সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার লোক হওয়া—এক অযাচিত দয়া

যিহোবার লোক হওয়া—এক অযাচিত দয়া

যিহোবার লোক হওয়া—এক অযাচিত দয়া

“আমরা প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW]।”—রোমীয় ১৪:৮.

১, ২. (ক) আমাদের কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে? (খ) কোন প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?

 ইস্রায়েল জাতিকে কী এক অমূল্য সুযোগই না প্রদান করা হয়েছিল, যখন যিহোবা তাদের বলেছিলেন: “তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে।” (যাত্রা. ১৯:৫) আজকে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্যদেরও যিহোবার লোক হওয়ার সম্মান রয়েছে। (১ পিতর ২:৯; প্রকা. ৭:৯, ১৪, ১৫) এটা হল এমন এক বিশেষ সুযোগ, যা আমাদের চিরকাল উপকৃত করতে পারে।

এক বিশেষ সুযোগের পাশাপাশি যিহোবার লোক হওয়া দায়িত্বও নিয়ে আসে। কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে: ‘যিহোবা আমার কাছ থেকে যা আশা করেন, আমি কি তা করতে পারব? আমি যদি কখনো পাপে পতিত হই, তাহলে তিনি কি আমাকে প্রত্যাখ্যান করবেন? যিহোবার লোক হওয়া কি আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেবে?’ এই ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনা করা উপযুক্ত। কিন্তু, প্রথমে অন্য আরেকটা প্রশ্ন নিয়ে মনোযোগপূর্বক চিন্তা করা উপযুক্ত: যিহোবার লোক হওয়ার উপকারিতাগুলো কী?

যিহোবার লোক হওয়া—সুখের দিকে পরিচালিত করে

৩. যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে রাহবের সিদ্ধান্ত কীভাবে তাকে উপকৃত করেছিল?

যারা যিহোবার লোক হয়, তারা কি তাদের পরিস্থিতি থেকে উপকার লাভ করে? রাহব নামে একজন বেশ্যার ঘটনা বিবেচনা করুন, যিনি প্রাচীন যিরীহোতে বসবাস করতেন। নিঃসন্দেহে, তিনি কনানের দেবতাদের কলুষিত উপাসনার মধ্যে দিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা ইস্রায়েলকে যে-বিজয়গুলো প্রদান করেছিলেন সেই সম্বন্ধে তিনি যখন শুনেছিলেন, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবাই হলেন সত্য ঈশ্বর। তাই ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের রক্ষা করার জন্য তিনি নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন আর এভাবে নিজের ভবিষ্যৎকে তাদের হাতে রেখেছিলেন। বাইবেল বলে: “রাহব বেশ্যাও কি সেই প্রকারে কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা হইল না? সে ত দূতগণকে [“গুপ্তচরদের,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] অতিথি করিয়াছিল, এবং অন্য পথ দিয়া বাহিরে পাঠাইয়া দিয়াছিল।” (যাকোব ২:২৫) তিনি যখন ঈশ্বরের সেই শুচি লোকেদের অংশ হয়ে উঠেছিলেন, যারা প্রেম এবং ন্যায়ের পথে ঈশ্বরের ব্যবস্থার দ্বারা শিক্ষা লাভ করেছিল, তখন তিনি যে-উপকারগুলো লাভ করেছিলেন, সেই বিষয়ে কল্পনা করুন। তার অতীত জীবনধারা পরিত্যাগ করে তিনি নিশ্চয়ই কতই না সুখী হয়েছিলেন! তিনি একজন ইস্রায়েলীয়কে বিয়ে করেছিলেন এবং তার পুত্র বোয়সকে ঈশ্বরের একজন অসাধারণ লোক হিসেবে মানুষ করে তুলেছিলেন।—যিহো. ৬:২৫; রূৎ. ২:৪-১২; মথি ১:৫, ৬.

৪. কীভাবে রূৎ যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত থেকে উপকৃত হয়েছিলেন?

মোয়াবীয় রূৎও যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ছোটোবেলায় তিনি হয়তো কমোশ এবং মোয়াবের অন্যান্য দেবতার উপাসনা করতেন, কিন্তু তিনি সত্য ঈশ্বর যিহোবা সম্বন্ধে জেনেছিলেন এবং একজন ইস্রায়েলীয়কে বিয়ে করেছিলেন, যিনি তার দেশে আশ্রয়ের জন্য এসেছিলেন। (পড়ুন, রূতের বিবরণ ১:১-৬.) পরে, যখন রূৎ ও তার জা অর্পা তাদের শাশুড়ি নয়মীর সঙ্গে বৈৎলেহমে যাচ্ছিল, তখন নয়মী সেই দুজন যুবতীকে ফিরে যাওয়ার জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করেছিলেন। ইস্রায়েলে স্থায়ীভাবে বসবাস করা তাদের জন্য সহজ হবে না। বস্তুতপক্ষে, অর্পা ‘আপন লোকদের ও আপন দেবতার নিকটে ফিরিয়া গিয়াছিল’ কিন্তু রূৎ যাননি। রূৎ তার বিশ্বাস অনুসারে কাজ করেছিলেন এবং জানতেন যে, তিনি কার লোক হতে চান। তাই, তিনি নয়মীকে বলেছিলেন: “তোমাকে ত্যাগ করিয়া যাইতে, তোমার পশ্চাদ্গমন হইতে ফিরিয়া যাইতে, আমাকে অনুরোধ করিও না; তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব; এবং তুমি যেখানে থাকিবে, আমিও তথায় থাকিব; তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর।” (রূৎ. ১:১৫, ১৬) যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তার বাছাইয়ের কারণে রূৎ ঈশ্বরের সেই ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয়েছিলেন, যা বিধবা ও ভূমিহীন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছিল। যিহোবার পক্ষের নীচে তিনি সুখ, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা খুঁজে পেয়েছিলেন।

৫. যারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে, তাদের বিষয়ে আপনি কী লক্ষ করেছেন?

আপনি হয়তো এমন ব্যক্তিদের চেনেন, যারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করার পর, দশকের পর দশক ধরে বিশ্বস্তভাবে তাঁকে সেবা করে চলেছে। তাদের জিজ্ঞেস করুন যে, তাঁকে সেবা করার দ্বারা তারা কীভাবে উপকৃত হয়েছে। যদিও কেউই সমস্যামুক্ত নয়, কিন্তু প্রমাণ পুরোপুরিভাবে গীতরচকের এই কথাগুলোকে সমর্থন করে: “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই জাতি, সদাপ্রভু যাহার ঈশ্বর।”—গীত. (সামসঙ্গীত-মালা) ১৪৪:১৫.

যিহোবার যুক্তিযুক্ত প্রত্যাশাগুলো

৬. যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা আশা করেন, তা আমরা করতে পারব কি না, সেই ব্যাপারে কেন আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়?

আপনি হয়তো ভেবেছেন যে, যিহোবা আপনার কাছ থেকে যা আশা করেন, আপনি তা পূরণ করতে পারবেন কি না। ঈশ্বরের একজন দাস হওয়ার, তাঁর আইন অনুসারে জীবনযাপন করার এবং তাঁর নামে কথা বলার প্রত্যাশা করাকে আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মোশিকে যখন ইস্রায়েলীয়দের এবং মিশরের রাজার কাছে কথা বলতে পাঠানো হয়েছিল, তখন তিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু মোশির কাছ থেকে ঈশ্বর যা আশা করেছিলেন, সেই ক্ষেত্রে তিনি অযৌক্তিক ছিলেন না। “কি করিত হইবে” তা যিহোবা ‘তাহাকে জানাইয়াছিলেন।’ (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩:১১; ৪:১, ১০, ১৩-১৫.) যে-সাহায্য প্রদান করা হয়েছিল মোশি তা গ্রহণ করেছিলেন বলে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পাদন করার আনন্দ তিনি উপভোগ করেছিলেন। একইভাবে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা আশা করেন, সেই ব্যাপারেও তিনি ততখানিই যুক্তিবাদী। তিনি আমাদের অসিদ্ধ স্বভাব সম্বন্ধে জানেন আর তাই তিনি আমাদের সাহায্য করতে চান। (গীত. ১০৩:১৪) যিশুর একজন অনুসারী হিসেবে ঈশ্বরকে সেবা করা ভারগ্রস্ত বোধ করার পরিবর্তে বরং সতেজতাদায়ক, কারণ এই ধরনের এক জীবন অন্যদের উপকৃত করে এবং যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে। যিশু বলেছিলেন: “আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম” বা সতেজতা “দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত।”—মথি ১১:২৮, ২৯.

৭. কেন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা আপনার কাছ থেকে যা আশা করেন তা করতে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন?

শক্তির জন্য যতক্ষণ আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করব, তিনি সবসময় আমাদেরকে প্রয়োজনীয় উৎসাহ জোগাবেন। উদাহরণস্বরূপ, যিরমিয় হয়তো স্বভাবগতভাবে সাহসী ব্যক্তি ছিলেন না। তাই, যিহোবা যখন তাকে তাঁর ভাববাদী হওয়ার কার্যভার দিয়েছিলেন, তখন যিরমিয় বলেছিলেন: “হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, দেখ, আমি কথা কহিতে জানি না, কেননা আমি বালক।” পরে তিনি এমনকী বলেছিলেন: “তাঁহার নামে আর কিছু কহিব না।” (যির. ১:৬; ২০:৯) কিন্তু, যিহোবার উৎসাহে যিরমিয় ৪০ বছর ধরে এক অপ্রিয় বার্তা প্রচার করতে পেরেছিলেন। এই কথাগুলোর দ্বারা যিহোবা বার বার তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন: “তোমার ত্রাণের ও তোমার উদ্ধারের জন্য আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—যির. ১:৮, ১৯; ১৫:২০.

৮. কীভাবে আমরা দেখাই যে, আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি?

ঠিক যেমন মোশি এবং যিরমিয়কে যিহোবা শক্তি জুগিয়েছিলেন, তেমনই আজকে খ্রিস্টানদের কাছ থেকে তিনি যা আশা করেন তা করতে তিনি আমাদের সাহায্য করতে পারেন। মুখ্য বিষয়টা হল ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা। বাইবেল বলে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতো. ৩:৫, ৬) যিহোবা তাঁর বাক্য এবং মণ্ডলীর মাধ্যমে যে-সাহায্য জোগান তা যখন আমরা গ্রহণ করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁর ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করি। আমরা যদি যিহোবাকে জীবনের পথে আমাদের পদক্ষেপকে পরিচালনা দিতে দিই, তাহলে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই আমাদের বাধা দিতে পারবে না।

যিহোবা তাঁর লোকেদের ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে যত্ন নিয়ে থাকেন

৯, ১০. একানব্বই গীত কোন ধরনের সুরক্ষার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে?

যিহোবার কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করার জন্য তাদের সিদ্ধান্তের বিষয় বিবেচনা করার সময়, কেউ কেউ হয়তো পাপ করে ফেলার বিপদ, অযোগ্য হয়ে পড়া এবং যিহোবার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়া সম্বন্ধে চিন্তা করেছে। আনন্দের বিষয় হল যে, তাঁর সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ককে রক্ষা করার জন্য যে-সুরক্ষার প্রয়োজন, যিহোবা সেগুলোর সবই আমাদের জুগিয়ে থাকেন। আসুন আমরা দেখি যে, গীতসংহিতার ৯১ গীতে কীভাবে তা প্রকাশ করা হয়েছে।

১০ এই কথাগুলো দিয়ে গীতটি শুরু হয়: “যে ব্যক্তি পরাৎপরের অন্তরালে থাকে, সে সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে। আমি সদাপ্রভুর বিষয়ে বলিব, ‘তিনি আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ, আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহাতে নির্ভর করিব’। হাঁ, তিনিই তোমাকে ব্যাধের ফাঁদ হইতে, ও সর্ব্বনাশক মারী হইতে রক্ষা করিবেন।” (গীত. ৯১:১-৩) লক্ষ করুন যে, ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের সুরক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর ওপর নির্ভর করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯১:৯, ১৪.) তিনি কোন ধরনের সুরক্ষার বিষয়ে বুঝিয়েছিলেন? যিহোবা তাঁর কিছু প্রাচীন দাসকে শারীরিকভাবে সুরক্ষা করেছিলেন—কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাত মশীহের দিকে পরিচালনাকারী বংশধারাকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্যান্য অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, অত্যাচার করা হয়েছিল এবং দিয়াবলের নৃশংস আক্রমণের দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ১১:৩৪-৩৯) তারা সহ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহস লাভ করেছিল কারণ তাদের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলার বিপদ থেকে যিহোবা তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষা জুগিয়েছিলেন। তাই, গীতসংহিতার ৯১ গীতটিকে আধ্যাত্মিক সুরক্ষার এক প্রতিজ্ঞা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

১১. ‘পরাৎপরের অন্তরাল’ কী এবং ঈশ্বর কাদের এতে সুরক্ষা জোগান?

১১ তাই, গীতরচকের দ্বারা উল্লেখিত ‘পরাৎপরের অন্তরাল’ হল আধ্যাত্মিক সুরক্ষার এক রূপক স্থান। ঈশ্বরের অতিথি হিসেবে যারা তাঁর সঙ্গে এতে আশ্রয় নেয় তারা তাদের বিশ্বাসের ও ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালোবাসার পথে হুমকি স্বরূপ এমন যেকোনোকিছু ও যেকারো থেকে নিরাপদ থাকে। (গীত. ১৫:১, ২; ১২১:৫) এটা হল এক অন্তরাল কারণ অবিশ্বাসীরা তা নির্ণয় করতে পারে না। এখানে যিহোবা সেই লোকেদের সুরক্ষা জোগান বস্তুতপক্ষে যারা বলে: ‘তুমি আমার ঈশ্বর, আমি তোমাতে নির্ভর করিব।’ আমরা যদি এই আশ্রয়স্থানে থাকি, তাহলে আমাদের সেই ‘ব্যাধ’ শয়তানের ফাঁদে পড়ে ঈশ্বরের অনুমোদন হারিয়ে ফেলার ব্যাপারে অযথা দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই।

১২. কোন বিপদগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ হয়?

১২ কোন বিপদগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্কের ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ হয়? গীতরচক বেশ কয়েকটা বিপদের বিষয়ে উল্লেখ করেন আর সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল, “তিমির-বিহারী মারী . . . [এবং] মধ্যাহ্নের সাংঘাতিক ব্যাধি।” (গীত. ৯১:৫, ৬) “ব্যাধ” অনেককে স্বাধীন হওয়ার স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার ফাঁদে ফেলেছে। (২ করি. ১১:৩) সে লোভ, গর্ব এবং বস্তুবাদিতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অন্যদেরও ফাঁদে ফেলে। আরও অন্যান্যদের সে দেশপ্রেম, বিবর্তনবাদ এবং মিথ্যা ধর্মের মতো দর্শনবিদ্যার দ্বারা ভ্রান্ত করে। (কল. ২:৮) আর অনেকে অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফাঁদে পতিত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হয়েছে। আধ্যাত্মিকভাবে এইরকম ক্ষতিকর মারী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম হারিয়ে ফেলতে পরিচালিত করেছে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৯১:৭-১০; মথি ২৪:১২.

ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালোবাসাকে রক্ষা করা

১৩. আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য হুমকি স্বরূপ বিপদগুলো থেকে যিহোবা কীভাবে আমাদের সুরক্ষা জোগান?

১৩ এই ধরনের আধ্যাত্মিক বিপদগুলো থেকে যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা জোগান? গীতটি বলে: “তিনি আপন দূতগণকে তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিবেন, যেন তাঁহারা তোমার সমস্ত পথে তোমাকে রক্ষা করেন।” (গীত. ৯১:১১) স্বর্গীয় দূতেরা আমাদের পরিচালনা এবং সুরক্ষা জোগায় যাতে আমরা সুসমাচার প্রচার করতে পারি। (প্রকা. ১৪:৬) স্বর্গদূতেরা ছাড়াও, খ্রিস্টান প্রাচীনরা দৃঢ়ভাবে শাস্ত্র থেকে শিক্ষা দেওয়ার দ্বারা আমাদের মিথ্যা যুক্তির দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সুরক্ষা করে। তারা এমন যেকোনো ব্যক্তিকে আলাদা আলাদাভাবে সাহায্য জোগাতে পারে, যারা জাগতিক মনোভাবকে কাটিয়ে ওঠার জন্য সংগ্রাম করছে। (তীত ১:৯; ১ পিতর ৫:২) এ ছাড়া, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” বিবর্তনবাদের শিক্ষা, অনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রলোভন, ধন ও খ্যাতির পিছনে ছোটা এবং আরও অন্যান্য অসংখ্য ক্ষতিকর আকাঙ্ক্ষা ও প্রভাব থেকে আমাদের সুরক্ষা করার জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জুগিয়ে থাকে। (মথি ২৪:৪৫) সেই বিপদগুলোর কয়েকটাকে প্রতিরোধ করতে কী আপনাকে সাহায্য করেছে?

১৪. ঈশ্বর যে-সুরক্ষা জোগান কীভাবে আমরা সেটার সদ্‌ব্যবহার করতে পারি?

১৪ ঈশ্বরের সুরক্ষার “অন্তরালে” থাকার জন্য আমাদের কী করতে হবে? ঠিক যেমন শারীরিক বিপদগুলো যেমন, দুর্ঘটনা, দুষ্কৃতী কিংবা সংক্রমণের হাত থেকে নিয়মিতভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হয়, তেমনই আমাদের আধ্যাত্মিক বিপদগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ক্রমাগত কাজ করতে হবে। তাই, আমাদের নিয়মিতভাবে সেই নির্দেশনার সদ্‌ব্যবহার করা উচিত, যে-নির্দেশনা যিহোবা আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনা এবং মণ্ডলীর সভা ও সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে জুগিয়ে থাকেন। আমরা প্রাচীনদের পরামর্শ খোঁজার চেষ্টা করি। আর আমরা কি আমাদের ভাইবোনদের দ্বারা প্রদর্শিত বিভিন্ন গুণের দ্বারা উপকৃত হই না? বস্তুতপক্ষে, মণ্ডলীর সঙ্গে আমাদের মেলামেশা আমাদের জ্ঞানী হতে সাহায্য করে।—হিতো. ১৩:২০; পড়ুন, ১ পিতর ৪:১০.

১৫. কেন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা আপনাকে এমন যেকোনো কিছু থেকে সুরক্ষা জোগাতে পারেন, যা তাঁর অনুমোদন হারানোর কারণ হতে পারে?

১৫ আমাদের এই বিষয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণই নেই যে, যিহোবা আমাদের এমন যেকোনো বিষয় থেকে সুরক্ষা জোগাতে পারেন, যা তাঁর অনুমোদন হারানোর কারণ হতে পারে। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) তিনি মণ্ডলীকে শক্তিশালী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন, যাদের লক্ষ্য সাধারণত আমাদের হত্যা করা নয় বরং আমাদের পবিত্র ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদেরকে পৃথক করে দেওয়া। যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।”—যিশা. ৫৪:১৭.

কে আমাদের স্বাধীনতা প্রদান করেন?

১৬. কেন জগৎ আমাদের স্বাধীনতা দিতে পারে না?

১৬ যিহোবার লোক হওয়া কি আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেবে? এর বিপরীতে, জগতের লোক হওয়াই আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেবে। জগৎ যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং এমন এক নিষ্ঠুর দেবের দ্বারা শাসিত, যে লোকেদের দাস করে রাখে। (যোহন ১৪:৩০) উদাহরণস্বরূপ, শয়তানের বিধিব্যবস্থা লোকেদের কাছ থেকে তাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক চাপকে ব্যবহার করে থাকে। (তুলনা করুন, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৬, ১৭.) এ ছাড়া, লোকেদের দাস করার ক্ষেত্রে পাপেরও প্রতারণামূলক ক্ষমতা রয়েছে। (যোহন ৮:৩৪; ইব্রীয় ৩:১৩) তাই, এমনকী যদিও অবিশ্বাসীরা যিহোবার শিক্ষাগুলোর বিপরীত এক জীবনধারাকে উন্নীত করার সময় স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করতে পারে, কিন্তু যেকেউ তাদের কথা শোনে, তারা শীঘ্র দেখতে পাবে যে, তারা এক পাপপূর্ণ ও অধঃপতিত জীবনধারার দাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে।—রোমীয় ১:২৪-৩২.

১৭. যিহোবা আমাদের কোন ধরনের স্বাধীনতা প্রদান করেন?

১৭ অন্যদিকে, আমাদের ক্ষতি করতে পারে এমন যেকোনো কিছু থেকে যিহোবা আমাদের মুক্ত করবেন, যদি আমরা আস্থা সহকারে নিজেদেরকে তাঁর কাছে অর্পণ করি। কিছু কিছু দিক দিয়ে আমাদের পরিস্থিতি সেই ব্যক্তির মতো, যিনি তার জীবনকে এমন একজন দক্ষ সার্জনের হাতে সমর্পণ করেন, যিনি তাকে জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারবেন। আমাদের সকলেরই জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ এক অবস্থা—উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ—রয়েছে। একমাত্র খ্রিস্টের বলিদানের ভিত্তিতে যদি আমরা নিজেদেরকে আস্থা সহকারে যিহোবার কাছে অর্পণ করি, তাহলেই আমরা পাপের প্রভাবগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার এবং অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা রাখতে পারি। (যোহন ৩:৩৬) ঠিক যেমন একজন সার্জনের খ্যাতি সম্বন্ধে আমরা যতই জানব, তার প্রতি আমাদের আস্থা ততই বৃদ্ধি পাবে, তেমনই যিহোবা সম্বন্ধে আমরা যত শিখতে থাকব তাঁর প্রতি আমাদের নির্ভরতা তত বৃদ্ধি পাবে। তাই, আমরা মনোযোগপূর্বক ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে চলি কারণ তা আমাদের এমন এক উপায়ে তাঁকে ভালোবাসতে সাহায্য করবে, যা তাঁর লোক হওয়ার কারণে আমাদের যেকোনো ভয়কে দূর করে দেবে।—১ যোহন ৪:১৮.

১৮. যারা যিহোবার লোক হয় তারা কীরকম ফলাফল লাভ করবে?

১৮ যিহোবা সমস্ত লোককে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাঁর বাক্য বলে: “জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর।” (দ্বিতীয়. ৩০:১৯, ২০) তিনি চান যেন আমরা স্বেচ্ছায় তাঁকে সেবা করা বেছে নিয়ে তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রদর্শন করি। আমরা যে-ঈশ্বরকে ভালোবাসি তাঁর লোক হওয়া আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার পরিবর্তে বরং নিশ্চিতভাবে আমাদের সুখী করবে এবং সুখী রাখবে।

১৯. কেন যিহোবার লোক হওয়া এক অযাচিত দয়া?

১৯ পাপী হিসেবে, আমরা একজন সিদ্ধ ঈশ্বরের লোক হওয়ার যোগ্য নই। একমাত্র ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়াই এটাকে সম্ভবপর করে। (২ তীম. ১:৯) তাই, পৌল লিখেছিলেন: “যদি আমরা জীবিত থাকি, তবে প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] উদ্দেশে জীবিত থাকি; এবং যদি মরি, তবে প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] উদ্দেশে মরি। অতএব আমরা জীবিত থাকি বা মরি, আমরা যিহোবারই।” (রোমীয় ১৪:৮) এটা নিশ্চিত যে, যিহোবার লোক হওয়া বেছে নেওয়ার কারণে আমরা কখনোই আপশোস করব না।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• যিহোবার লোক হওয়ার উপকারগুলো কী?

• ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যা আশা করেন, কেন আমরা তা করতে সক্ষম?

• কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য সুরক্ষা জুগিয়ে থাকেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অন্যদের জিজ্ঞেস করুন যে, যিহোবার লোক হওয়ার দ্বারা তারা কীভাবে উপকৃত হয়েছে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

কয়েকটা উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা সুরক্ষা জোগান?