সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি পূর্ণরূপে খ্রিস্টকে অনুসরণ করছেন?

আপনি কি পূর্ণরূপে খ্রিস্টকে অনুসরণ করছেন?

আপনি কি পূর্ণরূপে খ্রিস্টকে অনুসরণ করছেন?

‘তোমরা যেরূপ চলিতেছ, তদনুসারে অধিক উপচিয়া পড়।’—১ থিষল. ৪:১.

১, ২. (ক) কোন মহৎ মহৎ বিষয় যিশুর দিনের অনেক লোক দেখতে পেয়েছে? (খ) কেন আমাদের বর্তমান যুগটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

 আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, সেই সময় আপনিও বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তা কত অপূর্বই না হতো? আপনি হয়তো যিশুর দ্বারা আরোগ্য লাভ করার আর এভাবে কঠিন শারীরিক যন্ত্রণার কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার আশা সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারেন। অথবা আপনি যিশুকে দেখার এবং তাঁর কথা শোনার—তাঁর কাছ থেকে শেখার ও তাঁকে কিছু অলৌকিক কাজ করতে দেখার—প্রচুর আনন্দের কথাও বিবেচনা করতে পারেন। (মার্ক ৪:১, ২; লূক ৫:৩-৯; ৯:১১) যিশু যখন সেই কাজগুলো করেছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত থাকা কত বিরাট এক সুযোগই না হতো! (লূক ১৯:৩৭) সেই সময়ের পর থেকে আর কোনো প্রজন্মই এই ধরনের বিষয়গুলো দেখেনি এবং যিশু পৃথিবীতে “আত্মযজ্ঞ দ্বারা” যা সম্পাদন করেছিলেন, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আর কখনোই হবে না।—ইব্রীয় ৯:২৬; যোহন ১৪:১৯.

তবে, আমাদের বর্তমান যুগটাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেন? আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যে-সময়কালকে শাস্ত্র “শেষকাল” হিসেবে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছে। (দানি. ১২:১-৪, ৯; ২ তীম. ৩:১) এই সময়কালের মধ্যে শয়তানকে স্বর্গ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। শীঘ্র, তাকে বদ্ধ করা ও “অগাধলোকের মধ্যে” ফেলে দেওয়া হবে। (প্রকা. ১২:৭-৯, ১২; ২০:১-৩) এ ছাড়া, এই সময়কালেই আমাদের পৃথিবীব্যাপী ‘রাজ্যের সুসমাচার’ ঘোষণা করার, লোকেদেরকে আসন্ন পরমদেশের আশা সম্বন্ধে বলার—এক অদ্বিতীয় কাজের—মহান সুযোগ রয়েছে।—মথি ২৪:১৪.

৩. স্বর্গারোহণের ঠিক আগে, যিশু তাঁর অনুসারীদের কী করতে বলেছিলেন এবং সেটার অন্তর্ভুক্ত কী হবে?

স্বর্গারোহণের ঠিক আগে, যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) সেই কাজের অন্তর্ভুক্ত হবে পৃথিবীব্যাপী এক শিক্ষাদান কার্যক্রম। এর লক্ষ্য কী? শেষ আসার আগে শিষ্য—খ্রিস্টের আরও অনুসারী—তৈরি করা। (মথি ২৮:১৯, ২০) আমরা যদি খ্রিস্টের দেওয়া দায়িত্ব পালন করায় সফল হতে চাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে?

৪. (ক) ২ পিতর ৩:১১, ১২ পদে প্রাপ্ত পিতরের বিস্ময়সূচক উক্তিটি কোন প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়? (খ) কীসের বিরুদ্ধে আমাদের সাবধান থাকতে হবে?

পিতরের বিস্ময়সূচক উক্তিটি লক্ষ করুন: “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে [‘ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই, যে দিনের হেতু আকাশমণ্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে।” (২ পিতর ৩:১১, ১২) পিতরের কথাগুলো এই শেষকালে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয় যে, আমাদের কাজ ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত কি না। এই ধরনের কাজের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, সুসমাচার প্রচার করা। তাই, বিশ্বব্যাপী আমাদের ভাইবোনেরা যে-উদ্যোগ সহকারে খ্রিস্টের দেওয়া প্রচার কাজের দায়িত্ব পালন করছে, তা দেখা আমাদের জন্য কতই না আনন্দদায়ক! সেইসঙ্গে আমরা এটাও উপলব্ধি করি যে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, শয়তানের জগৎ এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আমাদের নিজেদের পাপপূর্ণ প্রবণতা থেকে আসা রোজকার চাপ যেন আমাদের সেই উদ্যোগকে হ্রাস করে না দেয়, যে-উদ্যোগ নিয়ে আমরা ঈশ্বরের সেবা করে যাচ্ছি। তাই, আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি, আমরা খ্রিস্টকে অনুসরণ করে চলছি।

ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলো সানন্দে গ্রহণ করুন

৫, ৬. (ক) কোন কারণে পৌল যিরূশালেমে তার সহবিশ্বাসীদের প্রশংসা করেছিলেন আর কীসের বিরুদ্ধে তিনি তাদেরকে সাবধান করেছিলেন? (খ) কেন আমাদের ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়?

যিরূশালেমের খ্রিস্টানদের কাছে চিঠি লেখার সময় প্রেরিত পৌল তার সহবিশ্বাসীদের এমনকী তাড়নার মধ্যেও বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরার বিষয়ে তাদের অতীতের নথির জন্য প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা . . . পূর্ব্বকার সেই সময় স্মরণ কর, যখন তোমরা দীপ্তিপ্রাপ্ত হইয়া নানা দুঃখভোগরূপ ভারী সংগ্রাম সহ্য করিয়াছিলে।” হ্যাঁ, যিহোবা তাদের বিশ্বস্ত কাজ মনে রেখেছেন। (ইব্রীয় ৬:১০; ১০:৩২-৩৪) পৌলের আন্তরিক প্রশংসা বাক্যগুলো নিশ্চয়ই সেই ইব্রীয় খ্রিস্টানদের জন্য প্রচুর উৎসাহ জুগিয়েছিল। কিন্তু, সেই একই চিঠিতে পৌল এমন এক মানব প্রবণতার বিরুদ্ধেও সাবধান করেছিলেন, যেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সেটা ঈশ্বরের সেবায় একজন ব্যক্তির উদ্যোগকে হ্রাস করে দিতে পারে। তিনি বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো পালন করার ব্যাপারে খ্রিস্টানদের ‘অসম্মত হওয়ার’ বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা উচিত।—ইব্রীয় ১২:২৫.

ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলোর ব্যাপারে ‘অসম্মত হইবার’ প্রবণতার বিরুদ্ধে দেওয়া সেই সাবধানবাণী আজকে খ্রিস্টানদের বেলায়ও প্রযোজ্য। আমরা উপলব্ধি করি যে, আমাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলোকে কখনোই হালকাভাবে না নেওয়ার এবং ঈশ্বরের সেবায় আমাদের উদ্যোগকে হ্রাস পেতে না দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। (ইব্রীয় ১০:৩৯) সর্বোপরি, পবিত্র সেবা প্রদান করার সঙ্গে জীবন ও মৃত্যু জড়িত।—১ তীম. ৪:১৬.

৭, ৮. (ক) কী আমাদেরকে ঈশ্বরের সেবায় আমাদের উদ্যোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে? (খ) আমরা যদি আমাদের প্রাথমিক উদ্যোগ কিছুটা হারিয়ে ফেলি, তাহলে যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

কী আমাদেরকে, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বাধ্যবাধকতাগুলোকে পরিপূর্ণ করার বিষয়ে অজুহাত দেখানোর বিরুদ্ধে সাহায্য করবে? সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, আমাদের উৎসর্গীকরণের অঙ্গীকারের অর্থ নিয়ে নিয়মিতভাবে ধ্যান করা। আসলে, আমরা যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি যে, তাঁর ইচ্ছা পালন করাকে আমরা আমাদের জীবনে সবচেয়ে প্রথমে রাখব আর আমরা সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে চাই। (মথি ১৬:২৪) তাই, আমাদের মাঝে মাঝে একটু থেমে নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে: ‘এখনও কি আমি, ঈশ্বরের প্রতি আমার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার জন্য সেই একই দৃঢ়সংকল্প অনুভব করি, যেমনটা আমি আমার বাপ্তিস্মের সময় করেছিলাম? নাকি বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার সেই প্রাথমিক উদ্যোগ কিছুটা হারিয়ে ফেলেছি?’

এক অকপট আত্মপরীক্ষা যদি প্রমাণ দেয় যে, আমরা আমাদের হস্ত কিছুটা শিথিল করে ফেলেছি, তাহলে ভাববাদী সফনিয়ের উদ্দীপনামূলক কথাগুলো আমাদের স্মরণ করা উচিত। তিনি বলেছিলেন: “তোমার হস্ত শিথিল না হউক। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন, তিনি তোমার বিষয়ে পরম আনন্দ করিবেন।” (সফ. ৩:১৬, ১৭) এই আশ্বাসদায়ক কথাগুলো প্রথমে প্রাচীনকালের ইস্রায়েলীয়দের বেলায় প্রযোজ্য ছিল, যারা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল। কিন্তু, এই আশ্বাস এখনও বর্তমান সময়ের ঈশ্বরের লোকেদের বেলায় সত্য। যেহেতু আমরা যে-কাজটা করছি, সেটা যিহোবার কাজ, তাই আমাদের মনে রাখা উচিত যে, যিহোবা ও তাঁর পুত্র উভয়ই আমাদের সমর্থন করে এবং আমাদের ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলো পূর্ণরূপে সম্পাদন করার জন্য শক্তি প্রদান করে। (মথি ২৮:২০; ফিলি. ৪:১৩) আমরা যদি উদ্যোগের সঙ্গে ক্রমাগত ঈশ্বরের কাজ করার প্রচেষ্টা করি, তাহলে তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করে যেতে সাহায্য করবেন।

উদ্যোগের সঙ্গে ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করা’

৯, ১০. বড়ো এক ভোজ সম্বন্ধীয় যিশুর নীতিগল্পের মূল বিষয় কী এবং সেটা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

ফরীশীদের এক জন অধ্যক্ষের বাড়িতে আহার করার সময়, যিশু বড়ো এক ভোজ সম্বন্ধে একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। সেই দৃষ্টান্তে, তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে স্বর্গরাজ্যের অধিকারী হওয়ার যে-সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টা বর্ণনা করেছেন। তিনি এও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কীভাবে কিছু ব্যক্তি এই আমন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বগুলো সাদরে গ্রহণ করে নেওয়ার ব্যাপারে অজুহাত দেখিয়েছিল। (পড়ুন, লূক ১৪:১৬-২১.) যিশুর দৃষ্টান্তের নিমন্ত্রিত অতিথিরা ভোজে যোগ না দেওয়ার সপক্ষে অনেক অজুহাত দেখিয়েছিল। একজন বলেছিলেন যে, সবেমাত্র তিনি যে-জমি কিনেছেন, সেটা পরীক্ষা করতে হবে। আরেক জন বলেছিলেন যে, তিনি কিছু পশু কিনেছেন আর সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে চান। আবার অন্য জন বলেছিলেন: “আমি বিবাহ করিলাম, এই জন্য যাইতে পারিতেছি না।” এগুলো ছিল তুচ্ছ অজুহাত। যে-ব্যক্তি একটা জমি বা পশু কেনেন, তিনি সাধারণত সেগুলো আগেই পরীক্ষা করেন, তাই পরে সেগুলো পরীক্ষা করা তেমন জরুরি বিষয় নয়। আর কেন সদ্য বিয়ে করার কারণে একজন ব্যক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ আমন্ত্রণ গ্রহণ করা থেকে বিরত হবেন? তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দৃষ্টান্তের নিমন্ত্রণকর্তা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন!

১০ ঈশ্বরের সমস্ত লোক যিশুর নীতিগল্প থেকে একটা শিক্ষা লাভ করতে পারে। সেটা কী? আমাদের কখনো ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে, যেমন যিশুর দৃষ্টান্তে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মতো ব্যক্তিগত বিষয়কে, এতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে দেওয়া উচিত নয় যে, সেগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবার চেয়ে অগ্রাধিকার পায়। একজন খ্রিস্টান যদি ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে সঠিক স্থানে না রাখেন, তাহলে পরিচর্যার জন্য তার উদ্যোগ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। (পড়ুন, লূক ৮:১৪.) আমাদের বেলায় যেন এইরকমটা না ঘটে, সেইজন্য আমরা যিশুর এই উপদেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করি: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” (মথি ৬:৩৩) এটা দেখা কতই না উৎসাহজনক যে, ঈশ্বরের দাসেরা—যুবক-বৃদ্ধ সকলে—অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেই পরামর্শ কাজে লাগাচ্ছে! বস্তুতপক্ষে, অনেকে তাদের জীবনধারা সাদাসিধে করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যেন তারা পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে যে, উদ্যোগের সঙ্গে প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করা প্রকৃত সুখ ও প্রচুর পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে।

১১. বাইবেলের কোন বিবরণ ঈশ্বরের সেবা উদ্যোগের সঙ্গে ও সর্বান্তঃকরণে করার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে?

১১ ঈশ্বরের সেবা উদ্যোগের সঙ্গে করার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্য ইস্রায়েলের রাজা যোয়াশের জীবনের একটা ঘটনা লক্ষ করুন। অরামের কাছে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত হওয়ায় যোয়াশ ইলীশায়ের কাছে ক্রন্দন করেছিলেন। ভাববাদী তাকে জানালা দিয়ে অরামের দিকে একটা তির নিক্ষেপ করার আদেশ দিয়েছিলেন, যা সেই জাতির বিরুদ্ধে যিহোবার দ্বারা বিজয়ী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। এই বিষয়টা নিশ্চয়ই রাজাকে শক্তি প্রদান করেছিল। এরপর ইলীশায় যোয়াশকে তিরগুলো নিয়ে সেগুলো দিয়ে ভূমিতে আঘাত করতে বলেছিলেন। যোয়াশ তিন বার ভূমিতে আঘাত করেছিলেন। এতে ইলীশায় রেগে গিয়েছিলেন, কারণ পাঁচ বা ছয় বার ভূমিতে আঘাত করা ‘অরামকে নিঃশেষ করণ পর্য্যন্ত আঘাত করিবার’ ইঙ্গিত দিত। এখন যোয়াশ মাত্র তিন বার বিজয় লাভ করবেন। যেহেতু তিনি উদ্যোগের অভাব দেখিয়ে কাজ করেছিলেন, তাই যোয়াশ সামান্য সাফল্য অর্জন করেছিলেন। (২ রাজা. ১৩:১৪-১৯) এই বিবরণ থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? যিহোবা আমাদের একমাত্র তখনই প্রচুররূপে আশীর্বাদ করবেন, যদি আমরা সর্বান্তঃকরণে এবং উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর কাজ করি।

১২. (ক) কী আমাদেরকে জীবনের কঠিন সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের সেবায় আমাদের উদ্যোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে? (খ) পরিচর্যায় ব্যস্ত থেকে আপনি কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন, তা বর্ণনা করুন।

১২ জীবনের কঠিন সমস্যাগুলো ঈশ্বরের সেবায় আমাদের উদ্যোগ ও ভক্তিকে পরীক্ষায় ফেলে। অনেক ভাইবোন কষ্টকর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করছে। অন্যেরা হতাশ হয়ে পড়ে কারণ কোনো গুরুতর অসুস্থতার জন্য তারা যিহোবার সেবায় যতটুকু করতে পারত, ততটুকু আর করতে পারে না। তা সত্ত্বেও, আমরা যে আমাদের উদ্যোগ বজায় রাখছি এবং ক্রমাগত খ্রিস্টকে পূর্ণরূপে অনুসরণ করছি, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রত্যেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারি। দয়া করে, “কী আপনাকে খ্রিস্টকে অনুসরণ করে চলতে সাহায্য করবে?” নামক বাক্সে তালিকাবদ্ধ পরামর্শ ও শাস্ত্রপদগুলো লক্ষ করুন। বিবেচনা করুন যে, কীভাবে আপনি সেগুলো পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে পারেন। আপনি যদি তা করেন, তাহলে আপনি প্রকৃত উপকার লাভ করবেন। পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকা আমাদের ওপর এক স্থায়ী প্রভাব ফেলে, আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে এবং আমাদের জন্য প্রচুর শান্তি ও সুখ নিয়ে আসে। (১ করি. ১৫:৫৮) অধিকন্তু, মনপ্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা আমাদেরকে “ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের . . . আকাঙ্ক্ষা করিতে” সাহায্য করে।—২ পিতর ৩:১২.

এক অকপট মূল্যায়ন করুন

১৩. কীভাবে আমরা নির্ণয় করতে পারি যে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য মনপ্রাণ দিয়ে সেবা বলতে কী বোঝায়?

১৩ কিন্তু এটা মনে রাখা উত্তম যে, মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করা, পরিচর্যায় আমরা কতটুকু সময় ব্যয় করি, সেটার ওপর নির্ভর করে না। বিভিন্ন জনের পরিস্থিতি বিভিন্নরকম। যে-ব্যক্তি প্রতি মাসে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় মাত্র এক বা দুই ঘন্টা ব্যয় করেন, তিনি হয়তো যিহোবাকে অনেক আনন্দিত করেন, যদি তার স্বাস্থ্য সত্যিই তাকে ততটুকুই করার সুযোগ দিয়ে থাকে। (তুলনা করুন, মার্ক ১২:৪১-৪৪.) তাই, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য ঈশ্বরের প্রতি মনপ্রাণ দিয়ে সেবা বলতে কী বোঝায়, তা নির্ধারণ করার জন্য নিজেদের সামর্থ্য ও পরিস্থিতি সম্বন্ধে আমাদের এক অকপট মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে, আমরাও তাঁর মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে চাই। (পড়ুন, রোমীয় ১৫:৫; ১ করি. ২:১৬) যিশু তাঁর জীবনে সবচেয়ে প্রথমে কোন বিষয়টা রেখেছিলেন? তিনি কফরনাহূমের জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন: “আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি।” (লূক ৪:৪৩; যোহন ১৮:৩৭) পরিচর্যার প্রতি যিশুর উদ্যোগের কথা মাথায় রেখে, আপনার পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করে দেখুন যে, আপনি আপনার পরিচর্যাকে আরও বাড়াতে পারেন কি না।—১ করি. ১০:৩৪.

১৪. কোন কোন উপায়ে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে আরও বাড়াতে পারি?

১৪ আমাদের পরিস্থিতি মনোযোগপূর্বক বিবেচনা করা হয়তো আমাদেরকে এই উপসংহারে আসতে পরিচালিত করতে পারে যে, আমরা পরিচর্যায় যতটুকু সময় ব্যয় করি, সেটাকে বাড়াতে পারি। (মথি ৯:৩৭, ৩৮) উদাহরণস্বরূপ, আমাদের হাজার হাজার যুবক-যুবতী, যারা সম্প্রতি স্কুল শেষ করেছে, তারা তাদের পরিচর্যাকে বাড়িয়েছে এবং এখন সেই আনন্দ উপভোগ করছে, যা উদ্যোগের সঙ্গে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার মাধ্যমে আসে। আপনিও কি সেই আনন্দ উপভোগ করতে চান? কিছু ভাই ও বোন তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা নিজ দেশের অন্য একটা এলাকায় অথবা এমনকী বিদেশে, যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের অনেক প্রয়োজন, সেখানে যেতে পারে। আবার অন্যেরা বিদেশিভাষী লোকেদেরকে সাহায্য করার জন্য আরেকটা ভাষা শিখেছে। যদিও আমাদের পরিচর্যাকে বাড়ানো বেশ কঠিন হতে পারে কিন্তু তা প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসে আর আমরা হয়তো অনেককে “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে” সাহায্য করতে পারি।—১ তীম. ২:৩, ৪; ২ করি. ৯:৬.

অনুসরণযোগ্য বাইবেলের উদাহরণগুলো

১৫, ১৬. খ্রিস্টের উদ্যোগী অনুসারী হওয়ার জন্য আমরা কাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?

১৫ প্রেরিত হয়ে উঠেছিল এমন কয়েক জন কীভাবে সাড়া দিয়েছিল, যখন খ্রিস্ট তাদেরকে তাঁর অনুসারী হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন? মথি সম্বন্ধে বিবরণ বলে: “তিনি সকলই পরিত্যাগ করিয়া উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন।” (লূক ৫:২৭, ২৮) আর পিতর ও আন্দ্রিয়, যারা জেলে ছিল, তাদের সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।” এরপর যিশু যাকোব ও যোহনকে দেখেছিলেন, যারা তাদের বাবার সঙ্গে জাল মেরামত করছিল। যিশুর আমন্ত্রণের প্রতি তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? “তখনই তাঁহারা নৌকা ও আপনাদের পিতাকে পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন।”—মথি ৪:১৮-২২.

১৬ আরেক জন উত্তম উদাহরণ হলেন শৌল, যিনি পরে প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন। যদিও তিনি খ্রিস্টের অনুসারীদের প্রচণ্ড তাড়নাকারী ছিলেন কিন্তু তিনি তার পথ পরিবর্তন করেছিলেন এবং খ্রিস্টের নাম বহনার্থে “মনোনীত পাত্র” হয়েছিলেন। “[পৌল] অমনি সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে যীশুকে এই বলিয়া প্রচার করিতে লাগিলেন যে, তিনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (প্রেরিত ৯:৩-২২) আর অনেক কষ্ট ও তাড়না সহ্য করা সত্ত্বেও, পৌল কখনো তার উদ্যোগ হারিয়ে ফেলেননি।—২ করি. ১১:২৩-২৯; ১২:১৫.

১৭. (ক) খ্রিস্টকে অনুসরণ করার বিষয়ে আপনার আকাঙ্ক্ষা কী? (খ) আমাদের সমস্ত হৃদয় ও শক্তি দিয়ে যিহোবার ইচ্ছা পালন করার কারণে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ উপভোগ করি?

১৭ নিশ্চিতভাবেই আমরা সেই শিষ্যদের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করতে চাই এবং উৎসুকভাবে ও নিঃশর্তে সাড়া দিতে চাই। (ইব্রীয় ৬:১১, ১২) উদ্যোগের সঙ্গে ও অধিক উপচে পড়ে বা পূর্ণরূপে খ্রিস্টকে অনুসরণ করার ব্যাপারে ক্রমাগত প্রচেষ্টা করার ফলে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ উপভোগ করি? ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আমরা প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করি এবং সেই পরিতৃপ্তি লাভ করি, যা মণ্ডলীতে সেবার অন্যান্য বিশেষ সুযোগ ও দায়িত্বগুলো গ্রহণ করার ফলে আসে। (গীত. ৪০:৮; পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৪:১.) হ্যাঁ, আমরা যখন উদ্যমের সঙ্গে খ্রিস্টকে অনুসরণ করার জন্য প্রাণপণ করি, তখন আমরা মনের শান্তি, পরিতৃপ্তি, সন্তুষ্টি, ঈশ্বরের অনুমোদন ও অনন্তজীবনের প্রত্যাশার মতো প্রচুর এবং স্থায়ী আশীর্বাদ উপভোগ করি।—১ তীম. ৪:১০.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের দেওয়া হয়েছে আর সেটাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

• কোন মানব প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং কেন?

• কোন অকপট মূল্যায়ন আমাদের করা উচিত?

• কী আমাদের খ্রিস্টকে অনুসরণ করে চলতে সাহায্য করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

কী আপনাকে খ্রিস্টকে অনুসরণ করে চলতে সাহায্য করবে?

▪ প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পড়ুন এবং যা পড়েন, তা নিয়ে ধ্যান করুন।—গীত. ১:১-৩; ১ তীম. ৪:১৫.

▪ ঈশ্বরের আত্মার সমর্থন ও নির্দেশনার জন্য বার বার প্রার্থনা করুন।—সখ. ৪:৬; লূক ১১:৯, ১৩.

▪ সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করুন, যারা পরিচর্যার জন্য আন্তরিক উদ্যোগ দেখায়।—হিতো. ১৩:২০; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

▪ আমরা যে-সময়ে বাস করছি, সেটার গুরুত্ব উপলব্ধি করুন।—ইফি. ৫:১৫, ১৬.

▪ অজুহাত দেখানোর গুরুতর পরিণতি সম্বন্ধে সচেতন থাকুন।—লূক ৯:৫৯-৬২.

▪ আপনার উৎসর্গীকরণের অঙ্গীকার এবং প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে নিয়মিতভাবে চিন্তা করুন, যেগুলো সর্বান্তঃকরণে যিহোবাকে সেবা করার ও খ্রিস্টকে অনুসরণ করার মাধ্যমে আসে।—গীত. ১১৬:১২-১৪; ১৩৩:৩; হিতো. ১০:২২.