, এবং সমুদ্রতীরস্থ যে বালি বাহুল্য প্রযুক্ত গণনা করা যায় না, তাহার ন্যায় তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব।”—আদি. ৩২:৯-১২.

যদিও যাকোব আগে থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল, যখন তিনি এবং এষৌ পুনর্মিলিত হয়েছিলেন। (আদি. ৩৩:১-৪) সেই প্রার্থনাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন আর আপনি দেখতে পাবেন যে, যাকোব শুধুমাত্র সাহায্যের জন্যই অনুরোধ করেননি। তিনি প্রতিজ্ঞাত বংশের ওপর বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। আপনার “অন্তরে” কি কোনো “ভয়” রয়েছে? (২ করি. ৭:৫) যদি থাকে, তাহলে যাকোবের বিনতিগুলো হয়তো আপনাকে মনে করিয়ে দিতে পারে যে, প্রার্থনা উদ্‌বেগ কমাতে পারে। তাই, প্রার্থনায় শুধুমাত্র অনুরোধই নয় কিন্তু বিশ্বাসের অভিব্যক্তিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করুন

৭. কেন মোশি যিহোবার পথের বিষয়ে জ্ঞান চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন?

যিহোবাকে খুশি করার এক আকাঙ্ক্ষার দ্বারা আপনার প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করার জন্য অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। মোশি ঈশ্বরের পথের বিষয়ে জ্ঞান চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। “দেখ,” তিনি অনুরোধ করেছিলেন, “তুমি [সদাপ্রভু] আমাকে বলিতেছ, এই লোকদিগকে [মিশর হইতে] লইয়া যাও, . . . ভাল, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়া থাকি, তবে বিনয় করি, আমি যেন . . . তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই, এই জন্য আমাকে তোমার পথ সকল জ্ঞাত কর।” (যাত্রা. ৩৩:১২, ১৩) এই প্রার্থনার উত্তরে ঈশ্বর মোশিকে তাঁর পথ সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান প্রদান করেছিলেন, যে-জ্ঞান যিহোবার লোকেদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এক অত্যাবশ্যক ছিল।

৮. কীভাবে আপনি ১ রাজাবলি ৩:৭-১৪ পদর কথাগুলো নিয়ে ধ্যান করার দ্বারা উপকৃত হতে পারেন?

এ ছাড়া, দায়ূদও প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর।” (গীত. ২৫:৪) দায়ূদের ছেলে শলোমন ইস্রায়েলে রাজা হিসেবে দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা চেয়ে ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। শলোমনের প্রার্থনা যিহোবাকে খুশি করেছিল, যিনি শলোমনকে শুধুমাত্র তিনি যা চেয়েছিলেন, তা-ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ঐশ্বর্য এবং গৌরবও দিয়েছিলেন। (পড়ুন, ১ রাজাবলি ৩:৭-১৪.) আপনি যদি পরিচর্যার সেই বিশেষ সুযোগগুলো লাভ করে থাকেন, যেগুলো আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হয়, তাহলে প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করুন এবং এক নম্র মনোভাব প্রদর্শন করুন। তাহলে, ঈশ্বর আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে এবং আপনার দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে এবং প্রেমপূর্ণ উপায়ে পালন করতে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতে আপনাকে সাহায্য করবেন।

হৃদয় থেকে প্রার্থনা করুন

৯, ১০. মন্দির উদ্‌বোধনের সময় শলোমনের প্রার্থনায় অন্তঃকরণ বা হৃদয় সম্বন্ধে করা উল্লেখগুলোতে কোন বিষয়টা আপনার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়?

আমরা যদি চাই যে, ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শুনুন, তাহলে আমাদের হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে হবে। সা.কা.পূ. ১০২৬ সালে যিহোবার মন্দির উদ্‌বোধনের জন্য যিরূশালেমে একত্রিত দলের সামনে শলোমন এক আন্তরিক প্রার্থনা করেছিলেন, যা ১ রাজাবলি ৮ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। নিয়ম-সিন্দুককে অতি পবিত্র স্থানে রাখার এবং যিহোবার মেঘ মন্দিরকে পূর্ণ করার পর, শলোমন যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন।

১০ শলোমনের প্রার্থনাটা অধ্যয়ন করুন এবং সেটাতে অন্তঃকরণ বা হৃদয় সম্বন্ধে যে-উল্লেখগুলো রয়েছে, সেগুলো লক্ষ করুন। শলোমন স্বীকার করেছিলেন যে, একমাত্র যিহোবাই একজন ব্যক্তির হৃদয় জানেন। (১ রাজা. ৮:৩৮, ৩৯) সেই একই প্রার্থনা দেখায় যে, যে-পাপী ‘তাহার সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়া আইসে,’ তার জন্য আশা রয়েছে। যদি কোনো শত্রু ঈশ্বরের লোকেদের বন্দি করত, তাহলে সেই লোকেদের অনুরোধগুলো তখনই শোনা হতো, যখন তাদের হৃদয় যিহোবার প্রতি একাগ্র থাকত। (১ রাজা. ৮:৪৮, ৫৮, ৬১) তাই নিশ্চিতভাবেই, আপনার প্রার্থনাগুলো হৃদয় থেকে হওয়া উচিত।

গীতসংহিতার গীতগুলো যেভাবে আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে পারে

১১, ১২. একজন লেবীয়, যিনি কিছু সময়ের জন্য ঈশ্বরের ধর্মধামে যেতে পারেননি, তার প্রার্থনার অভিব্যক্তিগুলো থেকে আপনি কী শিখেছেন?

১১ গীতসংহিতার গীতগুলো অধ্যয়ন করা আপনার প্রার্থনাগুলোর মানকে উন্নত করতে এবং সেগুলোর উত্তর পেতে ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। একজন নির্বাসিত লেবীয়র ধৈর্যের বিষয়টা বিবেচনা করুন। কিছু সময়ের জন্য যদিও তিনি যিহোবার ধর্মধামে যেতে পারেননি, তবুও তিনি গেয়েছিলেন: “হে আমার প্রাণ, কেন অবসন্ন হও? আমার অন্তরে কেন ক্ষুব্ধ হও? ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখ [‘ঈশ্বরের অপেক্ষা কর,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]; কেননা আমি আবার তাঁহার স্তব করিব; তিনি আমার মুখের পরিত্রাণ ও আমার ঈশ্বর।”—গীত. ৪২:৫, ১১; ৪৩:৫.

১২ সেই লেবীয়র কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ধার্মিকতার জন্য কারাবরণ যদি কিছু সময়ের জন্য আপনাকে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে উপাসনাস্থলে উপস্থিত থাকতে বাধা দেয়, তাহলে ঈশ্বরকে আপনার পক্ষে কাজ করতে দেওয়ার জন্য ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করুন। (গীত. ৩৭:৫) ঈশ্বরের সেবায় অতীতে যে-আনন্দ লাভ করেছিলেন, তা নিয়ে ধ্যান করুন এবং তাঁর লোকেদের সঙ্গে আবারও যাতে সক্রিয় মেলামেশা করতে পারেন, সেইজন্য ‘ঈশ্বরের অপেক্ষা করিবার’ সময় ধৈর্য চেয়ে প্রার্থনা করুন।

বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করুন

১৩. যাকোব ১:৫-৮ পদের সঙ্গে মিল রেখে কেন আপনার বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করা উচিত?

১৩ আপনার পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সবসময় বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করুন। আপনি যদি নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধীয় কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাহলে শিষ্য যাকোবের পরামর্শ মেনে চলুন। প্রার্থনায় যিহোবার শরণাপন্ন হোন এবং এই ব্যাপারে কোনোরকম সন্দেহ করবেন না যে, তিনি আপনাকে আপনার পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা দিতে পারেন। (পড়ুন, যাকোব ১:৫-৮.) ঈশ্বর আপনার পরীক্ষাগুলো সম্বন্ধে অবগত আছেন এবং তিনি তাঁর আত্মার দ্বারা আপনাকে নির্দেশনা ও সান্ত্বনা দিতে পারেন। ‘কিছু সন্দেহ না করিয়া’ পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে তাঁর কাছে আপনার মনের কথা খুলে বলুন এবং তাঁর আত্মার নির্দেশনা ও তাঁর বাক্যের পরামর্শ মেনে চলুন।

১৪, ১৫. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, হান্না বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা এবং কাজ করেছিলেন?

১৪ ইল্‌কানা নামে একজন লেবীয়র দুজন স্ত্রীর মধ্যে একজন ছিলেন হান্না, যিনি বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা এবং কাজ করেছিলেন। সন্তানহীনা হান্নাকে অন্য স্ত্রী পনিন্না টিট্‌কারি দিতেন, যিনি কয়েকটা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। আবাসে হান্না মানত করেছিলেন যে, তার যদি একটা ছেলে হয়, তাহলে তিনি তাকে যিহোবার উদ্দেশে দান করবেন। প্রার্থনা করার সময় তার ঠোঁট দুটো কাঁপছিল বলে মহাযাজক এলি মনে করেছিলেন যে, হান্না মত্তা ছিলেন। তিনি মত্তা নন, এই বিষয়ে জানার পর এলি বলেছিলেন: ‘ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তাহা তোমাকে দিউন।’ হান্না যদিও জানতেন না যে, এর ফল আসলে কী হবে, তবুও তার এই বিশ্বাস ছিল যে, তার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হবে। তাই, “তাঁহার মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না।” তিনি আর দুঃখিত বা মনমরা ছিলেন না।—১ শমূ. ১:৯-১৮.

১৫ জন্মের পরে শমূয়েল যখন স্তন্যপান ত্যাগ করেছিলেন, তখন হান্না তাকে আবাসে পবিত্র সেবা করার জন্য যিহোবার কাছে উপস্থিত করেছিলেন। (১ শমূ. ১:১৯-২৮) সেই সময়ে করা তার প্রার্থনা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নেওয়া হয়তো আপনার নিজের প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে এবং আপনাকে এটা দেখতে সাহায্য করতে পারে যে, এমনকী দুর্দশাজনক কোনো সমস্যার কারণে দুঃখিত হওয়াকে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে, যদি আপনি এই বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করেন যে, যিহোবা আপনার প্রার্থনার উত্তর দেবেন।—১ শমূ. ২:১-১০.

১৬, ১৭. নহিমিয় বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা এবং কাজ করার ফলে কী হয়েছিল?

১৬ সাধারণ কাল পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি নহিমিয় বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা এবং কাজ করেছিলেন। তিনি অনুরোধ করেছিলেন: “হে যিহোবা, বিনয় করি, তোমার এই দাসের প্রার্থনাতে, এবং যাহারা তোমার নাম ভয় করিতে সন্তুষ্ট, তোমার সেই দাসদের প্রার্থনাতে তোমার কর্ণ অবহিত হউক; আর বিনয় করি, অদ্য তোমার এই দাসকে কৃতকার্য্য কর, ও এই ব্যক্তির সাক্ষাতে করুণাপ্রাপ্ত কর।” এখানে উল্লেখিত ‘এই ব্যক্তি’ কে ছিলেন? তিনি ছিলেন পারস্যরাজ অর্তক্ষস্ত, যার পানপাত্রবাহক হিসেবে নহিমিয় সেবা করতেন।—নহি. ১:১১.

১৭ বাবিলের বন্দিদশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত যিহুদিরা ‘অতিশয় দুরবস্থার ও গ্লানির মধ্যে রহিয়াছে, এবং যিরূশালেমের প্রাচীর ভগ্ন রহিয়াছে,’ একথা জানার পর নহিমিয় বিশ্বাস সহকারে কিছুদিন ধরে প্রার্থনা করেছিলেন। (নহি. ১:৩, ৪) নহিমিয় তার প্রার্থনার আশাতীত উত্তর পেয়েছিলেন, যখন রাজা অর্তক্ষস্ত যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করার জন্য তাকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। (নহি. ২:১-৮) শীঘ্র প্রাচীর মেরামত করা হয়েছিল। নহিমিয়ের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেওয়া হয়েছিল কারণ সেগুলো সত্য উপাসনাকে কেন্দ্র করে ছিল এবং বিশ্বাস সহকারে করা হয়েছিল। আপনার প্রার্থনাগুলোর বেলায়ও কি তা সত্য?

প্রশংসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের বিষয়টা মনে রাখুন

১৮, ১৯. কোন কারণগুলোর জন্য যিহোবার একজন দাসের তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত?

১৮ প্রার্থনায় যিহোবার প্রশংসা করার এবং তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার বিষয়টা মনে রাখুন। তা করার অসংখ্য কারণ রয়েছে! উদাহরণস্বরূপ, দায়ূদ যিহোবার রাজপদ সম্বন্ধে প্রশংসা করার জন্য উৎসুক ছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৫:১০-১৩.) আপনার প্রার্থনাগুলো কি দেখায় যে, যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার বিশেষ সুযোগকে আপনি উপলব্ধি করেন? গীতরচকের কথাগুলোও হয়তো আপনাকে খ্রিস্টীয় সভা এবং সম্মেলনগুলোর জন্য ঈশ্বরের কাছে আন্তরিক প্রার্থনায় আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সাহায্য করতে পারে।—গীত. ২৭:৪; ১২২:১.

১৯ ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার মূল্যবান সম্পর্কের জন্য কৃতজ্ঞতা হয়তো আপনাকে এই ধরনের অনুভূতি নিয়ে হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে: “হে প্রভু, আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার স্তব করিব, আমি লোকবৃন্দের মধ্যে তোমার প্রশংসা গাহিব। কেননা তোমার দয়া আকাশমণ্ডল পর্য্যন্ত মহৎ, তোমার সত্য মেঘ পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত। হে ঈশ্বর, স্বর্গের উপরে উন্নত হও, সমস্ত ভূমণ্ডলের উপরে তোমার গৌরব হউক।” (গীত. ৫৭:৯-১১) কতই না হৃদয়গ্রাহী অনুভূতি! আপনি কি এই বিষয়ে একমত নন যে, গীতসংহিতা বইয়ের এই ধরনের মর্মস্পর্শী কথাগুলো আপনার প্রার্থনাকে প্রভাবিত করতে এবং প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে পারে?

শ্রদ্ধা সহকারে ঈশ্বরের কাছে মিনতি করুন

২০. কীভাবে মরিয়ম ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছিলেন?

২০ আপনার প্রার্থনাগুলোতে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পাওয়া উচিত। মরিয়ম মশীহের মা হবেন, তা জানতে পারার অল্পসময় পরেই তিনি যে-শ্রদ্ধাপূর্ণ কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো হান্নার কথার অনুরূপ ছিল, যে-কথাগুলো হান্না ছোট্ট শমূয়েলকে আবাসে সেবা করার জন্য উপস্থিত করার সময় বলেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি মরিয়মের শ্রদ্ধা তার এই কথাগুলোতে স্পষ্ট হয়: “আমার প্রাণ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] মহিমা কীর্ত্তন করিতেছে, আমার আত্মা আমার ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরে উল্লাসিত হইয়াছে।” (লূক ১:৪৬, ৪৭) একইরকম অনুভূতি প্রকাশ করার দ্বারা আপনার প্রার্থনাগুলোকে কি উন্নত করা যেতে পারে? এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ঈশ্বরভয়শীল মরিয়মকে মশীহ যিশুর মা হওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল!

২১. কীভাবে যিশুর প্রার্থনাগুলো শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের প্রমাণ দেয়?

২১ যিশু পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে সশ্রদ্ধভাবে প্রার্থনা করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, লাসারকে পুনরুত্থিত করার আগে, “যীশু উপরের দিকে চক্ষু তুলিয়া কহিলেন, পিতঃ, তোমার ধন্যবাদ করি যে, তুমি আমার কথা শুনিয়াছ। আর আমি জানিতাম, তুমি সর্ব্বদা আমার কথা শুনিয়া থাক।” (যোহন ১১:৪১, ৪২) আপনার প্রার্থনাগুলো কি এইরকম শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের প্রমাণ দেয়? যিশুর সশ্রদ্ধ আদর্শ প্রার্থনাটা অধ্যয়ন করুন আর আপনি দেখতে পাবেন যে, এটার বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ দিকগুলো হল যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ, তাঁর রাজ্যের আগমন এবং তাঁর ইচ্ছার সম্পাদন। (মথি ৬:৯, ১০) আপনার নিজের প্রার্থনাগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করুন। সেগুলো কি যিহোবার রাজ্যের প্রতি, তাঁর ইচ্ছা পালন করার প্রতি এবং তাঁর পবিত্র নাম পবিত্রীকরণের প্রতি আপনার গভীর আগ্রহকে প্রতিফলিত করে? প্রার্থনাগুলোতে তা প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

২২. কেন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য যিহোবা আপনাকে সাহস প্রদান করবেন?

২২ তাড়না বা অন্যান্য পরীক্ষার কারণে প্রায়ই প্রার্থনায় সাহসের সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করার জন্য সাহায্য চেয়ে করা অনুরোধগুলো থাকে। মহাসভা যখন পিতর এবং যোহনকে ‘যীশুর নামে কোন উপদেশ’ দিতে নিষেধ করেছিল, তখন প্রেরিতরা সাহসের সঙ্গে সেই আদেশকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। (প্রেরিত ৪:১৮-২০) ছাড়া পাওয়ার পর, তারা সহবিশ্বাসীদেরকে কী ঘটেছিল তা বলেছিল। তখন উপস্থিত সকলে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়ে মিনতি করেছিল যেন তারা সাহসের সঙ্গে তাঁর বাক্য বলতে পারে। এটা নিশ্চয়ই কত রোমাঞ্চকরই না হয়েছিল, যখন সেই প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল কারণ তারা ‘পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়াছিলেন ও সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতেছিলেন’! (পড়ুন, প্রেরিত ৪:২৪-৩১.) এর ফল স্বরূপ, অসংখ্য ব্যক্তি যিহোবার উপাসক হয়েছিল। প্রার্থনা আপনাকেও নির্ভীকভাবে সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য শক্তিশালী করতে পারে।

আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করে চলুন

২৩, ২৪. (ক) কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে পারে, তা দেখাতে অন্যান্য উদাহরণ উল্লেখ করুন। (খ) আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করার জন্য আপনি কী করবেন?

২৩ বাইবেল পড়া এবং অধ্যয়ন করা যে আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে পারে, তা দেখানোর জন্য আরও অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যোনার মতো আপনিও প্রার্থনায় স্বীকার করতে পারেন যে, “পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে।” (যোনা ২:১-১০) আপনি যদি কোনো গুরুতর পাপ করার কারণে উদ্‌বিগ্ন থাকেন এবং প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চেয়ে থাকেন, তাহলে প্রার্থনায় দায়ূদের অনুভূতিগুলো হয়তো আপনাকে ব্যক্তিগত প্রার্থনা করার সময় অনুতাপ প্রকাশ করায় সাহায্য করতে পারে। (গীত. ৫১:১-১২) কিছু প্রার্থনায়, আপনি যিরমিয়ের মতো করে যিহোবার প্রশংসা করতে পারেন। (যির. ৩২:১৬-১৯) আপনি যদি একজন বিবাহ সাথি খুঁজছেন, তাহলে ইষ্রা ৯ অধ্যায়ে প্রাপ্ত প্রার্থনাটা অধ্যয়ন ও সেইসঙ্গে প্রার্থনায় ব্যক্তিগত অনুরোধ করা আপনাকে ‘কেবল প্রভুতেই বিবাহ’ করে ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার বিষয়ে আপনার দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে।—১ করি. ৭:৩৯; ইষ্রা ৯:৬, ১০-১৫.

২৪ বাইবেল পড়া, অধ্যয়ন করা এবং এর মধ্যে অন্বেষণ করা চালিয়ে যান। এমন বিষয়গুলো খুঁজুন, যেগুলো আপনার প্রার্থনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। আপনি হয়তো সেই শাস্ত্রীয় ধারণাগুলোকে আপনার বিনতিতে এবং ধন্যবাদ ও প্রশংসা জ্ঞাপনের প্রার্থনাগুলোতে ব্যবহার করতে পারবেন। বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করার দ্বারা আপনি নিশ্চিতভাবেই যিহোবা ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হতে পারবেন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমাদের ঈশ্বরের নির্দেশনা খোঁজা এবং মেনে চলা উচিত?

• কোন বিষয়টার আমাদেরকে প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করতে প্রেরণা দেওয়া উচিত?

• কীভাবে গীতসংহিতা বইটি আমাদের প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে পারে?

• কেন আমাদের বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা সহকারে প্রার্থনা করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাহামের দাস ঈশ্বরের নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। আপনি কি তা করেন?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

পারিবারিক উপাসনা আপনার প্রার্থনার মানকে উন্নত করতে পারে