সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক পাল ও এক পালক

এক পাল ও এক পালক

এক পাল ও এক পালক

“তোমরা যত জন আমার পশ্চাদ্গামী হইয়াছ . . . তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।”—মথি ১৯:২৮.

১. কীভাবে যিহোবা অব্রাহামের বংশের লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন আর কেন তার মানে এই নয় যে, তিনি অন্য সব জাতির লোকেদের পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিলেন?

 যিহোবা অব্রাহামকে ভালোবাসতেন, তাই তিনি অব্রাহামের বংশের লোকেদের প্রতি অনুগত প্রেম দেখিয়েছিলেন। ১,৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি অব্রাহামের বংশোদ্ভূত ইস্রায়েল জাতিকে তাঁর মনোনীত লোক, তাঁর “নিজস্ব প্রজা” হিসেবে দেখেছিলেন। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৬.) তার মানে কি এই ছিল যে, যিহোবা অন্য জাতির লোকেদের পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিলেন? না। সেই সময়ে ন-ইস্রায়েলীয়রা, যারা যিহোবাকে উপাসনা করতে চেয়েছিল, তাদেরকে সেই বিশেষ জাতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদেরকে সেই জাতির অংশ হিসেবে দেখা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নিজ জাতির লোকের মতো আচরণ করতে হয়েছিল। (লেবীয়. ১৯:৩৩, ৩৪) আর তাদের যিহোবার সমস্ত আইন মেনে চলার প্রয়োজন ছিল।—লেবীয়. ২৪:২২.

২. যিশু কোন চমকপ্রদ ঘোষণা করেছিলেন আর তা কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে?

কিন্তু, যিশু তাঁর দিনের যিহুদিদের উদ্দেশে এই চমকপ্রদ ঘোষণা করেছিলেন: “তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪৩) কাদের নিয়ে এই নতুন জাতি গঠিত হবে আর এই পরিবর্তনের দ্বারা আজকে আমরা কীভাবে প্রভাবিত হই?

নতুন জাতি

৩, ৪. (ক) কীভাবে প্রেরিত পিতর এই নতুন জাতিকে শনাক্ত করেছিলেন? (খ) কাদের নিয়ে এই নতুন জাতি গঠিত হয়?

প্রেরিত পিতর স্পষ্টভাবে এই নতুন জাতিকে শনাক্ত করেছিলেন। তিনি তাঁর সহখ্রিস্টানদের এই কথাগুলো লিখেছিলেন: “তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।” (১ পিতর ২:৯) ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী, যে-জন্মগত যিহুদিরা যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল, তারাই ছিল সেই নতুন জাতির প্রথম সদস্য। (দানি. ৯:২৭ক; মথি ১০:৬) পরে অনেক ন-ইস্রায়েলীয়ও এই জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, কারণ পিতর আরও বলেছিলেন: “পূর্ব্বে তোমরা ‘প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ।’”—১ পিতর ২:১০.

এখানে পিতর কাদের উদ্দেশে কথা বলছিলেন? তার চিঠির শুরুতে তিনি বলেন: “যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, [ঈশ্বর] জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন; সেই দয়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে।” (১ পিতর ১:৩, ৪) তাই, এই নতুন জাতি সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত, যাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে। তারা হল ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল।’ (গালা. ৬:১৬) একটা দর্শনে প্রেরিত যোহন দেখেছিলেন যে, এই আত্মিক ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা হচ্ছে ১,৪৪,০০০ জন। তারা “ঈশ্বরের ও মেষশাবকের নিমিত্ত অগ্রিমাংশ বলিয়া মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে” আর তারা “যাজক” হিসেবে সেবা করবে এবং “সহস্র বৎসর [যিশুর] সঙ্গে রাজত্ব করিবে।”—প্রকা. ৫:১০; ৭:৪; ১৪:১, ৪; ২০:৬; যাকোব ১:১৮.

অন্যেরাও কি এতে অন্তর্ভুক্ত?

৫. (ক) ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ অভিব্যক্তিটি কাদেরকে বোঝায়? (খ) কেন ‘ইস্রায়েল’ অভিব্যক্তিটির অর্থ সবসময় সীমিত নয়?

তাই এটা স্পষ্ট যে, গালাতীয় ৬:১৬ পদে লিপিবদ্ধ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ বাক্যাংশটি একমাত্র অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরই বোঝায়। কিন্তু, এমন আরও উদাহরণ কি রয়েছে, যেখানে যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে এক চিত্র বা দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যেটাতে অভিষিক্তরা ছাড়াও অন্য খ্রিস্টানরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে? উত্তরটা বিশ্বস্ত প্রেরিতদের উদ্দেশে লেখা যিশুর এই কথাগুলোতে পাওয়া যেতে পারে: “আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” (লূক ২২:২৮-৩০) এটা খ্রিস্টের সহস্র বছরের শাসনের সময়ে “পুনঃসৃষ্টিকালে” বা পুনরুদ্ধারের সময়ে ঘটবে।—পড়ুন, মথি ১৯:২৮.

৬, ৭. মথি ১৯:২৮ ও লূক ২২:৩০ পদের প্রসঙ্গে ‘ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ’ অভিব্যক্তিটি কাদের বিষয়ে উল্লেখ করে?

সহস্র বছরের রাজত্বের সময় ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি স্বর্গীয় রাজা, যাজক ও বিচারক হিসেবে সেবা করবে। (প্রকা. ২০:৪) তারা কাদের বিচার করবে এবং কাদের ওপর শাসন করবে? মথি ১৯:২৮ পদে এবং লূক ২২:৩০ পদে আমাদের বলা হয়েছে যে, তারা “ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের” বিচার করবে। এই প্রসঙ্গে ‘ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ’ কাদের চিত্রিত করে? তারা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে চিত্রিত করে, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে—যারা যিশুর বলিদানে বিশ্বাস রাখে কিন্তু রাজকীয় যাজক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত নয়। (লেবি বংশকে জন্মগত ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।) এই প্রসঙ্গের মধ্যে ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের দ্বারা যে-ব্যক্তিদের চিত্রিত করা হয়েছে, তারা ১,৪৪,০০০ জনের যাজকীয় সেবা থেকে আধ্যাত্মিক উপকার লাভ করবে। এই উপকার ভোগকারী অযাজকীয় ব্যক্তিরাও ঈশ্বরের লোক আর তিনি তাদের ভালোবাসেন ও তাদের গ্রহণ করে নেন। তাই এটা যথার্থ যে, তাদেরকে তাঁর প্রাচীনকালের লোকেদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

উপযুক্তভাবেই, প্রেরিত যোহন ১,৪৪,০০০ জন আত্মিক ইস্রায়েলীয়কে মহাক্লেশের আগে স্থায়ীভাবে মুদ্রাঙ্কিত হতে দেখার পর, অগণিত ‘বিস্তর লোককেও’ দেখেছিলেন, যারা ‘প্রত্যেক জাতি হইতে’ আসে। (প্রকা. ৭:৯) তারা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়ে খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদের সঙ্গে অগণিত পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা যুক্ত হবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রকা. ২০:১৩) এই সমস্ত ব্যক্তি “ইস্রায়েলের” রূপক ‘দ্বাদশ বংশ’ গঠন করবে, যারা যিশু ও তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহশাসকের দ্বারা বিচারিত হবে।—প্রেরিত ১৭:৩১; ২৪:১৫; প্রকা. ২০:১২.

৮. কীভাবে বার্ষিক প্রায়শ্চিত্ত দিনের ঘটনাগুলো ১,৪৪,০০০ জন ও বাকি মানবজাতির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের পূর্বাভাস দেয়?

এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র ব্যক্তি ও বাকি মানবজাতির মধ্যে বিদ্যমান এই সম্পর্ককে বার্ষিক প্রায়শ্চিত্ত দিনের ঘটনাগুলোর দ্বারা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। (লেবীয়. ১৬:৬-১০) সবচেয়ে প্রথমে, মহাযাজককে “নিজের ও নিজ কুলের নিমিত্ত” পাপার্থক বলি হিসেবে এক গোবৎস উৎসর্গ করতে হতো। তাই, যিশুর বলিদান প্রথমত তাঁর সহযাজকদের কুলের প্রতি অর্থাৎ যারা তাঁর সঙ্গে স্বর্গে সেবা করবে, তাদের প্রতি প্রযোজ্য হয়। এ ছাড়া, প্রাচীনকালে প্রায়শ্চিত্ত দিনে, বাকি ইস্রায়েলীয়দের পাপের জন্য দুটো ছাগ জোগানো হতো। এই প্রসঙ্গে, যাজকীয় গোষ্ঠী ১,৪৪,০০০ জনকে চিত্রিত করে আর বাকি ইস্রায়েল পার্থিব আশা রয়েছে এমন সমস্ত ব্যক্তিকে চিত্রিত করে। এই প্রয়োগ দেখায় যে, মথি ১৯:২৮ পদে লিপিবদ্ধ ‘ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ’ অভিব্যক্তিটি যিশুর আত্মায়জাত সহযাজকদের নয় বরং অন্যান্য এমন সমস্ত ব্যক্তিকে বোঝায়, যারা যিশুর বলিদানে বিশ্বাস রাখে। *

৯. যিহিষ্কেলের দর্শনে যাজকরা কাদের চিত্রিত করে আর অযাজকীয় ইস্রায়েলীয়রা কাদের চিত্রিত করে?

আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। ভাববাদী যিহিষ্কেলকে যিহোবার মন্দির সম্বন্ধে এক বিস্তারিত দর্শন দেওয়া হয়েছিল। (যিহি., ৪০-৪৮ অধ্যায়) সেই দর্শনে, যাজকরা মন্দিরে কাজ করত, নির্দেশনা প্রদান করত এবং যিহোবার পরামর্শ ও সংশোধন লাভ করত। (যিহি. ৪৪:২৩-৩১) সেই একই পটভূমিতে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যরা উপাসনা করতে ও বলি উৎসর্গ করতে আসত। (যিহি. ৪৫:১৬, ১৭) তাই, এই প্রসঙ্গে যাজকরা অভিষিক্তদের চিত্রিত করে আর অন্যদিকে অযাজকীয় গোষ্ঠী থেকে আসা ইস্রায়েলীয়রা সেই ব্যক্তিদের চিত্রিত করে, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে। এই দর্শন জোর দেয় যে, দুটো দল একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, যেখানে যাজকীয় শ্রেণী বিশুদ্ধ উপাসনায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।

১০, ১১. (ক) যিশুর কথাগুলোতে বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো কোন পরিপূর্ণতা আমরা লক্ষ করেছি? (খ) আরও মেষ সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?

১০ যিশু “আরও মেষ” সম্বন্ধে বলেছিলেন, যারা তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ মতো একই “খোঁয়াড়ের” হবে না। (যোহন ১০:১৬; লূক ১২:৩২) তিনি বলেছিলেন: “তাহাদিগকেও আমার আনিতে হইবে, এবং তাহারা আমার রব শুনিবে, তাহাতে এক পাল, ও এক পালক হইবে।” এই কথাগুলোর পরিপূর্ণতা দেখা বিশ্বাসকে কতই না শক্তিশালী করেছে! দুই দলের লোকেরা একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে—অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ক্ষুদ্র দল এবং আরও মেষের বিস্তর লোক। (পড়ুন, সখরিয় ৮:২৩.) যদিও আরও মেষ রূপকভাবে আধ্যাত্মিক মন্দিরের ভিতরের প্রাঙ্গণে সেবা করে না, তবে তারা সেই মন্দিরের বাইরের প্রাঙ্গণে সেবা করে থাকে।

১১ কিন্তু, যিহোবা যেহেতু মাঝে মাঝে এই আরও মেষ হিসেবে চিত্রিত করার জন্য প্রাচীন ইস্রায়েলের অযাজকীয় সদস্যদের ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তাদেরও কি স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করা উচিত? এখন আমরা এই প্রশ্নের উত্তর বিবেচনা করব।

নতুন চুক্তি

১২. যিহোবা কোন নতুন ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন?

১২ যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য এক নতুন ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “সেই সকল দিনের পর আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত এই নিয়ম স্থির করিব, . . . আমি তাহাদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা দিব, ও তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব; এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।” (যির. ৩১:৩১-৩৩) এই নতুন নিয়মের (বা চুক্তির) মাধ্যমে অব্রাহামের কাছে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞা এক গৌরবান্বিত ও স্থায়ী পরিপূর্ণতা লাভ করবে।—পড়ুন, আদিপুস্তক ২২:১৮.

১৩, ১৪. (ক) কারা নতুন চুক্তির অংশী? (খ) কারা উপকার ভোগকারী ব্যক্তি এবং কীভাবে তারা এই নতুন চুক্তিকে “দৃঢ় করিয়া রাখে”?

১৩ যিশু তাঁর মৃত্যুর আগে রাতে এই নতুন চুক্তির বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়।” (লূক ২২:২০; ১ করি. ১১:২৫) সব খ্রিস্টানই কি এই নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত? না। কেউ কেউ, যেমন যে-প্রেরিতরা সেদিন সন্ধ্যায় সেই পানপাত্র থেকে পান করেছিল, তারা হল এই নতুন চুক্তির অংশী। * যিশু তাঁর রাজ্যে তাঁর সঙ্গে একত্রে শাসন করার জন্য তাদের সঙ্গে আরেকটা চুক্তি করেছিলেন। (লূক ২২:২৮-৩০) তারা যিশুর সঙ্গে তাঁর রাজ্যে থাকবে।—লূক ২২:১৫, ১৬.

১৪ সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা তাঁর রাজ্যের অধীনে পৃথিবীতে বাস করবে? তারা হল নতুন চুক্তির উপকার ভোগকারী ব্যক্তি। (গালা. ৩:৮, ৯) যদিও অংশী নয় কিন্তু তারা এর চাহিদাগুলো মেনে চলে এই চুক্তিকে “দৃঢ় করিয়া রাখে,” ঠিক যেমন ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “যে বিজাতি-সন্তানগণ সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিবার জন্য, তাঁহার নামের প্রতি প্রেম দেখাইবার জন্য ও তাঁহার দাস হইবার জন্য সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়, অর্থাৎ যে কেহ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার নিয়ম দৃঢ় করিয়া রাখে, তাহাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্ব্বতে আনিব, এবং আমার প্রার্থনা-গৃহে আনন্দিত করিব।” এরপর যিহোবা বলেন: “যেহেতু আমার গৃহ সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ বলিয়া আখ্যাত হইবে।”—যিশা. ৫৬:৬, ৭.

প্রতীকগুলো কাদের গ্রহণ করা উচিত?

১৫, ১৬. (ক) নতুন চুক্তির অংশী ব্যক্তিদের কোন সুযোগ রয়েছে বলে প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেন? (খ) পার্থিব আশা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কেন স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করা উচিত নয়?

১৫ নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের “পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিতে সাহস” রয়েছে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১০:১৫-২০.) তারাই সেই ব্যক্তি, যারা “অকম্পনীয় রাজ্য পাইবার অধিকারী।” (ইব্রীয় ১২:২৮) তাই, যারা স্বর্গে যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা ও যাজক হবে, শুধুমাত্র তাদেরই সেই “পানপাত্র” থেকে পান করা উচিত, যেটা নতুন চুক্তিকে চিত্রিত করে। নতুন চুক্তির অংশী এই ব্যক্তিরা হল তারা, যারা মেষশাবকের সঙ্গে বিবাহের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। (২ করি. ১১:২; প্রকা. ২১:২, ৯) অন্য সকলে, যারা প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত থাকে, তারা হল সম্মাননীয় দর্শক ও তারা প্রতীকগুলো গ্রহণ করে না।

১৬ এ ছাড়া, পৌল আমাদের এও বুঝতে সাহায্য করেন যে, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে তারা স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করে না। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন: “কারণ যত বার তোমরা এই রুটী ভোজন কর, এবং এই পানপাত্রে পান কর, তত বার প্রভুর মৃত্যু প্রচার করিয়া থাক, যে পর্য্যন্ত তিনি না আইসেন।” (১ করি. ১১:২৬) প্রভু কখন ‘আসিবেন’? সেই সময়, যখন তিনি তাঁর অভিষিক্ত কনে শ্রেণীর শেষ সদস্যকে তাদের স্বর্গীয় বাসস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসবেন। (যোহন ১৪:২, ৩) তাই এটা স্পষ্ট যে, প্রভুর সান্ধ্যভোজের বার্ষিক উদ্‌যাপন অনন্তকাল ধরে চলবে না। নারীর বংশের ‘অবশিষ্ট লোকেরা,’ যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে, তারা এই ভোজে ক্রমাগত অংশ নিয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সকলে তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবে। (প্রকা. ১২:১৭) কিন্তু, যারা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে, তাদের যদি প্রতীকগুলো গ্রহণ করার অধিকার দান করা হতো, তাহলে স্মরণার্থের এই ভোজ চিরকাল ধরে উদ্‌যাপন করার প্রয়োজন হতো।

‘তাহারা আমার প্রজা হইবে’

১৭, ১৮. যিহিষ্কেল ৩৭:২৬, ২৭ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে?

১৭ যিহোবা তাঁর লোকেদের একতা সম্বন্ধে এই কথা বলে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “আমি তাহাদের জন্য শান্তির এক নিয়ম স্থির করিব; তাহাদের সহিত তাহা চিরস্থায়ী নিয়ম হইবে; আমি তাহাদিগকে বসাইব ও বাড়াইব, এবং আপন ধর্ম্মধাম চিরকালের জন্য তাহাদের মধ্যে স্থাপন করিব। আর আমার আবাস তাহাদের উপরে অবস্থিতি করিবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।”—যিহি. ৩৭:২৬, ২৭.

১৮ ঈশ্বরের সমস্ত প্রজা এই চমৎকার প্রতিজ্ঞা, এই খ্রিস্টীয় শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণতা থেকে উপকৃত হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করতে পারে। হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর সমস্ত বাধ্য দাসের জন্য শান্তির নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। তাঁর আত্মার ফল তাদের মধ্যে স্পষ্ট দেখা যায়। তাঁর ধর্মধাম, যা বিশুদ্ধ খ্রিস্টীয় উপাসনাকে চিত্রিত করে, তা তাদের মধ্যেই রয়েছে। তারা সত্যিই তাঁর প্রজা হয়ে উঠেছে, কারণ তারা সব ধরনের প্রতিমাপূজা পরিত্যাগ করেছে এবং যিহোবাকেই একমাত্র ঈশ্বর করেছে, যাঁকে তারা উপাসনা করে।

১৯, ২০. সেই ব্যক্তিদের মধ্যে কারা অন্তর্ভুক্ত, যাদের যিহোবা “আমার প্রজা” বলে ডাকেন আর নতুন চুক্তি কী সম্ভবপর করে?

১৯ আমাদের সময়ে এই দুই দলের একত্রিত হতে দেখা কতই না রোমাঞ্চকর! যদিও বৃদ্ধিরত বিস্তর লোকের স্বর্গীয় আশা নেই, কিন্তু যাদের সেই আশা রয়েছে, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পেরে তারা গর্ববোধ করে থাকে। তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তা করার দ্বারা তারা সেই ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয়, যাদেরকে যিহোবা “আমার প্রজা” ডাকেন। তাদের প্রতি আমরা এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা দেখতে পাই: “সেই দিনে অনেক জাতি সদাপ্রভুতে আসক্ত হইবে, আমার প্রজা হইবে; এবং আমি তোমার মধ্যে বাস করিব।”—সখ. ২:১১; ৮:২১; পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:২২; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

২০ এই নতুন চুক্তির মাধ্যমে যিহোবা এই সমস্ত কিছু করা সম্ভবপর করেছেন। বিভিন্ন জাতি থেকে লক্ষ লক্ষ লোক যিহোবার অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোকেদের অংশ হয়ে উঠেছে। (মীখা ৪:১-৫) তারা সেই চুক্তির ব্যবস্থাদি মেনে নিয়ে এবং এর চাহিদাগুলোর প্রতি বাধ্য থেকে সবসময় সেই চুক্তিকে দৃঢ় করে ধরে রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ। (যিশা. ৫৬:৬, ৭) তা করার দ্বারা তারা ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সঙ্গে ক্রমাগত শান্তি লাভ করার প্রচুর আশীর্বাদ উপভোগ করে। আপনিও যেন একইরকম আশীর্বাদ উপভোগ করেন—এখন ও চিরকালের জন্য!

[পাদটীকাগুলো]

^ অনুরূপভাবে, অভিষিক্তদের প্রাথমিকভাবে “মণ্ডলী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। (ইব্রীয় ১২:২৩) কিন্তু, “মণ্ডলী” শব্দটির অন্য অর্থও থাকতে পারে, এটা সমস্ত খ্রিস্টানকে নির্দেশ করে, তা তাদের যে-আশাই থাকুক না কেন।—২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২১-২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ যিশু হলেন সেই চুক্তির মধ্যস্থ, কোনো অংশী নন। তাই, মধ্যস্থ হিসেবে স্পষ্টতই তিনি সেই প্রতীকগুলো গ্রহণ করেননি।

আপনার কি মনে আছে?

• ‘ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ’ কারা, যাদের ওপর ১,৪৪,০০০ জন বিচার করবে?

• নতুন চুক্তির মধ্যে অভিষিক্তদের কোন ভূমিকা রয়েছে আর কীভাবে নতুন চুক্তি আরও মেষকে উপকৃত করে?

• সমস্ত খ্রিস্টানেরই কি স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করা উচিত?

• আমাদের দিনের জন্য কোন একতা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার রেখাচিত্র/চিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

আজকে অনেকে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সঙ্গে সেবা করেছে

৭৩,১৩,১৭৩

৪০,১৭,২১৩

১৪,৮৩,৪৩০

৩,৭৩,৪৩০

১৯৫০ ১৯৭০ ১৯৯০ ২০০৯