সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা—ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হও

অল্পবয়সিরা—ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হও

অল্পবয়সিরা—ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হও

“প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর, সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর।”—হিতো. ৪:৫.

১, ২. (ক) কী পৌলকে নিজের সঙ্গে সফলভাবে লড়াই করতে সাহায্য করেছিল? (খ) কীভাবে তোমরা প্রজ্ঞা ও বোধগম্যতা অর্জন করতে পারো?

 “সৎকার্য্য করিতে ইচ্ছা করিলেও মন্দ আমার কাছে উপস্থিত হয়।” তোমরা কি জানো, কে এই কথাগুলো বলেছিলেন? তিনি ছিলেন প্রেরিত পৌল। যদিও পৌল যিহোবাকে ভালোবাসতেন কিন্তু মাঝে মাঝে এমন সময় এসেছিল, যখন তার পক্ষে সৎ কাজ বা যা সঠিক, তা করা কঠিন বলে মনে হয়েছিল। নিজের সঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে তিনি কেমন বোধ করেছিলেন? “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি!” তিনি লিখেছিলেন। (রোমীয় ৭:২১-২৪) পৌল কেমন বোধ করেছিলেন, তা কি তোমরা বুঝতে পারো? যা সঠিক, তা করাকে কি তোমরা মাঝে মাঝে কঠিন বলে মনে করো? আর এর ফলে কি তোমরা হতাশ হয়ে পড়ো, যেমনটা পৌল হয়েছিলেন? যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে নিরুৎসাহিত হোয়ো না। পৌল যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেগুলো তিনি সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন আর তোমরাও করতে পারবে।

পৌল সফল হয়েছিলেন কারণ তিনি নিজেকে “নিরাময় বাক্য সমূহের” দ্বারা পরিচালিত হতে দিয়েছিলেন। (২ তীম. ১:১৩, ১৪) এর ফলে, তিনি সেই প্রজ্ঞা ও বোধগম্যতা অর্জন করেছিলেন, যেগুলো বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার এবং উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রয়োজন। যিহোবা ঈশ্বর তোমাদেরকে প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনা বা বোধগম্যতা অর্জন করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। (হিতো. ৪:৫) তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলে সর্বোত্তম উপদেশ জুগিয়েছেন। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.) বাবা-মায়ের সঙ্গে আচরণ করার সময়, টাকাপয়সা খরচ করার ব্যাপারে এবং একা থাকাকালীন কীভাবে তোমরা শাস্ত্রে প্রাপ্ত নীতিগুলো থেকে উপকার লাভ করতে পারো, তা বিবেচনা করো।

পরিবারে ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়া

৩, ৪. কেন তোমাদের বাবা-মায়ের দেওয়া নিয়মকানুন মেনে চলা তোমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে কিন্তু কেন বাবা-মা নিয়মকানুন তৈরি করে?

তোমাদের পক্ষে কি তোমাদের বাবা-মায়ের নিয়মকানুন মেনে চলাকে কঠিন বলে মনে হয়? কেন এইরকমটা মনে হয়? একটা কারণ হতে পারে যে, তোমরা আরও স্বাধীনতা চাও। এই ধরনের প্রবণতা খুবই স্বাভাবিক। এটা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার একটা অংশ। কিন্তু, ঘরে থাকাকালীন তোমাদের বাবা-মায়ের বাধ্য থাকার বাধ্যবাধকতা তোমাদের রয়েছে।—ইফি. ৬:১-৩.

তোমাদের বাবা-মায়ের নিয়মকানুন ও চাহিদাগুলো সম্বন্ধে সঠিক বোধগম্যতা অর্জন করলে, তোমাদের পক্ষে সেগুলো মেনে চলা সহজ হতে পারে। এটা ঠিক যে, তোমরাও হয়তো মাঝে মাঝে ১৮ বছর বয়সি ব্রিয়িলের * মতো মনে করতে পারো, যে তার বাবা-মা সম্বন্ধে বলেছিল: “আমার মতো বয়সে কেমন লাগতে পারে, তা তারা একেবারে ভুলে গিয়েছে। তারা আমার মতামত শুনতে চায় না, আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে দেয় না অথবা একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতো হতে দিতে চায় না।” ব্রিয়িলের মতো তোমাদেরও হয়তো এইরকমটা মনে হতে পারে যে, তোমাদের যতটা স্বাধীনতা দেওয়া উচিত বলে তোমরা মনে করো, তোমাদের বাবা-মা ততটা দেয় না। কিন্তু, তোমাদের বাবা-মা মূলত তোমাদের জন্য চিন্তা করে বলেই নিয়মকানুন তৈরি করে। অধিকন্তু, খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা জানে যে, তারা যেভাবে তোমাদের যত্ন নিয়ে থাকে, সেই ব্যাপারে যিহোবার কাছে তাদের নিকাশ দিতে হবে।—১ তীম. ৫:৮.

৫. কীভাবে তোমাদের বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা তোমাদেরকে উপকৃত করতে পারে?

আসলে, তোমাদের বাবা-মায়ের নিয়মকানুন মেনে চলা ঋণ পরিশোধ করার মতো, যা একটা ব্যাঙ্ককে তোমরা দিতে বাধ্য—তোমাদের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে তোমরা যতটা নির্ভরযোগ্য হবে, ততটাই ব্যাঙ্ক তোমাদেরকে অর্থ প্রদান করতে চাইবে। একইভাবে, তোমরা তোমাদের বাবা-মাকে সম্মান দিতে ও তাদের প্রতি বাধ্যতা দেখাতে বাধ্য। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১:৮.) তোমরা যত বেশি বাধ্য হবে, তোমাদের বাবা-মা খুব সম্ভবত তোমাদেরকে আরও বেশি স্বাধীনতা প্রদান করবে। (লূক ১৬:১০) অবশ্য, তোমরা যদি ক্রমাগত নিয়মকানুন অমান্য করো, তাহলে তোমাদের বাবা-মা যদি “অর্থের” পরিমাণ কমিয়ে দেয় বা এমনকী বন্ধ করে দেয়, তাহলে এতে অবাক হোয়ো না।

৬. কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের অল্পবয়সি সন্তানদেরকে বাধ্য থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

একটা যে-উপায়ে বাবা-মায়েরা তাদের অল্পবয়সি সন্তানদেরকে তাদের নিয়মকানুনের প্রতি বাধ্য থাকতে সাহায্য করতে পারে, তা হল উদাহরণের মাধ্যমে। তারা নিজেরা যদি যিহোবা যা চান, সেটার প্রতি বাধ্যতা দেখাতে ইচ্ছুক থাকে, তাহলে তা দেখাবে যে, ঈশ্বরের নিয়মকানুন যুক্তিযুক্ত। এটা অল্পবয়সিদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, তাদের বাবা-মায়ের দ্বারা স্থাপিত নিয়মকানুনের প্রতি বাধ্য থাকা যুক্তিযুক্ত। (১ যোহন ৫:৩) অধিকন্তু, বাইবেলে এমন ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যখন যিহোবা এমনকী তাঁর দাসদেরকে কিছু বিষয়ে নিজেদের কথা ব্যক্ত করার সুযোগ দিয়েছিলেন। (আদি. ১৮:২২-৩২; ১ রাজা. ২২:১৯-২২) কোনো কোনো সময়ে বাবা-মায়েরা কি তাদের সন্তানদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ দিতে পারে?

৭, ৮. (ক) কিছু অল্পবয়সি কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়? (খ) কোন বিষয়টা বোঝা তোমাদেরকে শাসন থেকে উপকার লাভ করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে?

এ ছাড়া, অল্পবয়সিরা হয়তো এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মুখোমুখিও হতে পারে, যেগুলোকে তারা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে অন্যায্য সমালোচনা বলে মনে করে। মাঝে মাঝে তোমরা হয়তো ক্র্যাগ নামে একজন অল্পবয়সির মতো অনুভব করেছ, যে বলেছিল: “আমার মা একজন গোয়েন্দা পুলিশের মতো—সবসময় আমার দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়।”

যখন আমাদের সংশোধন বা শাসন করা হয়, তখন প্রায়ই আমাদের এইরকম মনে হয় যে, আমাদের সমালোচনা করা হচ্ছে। বাইবেল স্বীকার করে যে, শাসন মেনে নেওয়া কঠিন, এমনকী তা যদি পুরোপুরি ন্যায্যও হয়ে থাকে। (ইব্রীয় ১২:১১) কী তোমাদেরকে প্রদত্ত শাসন থেকে উপকার লাভ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? স্মরণে রাখার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, তোমাদের বাবা-মায়ের পরামর্শ খুব সম্ভবত তোমাদের প্রতি তাদের প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে থাকে। (হিতো. ৩:১২) তারা তোমাদেরকে মন্দ অভ্যাসগুলোতে রত হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার ব্যাপারে সাহায্য করতে চায়। তোমাদের বাবা-মায়েরা সম্ভবত বুঝতে পারে যে, তারা যদি তোমাদেরকে সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা তোমাদের প্রতি ঘৃণা দেখানোর সমরূপ! (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৩:২৪.) এ ছাড়া, বোঝার চেষ্টা করো যে, ভুল করা শিক্ষালাভের প্রক্রিয়ার একটা অংশ। তাই, তোমাদেরকে যখন সংশোধন করা হয়, তখন যা বলা হয়, সেটার মধ্যে প্রজ্ঞার ছোটো ছোটো অংশ খোঁজার চেষ্টা করো না কেন? “রৌপ্যের বাণিজ্য অপেক্ষাও [প্রজ্ঞার] বাণিজ্য উত্তম, সুবর্ণ অপেক্ষাও প্রজ্ঞা-লাভ উত্তম।”—হিতো. ৩:১৩, ১৪.

৯. অন্যায্য বলে মনে হওয়া কোনো বিষয় নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করার পরিবর্তে, অল্পবয়সিরা কী করতে পারে?

তবে, বাবা-মায়েরাও ভুল করে থাকে। (যাকোব ৩:২) তোমাদেরকে শাসন করার সময় তারা হয়তো মাঝে মাঝে অবিবেচনাপূর্ণ কথা বলতে পারে। (হিতো. ১২:১৮) কোন কারণে তোমাদের বাবা-মা এইরকম আচরণ করে থাকে? তারা হয়তো চাপের মধ্যে থাকতে পারে অথবা তোমাদের ভুলগুলোকে তাদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে পারে। তোমরা যেটাকে অন্যায্য বলে মনে করো, সেটা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করার পরিবর্তে, তারা যে আন্তরিকভাবে সাহায্য করতে চায়, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখাও না কেন? শাসন মেনে নেওয়ার ক্ষমতা, তোমরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন তোমাদের জন্য উপকারী হবে।

১০. কীভাবে তোমরা বাবা-মায়ের দেওয়া নিয়মকানুন ও সংশোধনকে আরও কার্যকারীভাবে মেনে নিতে পারো?

১০ তোমরা কি তোমাদের বাবা-মায়ের নিয়মকানুন ও সংশোধনকে আরও কার্যকারীভাবে মেনে নিতে চাও? যদি চাও, তাহলে তোমাদের ভাববিনিময়ের ক্ষমতাকে উন্নত করতে হবে। কীভাবে তোমরা তা করতে পারো? প্রথম ধাপ হল শোনা। ‘শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হও,’ বাইবেল বলে। (যাকোব ১:১৯) দ্রুত নিজেদের ন্যায্যতা প্রমাণ করার পরিবর্তে বরং তোমাদের আবেগকে দমন করার চেষ্টা করো এবং তোমাদের বাবা-মা যা বলতে চায়, তা শোনো। কীভাবে বলা হয়েছে, সেটার ওপর নয় বরং কী বলা হয়েছে, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করো। এরপর, তোমাদের বাবা-মায়ের মন্তব্যকে নিজের ভাষায় সাজাও এবং সম্মানের সঙ্গে তাদের মন্তব্য তাদের কাছে পুনরাবৃত্তি করো। তোমরা যদি তা করো, তাহলে এটা তাদেরকে এই আশ্বাস দেবে যে, তোমরা তাদের কথা শুনেছ। তোমরা যদি তোমাদের কথা ও কাজের জন্য ব্যাখ্যা দিতে চাও, তাহলে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘ওষ্ঠ দমন করা’ প্রজ্ঞার কাজ, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের বাবা-মায়ের ইচ্ছার সঙ্গে একমত হও। (হিতো. ১০:১৯) একবার তোমাদের বাবা-মা যদি দেখে যে, তোমরা তাদের কথা শুনেছ, তাহলে তারাও তোমাদের কথা আরও বেশি শুনতে চাইবে। এইরকম পরিপক্ব উপায়ে আচরণ করা এই প্রমাণ দেয় যে, তোমরা ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছ।

টাকাপয়সা খরচ করার সময় ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়া

১১, ১২. (ক) টাকাপয়সা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কী করতে উৎসাহিত করে এবং কেন? (খ) কীভাবে তোমাদের বাবা-মা হয়তো তোমাদেরকে টাকাপয়সা খরচ করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে?

১১ ‘ধন আশ্রয় বটে,’ বাইবেল বলে। কিন্তু, সেই একই পদ দেখায় যে, প্রজ্ঞা ধন বা টাকাপয়সার চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান। (উপ. ৭:১২) ঈশ্বরের বাক্য আমাদের টাকাপয়সাকে ভালোবাসতে নয় বরং সম্মান করতে উৎসাহিত করে। কেন তোমাদের টাকাপয়সার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলা এড়িয়ে চলা উচিত? এই উদাহরণ বিবেচনা করো: একজন দক্ষ বাবুর্চির হাতে একটা ধারালো ছুরি অত্যন্ত উপকারী একটা হাতিয়ার। কিন্তু, সেই একই ছুরি অমনোযোগী বা অসতর্ক কারো হাতে থাকলে, তা মারাত্মক ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করলে টাকাপয়সাও উপকারী হতে পারে। কিন্তু, যারা “ধনী হইতে বাসনা করে,” তারা প্রায়ই বন্ধুত্ব, পারিবারিক সম্পর্ক আর এমনকী ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে বিসর্জন দেয়। এর ফলে, তারা নিজেদেরকে “অনেক যাতনারূপ কন্টকে” বিদ্ধ করে।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

১২ কীভাবে তোমরা দক্ষতার সঙ্গে টাকাপয়সা খরচ করা শিখতে পারো? কীভাবে তোমাদের টাকাপয়সার বাজেট করতে হয়, সেই ব্যাপারে তোমাদের বাবা-মাকে পরামর্শ দিতে বলো না কেন? “জ্ঞানবান শুনিবে ও পাণ্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে, বুদ্ধিমান সুমন্ত্রণা লাভ করিবে,” শলোমন লিখেছিলেন। (হিতো. ১:৫) অ্যানা নামে একজন অল্পবয়সি মেয়ে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে ব্যবহারিক নির্দেশনা চেয়েছিল। সে বলে, “আমার বাবা আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, কীভাবে বাজেট তৈরি করতে হয় এবং তিনি আমাকে দেখিয়েছিলেন যে, পারিবারিক তহবিল সামলানোর ব্যাপারে পরিকল্পনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।” অ্যানার মা-ও তাকে ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করেছিলেন। “তিনি আমাকে কেনাকাটা করার আগে দাম যাচাই করার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখিয়েছিলেন,” অ্যানা বলে। কীভাবে অ্যানা উপকৃত হয়েছিল? সে উত্তর দেয়: “আমি এখন নিজের ব্যয়ভার নিজেই বহন করতে পারি। আমি সতর্কতার সঙ্গে আমার ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করি, তাই আমার এখন সেই স্বাধীনতা ও মনের শান্তি রয়েছে, যা অযথা ঋণ করা এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আসে।”

১৩. যখন টাকাপয়সা খরচের বিষয়টা আসে, তখন তোমরা হয়তো কীভাবে নিজেদেরকে শাসন করতে পারো?

১৩ তোমরা যদি হুট করে বিভিন্ন জিনিস কেনো অথবা কেবল বন্ধুদের প্রভাবিত করার জন্য টাকাপয়সা খরচ করো, তাহলে হয়তো দেখবে যে, অল্পসময়ের মধ্যেই তোমরা ঋণের জালে জড়িয়ে গিয়েছ। কী তোমাদেরকে এই ফাঁদগুলো এড়াতে সাহায্য করতে পারে? যখন তোমাদের টাকাপয়সা খরচ করার বিষয়টা আসে, তখন নিজেদেরকে শাসন করা শিখতে হবে। ইলেনা ঠিক তা-ই করেছিল, যার বয়স ২০-এর কোঠার প্রথম দিকে। “আমি যখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাই,” সে বলে, “তখন আমি আগে থেকে পরিকল্পনা করি এবং আমার খরচের সীমা হিসাব করি। . . . এ ছাড়া, আমি দেখেছি যে, কেবল সেই বন্ধুদের সঙ্গেই কেনাকাটা করতে যাওয়া বিজ্ঞতার কাজ, যারা তাদের টাকাপয়সা সম্বন্ধে সচেতন এবং যারা আমাকে দরদাম যাচাই করতে ও প্রথম দেখাতেই কিনে না ফেলতে উৎসাহিত করে।”

১৪. কেন তোমাদের ‘ধনের মায়ার’ বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা উচিত?

১৪ টাকাপয়সা উপার্জন এবং খরচ করা জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন যে, তারাই প্রকৃত সুখ লাভ করে, যারা “আত্মাতে দীনহীন” বা যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন। (মথি ৫:৩) তিনি সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে একজন ব্যক্তির আগ্রহ, ‘ধনের মায়ার’ মতো বিষয়গুলোর দ্বারা চাপা পড়ে যেতে পারে। (মার্ক ৪:১৯) তাই, নিজেকে ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হতে দেওয়া এবং টাকাপয়সা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!

একা থাকাকালীন ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হওয়া

১৫. কখন ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আনুগত্য সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হতে পারে?

১৫ কখন ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আনুগত্য সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হতে পারে বলে তোমরা মনে করো—যখন তোমরা অন্যদের সঙ্গে থাকো তখন, নাকি যখন তোমরা একা থাকো তখন? আসলে, তোমরা যখন স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে থাকো, তখন তোমাদের আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সম্ভবত বেশি থাকে। তোমরা সম্ভাব্য আধ্যাত্মিক বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক থাকো। তোমরা যখন অবসর সময় কাটাও এবং তোমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল থাকে, তখনই তোমাদের নৈতিক মানগুলোর ওপর আক্রমণ আসার ব্যাপারে তোমরা সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত থাকো।

১৬. কেন তোমাদের এমনকী একা থাকাকালীনও যিহোবার বাধ্য থাকতে চাওয়া উচিত?

১৬ কেন তোমাদের এমনকী একা থাকাকালীন যিহোবার বাধ্য থাকতে চাওয়া উচিত? এই বিষয়টা মনে রাখবে: তোমরা হয় যিহোবাকে কষ্ট দিতে নতুবা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারো। (আদি. ৬:৫, ৬; হিতো. ২৭:১১) যিহোবা তোমাদের কাজগুলো দ্বারা প্রভাবিত হন কারণ তিনি “তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) তিনি চান যেন তোমরা তাঁর কথা শোনো, যাতে তোমরা উপকার লাভ করতে পারো। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) প্রাচীন ইস্রায়েলে যিহোবার কিছু দাস যখন তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করেছিল, তখন তারা তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছিল বা কষ্ট দিয়েছিল। (গীত. ৭৮:৪০, ৪১) অন্যদিকে, যিহোবা ভাববাদী দানিয়েলের প্রতি গভীর স্নেহ অনুভব করেছিলেন, কারণ একজন স্বর্গদূত তাকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” বলে অভিহিত করেছিলেন। (দানি. ১০:১১) কেন? দানিয়েল কেবল জনসমক্ষেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে একা থাকাকালীনও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন।—পড়ুন, দানিয়েল ৬:১০.

১৭. আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে তোমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারো?

১৭ একা থাকাকালীন ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হলে তোমাদের অবশ্যই ‘সদসৎ বিষয়ের বিচারণে জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল’ গড়ে তুলতে হবে আর এরপর তোমরা যেটাকে সঠিক বলে জানো, সেই অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে “অভ্যাস প্রযুক্ত” সেই ক্ষমতাকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৪) উদাহরণস্বরূপ, তোমরা যখন শোনার জন্য গানবাজনা, দেখার জন্য সিনেমা অথবা ইন্টারনেট সাইটগুলো বেছে নাও, তখনই এই প্রশ্নগুলো তোমাদেরকে সঠিক বিষয়টা বেছে নিতে এবং ভুল বিষয়টাকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করো: ‘এই বিষয়বস্তু কি আমাকে কোমল সমবেদনাময় হতে উৎসাহিত করবে, নাকি এটা আমাকে “[আরেকজনের] বিপদে” আনন্দ করতে উসকে দেবে?’ (হিতো. ১৭:৫) ‘এটা কি আমাকে “উত্তমকে ভালোবাসতে” সাহায্য করবে, নাকি আমার জন্য “মন্দকে ঘৃণা” করার বিষয়টা কঠিন করে তুলবে?’ (আমোষ ৫:১৫) একা থাকাকালীন তোমরা যা করো, তা প্রকাশ করে যে, কোন বিষয়টাকে আসলে তোমরা মূল্যবান বলে মনে করো।—লূক ৬:৪৫.

১৮. তোমরা যদি গোপনে অন্যায় আচরণে রত হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের কী করা উচিত এবং কেন?

১৮ তোমরা যদি গোপনে এমন আচরণে রত হও, যেটাকে তোমরা অন্যায় বলে মনে করো, তাহলে তোমাদের কী করা উচিত? মনে রাখবে যে, “যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।” (হিতো. ২৮:১৩) অন্যায় কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং ‘ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত’ করা কতই না মূর্খতার কাজ! (ইফি. ৪:৩০) তোমরা অবশ্যই ঈশ্বরের, তোমাদের বাবা-মায়ের এবং নিজেদের কাছে যেকোনো অন্যায় স্বীকার করতে বাধ্য। এই ক্ষেত্রে, ‘মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গ’ তোমাদেরকে অনেক সাহায্য করতে পারে। শিষ্য যাকোব বলেন: “তাঁহারা প্রভুর [ঈশ্বরের] নামে [অন্যায়কারীকে] তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন। তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু [ঈশ্বর] তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।” (যাকোব ৫:১৪, ১৫) এটা ঠিক যে, এই কারণে কিছু বিব্রতকর অবস্থা বা হয়তো কোনো অপ্রীতিকর পরিণতি হতে পারে। কিন্তু, তোমাদের যদি সাহায্য চাওয়ার সাহস থাকে, তাহলে তোমরা আরও ক্ষতি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে এবং সেই স্বস্তি লাভ করতে পারবে, যা পুনরায় শুদ্ধ বিবেক অর্জন করার মাধ্যমে আসে।—গীত. ৩২:১-৫.

যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করো

১৯, ২০. যিহোবা তোমাদের জন্য কী চান কিন্তু তোমাদের কী করতেই হবে?

১৯ যিহোবা হলেন “পরম ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বর’ আর তিনি চান যেন তোমরাও সুখী হও। (১ তীম. ১:১১) তিনি তোমাদের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। এমনকী যা সঠিক, তা করার ব্যাপারে তোমাদের প্রচেষ্টা অন্য কেউ না দেখলেও তিনি দেখে থাকেন। কোনো কিছুই যিহোবার চোখে গুপ্ত নয়। তিনি তোমাদের লক্ষ করেন, তবে ভুলত্রুটি খোঁজার জন্য নয় বরং ভালো কাজ করার বিষয়ে তোমাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য। ঈশ্বরের “প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য [ঈশ্বরের] চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।”—২ বংশা. ১৬:৯.

২০ তাই, নিজেকে ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা পরিচালিত হতে দাও এবং সেই বাক্যের উপদেশ কাজে লাগাও। এভাবে তুমি সেই প্রজ্ঞা এবং বোধগম্যতা অর্জন করতে পারবে, যেগুলো কঠিন সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার এবং জীবনের কঠিন বাছাইগুলো করার জন্য প্রয়োজন। তোমরা যে কেবল তোমাদের বাবা-মা এবং যিহোবাকেই খুশি করবে এমন নয় বরং প্রকৃতপক্ষে এক সুখী জীবনও উপভোগ করতে পারবে।

[পাদটীকা]

^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে অল্পবয়সিরা বাবা-মায়ের দেওয়া নিয়মকানুন ও সংশোধন মেনে নিতে এবং সেগুলো থেকে উপকার লাভ করতে পারে?

• কেন টাকাপয়সা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ?

• কীভাবে তোমরা এমনকী একা থাকাকালীনও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারো?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

একা থাকাকালীন তোমরা কি ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকবে?