সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

আমি মদ খাওয়ার বিষয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি না তো?

আমি মদ খাওয়ার বিষয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি না তো?

আমি মদ খাওয়ার বিষয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি না তো?

আগের প্রবন্ধে উল্লেখিত টনির জীবন সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারত যদি সে মদের প্রতি তার যে আসক্তি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে পারত। কিন্তু সে যেহেতু মনে করেছিল, সে যতই মদ খাক না কেন তার কিছুই হবে না তাই সে বিশ্বাস করত যে তার জীবন তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেন তার চিন্তা ভাবনা ভুল ছিল?

অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে তার চিন্তা ভাবনা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। টনি বুঝতে পারুক বা না-ই পারুক অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে তার ব্রেন যা শরীরের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থাকে ঠিক রাখে, তা সঠিকভাবে কাজ করছিল না। তিনি যত বেশি মদ খাচ্ছিলেন তার ব্রেনের কার্যক্ষমতা তত বেশি কমে যাচ্ছিল।

টনির মধ্যে একটা তীব্র আকাঙ্খা ছিল যে তিনি যেভাবে মদ খেতেন তা চালিয়ে যাবেন আর এটাই ছিল টনির ভুল চিন্তাভাবনার পিছনে দ্বিতীয় কারণ। আগের প্রবন্ধে উল্লেখিত অ্যালেন বলেন, প্রথম প্রথম তিনি অস্বীকার করতেন যে, তার মদ খাওয়ায় সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমি লুকিয়ে লুকিয়ে মদ খেতাম। আমি অজুহাত দেখাতাম এবং চেষ্টা করতাম অতিরিক্ত মাত্রায় মদ না খেতে। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, আমি যেন মদ খাওয়া চালিয়ে যেতে পারি।” যদিও অন্যেরা টনি ও অ্যালেনকে দেখে বুঝতে পারত যে, মদ তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে কিন্তু তারা মনে করত যে সমস্ত কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের দু-জনকেই মদ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হত। কিন্তু কোন পদক্ষেপ?

পদক্ষেপ নিন!

অনেকে যারা মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তারা যিশুর কথাগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে পদক্ষেপ নিয়েছে: “আর তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে পাপ করতে পরিচালিত করে, তা হলে সেটা উপড়ে দূরে ফেলে দাও। কারণ তোমার সমস্ত শরীর নিয়ে গিহেন্নায় নিক্ষিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, এক অঙ্গ হারানো তোমার পক্ষে আরও উত্তম।”—মথি ৫:২৯.

নিশ্চিতভাবে যিশু এখানে নিজের শরীরের কোনো অঙ্গ কেটে ফেলার কথা বলছিলেন না। এর পরিবর্তে তিনি রূপকভাবে এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতি করে এমন যেকোনো কিছু আমাদের জীবন থেকে বাদ দিতে হবে। তবে আমরা যে পদক্ষেপ নেব সেটা হয়তো আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর হতে পারে। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিলে আমরা এমন চিন্তাভাবনা এবং পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারব যা অতিরিক্ত মদ খাওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। যদি অন্যেরা বলে যে আপনি অতিরিক্ত মদ খাচ্ছেন তা হলে তাদের পরামর্শ শুনুন আর সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পদক্ষেপ নিন। a যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি অতিরিক্ত মদ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তাহলে তা খাওয়া বন্ধ করে দিন। অবশ্য এটা করা আপনার জন্য হয়তো কষ্টকর হতে পারে কিন্তু আপনার জীবন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার চেয়ে এটা ভালো।

আপনি হয়তো মাতাল নন তারপরও কি আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে? যদি থাকে তাহলে আপনি কোন ব্যাবহারিক পদক্ষেপ নিতে পারেন যাতে আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ না খেয়ে ফেলেন?

যেভাবে সাহায্য লাভ করতে পারেন

১. ক্রমাগত হৃদয় থেকে প্রার্থনা করুন। যিহোবাকে যারা খুশি করতে চায় বাইবেল তাদের এই পরামর্শ দেয়: “সমস্ত বিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা আর সেইসঙ্গে ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের অনুরোধ ঈশ্বরকে জানাও; এতে ঈশ্বরের সেই শান্তি খ্রিস্ট যিশুর মাধ্যমে তোমাদের হৃদয় ও মনকে রক্ষা করবে, যে-শান্তির কথা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) এই মনের শান্তি লাভ করার জন্য আপনি প্রার্থনায় কী বলতে পারেন?

প্রার্থনায় এটা স্বীকার করুন যে আপনার মদ খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে আর এর জন্য আপনি নিজে দায়ী। ঈশ্বরকে বলুন যে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি কি করতে চান। তিনি আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন যাতে আপনি এই গুরুতর সমস্যাগুলো এড়াতে পারেন ও স্বস্তি লাভ করতে পারেন। “যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।” (হিতোপদেশ ২৮:১৩) যিশু বলেছিলেন প্রার্থনায় আমরা এটাও বলতে পারি: “আমাদের প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করতে দিয়ো না কিন্তু শয়তানের হাত থেকে উদ্ধার করো।” (মথি ৬:১৩ ফুটনোট) কীভাবে আপনি আপনার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারেন এবং কোথায় আপনি আপনার প্রার্থনার উত্তর পেতে পারেন?

২. ঈশ্বরের বাক্য থেকে শক্তি লাভ করুন।“ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত এবং অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ... আর সেইসঙ্গে এটি হৃদয়ের চিন্তা ও প্রবণতা বুঝতে সমর্থ।” (ইব্রীয় ৪:১২) অনেকে যারা অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খেত তারা প্রতিদিন বাইবেল পড়ার ও তা নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে এই আসক্তি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। ঈশ্বর ভয়শীল একজন গীতরচক লিখেছিলেন, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না ... কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। ... আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”—গীতসংহিতা ১:১-৩.

অ্যালেন যিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে তার মদ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পেরেছিলেন তিনি বলেন, “বাইবেল ও বাইবেলের নীতিগুলো আমাকে মদ খাওয়া ছাড়তে সাহায্য করেছে, যদি এগুলো না থাকত তাহলে আমি মারা যেতাম।”

৩. আত্মসংযম গড়ে তুলুন। বাইবেল জানায় খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এমন কিছু ব্যক্তি যারা আগে মাতাল ছিল তারা “ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে” শুচি হয়েছিল। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) কীভাবে হয়েছিল? একটা যে উপায়ে তারা শুচি হয়েছিল তা হল আত্মসংযম গুণ গড়ে তোলার মাধ্যমে যা ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়। আর এর ফলে তারা মত্ততা, রঙ্গরস বা অতিরিক্ত আনন্দ উল্লাসের অভ্যাস ছাড়তে পেরেছে। “দ্রাক্ষারস খেয়ে মাতাল হোয়ো না, কারণ তা উচ্ছৃঙ্খলতার দিকে পরিচালিত করে, বরং সবসময় পবিত্র শক্তিতে পরিপূর্ণ হও।” (ইফিষীয় ৫:১৮; গালাতীয় ৫:২১-২৩) যিশু খ্রিস্ট প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, “স্বর্গস্থ পিতা, তাঁর কাছে যারা চায়, তাদের পবিত্র শক্তি” দিতে ইচ্ছুক, তাই “চাইতে থাকো, তা হলে তোমাদের দেওয়া হবে।”—লূক ১১:৯, ১৩.

যিহোবাকে খুশি করে এমন উপায়ে যারা তাঁকে উপাসনা করতে চায় তাদের এই আত্মসংযম গুণ গড়ে তুলতে হবে। আর এটা তারা বাইবেল পড়া, বাইবেল অধ্যয়ন করা ও ক্রমাগত হৃদয় থেকে প্রার্থনা করার মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারে। তাই নিরুৎসাহিত না হয়ে ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া প্রতিজ্ঞার উপর মনোযোগ দিন: “যে পবিত্র শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়ে বুনবে, সে পবিত্র শক্তির কাছ থেকে অনন্তজীবনরূপ শস্য কাটবে। তাই এসো, আমরা উত্তম কাজ করার ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দিই, কারণ আমরা যদি ক্লান্ত হয়ে না পড়ি, তা হলে ঈশ্বরের দ্বারা নিরূপিত সময়ে শস্য কাটব।”—গালাতীয় ৬:৮, ৯.

৪. ভালো বন্ধু বাছাই করুন।“জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) আপনি দৃঢ় ভাবে মদ খাওয়ার বিষয়ে যে মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেছেন তা আপনার বন্ধুদের বলুন। আপনি যখন “মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান, উচ্ছৃঙ্খলতাপূর্ণ আনন্দোৎসব, মদ্যপানের প্রতিযোগিতা” ছেড়ে দেবেন তখন আপনার পুরোনো বন্ধুরা ‘আশ্চর্য হয়ে যাবে’ এবং আপনাকে ‘নিয়ে ঠাট্টা করবে।’ (১ পিতর ৪:৩, ৪) তাই সেই সমস্ত বন্ধুর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিন যারা আপনার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়ার মনোভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।

৫. কতটা খাবেন তার একটা মাত্রা নির্ধারণ করুন। “আর এই জগতের লোকদের অনুকরণ কোরো না, কিন্তু তোমাদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে রূপান্তরিত হও, যেন তোমরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কী: তাঁর ইচ্ছা উত্তম, প্রীতিজনক ও নিখুঁত।”(রোমীয় ১২:২) আপনি কতটা খাবেন তা অন্যদের অথবা “এই জগতের লোকদের” নির্ধারণ করতে দেওয়ার পরিবর্তে ঈশ্বরের বাক্যের নীতি কাজে লাগিয়ে নিজে তা নির্ধারণ করুন। এটা করার ফলে আপনি এমনভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন, যা ঈশ্বরকে খুশি করে। কিন্তু কীভাবে আপনি কতটা পরিমাণে মদ খাবেন তার একটা মাত্রা নির্ধারণ করতে পারেন?

যে পরিমাণে মদ খাওয়ার পর আপনি স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি এবং চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন সেটাই আপনার মাত্রা। তবে আপনি যদি মদ খাওয়ার কথা চিন্তা করেন তাহলে এমন একটা মাত্রা নির্ধারণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না যেটার ফলে আপনি হয়তো মাতাল হবেন না আবার স্বাভাবিক অবস্থাতেও থাকবেন না। তাই নিজেকে বোকা না বানিয়ে সৎভাবে মাত্রা নির্ধারণ করুন। এমন একটা নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করুন যা আপনাকে অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়া থেকে বিরত রাখবে এবং আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।

৬. না বলতে শিখুন। “কেবল তোমার ‘হ্যাঁ’ যেন হ্যাঁ হয় এবং ‘না’ যেন না হয়।” (মথি ৫:৩৭) আপনাকে যখন কেউ মদ খাওয়ার জন্য বলে, সদয়ভাবে এবং অন্যদের দুঃখ না দিয়ে না বলতে শিখুন। “তোমাদের কথাবার্তা যেন সবসময় সদয় হয় অর্থাৎ লবণ দিয়ে স্বাদযুক্ত করা খাবারের মতো হয়। এতে তোমরা জানতে পারবে যে, কাকে কীভাবে উত্তর দেবে।”— কলসীয় ৪:৬

৭. ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য চান। এমন বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য চান যারা আপনাকে মদ খাওয়ার বিষয়ে আপনি যে সীমা নির্ধারণ করেছেন তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং বাইবেল থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে সাহায্য করবে। “এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল, কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়। কারণ তাহারা পড়িলে এক জন আপন সঙ্গীকে উঠাইতে পারে।” (উপদেশক ৪:৯, ১০; যাকোব ৫:১৫, ১৬) যুক্তরাষ্ট্রের দ্যা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট মদের অপব্যবহার এবং মাতাল হওয়ার বিষয় এই পরামর্শ দেয়, “মদ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়া কখনো কখনো কঠিন হতে পারে। আপনার পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য চান যাতে তারা আপনাকে এই অভ্যাস ছাড়তে সাহায্য করে।

৮. নিজের সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকুন।“তোমরা সেই বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করো, কেবল শ্রোতা হোয়ো না। নতুবা তোমরা ভুল যুক্তি দিয়ে নিজেদেরই প্রতারিত করবে। কিন্তু, ঈশ্বরের যে-নিখুঁত আইন স্বাধীনতা নিয়ে আসে, সেটার প্রতি যে মনোযোগের সঙ্গে দৃষ্টিপাত করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে, সে ভুলে যাওয়ার শ্রোতা নয়। সে ঈশ্বরের কাজ করে; আর তা করার মাধ্যমে সে সুখী হবে।”—যাকোব ১:২২, ২৫

মদ খাওয়ার নেশা কাটিয়ে উঠুন

প্রত্যেকে যারা অতিরিক্ত পরিমাণে মদ খায় তাদের সবার যে মদের প্রতি আসক্তি রয়েছে এমন নয়। কিন্তু কেউ কেউ এতটা পরিমাণে মদ খেতে শুরু করে এবং তা চালিয়ে যায় যে তারা মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। যে ব্যক্তিরা মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে যেহেতু তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর এর একটা জোরালো প্রভাব পড়ে তাই তাদের এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তি এবং আধ্যাত্মিক সাহায্যের চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন হতে পারে। অ্যালেন মনে করে বলেন, “আমি যখন মদ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছিলাম তখন শারীরিকভাবে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল আর আমি বুঝতে পারি যে, আমার আধ্যাত্মিক সাহায্যের পাশাপাশি চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।”

অনেকে যারা মদ খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার অথবা মদের আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য আধ্যাত্মিক সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন তাদের চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়েছিল। b মদ ছেড়ে দেওয়ার ফলে যে গুরুতর সমস্যা বা উপসর্গগুলো দেখা দেয় তার জন্য কাউকে কাউকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় আবার মদ খাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রণ করার এবং পুরোপুরিভাবে মদ থেকে দূরে থাকার জন্য কাউকে কাউকে ওষুধ খেতে হয়। ঈশ্বরের পুত্র যিনি আশ্চর্য কাজ করতেন তিনি বলেছিলেন, “সুস্থ লোকদের চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই, কিন্তু অসুস্থ লোকদেরই প্রয়োজন।”—মার্ক ২:১৭

ঈশ্বরীয় নির্দেশনা মেনে চলার উপকারিতা

মদের বিষয়ে বাইবেলে দেওয়া বিজ্ঞ পরামর্শ সত্য ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে যিনি সবসময় আমাদের ভালো চান, শুধুমাত্র এখনকার উপকারের জন্য নয় বরং চিরকালের জন্য। মদ ছেড়ে দেওয়ার ২৪ বছর পর অ্যালেন বলেন, “আমার এটা জেনে ভালো লেগেছিল যে আমি পুরোপুরি বদলে যেতে পারি আর সেইসঙ্গে যিহোবা আমাকে সাহায্য করেছিলেন এই পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরিভাবে বেরিয়ে আসতে, ...” অ্যালেন কথা বলতে বলতে চুপ করে যান এবং তার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায় আর তিনি তার চোখের জল ধরে রাখতে পারেন না। “আসলে আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে, যিহোবা আপনার পরিস্থিতি বুঝতে পারেন এবং তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন আর আপনাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগাচ্ছেন তখন আপনার খুবই ভালো লাগবে।”

তাই আপনি যদি মদ খাওয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন তাহলে হাল ছেড়ে দেবেন না এবং এটা মনে করবেন না যে আপনার কোন আশা নেই। অ্যালেন এবং এমন অনেক ব্যক্তিরা আপনার মতো একই পরিস্থিতির মধ্যে ছিল যারা এখন হয় পরিমিত মাত্রায় মদ খান অথবা পুরোপুরিভাবে তা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এর জন্য তাদের কোনো আপশোস নেই আর আপনিও আপশোস করবেন না।

আপনি পরিমিত মাত্রায় মদ খেতে পারেন অথবা পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিতে পারেন, তবে এই ক্ষেত্রে আপনি যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন ঈশ্বরের এই প্রেমময় নির্দেশনা কাজে লাগান: “আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত.”—যিশাইয় ৪৮:১৮.

[পাদটীকাগুলো]

a পৃষ্ঠা ৮-এ দেওয়া “ মদ কি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে?” এই বাক্সটা দেখুন।

b এমন অনেক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং হসপিটাল রয়েছে যারা এই ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। তবে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করব অথবা করব না সেটা প্রহরীদুর্গ আমাদের নির্দিষ্টভাবে বলে না। যে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো রয়েছে সেই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত ভালোভাবে জানা এবং কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবে কি করবেন না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তবে সেটা যেন বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে না হয়।

[বাক্স/ছবি]

 মদ খাওয়ার বিষয়ে আমি কি মাত্রা ছড়িয়ে যাচ্ছি?

আপনি হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন:

• আমি কি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাই?

• আমি কি ঘন ঘন মদ খাই?

• আমি কি মদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি?

• আমি কি চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিংবা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য মদ খাই?

• আমি অতিরিক্ত মদ খাই বলে আমার পরিবার ও বন্ধুরা কি চিন্তিত?

• আমার কি মদ খাওয়ার ফলে বাড়িতে, কাজের জায়গায় অথবা যাতায়াত করার কিংবা গাড়ি চালানোর সময় কোনো সমস্যা হয়েছে?

• আমি কি এক সপ্তাহ মদ না খেয়ে থাকতে পারি না?

• আমি কি অন্যেরা মদ না খেলে অস্বস্তি বোধ করি?

• আমি যে পরিমাণ মদ খাই তা কি অন্যদের কাছ থেকে লুকাই?

এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটা অথবা একের অধিক প্রশ্নের উত্তর আপনার যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে মদ খাওয়ার বিষয়ে আপনার মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত।

[বাক্স/ছবি]

আপনি যেভাবে মদ খাওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন

মদ খাওয়ার আগে চিন্তা করুন:

আমার জন্য কি মদ খাওয়া উপযুক্ত না-কি আমার এটা খাওয়া উচিত নয়?

পরামর্শ: যে ব্যক্তি মাত্রা বজায় রেখে মদ খেতে পারে না, তার মদ খাওয়া উচিত নয়।

আমার কতটা পরিমাণে মদ খাওয়া উচিত?

পরামর্শ: মদ খাওয়ার পর আপনার স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা বিকৃত হয়ে যাওয়ার আগেই মাত্রা নির্ধারণ করুন।

আমার কখন মদ খাওয়া উচিত?

পরামর্শ: গাড়ি চালানোর আগে মদ খাওয়া উচিত নয় যেখানে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে, কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে মদ খাওয়া উচিত নয়, আর এমনকি গর্ভবতী অবস্থায় থাকার সময় মদ খাওয়া উচিত নয় আর নির্দিষ্ট ধরনের কোনো ওষুধ খেলে সেই ক্ষেত্রেও মদ খাওয়া উচিত নয়।

আমার কোথায় মদ খাওয়া উচিত?

পরামর্শ: লুকিয়ে লুকিয়ে মদ খাওয়া উচিত নয়। আবার সেই ব্যক্তিদের সামনেও মদ খাওয়া উচিত নয় যারা হয়তো বিঘ্ন পেতে পারে।

আমার কাদের সঙ্গে মদ খাওয়া উচিত?

পরামর্শ: ভালো বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারের সঙ্গে কোনো মাতালদের সঙ্গে নয়।

[বাক্স/ছবি]

ঈশ্বরের বাক্য একজন মাতালকে সাহায্য করেছিল

থাইল্যান্ডের স্পর্ট নামে একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খেতেন। প্রথম প্রথম তিনি কেবলমাত্র সন্ধ্যা বেলায় মদ খেতেন, ধীরে ধীরে সে সকাল বেলায় মদ খেতে করেন এবং তারপর দুপুর বেলায়। তিনি শুধুমাত্র নেশা করার জন্য মদ খেতেন। কিন্তু এরপর তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। বাইবেল অধ্যয়ন করার ফলে স্পর্ট যখন জানতে পারেন যে যিহোবা মাতাল হওয়া পছন্দ করেন না তখন তিনি মদ খাওয়া ছেড়ে দেন। কিছু সময় পর তিনি আবার মদ খেতে শুরু করেন আর তার পরিবার তছনছ যায়।

কিন্তু স্পর্ট যিহোবাকে খুব ভালোবাসতেন এবং তাঁকে সঠিক উপায়ে উপাসনা করতে চেয়েছিলেন। স্পর্টের বন্ধুরা তাকে ক্রমাগত সাহায্য করে এবং তার পরিবারকে উৎসাহিত করে যে, তারা যেন তার প্রতি হাল ছেড়ে না দিয়ে তার সঙ্গে আরও বেশি করে সময় কাটায়। সেই সময় ১ করিন্থীয় ৬:১০ পদে পাওয়া কথাগুলো স্পর্টকে সাহায্য করেছিল তার পরিস্থিতিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে, যেখানে বলা হয়েছে: ‘মাতালরা ... ঈশ্বরের রাজ্য লাভ করবে না।’ তিনি বুঝতে পারেন তাকে তার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করতে হবে যাতে তিনি তার মদ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পারেন।

এবার স্পর্ট পুরোপুরিভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি মদ খাওয়া ছেড়ে দেবেন। ধীরে ধীরে ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি, ঈশ্বরের বাক্য, তার পরিবার এবং মণ্ডলীর সাহায্যে স্পর্ট আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকে এবং মদের প্রতি তার যে আসক্তি ছিল তা কাটিয়ে উঠতে পারে। এরপর তিনি যখন নিজের জীবন ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নেন তখন তার পরিবার অনেক আনন্দিত হয়। স্পর্ট এখন যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেন যা তিনি সবসময় চেয়েছিলেন এবং সেইসঙ্গে তিনি তার সময়কে ব্যবহার করে অন্যদেরও আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করে থাকেন।