সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হোন

সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হোন

সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হোন

“শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্যকারী লোক অল্প।”—মথি ৯:৩৭.

১. জরুরি অবস্থা সম্বন্ধে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

 আপনার কাছে এমন একটা দলিল রয়েছে, যেটা দিন শেষ হওয়ার আগেই কোনো একজন ব্যক্তিকে দেখানো প্রয়োজন। আপনি কী করেন? আপনি সেটার ওপর এই কথা লিখে দেন যে, “জরুরি!” আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটা সাক্ষাৎ করার জন্য যাচ্ছেন কিন্তু আপনার দেরি হয়ে গিয়েছে। তখন আপনি কী করেন? আপনি ড্রাইভারকে বলেন, “একটু তাড়াতাড়ি চালান; খুবই জরুরি একটা কাজ আছে!” হ্যাঁ, যখন আপনার হাতে এমন কোনো কাজ থাকে, যেটা শেষ করতেই হবে অথচ সময় শেষ হয়ে যেতে থাকে, তখন আপনি হয়তো উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা অনুভব করেন। আপনার অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হতে শুরু করে আর আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এবং আপনার যত কষ্টই করতে হোক না কেন, কাজটা করেন। এটাই হল জরুরি অবস্থা বা তৎপরতা!

২. বর্তমানে সত্য খ্রিস্টানদের জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ কী?

বর্তমানে সত্য খ্রিস্টানদের জন্য সমস্ত জাতির লোকেদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার ও শিষ্য তৈরির কাজ করার চেয়ে জরুরি আর কিছুই নেই। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) যিশুর কথা উদ্ধৃতি করে শিষ্য মার্ক লিখেছিলেন যে, এই কাজ অবশ্যই “অগ্রে” অর্থাৎ শেষ আসার আগেই করতে হবে। (মার্ক ১৩:১০) আর নিশ্চিতভাবেই, তা-ই হওয়া উচিত। যিশু বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প।” ক্ষেত্রে শস্য ফেলে রাখা যায় না; শস্য কাটার সময় শেষ হওয়ার আগে সেগুলো অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে।—মথি ৯:৩৭.

৩. প্রচার করার জরুরি চাহিদার প্রতি কেউ কেউ কীভাবে সাড়া দিয়েছে?

যেহেতু প্রচার কাজ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই কাজ আমাদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব সময়, শক্তি এবং মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য। প্রশংসা করার মতো বিষয়টা হল, অনেকেই ঠিক তা-ই করছে। কেউ কেউ ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে সাদাসিধে করেছে, যাতে তারা পূর্ণসময়ের পরিচর্যা যেমন, অগ্রগামী অথবা মিশনারি হিসেবে কিংবা বিশ্বজুড়ে বেথেল হোমগুলোর কোনো একটাতে সেবা করতে পারে। তারা অনেক ব্যস্ত। তারা হয়তো অনেক ত্যাগস্বীকার করেছে এবং তাদের সামনে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও, তারা যিহোবার কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ লাভ করে। আমরা তাদের জন্য আনন্দিত। (পড়ুন, লূক ১৮:২৮-৩০.) অন্যেরা যদিও পূর্ণসময়ের ঘোষণাকারীদের মতো একইরকম কাজে যোগ দিতে পারে না কিন্তু তারা এই জীবন রক্ষাকারী কাজে যতটা সম্ভব বেশি সময় দিয়ে থাকে, যার মধ্যে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য সাহায্য করাও অন্তর্ভুক্ত।—দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭.

৪. কেন কেউ কেউ তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখাতে পারে?

আমরা যেমন দেখেছি যে, তৎপরতার মনোভাব সাধারণত নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কোনো সমাপ্তির সঙ্গে যুক্ত। আমরা শেষ সময়ে বাস করছি আর এটার প্রচুর প্রমাণ—শাস্ত্রীয় ও ঐতিহাসিক উভয়ই—রয়েছে। (মথি ২৪:৩, ৩৩; ২ তীম. ৩:১-৫) তা সত্ত্বেও, কোনো মানুষই একেবারে সঠিকভাবে জানে না যে, কখন শেষ আসবে। “যুগান্তের চিহ্ন” সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা করার সময় যিশু সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন: “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গের দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।” (মথি ২৪:৩৬) সেই কারণে, কেউ কেউ হয়তো বছরের পর বছর ধরে তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখাকে কঠিন বলে মনে করতে পারে, বিশেষভাবে যদি তারা দীর্ঘসময় ধরে তা বজায় রাখে। (হিতো. ১৩:১২) মাঝে মাঝে আপনারও কি এইরকম মনে হয়? কোন বিষয়টা আমাদের তৎপরতার মনোভাব গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, যা আমাদের সেই কাজ করার জন্য প্রয়োজন, যে-কাজ যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্ট বর্তমানে আমরা করব বলে চান?

আমাদের উদাহরণ যিশুর কথা বিবেচনা করুন

৫. কোন কোন উপায়ে যিশু পরিচর্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে তৎপরতার মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন?

ঈশ্বরের প্রতি সেবায় যারা তৎপরতার মনোভাব প্রদর্শন করেছে, তাদের সকলের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই যিশু খ্রিস্ট হলেন শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তাঁর তৎপরতার একটা কারণ হল, মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ের মধ্যে তাঁর অনেক কিছু করার ছিল। তা সত্ত্বেও, যিশু সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে অন্য যেকারো চেয়ে অনেক বেশি সম্পাদন করেছিলেন। তিনি তাঁর পিতার নাম ও তাঁর উদ্দেশ্যকে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিলেন, ধর্মীয় নেতাদের কপটতা ও মিথ্যা শিক্ষাকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন আর এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করার—শিক্ষা দেওয়ার, সাহায্য করার এবং লোকেদের সুস্থ করার—ক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি। (মথি ৯:৩৫) কেউই এত অল্প সময়ের মধ্যে কখনো এত কিছু সম্পাদন করেননি। যিশু যথাসম্ভব কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।—যোহন ১৮:৩৭.

৬. যিশুর জীবনের প্রধান বিষয় কী ছিল?

কোন বিষয়টা যিশুকে তাঁর পরিচর্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অক্লান্তভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল? দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী থেকে যিশু জানতে পেরেছিলেন যে, যিহোবার সময়সূচি অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করার জন্য তাঁর হাতে কতটা সময় রয়েছে। (দানি. ৯:২৭) তাই, যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী তাঁর পার্থিব পরিচর্যা “সপ্তাহের অর্দ্ধকালে” অথবা সাড়ে তিন বছর পর শেষ হওয়ার কথা। সা.কা. ৩৩ সালের বসন্তকালে যিরূশালেমে বিজয়ী বেশে প্রবেশ করার কিছু সময় পর, যিশু বলেছিলেন: “সময় উপস্থিত, যেন মনুষ্যপুত্ত্র মহিমান্বিত হন।” (যোহন ১২:২৩) যদিও যিশু জানতেন যে, তাঁর মৃত্যু আসন্ন ছিল, তবুও তিনি সেটাকে তাঁর জীবনের প্রধান বিষয় ও তাঁর কঠোর পরিশ্রমের প্রধান কারণ হতে দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার ও সহমানবদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করার প্রতিটা সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। সেই প্রেম তাঁকে শিষ্যদের সংগ্রহ করতে ও প্রশিক্ষণ দিতে, তাদেরকে বিভিন্ন প্রচার অভিযানে পাঠাতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি তা করেছিলেন, যাতে তারা সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারে, যা তিনি শুরু করেছিলেন আর এমনকী তিনি যতটা করেছিলেন, তারা যেন তার চেয়ে আরও বেশি সম্পাদন করতে পারে।—পড়ুন, যোহন ১৪:১২.

৭, ৮. যিশু যে মন্দির পরিষ্কৃত করেছিলেন, সেটার প্রতি শিষ্যরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল আর কেন যিশু সেভাবে কাজ করেছিলেন?

যিশুর জীবনের একটা ঘটনা তাঁর উদ্যোগ সম্বন্ধে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছিল। সময়টা ছিল তাঁর পার্থিব পরিচর্যার শুরুর দিকে, সা.কা. ৩০ সালের নিস্তারপর্বের সময়ে। যিশু এবং তাঁর শিষ্যরা যিরূশালেমে গিয়েছিল এবং দেখেছিল যে, মন্দিরে “লোকে গো, মেষ ও কপোত বিক্রয় করিতেছে, এবং পোদ্দারেরা বসিয়া আছে।” যিশুর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল আর তাঁর শিষ্যদের ওপর তা কেমন ছাপ ফেলেছিল?—পড়ুন, যোহন ২:১৩-১৭.

সেই সময়ে যিশু যা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, তা উপযুক্তভাবেই শিষ্যদেরকে দায়ূদের রচিত একটি গীতের ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক এই কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়েছিল: “তোমার গৃহনিমিত্তক উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করিয়াছে।” (গীত. ৬৯:৯) কেন তাদের এই কথাগুলো মনে পড়েছিল? কারণ কেবলমাত্র সেই ধরনের উদ্যোগের দ্বারা অনুপ্রাণিত একজন ব্যক্তিই এমন কিছু করতে পারেন, যে-কাজে বিরাট ঝুঁকি ও বিপদ জড়িত। আসলে, মন্দিরের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ—যাজকরা, অধ্যাপকরা ও অন্যেরা—সেই জঘন্য লাভজনক ব্যাবসার পিছনে মদদ জুগিয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ ও ব্যাহত করে দেওয়ার মাধ্যমে যিশু নিজেকে সেই সময়কার ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের শত্রু করে তুলেছিলেন। এভাবে শিষ্যরা সেই পরিস্থিতিতে ‘ঈশ্বরের গৃহনিমিত্তক উদ্যোগ’ বা সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগের সুস্পষ্ট প্রমাণ সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছিল। তাহলে, উদ্যোগ কী? এটা কি তৎপরতা থেকে আলাদা?

তৎপরতা ও উদ্যোগের মধ্যে তুলনা

৯. উদ্যোগকে কীভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে?

একটি অভিধান ‘উদ্যোগকে’ এভাবে বর্ণনা করেছে যেমন, “অতি উৎসুক মনোভাব এবং প্রবল আগ্রহ সহকারে কোনো কিছুর অনুধাবন করা” আর এটা এই ধরনের সমার্থ শব্দগুলোর ধারণা প্রকাশ করে যেমন, প্রগাঢ় অনুরাগ, তীব্র অনুভূতি, আকুলতা এবং প্রবল উদ্যম। নিশ্চিতভাবেই, যিশুর পরিচর্যাকে এই ধরনের অভিব্যক্তির দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করা যেতে পারে। তাই, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন এই পদকে এভাবে অনুবাদ করে: “তোমার ঘরের জন্য আমার যে গভীর ভালবাসা, সেই ভালবাসাই আমার অন্তরকে জ্বালিয়ে তুলেছে।” আগ্রহের বিষয় হল, প্রাচ্যের কিছু ভাষায় ‘উদ্যোগের’ জন্য ব্যবহৃত শব্দটি দুটো অংশ নিয়ে গঠিত, আক্ষরিকভাবে যার অর্থ “উত্তপ্ত হৃদয়,” এমন যেন হৃদয় জ্বলছে। তাই, যিশু মন্দিরে যা করেছিলেন, তা দেখে শিষ্যরা যে দায়ূদের কথাগুলো মনে করেছিল, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাহলে, কোন বিষয়টা যিশুর হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং সেভাবে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত বা পরিচালিত করেছিল?

১০. বাইবেলে ব্যবহৃত “উদ্যোগ” শব্দটির অর্থ কী?

১০ “উদ্যোগ” হিসেবে অনুবাদিত মূল ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দকে “অন্তর্জ্বালা” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১১:২.) একটি বাইবেল অভিধান এই শব্দ সম্বন্ধে এভাবে বলে: “এটি প্রায়ই বৈবাহিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত বিষয়ে ব্যবহৃত হয়। . . . ঠিক যেমন স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে অন্তর্জ্বালা বা ঈর্ষা হচ্ছে নিজের একচেটিয়া অধিকার সম্বন্ধে জোরালো দাবি, তেমনই ঈশ্বর তাঁর অধিকার সম্বন্ধে দাবি করে থাকেন আর এটাকে সেই ব্যক্তিদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন, যারা একান্তই তাঁর অধিকারভুক্ত।” তাই, দায়ূদের উদ্যোগ ছিল ইতিবাচক অর্থে ঈর্ষা অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা নিন্দা সম্বন্ধে অসহিষ্ণুতা, সুনাম রক্ষার কিংবা কোনো অন্যায়কে সংশোধন করার জন্য জোরালো আকাঙ্ক্ষা।

১১. কোন বিষয়টা যিশুকে উদ্যোগের সঙ্গে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পরিচালিত করেছিল?

১১ যিশু মন্দিরে যা করেছিলেন, সেটার সঙ্গে দায়ূদের কথাগুলোকে সম্পর্কযুক্ত করার ক্ষেত্রে যিশুর শিষ্যরা ভুল ছিল না। যিশু নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন, শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে, তাঁর একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল কিন্তু এর কারণ ছিল, তিনি তাঁর পিতার নাম ও বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য উদ্যোগী—বা ঈর্ষাপরায়ণ—ছিলেন। তিনি যখন দেখেছিলেন যে, ঈশ্বরের নামের ওপর কলঙ্ক ও নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছে, তখন তিনি উপযুক্তভাবেই উদ্যোগী বা ঈর্ষাপরায়ণ হয়েছিলেন এবং সেই পরিস্থিতিকে সংশোধন করার জন্য কাজ করেছিলেন। যিশু যখন দেখেছিলেন যে, ধর্মীয় নেতারা নম্র লোকেদের ওপর অত্যাচার করছে ও তাদের স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে, তখন তাঁর উদ্যোগ তাঁকে লোকেদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসতে এবং সেইসঙ্গে অত্যাচারী ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তীব্র সমালোচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।—মথি ৯:৩৬; ২৩:২, ৪, ২৭, ২৮, ৩৩.

সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হোন

১২, ১৩. বর্তমানে খ্রিস্টীয়জগতের ধর্মীয় নেতারা এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কী করেছে, যেমন (ক) ঈশ্বরের নাম? (খ) ঈশ্বরের রাজ্য?

১২ বর্তমানে আমাদের চারপাশের ধর্মীয় চিত্রও একইরকম, যদি এতটা খারাপ না-ও হয়ে থাকে, তবুও যিশুর দিনের মতোই। উদাহরণস্বরূপ, স্মরণ করে দেখুন যে, যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রথমে যে-বিষয়টা প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, তা ঈশ্বরের নামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত: “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) আমরা কি ধর্মীয় নেতাদেরকে, বিশেষভাবে খ্রিস্টীয় জগতের পাদরিদেরকে, ঈশ্বরকে তাঁর নামের দ্বারা জানতে ও সেই নামকে পবিত্র করতে বা সেই নামের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য লোকেদের শিক্ষা দিতে দেখি? এর বৈসাদৃশ্যে, তারা বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা যেমন, ত্রিত্ব, মানব আত্মার অমরত্ব, নরকাগ্নির দ্বারা ঈশ্বরকে এমন ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে যে, ঈশ্বরকে রহস্যময়, দুর্বোধ্য, নিষ্ঠুর আর এমনকী নির্মম বলে মনে হয়। তারা এমনকী তাদের জঘন্য আচরণ ও কপটতার দ্বারা ঈশ্বরের নামের ওপর দুর্নাম নিয়ে এসেছে। (পড়ুন, রোমীয় ২:২১-২৪.) অধিকন্তু, তারা ঈশ্বরের নামকে গুপ্ত রাখার জন্য যথাসম্ভব সমস্তকিছুই করেছে, এমনকী তাদের বিভিন্ন বাইবেল অনুবাদ থেকে সেই নামকে সরিয়ে দিয়েছে। এভাবে তারা লোকেদেরকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার ও ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে থাকে।—যাকোব ৪:৭, ৮.

১৩ এ ছাড়া, যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে এই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:১০) যদিও খ্রিস্টীয়জগতের ধর্মীয় নেতারা প্রায়ই এই প্রার্থনার পুনরাবৃত্তি করে থাকে, কিন্তু তারাই রাজনৈতিক এবং অন্যান্য মানব প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করার জন্য লোকেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অধিকন্তু, তারা সেই ব্যক্তিদেরকে তুচ্ছ করে, যারা এই রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করার এবং এর সাক্ষ্য বহন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। ফল স্বরূপ, নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন অনেকের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য আর আলোচনা করার কিংবা বিশ্বাস করার মতো কোনো বিষয় নয়।

১৪. কীভাবে খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা ঈশ্বরের বাক্যকে দুর্বল করে দিয়েছে?

১৪ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) আর স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আগে, যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর লোকেদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগাতে তিনি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ নিযুক্ত করবেন। (মথি ২৪:৪৫) যদিও খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা লোকেদের ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেয় বলে দাবি করে কিন্তু তারা কি বিশ্বস্তভাবে সেই কাজ সম্পাদন করেছে, যা প্রভু আস্থা সহকারে তাদের দিয়েছেন? না। তারা বলতে চায় যে, বাইবেলে যা বলা আছে, সেগুলো পৌরাণিক কাহিনি। তাদের পালকে আধ্যাত্মিক খাদ্যের দ্বারা পুষ্ট করে তাদের জন্য সান্ত্বনা ও জ্ঞানালোক নিয়ে আসার পরিবর্তে, পাদরিরা মানব দর্শনবিদ্যার দ্বারা বিশ্বাসীদের কানে সুড়সুড়ি দিয়েছে। এ ছাড়া, তারা তথাকথিত নৈতিকতার নতুন মানকে প্রশ্রয় দেওয়ার দ্বারা ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলোকে দুর্বল করে দেয়।—২ তীম. ৪:৩, ৪.

১৫. পাদরিরা ঈশ্বরের নামে যা-কিছু করেছে, সেগুলোর বিষয়ে আপনি কেমন বোধ করেন?

১৫ যেহেতু যা-কিছু করা হয়েছে, সেগুলোর সমস্তই সম্ভবত বাইবেলের ঈশ্বরের নামে করা হয়েছে, তাই অনেক আন্তরিক ব্যক্তি হতাশ হয়ে পড়েছে কিংবা ঈশ্বর ও বাইবেলের প্রতি পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তারা শয়তানের এবং তার দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শিকারে পরিণত হয়েছে। আপনারা যখন দিনের পর দিন এইরকম বিষয়গুলো ঘটতে দেখেন ও শোনেন, তখন আপনাদের কেমন লাগে? যিহোবার একজন দাস হিসেবে আপনি যখন দেখেন যে, ঈশ্বরের নামের ওপর কলঙ্ক ও নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছে, তখন আপনি কি সেই বিষয়গুলো সংশোধন করার জন্য অনুপ্রাণিত হন না? আপনি যখন দেখেন যে, সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা প্রতারিত ও নির্যাতিত হচ্ছে, তখন আপনি কি সেই নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের জন্য সান্ত্বনা নিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত হন না? যিশু যখন দেখেছিলেন যে, তাঁর দিনের লোকেরা “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল,” তখন তিনি কেবলমাত্র করুণাবিষ্টই হননি। তিনি সেই সময়ে “অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগিলেন।” (মথি ৯:৩৬; মার্ক ৬:৩৪) যিশুর মতো আমাদেরও সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হওয়ার উপযুক্ত কারণ রয়েছে।

১৬, ১৭. (ক) কী আমাদেরকে পরিচর্যায় নিজেদের বিলিয়ে দিতে অনুপ্রাণিত করতে পারে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন বিষয়টা বিবেচনা করা হবে?

১৬ আমরা যখন আমাদের পরিচর্যাকে সেভাবে দেখি, তখন ১ তীমথিয় ২:৩, ৪ পদে প্রাপ্ত পৌলের কথাগুলো বিশেষ অর্থ রাখে। (পড়ুন।) আমরা পরিচর্যায় কঠোর পরিশ্রম করি, শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে, আমরা শেষকালে বাস করছি কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা এও বুঝতে পারি যে, এটাই হল ঈশ্বরের ইচ্ছা। তিনি চান যেন লোকেরা সত্য জানতে পারে, যাতে তারাও তাঁকে উপাসনা ও সেবা করতে শিখতে পারে আর আশীর্বাদ লাভ করতে পারে। আমরা যে পরিচর্যায় নিজেদের বিলিয়ে দিতে অনুপ্রাণিত হই এর মূল কারণ এই নয় যে, আমাদের সময় সীমিত বরং আমরা ঈশ্বরের নামকে সম্মান করতে ও লোকেদেরকে তাঁর ইচ্ছা জানার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে চাই। আমরা সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী।—১ তীম. ৪:১৬.

১৭ যিহোবার লোক হিসেবে আমরা মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সত্য জ্ঞান লাভ করে আশীর্বাদ পেয়েছি। লোকেরা যাতে সুখ ও ভবিষ্যতের নিশ্চিত আশা খুঁজে পায়, সেই ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের কাছে বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আমরা তাদের দেখাতে পারি যে, যখন শয়তানের বিধিব্যবস্থার ওপর ধ্বংস আসবে, তখন কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়। (২ থিষল. ১:৭-৯) যিহোবার দিন আসতে দেরি হচ্ছে বলে মনে করার কারণে হতাশাগ্রস্ত ও নিরুৎসাহিত বোধ করার পরিবর্তে, আমাদের এই বিষয়ে আনন্দিত হওয়া উচিত যে, সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হওয়ার জন্য এখনও আমাদের হাতে সময় রয়েছে। (মীখা ৭:৭; হবক্‌. ২:৩) কীভাবে আমরা এই ধরনের উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারি? পরের প্রবন্ধে আমরা সেই বিষয়টা বিবেচনা করব।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কোন বিষয়টা যিশুকে তাঁর পরিচর্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অক্লান্তভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

• বাইবেল অনুযায়ী “উদ্যোগ” শব্দটির অর্থ কী?

• আজকে আমরা কী দেখি, যা আমাদেরকে সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার ও সহমানবদের প্রতি প্রেম দেখানোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের সত্য উপাসনার পক্ষে উদ্যোগী হওয়ার উপযুক্ত কারণ রয়েছে