সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে

ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে

ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে

“তুমি ধার্ম্মিককে আশীর্ব্বাদ করিবে, হে সদাপ্রভু, তুমি ঢালের ন্যায় তাহাকে প্রসন্নতায় বেষ্টন করিবে।”—গীত. ৫:১২.

১, ২. সারিফতের বিধবার কাছে এলিয় কোন অনুরোধ করেছিলেন এবং সেইসঙ্গে তাকে কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন?

 মহিলাটি এবং তার ছেলে ক্ষুধার্ত ছিল আর সেইসঙ্গে ঈশ্বরের ভাববাদীও ক্ষুধার্ত ছিলেন। সারিফতের এই বিধবা যখন রান্না করার জন্য আগুন জ্বালাতে যাচ্ছিলেন, তখন ভাববাদী এলিয় তার কাছে জল ও রুটি চেয়েছিলেন। তিনি তাকে জল দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার কাছে খাবার বলতে যা ছিল, তা হল “জালায় এক মুষ্টি ময়দা ও ভাঁড়ে কিঞ্চিৎ তৈল।” তিনি মনে করেছিলেন যে, ভাববাদীকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট খাবার তার কাছে নেই আর তিনি ভাববাদীকে সেই বিষয়টা বলেছিলেন।—১ রাজা. ১৭:৮-১২.

“প্রথমে তাহা হইতে আমার জন্য একটী ক্ষুদ্র পিষ্টক প্রস্তুত করিয়া আন,” এলিয় বলেই চলেন, “পরে আপনার ও ছেলেটীর জন্য প্রস্তুত করিও। কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে দিন পর্য্যন্ত সদাপ্রভু ভূতলে বৃষ্টি না দেন, সেই দিন পর্য্যন্ত তোমার ময়দার জালা শূন্য হইবে না, ও তৈলের ভাঁড় শুকাইয়া যাইবে না।”—১ রাজা. ১৭:১৩, ১৪.

৩. আমাদের সামনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোন প্রশ্ন রয়েছে?

সেই বিধবার কাছে যে-সামান্য খাবার ছিল, তা তিনি ভাববাদীর সঙ্গে ভাগ করে নেবেন কী নেবেন না, কেবল সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তিনি কি নিজেকে ও তার ছেলেকে রক্ষা করার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করবেন, নাকি ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার এবং তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পরিবর্তে বস্তুগত প্রয়োজনগুলোকে প্রথমে রাখবেন? আমাদের সকলের সামনেও একই প্রশ্ন রয়েছে। আমরা কি বস্তুগত নিরাপত্তা লাভের চেষ্টা করার চেয়ে বরং যিহোবার অনুমোদন লাভ করার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেব? ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার এবং তাঁকে সেবা করার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে। তাঁর অনুমোদনের চেষ্টা করার এবং তা লাভ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে, যেগুলো আমরা নিতে পারি।

‘তুমিই ভজনা গ্রহণের যোগ্য’

৪. কেন যিহোবা আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য?

মানুষ তাঁকে গ্রহণযোগ্য উপায়ে সেবা করবে, এমনটা আশা করার অধিকার যিহোবার রয়েছে। তাঁর স্বর্গীয় দাসদের একটা দল একসুরে এই কথা বলার দ্বারা বিষয়টা নিশ্চিত করেছিল: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (প্রকা. ৪:১১) সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তিনি আমাদের ভজনা বা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।

৫. কেন ঈশ্বরের প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের তাঁকে সেবা করা উচিত?

যিহোবাকে সেবা করার আরেকটা কারণ হল, আমাদের জন্য তাঁর অতুলনীয় প্রেম। “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন,” বাইবেল বলে, “ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।” (আদি. ১:২৭) মানুষ হল নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি, যাদের চিন্তা করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা রয়েছে। আমাদেরকে জীবন দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবা মানবজাতির পিতা হয়ে উঠেছেন। (লূক ৩:৩৮) একজন উত্তম পিতার মতো, তিনি তাঁর পুত্রকন্যাদের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তকিছু জুগিয়েছেন, যেন তারা জীবন উপভোগ করতে পারে। ‘তিনি আপনার সূর্য্য উদিত করেন’ এবং “জল বর্ষান,” যাতে পৃথিবী এক অপূর্ব পরিবেশে আমাদের জন্য প্রচুর খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।—মথি ৫:৪৫.

৬, ৭. (ক) আদম তার সমস্ত বংশধরের জন্য কোন ক্ষতি নিয়ে এসেছিল? (খ) যারা ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার চেষ্টা করে, তাদের জন্য খ্রিস্টের বলিদান কী করবে?

এ ছাড়া, যিহোবা আমাদেরকে পাপের ভয়ংকর পরিণতিগুলো থেকেও উদ্ধার করেছেন। পাপ করার মাধ্যমে আদম এমন একজন জুয়াড়ি হয়ে উঠেছিল, যে তার পরিবারের কাছ থেকে চুরি করে জুয়া খেলে থাকে। যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মাধ্যমে আদম তার সন্তানদের কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশা—অনন্ত সুখের প্রত্যাশা—কেড়ে নিয়েছিল। তার স্বার্থপরতা মানবজাতিকে এক নিষ্ঠুর প্রভু অর্থাৎ অসিদ্ধতার দাসত্বে যেতে বাধ্য করেছে। এই কারণেই সমস্ত মানুষ অসুস্থ হয়, দুঃখ ভোগ করে এবং অবশেষে মারা যায়। একজন দাসকে মুক্ত করার জন্য মূল্য প্রদান করতে হয় আর যিহোবা সেই মূল্য প্রদান করেছেন, যা আমাদেরকে এই মারাত্মক পরিণতিগুলো থেকে রক্ষা করতে পারে। (পড়ুন, রোমীয় ৫:২১.) তাঁর পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে যিশু “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে” দিয়েছেন। (মথি ২০:২৮) শীঘ্র, এই মুক্তির মূল্য সেই ব্যক্তিদের জন্য পূর্ণ উপকার নিয়ে আসবে, যারা ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করে থাকে।

আমাদেরকে এক সুখী ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন প্রদান করার জন্য আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা, যেকারো চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছেন। তাঁর অনুমোদন লাভ করায় আমরা দেখতে পাব যে, মানবজাতির ওপর আসা সমস্ত ক্ষতি তিনি কীভাবে দূর করে দেবেন। যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে দেখিয়ে চলবেন যে, কীভাবে তিনি “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, . . . তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.

“তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে”

৮. যিশাইয়ের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে কী শিক্ষা দেয়?

ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার অন্তর্ভুক্ত আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। এর কারণ হল, যিহোবা তাঁকে সেবা করার জন্য কাউকে জোর করেন না। যিশাইয়ের দিনে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমি কাহাকে পাঠাইব? আমাদের পক্ষে কে যাইবে?” ভাববাদীর যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে, তা স্বীকার করার মাধ্যমে যিহোবা তাকে মর্যাদা দিয়েছিলেন। যিশাইয়ের পরিতৃপ্তি সম্বন্ধে একটু কল্পনা করুন, যখন তিনি উত্তরে এই কথা বলেছিলেন: “এই আমি আমাকে পাঠাও।”—যিশা. ৬:৮.

৯, ১০. (ক) কোন মনোভাব নিয়ে আমাদের ঈশ্বরের সেবা করা উচিত? (খ) কেন সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করা আমাদের জন্য উপযুক্ত?

মানবজাতি ঈশ্বরকে সেবা করবে কি করবে না, সেই ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা রয়েছে। যিহোবা চান যেন আমরা স্বেচ্ছায় তাঁর সেবা করি। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.) ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট মনে উপাসনা করে এমন কেউই তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না; অথবা তিনি সেই ব্যক্তিদের ভক্তিও গ্রহণ করেন না, যাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কেবল অন্য মানুষদের সন্তুষ্ট করা। (কল. ৩:২২) জাগতিক বিষয়গুলোকে আমাদের উপাসনার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যদি পবিত্র সেবা প্রদান করতে “বিলম্ব” বা ইতস্তত করি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারব না। (যাত্রা. ২২:২৯) যিহোবা জানেন যে, সর্বান্তঃকরণে তাঁর সেবা করা আমাদের জন্য উত্তম। মোশি ইস্রায়েলীয়দেরকে ‘তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবার, তাঁহার রবে অবধান করিবার ও তাঁহাতে আসক্ত থাকিবার’ মাধ্যমে জীবন মনোনীত করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।—দ্বিতীয়. ৩০:১৯, ২০.

১০ প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ যিহোবার উদ্দেশে গেয়েছিলেন: “তোমার বিক্রম-দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে; পবিত্র শোভায়, ঊষার গর্ব্ভ হইতে, তোমার যুবকেরা তোমার কাছে শিশিরতুল্য।” (গীত. ১১০:৩) অনেক লোক আর্থিক নিরাপত্তা এবং অবকাশযাপনকে তাদের জীবনে প্রথমে রাখে। কিন্তু, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তারা তাদের পবিত্র সেবাকে অন্য সমস্তকিছুর চেয়ে প্রথমে রাখে। তারা যে-উদ্যোগ নিয়ে সুসমাচার প্রচার করে, তা প্রমাণ দেয় যে, তারা কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যিহোবা যে তাদের রোজকার চাহিদাগুলো মেটাতে সমর্থ আছেন, সেই বিষয়ে তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।—মথি ৬:৩৩, ৩৪.

যে-বলিদান ঈশ্বর গ্রাহ্য করেন

১১. যিহোবার উদ্দেশে বলিদান করার মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা কোন উপকার লাভ করবে বলে আশা করত?

১১ ব্যবস্থা চুক্তির অধীনে, ঈশ্বরের লোকেরা তাঁর অনুগ্রহ লাভ করার জন্য গ্রহণযোগ্য বলি উৎসর্গ করত। “যখন তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে মঙ্গলার্থক বলিদান কর,” লেবীয় পুস্তক ১৯:৫ পদ বলে, “তখন গ্রাহ্য হইবার নিমিত্ত বলিদান করিও।” বাইবেলের একই পুস্তকে আমরা পড়ি: “যে সময়ে তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্তবার্থক বলি উৎসর্গ করিবে, তৎকালে গ্রাহ্য হইবার জন্যই তাহা উৎসর্গ করিও।” (লেবীয়. ২২:২৯) ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার বেদিতে ত্রুটিহীন পশু উৎসর্গ করত, তখন ওপরে উঠে যাওয়া ধোঁয়া ঈশ্বরের কাছে “সৌরভার্থক” বলির মতো ছিল। (লেবীয়. ১:৯, ১৩) তাঁর লোকেদের ভালোবাসার সেই অভিব্যক্তি তাঁর জন্য প্রশান্তি এবং সতেজতা নিয়ে আসত। (আদি. ৮:২১) ব্যবস্থার এই দিকগুলোতে আমরা এমন একটা নীতি পাই, যেটা আজকে আমাদের বেলায় প্রযোজ্য। যারা যিহোবার উদ্দেশে গ্রহণযোগ্য বলি প্রদান করে, তারা তাঁর দ্বারা গ্রাহ্য হয় বা তাঁর অনুমোদন লাভ করে। তিনি কোন ধরনের বলি গ্রহণ করেন? জীবনের দুটো দিক বিবেচনা করুন: আমাদের আচরণ এবং আমাদের কথাবার্তা।

১২. কোন ধরনের কাজ করে চলা ‘বলিরূপে উৎসর্গীকৃত আপন আপন দেহকে’ যিহোবার কাছে অসন্তোষজনক করে তোলে?

১২ রোমীয়দের কাছে চিঠি লেখার সময় প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” (রোমীয় ১২:১) ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য একজন ব্যক্তিকে তার দেহকে ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য রাখতে হবে। তিনি যদি তামাক, সুপারি, মাদকদ্রব্য অথবা মদ্য-জাতীয় পানীয়ের অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে মলিন বা কলুষিত করতেন, তাহলে সেই বলির কোনো মূল্যই থাকত না। (২ করি. ৭:১) অধিকন্তু, “ব্যভিচার” করে চলেন এমন একজন ব্যক্তি যেহেতু ‘নিজ দেহের বিরুদ্ধে পাপ করেন,’ তাই যেকোনো ধরনের অনৈতিক আচরণ তার বলিদানকে যিহোবার কাছে অসন্তোষজনক করে তোলে। (১ করি. ৬:১৮) ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ‘নিজের সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র’ হতে হবে।—১ পিতর ১:১৪-১৬.

১৩. কেন যিহোবার প্রশংসা করা উপযুক্ত?

১৩ আরেকটা যে-বলিদান যিহোবাকে আনন্দিত করে, তা আমাদের কথাবার্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তারা জনসাধারণ্যে ও ঘরে একান্তে থাকাকালীন সবসময় তাঁর প্রশংসা করে থাকে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৪:১-৩.) গীতসংহিতার ১৪৮-১৫০ গীত পড়ুন এবং এই তিনটি গীত কত বার আমাদেরকে যিহোবার প্রশংসা করতে উৎসাহিত করে, তা লক্ষ করুন। সত্যিই, “প্রশংসা করা সরল লোকদের উপযুক্ত।” (গীত. ৩৩:১১) আর আমাদের আদর্শ যিশু খ্রিস্ট সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রশংসা করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন।—লূক ৪:১৮, ৪৩, ৪৪.

১৪, ১৫. হোশেয় ইস্রায়েলীয়দেরকে কোন ধরনের বলি উৎসর্গ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন আর যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১৪ উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করার মাধ্যমে আমরা এই প্রমাণ দিই যে, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং তাঁর অনুমোদন লাভ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী। উদাহরণস্বরূপ, বিবেচনা করুন যে, ভাববাদী হোশেয় কীভাবে সেই ইস্রায়েলীয়দের সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিলেন, যারা মিথ্যা উপাসনার পক্ষ নিয়েছিল এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। (হোশেয় ১৩:১-৩) হোশেয় তাদেরকে যিহোবার কাছে এই মিনতি করতে বলেছিলেন: “সমুদয় অপরাধ হরণ কর; যাহা উত্তম, তাহা গ্রহণ কর; তাহাতে আমরা আপন আপন ওষ্ঠাধর বৃষরূপে বলিদান করিব।”—হোশেয় ১৪:১, ২.

১৫ একজন ইস্রায়েলীয় যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে পারত এমন পশুপাখির মধ্যে বৃষ বা ষাঁড় ছিল সবচেয়ে দামি। তাই, ‘আমাদের আপন আপন ওষ্ঠাধরের বৃষ’ সত্য ঈশ্বরের প্রশংসার জন্য আন্তরিকভাবে এবং ভেবেচিন্তে বলা কথাকে নির্দেশ করে। যারা এই ধরনের বলি উৎসর্গ করেছিল, তাদের প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “আমি স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে প্রেম করিব।” (হোশেয় ১৪:৪) যারা এই ধরনের স্তববলি উৎসর্গ করে, তারা যিহোবার ক্ষমা ও অনুমোদন লাভ করে এবং তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।

১৬, ১৭. ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস যখন একজন ব্যক্তিকে সুসমাচার প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করে, তখন যিহোবা সেই ব্যক্তির প্রশংসাকে কীভাবে গ্রহণ করেন?

১৬ জনসাধারণ্যে যিহোবার প্রশংসা করা, সবসময়ই সত্য উপাসনার এক লক্ষণীয় বিষয় হয়ে এসেছে। সত্য ঈশ্বরের গৌরব করার বিষয়টা গীতরচকের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তিনি ঈশ্বরের কাছে বিনতি করে বলেছিলেন: “আমার স্বেচ্ছায় দত্ত মুখের উপহার সকল গ্রাহ্য কর।” (গীত. ১১৯:১০৮) বর্তমানে কী বলা যায়? আমাদের সময়কার বিস্তর লোক সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যিশাইয় এই ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “তাহারা . . . সদাপ্রভুর প্রশংসার সুসমাচার প্রচার করিবে। . . . তাহারা [তাহাদের উপহার] আমার [ঈশ্বরের] যজ্ঞবেদির উপরে উৎসৃষ্ট হইয়া গ্রাহ্য হইবে।” (যিশা. ৬০:৬, ৭) এর পরিপূর্ণতা স্বরূপ, লক্ষ লক্ষ লোক ঈশ্বরের উদ্দেশে “স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল” উৎসর্গ করছে।—ইব্রীয় ১৩:১৫.

১৭ আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি কি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য বলি উৎসর্গ করছেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে আপনি কি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবেন এবং জনসাধারণ্যে যিহোবার প্রশংসা করতে শুরু করবেন? বিশ্বাস যখন আপনাকে সুসমাচার প্রচার করার জন্য অনুপ্রাণিত করে, তখন আপনার বলি ‘সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বৃষ অপেক্ষা তুষ্টিকর’ হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৬৯:৩০, ৩১.) নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার স্তববলির ‘সৌরভ’ যিহোবার কাছে পৌঁছাবে এবং তিনি আপনার প্রতি তাঁর অনুমোদন প্রকাশ করবেন। (যিহি. ২০:৪১) তখন আপনি যে-আনন্দ লাভ করবেন, সেটার সমতুল্য কিছুই নেই।

‘সদাপ্রভু ধার্ম্মিককে আশীর্ব্বাদ করিবেন’

১৮, ১৯. (ক) বর্তমানে অনেক লোক ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়টাকে কোন দৃষ্টিতে দেখে থাকে? (খ) ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারানো কীসের দিকে পরিচালিত করে?

১৮ বর্তমানে, অনেক লোক মালাখির সময়কার কিছু ব্যক্তির মতো একই উপসংহারে আসে: “ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক। তাঁর আইন-কানুন অনুসারে কাজ করাতে . . . আমাদের কি লাভ হল?” (মালাখি ৩:১৪, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) বস্তুবাদী আকাঙ্ক্ষার দ্বারা পরিচালিত হয়ে তারা মনে করে যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বোঝা অসম্ভব এবং আইনগুলো এখন আর প্রযোজ্য নয়। তাদের কাছে, প্রচার করা সময় অপচয়কারী এবং বিরক্তিকর এক কাজ।

১৯ এই ধরনের মনোভাবের উৎপত্তি হয়েছিল এদন উদ্যানে। হবাকে যিহোবা যে-অপূর্ব জীবন দিয়েছিলেন, সেটার প্রকৃত মূল্যকে অবজ্ঞা করতে এবং তাঁর অনুমোদনকে উপেক্ষা করতে শয়তানই তাকে প্ররোচিত করেছিল। বর্তমানেও, শয়তান ক্রমাগত লোকেদেরকে এটা বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করে যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার দ্বারা কোনো কিছুই লাভ করা যাবে না। যা-ই হোক, হবা এবং তার স্বামী বুঝতে পেরেছিল যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারানোর অর্থ হল, তাদের জীবন হারানো। এখন যারা তাদের মন্দ উদাহরণ অনুসরণ করে, তারাও শীঘ্র একই তিক্ত সত্য উপলব্ধি করবে।—আদি. ৩:১-৭, ১৭-১৯.

২০, ২১. (ক) সারিফতের বিধবা কী করেছিলেন এবং কীভাবে তার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল? (খ) কীভাবে এবং কেন আমাদের সারিফতের বিধবাকে অনুকরণ করা উচিত?

২০ আদম ও হবার দুঃখজনক পরিণতির সঙ্গে পূর্বে উল্লেখিত এলিয় এবং সারিফতের বিধবার ঘটনার ফলাফলের যে-পার্থক্য রয়েছে, তা লক্ষ করুন। এলিয়ের উৎসাহজনক কথা শোনার পর, সেই মহিলা খাবার তৈরি করতে শুরু করেছিলেন এবং প্রথমে ভাববাদীকে কিছুটা খাবার দিয়েছিলেন। এরপর যিহোবা এলিয়ের মাধ্যমে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা পরিপূর্ণ করেছিলেন। বিবরণ বলে: “সে এবং এলিয়, এবং সেই স্ত্রীলোকের পরিজন অনেক দিন পর্য্যন্ত ভোজন করিল। সদাপ্রভু এলিয়ের দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে ঐ ময়দার জালা শূন্য হইল না, তৈলের ভাঁড়ও শুকাইল না।”—১ রাজা. ১৭:১৫, ১৬.

২১ সারিফতের বিধবা এমন একটা কাজ করেছিলেন, যা বর্তমানে জীবিত কোটি কোটি লোকের মধ্যে খুব কম লোকই করতে ইচ্ছুক। তিনি পরিত্রাণের ঈশ্বরের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করেছিলেন আর ঈশ্বর তাকে তার বিপদের সময়ে পরিত্যাগ করেননি। এটা এবং বাইবেলের অন্যান্য বিবরণ নিশ্চয়তা দেয় যে, যিহোবার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ২১:৪৩-৪৫; ২৩:১৪.) আধুনিক দিনের যিহোবার সাক্ষিদের জীবনী আরও প্রমাণ দেয় যে, তিনি কখনো সেই ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করবেন না, যাদের ওপর তাঁর অনুমোদন রয়েছে।—গীত. ৩৪:৬, ৭, ১৭-১৯. *

২২. কেন দেরি না করে এখনই ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার চেষ্টা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

২২ ঈশ্বরের বিচারের দিন, যা “সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে,” তা খুবই নিকটে। (লূক ২১:৩৪, ৩৫) এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। কোনো ধনসম্পদ অথবা বস্তুগত আরামআয়েশ কখনো ঈশ্বরের মনোনীত বিচারকর্তার এই কথাগুলো শোনার মূল্যের সমরূপ নয়: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, . . . যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।” (মথি ২৫:৩৪) হ্যাঁ, ‘সদাপ্রভু ধার্ম্মিককে আশীর্বাদ করিবেন, তিনি ঢালের ন্যায় তাহাকে প্রসন্নতায় বেষ্টন করিবেন।’ (গীত. ৫:১২) আমাদের কি ঈশ্বরকে প্রসন্ন করা বা তাঁর অনুমোদন লাভ করার চেষ্টা করা উচিত নয়?

[পাদটীকা]

^ ২০০৫ সালের ১৫ মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৩ পৃষ্ঠার ১৫ অনুচ্ছেদ এবং ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২০-২৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন যিহোবা আমাদের সর্বান্তঃকরণের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য?

• বর্তমানে যিহোবা কোন বলিগুলো গ্রহণ করেন?

• ‘আমাদের আপন আপন ওষ্ঠাধরের বৃষ’ এই অভিব্যক্তিটি কোন বিষয়কে নির্দেশ করে আর কেন আমাদের তা যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গ করা উচিত?

• কেন আমাদের ঈশ্বরের অনুমোদন লাভের চেষ্টা করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের ভাববাদী একজন অভাবী মায়ের সামনে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা রেখেছিলেন?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার উদ্দেশে স্তববলি উৎসর্গ করার মাধ্যমে আমরা কোন উপকার লাভ করি?

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ওপর আপনার অকৃত্রিম নির্ভরতা কখনো হতাশার দিকে পরিচালিত করবে না