সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এখন সুপ্রসন্নতার সময়”

“এখন সুপ্রসন্নতার সময়”

“এখন সুপ্রসন্নতার সময়”

“দেখ, এখন সুপ্রসন্নতার সময়; দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।”—২ করি. ৬:২.

১. কোনো একটা সময়ে কী করতে হবে তা কেন আমাদের নির্ধারণ করতে হবে?

 “সকল বিষয়েরই সময় আছে, ও আকাশের নীচে সমস্ত ব্যাপারের কাল আছে।” (উপ. ৩:১) শলোমন এখানে যেকোনো অর্থপূর্ণ প্রচেষ্টার জন্য—তা সেটা চাষাবাদ, ভ্রমণ, ব্যাবসা কিংবা অন্যদের সঙ্গে ভাববিনিময়, যা-ই হোক না কেন—সবচেয়ে উপযুক্ত সময় নির্ধারণের গুরুত্ব সম্বন্ধে লিখছিলেন। তা সত্ত্বেও, কোনো একটা সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজটা আমাদের করতে হবে, সেটাও আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। অন্যভাবে বলা যায়, আমাদের নিজেদের অগ্রাধিকার সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

২. কীভাবে আমরা জানি যে, যিশু যখন প্রচার করেছিলেন, তখন তিনি তাঁর সময় সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন?

পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু এই বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন যে, তিনি কোন সময়ে বাস করছিলেন এবং তাঁকে কী করতে হবে। তাঁর অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী ছিল সেই বিষয়টা তিনি স্পষ্টভাবে মনে রেখেছিলেন আর তাই তিনি জানতেন যে, মশীহ সংক্রান্ত অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হওয়ার দীর্ঘপ্রতীক্ষিত সময় এসে গিয়েছে। (১ পিতর ১:১১; প্রকা. ১৯:১০) প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে তাঁর পরিচয়কে স্পষ্ট করার জন্য তাঁর হাতে কাজ ছিল। তাঁকে রাজ্যের সত্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল এবং যারা রাজ্যে তাঁর সঙ্গে ভবিষ্যৎ সহদায়াদ হবে, সেই ব্যক্তিদের সংগ্রহ করতে হয়েছিল। আর তাঁকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ভিত্তি স্থাপন করতে হয়েছিল, যেটা পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ সম্পন্ন করবে।—মার্ক ১:১৫.

৩. কীভাবে সময় সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানা যিশুর কাজকে প্রভাবিত করেছিল?

সময় সম্বন্ধে সচেতনতা যিশুকে তাঁর পিতার ইচ্ছা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (লূক ১০:২; মালাখি ৪:৫, ৬) যিশু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে থেকে প্রথমে ১২ জনকে ও পরে ৭০ জনকে বাছাই করেছিলেন, তাদেরকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে এই রোমাঞ্চকর বার্তা প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন: “স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।” আর স্বয়ং যিশু সম্বন্ধে আমরা এই কথা পড়ি: “[তিনি] আপন বারো জন শিষ্যের প্রতি আদেশ সমাপ্ত করিবার পর লোকদের নগরে নগরে উপদেশ দিবার ও প্রচার করিবার জন্য সে স্থান হইতে প্রস্থান করিলেন।”—মথি ১০:৫-৭; ১১:১; লূক ১০:১.

৪. কীভাবে পৌল যিশু খ্রিস্টের একজন অনুকারী ছিলেন?

যিশু তাঁর সমস্ত অনুসারীদের জন্য উদ্যোগ ও ভক্তির এক নিখুঁত আদর্শ ছিলেন। প্রেরিত পৌল এই বিষয়টাই নির্দেশ করেছিলেন, যখন তিনি সহবিশ্বাসীদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও।” (১ করি. ১০:৩৪) কীভাবে পৌল খ্রিস্টের একজন অনুকারী ছিলেন? মূলত, সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো ত্রুটি না করে। বিভিন্ন মণ্ডলীর উদ্দেশে লেখা পৌলের চিঠিগুলোতে আমরা এই ধরনের অভিব্যক্তিগুলো দেখতে পাই যেমন, “যত্নে শিথিল হইও না,” “প্রভুর [ঈশ্বরের] দাসত্ব কর,” “প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়” এবং “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, . . . প্রভুরই [ঈশ্বরেরই] কর্ম্ম বলিয়া কর।” (রোমীয় ১২:১১; ১ করি. ১৫:৫৮; কল. ৩:২৩) পৌল কখনোই প্রভু যিশু খ্রিস্ট যে তাকে দম্মেশকের পথে দেখা দিয়েছিলেন সেই ঘটনা এবং যিশুর বলা কথাগুলো, যা শিষ্য অননিয় নিশ্চয়ই তাকে বলেছিলেন, সেটা ভুলে যাননি আর তা হল: “জাতিগণের ও রাজগণের এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিকটে আমার নাম বহনার্থে সে আমার মনোনীত পাত্র।”—প্রেরিত ৯:১৫; রোমীয় ১:১, ৫; গালা. ১:১৬.

“সুপ্রসন্নতার সময়”

৫. কী পৌলকে উদ্যোগের সঙ্গে তার পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল?

প্রেরিত বইটি পড়ার সময়, পরিচর্যা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে পৌলের দেখানো সাহস ও উদ্যোগ আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। (প্রেরিত ১৩:৯, ১০; ১৭:১৬, ১৭; ১৮:৫) পৌল যে-সময়ে বাস করছিলেন, সেটার গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “দেখ, এখন সুপ্রসন্নতার সময়; দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।” (২ করি. ৬:২) সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিলে নির্বাসিত ব্যক্তিদের জন্য তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া ছিল প্রসন্নতার সময়। (যিশা. ৪৯:৮, ৯) কিন্তু এখানে পৌল কী বলতে চাচ্ছিলেন? প্রসঙ্গ আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে, তার মনে কী ছিল।

৬, ৭. বর্তমানে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কোন বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে আর কারা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে?

পৌল এর আগে তার চিঠিতে, তাকে এবং সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে যে-বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে, সেই সম্বন্ধে বলেছিলেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৮-২০.) তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, ঈশ্বর তাদেরকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে আহ্বান করেছিলেন আর তা হল, “সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ” সম্পন্ন করার জন্য ও ‘ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হইবার’ বিষয়ে লোকেদের পক্ষে বিনতি করার জন্য। এর অর্থ ছিল ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শান্তি পুনর্স্থাপন করা।

এদনে বিদ্রোহের সময় থেকে সমস্ত মানবজাতি যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হয়ে গিয়েছে। (রোমীয় ৩:১০, ২৩) সেই বিচ্ছিন্ন অবস্থা সমগ্র মানবজাতিকে আধ্যাত্মিক অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে, দুঃখকষ্ট ও মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছে। “আমরা জানি, সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।” (রোমীয় ৮:২২) কিন্তু, ঈশ্বর লোকেদেরকে তাঁর কাছে ফিরে আসতে বা তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত হতে জোরালো পরামর্শ দেওয়ার জন্য, প্রকৃতপক্ষে “বিনতি” করার জন্য, পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেটা ছিল পরিচর্যা-পদ, যা পৌল ও সেইসময়ে তার সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদের আস্থা সহকারে দেওয়া হয়েছিল। “প্রসন্নতার” সেই ‘সময়’ যিশুকে বিশ্বাস করে এমন ব্যক্তিদের জন্য “পরিত্রাণের দিবস” হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও তাদের সহযোগীরা অর্থাৎ “আরও মেষ” একসঙ্গে কাজ করছে এবং লোকেদেরকে “প্রসন্নতার সময়” থেকে উপকার লাভ করার জন্য ক্রমাগত আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।—যোহন ১০:১৬.

৮. কোন বিষয়টা সম্মিলনের আহ্বানকে উল্লেখযোগ্য করে তোলে?

ঈশ্বরের সঙ্গে লোকেদের সম্মিলনের আহ্বান এত উল্লেখযোগ্য কারণ যদিও এদনে বিদ্রোহ করার দ্বারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে নষ্ট করার ব্যাপারে মানবজাতি একাই দায়ী, কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বর সেই সম্পর্ককে পুনর্স্থাপন করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (১ যোহন ৪:১০, ১৯) তিনি কী করেছিলেন? পৌল উত্তর দিয়েছিলেন: “ঈশ্বর খ্রীষ্টে আপনার সহিত জগতের সম্মিলন করাইয়া দিতেছিলেন, তাহাদের অপরাধ সকল তাহাদের বলিয়া গণনা করিলেন না; এবং সেই সম্মিলনের বার্ত্তা আমাদিগকে সমর্পণ করিয়াছেন।”—২ করি. ৫:১৯; যিশা. ৫৫:৬.

৯. ঈশ্বরের করুণার প্রতি তার উপলব্ধি দেখানোর জন্য পৌল কী করেছিলেন?

মুক্তির মূল্য জোগানোর মাধ্যমে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের জন্য অপরাধের ক্ষমা লাভ ও তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শান্তি পুনর্স্থাপন করা সম্ভবপর করেছেন, যারা বিশ্বাস অনুশীলন করে। এ ছাড়া, সমস্ত জায়গার লোকেদেরকে তাদের পক্ষে যখনই সম্ভব তাঁর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে জোরালো পরামর্শ দেওয়ার জন্য, তিনি তাঁর প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছেন। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:৩-৬.) ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পেরে ও তিনি যে-সময়ে বাস করছিলেন, তা উপলব্ধি করে পৌল “সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ” সম্পন্ন করায় নিজেকে অক্লান্তভাবে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। যিহোবার ইচ্ছা পরিবর্তিত হয়নি। এখনও তিনি তাঁর হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। পৌলের কথাগুলো অর্থাৎ “এখন সুপ্রসন্নতার সময়” ও “এখন পরিত্রাণের দিবস” বর্তমানেও প্রযোজ্য। যিহোবা কতই না করুণাময় ও সমবেদনাময় এক ঈশ্বর!—যাত্রা. ৩৪:৬, ৭.

“বৃথা” গ্রহণ করবেন না

১০. অতীতে ও বর্তমানে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কাছে “পরিত্রাণের দিবস” কী অর্থ রাখে?

১০ অযাচিত দয়ার এই প্রকাশ থেকে প্রথমে যারা উপকার লাভ করে, তারা হল সেই ব্যক্তিরা, যারা “খ্রীষ্টে থাকে [“খ্রীষ্টের সঙ্গে মিলিত হয়,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]।” (২ করি. ৫:১৭, ১৮) তাদের জন্য “পরিত্রাণের দিবস” শুরু হয়েছিল সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে। তখন থেকে এই ব্যক্তিদেরকে আস্থা সহকারে “সম্মিলনের বার্তা” ঘোষণা করার কাজ দেওয়া হয়েছে। আজকে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশিষ্টাংশরা এখনও পর্যন্ত “সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ” সম্পন্ন করে যাচ্ছে। তারা সেই চার জন দূতকে শনাক্ত করতে পারে, যাদেরকে প্রেরিত যোহন একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক দর্শনে দেখেছিলেন যে, তারা “পৃথিবীর চারি বায়ু ধরিয়া রাখিতেছেন, যেন পৃথিবীর . . . উপরে বায়ু না বহে।” তাই, এখনও “পরিত্রাণের দিবস” ও “সুপ্রসন্নতার সময়” রয়েছে। (প্রকা. ৭:১-৩) এই কারণে, বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত “সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ” সম্পন্ন করার কাজে নিজেদের উদ্যোগের সঙ্গে বিলিয়ে দিয়েছে।

১১, ১২. কীভাবে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা সময় সম্বন্ধে তাদের সচেতনতা প্রকাশ করেছিল? (১৫ পৃষ্ঠার ছবি দেখুন।)

১১ উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে “সি. টি. রাসেল ও তার সঙ্গীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে, তারা শস্যচ্ছেদনের সময়ে রয়েছে এবং লোকেদের স্বাধীনতা দানকারী সত্য শোনা প্রয়োজন।” এই ক্ষেত্রে তারা কী করেছিল? তারা যে শস্যচ্ছেদনের সময়ে অর্থাৎ ‘সুপ্রসন্নতার সময়ে’ রয়েছে তা বুঝতে পেরে, এই ভাইয়েরা লোকেদেরকে শুধুমাত্র ধর্মীয় সেবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েই সন্তুষ্ট ছিল না। খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা দীর্ঘসময় ধরে তা-ই করে আসছিল। এর পরিবর্তে, সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যান্য ব্যবহারিক উপায় উদ্ভাবন করতে শুরু করেছিল। তাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য উপায় ছাড়াও তারা আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যাকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিল।

১২ রাজ্যের সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী পরিচারকদের সেই ছোট্ট দল ট্র্যাক্ট, পত্রিকা ও বই ব্যবহার করেছিল। এ ছাড়া, তারা হাজার হাজার সংবাদপত্রে ছাপানোর জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় উপদেশ ও প্রবন্ধ প্রস্তুত করেছিল। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রেডিও স্টেশনগুলোতে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় কার্যক্রম সম্প্রচার করেছিল। এমনকী চলচ্চিত্র শিল্প জনসাধারণের জন্য সবাক চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়ার আগেই, তারা শব্দসহ চলমান চিত্র তৈরি ও ব্যবহার করেছিল। এই ধরনের নিরলস উদ্যোগের ফল কী হয়েছিল? বর্তমানে, প্রায় সত্তর লক্ষ লোক রয়েছে, যারা সাড়া দিয়েছে এবং এই বার্তা ঘোষণা করায় যোগ দিয়েছে: “তোমরা ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও।” সত্যিই, যিহোবার সেই প্রাথমিক দাসেরা তাদের সীমাবদ্ধ পরিস্থিতি সত্ত্বেও উদ্যোগের চমৎকার উদাহরণ ছিল।

১৩. ঈশ্বরের কোন উদ্দেশ্যকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত?

১৩ “এখন সুপ্রসন্নতার সময়,” পৌলের এই কথাগুলো এখনও সত্য। আমরা যারা যিহোবার অযাচিত দয়া লাভ করেছি, আমাদেরকে সম্মিলনের বার্তা শোনার ও গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা কৃতজ্ঞ। আত্মতুষ্ট বোধ করার পরিবর্তে, আমরা পৌলের পরবর্তী এই বাক্যগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি: “আমরা নিবেদনও করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ করিও না।” (২ করি. ৬:১) ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার উদ্দেশ্য হল, খ্রিস্টের মাধ্যমে “আপনার সহিত জগতের সম্মিলন।”—২ করি. ৫:১৯.

১৪. অনেক দেশে কোন সুযোগের দ্বার খুলে যাচ্ছে?

১৪ শয়তানের দ্বারা অন্ধ অধিকাংশ মানবজাতি এখনও ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তারা ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কিছুই জানে না। (২ করি. ৪:৩, ৪; ১ যোহন ৫:১৯) কিন্তু, জগতের খারাপ পরিস্থিতি অনেককে সাড়া দিতে পরিচালিত করেছে, যখন তাদের দেখানো হয়েছে যে, মানুষের মন্দতা ও কষ্টের মূল কারণ হচ্ছে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থা। এমনকী যে-দেশগুলোতে অধিকাংশ লোক আমাদের প্রচার কাজের ব্যাপারে উদাসীন, সেখানেও অনেক লোক এখন সুসমাচার গ্রহণ করছে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই, আমরা কি বুঝতে পারি যে, “তোমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হও” এই অনুরোধ ঘোষণা করার জন্য নিজেদের আরও বেশি উদ্যোগের সঙ্গে বিলিয়ে দেওয়ার সময় এখনই?

১৫. শুধুমাত্র মনের শান্তি দানকারী বার্তা প্রচার করার পরিবর্তে সমস্ত জায়গার লোকেরা কোন বিষয়টা জানুক বলে আমরা চাই?

১৫ আমাদের কাজ লোকেদের শুধুমাত্র এই বিষয়টা বলাই নয় যে, তারা যদি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে, তাহলে তিনি তাদের সকল সমস্যার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন এবং তারা মনের শান্তি লাভ করবে। অনেকে শুধুমাত্র সেটাই আশা করে, যখন তারা গির্জায় যায় আর গির্জাগুলো লোকেদের সেই আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ করার ব্যাপারে উৎসুক। (২ তীম. ৪:৩, ৪) এটা আমাদের পরিচর্যার লক্ষ্য নয়। আমরা যে-সুসমাচার প্রচার করি তা হল, যিহোবা তাঁর প্রেমবশত খ্রিস্টের মাধ্যমে অপরাধ ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। তাই, ব্যক্তি-বিশেষরা বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত হতে ও ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারে। (রোমীয় ৫:১০; ৮:৩২) কিন্তু, “সুপ্রসন্নতার সময়” শীঘ্র শেষ হতে যাচ্ছে।

“আত্মায় উত্তপ্ত হও”

১৬. কোন বিষয়টা পৌলের সাহস ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল?

১৬ তাহলে, কীভাবে আমরা সত্য উপাসনার পক্ষে আমাদের উদ্যোগ গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে পারি? কেউ কেউ হয়তো লাজুক ও চাপা স্বভাবের হতে পারে এবং তাদের পক্ষে বন্ধুত্বপরায়ণ ও মিশুক হওয়াকে কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, এটা মনে রাখা উত্তম যে, উদ্যোগ শুধুমাত্র আবেগ বা উত্তেজনার বাহ্যিক প্রকাশ নয়; কিংবা এটা একজনের ব্যক্তিত্বের ওপরও নির্ভর করে না। পৌল তা গড়ে তোলার ও বজায় রাখার চাবিকাঠিটা নির্দেশ করেছিলেন, যখন তিনি সহখ্রিস্টানদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আত্মায় উত্তপ্ত হও।” (রোমীয় ১২:১১) যিহোবার আত্মা প্রচার কাজে প্রেরিতের সাহস ও সহ্যশক্তির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যিশুর কাছ থেকে আহ্বান লাভ করার সময় থেকে রোমে তার শেষ কারাবরণ ও শহীদ হওয়া পর্যন্ত—৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে—পৌলের উদ্যোগ কমে যায়নি। তিনি সবসময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছিলেন, যিনি আত্মার মাধ্যমে পৌলকে প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়েছিলেন। “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলি. ৪:১৩) তার উদাহরণ থেকে শেখার মাধ্যমে আমরা কত উপকারই না লাভ করতে পারি!

১৭. কীভাবে আমরা ‘আত্মায় উত্তপ্ত হইতে’ পারি?

১৭ যে-শব্দটিকে “উত্তপ্ত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির আক্ষরিক অর্থ হল টগ্‌বগ্‌ করে ফোটা (কিংডম ইন্টারলিনিয়ার) এক কেতলি জলকে টগ্‌বগ্‌ করে ফোটানোর জন্য ক্রমাগত তাপ দিতে হবে। একইভাবে, ‘আত্মায় উত্তপ্ত হইবার’ জন্য আমাদের ক্রমাগত ঈশ্বরের আত্মা প্রয়োজন। তা লাভ করার উপায় হল, আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য যিহোবা যে-ব্যবস্থাগুলো দিয়েছেন, সেগুলো ব্যবহার করা। এর মানে হচ্ছে, পারিবারিক এবং মণ্ডলীগত উপাসনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া—নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অধ্যয়ন, প্রার্থনা এবং সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে সভা করা। এগুলো আমাদেরকে “টগ্‌বগ্‌ করে ফোটানোর” জন্য “তাপ” লাভ করতে সাহায্য করবে, যা আমাদেরকে “আত্মায় উত্তপ্ত” রাখবে।—পড়ুন, প্রেরিত ৪:২০; ১৮:২৫.

১৮. উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের কোন উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত?

১৮ একজন উৎসর্গীকৃত ব্যক্তি হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি পুরোপুরিভাবে একটা উদ্দেশ্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখেন এবং সেই উদ্দেশ্যের অনুধাবন করা থেকে সহজেই বিক্ষিপ্ত ও নিরুৎসাহিত হন না। উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের উদ্দেশ্য হল, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা-কিছুই চান না কেন, তা করা, ঠিক যেমনটা যিশু করেছিলেন। (ইব্রীয় ১০:৭) বর্তমানে, যিহোবার উদ্দেশ্য হল, যতটা সম্ভব বেশি লোক যেন তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত হয়। তাই, আসুন আমরা যিশু ও পৌলের অনুকারী হয়ে উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের এই কাজে বিলিয়ে দিই, যেটা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর হ্যাঁ, সেইসঙ্গে জরুরিও।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• “সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ” কী, যা পৌল ও অন্যান্য অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের আস্থা সহকারে দেওয়া হয়েছিল?

• কীভাবে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা ‘সুপ্রসন্নতার সময়ের’ সদ্‌ব্যবহার করেছিল?

• কীভাবে খ্রিস্টান পরিচারকরা ‘আত্মায় উত্তপ্ত হইতে’ পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

পৌল কখনোই প্রভু যিশু খ্রিস্ট যে তাকে দেখা দিয়েছিলেন সেই ঘটনাটা ভুলে যাননি