সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর কি দিয়াবলকে সৃষ্টি করেছিলেন?

ঈশ্বর কি দিয়াবলকে সৃষ্টি করেছিলেন?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য . . .

ঈশ্বর কি দিয়াবলকে সৃষ্টি করেছিলেন?

▪ যেহেতু বাইবেল বলে ঈশ্বর হলেন “সমুদয়ের সৃষ্টিকর্ত্তা,” তাই কেউ কেউ এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ঈশ্বর নিশ্চয় দিয়াবলকে সৃষ্টি করেছেন। (ইফিষীয় ৩:৯; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে, তিনি তা করেননি।

ঈশ্বর একজন ব্যক্তিকে সৃষ্টি করেছিলেন, যে দিয়াবলে পরিণত হয়েছিল। তাই ঈশ্বরের প্রধান বিরোধী হিসেবে তার অস্তিত্ব, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবার বিষয়ে শাস্ত্র যা প্রকাশ করে, সেটার সঙ্গে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তাঁর সম্বন্ধে বলা হয়: “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৩-৫) এই বিবৃতি থেকে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, শয়তান এক সময়ে সিদ্ধ ও ধার্মিক অর্থাৎ ঈশ্বরের দূত পুত্রদের একজন ছিল। যোহন ৮:৪৪ পদে যিশু বলেছিলেন যে, দিয়াবল “সত্যে থাকে নাই,” যেটা ইঙ্গিত দেয় যে, শয়তান এক সময় সত্যবাদী ও নির্দোষ ছিল।

কিন্তু, যিহোবার বুদ্ধিবিশিষ্ট বাকি প্রাণীদের মতো সেই দূত, যে শয়তানে পরিণত হয়েছিল, তারও সঠিক ও ভুলের মধ্যে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল। ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এমন এক পথ বেছে নেওয়ার এবং প্রথম মানব দম্পতিকে তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করার দ্বারা সে নিজেকে শয়তানে পরিণত করেছিল, যেটার অর্থ “বিপক্ষ।”—আদিপুস্তক ৩:১-৫.

এ ছাড়া, সেই মন্দ আত্মিক প্রাণী নিজেকে দিয়াবলেও পরিণত করেছিল, যেটার অর্থ “অপবাদক।” শয়তান ছিল সেই অদৃশ্য ছদ্মবেশী যে, সর্পের পিছনে থেকে হবাকে সৃষ্টিকর্তার স্পষ্টভাবে উল্লেখিত নিয়মের অবাধ্য হওয়ার ফাঁদে ফেলার জন্য ধূর্তভাবে মিথ্যা কথা বলেছিল। সেই কারণেই যিশু শয়তানকে ‘মিথ্যাবাদীর পিতা’ বলেছিলেন।—যোহন ৮:৪৪.

তাহলে কীভাবে এক সিদ্ধ আত্মিক প্রাণী—যার নিজস্ব কোনো দুর্বলতা কিংবা তার চারপাশে কোনো মন্দ প্রভাব ছিল না—খারাপ অভিসন্ধি গড়ে তুলতে পারে? সে স্পষ্টতই যে-উপাসনা একমাত্র ঈশ্বরের প্রাপ্য তা পেতে চেয়েছিল এবং মানুষকে যিহোবার শাসনের পরিবর্তে তার শাসনের অধীনে নিয়ে আসার প্রত্যাশা দেখেছিল। শাসনব্যবস্থার এই প্রত্যাশাকে প্রত্যাখান করার পরিবর্তে এটা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করার দ্বারা সে এই ধারণা পোষণ করেছিল ও শেষ পর্যন্ত সেই অনুযায়ী কাজ করেছিল। যাকোব বইয়ে এই প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।”—যাকোব ১:১৪, ১৫; ১ তীমথিয় ৩:৬.

উদাহরণস্বরূপ: এমন একজন অ্যাকাউন্ট্যান্টের কথা কল্পনা করুন, যিনি ব্যক্তিগত লাভের জন্য কাগজপত্রকে এমন এক উপায়ে নিপুণভাবে ব্যবহার করাকে এক সুযোগ বলে মনে করেন, যাতে তিনি তার কোম্পানি থেকে চুরি করতে পারেন। তিনি হয়তো সঙ্গেসঙ্গে সেই খারাপ চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। এর পরিবর্তে, তিনি যদি এই সম্ভাবনাকে পোষণ করেন, তাহলে সেই ধারণাটা তার কাছে ক্রমশ প্রলুব্ধকর হবে আর খুব সম্ভবত তিনি তা কাজে লাগাবেন। তিনি যদি তা করেন, তাহলে বস্তুতপক্ষে তিনি নিজেকে একজন চোরে পরিণত করেছেন। তিনি যদি তার অপরাধের বিষয়ে মিথ্যা বলেন, তাহলে তিনি একজন মিথ্যাবাদীও হন। একইভাবে, মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো গড়ে তোলার এবং সেই অনুসারে কাজ করার দ্বারা একজন স্বর্গদূত যাকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন সে তার স্বাধীন ইচ্ছাকে প্রতারণা ও তার পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য ব্যবহার করেছিল আর এভাবে নিজেকে শয়তান দিয়াবলে পরিণত করেছিল।

আনন্দের বিষয় যে, ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে শয়তান দিয়াবলকে ধ্বংস করা হবে। (রোমীয় ১৬:২০) এই সময়ের মধ্যে, যিহোবা ঈশ্বরের উপাসকদের শয়তানের কল্পনাগুলোর বিষয়ে জানানো এবং তার চাতুরীগুলো থেকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। (২ করিন্থীয় ২:১১; ইফিষীয় ৬:১১) তাই যেকোনোভাবেই হোক, “দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।”—যাকোব ৪:৭. (w১১-E ০৩/০১)

[২১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এমন এক পথ বেছে নেওয়ার দ্বারা এক সিদ্ধ স্বর্গদূত নিজেকে শয়তানে পরিণত করেছিল