সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রচলিত ধারণা বনাম বাস্তব বিষয় যিশু সম্বন্ধীয় সত্য

প্রচলিত ধারণা বনাম বাস্তব বিষয় যিশু সম্বন্ধীয় সত্য

প্রচলিত ধারণা বনাম বাস্তব বিষয় যিশু সম্বন্ধীয় সত্য

আপনি কী মনে করেন? নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলো বাস্তব বিষয় নাকি প্রচলিত ধারণা?

যিশু ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

যিশুর জন্মের সময় তিনজন পণ্ডিত ব্যক্তি তাঁকে দেখতে এসেছিল।

যিশুর কোনো ভাইবোন ছিল না।

যিশু ছিলেন মনুষ্যরূপী ঈশ্বর।

যিশু শুধুমাত্র একজন ভালো মানুষের চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিলেন।

অনেকে উত্তর দেবে যে, এইসমস্ত বিবৃতি বাস্তব। অন্যেরা হয়তো বলতে পারে যে, এটা নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন—এমনকী অসম্ভব। তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যিশুতে বিশ্বাস করেন, ততক্ষণ উত্তরগুলো ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কিন্তু বাইবেল অন্য কিছু বলে। এটি আমাদেরকে “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান” বা তাঁর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নিতে উৎসাহিত করে। (২ পিতর ১:৮) সুসমাচারের বইগুলো পরীক্ষা করার দ্বারা আমরা সেই জ্ঞান অর্জন করি। সেগুলো যিশু সম্বন্ধে সত্য প্রকাশ করে, যা আমাদেরকে প্রচলিত ধারণা থেকে বাস্তব বিষয়কে পৃথক করতে সাহায্য করে। তাই আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, ওপরে উল্লেখিত বিশ্বাস সম্বন্ধে সুসমাচারের বইগুলো কী ইঙ্গিত করে।

বিশ্বাস: যিশু ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

প্রচলিত ধারণা নাকি বাস্তব বিষয়: প্রচলিত ধারণা।

যিশুর জন্মের মাস বা দিন সম্বন্ধে বাইবেলে সরাসরি কোনো বিবৃতি নেই। তাহলে, ২৫ ডিসেম্বর তারিখটা কোথা থেকে এসেছে? দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুসারে যারা নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করত তাদের মধ্যে কেউ কেউ “চেয়েছিল যে, তারিখটা যেন পৌত্তলিক রোমীয় উৎসব . . . মকরক্রান্তির সঙ্গে একই দিনে পড়ে, যখন দিন বড়ো হতে থাকে এবং সূর্য আকাশের আরও উপরে উঠতে থাকে।” সেই একই তথ্যগ্রন্থ উল্লেখ করে যে, বড়োদিনের অনেক রীতিনীতি “শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে পৌত্তলিক কৃষি সংক্রান্ত এবং সূর্য সম্বন্ধীয় উদ্‌যাপনগুলো” থেকে এসেছে।

যিশু কি ২৫ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপনকে অনুমোদন করতেন? বিবেচনা করুন: যিশুর জন্মের দিন অজানা। শাস্ত্রে কোথাও আমাদেরকে সেই জন্মদিন উদ্‌যাপন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়নি কিংবা প্রাথমিক খ্রিস্টানরা যে তা উদ্‌যাপন করত তারও কোনো প্রমাণ নেই। এর বিপরীতে, বাইবেল আমাদেরকে যিশুর সঠিক মৃত্যুদিন সম্বন্ধে জানায় এবং তিনি তাঁর অনুসারীদের সেই দিনটা উদ্‌যাপন করার আদেশ দিয়েছিলেন। * (লূক ২২:১৯) স্পষ্টতই, যিশু তাঁর জন্মের ওপর নয় বরং তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যুর গুরুত্বের ওপর জোর দিতে চেয়েছিলেন।—মথি ২০:২৮.

বিশ্বাস: যিশুর জন্মের সময় তিনজন পণ্ডিত ব্যক্তি (অথবা কিছু প্রথা অনুসারে তিনজন রাজা) তাঁকে দেখতে এসেছিল।

প্রচলিত ধারণা নাকি বাস্তব বিষয়: প্রচলিত ধারণা।

আপনি হয়তো এমন চিত্রকর্ম বা যিশুর জন্ম বিষয়ক দৃশ্যগুলো দেখেছেন, যেখানে উপহার নিয়ে থাকা তিনজন পণ্ডিত ব্যক্তির দ্বারা পরিবেষ্টিত যিশুকে যাবপাত্রে শোয়ানো অবস্থায় দেখানো হয়েছে। কিন্তু, এই ছবিটা বাস্তব নয় বরং কাল্পনিক।

এটা ঠিক যে, পূর্বদেশের এক প্রতিনিধি দল শিশু যিশুকে সম্মান প্রদর্শন করেছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই পরিদর্শনকারীরা ছিল জ্যোতিষী। (মথি ২:১) আর তারা কি যিশুকে এক যাবপাত্রে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল? না; তারা তাঁকে এক গৃহের মধ্যে পরিদর্শন করেছিল। স্পষ্টতই, তারা যিশুর জন্মের কিছু মাস পরে এসেছিল।—মথি ২:৯-১১.

কতজন পরিদর্শনকারী এসেছিল? ২ জন? ৩ জন? ৩০ জন? বাইবেল তা জানায় না। সম্ভবত, তাদের তিন ধরনের উপহার থেকে প্রথাগত তিন সংখ্যাটার উদ্ভব হয়েছে। * (মথি ২:১১) কেউ কেউ এমনকী এই বিষয়টাও বলতে চেয়েছে যে, সেই তথাকথিত পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রত্যেকে মানবজাতির এক একটা জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। কিন্তু শাস্ত্রে সেই ধারণা পাওয়া যায় না। এর পরিবর্তে, সুসমাচার সম্বন্ধীয় একটি মন্তব্য যেমন উল্লেখ করে যে, এই বিশেষ প্রচলিত ধারণাটির উৎস হলেন “প্রাণবন্ত কল্পনাশক্তিসম্পন্ন অষ্টম শতাব্দীর একজন ইতিহাসবেত্তা।”

বিশ্বাস: যিশুর কোনো ভাইবোন ছিল না।

প্রচলিত ধারণা নাকি বাস্তব বিষয়: প্রচলিত ধারণা।

যিশুর যে ভাইবোন ছিল, সুসমাচারের বইগুলোতে সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করা রয়েছে। লূকের সুসমাচার যিশুকে মরিয়মের “প্রথমজাত” হিসেবে উল্লেখ করে, যা দেখায় যে তিনি পরে অন্যান্য সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। * (লূক ২:৭) মার্কের সুসমাচার জানায় যে, নাসরৎ নগরের কেউ কেউ যিশুকে বিশেষ কোনো ব্যক্তি হিসেবে নয় বরং তাঁর ভাইবোনদের মতো এক সাধারণ ব্যক্তি হিসেবেই গণ্য করত। তারা জিজ্ঞেস করেছিল: “এ কি সেই . . . যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই নয়? এবং ইহার ভগিনীরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নাই?”—মার্ক ৬:৩; মথি ১২:৪৬; যোহন ৭:৫.

সুসমাচারের বইগুলো যা যা বলে সেগুলো সত্ত্বেও, অনেক ঈশ্বরতত্ত্ববিদ বিশ্বাস করে যে, যিশুর কোনো ভাইবোন ছিল না। কেউ কেউ বলে যে, যিশুর ভাই ও বোন বলে যাদের মনে করা হতো তারা আসলে যিশুর মাসতুতো ভাইবোন। * অন্যেরা অনুমান করে যে, এই ভাইবোনেরা ছিল মরিয়মের সৎ ছেলেমেয়ে। কিন্তু বিবেচনা করুন: যিশু যদি মরিয়মের একমাত্র সন্তান হতেন, তাহলে সেই নাসরতীয়রা যা বলেছিল তা কি তারা বলত? এর বিপরীতে, খুব সম্ভবত তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বচক্ষে মরিয়মকে একাধিকবার গর্ভবতী হতে দেখেছিল। তারা ব্যক্তিগতভাবে জানত যে, মরিয়মের অনেক সন্তানের মধ্যে যিশু ছিলেন একজন।

বিশ্বাস: যিশু ছিলেন মনুষ্যরূপী ঈশ্বর।

প্রচলিত ধারণা নাকি বাস্তব বিষয়: প্রচলিত ধারণা।

ঈশ্বর পৃথিবীতে এসেছিলেন ও মানুষ যিশু হিসেবে জীবিত ছিলেন এই ধারণা, যেটা ত্রিত্ব মতবাদের মূল বিষয়, সেটা দীর্ঘসময় ধরে প্রচলিত ছিল কিন্তু তা যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন গড়ে ওঠেনি। বরং, দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে: “ত্রিত্ব শব্দ বা এইরকম মতবাদ সম্বন্ধে নতুন নিয়মে কিছুই পাওয়া যায় না . . . মতবাদটি বেশ কিছু শতাব্দী ধরে এবং অনেক তর্কবিতর্কের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল।”

ধর্ম প্রকৃতপক্ষে যিশুর মর্যাদাহানি করে যখন এটি শিক্ষা দেয় যে, তিনি ছিলেন মনুষ্যরূপী ঈশ্বর। * কীভাবে? একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। কিছু কর্মচারী তাদের সুপারভাইজারের কাছে একটা অনুরোধ করে কিন্তু তিনি বলেন যে, তা অনুমোদন করার ক্ষমতা তার নেই। তার বিবৃতিটা যদি সত্য হয়, তাহলে সুপারভাইজার বিজ্ঞতার সঙ্গে তার সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধীয় সচেতনতাকে প্রকাশ করেছেন। আর এটা যদি সত্য না হয়—যদি তিনি অনুরোধটা অনুমোদন করতে পারেন অথচ শুধু শুধু না করে থাকেন—তাহলে তিনি প্রতারণা করেছেন।

যখন তাঁর দুজন প্রেরিত বিশিষ্ট পদের জন্য আকাঙ্ক্ষা করেছিল, তখন যিশু কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি তাদের বলেছিলেন: “যাহাদের জন্য আমার পিতা কর্ত্তৃক স্থান প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে ও বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই।” (মথি ২০:২৩) যিশু যদি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর হতেন, তাহলে সেটা বলা কি মিথ্যা হতো না? পরিবর্তে, আরও বেশি কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির থেকে নিজেকে পৃথক করার দ্বারা যিশু বিনয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন—এবং তিনি দেখিয়েছিলেন যে, তিনি ঈশ্বরের সমান নন।

বিশ্বাস: যিশু শুধুমাত্র একজন ভালো মানুষের চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিলেন।

প্রচলিত ধারণা নাকি বাস্তব বিষয়: বাস্তব বিষয়।

যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, তিনি একজন ভালো মানুষের চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (যোহন ১০:৩৬) অবশ্য, যেকেউ-ই ঈশ্বরের পুত্র হওয়ার দাবি করতে পারত। কিন্তু যিশুর দাবি যদি মিথ্যা হতো, তাহলে তাঁকে কী ধরনের ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো? বস্তুতপক্ষে, একজন ভালো ব্যক্তি নয় বরং একজন মহাপ্রতারক!

সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। যিশু সম্বন্ধে তিনি দুবার বলেছিলেন: “ইনিই আমার . . . পুত্ত্র।” (মথি ৩:১৭; ১৭:৫) একটু ভেবে দেখুন: শাস্ত্র কেবল কয়েকটা ঘটনার বিষয় জানায় যখন পৃথিবীতে ঈশ্বরের নিজস্ব কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছিল—কিন্তু সেগুলোর মধ্যে দুটো ঘটনায় তিনি যিশুকে তাঁর পুত্র হিসেবে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিলেন! এটাই হল সর্বোত্তম প্রমাণ যে, যিশু নিজের বিষয়ে যা বলেছিলেন, তিনি তা-ই ছিলেন।

এই প্রবন্ধটি কি যিশু সম্বন্ধে এমন কোনো বাস্তব বিষয় প্রকাশ করেছে যেটার বিষয়ে আপনি আগে জানতেন না? যদি তা-ই হয়, তাহলে অনুপ্রাণিত সুসমাচারের বইগুলোকে আরও বেশি করে পরীক্ষা করুন না কেন? এইরকম অধ্যয়ন উপভোগ্য ও পুরস্কারজনক দুটোই হতে পারে। সর্বোপরি, যিশু নিজেই বলেছিলেন যে, তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর পিতার সম্বন্ধে সত্য জানার অর্থ “অনন্ত জীবন।”—যোহন ১৭:৩. (w১০-E  ০৪/০১)

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহুদি ক্যালেন্ডার অনুসারে যিশু নিস্তারপর্বের দিনে বা ১৪ নিশান মারা গিয়েছিলেন।—মথি ২৬:২.

^ মথি জানান যে, সেই বিদেশিরা “আপনাদের ধনকোষ খুলিয়া” যিশুকে স্বর্ণ, কুন্দুরু ও গন্ধরস উপহার দিয়েছিল। আগ্রহের বিষয় হল যে, সেই দামি উপহারগুলো হয়তো একেবারে সঠিক সময়ে এসেছিল কারণ যিশুর পরিবার—স্পষ্টতই দরিদ্র—শীঘ্র শরণার্থী হিসেবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।—মথি ২:১১-১৫.

^ যদিও যিশুর জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে, কিন্তু মরিয়মের অন্য সন্তানরা তার স্বামী যোষেফের দ্বারা স্বাভাবিকভাবে জন্মেছিল।—মথি ১:২৫.

^ সাধারণ কাল প্রায় ৩৮৩ সালে জেরমের দ্বারা সমর্থিত এই ধারণাটা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে জনপ্রিয় যারা বিশ্বাস করে যে, মরিয়ম সারা জীবনই কুমারী ছিলেন। জেরম তার তত্ত্ব সম্বন্ধে পরে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু অনেকের মনে—এবং ক্যাথলিক গির্জার পদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে—সেই ধারণা রয়েই যায়।

^ ত্রিত্ব সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের পরিশিষ্টের ২০১-২০৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

আরও কিছু বাস্তব বিষয় যেগুলো আপনাকে হয়তো অবাক করে দিতে পারে

একজন ব্যক্তি হিসেবে যিশু কেমন ছিলেন? তিনি কি এতই অনাড়ম্বর, আবেগঅনুভূতিহীন এবং উদাসীন ছিলেন যে, তিনি সাধারণ লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারতেন না? কেউ কেউ উত্তর দেবে হ্যাঁ। সম্ভবত সেই কারণেই তারা এটা জেনে অবাক হয় যে, যিশু . . .

• আনন্দপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যোগদান করেছিলেন।—যোহন ২:১-১১.

• প্রশংসা করেছিলেন।—মার্ক ১৪:৬-৯.

• ছোটো ছেলে-মেয়েদের সাহচর্য উপভোগ করেছিলেন।—মার্ক ১০:১৩, ১৪.

• প্রকাশ্যে কেঁদেছিলেন।—যোহন ১১:৩৫.

• করুণাবিষ্ট হয়েছিলেন বা সমবেদনা দেখিয়েছিলেন।—মার্ক ১:৪০, ৪১.