সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর প্রকৃতই চিন্তা করেন যেভাবে আমরা তা জানতে পারি

ঈশ্বর প্রকৃতই চিন্তা করেন যেভাবে আমরা তা জানতে পারি

ঈশ্বর প্রকৃতই চিন্তা করেন যেভাবে আমরা তা জানতে পারি

এটা এক পুরোনো অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যেটা নিয়ে লোকেরা হাজার হাজার বছর ধরে গভীরভাবে চিন্তা করেছে: ঈশ্বর যদি আমাদের ভালোবেসে থাকেন, তাহলে কেন এত দুঃখকষ্ট? আপনি হয়তো একমত হবেন যে, আপনি যদি কাউকে ভালোবাসেন, তাহলে আপনি চাইবেন না যে, তিনি দুঃখকষ্ট ভোগ করুন ও সেইসঙ্গে তিনি যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে আপনি তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন। সেই অনুসারে, অনেকে মনে করে যে, যেহেতু জগতে অনেক দুঃখকষ্ট রয়েছে, তাই ঈশ্বর সম্ভবত আমাদের জন্য চিন্তা করেন না। তাই, প্রথমে আমাদের এই প্রমাণ বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ঈশ্বর প্রকৃতই আমাদেরকে ভালোবাসেন ও আমাদের জন্য চিন্তা করেন।

সৃষ্টি ঈশ্বরের প্রেমের প্রমাণ দেয়

যিহোবা ঈশ্বর হলেন “আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তের নির্ম্মাণকর্ত্তা।” (প্রেরিত ৪:২৪) যিহোবা যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা নিয়ে আমরা যখন গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন নিশ্চিতভাবে আমরা এই উপসংহারে আসি যে, তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। উদাহরণস্বরূপ, সেই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করুন, যেগুলো আপনাকে আনন্দ ও সুখ প্রদান করে। আপনি কি ভালো খাবার খেতে পছন্দ করেন? আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যিহোবা শুধুমাত্র এক ধরনের খাবারই জোগাতে পারতেন। এর পরিবর্তে, আমাদের স্বাদ উপভোগ করার জন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে, আমাদের জন্য জীবনকে উপভোগ্য এবং আগ্রহজনক করে তোলার জন্য যিহোবা পৃথিবীকে বিভিন্ন ধরনের অপূর্ব গাছপালা, ফুল এবং ভূদৃশ্য দিয়ে সাজিয়েছেন।

এ ছাড়া, আমাদেরকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটাও বিবেচনা করুন। আমাদের রসিকতা বোধ, সংগীত উপভোগ করার ক্ষমতা এবং সৌন্দর্য উপলব্ধি করার সামর্থ্য, জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আবশ্যক নয়—সবই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহার, যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। আর অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক সম্বন্ধেও চিন্তা করুন। উত্তম বন্ধুবান্ধবের উষ্ণ সাহচর্য অথবা যার প্রতি আমাদের গভীর স্নেহ রয়েছে, তার আলিঙ্গনকে কে না উপভোগ করে? আসলে ভালোবাসার ক্ষমতা হল এমন একজন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার, যিনি ভালোবাসেন! যেহেতু ঈশ্বর মানুষের মধ্যে ভালোবাসার ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই সেই গুণটি নিশ্চয়ই ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের একটা অংশ।

বাইবেল আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেমের বিষয়ে আশ্বাস দেয়

বাইবেল আমাদের বলে যে, ঈশ্বর প্রেম। (১ যোহন ৪:৮) তাঁর প্রেম শুধুমাত্র সৃষ্টির মধ্যেই প্রকাশ পায় না কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর বাক্য বাইবেলেও এটা স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল সেই নির্দেশনাগুলো প্রদান করে, যেগুলো উত্তম স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখে, সমস্ত বিষয়ে মিতাচারী হতে উৎসাহ দেয় এবং মাতাল হওয়া ও পেটুকতার বিরুদ্ধে সাবধান করে।—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০.

এ ছাড়া, বাইবেল মানব সম্পর্কের বিষয়ে বিজ্ঞ পরামর্শ দেয় এবং একে অপরকে প্রেম করার ও অন্যদের সঙ্গে সম্মান, মর্যাদা এবং দয়া সহকারে আচরণ করার জোরালো পরামর্শ দেয়। (মথি ৭:১২) এটা সেই অভ্যাস এবং মনোভাবগুলোর নিন্দা করে, যেগুলো দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে—লোভ, গুজব ছড়ানো, ঈর্ষা, পারদারিকতা এবং হত্যা। প্রত্যেকে যদি শাস্ত্রে পাওয়া উত্তম পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বিশ্বব্যাপী দুঃখকষ্ট অনেক কম থাকবে।

কিন্তু, ঈশ্বরের প্রেমের সর্বমহান প্রকাশটা ছিল মানবজাতিকে মুক্ত করার জন্য তাঁর পুত্র যিশুকে প্রদান করা। যোহন ৩:১৬ পদ বলে: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” এভাবে যিহোবা মৃত্যু এবং সমস্ত ধরনের দুঃখকষ্টের স্থায়ী শেষ নিয়ে আসার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা করেছেন।—১ যোহন ৩:৮.

স্পষ্টতই, যিহোবা যে আমাদেরকে ভালোবাসেন, সেটার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। তাই, এটা যুক্তিযুক্ত যে, আমাদের দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেখে ঈশ্বর একটুও খুশি হন না। দুঃখকষ্টের শেষ নিয়ে আসার জন্য তিনি পদক্ষেপ নেবেন। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের অনুমান করার প্রয়োজন নেই—বাইবেল আমাদের একেবারে সঠিকভাবে বলে যে, ঈশ্বর কীভাবে দুঃখকষ্ট দূর করবেন। (w০৯-E ১২/০১)

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভালোবাসার ক্ষমতা হল এমন একজন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার, যিনি ভালোবাসেন