সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এদন বাগান কি সত্যিই ছিল?

এদন বাগান কি সত্যিই ছিল?

এদন বাগান কি সত্যিই ছিল?

পৃথিবী জুড়ে অনেক লোকই আদম, হবা ও এদন বাগানের ঘটনাটা সম্বন্ধে জানে। আপনিও হয়তো এই ঘটনাটা সম্বন্ধে শুনেছেন। আপনি যদি পুরো বিবরণটা পড়তে চান, তা হলে আদিপুস্তক ১:২৬-৩:২৪ পদ পড়ুন। নীচে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল:

যিহোবা ঈশ্বর a এদনে একটা বাগান প্রস্তুত করেন। বাগানটা অনেক সুন্দর ছিল। সেখানে অনেক ফলের গাছ ছিল এবং জলের সুব্যবস্থাও ছিল। ঈশ্বর ধুলো থেকে আদমকে সৃষ্টি করে সেই বাগানে রাখেন আর তাকে বলেন যেন তিনি সেই বাগানের মাঝখানে থাকা “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ” থেকে কোনো ফল না খান। তিনি আদমকে এটাও বলেন যে, যদি তিনি সেই গাছের ফল খান, তা হলে তিনি অবশ্যই মারা যাবেন। পরবর্তী সময়ে, যিহোবা আদমের পাঁজরের একটা হাড় ব্যবহার করে হবাকে সৃষ্টি করেন। ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেন এবং বংশবৃদ্ধি করে পুরো পৃথিবী পরিপূর্ণ করতে বলেন। এ ছাড়া, তিনি তাদের সেই বাগানের যত্নও নিতে বলেন।

পরে একসময় হবা যখন একা ছিলেন, তখন একটা সাপ তার সঙ্গে কথা বলে এবং তাকে সেই গাছের ফল খেতে বলে, যেটা থেকে ঈশ্বর খেতে বারণ করেছিলেন। সেই সাপ হবাকে বলে যে, ঈশ্বর মিথ্যা কথা বলেছেন আর হবা যদি সেই গাছের ফল খান, তা হলে তিনি ঈশ্বরের মতো হয়ে যাবেন। হবা সাপের কথায় বিশ্বাস করেন এবং সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খান। পরে আদমও সেই গাছের ফল খান এবং ঈশ্বরের অবাধ্য হন। এই কারণে যিহোবা ঈশ্বর আদম, হবা ও সেই সাপকে শাস্তি দেন। ঈশ্বর আদম ও হবাকে এদন বাগান থেকে বের করে দেন আর দু-জন স্বর্গদূতকে দিয়ে সেই বাগানের প্রবেশ পথ বন্ধ করে রাখেন।

বাইবেলে পাওয়া এই বিবরণটা আগেকার দিনের পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞরা সত্যি ঘটনা বলে বিশ্বাস করতেন, তবে বর্তমানে অনেকেই এই ঘটনাটা নিয়ে সন্দেহ করেন। কেন তারা সন্দেহ করেন? আসুন, আমরা এদন বাগানের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করার পিছনে চারটে কারণ নিয়ে আলোচনা করি।

১. এদন বাগান কি বাস্তবেই ছিল?

কেন অনেকে এদন বাগানের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন? তাদের সন্দেহ করার একটা কারণ হল দর্শনবিদ্যা। খ্রিস্টান ধর্মীয় গুরুরা, যারা শত শত বছর ধরে বিশ্বাস করতেন যে, এদন বাগানটা পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গায় তখনও অস্তিত্বে রয়েছে, তাদের সেই বিশ্বাস গ্রিক দর্শনবিদ্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। কীভাবে? প্লেটো ও অ্যারিস্টোটলের মতো দার্শনিকরা বিশ্বাস করতেন যে, এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই নিখুঁত হতে পারে না; একমাত্র স্বর্গেই সবকিছু নিখুঁত। তাদের শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্মীয় গুরুরা এই যুক্তি করতে শুরু করেন যে, তাহলে নিশ্চয়ই এদন উদ্যান দুষ্ট পৃথিবী থেকে দূরে স্বর্গের কাছাকাছি কোনো জায়গায় রয়েছে। b তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলতে শুরু করেন যে, বাগানটা দুষ্ট জগৎ থেকে দূরে, খুব উঁচু কোনো পর্বতের চূড়ায় রয়েছে। আবার অন্যেরা বলেন যে, বাগানটা পৃথিবীর উত্তর কিংবা দক্ষিণ মেরুতে রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এটা চাঁদ বা এর কাছাকাছি কোনো জায়গায় রয়েছে। এই সমস্ত কারণে লোকেরা চিন্তা করতে শুরু করে যে, আসলে এদন বাগান বলে কোনো সত্যিকারের জায়গা ছিলই না। এ ছাড়া, বাইবেলে এদন বাগানের ভৌগলিক অবস্থানের যে-বিবরণ রয়েছে, সেটার সঙ্গে আধুনিক দিনের বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেন না, আর তাই তারা সেটাতে বিশ্বাস করেন না।

কিন্তু, এ বিষয়ে বাইবেল যা বলে, আসুন আমরা তা লক্ষ করি। আদিপুস্তক ২:৮-১৪ পদে আমরা সেই এলাকা সম্বন্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে পারি। যেমন, সেই বাগানটা এদন নামের এলাকার পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। সেই বাগানটা যে-নদী থেকে জল পেত, সেটা পরে চারটে নদীতে বিভক্ত হয়। বাইবেলে সেই চারটে নদীর নাম রয়েছে। আর নদীগুলো কোন দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল, এর কিছু বর্ণনাও বাইবেলে রয়েছে। বাইবেলের এই বিবরণের উপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেন, এটা জানার জন্য যে, এদন বাগানটা কোথায় অবস্থিত ছিল। কিন্তু, অনেক খুঁজেও তারা সেটা পাননি। এর মানে কি এই যে, বাইবেলে বলা এদন, এর বাগান এবং নদীগুলোর বর্ণনা কাল্পনিক বা মিথ্যা?

একটু চিন্তা করুন, এখন থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগে এদন বাগানটা অস্তিত্বে ছিল। আর মোশি যখন আদিপুস্তকের বাগানের বিবরণটা লিখেছিলেন, ততদিনে প্রায় ২৫০০ বছর পার হয়ে গিয়েছিল। আসলে মোশি নিজেও স্বচক্ষে বাগানটা দেখেননি, কারণ অনেক আগেই নোহের জলপ্লাবনের সময়ে সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। c তাই, মোশির সময়ের লোকদের কাছে সেই বিবরণটা ইতিহাসের এক ঘটনা ছিল। এ ছাড়া, সেই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান সম্বন্ধে কী বলা যায়? এই ৬০০০ বছরের মধ্যে সেই নদীগুলোর গতিপথে নিশ্চয়ই পরিবর্তন এসেছে, কারণ এটা প্রকৃতির একটা স্বাভাবিক নিয়ম। এ ছাড়া, যেখানে এদনের অবস্থান ছিল বলে অনুমান করা হয়, সেই এলাকাটা একটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। আর বর্তমানে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকম্পগুলোর ১৭ শতাংশ ভূমিকম্পই সেই এলাকাতে হয়। তাই, নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সেই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান এখন আর আগের মতো নেই।

তবে, আমরা নিশ্চিত যে, আদিপুস্তকে বলা এদন বাগানের বর্ণনাটা আসলে একটা সত্যিকারের জায়গা সম্বন্ধেই বলে। কেন আমরা তা বলতে পারি? লক্ষ করুন, সেই বিবরণে যে-চারটে নদী সম্বন্ধে বলা রয়েছে, সেগুলো কোন এলাকা দিয়ে বয়ে যায় এবং সেই এলাকা কীসের জন্য সুপরিচিত তা উল্লেখ করা রয়েছে। মোশির সময়ের লোকেরা এই বর্ণনা পড়ার সময়ে কোন এলাকা সম্বন্ধে বলা হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিল। আর এমনকী সেই নদীগুলোর মধ্যে দুটো নদী—ইউফ্রেটিস এবং টিগ্রিস বা হিদ্দেকল—আজও বয়ে চলেছে। আর নদী দুটোর উৎসও একই এলাকায় অবস্থিত।

কোনো রূপকথা বা পৌরাণিক কাহিনিতে কি এত বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকে? সেগুলো কি এভাবে শুরু হয় না: “অনেক অনেক দিন আগে, দূরের এক দেশে? রূপকথা ও পৌরাণিক কাহিনিগুলোতে কোনো বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকে না আর তাই সেগুলোর সত্যতাও যাচাই করা যায় না। অন্য দিকে, যেহেতু এদন বাগান সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়, তাই এটা কোনো পৌরাণিক কাহিনি নয়, বরং একটা বাস্তব ঘটনা এবং ইতিহাসের একটা অংশ।

২. এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে ঈশ্বর আদমকে ধুলো থেকে এবং হবাকে আদমের পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করেছেন?

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, মানবদেহ যে-উপাদানগুলো দিয়ে তৈরি, এর সবগুলো উপাদানই মাটিতে পাওয়া যায়। কিন্তু, মাটির এই উপাদানগুলো কীভাবে এক হয়ে কোনো জীবিত প্রাণীতে পরিণত হল?

অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে, জীবন আপনা-আপনি এসেছে। তারা বলেন, অনেক অনেক আগে জীবন যখন শুরু হয়, তখন এর গঠন খুবই সাধারণ ছিল আর কোটি কোটি বছর ধরে তা বিবর্তিত হয়ে জটিল থেকে জটিলতর হয়। কিন্তু, যে-প্রাণীগুলোর গঠনকে তারা “সাধারণ” গঠন বলেন, সেগুলো আসলে খুবই জটিল। এমনকী একটা এককোষী প্রাণীর গঠনও অত্যন্ত জটিল। তা ছাড়া, আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, জীবন আপনা-আপনি শুরু হয়েছে। বরং প্রত্যেক জীবিত প্রাণীর মধ্যে থাকা নিঁখুত ও জটিল নকশা প্রমাণ দেয় যে, এর পিছনে আমাদের চেয়েও অনেক বেশি বুদ্ধিমান কেউ রয়েছেন। dরোমীয় ১:২০.

আপনি যখন কোনো বেহালার সুর শোনেন, রং-তুলিতে আঁকা কোনো ছবি বা আধুনিক প্রযুক্তির কোনো রোবট দেখেন, তখন কি আপনি চিন্তা করবেন যে, এগুলো আপনা-আপনিই এসেছে? না, কখনোই আপনি সেভাবে চিন্তা করবেন না। অথচ এগুলোর সৌন্দর্য ও জটিলতা মানবদেহের তুলনায় কিছুই নয়। মানবদেহ এগুলোর চেয়ে আরও অনেক বেশি জটিল। তাহলে, এটা চিন্তা করা কি যুক্তিযুক্ত হবে যে, মানবদেহ আপনা-আপনি এসেছে? এ ছাড়া একটু চিন্তা করুন, আমরা যে আমাদের সৃজনশীলতা দিয়ে এত জটিল এবং অবাক করা বিষয় তৈরি করতে পারি, এই সৃজনশীলতার গুণ আমাদের মধ্যে কোথা থেকে এসেছে? বাইবেল আমাদের জানায় যে, সব সৃষ্টির মধ্যে শুধুমাত্র মানুষকেই ঈশ্বর তাঁর মতো গুণাবলি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (আদিপুস্তক ১:২৬) তাই, আমরা সৃজনশীল কারণ ঈশ্বর সৃজনশীল। আর ঈশ্বরের দেওয়া এই গুণ ব্যবহার করে আমরা যদি এত অবাক করা বিষয় তৈরি করতে পারি, তা হলে ঈশ্বর কি তাঁর সৃজনশীলতা দিয়ে আরও জটিল এবং বিস্ময়কর বিষয় সৃষ্টি করতে পারেন না?

তাহলে, আদমের পাঁজরের হাড় থেকে হবাকে সৃষ্টি করা কি ঈশ্বরের জন্য খুবই কঠিন একটা কাজ? e ঈশ্বর চাইলে যেকোনো কিছু থেকেই হবাকে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু, আদমের পাঁজরের হাড় থেকে হবাকে সৃষ্টি করার পিছনে তাঁর এক বিশেষ কারণ ছিল। তিনি চেয়েছিলেন, স্বামী ও স্ত্রীর বন্ধন এতটাই ঘনিষ্ঠ হোক যেন তারা “একাঙ্গ”। (আদিপুস্তক ২:২৪) আর যখন স্বামী ও স্ত্রী নিজেদের মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলে এবং একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসে, তখন তারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই একসঙ্গে কাজ করে এবং এভাবে তারা সুখী হয়। এটা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন এবং অনেক চিন্তা করে তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।

এ ছাড়া, আধুনিক সময়ের অনেক জীনতত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন যে, এই পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে তাদের সকলেরই আদি পিতা-মাতা এক। তাই, সৃষ্টি সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে তা আমরা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারি।

৩. আদিপুস্তকে বলা সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ ও জীবনবৃক্ষ কাল্পনিক বলে মনে হয়।

সত্য বিষয়টা হল, আদিপুস্তকের বিবরণের কোথাও এমনটা বলা নেই যে, এই দুটো গাছের কোনো ধরণের অসাধারণ শক্তি ছিল। বরং এগুলো অন্যান্য গাছের মতোই ছিল এবং যিহোবা এগুলোকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

আসলে, মানুষও অনেক কিছুকেই প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন, যখন লোকদের বলা হয় যে, তাদেরকে তাদের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, তখন সবাই বুঝতে পারে যে, পতাকাটা হল দেশের প্রতীক। আর পতাকার প্রতি সম্মান দেখানোর অর্থ হল, দেশের প্রতি সম্মান দেখানো, সেই পতাকার কাপড়ের প্রতি নয়।

তাহলে, এদন বাগানের সেই গাছ দুটো কীসের প্রতীক? এ বিষয়ে যদিও অনেক জটিল মতবাদ ও ধারণার প্রচলন রয়েছে, তবে সত্যটা খুবই সরল আর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ ছিল কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল তা নির্ধারণ করার অধিকারের প্রতীক। আর সেই অধিকার শুধুমাত্র যিহোবার কাছেই রয়েছে। (যিরমিয় ১০:২৩) তাই, সেই গাছ থেকে ফল নিয়ে খাওয়াটা এক গুরুতর অন্যায় ছিল। আর জীবনবৃক্ষ ছিল অনন্ত জীবনের প্রতীক, যা শুধুমাত্র যিহোবা ঈশ্বরই আমাদের উপহার হিসেবে দিতে পারেন।—রোমীয় ৬:২৩.

৪. এদন বাগানে সাপ কথা বলেছিল, সেটা পড়লে মনে হয় যেন এটা একটা রূপকথার গল্প।

এটা ঠিক যে, সাপের কথা বলাটা অনেকের কাছে অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে যদি বাইবেলের অন্যান্য বিবরণ তাদের জানা না থাকে। সত্যি বলতে কী, বাইবেলে এমন অনেক শাস্ত্রপদ রয়েছে যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, সাপের কথা বলার পিছনে আসলে কে ছিল।

সেই সাপের পিছনে কে থাকতে পারে? মোশির সময়ে ইজরায়েলীয়রা এমন ঘটনাগুলো সম্বন্ধে জানত, যেগুলো তাদের বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, সেই সাপের পিছনে আসলে কে ছিল। যেমন, ইজরায়েলীয়রা জানত যে, একজন স্বর্গদূত একটা পশু বা পাখিকে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারেন যেন মনে হয় যে, সেই প্রাণীটা কথা বলছে। মোশির লেখা বিলিয়মের বিবরণ হল তেমনই এক উদাহরণ। এই বিবরণ বলে, ঈশ্বর একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি বিলিয়মের গাধীকে মানুষের মত কথা বলাতে পারেন।—গণনাপুস্তক ২২:২৬-৩১; ২ পিতর ২:১৫, ১৬.

তবে মন্দ স্বর্গদূতেরা, যারা ঈশ্বরের শত্রু, তারাও কি এ ধরণের কাজ করতে পারে? একবার মোশি মিশরে ফরৌণ রাজার সামনে ঈশ্বরের শক্তিতে অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি তাঁর লাঠিকে সাপ বানিয়েছিলেন। সেই একই অলৌকিক কাজ মিশরীয় মন্ত্রবেত্তারা, যারা মিথ্যা দেবতার উপাসনা করে, তারাও করে দেখাতে পেরেছিল। সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করে না এমন লোকেরা এ ধরনের অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা কোথা থেকে পেয়েছিল? নিশ্চিতভাবেই মন্দ স্বর্গদূতদের কাছ থেকে পেয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ৭:৮-১২.

এই মন্দ স্বর্গদূতদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রধান শত্রু হল শয়তান, যার সম্বন্ধে বাইবেলের ইয়োবের বিবরণ থেকে আমরা বেশ কিছু তথ্য পাই। এটা আমাদের জানায় যে, শয়তান ঈশ্বরের সমস্ত উপাসকদের বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। (ইয়োব ১:৬-১১; ২:৪, ৫) আর মোশির লেখা ইয়োবের এই বিবরণটা যখন ইজরায়েলীয়রা পড়েছিল, তখন তারা নিশ্চয়ই এই যুক্তি করতে পেরেছিল যে, ঈশ্বরের প্রতি হবার বিশ্বস্ততা ভেঙে ফেলার জন্য শয়তানই সেই সাপকে ব্যবহার করেছিল।

সেই সাপের পিছনে কি সত্যিই শয়তান ছিল? যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি শয়তান সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, “সে একজন মিথ্যাবাদী আর সে মিথ্যার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) যে-ব্যক্তি সবচেয়ে প্রথম মিথ্যা কথা বলে, নিশ্চয়ই তাকেই “মিথ্যার পিতা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে, তাই না? বাইবেল জানায়, সবচেয়ে প্রথম মিথ্যা কথা এদন বাগানের সেই সাপটা বলেছিল, যখন সে হবার সঙ্গে কথা বলেছিল। ঈশ্বর বলেছিলেন যে, সেই ফল খেলে মারা যাবে। কিন্তু সাপ বলেছিল, “কোন ক্রমে মরিবে না।” (আদিপুস্তক ৩:৪) তাই এটা স্পষ্ট যে, যিশু শয়তানকে মিথ্যার পিতা বলেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে, শয়তানই সেই সাপকে ব্যবহার করেছিল। এ ছাড়া, যিশু প্রেরিত যোহনকে প্রকাশিত বাক্যের দর্শন দেওয়ার সময়ে শয়তান সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, এই হল “সেই পুরোনো সাপ”।—প্রকাশিত বাক্য ১:১; ১২:৯.

কথা বলার জন্য একটা সাপকে এভাবে ব্যবহার করা কি একজন শক্তিশালী স্বর্গদূতের পক্ষে খুবই কঠিন কাজ? একেবারেই নয়! এমনকী মানুষও দক্ষতার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে পারে যাতে মনে হয় যে, কাছাকাছি থাকা কোনো পুতুল কথা বলছে।

এদন বাগান সত্যিই ছিল তার সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ

আপনি কি একমত হবেন না যে, আদিপুস্তকের বিবরণ নিয়ে যে-সন্দেহ করা হয়, এর পিছনে তেমন কোনো ভিত্তিই নেই? এর বিপরীতে, আমাদের কাছে জোরালো প্রমাণ রয়েছে যে, এদন বাগানের গল্পটা একেবারেই এক সত্য ঘটনা।

লক্ষ করুন, বাইবেলে যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, তিনি হলেন একজন “বিশ্বস্ত ও সত্যময় সাক্ষি”। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪) তিনি একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন অর্থাৎ তাঁর মধ্যে কোনো পাপ ছিল না আর তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেননি কিংবা সত্যকে ভুলভাবে তুলে ধরেননি। এ ছাড়া, বাইবেল জানায় যে, তিনি মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে আসার আগে, এমনকী “এই জগৎ সৃষ্টি হওয়ার আগে”, স্বর্গে তাঁর পিতা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন। (যোহন ১৭:৫) তাই, যেহেতু তিনি পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টি হওয়ার আগে থেকেই ছিলেন, এজন্য এদন বাগানের ঘটনা সম্বন্ধে তিনি যা বলেছিলেন, সেটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে পারি।

যিশু বিয়ে সম্বন্ধে যিহোবা ঈশ্বরের মানদণ্ড ব্যাখ্যা করার সময় আদম ও হবার বিয়ের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, আর এভাবে তিনি তাদের বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। (মথি ১৯:৩-৬) কিন্তু আদম, হবা ও এদন বাগানের ঘটনাটা যদি রূপকথাই হয়, তা হলে যিশু কি একটা মিথ্যার উপর ভিত্তি করে শিক্ষা দিয়েছিলেন? না, তা কখনোই সম্ভব নয়! সত্য বিষয়টা হল, এদন বাগানে যা ঘটেছিল, এর সবই যিশু স্বর্গ থেকে দেখেছিলেন। তাই, এ ব্যাপারে সবচেয়ে জোরালো সাক্ষ্য তিনিই দিতে পারেন, আর আমরা তাঁর কথায় বিশ্বাস করতে পারি।

আসলে, আমরা যদি আদিপুস্তকের বিবরণে বিশ্বাস না করি, এর মানে হবে, আমরা যিশুকেও বিশ্বাস করি না। আর যিশুকে বিশ্বাস করতে না পারলে, আমরা বাইবেলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে এবং সেখানে আমাদের ভবিষ্যতের আশা সম্বন্ধে যা-কিছু বলা আছে, সেগুলোর কোনোটাই ঠিকভাবে বুঝতে পারব না। আসুন দেখি, কেন।

[পাদটীকাগুলো]

a বাইবেল অনুযায়ী ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম হল যিহোবা।

b তাদের এই ধারণাটা শাস্ত্রীয় নয়। বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর ঈশ্বর সেগুলো দেখে বলেছিলেন, “সকলই অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৩১) বাইবেল আমাদের এও শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের হাতের সমস্ত কাজই নিখুঁত আর পাপ বা দুষ্টতা পরবর্তীতে এসেছে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫.

c ঈশ্বর যখন জলপ্লাবন আনেন, তখন স্পষ্টতই এদন বাগানটা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যিশুর জন্মের প্রায় ৬০০ বছর আগে লেখা যিহিষ্কেল ৩১:১৮ পদ থেকে বোঝা যায় যে, ‘এদনস্থ বৃক্ষগণ’ ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে, পরবর্তীতে যারা সেই বাগান খোঁজার চেষ্টা করেছে, তারা ব্যর্থ হয়েছে।

d যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত জীবনের উৎপত্তি—জিজ্ঞেস করা যথার্থ এমন পাঁচটা প্রশ্ন (ইংরেজি) শিরোনামের ব্রোশারটা দেখুন।

e আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এটা জানতে পেরেছে যে, অন্যান্য হাড়ের তুলনায় পাঁজরের হাড়ের এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এই হাড়ের কোনো ক্ষতি হলে বা এমনকী সরিয়ে নেওয়া হলে যদি সেখানে এর যোজক টিস্যু থেকে যায়, তা হলে সেটা সেখানে বৃদ্ধি পেয়ে আগের গঠন ধারণ করতে পারে।