সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রায়ই করা হয়ে থাকে এমন অভিযোগগুলোর সমাধান

প্রায়ই করা হয়ে থাকে এমন অভিযোগগুলোর সমাধান

প্রায়ই করা হয়ে থাকে এমন অভিযোগগুলোর সমাধান

বাইবেল এমনটা দাবি করে না যে, বিয়ে টিকিয়ে রাখা সহজ। ঈশ্বর প্রেরিত পৌলকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে, বিবাহিত দম্পতিদেরকে ‘দৈনন্দিন সমস্যাগুলোর’ সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। (১ করিন্থীয় ৭:২৮, টুডেজ ইংলিশ ভারসন) কিন্তু এক বিবাহিত দম্পতি, তারা যে-সমস্যাগুলো ভোগ করে, সেগুলোকে কমানোর এবং তারা একে অপরের জন্য যে-আনন্দ নিয়ে আসে, সেটাকে বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু করতে পারে। নীচে দেওয়া ছয়টা অভিযোগ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যেগুলো স্বামী ও স্ত্রীরা প্রায়ই করে থাকে আর দেখুন যে, বাইবেলের নীতিগুলোকে কাজে লাগানো কীভাবে সাহায্য করতে পারে।

অভিযোগ:

“আমার সাথি ও আমি ক্রমে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।”

বাইবেলের নীতি:

‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিন।’ফিলিপীয় ১:১০.

আপনার বিয়ে হল আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটা। এটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাই পরীক্ষা করে দেখুন যে, আপনার তালিকা এই অভিযোগের কারণ কি না। আপনার জীবনের দৈনন্দিন কাজকর্মকে আপনাকে এবং আপনার সাথিকে পৃথকভাবে জীবনযাপন করার কারণ হতে দেবেন না। এটা ঠিক যে, চাকরি এবং এড়ানো যায় না এমন অন্যান্য পরিস্থিতি হয়তো সাময়িকভাবে আপনাকে একে অপরের কাছ থেকে পৃথক থাকতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু আপনার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন যেকোনো বিষয়ের—যেমন বিভিন্ন শখের পিছনে অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যে-সময় ব্যয় করা হয় সেটার—ওপর আপনি একটা সীমা নির্ধারণ করতে পারেন ও আপনার তা করা উচিত।

কিন্তু, কোনো কোনো সাথি হয়তো তাদেরকে যাতে তাদের সাথিদের সঙ্গে সময় ব্যয় করতে না হয়, শুধুমাত্র সেই কারণেই অতিরিক্ত কাজ গ্রহণ করতে অথবা শখগুলোর পিছনে সময় কাটাতে পারে। এই ধরনের ব্যক্তিবিশেষরা তাদের সাথিদের কাছ থেকে ‘দূরে সরে যায়’ না। তারা সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আপনি অথবা আপনার সাথি যদি এই পর্যায়ে পড়েন, তাহলে আপনার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করা এবং সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করা দরকার। একমাত্র আপনার সাথির সঙ্গে একত্রে জীবন কাটানোর দ্বারাই আপনারা দুজনে আরও ঘনিষ্ঠ হতে এবং পূর্ণ অর্থে ‘একাঙ্গ হইতে’ পারেন। —আদিপুস্তক ২:২৪.

কেউ কেউ যেভাবে এই উপদেশ কাজে লাগিয়েছে: অ্যান্ড্রু * ও তাঞ্জি নামে এক অস্ট্রেলীয় দম্পতি দশ বছর ধরে বিবাহিত। অ্যান্ড্রু বলেন: “আমি বুঝতে পেরেছি যে, অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করা এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খুব বেশি সময় ব্যয় করা একটা বিয়ের পক্ষে বিপদজনক হতে পারে। তাই আমার স্ত্রী ও আমি কথা বলার এবং একে অপরের সঙ্গে আমাদের অনুভূতিগুলোকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য সময় করে নিই।”

ডেভ ও জেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে এবং ২২ বছর ধরে বিবাহিত, তারা তাদের অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাধারাগুলোকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রত্যেক সন্ধ্যার প্রথম আধ ঘন্টা ব্যয় করে থাকে। জেন বলেন: “এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ সময় যে, আমরা কোনোকিছুকেই এটাকে ব্যাহত করতে দিই না।”

অভিযোগ:

“এই সম্পর্ক থেকে আমি যা চাই, তা আমি আর পাচ্ছি না।”

বাইবেলের নীতি:

“কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।”১ করিন্থীয় ১০:২৪.

একজন ব্যক্তি, যিনি বিয়ে থেকে যা পাচ্ছেন মূলত তা নিয়েই চিন্তিত, তিনি কখনোই প্রকৃত সুখী হবেন না, এমনকী সেই ব্যক্তি যদি অনেক বার বিয়েও করে থাকেন। বিয়ে তখনই সফল হয় যখন প্রত্যেক সাথি নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার ওপরই বেশি করে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। যিশু কারণটা বলেন: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.

কেউ কেউ যেভাবে এই উপদেশ কাজে লাগিয়েছে: মারিয়া ও মার্টিন, যারা মেক্সিকোতে বাস করে, ৩৯ বছর ধরে বিবাহিত। কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন সবসময় সুখী ছিল না। তারা বিশেষ করে একটা কঠিন সময়ের কথা মনে করে। “এক প্রচণ্ড তর্ক-বিতর্কের সময়,” মারিয়া স্মরণ করে বলেন, “আমি মার্টিনকে এমন কিছু বলে ফেলেছিলাম যা বিশেষ করে অসম্মানজনক। সে খুবই রেগে গিয়েছিল। আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলাম যে, আমি হতাশ ছিলাম বলেই ওরকম বলে ফেলেছিলাম কিন্তু আসলে আমি তা বোঝাতে চাইনি। তবে সে আমার কথা শোনেনি।” মার্টিন বলেন, “সেই তর্ক-বিতর্কের সময়, আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম যে, আমরা আর একসঙ্গে থাকতে পারব না আর বিয়েকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করাই আমার ছেড়ে দেওয়া উচিত।”

মার্টিন চেয়েছিলেন তাকে যেন সম্মান করা হয়। মারিয়া চেয়েছিলেন তাকে যেন বোঝা হয়। তারা প্রত্যেকে যা চেয়েছিল, কোনোটাই তারা পায়নি।

কীভাবে তারা সমস্যাটা সমাধান করতে পেরেছিল? “আমি নিজেকে একটু শান্ত করেছিলাম,” মার্টিন বলেন, “আর আমরা দুজনেই সম্মান দেখানোর এবং সদয় হওয়ার বিষয়ে বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বছরের পর বছর ধরে আমরা শিখেছি যে, যত বারই সমস্যাগুলো আসুক না কেন, আমরা যদি ঈশ্বরের সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি এবং বাইবেলে পাওয়া উপদেশ কাজে লাগাই, তাহলে আমরা সেগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারব।”—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮; ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.

অভিযোগ:

“আমার সাথি তার দায়িত্বগুলো পালন করে না।”

বাইবেলের নীতি:

“আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।”রোমীয় ১৪:১২.

নিঃসন্দেহে, বিয়ের সফলতার ক্ষেত্রে যদি কেবল একজন সাথিই অবদান রাখে, তাহলে সেটা সফল হবে না। কিন্তু, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, যদি উভয় সাথিই একে অপরকে উপেক্ষা করে এবং পরস্পরকে দোষারোপ করে।

আপনার সাথির কী করা উচিত, সেই বিষয়টা নিয়েই যদি আপনি সবসময় চিন্তা করেন, তাহলে আপনি কখনোই সুখী হবেন না। বিশেষ করে তখনই এমনটা হবে, যদি আপনি আপনার সাথির ভুলত্রুটিকে আপনার নিজের দায়িত্বগুলো পালন না করার এক অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন। অন্য দিকে, আপনি যদি একজন উত্তম স্বামী অথবা একজন উত্তম স্ত্রী হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, তাহলে খুব সম্ভবত আপনার বিবাহিত জীবন আরও ভালো হবে। (১ পিতর ৩:১-৩) আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনি ঈশ্বরের কাছে প্রমাণ করেন যে, আপনি বিবাহ সম্বন্ধীয় তাঁর ব্যবস্থাকে সম্মান করেন এবং আপনার কাজগুলো তাঁর জন্য অনেক আনন্দ নিয়ে আসবে।—১ পিতর ২:১৯.

কেউ কেউ যেভাবে এই উপদেশ কাজে লাগিয়েছে: কিম ও তার স্বামী, যারা কোরিয়াতে বাস করে, ৩৮ বছর ধরে বিবাহিত। কিম বলেন: “কখনো কখনো আমার স্বামী আমার ওপর রেগে যায় ও আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় আর কী কারণে এমনকী আমি তা জানি না। এর ফলে আমার মনে হয় যে, আমার প্রতি তার ভালোবাসা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। কখনো কখনো আমি চিন্তা করতাম, ‘কেন সে চায় যে, আমি যেন তাকে বুঝি যখন কিনা সে নিজে আমাকে বোঝার চেষ্টা করে না?’”

কিম অন্যায় পরিস্থিতি এবং তার সাথি যা করছিল না, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারতেন। এর পরিবর্তে, তিনি এক ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছিলেন। “হতাশ হয়ে না থেকে,” কিম বলেন, “আমি শিখেছি যে, শান্তি স্থাপন করার চেষ্টায় নিজে থেকে পদক্ষেপ নেওয়াই সর্বোত্তম। ফলে, আমরা দুজনেই শান্ত হতে এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে পারি।”—যাকোব ৩:১৮.

অভিযোগ:

“আমার স্ত্রী বশীভূত নয়।”

বাইবেলের নীতি:

“প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট।”১ করিন্থীয় ১১:৩.

একজন স্বামী, যিনি মনে করেন যে, তার স্ত্রী বশীভূত নন, তার প্রথমে এটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে, তিনি তার মস্তক যিশু খ্রিস্টের প্রতি বশ্যতা দেখাতে ইচ্ছুক কি না। একজন স্বামী যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করার দ্বারা তার বশ্যতা দেখাতে পারেন।

প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফিষীয় ৫:২৫) যিশু তাঁর শিষ্যদের ওপর “প্রভুত্ব” করেননি। (মার্ক ১০:৪২-৪৪) তিনি তাঁর অনুসারীদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে তাদেরকে সংশোধন করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই রূঢ় ছিলেন না। তিনি তাদের প্রতি সদয় ছিলেন এবং তাদের সীমাবদ্ধতাগুলোকে বুঝেছিলেন। (মথি ১১:২৯, ৩০; মার্ক ৬:৩০, ৩১; ১৪:৩৭, ৩৮) তিনি সবসময় নিজের আগ্রহগুলোর চেয়ে বরং তাদের আগ্রহগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।—মথি ২০:২৫-২৮.

একজন স্বামীর নিজেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন, ‘মস্তক ব্যবস্থা এবং সাধারণভাবে স্ত্রীলোকদের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি কি বাইবেলে পাওয়া পরামর্শ এবং উদাহরণগুলোর চেয়ে বরং স্থানীয় প্রথার দ্বারা বেশি প্রভাবিত?’ উদাহরণস্বরূপ, এমন একজন স্ত্রীলোক সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করবেন, যিনি তার স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হননি এবং দৃঢ়ভাবে অথচ সম্মানের সঙ্গে তার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করেছেন? বাইবেলে, অব্রাহামের স্ত্রী সারাকে, একজন বশীভূতা স্ত্রীর এক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। (১ পিতর ৩:১, ৬) কিন্তু যখন প্রয়োজন হয়েছিল, যেমন পরিবারের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল এমন নির্দিষ্ট কিছু বিপদ দেখতে অব্রাহাম যখন ব্যর্থ হয়েছিলেন, তখন সারা তার মনের কথা বলেছিলেন।—আদিপুস্তক ১৬:৫; ২১:৯-১২.

স্পষ্টতই, অব্রাহাম ভয় দেখিয়ে সারাকে চুপ করিয়ে রাখেননি। তিনি উৎপীড়ক ছিলেন না। একইভাবে একজন স্বামী, যিনি বাইবেলের পরামর্শ মেনে চলেন, তিনি তার স্ত্রী যে তার সমস্ত খেয়ালখুশির বশীভূত হবেন এমনটা দাবি করে তার ওপর জোরাজুরি করবেন না। তিনি সমবেদনাজনক উপায়ে তার মস্তকপদকে ব্যবহার করার দ্বারা তার স্ত্রীর সম্মান অর্জন করবেন।

কেউ কেউ যেভাবে এই উপদেশ কাজে লাগিয়েছে: জেমস যিনি ইংল্যান্ডে বাস করেন ও আট বছর ধরে বিবাহিত, তিনি বলেন: “আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে শিখছি। আমি কেবল নিজের বিষয়েই চিন্তা না করার চেষ্টা করি। এর পরিবর্তে, আমি আমার নিজের প্রয়োজনগুলোর চেয়ে বরং তার প্রয়োজনগুলোকে প্রথমে রাখি।”

জর্জ যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন এবং ৫৯ বছর ধরে বিবাহিত। তিনি বলেন: “আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার চেয়ে নগণ্য একজন ব্যক্তি হিসেবে নয় বরং একজন বুদ্ধিমান ও গুণবতী সাথি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।”—হিতোপদেশ ৩১:১০.

অভিযোগ:

“আমার স্বামী নিজে থেকে পদক্ষেপ নেয় না।”

বাইবেলের নীতি:

“স্ত্রীলোকদের বিজ্ঞতা তাহাদের গৃহ গাঁথে, কিন্তু অজ্ঞানতা স্বহস্তে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলে।”হিতোপদেশ ১৪:১.

আপনার স্বামী যদি সিদ্ধান্তগুলো নিতে অথবা পরিবার সামলানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে অনিচ্ছুক হন, তাহলে আপনার কাছে বেছে নেওয়ার মতো অন্ততপক্ষে তিনটে বিষয় রয়েছে। (১) আপনি সবসময় তার ভুলত্রুটিকে তুলে ধরতে পারেন অথবা (২) পরিবারের মস্তক হিসেবে তার ভূমিকাকে নিজের হাতে নিয়ে নিতে পারেন অথবা (৩) তিনি যেকোনো প্রচেষ্টাই করেন, সেটার জন্য আপনি আন্তরিকভাবে তার প্রশংসা করতে পারেন। আপনি যদি প্রথম দুটো বাছাইয়ের মধ্যে কোনো একটা বেছে নেন, তাহলে আপনি নিজের হাতে আপনার ঘর ভেঙে ফেলবেন। তৃতীয়টা বেছে নেওয়া আপনাকে আপনার বিয়েকে গেঁথে তুলতে বা শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

অনেক পুরুষ ভালোবাসার চেয়ে বরং সম্মান পাওয়াকেই বেশি মূল্য দেয়। তাই আপনি যদি দেখান যে, আপনি আপনার স্বামীকে সম্মান করেন অর্থাৎ দেখান যে, পরিবারকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি যে-প্রচেষ্টাগুলো করেন, সেগুলো কার্যকারী ও সেগুলোকে উপলব্ধি করা হয়, তাহলে তিনি তার ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে সম্ভবত উন্নতি করবেন। অবশ্য, কখনো কখনো আপনি কোনো বিষয়ে আপনার স্বামীর সঙ্গে একমত না-ও হতে পারেন। আপনাদের দুজনেরই সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ১৮:১৩) কিন্তু আপনি যে-শব্দগুলো বেছে নেন এবং যে-স্বরে কথা বলেন, তা আপনাকে আপনার বিয়েকে হয় ভেঙে ফেলতে কিংবা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। (হিতোপদেশ ২১:৯; ২৭:১৫) সম্মানজনকভাবে নিজেকে প্রকাশ করুন আর এর ফলে খুব সম্ভবত আপনি সেই ফলাফল লাভ করবেন, যেটা আপনি চান—একজন স্বামী, যিনি নেতৃত্ব দিতে ইতস্তত করেন না।

কেউ কেউ যেভাবে এই উপদেশ কাজে লাগিয়েছে: মিশেল যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন ও ৩০ বছর ধরে বিবাহিত, তিনি বলেন: “যেহেতু আমার মা আমাকে ও আমার বোনদেরকে স্বামীর সমর্থন ছাড়াই বড়ো করে তুলেছিলেন, তাই তিনি খুবই দৃঢ়, স্বাধীনচেতা মহিলা ছিলেন। আমি সেই গুণগুলোকে অনুকরণ করার প্রবণতা দেখাই। তাই, যথার্থ বশ্যতা দেখানোর জন্য আমাকে সবসময় চেষ্টা করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিজে নিজেই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার পরিবর্তে, আমি আমার স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করতে শিখেছি।”

রেচেল, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাস করেন এবং ২১ বছর ধরে মার্কের সঙ্গে বিবাহিত, তিনিও তার পটভূমির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। “আমার মা কখনোই আমার বাবার বশীভূত ছিলেন না,” তিনি স্মরণ করে বলেন। “তর্ক-বিতর্ক করা ও অসম্মান দেখানো সাধারণ বিষয় ছিল। আমার বিয়ের শুরুর বছরগুলোতে আমি আমার মাকে অনুকরণ করেছিলাম। কিন্তু বছর পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমি সম্মান দেখানোর বিষয়ে বাইবেলের উপদেশকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব সম্বন্ধে শিখেছি। এখন মার্ক আর আমি বেশ সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করছি।”

অভিযোগ:

“আমি আমার সাথির বিরক্তিকর অভ্যাসগুলোকে আর সহ্য করতে পারছি না।”

বাইবেলের নীতি:

“পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর।”কলসীয় ৩:১৩.

আপনি যখন প্রথম ডেটিং করছিলেন, তখন খুব সম্ভবত আপনি আপনার ভাবী সাথির উত্তম গুণগুলোর ওপর এতটাই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন যে, আপনি তার ভুলত্রুটিকে কদাচিৎ লক্ষ করেছিলেন। আপনি কি এখনও তা করতে পারেন? নিঃসন্দেহে, আপনার সাথির প্রতি আপনার অভিযোগ করার যুক্তিযুক্ত কারণ থাকে। কিন্তু, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি আমার সাথির কোন গুণের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা বেছে নেব—ভালো নাকি মন্দ?’

যিশু এক জোরালো দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন যেটা দেখায় যে, অন্যদের মধ্যে আমরা যে-ভুলত্রুটি দেখি, সেগুলোকে আমাদের উপেক্ষা করা প্রয়োজন। “তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহাই কেন দেখিতেছ,” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কিন্তু তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা কেন ভাবিয়া দেখিতেছ না?” (মথি ৭:৩) কুটা হতে পারে ঘাসের একটা ছোট্ট টুকরো। অন্যদিকে, কড়িকাঠ হল লম্বা, ভারী একটা কাঠ, যা কোনো বাড়ির ছাদকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? “আগে আপনার চক্ষু হইতে কড়িকাট বাহির করিয়া ফেল, আর তখন তোমার ভ্রাতার চক্ষু হইতে কুটা গাছটা বাহির করিবার নিমিত্ত স্পষ্ট দেখিতে পাইবে।”—মথি ৭:৫.

এক গুরুগম্ভীর সাবধানবাণীর দ্বারা যিশু এই দৃষ্টান্তটি শুরু করেছিলেন। “তোমরা বিচার করিও না,” তিনি বলেছিলেন, “যেন বিচারিত না হও। কেননা যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হইবে।” (মথি ৭:১, ২) আপনি যদি চান যে, ঈশ্বর আপনার ভুলত্রুটি—আপনার চোখের কড়িকাট—উপেক্ষা করুন, তাহলে আপনার সাথির ভুলত্রুটিকে উপেক্ষা করা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।—মথি ৬:১৪, ১৫.

কেউ কেউ যেভাবে এই উপদেশ কাজে লাগিয়েছে: জেনি, যিনি ইংল্যান্ডে বাস করেন এবং এখন নয় বছর ধরে সাইমনের সঙ্গে বিবাহিত, তিনি বলেন: “আমি মনে করি যে, আমি প্রায়ই যে-কারণে আমার স্বামীর প্রতি বিরক্ত হই, তা হল আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা না করার, শেষ মুহূর্তে বিষয়গুলো সামলানোর প্রবণতা দেখানো। সেটা হাস্যকর, কারণ আমরা যখন ডেটিং করতাম, তখন আমার তার এই হঠাৎ করে সবকিছু করাটা ভালো লাগত। কিন্তু এখন আমি উপলব্ধি করি যে, আমার নিজেরও ভুলত্রুটি রয়েছে যেমন, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণপ্রবণ হওয়া। সাইমন ও আমি একে অপরের ছোটোখাটো ভুলত্রুটি উপেক্ষা করতে শিখছি।”

কার্ট, যিনি আগে উল্লেখিত মিশেলের সঙ্গে বিবাহিত, তিনি বলেন: “আপনি যদি আপনার সাথির বিরক্তিকর গুণগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন, তাহলে সেই ত্রুটিগুলো বেড়ে চলেছে বলে মনে হবে। আমি সেই গুণগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে ভালোবাসি, যেগুলোর কারণে আমি প্রথম মিশেলের প্রেমে পড়েছিলাম।”

সফল হওয়ার রহস্যটি

এই কয়েকটা উদাহরণ দেখায় যে, বিবাহিত জীবনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো অনিবার্য কিন্তু সেগুলোকে অতিক্রম করা যায় না এমন নয়। সফল হওয়ার রহস্যটি কী? ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং তাঁর বাক্য বাইবেলে পাওয়া পরামর্শকে কাজে লাগানোর এক ইচ্ছুক মনোভাব গড়ে তুলুন।

অ্যালেক্স ও ইটোহাং, যারা নাইজেরিয়াতে বাস করে ও ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবাহিত, তারা সেই রহস্যটি শিখেছে। অ্যালেক্স বলেন: “আমি দেখেছি যে, কোনো দম্পতি যদি বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগায়, তাহলে প্রায় যেকোনো বৈবাহিক সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।” তার স্ত্রী বলেন: “আমরা নিয়মিতভাবে একসঙ্গে প্রার্থনা করার এবং একে অপরের প্রতি আন্তরিকভাবে প্রেমময় ও ধৈর্যশীল হওয়ার বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর গুরুত্বকে উপলব্ধি করেছি। আমরা যখন বিয়ে করেছিলাম, তখনকার তুলনায় এখন আমাদের কম সমস্যা রয়েছে।”

কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া ব্যবহারিক পরামর্শ আপনার পরিবারকে উপকৃত করতে পারে, সেই সম্বন্ধে আপনি কি আরও বেশি জানতে চান? যদি চান, তাহলে যিহোবার সাক্ষিদেরকে আপনার সঙ্গে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ১৪ অধ্যায়টি আলোচনা করতে বলুন। * (w১১-E ০২/০১)

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা কি একে অপরের জন্য সময় করে নিই?

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমি কি যতটা পাই, তার চেয়ে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করি?

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমি কি মতপার্থক্যগুলো সমাধান করার জন্য নিজে থেকে পদক্ষেপ নিই?

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমি কি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার স্ত্রীর মতামতকে বিবেচনা করি?

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমি কি আমার সাথির উত্তম গুণগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি?