সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পুরুষরা, আপনারা কি খ্রিস্টের মস্তকপদের প্রতি বশীভূত?

পুরুষরা, আপনারা কি খ্রিস্টের মস্তকপদের প্রতি বশীভূত?

পুরুষরা, আপনারা কি খ্রিস্টের মস্তকপদের প্রতি বশীভূত?

“প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট।”—১ করি. ১১:৩.

১. কী দেখায় যে, যিহোবা হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর?

 প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ বলে, “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন বলে, যিহোবা ঈশ্বর হলেন নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ সার্বভৌম এবং সমস্ত সৃষ্টির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে। যিহোবা যে “গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির,” তা স্বর্গদূতদের নিয়ে গঠিত তাঁর পরিবারকে তিনি যেভাবে সংগঠিত করেছেন, সেটার মাধ্যমেই দেখা যায়।—১ করি. ১৪:৩৩; যিশা. ৬:১-৩; ইব্রীয় ১২:২২, ২৩.

২, ৩. (ক) কে যিহোবার প্রথম সৃষ্টি ছিলেন? (খ) পিতার সঙ্গে প্রথমজাত পুত্রের কোন পদমর্যাদা রয়েছে?

যেকোনো কিছু সৃষ্টি করার আগে, ঈশ্বর নিজে অগণিত সময় ধরে ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে প্রথম সৃষ্টি ছিলেন সেই আত্মিক প্রাণী, যিনি “বাক্য” নামে পরিচিত, কারণ তিনি যিহোবার মুখপাত্র ছিলেন। এই বাক্যের মাধ্যমেই অন্যান্য সমস্ত কিছু অস্তিত্বে এসেছে। পরে, তিনি একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং যিশু খ্রিস্ট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।—পড়ুন, যোহন ১:১ *, ২, ৩, ১৪.

ঈশ্বর ও তাঁর প্রথমজাত পুত্রের আপেক্ষিক পদমর্যাদা সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে? অনুপ্রাণিত হয়ে লেখার সময় প্রেরিত পৌল আমাদের বলেন: “আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করি. ১১:৩) খ্রিস্ট তাঁর পিতার মস্তকপদের অধীন। বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মস্তকপদ ও বশ্যতা অপরিহার্য। এমনকী ‘সকলই যাঁহার দ্বারা সৃষ্ট হইয়াছে,’ তাঁরও ঈশ্বরের মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হওয়া প্রয়োজন।—কল. ১:১৬.

৪, ৫. যিহোবার সঙ্গে তাঁর পদমর্যাদা সম্বন্ধে যিশু কেমন বোধ করেছিলেন?

যিহোবার মস্তকপদের প্রতি বশীভূত হওয়ার এবং পৃথিবীতে আসার বিষয়ে যিশু কেমন বোধ করেছিলেন? শাস্ত্র বলে: ‘খ্রীষ্ট যীশু ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় [“যাতনাদণ্ডে,” NW] মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।’—ফিলি. ২:৫-৮.

সবসময়, যিশু নম্রভাবে তাঁর পিতার ইচ্ছার প্রতি বশীভূত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি আপনা হইতে কিছুই করিতে পারি না; . . . আমার বিচার ন্যায্য, কেননা আমি আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি না, কিন্তু আমার প্রেরণকর্ত্তার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি।” (যোহন ৫:৩০) “আমি সর্ব্বদা [আমার পিতার] সন্তোষজনক কার্য্য করি,” তিনি ঘোষণা করেছিলেন। (যোহন ৮:২৯) পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ দিকে, যিশু তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনায় বলেছিলেন: “তুমি আমাকে যে কার্য্য করিতে দিয়াছ, তাহা সমাপ্ত করিয়া আমি পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করিয়াছি।” (যোহন ১৭:৪) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের মস্তকপদকে স্বীকার করার ও তা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে যিশুর কোনো সমস্যা ছিল না।

পিতার প্রতি বশীভূত হওয়া পুত্রের জন্য উপকার নিয়ে আসে

৬. যিশু কোন অপূর্ব গুণাবলি প্রদর্শন করেছিলেন?

পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু অনেক অপূর্ব গুণ দেখিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটা ছিল মহৎ প্রেম, যা তিনি তাঁর পিতার প্রতি প্রদর্শন করেছিলেন। “আমি পিতাকে প্রেম করি,” তিনি বলেছিলেন। (যোহন ১৪:৩১) তিনি লোকেদের প্রতিও মহৎ প্রেম দেখিয়েছিলেন। (পড়ুন, মথি ২২:৩৫-৪০.) যিশু সদয় ও বিবেচক ছিলেন, রূঢ় অথবা কর্তৃত্বপরায়ণ নন। “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস,” তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৮-৩০) সব বয়সের মেষতুল্য ব্যক্তিরা, বিশেষভাবে নিপীড়িত ও দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা যিশুর মনোরম ব্যক্তিত্ব ও উৎসাহজনক বার্তা থেকে প্রচুর সান্ত্বনা লাভ করেছিল।

৭, ৮. ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রদর রোগগ্রস্ত নারীর জন্য কীরকম বিধিনিষেধ ছিল কিন্তু যিশু তার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন?

নারীদের সঙ্গে যিশু কেমন আচরণ করতেন, তা বিবেচনা করুন। ইতিহাসজুড়ে, অনেক পুরুষ নারীদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছে। প্রাচীন ইস্রায়েলের ধর্মীয় নেতাদের ক্ষেত্রে এটা সত্য ছিল। কিন্তু, যিশু নারীদের সঙ্গে সম্মানপূর্বক আচরণ করতেন। এই বিষয়টা ১২ বছর ধরে প্রদর রোগে ভুগছিলেন এমন একজন নারীর সঙ্গে তাঁর আচরণে স্পষ্ট হয়। অনেক চিকিৎসকের দ্বারা তিনি ‘বিস্তর ক্লেশ ভোগ করিয়াছিলেন’ এবং সুস্থ হওয়ার প্রচেষ্টায় সর্বস্ব ব্যয় করেছিলেন। সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তিনি ‘আরও পীড়িত হইয়াছিলেন।’ ব্যবস্থা অনুযায়ী তাকে অশুচি বলে গণ্য করা হয়েছিল। যে-কেউ তাকে স্পর্শ করত, সে-ও অশুচি হয়ে পড়ত।—লেবীয়. ১৫:১৯, ২৫.

সেই নারী যখন শুনতে পেয়েছিলেন যে, যিশু অসুস্থদের সুস্থ করেন, তখন তিনি যিশুকে ঘিরে থাকা জনতার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, বলেছিলেন: “আমি যদি কেবল উহাঁর বস্ত্র স্পর্শ করিতে পাই, তবেই সুস্থ হইব।” তিনি যিশুকে স্পর্শ করেছিলেন এবং সঙ্গেসঙ্গে সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। যিশু জানতেন যে, সেই নারীর তাঁর বস্ত্র স্পর্শ করা উচিত হয়নি। তা সত্ত্বেও, তিনি তাকে বকাঝকা করেননি। বরং, তিনি তার প্রতি সদয় ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এত বছর ধরে অসুস্থ থাকায় সেই নারীর কেমন লেগেছিল এবং তিনি এও উপলব্ধি করেছিলেন যে, সাহায্য লাভের জন্য সেই নারী মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। সমবেদনা সহকারে, যিশু তাকে বলেছিলেন: “হে কন্যে, তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল। শান্তিতে চলিয়া যাও, ও তোমার রোগ হইতে মুক্ত থাক।”—মার্ক ৫:২৫-৩৪.

৯. যিশুর শিষ্যরা যখন ছোটো ছেলে-মেয়েদেরকে তাঁর কাছে আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

এমনকী ছোটো ছেলে-মেয়েরাও যিশুর উপস্থিতিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করত। একবার, লোকেরা যখন ছোটো ছেলে-মেয়েদেরকে তাঁর কাছে নিয়ে এসেছিল, তখন শিষ্যরা স্পষ্টতই এইরকম মনে করে তাদের ভর্ৎসনা করেছিল যে, তিনি চান না ছোটো ছেলে-মেয়েরা তাঁকে বিরক্ত করুক। কিন্তু, যিশু এইরকমটা মনে করেননি। শাস্ত্রীয় বিবরণ আমাদের বলে: “কিন্তু যীশু তাহা দেখিয়া অসন্তুষ্ট হইলেন, আর [শিষ্যগণকে] কহিলেন, শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই।” অধিকন্তু, “তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” যিশু কেবল ছোটো ছেলে-মেয়েদের গ্রহণ করেই নেননি; কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনাও জানিয়েছিলেন।—মার্ক ১০:১৩-১৬.

১০. কীভাবে যিশু সেই গুণাবলির অধিকারী হয়েছিলেন, যেগুলো তিনি প্রদর্শন করেছিলেন?

১০ কীভাবে যিশু সেই গুণাবলির অধিকারী হয়েছিলেন, যেগুলো তিনি পৃথিবীতে তাঁর জীবনকালে প্রদর্শন করেছিলেন? মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময়, তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে অগণিত বছর ধরে দেখেছিলেন এবং তাঁর উপায়গুলো সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৮:২২, ২৩, ৩০.) স্বর্গে তিনি যিহোবাকে তাঁর সমস্ত সৃষ্টির ওপর প্রেমময় উপায়ে মস্তকপদ ব্যবহার করতে দেখেছিলেন এবং সেই উপায়টা নিজেও ব্যবহার করেছিলেন। যিশু যদি বশীভূত না হতেন, তাহলে তিনি কি তা করতে সমর্থ হতেন? তাঁর পিতার বশীভূত হওয়া তাঁর জন্য পরমানন্দের বিষয় ছিল আর এইরকম একজন পুত্র থাকা যিহোবার জন্যও আনন্দের বিষয় ছিল। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু একেবারে নিখুঁতভাবে তাঁর স্বর্গীয় পিতার চমৎকার গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন। স্বর্গীয় রাজ্যের ঈশ্বরনিযুক্ত শাসক খ্রিস্টের বশীভূত হওয়া আমাদের জন্য কী এক বিশেষ সুযোগ!

খ্রিস্টের গুণাবলি অনুকরণ করুন

১১. (ক) কাকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত? (খ) কেন বিশেষভাবে মণ্ডলীর পুরুষদের যিশুকে অনুকরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত?

১১ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সকলের, বিশেষভাবে পুরুষদের, খ্রিস্টের গুণাবলি অনুকরণ করার জন্য ক্রমাগত কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত। ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, বাইবেল বলে: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট।” খ্রিস্ট যেমন তাঁর মস্তক সত্য ঈশ্বরকে অনুকরণ করেছিলেন, তেমনই খ্রিস্টান পুরুষদের তাদের মস্তককে—খ্রিস্টকে—অনুকরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। একজন খ্রিস্টান হওয়ার পর, প্রেরিত পৌল ঠিক তা-ই করেছিলেন। তিনি সহখ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, “যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও।” (১ করি. ১০:৩৪) আর প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ; কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) আরও একটা কারণে খ্রিস্টকে অনুকরণ করার উপদেশ বিশেষভাবে পুরুষদের জন্য আগ্রহের বিষয়। কারণ তারাই প্রাচীন ও পরিচারক দাস হয়। যিশু যেমন যিহোবাকে অনুকরণ করে আনন্দ পেতেন, তেমনই খ্রিস্টান পুরুষদের খ্রিস্টকে ও তাঁর গুণাবলি অনুকরণ করে আনন্দ পাওয়া উচিত।

১২, ১৩. প্রাচীনদের তাদের যত্নাধীন মেষদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত?

১২ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনরা খ্রিস্টের মতো হওয়ার জন্য শিখতে বাধ্য। পিতর প্রাচীনদেরকে এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে কর; নিরূপিত অধিকারের উপরে কর্ত্তৃত্বকারীরূপে নয়, কিন্তু পালের আদর্শ হইয়াই কর।” (১ পিতর ৫:১-৩) খ্রিস্টান প্রাচীনরা স্বেচ্ছাচারী, প্রভুত্বকারী, অযৌক্তিক অথবা রূঢ় হবে না। খ্রিস্টকে অনুকরণ করে তারা তাদেরকে আস্থা সহকারে যে-মেষদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে আচরণ করার সময় প্রেমময়, বিবেচক, নম্র ও সদয় হওয়ার প্রচেষ্টা করে।

১৩ মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব নেয়, তারা অসিদ্ধ পুরুষ আর তাদের সবসময় সেই সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে অবগত থাকা উচিত। (রোমীয় ৩:২৩) তাই, তাদের যিশু সম্বন্ধে জানার ও তাঁর প্রেম অনুকরণ করার জন্য উৎসুক হতে হবে। ঈশ্বর ও খ্রিস্ট লোকেদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করে, তা নিয়ে তাদেরকে চিন্তা করতে আর এরপর তাদেরকে অনুকরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। পিতর আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন: “তোমরা সকলেই এক জন অন্যের সেবার্থে নম্রতায় কটিবন্ধন কর, কেননা ‘ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।’”—১ পিতর ৫:৫.

১৪. প্রাচীনদের অন্যদেরকে কতটা সমাদর করা উচিত?

১৪ ঈশ্বরের পালের সঙ্গে আচরণ করার সময়, মণ্ডলীর নিযুক্ত পুরুষদের উত্তম গুণাবলি প্রদর্শন করতে হবে। রোমীয় ১২:১০ পদ বলে: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” প্রাচীন ও পরিচারক দাসেরা অন্যদের সমাদর করে। অন্যান্য খ্রিস্টানদের মতো, এই পুরুষরাও ‘প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই না করিয়া, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করিবে।’ (ফিলি. ২:৩) যারা নেতৃত্ব নেয়, তাদের নিশ্চিতভাবেই অন্যদেরকে নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখা উচিত। তা করার মাধ্যমে এই নিযুক্ত পুরুষরা পৌলের এই পরামর্শ অনুসরণ করবে: “কিন্তু বলবান যে আমরা, আমাদের উচিত, যেন দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন করি, আর আপনাদিগকে তুষ্ট না করি। আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক। কারণ খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না।”—রোমীয় ১৫:১-৩.

‘স্ত্রীদিগকে সমাদর করা’

১৫. স্ত্রীদের সঙ্গে স্বামীদের কেমন আচরণ করা উচিত?

১৫ এখন বিবাহিত পুরুষদের উদ্দেশে দেওয়া পিতরের পরামর্শ বিবেচনা করুন। তিনি লিখেছিলেন: “তদ্রূপ, হে স্বামিগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া [তোমাদের স্ত্রীদিগের] সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে . . . সমাদর কর।” (১ পিতর ৩:৭) কাউকে সমাদর করার অর্থ হল, সেই ব্যক্তিকে উচ্চমূল্য দেওয়া। তাই, আপনি এইরকম একজন ব্যক্তির মতামত, চাহিদা এবং প্রয়োজন বিবেচনা করবেন ও সেই সময় তার মতামত মেনে নেবেন, যখন অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় ঝুঁকির মুখে থাকে না। স্ত্রীর সঙ্গে একজন স্বামীর এভাবেই আচরণ করা উচিত।

১৬. স্ত্রীদেরকে সমাদর করার বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য স্বামীদের জন্য কোন সাবধানবাণী প্রদান করে?

১৬ স্ত্রীদেরকে সমাদর করার বিষয়ে স্বামীদের বলার সময় পিতর এই সাবধানবাণী যুক্ত করেন: “যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” (১ পিতর ৩:৭) এটা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, একজন পুরুষ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেন, সেটাকে যিহোবা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। স্ত্রীকে সমাদর করতে ব্যর্থ হলে তা তার প্রার্থনাকে রুদ্ধ করে দিতে পারে। অধিকন্তু, স্বামীরা যদি তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সমাদরপূর্বক আচরণ করে, তাহলে স্ত্রীরা কি সাধারণত ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয় না?

১৭. একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে কতখানি প্রেম করা উচিত?

১৭ স্ত্রীকে প্রেম করার বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য পরামর্শ দেয়: “স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। . . . কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন; . . . তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর।” (ইফি. ৫:২৮, ২৯, ৩৩) স্বামীদের তাদের স্ত্রীদেরকে কতখানি প্রেম করা উচিত? “স্বামীরা,” পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফি. ৫:২৫) হ্যাঁ, একজন স্বামীর তার স্ত্রীর জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত, ঠিক যেমন খ্রিস্ট অন্যদের জন্য দিয়েছিলেন। একজন খ্রিস্টান স্বামী যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে কোমলভাবে, বিবেচনা সহকারে, মনোযোগপূর্বক, নিঃস্বার্থভাবে আচরণ করেন, তখন তার স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর মস্তকপদের প্রতি বশীভূত থাকা আরও সহজ হয়ে ওঠে।

১৮. একজন পুরুষ যেন তার স্ত্রীর সঙ্গে সমাদরপূর্বক আচরণ করেন, সেইজন্য কী জোগানো হয়েছে?

১৮ এভাবে স্ত্রীদেরকে সমাদর করতে বলে স্বামীদের কাছে কি খুব বেশি কিছু আশা করা হচ্ছে? না, যিহোবা কখনো তাদেরকে এমন কিছু করতে বলেন না, যা তাদের সামর্থ্যের বাইরে। এ ছাড়া, যিহোবার উপাসকরা নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমী শক্তি লাভ করতে পারে আর তা হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) স্বামীরা তাদের প্রার্থনায় অনুরোধ করতে পারে, যেন তাঁর আত্মার মাধ্যমে যিহোবা তাদেরকে তাদের স্ত্রীরাসহ অন্যদের সঙ্গে আচরণ করতে সাহায্য করেন।—পড়ুন, প্রেরিত ৫:৩২.

১৯. আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

১৯ সত্যিই, কীভাবে খ্রিস্টের প্রতি বশীভূত হতে এবং তাঁর মস্তকপদ অনুকরণ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে শেখার ব্যাপারে পুরুষদের এক গুরু দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু, নারীদের, বিশেষভাবে স্ত্রীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে যে, যিহোবার ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকাকে তাদের কীভাবে দেখা উচিত।

[পাদটীকা]

^ যোহন ১:১ (NW): “আদিতে বাক্য ছিলেন এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন আর বাক্য একজন ঈশ্বর ছিলেন।”

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যিশুর কোন গুণাবলি আমাদের অনুকরণ করা উচিত?

• মেষদের সঙ্গে প্রাচীনদের কেমন আচরণ করা উচিত?

• একজন স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামীর কেমন ব্যবহার করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অন্যদেরকে সমাদর করে যিশুকে অনুকরণ করুন