সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আন্তরিকভাবে যিহোবার আশীর্বাদ অন্বেষণ করুন

আন্তরিকভাবে যিহোবার আশীর্বাদ অন্বেষণ করুন

আন্তরিকভাবে যিহোবার আশীর্বাদ অন্বেষণ করুন

‘যাঁহারা [“আন্তরিকভাবে,” NW] ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।’—ইব্রীয় ১১:৬.

১, ২. (ক) কীভাবে অনেকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ অন্বেষণ করে? (খ) কেন আমাদের যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী হওয়া উচিত?

 “ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন!” কিছু কিছু দেশে, কেউ হাঁচি দিলে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি সাধারণত এই কথা বলে থাকেন। বিভিন্ন ধর্মের পাদরিদের দেখা যায় যে, তারা লোকেদের, পশুপাখিদের ও বিভিন্ন জড়বস্তুকে আশীর্বাদ করে থাকে। ভ্রমণকারীরা হয়তো কোনো আশীর্বাদ লাভ করার আশায় বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। রাজনীতিবিদরা তাদের জাতির ওপর নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ যাচ্ঞা করে। আপনি কি মনে করেন যে, আশীর্বাদ চেয়ে করা এই অনুরোধগুলো উপযুক্ত? এগুলো কি কার্যকারী? কে প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে এবং কেন?

যিহোবা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, শেষকালে সমস্ত জাতির লোকেদের মধ্যে থেকে তাঁর একদল শুচি ও শান্তিপ্রিয় লোক থাকবে, যারা ঘৃণা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও, পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করবে। (যিশা. ২:২-৪; মথি ২৪:১৪; প্রকা. ৭:৯, ১৪) আমাদের মধ্যে যারা সেই অনুপ্রাণিত বর্ণনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ চাই এবং আমাদের তা প্রয়োজন কারণ এটা ছাড়া আমরা কখনোই সফল হওয়ার আশা করতে পারি না। (গীত. ১২৭:১) কিন্তু, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে পারি?

আশীর্বাদ বাধ্য ব্যক্তিদের ওপর আশ্রয় করে

৩. ইস্রায়েলীয়রা যদি বাধ্য থাকত, তাহলে এর ফল কী হতো?

হিতোপদেশ ১০:৬, ৭ পদ পড়ুন। ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার ঠিক আগে, যিহোবা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তারা অসাধারণ উন্নতি ও সুরক্ষা লাভ করবে, যদি তারা তাঁর বাধ্য হয়। (দ্বিতীয়. ২৮:১, ২) যিহোবা তাঁর লোকেদের কেবল আশীর্বাদই করবেন না কিন্তু সেইসঙ্গে আশীর্বাদ তাদের ওপর ‘আশ্রয়ও’ করবে। বাধ্য ব্যক্তিরা নিশ্চিতভাবেই আশীর্বাদ লাভ করবে।

৪. প্রকৃত বাধ্যতার সঙ্গে কী জড়িত?

কোন মনোভাব নিয়ে ইস্রায়েলীয়দের বাধ্য থাকতে হতো? ঈশ্বরের ব্যবস্থা বলেছিল যে, তাঁর লোকেরা যদি তাঁকে “আনন্দপূর্ব্বক প্রফুল্লচিত্তে” সেবা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৪৫-৪৭.) যিহোবা নির্দিষ্ট আদেশগুলোর প্রতি নিছক কর্তব্যের খাতিরে বাধ্যতা, যেরকম বাধ্যতা পশুপাখি কিংবা ভূত বা মন্দদূতেরাও দেখাতে পারে, সেটার চেয়েও আরও বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্য। (মার্ক ১:২৭; যাকোব ৩:৩) ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বাধ্যতা হচ্ছে প্রেমের এক প্রকাশ। এর সঙ্গে আনন্দ জড়িত, যা এই বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত যে, যিহোবার আজ্ঞাগুলো দুর্বহ নয় ও সেইসঙ্গে “যাহারা আন্তরিকভাবে তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬; ১ যোহন ৫:৩.

৫. কীভাবে যিহোবার প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করা একজন ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৭, ৮ পদে বলা আইনের বাধ্য হতে সাহায্য করত?

এই ধরনের নির্ভরতা সহকারে বাধ্যতা দেখানো, দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৭, ৮ পদে লিপিবদ্ধ আইন পালন করার দ্বারা কীভাবে প্রকাশিত হতে পারত, তা বিবেচনা করুন। (পড়ুন।) অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই আইনের বাধ্য হলে তা হয়তো দরিদ্রদের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসত, কিন্তু সেটা কি ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলত এবং উষ্ণ পরিবেশ নিয়ে আসত? এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, এটা কি তাঁর দাসদের ভরণপোষণ করার ব্যাপারে যিহোবার ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস এবং তাঁর উদারতাকে অনুকরণ করার সুযোগের জন্য উপলব্ধি প্রকাশ করত? কখনোই না! ঈশ্বর প্রকৃত উদার ব্যক্তির হৃদয়ের অবস্থা লক্ষ করে তার প্রতিটা কাজে তাকে আশীর্বাদ করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (দ্বিতীয়. ১৫:১০) সেই প্রতিজ্ঞার ওপর বিশ্বাস রাখা কাজ করতে পরিচালিত করবে এবং এর ফলে অনেক আশীর্বাদ লাভ করা যাবে।—হিতো. ২৮:২০.

৬. ইব্রীয় ১১:৬ পদ আমাদের কোন বিষয়ে আশ্বাস দেয়?

পুরস্কারদাতা হিসেবে যিহোবার ওপর বিশ্বাস থাকার পাশাপাশি ইব্রীয় ১১:৬ পদ আরেকটা গুণের ওপর জোর দেয়, যা ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য প্রয়োজন। লক্ষ করুন যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের পুরস্কার দেন, যারা “আন্তরিকভাবে তাঁহার অন্বেষণ করে।” এখানে মূল ভাষায় যে-শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি তীব্র ও মনোযোগপূর্ণ প্রচেষ্টাকে বোঝায়। এটা আশীর্বাদের পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে আমাদের কতই না আশ্বাস প্রদান করে! এর উৎস হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর, যিনি “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।” (তীত ১:২) হাজার হাজার বছর ধরে তিনি দেখিয়ে এসেছেন যে, তিনি যা প্রতিজ্ঞা করেন, তা সম্পূর্ণরূপে নির্ভরযোগ্য। তাঁর বাক্য কখনো নিষ্ফল হয় না; সেগুলো সবসময় সত্য প্রমাণিত হয়। (যিশা. ৫৫:১১) তাই আমরা সম্পূর্ণরূপে এই আস্থা রাখতে পারি যে, যদি আমরা প্রকৃত বিশ্বাস প্রদর্শন করি, তাহলে তিনি আমাদের জন্য পুরস্কারদাতা হিসেবে প্রমাণিত হবেন।

৭. কীভাবে আমরা অব্রাহামের “বংশের” মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করার বিষয়টাকে নিশ্চিত করতে পারি?

যিশু খ্রিস্ট অব্রাহামের “বংশের” মুখ্য অংশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। আর অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত সেই “বংশের” গৌণ অংশ গঠিত। তাদেরকে সেই ব্যক্তির ‘গুণকীর্ত্তন করিবার’ কার্যভার দেওয়া হয়েছে, ‘যিনি তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।’ (গালা. ৩:৭-৯, ১৪, ১৬, ২৬-২৯; ১ পিতর ২:৯) আমরা যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার আশা করতে পারি না, যদি আমরা সেই ব্যক্তিদের অবজ্ঞা করি, যাদেরকে যিশু তাঁর সর্বস্বের যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ সাহায্য ছাড়া, আমরা কখনোই ঈশ্বরের বাক্য থেকে যা পড়ি, তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে কিংবা কীভাবে তা কাজে লাগানো যায়, সেটা জানতে পারতাম না। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) শাস্ত্র থেকে আমরা যা শিখছি, তা কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার বিষয়টাকে নিশ্চিত করতে পারি।

ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা

৮, ৯. কীভাবে কুলপতি যাকোব তার অনুরোধের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য প্রাণপণ করেছিলেন?

ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করার বিষয়টা আমাদেরকে হয়তো কুলপতি যাকোবের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি জানতেন না যে, অব্রাহামের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা কীভাবে পূর্ণ হবে কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে, যিহোবা তার ঠাকুরদাদার বংশকে অতিশয় বৃদ্ধি করবেন, যার বংশধররা এক মহাজাতি হয়ে উঠবে। তাই, সা.কা.পূ. ১৭৮১ সালে যাকোব হারণে স্ত্রী খুঁজতে যান। তিনি কেবলমাত্র এমন কাউকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারেই আগ্রহী ছিলেন না, যিনি একজন চমৎকার সঙ্গী হবেন; এর পরিবর্তে, তিনি একজন আধ্যাত্মিকমনা নারীকে খুঁজেছিলেন, যিনি যিহোবার একজন উপাসক ছিলেন এবং যিনি তার সন্তানদের একজন উত্তম মা হবেন।

আমরা জানি যে, যাকোবের সঙ্গে তার আত্মীয় রাহেলের দেখা হয়েছিল। তিনি রাহেলকে ভালোবেসেছিলেন এবং তাকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য সাত বছর রাহেলের বাবা লাবনের দাস্যকর্ম করতে রাজি হয়েছিলেন। এটা নিছকই এক স্মরণীয় প্রেমকাহিনি ছিল না। যাকোব নিশ্চিতভাবে সেই প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানতেন, যা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার ঠাকুরদাদা অব্রাহামের কাছে করেছিলেন এবং তার বাবা ইস্‌হাকের কাছে তা পুনরায় বলেছিলেন। (আদি. ১৮:১৮; ২২:১৭, ১৮; ২৬:৩-৫, ২৪, ২৫) ফলে, ইস্‌হাক তার ছেলে যাকোবকে বলেছিলেন: “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া ফলবান্‌ ও বহুপ্রজ করুন, যেন তুমি জাতিসমাজ হইয়া উঠ। তিনি অব্রাহামের আশীর্ব্বাদ তোমাকে ও তোমার সহিত তোমার বংশকে দিউন; যেন তোমার প্রবাসস্থান এই যে দেশ ঈশ্বর অব্রাহামকে দিয়াছেন, ইহাতে তোমার অধিকার হয়।” (আদি. ২৮:৩, ৪) তাই, যাকোব উপযুক্ত স্ত্রী খুঁজে পাওয়ার এবং এক পরিবার উৎপন্ন করার জন্য যে-প্রচেষ্টা করেছিলেন, তা যিহোবার বাক্যের ওপর তার আস্থাকে প্রকাশ করেছিল।

১০. কেন যিহোবা যাকোবকে আশীর্বাদ করে আনন্দিত ছিলেন?

১০ যাকোব তার পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য ধনসম্পদ লাভের চেষ্টা করেননি। তার মন তার উত্তরাধিকারের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। তিনি যিহোবার ইচ্ছার পরিপূর্ণতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও, যাকোব ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য তার যথাসাধ্য করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তিনি তার বৃদ্ধাবস্থায়ও সেই একই মনোভাব বজায় রেখেছিলেন আর তাই যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৩২:২৪-২৯.

১১. ঈশ্বরের প্রকাশিত ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের কোন প্রচেষ্টা করা উচিত?

১১ যাকোবের মতো, আমরাও যিহোবার উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে সমস্ত বিস্তারিত তথ্য জানি না। তবে, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা ‘প্রভু’ যিহোবার ‘দিন’ সম্বন্ধে কী প্রত্যাশা করা যায়, সেই বিষয়ে মোটামুটি ধারণা লাভ করি। (২ পিতর ৩:১০, ১৭) উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি না যে ঠিক কখন যিহোবার দিন আসবে, কিন্তু আমরা জানি যে, তা নিকটবর্তী। আমরা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করি, যখন এটি বলে যে, অবশিষ্ট অল্পসময়ের মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা আমরা নিজেরা ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের কথা শোনে, উভয়েই পরিত্রাণ লাভ করতে পারব।—১ তীম. ৪:১৬.

১২. কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?

১২ আমরা জানি যে, শেষ যেকোনো সময়ে আসতে পারে; যিহোবার সেই সময় আমাদের গ্রহের প্রত্যেকের কাছে ব্যক্তিগত সাক্ষ্য দেওয়ার ওপর নির্ভর করে না। (মথি ১০:২৩) অধিকন্তু, কীভাবে কার্যকারী উপায়ে প্রচার কাজ সম্পাদন করা যায়, সেই বিষয়ে আমরা উত্তম নির্দেশনা লাভ করি। বিশ্বাস সহকারে, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকা যেকোনো সম্পদ ব্যবহার করে এই কাজে যতটা সম্ভব অংশগ্রহণ করি। আমরা কি সবসময় সবচেয়ে ফলপ্রসূ এলাকায় প্রচার করতে পারব? আসলে, কীভাবেই বা আমরা এই বিষয়টা আগে থেকে জানতে পারব? (পড়ুন, উপদেশক ১১:৫, ৬.) আমাদের কাজ হচ্ছে প্রচার করা, এই নির্ভরতা দেখিয়ে যে, যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন। (১ করি. ৩:৬, ৭) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা লক্ষ করে থাকেন এবং তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে প্রয়োজনীয় যেকোনো সুনির্দিষ্ট পরামর্শ জোগাবেন।—গীত. ৩২:৮.

পবিত্র আত্মার অন্বেষণ করা

১৩, ১৪. কীভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ক্ষমতা তাঁর দাসদের যোগ্য করে তোলার জন্য প্রদর্শিত হয়ে আসছে?

১৩ কী হবে, যদি আমরা কোনো কার্যভার পূর্ণ করতে অথবা প্রচার কাজে রত হতে অযোগ্য বোধ করি? যিহোবার সেবায় আমাদের যতটুকু সামর্থ্যই থাকুক না কেন, সেটাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করার জন্য যিহোবার কাছে তাঁর পবিত্র আত্মা চেয়ে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। (পড়ুন, লূক ১১:১৩.) ঈশ্বরের আত্মা লোকেদেরকে কোনো কাজ বা সেবার বিশেষ সুযোগের জন্য যোগ্য করে তুলতে পারে, তা তাদের পূর্বের পরিস্থিতি বা অভিজ্ঞতা যা-ই হোক না কেন। উদাহরণস্বরূপ, মিশর থেকে যাত্রা করার পর পরই, ঈশ্বরের আত্মা মেষপালক এবং দাসদের তাদের শত্রুদেরকে পরাজিত করতে সমর্থ করেছিল, যদিও যুদ্ধ সম্বন্ধে তাদের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। (যাত্রা. ১৭:৮-১৩) এই ঘটনার অল্প কিছুসময় পর, সেই একই আত্মা বৎসলেল ও অহলীয়াবকে আবাস নির্মাণের জন্য চমৎকার, ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত আদর্শ বা নকশা করতে সুসজ্জিত করেছিল।—যাত্রা. ৩১:২-৬; ৩৫:৩০-৩৫.

১৪ সেই শক্তিশালী আত্মা ঈশ্বরের আধুনিক দিনের দাসদেরকেও সেই সময়ে সংগঠনের প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিতে সুসজ্জিত করেছিল, যখন তাদের নিজস্ব ছাপানোর কাজ শুরু করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল। একটা চিঠিতে, সেই সময়ে ফ্যাক্টরি অধ্যক্ষ ভাই আর. জে. মার্টিন ১৯২৭ সালের মধ্যে কী সম্পাদন হয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করেছিলেন। “উপযুক্ত সময়ে প্রভু দ্বার খুলে দিয়েছিলেন; আর আমরা একটা বড়ো রোটারি [প্রেস] কিনতে পেরেছিলাম, যেটা এমন ব্যক্তিদের হাতে এসে পৌঁছেছিল, যারা এর গঠন ও তা কীভাবে চালাতে হয়, সেই সম্বন্ধে কিছুই জানত না। কিন্তু, প্রভু জানেন যে, কীভাবে সেই লোকেদের চিন্তাধারা এবং ক্ষমতাকে উন্নত করা যায়, যারা তাঁর কাছে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছে। . . . মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, আমরা সেই মুদ্রণযন্ত্রটা চালু করতে সক্ষম হয়েছিলাম; আর এটা এখনও সচল আছে আর এমনভাবে কাজ করে চলেছে, যে-সম্বন্ধে এটার নির্মাতারাও কখনো কল্পনা করতে পারেনি।” যিহোবা আজ পর্যন্ত এইরকম আন্তরিক প্রচেষ্টাকে আশীর্বাদ করে চলেছেন।

১৫. কীভাবে রোমীয় ৮:১১ পদ সেই ব্যক্তিদের জন্য উৎসাহজনক হতে পারে, যারা প্রলোভনের মুখোমুখি হচ্ছে?

১৫ যিহোবার আত্মা বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে। সেই আত্মা ঈশ্বরের সমস্ত দাসই লাভ করতে পারে আর এটা তাদেরকে প্রচণ্ড বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। কী হবে, যদি আমরা প্রলোভনের দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়ি? আমরা রোমীয় ৭:২১, ২৫ এবং ৮:১১ পদে বলা পৌলের কথাগুলো থেকে শক্তি লাভ করতে পারি। হ্যাঁ, “যিনি মৃতগণের মধ্য হইতে যীশুকে উঠাইলেন, তাঁহার আত্মা” আমাদের পক্ষে কাজ করতে পারে, মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য শক্তি প্রদান করতে পারে। সেই কথাগুলো আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা হয়েছিল, তবে এগুলোর নীতি ঈশ্বরের সমস্ত দাসের প্রতি প্রযোজ্য। আমরা সকলেই খ্রিস্টে বিশ্বাস অনুশীলন করার, অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলোকে মৃত্যুসাৎ করার এবং আত্মার নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে প্রাণপণ করার মাধ্যমে জীবন লাভ করতে পারি।

১৬. পবিত্র আত্মা লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৬ আমরা কি আশা করতে পারি যে, আমাদের দিক থেকে কোনোরকম প্রচেষ্টা ছাড়াই ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর সক্রিয় শক্তি প্রদান করবেন? না। আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করার পাশাপাশি, আমাদেরকে অবশ্যই ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য থেকে অধ্যবসায়ের সঙ্গে পুষ্টি গ্রহণ করতে হবে। (হিতো. ২:১-৬) এ ছাড়া, ঈশ্বরের আত্মা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ওপর রয়েছে। নিয়মিতভাবে সভায় উপস্থিত হওয়া “আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন,” তা ‘শুনিবার’ বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে। (প্রকা. ৩:৬) অধিকন্তু, আমরা যা শিখি, সেই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই নম্রভাবে সাড়া দিতে হবে। হিতোপদেশ ১:২৩ পদ আমাদের পরামর্শ দেয়: “তোমরা আমার অনুযোগে ফির; দেখ, আমি তোমাদের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব।” সত্যিই, ঈশ্বর “আপন আজ্ঞাবহদিগকে” তাঁর পবিত্র আত্মা দান করেন।—প্রেরিত ৫:৩২.

১৭. আমাদের প্রচেষ্টার ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদের প্রভাবকে আমরা কীসের সঙ্গে তুলনা করতে পারি?

১৭ ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য যদিও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন কিন্তু মনে রাখবেন যে, যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে প্রচুর পরিমাণে যে-উত্তম বিষয় প্রদান করেছেন, সেটার কারণ সম্ভবত শুধু কঠোর পরিশ্রম হতে পারে না। আমাদের প্রচেষ্টার ওপর তাঁর আশীর্বাদের প্রভাবকে, আমাদের দেহ স্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে যেভাবে উপকার লাভ করে, সেটার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ঈশ্বর আমাদের দেহকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যেন আমরা খাবার উপভোগ করি এবং সেটা থেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি গ্রহণ করি। এ ছাড়া, তিনি খাদ্যও জুগিয়ে থাকেন। আমরা পুরোপুরিভাবে জানি না যে, খাদ্য কীভাবে পুষ্টি জোগাড় করে কিংবা আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ব্যাখ্যা করতে পারি না যে, কীভাবে আমাদের দেহ আমরা যে-খাদ্য খাই, সেটা থেকে শক্তি উৎপাদন করে। আমরা কেবল জানি যে, সেই প্রক্রিয়া কাজ করে এবং আমরা খাদ্য খেয়ে এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করি। আমরা যদি খাওয়ার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য বাছাই করি, তাহলে এর ফলাফল আরও ভালো হবে। একইভাবে, অনন্তজীবন লাভ করার জন্য যিহোবা বিভিন্ন চাহিদা নিরূপণ করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে সেই চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যও জুগিয়েছেন। এটা স্পষ্ট যে, অধিকাংশ কাজ তিনিই করেন আর তাই তিনি আমাদের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তা সত্ত্বেও, আশীর্বাদ লাভ করার জন্য আমাদের তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে।—হগয় ২:১৮, ১৯.

১৮. আপনার দৃঢ়সংকল্প কী এবং কেন?

১৮ তাই, প্রতিটা কার্যভারে আপনার হৃদয় উজাড় করে দিন। সাফল্যের জন্য সবসময় যিহোবার ওপর নির্ভর করুন। (মার্ক ১১:২৩, ২৪) তা করার সময় এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন, “যে কেহ অন্বেষণ করে, সে পায়।” (মথি ৭:৮) আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে “জীবনমুকুট” লাভ করবে। (যাকোব ১:১২) খ্রিস্টের “আরও মেষ,” যারা অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছে, তারা তাঁর এই কথা শুনে আনন্দিত হবে: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।” (যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩৪) হ্যাঁ, “[ঈশ্বরের] আশীর্ব্বাদের পাত্রেরা দেশের অধিকারী হইবে, . . . তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীত. ৩৭:২২, ২৯.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• প্রকৃত বাধ্যতার সঙ্গে কী জড়িত?

• ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য কীসের প্রয়োজন?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা লাভ করতে পারি আর এটা কীভাবে আমাদের পক্ষে কাজ করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার জন্য যাকোব একজন স্বর্গদূতের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করেছিলেন।

আপনিও কি একইরকম আন্তরিক প্রচেষ্টা করেন?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বৎসলেল এবং অহলীয়াবকে সুদক্ষ হতে সুসজ্জিত করেছিল