সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কার নামে ও কীসের নামে বাপ্তাইজিত?

কার নামে ও কীসের নামে বাপ্তাইজিত?

কার নামে ও কীসের নামে বাপ্তাইজিত?

“অতএব তোমরা গিয়া . . . শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।”—মথি ২৮:১৯.

১, ২. (ক) সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিরূশালেমে কী ঘটেছিল? (খ) কেন জনতার মধ্যে অনেকে বাপ্তাইজিত হতে পরিচালিত হয়েছিল?

 যিরূশালেম, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব চলছিল এবং অনেক দর্শনার্থী সেখানে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু, অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছিল আর এর পর, প্রেরিত পিতর উদ্দীপনামূলক একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যেটা এক বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছিল। তার কথাগুলো প্রায় ৩,০০০ যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তির হৃদয় স্পর্শ করেছিল এবং তারা অনুতপ্ত হয়েছিল ও জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। এভাবে, তারা নবগঠিত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। (প্রেরিত ২:৪১) যিরূশালেমের চারিদিকে বিদ্যমান জলাধার বা জলাশয়গুলোতে এত এত লোকের বাপ্তিস্ম নিশ্চয়ই অনেক হইচই ফেলে দিয়েছিল!

কোন বিষয়টা এত এত লোককে বাপ্তাইজিত হতে পরিচালিত করেছিল? সেই দিনেই এই ঘটনার কিছু সময় আগে, “আকাশ হইতে প্রচণ্ড বায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল।” একটা বাড়ির ওপরের কুঠরিতে যিশুর প্রায় ১২০ জন শিষ্য পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়েছিল। এরপর, ধর্মভক্ত নারী-পুরুষরা একত্রিত হয়েছিল এবং সেই শিষ্যদের “অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে” দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল। পিতরের কথা শুনে, যেখানে তিনি যিশুর মৃত্যু সম্বন্ধে জোরালো মন্তব্যও তুলে ধরেছিলেন, অনেকের ‘হৃদয়ে যেন শেল-বিদ্ধ হইয়াছিল।’ তাদের কী করা উচিত? পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “মন ফিরাও, এবং তোমরা প্রত্যেক জন . . . যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও; তাহা হইলে পবিত্র আত্মারূপ দান প্রাপ্ত হইবে।”—প্রেরিত ২:১-৪, ৩৬-৩৮.

৩. পঞ্চাশত্তমীর দিনে, অনুতপ্ত যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের কী করার প্রয়োজন ছিল?

সেই যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যারা পিতরের কথা শুনেছিল। তারা ইতিমধ্যেই যিহোবাকে তাদের ঈশ্বর হিসেবে মেনে নিয়েছিল। আর ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে তারা ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি পবিত্র আত্মা সম্বন্ধেও জানত, যে-আত্মাকে সৃষ্টির সময়ে এবং পরে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। (আদি. ১:২; বিচার. ১৪:৫, ৬; ১ শমূ. ১০:৬; গীত. ৩৩:৬) কিন্তু, তাদের আরও কিছুর প্রয়োজন ছিল। তাদের জন্য ঈশ্বরের পরিত্রাণের মাধ্যম—মশীহ যিশুকে—বুঝতে পারা ও তাঁকে মেনে নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই, “যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত” হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে পিতর তুলে ধরেছিলেন। কিছুদিন আগে, পুনরুত্থিত যিশু পিতর এবং অন্যান্যদের আদেশ দিয়েছিলেন, যেন তারা লোকেদেরকে “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত করে। (মথি ২৮:১৯, ২০) প্রথম শতাব্দীতে সেটার এক গভীর অর্থ ছিল এবং এখনও রয়েছে। এটা কী?

পিতার নামে

৪. যিহোবার সঙ্গে এক সম্পর্ক রয়েছে এমন লোকেদের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন ঘটেছিল?

ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, পিতরের বক্তৃতা শুনে যারা সাড়া দিয়েছিল, তারা যিহোবাকে উপাসনা করত এবং তাঁর সঙ্গে আগে থেকেই তাদের এক সম্পর্ক ছিল। তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করার চেষ্টা করছিল আর এই কারণেই তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে যিরূশালেমে এসেছিল। (প্রেরিত ২:৫-১১) কিন্তু, ঈশ্বর সবেমাত্র মানুষের সঙ্গে তাঁর আচরণে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি যিহুদিদেরকে তাঁর বিশেষ জাতি হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; ব্যবস্থা পালন করা তাদের জন্য আর তাঁর অনুমোদন লাভ করার কোনো মাধ্যম ছিল না। (মথি ২১:৪৩; কল. ২:১৪) সেই শ্রোতারা যদি যিহোবার সঙ্গে ক্রমাগত এক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইত, তাহলে তাদের অন্য কিছুর প্রয়োজন ছিল।

৫, ৬. প্রথম শতাব্দীর অনেক যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কী করেছিল?

তাদের জীবনদাতা যিহোবার প্রতি তাদেরকে ফিরে আসতে হতো। (প্রেরিত ৪:২৪) হ্যাঁ, যারা পিতরের ব্যাখ্যা শুনে সাড়া দিয়েছিল, তারা আগের চেয়ে তখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল যে, যিহোবা হলেন একজন সদয় পিতা। তিনি তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য মশীহকে পাঠিয়েছিলেন আর এমনকী সেই ব্যক্তিদেরও ক্ষমা করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যাদেরকে পিতর বলতে পেরেছিলেন: “ইস্রায়েলের সমস্ত কুল নিশ্চয় জ্ঞাত হউক যে, যাঁহাকে তোমরা ক্রুশে দিয়াছিলে [“বিদ্ধ করেছিলে,” NW], সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করিয়াছেন।” আসলে, পিতরের কথাগুলো যারা কাজে লাগিয়েছিল, তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় এমন ব্যক্তিদের জন্য পিতা যা-কিছু করেছিলেন, সেটার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার তখন আরও বেশি কারণ ছিল!—পড়ুন, প্রেরিত ২:৩০-৩৬.

বস্তুতপক্ষে, সেই যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা তখন বুঝতে পেরেছিল যে, যিহোবার সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তোলার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তাঁকে পরিত্রাণের জোগানদাতা হিসেবে স্বীকার করা, যা তিনি যিশুর মাধ্যমে জুগিয়েছিলেন। তাহলে, আপনি বুঝতে পারছেন যে, কেন তারা তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল, যার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং এক দল হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁকে হত্যা করার জন্য দায়ী ছিল। আর এটাও বোধগম্য যে, পরবর্তী দিনগুলোতে “তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় . . . নিবিষ্ট থাকিল।” (প্রেরিত ২:৪২) তারা “সাহসপূর্ব্বক” বা নির্দ্বিধায় “অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত” হতে পারত এবং হতে চেয়েছিল।—ইব্রীয় ৪:১৬.

৭. কীভাবে আজকে অনেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে এবং পিতার নামে বাপ্তাইজিত হয়েছে?

আজকে বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা লক্ষ লক্ষ লোক বাইবেল থেকে যিহোবা সম্বন্ধীয় সত্য জানতে পেরেছে। (যিশা. ২:২, ৩) কেউ কেউ নাস্তিক ছিল, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করত যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে কিন্তু তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি আগ্রহী নন। তারা এমন একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছে, যাঁর সঙ্গে তারা এক অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। অন্যেরা ত্রিত্ব ঈশ্বর বা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করত। কিন্তু তারা জানতে পেরেছে যে, একমাত্র যিহোবাই হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আর তাই তারা এখন তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত নাম ধরে ডাকে। এটা যিশুর এই কথাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, তাঁর শিষ্যদের পিতার নামে বাপ্তাইজিত হওয়া উচিত।

৮. আদমজাত পাপ সম্বন্ধে যাদের কোনো ধারণাই ছিল না, তাদের পিতা সম্বন্ধে কী উপলব্ধি করা প্রয়োজন?

সেইসঙ্গে তারা এও জেনেছে যে, তারা আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ পেয়েছে। (রোমীয় ৫:১২) এটা এক নতুন বিষয় ছিল, যেটাকে তাদের সত্য বলে মেনে নিতে হয়েছিল। এই ব্যক্তিদেরকে এমন একজন অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যিনি তার অসুস্থতা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন না। তার হয়তো কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছিল, যেমন মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভব করা। তবে, নির্দিষ্ট কোনো রোগনির্ণয় না করায় তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে, তার স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো আছে। কিন্তু, বিষয়টা আসলে তা ছিল না। (তুলনা করুন, ১ করিন্থীয় ৪:৪.) সঠিক রোগনির্ণয় করে তার যদি কোনো অসুস্থতা ধরা পড়ে, তাহলে কী? তার পক্ষে কি সুপরিচিত, নির্ভরযোগ্য ও কার্যকারী চিকিৎসা খুঁজে তা গ্রহণ করা বিজ্ঞতার কাজ হবে না? অনুরূপভাবে, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ সম্বন্ধীয় সত্য জানার পর, অনেকে বাইবেলের “রোগনির্ণয় পদ্ধতি” গ্রহণ করেছে এবং বুঝতে পেরেছে যে, ঈশ্বর “চিকিৎসা” প্রদান করছেন। হ্যাঁ, যারা পিতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, তাদের সকলের এমন একজন ব্যক্তির কাছে আসা প্রয়োজন, যিনি তাদের “চিকিৎসা” করতে পারেন।—ইফি. ৪:১৭-১৯.

৯. যিহোবা তাঁর সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভবপর করার জন্য কী করেছিলেন?

আপনি যদি ইতিমধ্যেই আপনার জীবন যিহোবা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে থাকেন এবং একজন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি জানেন যে, তাঁর সঙ্গে এক সম্পর্ক থাকা কত চমৎকার এক বিষয়। এখন আপনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, আপনার পিতা যিহোবা কত প্রেমময়। (পড়ুন, রোমীয় ৫:৮.) যদিও আদম ও হবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছিল, কিন্তু তাদের বংশধররা—যার মধ্যে আমরাও আছি—তাঁর সঙ্গে যাতে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, সেইজন্য তিনিই প্রথমে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তা করতে গিয়ে, ঈশ্বরকে তাঁর প্রিয় পুত্রের কষ্টভোগ ও মৃত্যু দেখার যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। এই বিষয়টা জানা কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে স্বীকার করতে ও প্রেমের বশবর্তী হয়ে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে আমাদের সাহায্য করে না? আপনি যদি এখনও তা না করে থাকেন, তাহলে আপনার ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার ও বাপ্তাইজিত হওয়ার কারণ রয়েছে।

পুত্রের নামে

১০, ১১. (ক) যিশুর কাছে আপনি কতটা ঋণী? (খ) মুক্তির মূল্য হিসেবে যিশু যে মৃত্যুবরণ করেছেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?

১০ কিন্তু, পিতর সেই জনতাকে কী বলেছিলেন, তা আবারও একটু ভেবে দেখুন। তিনি যিশুকে স্বীকার করে নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন, যেটা সরাসরি ‘পুত্ত্রের নামে’ বাপ্তাইজিত হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কেন সেটা তখন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর কেন তা আজকেও এত গুরুত্বপূর্ণ? যিশুকে স্বীকার করা ও তাঁর নামে বাপ্তাইজত হওয়ার অর্থ হল, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে তাঁর ভূমিকাকে স্বীকার করা। ব্যবস্থার শাপ থেকে যিহুদিদের মুক্ত করার জন্য যিশুকে যাতনাদণ্ডে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল; কিন্তু, তাঁর মৃত্যু আরও বড়ো উপকার নিয়ে এসেছিল। (গালা. ৩:১৩) তিনি সেই মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিলেন, যা সমস্ত মানবজাতির জন্য প্রয়োজন ছিল। (ইফি. ২:১৫, ১৬; কল. ১:২০; ১ যোহন ২:১, ২) সেটা সম্পাদন করার জন্য যিশু অবিচার, নিন্দা, অত্যাচার ও অবশেষে মৃত্যু সহ্য করেছিলেন। তাঁর বলিদানের জন্য আপনি কতখানি কৃতজ্ঞ? কল্পনা করুন যে, আপনি ১২ বছর বয়সি এক ছেলে আর টাইটানিক জাহাজে চড়ে ভ্রমণ করছেন, যেটা ১৯১২ সালে হিমশৈলে ধাক্কা খেয়ে ডুবে গিয়েছিল। আপনি একটা লাইফবোটে লাফ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন কিন্তু সেটাতে একটুও জায়গা নেই। এরপর, সেই লাইফবোটে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে চুম্বন করে লাফ দিয়ে জাহাজের ডেকে ফিরে আসেন আর আপনাকে লাইফবোটে যেতে দেন। আপনি কেমন অনুভব করেন? আপনি নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন! আপনি বুঝতে পারছেন যে, একটা ছোটো ছেলে কেমন অনুভব করেছিল, যার সত্যি সত্যি এইরকম এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। * কিন্তু, যিশু আপনার জন্য এর চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছেন। তিনি মারা গিয়েছেন, যাতে আপনি অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন।

১১ ঈশ্বরের পুত্র আপনার জন্য যা করেছেন, তা জানার পর আপনি কেমন অনুভব করেছিলেন? (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.) সম্ভবত, আপনি গভীর কৃতজ্ঞতা অনুভব করেছিলেন। সেটা আপনাকে ঈশ্বরের কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করার জন্য পরিচালিত করতে এবং ‘আর আপনার উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করিতে’ সাহায্য করেছিল, ‘যিনি আপনার জন্য মরিয়াছিলেন।’ পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার অর্থ হল, আপনার জন্য যিশু যা করেছেন, তা স্বীকার করা এবং ‘জীবনের আদিকর্ত্তা’ হিসেবে তাঁর কর্তৃত্বকে মেনে নেওয়া। (প্রেরিত ৩:১৫; ৫:৩১) পূর্বে, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আপনার কোনো সম্পর্কই ছিল না আর আসলে আপনার যথার্থ কোনো আশাও ছিল না। কিন্তু, যিশু খ্রিস্টের পাতিত রক্তে বিশ্বাস অনুশীলন করে এবং বাপ্তাইজিত হয়ে এখন পিতার সঙ্গে আপনার এক সম্পর্ক রয়েছে। (ইফি. ২:১২, ১৩) “পূর্ব্বে চিত্তে দুষ্ক্রিয়াতে বহিঃস্থ ও শত্রু ছিলে যে তোমরা,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “তোমাদিগকে [ঈশ্বর] এখন খ্রীষ্টের মাংসময় দেহে মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত করিলেন, যেন পবিত্র, নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ করিয়া আপনার সাক্ষাতে উপস্থিত করেন।”—কল. ১:২১, ২২.

১২, ১৩. (ক) কীভাবে পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার বিষয়টা, কেউ আপনাকে অসন্তুষ্ট করলে পর আপনার যে-প্রতিক্রিয়া হয়, সেটার ওপর প্রভাব ফেলে? (খ) যিশুর নামে বাপ্তাইজিত একজন খ্রিস্টান হিসেবে, আপনার কোন বাধ্যবাধকতা রয়েছে?

১২ যদিও আপনি পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন কিন্তু আপনি নিজের পাপপূর্ণ প্রবণতা সম্বন্ধে ভালোভাবে অবগত আছেন। আর এই বিষয়টা প্রতিদিন আপনাকে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি আপনাকে অসন্তুষ্ট করে, তাহলে আপনি কি এই বিষয়টা মনে রাখেন যে, আপনারা দুজনেই পাপী? আপনাদের দুজনেরই ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া প্রয়োজন আর আপনাদের দুজনেরই ক্ষমা করার মনোভাব থাকা উচিত। (মার্ক ১১:২৫, ২৬) এই প্রয়োজনের ওপর জোর দেওয়ার জন্য যিশু একটা দৃষ্টান্ত বলেছিলেন: একজন দাসের প্রভু সেই দাসের দশ সহস্র তালন্ত (৬ কোটি সিকি) ঋণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। পরে, সেই দাস তারই এক সহদাসের ঋণ ক্ষমা করেননি, যিনি তার কাছ থেকে মাত্র ১০০ সিকি ধার নিয়েছিলেন। এরপর যিশু এই বিষয়টা বলেছিলেন: যিহোবা সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না, যে তার ভাইকে ক্ষমা করে না। (মথি ১৮:২৩-৩৫) হ্যাঁ, পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার অর্থ হল, যিশুর কর্তৃত্বকে স্বীকার করা এবং তাঁর উদাহরণ ও শিক্ষাগুলো অনুসরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা, যার অন্তর্ভুক্ত অন্যদের ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছুক হওয়া।—১ পিতর ২:২১; ১ যোহন ২:৬.

১৩ অসিদ্ধ হওয়ায় আপনি যিশুকে পূর্ণরূপে অনুকরণ করতে সমর্থ নন। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের প্রতি আপনার সর্বান্তঃকরণ উৎসর্গীকরণের সঙ্গে মিল রেখে, আপনি যিশুকে অনুকরণ করার জন্য আপনার যথাসাধ্য করতে চান। এটার অন্তর্ভুক্ত পুরোনো মনুষ্য বা ব্যক্তিত্বকে ত্যাগ করে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করে চলা। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২০-২৪.) আপনি যখন একজন বন্ধুকে সম্মান করেন, তখন আপনি সম্ভবত তার উদাহরণ ও উত্তম গুণাবলি থেকে শেখার চেষ্টা করেন। একইভাবে, আপনি খ্রিস্টের কাছ থেকে শিখতে ও তাঁকে অনুকরণ করতে চান।

১৪. কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন যে, স্বর্গীয় রাজা হিসেবে যিশুর কর্তৃত্বকে আপনি স্বীকার করেন?

১৪ আরেকটা উপায়ে আপনি দেখাতে পারেন যে, পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত, তা আপনি উপলব্ধি করেন। ঈশ্বর “সমস্তই [যিশুর] চরণের নীচে বশীভূত করিলেন, এবং তাঁহাকেই সকলের উপরে উচ্চ মস্তক করিয়া মণ্ডলীকে দান করিলেন।” (ইফি. ১:২২) তাই, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিদের যিশু যে-উপায়ে পরিচালনা দেন, সেটার প্রতি আপনার সম্মান দেখাতে হবে। খ্রিস্ট স্থানীয় মণ্ডলীতে অসিদ্ধ মানুষদের, বিশেষ করে আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ব ব্যক্তি, নিযুক্ত প্রাচীনদের ব্যবহার করছেন। এই পুরুষদের নিযুক্ত করার কারণ হল, “পবিত্রগণকে পরিপক্ব করিবার নিমিত্ত . . . যেন খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলা হয়।” (ইফি. ৪:১১, ১২) এমনকী অসিদ্ধ মানুষেরা যদি কোনো ভুল করে, স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশু তাঁর নিরূপিত সময়ে ও উপায়ে বিষয়টা মিটমাট করতে সক্ষম আছেন। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন?

১৫. আপনি যদি এখনও বাপ্তাইজিত না হয়ে থাকেন, তাহলে বাপ্তিস্মের পর আপনি কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করবেন বলে আশা করতে পারেন?

১৫ আবার কেউ কেউ এখনও যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেনি ও বাপ্তাইজিত হয়নি। আপনার বেলায় যদি তা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ওপরে বলা কথাগুলো থেকে কি আপনি বুঝতে পারছেন যে, পুত্রকে স্বীকার করা যুক্তিযুক্ত এবং তা দেখাবে যে, আপনি কৃতজ্ঞ? পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়া আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করতে সাহায্য করবে।—পড়ুন, যোহন ১০:৯-১১.

পবিত্র আত্মার নামে

১৬, ১৭. আপনার কাছে পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার অর্থ কী?

১৬ পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার অর্থ কী? আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, পঞ্চাশত্তমীর দিনে যারা পিতরের বক্তৃতা শুনেছিল, তারা পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে অবগত ছিল। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর যে ক্রমাগত পবিত্র আত্মা ব্যবহার করছেন, সেই বিষয়ে তারা চাক্ষুষ প্রমাণ দেখেছিল। পিতরও সেই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন, যারা ‘পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইয়াছিলেন এবং যাহারা অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ২:৪, ৮) “নামে” অভিব্যক্তিটি কোনো ব্যক্তির নামের প্রতিই প্রযোজ্য হতে হবে এমন নয়। বর্তমানে সরকারের “নামে” অনেক কিছু করা হয় কিন্তু সরকার কোনো ব্যক্তি নয়। সেগুলো সরকারের কর্তৃত্বের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। একইভাবে, যে-ব্যক্তি পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত হন, তিনি স্বীকার করেন যে, পবিত্র আত্মা কোনো ব্যক্তি নয় কিন্তু যিহোবার সক্রিয় শক্তি। আর এইরকম বাপ্তিস্মের অর্থ হচ্ছে যে, একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে পবিত্র আত্মার ভূমিকাকে স্বীকার করেন।

১৭ আপনি কি বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে জানতে পারেননি? উদাহরণস্বরূপ, আপনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, শাস্ত্র পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছিল। (২ তীম. ৩:১৬) আর আধ্যাত্মিক উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি সম্ভবত এই বিষয়ে গভীর উপলব্ধিবোধ অর্জন করেছেন যে, ‘স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করেন,’ যাদের মধ্যে আপনিও আছেন। (লূক ১১:১৩) আপনি সম্ভবত দেখেছেন যে, পবিত্র আত্মা আপনার জীবনে কাজ করছে। অন্যদিকে, আপনি যদি এখনও পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত না হয়ে থাকেন, তাহলে পিতা যে আপনাকে পবিত্র আত্মা দান করবেন, যিশুর এই আশ্বাসের অর্থ হচ্ছে, আপনি যখন সেই আত্মা লাভ করবেন, তখন সামনে আপনার জন্য প্রকৃত আশীর্বাদ থাকবে।

১৮. পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত ব্যক্তিদের জন্য কোন আশীর্বাদগুলো রয়েছে?

১৮ এটা স্পষ্ট যে, আজকেও যিহোবা তাঁর আত্মার মাধ্যমে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে পরিচালনা ও নির্দেশনা দেন। সেই আত্মা ব্যক্তিগতভাবেও আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে সাহায্য করে থাকে। পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার সঙ্গে আমাদের জীবনে এটির ভূমিকাকে স্বীকার করা এবং কৃতজ্ঞতা সহকারে সেই আত্মার সঙ্গে সহযোগিতা করা জড়িত। কিন্তু, কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে যে, কীভাবে আমরা যিহোবার কাছে করা উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে পারি এবং কীভাবে এর সঙ্গে পবিত্র আত্মা জড়িত। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা তা বিবেচনা করব।

[পাদটীকা]

^ ১৯৮১ সালের ২২ অক্টোবর সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• আপনার জন্য পিতার নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত?

• পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার অর্থ কী?

• কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন যে, পিতার ও পুত্রের নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার তাৎপর্য আপনি উপলব্ধি করেন?

• পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তাইজিত হওয়ার অর্থ কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর, নতুন শিষ্যরা পিতার সঙ্গে কোন সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল?

[সৌজন্যে]

By permission of the Israel Museum, Jerusalem