সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রথমে “তাঁহার ধার্ম্মিকতার” বিষয়ে চেষ্টা করুন

প্রথমে “তাঁহার ধার্ম্মিকতার” বিষয়ে চেষ্টা করুন

প্রথমে “তাঁহার ধার্ম্মিকতার” বিষয়ে চেষ্টা করুন

“কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।”—মথি ৬:৩৩.

১, ২. ঈশ্বরের ধার্মিকতা কী এবং এটা কীসের ওপর ভিত্তি করে?

 ‘কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা কর।’ (মথি ৬:৩৩) যিশু খ্রিস্টের পর্বতেদত্ত এই উপদেশ বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের কাছে সুপরিচিত। আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা এটা দেখানোর প্রচেষ্টা করি যে, আমরা সেই রাজ্য সরকারকে ভালোবাসি এবং এর প্রতি অনুগত থাকতে চাই। কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের এই অভিব্যক্তির দ্বিতীয় অংশের কথাও মনে রাখতে হবে আর তা হল ‘ও তাঁহার ধার্ম্মিকতা।’ ঈশ্বরের ধার্মিকতা কী আর প্রথমে এর চেষ্টা করার অর্থ কী?

“ধার্ম্মিকতার” জন্য ব্যবহৃত মূল ভাষার শব্দগুলোকে “ন্যায়বিচার” অথবা “ন্যায়নিষ্ঠা” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। তাই, ঈশ্বরের ধার্মিকতা তাঁর ব্যক্তিগত মান ও মূল্যবোধ অনুসারে ন্যায়নিষ্ঠ। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবার এই মান নির্ধারণ করার অধিকার রয়েছে যে, কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ ও সেইসঙ্গে কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। (প্রকা. ৪:১১) তবে, ঈশ্বরের ধার্মিকতা অনুভূতিহীন, কঠোর আইনের এক সমষ্টি বা নিয়মকানুনের এক দীর্ঘ তালিকা নয়। এর পরিবর্তে, এটা যিহোবার ব্যক্তিত্বের ও তাঁর মৌলিক গুণ ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে, যার সঙ্গে অন্যান্য মৌলিক গুণ যেমন, প্রেম, প্রজ্ঞা ও শক্তি জড়িত। তাই, ঈশ্বরের ধার্মিকতা তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই বিষয়টার সঙ্গে, তাঁর সেবা করতে চায় এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি কী আশা করেন, সেটাও জড়িত।

৩. (ক) প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার অর্থ কী? (খ) কেন আমরা যিহোবার ধার্মিক মানগুলোকে সমর্থন করি?

প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার অর্থ কী? সহজভাবে বললে, এর অর্থ ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য তাঁর ইচ্ছা পালন করা। তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, আমাদের নয় বরং তাঁর মূল্যবোধ ও নিখুঁত মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার চেষ্টা করা। (পড়ুন, রোমীয় ১২:২.) এই ধরনের জীবনযাপনের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এটা শাস্তির ভয়ে তাঁর আইনগুলো পালন করার মতো কোনো বিষয় নয়। এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে নিজেদের মানগুলোকে প্রতিষ্ঠা না করে বরং তাঁর মানগুলোকে সমর্থন করার দ্বারা তাঁকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা স্বীকার করি যে, এটাই হল সঠিক কাজ এবং ঠিক তা করার জন্যই আমাদেরকে তৈরি করা হয়েছে। ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা যিশু খ্রিস্টের মতো আমাদেরও ধার্মিকতাকে ভালোবাসতে হবে।—ইব্রীয় ১:৮, ৯.

৪. কেন ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

যিহোবার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: এদন উদ্যানে মূল পরীক্ষাটা এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ছিল যে, আদম ও হবা মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে যিহোবার অধিকার মেনে নেবে, নাকি নেবে না। (আদি. ২:১৭; ৩:৫) তা করার ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা, তাদের বংশধর হিসেবে আমাদের জন্য দুঃখকষ্ট এবং মৃত্যু নিয়ে এসেছে। (রোমীয় ৫:১২) অন্যদিকে, ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, ধার্ম্মিকতা ও সম্মান পায়।” (হিতো. ২১:২১) হ্যাঁ, প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করলে যিহোবার সঙ্গে মনোরম সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় আর তা আমাদেরকে পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করে।—রোমীয় ৩:২৩, ২৪.

আত্মধার্মিক হওয়ার বিপদ

৫. আমাদের কোন বিপদ এড়িয়ে চলতে হবে?

রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে প্রেরিত পৌল এমন একটা বিপদ সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন, যা আমাদের সকলের এড়িয়ে চলতে হবে যদি আমরা প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার ক্ষেত্রে সফল হতে চাই। পৌল সহযিহুদিদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এই কথা বলেছিলেন: “আমি তাহাদের পক্ষে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, ঈশ্বরের বিষয়ে তাহাদের উদ্যোগ আছে, কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়। ফলতঃ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা না জানায়, এবং নিজ ধার্ম্মিকতা স্থাপন করিবার চেষ্টা করায়, তাহারা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার বশীভূত হয় নাই।” (রোমীয় ১০:২, ৩) পৌলের কথা অনুযায়ী, সেই উপাসকরা ঈশ্বরের ধার্মিকতা বুঝতে পারেনি, কারণ তারা নিজেদের ধার্মিকতা স্থাপন করার চেষ্টায় অতিরিক্ত ব্যস্ত ছিল। *

৬. কোন মনোভাব আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত এবং কেন?

একটা যে-উপায়ে আমরা এই ফাঁদে পড়তে পারি তা হল, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবাকে এক প্রতিযোগিতা হিসেবে মনে করা ও অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা। এই মনোভাব আমাদেরকে নিজেদের বিভিন্ন ক্ষমতা সম্বন্ধে সহজেই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। কিন্তু, আসলে আমরা যদি এইরকম আচরণ করে থাকি, তাহলে আমরা যিহোবার ধার্মিকতার বিষয়ে ভুলে যাব। (গালা. ৬:৩, ৪) সঠিক কাজ করার যথাযথ কারণটা হল, যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা। আমাদের নিজ ধার্মিকতা প্রমাণ করার যেকোনো প্রচেষ্টা, তাঁকে ভালোবাসি বলে আমরা যে-দাবি করি, সেটাকে অর্থহীন করে তুলতে পারে।—পড়ুন, লূক ১৬:১৫.

৭. কীভাবে যিশু আত্মধার্মিকতার সমস্যা সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন?

যিশু সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উদ্‌বিগ্ন ছিলেন, “যাহারা আপনাদের উপরে বিশ্বাস রাখিত, মনে করিত যে, তাহারাই ধার্ম্মিক, এবং অন্য সকলকে হেয়জ্ঞান করিত।” আত্মধার্মিক হওয়ার সমস্যাটা সম্বন্ধে তিনি এই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন: “দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করিবার জন্য ধর্ম্মধামে গেল; এক জন ফরীশী, আর এক জন করগ্রাহী। ফরীশী দাঁড়াইয়া আপনা আপনি এইরূপ প্রার্থনা করিল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের—উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের—মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি; আমি সপ্তাহের মধ্যে দুই বার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি। কিন্তু করগ্রাহী দূরে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে কহিল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি এই পাপীর প্রতি দয়া কর।” যিশু এই বলে শেষ করেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়; কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।”—লূক ১৮:৯-১৪.

আরেকটা বিপদ— “অতি ধার্ম্মিক” হওয়া

৮, ৯. “অতি ধার্ম্মিক” হওয়ার অর্থ কী আর এটা আমাদের কী করার দিকে পরিচালিত করতে পারে?

আরেকটা যে-বিপদ আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে, তা উপদেশক ৭:১৬ পদে বর্ণনা করা হয়েছে: “অতি ধার্ম্মিক হইও না, ও আপনাকে অতিশয় জ্ঞানবান দেখাইও না; কেন আপনাকে নষ্ট করিবে?” এরপর অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখক এইরকম মনোভাব এড়িয়ে চলার একটা কারণ সম্বন্ধে তুলে ধরার জন্য আরও বলে চলেন, যা ২০ পদে রয়েছে: “এমন ধার্ম্মিক লোক পৃথিবীতে নাই, যে সৎকর্ম্ম করে, পাপ করে না।” যে-ব্যক্তি “অতি ধার্ম্মিক” হয়ে ওঠেন, তিনি নিজেই ধার্মিকতার মান স্থাপন করেন এবং সেগুলোর দ্বারা অন্যদের বিচার করেন। কিন্তু, তিনি এটা বুঝতে ব্যর্থ হন যে, তা করার মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের চেয়ে বরং তার মানগুলোকে তুলে ধরছেন আর এভাবে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিজেকে অধার্মিক বলে প্রমাণিত করছেন।

“অতি ধার্ম্মিক” হওয়া এমনকী বিভিন্ন বিষয় মীমাংসা করার ব্যাপারে যিহোবার উপায় সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলতে প্ররোচিত করতে পারে। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি যিহোবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ন্যায্যতা বা সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি, তাহলে আমরা আসলে আমাদের ধার্মিকতার মানকে যিহোবার মানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করছি। এটা এমন যেন আমরা যিহোবাকে পরীক্ষা করছি এবং সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে আমাদের নিজেদের মানদণ্ড দিয়ে তাঁর বিচার করছি। কিন্তু আমরা নই বরং যিহোবাই হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁর ধার্মিকতার মানদণ্ড স্থাপন করার অধিকার রয়েছে!—রোমীয় ১৪:১০.

১০. ইয়োবের মতো কী হয়তো আমাদেরকে ঈশ্বরের বিচার করতে পরিচালিত করতে পারে?

১০ যদিও আমাদের মধ্যে কেউই ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিচার করতে চাই না, তবুও আমাদের অসিদ্ধ স্বভাব আমাদেরকে তা করার দিকেই পরিচালিত করতে পারে। এটা সহজেই হতে পারে, যখন আমরা এমন কিছু দেখি, যেটাকে আমরা অন্যায্য বলে মনে করি অথবা যদি আমরা ব্যক্তিগতভাবে কষ্টভোগ করি। এমনকী বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবও এই ভুল করেছিলেন। ইয়োবকে প্রথমে “সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। (ইয়োব ১:১) কিন্তু, পরে ইয়োব একটার পর একটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন, যেগুলো তার কাছে অন্যায্য বলে মনে হয়েছিল। এটা ইয়োবকে “ঈশ্বর অপেক্ষা আপনাকে ধার্ম্মিক” ঘোষণা করতে পরিচালিত করেছিল। (ইয়োব ৩২:১, ২) ইয়োবকে তার দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করতে হয়েছিল। তাই, মাঝে মাঝে আমরাও যদি নিজেদের একইরকম পরিস্থিতিতে দেখতে পাই, তাহলে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে নিজেদের চিন্তাভাবনা রদবদল করার ক্ষেত্রে কী আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

আমরা সবসময় সমস্ত প্রকৃত ঘটনা জানি না

১১, ১২. (ক) আমরা যদি কোনো কিছুকে অন্যায্য বলে মনে করি, তাহলে আমাদের কী মনে রাখতে হবে? (খ) কেন কেউ কেউ মনে করে যে, দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মজুরদের সম্বন্ধে বলা যিশুর দৃষ্টান্তটি অন্যায্য কোনো বিষয়কে চিত্রিত করে?

১১ প্রথম যে-বিষয়টা আমাদের মনে রাখতে হবে, তা হল আমরা সবসময় সমস্ত প্রকৃত ঘটনা জানি না। ইয়োবের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। তিনি স্বর্গে ঈশ্বরের দূত পুত্রদের সভা সম্বন্ধে জানতেন না, যেখানে শয়তান তাকে মিথ্যা দোষারোপ করেছিল। (ইয়োব ১:৭-১২; ২:১-৬) ইয়োব বুঝতে পারেননি যে, তার সমস্যাগুলো আসলে শয়তান ঘটিয়েছিল। বস্তুতপক্ষে, আমরা নিশ্চিতভাবে এও জানি না যে, ইয়োব শয়তানের প্রকৃত পরিচিতি সম্বন্ধে জানতেন কি না! তাই, তিনি ভুলভাবে এইরকম মনে করেছিলেন যে, তার সমস্যাগুলো ঈশ্বর ঘটিয়েছিলেন। হ্যাঁ, আমরা যখন সমস্ত প্রকৃত ঘটনা না জানি, তখন সহজেই ভুল উপসংহারে পৌঁছাতে পারি।

১২ উদাহরণস্বরূপ, দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মজুরদের সম্বন্ধে বলা যিশুর দৃষ্টান্তটি বিবেচনা করুন। (পড়ুন, মথি ২০:৮-১৬.) এখানে যিশু এমন একজন গৃহকর্তার বিষয়ে বর্ণনা করেন, যিনি তার সমস্ত মজুরকে সমপরিমাণ বেতন প্রদান করেন, তা তারা সারাদিন কিংবা মাত্র এক ঘন্টা, যতটুকুই কাজ করুক না কেন। এই সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন? এটাকে কি ন্যায্য বলে মনে হয়? আপনি হয়তো সঙ্গেসঙ্গেই সেই মজুরদের কথা বলবেন, যারা রোদে পুড়ে সারাদিন কাজ করেছিল। নিশ্চিতভাবেই, তারা আরও বেশি বেতন পাওয়ার যোগ্য ছিল! কিন্তু সেই দৃষ্টান্তের উপসংহার বিবেচনা করলে, গৃহকর্তাকে হয়তো প্রেমহীন এবং অন্যায্য হিসেবে দেখা হতে পারে। এমনকী যারা অভিযোগ করেছিল, তাদের প্রতি তার উত্তর হয়তো কর্তৃত্বের অপব্যবহার বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমরা কি সমস্ত প্রকৃত ঘটনা জানি?

১৩. দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মজুরদের সম্বন্ধে বলা যিশুর দৃষ্টান্তটি আমরা অন্য কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে পারি?

১৩ আসুন আমরা অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দৃষ্টান্তটি বিশ্লেষণ করি। কোনো সন্দেহ নেই যে, দৃষ্টান্তে বলা গৃহকর্তা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই সমস্ত ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের জন্য ভরণপোষণ জোগাতে হতো। যিশুর দিনে, ক্ষেত্রের মজুরদের রোজকার ভিত্তিতে বেতন প্রদান করা হতো। তাদের পরিবার প্রতি দিনের মজুরির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এই বিষয়টা মনে রেখে, সেই ব্যক্তিদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যাদেরকে গৃহকর্তা দিনের শেষের দিকে পেয়েছিলেন আর তাই তারা মাত্র এক ঘন্টা কাজ করেছিল। তারা হয়তো তাদের পরিবারকে মাত্র এক ঘন্টার বেতন দিয়ে ভরণপোষণ করতে পারত না; তা সত্ত্বেও, তারা কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল এবং কাজ পাওয়ার জন্য সারাদিন ধরে অপেক্ষা করছিল। (মথি ২০:১-৭) তাদেরকে যে সারাদিন কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি, সেটা তাদের দোষ ছিল না। এখানে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছিল। আপনাকে যদি এটা জেনে সারাদিন অপেক্ষা করতে হতো যে, সেই দিন আপনি যা আয় করবেন, সেটার ওপর অন্যেরা নির্ভর করে আছে, তাহলে আপনার কেমন লাগত, তা একটু কল্পনা করে দেখুন। কিছু কাজ পেলে আপনি কতই না কৃতজ্ঞ হতেন—আর আপনার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যদি যথেষ্ট বেতন লাভ করতেন, তাহলে কত অবাকই না হতেন!

১৪. দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারি?

১৪ আসুন, এখন আমরা গৃহকর্তার কাজকে পুনর্বিবেচনা করি। তিনি কাউকেই কম বেতন দেননি। বরং, তিনি সমস্ত মজুরকে এমন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন যে, তাদের নিজেদের ও তাদের পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য অর্থ উপার্জন করার অধিকার তাদের রয়েছে। প্রচুর মজুর প্রাপ্তিসাধ্য হওয়ায় গৃহকর্তা সেই সুযোগটাকে আরও কম বেতনে মজুর পাওয়ার জন্য কাজে লাগাতে পারতেন। কিন্তু, তিনি তা করেননি। তার সমস্ত মজুর তাদের পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর মতো যথেষ্ট অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। এই অতিরিক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা গৃহকর্তার কাজের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে পারে। তার সিদ্ধান্ত ছিল এক প্রেমময় সিদ্ধান্ত আর সেটা কর্তৃত্বের কোনো অপব্যবহার ছিল না। আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? মাত্র কয়েকটা বিষয় বিবেচনা করার ফলে আমরা ভুল উপসংহারে পৌঁছাতে পারি। বস্তুতপক্ষে, এই নীতিগল্প ঈশ্বরের ধার্মিকতার উৎকৃষ্টতা সম্বন্ধে তুলে ধরে, যা কেবল বৈধ নিয়মকানুন এবং মানুষের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে না।

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত কিংবা সীমিত হতে পারে

১৫. কেন ন্যায্যতা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত অথবা সীমিত হতে পারে?

১৫ আমরা যখন এমন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যা আমাদের কাছে অন্যায্য বলে মনে হতে পারে, তখন মনে রাখার মতো দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো বিকৃত কিংবা সীমিত হতে পারে। এটা অসিদ্ধতা, ভেদাভেদ অথবা সাংস্কৃতিক পটভূমির কারণে বিকৃত হতে পারে। এ ছাড়া, এটা উদ্দেশ্যগুলো বোঝার এবং লোকেদের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে, তা জানার ব্যাপারে আমাদের অক্ষমতার কারণে সীমিত হতে পারে। এর বৈসাদৃশ্যে, যিহোবা ও যিশুর এই ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।—হিতো. ২৪:১২; মথি ৯:৪; লূক ৫:২২.

১৬, ১৭. দায়ূদ যখন বৎশেবার সঙ্গে পাপ করেছিলেন, তখন কেন যিহোবা পারদারিকতা সম্বন্ধে তাঁর আইন কার্যকর করেননি?

১৬ আসুন আমরা বৎশেবার সঙ্গে দায়ূদের পারদারিকতার বিবরণটা বিশ্লেষণ করি। (২ শমূ. ১১:২-৫) মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী, তাদের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য ছিল। (লেবীয়. ২০:১০; দ্বিতীয়. ২২:২২) যদিও যিহোবা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর নিজের আইনকে কার্যকর করেননি। যিহোবার এই কাজ কি অন্যায্য ছিল? তিনি কি দায়ূদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের মনোভাব দেখিয়েছিলেন এবং তাঁর নিজের ধার্মিক মানগুলো লঙ্ঘন করেছিলেন? কোনো কোনো বাইবেল পাঠক এইরকমই মনে করেছে।

১৭ কিন্তু, পারদারিকতা সম্বন্ধে এই আইন যিহোবা অসিদ্ধ বিচারকদের দিয়েছিলেন, যারা হৃদয় পড়তে পারত না। তাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, তারা এই আইনের মাধ্যমে তাদের বিচারে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে, যিহোবা হৃদয় পড়তে পারেন। (আদি. ১৮:২৫; ১ বংশা. ২৯:১৭) তাই আমাদের এইরকমটা আশা করা উচিত নয় যে, যিহোবাকে অসিদ্ধ বিচারকদের জন্য তাঁর প্রস্তুতকৃত একটা আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। যদি তা-ই হতো, তাহলে সেটা কি স্পষ্ট দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন একজন ব্যক্তিকে জোর করে এমন একটা চশমা পরানোর মতো হতো না, যে-চশমাটা ক্রটিপূর্ণ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের দৃষ্টিকে স্পষ্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে? যিহোবা দায়ূদের এবং বৎশেবার হৃদয় পড়তে এবং তাদের অকপট অনুতাপ দেখতে পেরেছিলেন। এইরকম একটা বিষয় বিবেচনা করার মাধ্যমে তিনি করুণাময় ও প্রেমময় এক উপায়ে তাদের বিচার করেছিলেন।

যিহোবার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করে চলুন

১৮, ১৯. কী আমাদেরকে কখনো নিজেদের ধার্মিক মান অনুযায়ী যিহোবার বিচার না করতে সাহায্য করবে?

১৮ তাই, মাঝে মাঝে আমরা যদি এমন কিছু দেখি, যেটাকে আমরা যিহোবার পক্ষে অন্যায্য কাজ বলে মনে করি—তা সেটা আমরা বাইবেলের কোনো বিবরণেই পড়ি না কেন কিংবা ব্যক্তিগত জীবনেই ভোগ করি না কেন—তাহলে আমরা যেন কখনোই আমাদের নিজেদের ধার্মিক মান অনুযায়ী ঈশ্বরকে বিচার না করি। মনে রাখবেন যে, আমরা সবসময় সমস্ত প্রকৃত ঘটনা জানি না এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত অথবা সীমিত হতে পারে। কখনো ভুলে যাবেন না যে, “মনুষ্যের ক্রোধ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করে না।” (যাকোব ১:১৯, ২০) এভাবে, আমাদের হৃদয় কখনো “সদাপ্রভুর উপরে রুষ্ট” হবে না।—হিতো. ১৯:৩.

১৯ তাই, আসুন যিশুর মতো আমরাও সর্বদা এই বিষয়টা স্বীকার করি যে, একমাত্র যিহোবারই কোনটা ধার্মিক ও কোনটা ভালো, সেই বিষয়ে মান স্থাপন করার অধিকার রয়েছে। (মার্ক ১০:১৭, ১৮) তাঁর মান সম্বন্ধে “তত্ত্বজ্ঞান” বা সঠিক জ্ঞান অর্জন করার প্রচেষ্টা করুন। (রোমীয় ১০:২; ২ তীম. ৩:৭) এগুলো মেনে নেওয়ার এবং যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা প্রথমে “তাঁহার ধার্ম্মিকতার” বিষয়ে চেষ্টা করছি।—মথি ৬:৩৩.

[পাদটীকা]

^ একজন পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, মূল ভাষায় যে-শব্দটিকে “স্থাপন করিবার” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ এও হতে পারে, ‘এক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা।’ তাই, সেই যিহুদিরা আসলে ঈশ্বরের নয় বরং নিজেদের প্রশংসার জন্য এক রূপক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছিল।

আপনার কি মনে আছে?

• কেন যিহোবার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ?

• কোন দুটো বিপদ আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে?

• কীভাবে আমরা প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

মন্দিরে প্রার্থনা করেছিল এমন দুজন ব্যক্তি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

দিনের শেষে আসা মজুরদেরকে, সারাদিন কাজ করেছে এমন মজুরদের মতো একই বেতন দেওয়া কি অন্যায্য ছিল?