সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার সহবিশ্বাসীদের কখনো পরিত্যাগ করবেন না

আপনার সহবিশ্বাসীদের কখনো পরিত্যাগ করবেন না

আপনার সহবিশ্বাসীদের কখনো পরিত্যাগ করবেন না

“দশ বছর ধরে আমরা বাণিজ্যিক জগতের চাকচিক্যময় আলোর দ্বারা সম্মোহিত হয়ে ছিলাম আর আমরা যথেষ্ট ধনীও ছিলাম। যদিও আমরা সত্যে বড়ো হয়েছিলাম কিন্তু বিপথগামী হয়ে এতটাই দূরে সরে গিয়েছিলাম যে, আমাদের আর ফিরে আসার জন্য কোনো আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল না,” ইয়ারঅসোয়াভ ও তার স্ত্রী বেয়াটা বলে। *

মারেক নামে আরেকজন ভাই স্মরণ করে বলেন: “পোল্যান্ডে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আমি একটা পর একটা চাকরি হারিয়েছিলাম। আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। যেহেতু আমার ব্যাবসায়িক কোনো দক্ষতা ছিল না, তাই আমি নিজের একটা ব্যাবসা শুরু করতেও ভয় পাচ্ছিলাম। অবশেষে, আমি একটা ব্যাবসা শুরু করার জন্য প্রলুব্ধ হয়েছিলাম, এই চিন্তা করে যে, এটা আমার আধ্যাত্মিকতার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি না করেই আমার পরিবারের বস্তুগত চাহিদাগুলো আরও ভালোভাবে মেটানোর জন্য আমাকে সাহায্য করবে। পরে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি কতটা ভুল করেছিলাম।”

এমন এক জগৎ, যেখানে লাগামহীনভাবে জীবনযাপনের ব্যয় এবং ক্রমান্বয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে কোনো কোনো ব্যক্তি বেপরোয়া হয়ে পড়ে আর এর ফল স্বরূপ মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। বেশ কিছু ভাই অতিরিক্ত সময় কাজ করার, আরও একটা চাকরি গ্রহণ করার অথবা অভিজ্ঞতা না থাকলেও নিজেরা ব্যাবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা মনে করে যে, বাড়তি আয় পরিবারকে সাহায্য করবে এবং কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষতি করবে না। কিন্তু, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীল অর্থনীতি এমনকী সদুদ্দেশ্যপূর্ণ পরিকল্পনাগুলোকেও ভেস্তে দিতে পারে। ফলে, কেউ কেউ লোভের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে এবং বস্তুগত বিষয়গুলো লাভ করার জন্য আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে বিসর্জন দিয়েছে।—উপ. ৯:১১, ১২.

কিছু ভাইবোন জাগতিক অনুধাবনগুলো নিয়ে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে, তাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের, সভার এবং পরিচর্যার জন্য আর সময় থাকে না। স্পষ্টতই, এভাবে উপেক্ষা করা তাদের আধ্যাত্মিকতার ও যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষতি করে। এ ছাড়া, তারা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে—‘বিশ্বাস-বাটীর পরিজনের’ সঙ্গে তাদের বন্ধনকে—পরিত্যাগ করতে পারে। (গালা. ৬:১০) কেউ কেউ ধীরে ধীরে খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাই, এই বিষয়টা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করুন।

সহবিশ্বাসীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব

ভাই ও বোন হিসেবে, আমাদের একে অন্যের প্রতি কোমল অনুভূতি প্রকাশ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। (রোমীয় ১৩:৮) আপনার মণ্ডলীতে আপনি সম্ভবত ‘আর্ত্তনাদকারী দুঃখী’ ব্যক্তিকে দেখেছেন। (ইয়োব ২৯:১২) কারো কারো হয়তো মৌলিক বস্তুগত বিষয়গুলোর অভাব রয়েছে। এই বিষয়টা আমাদের যে-সুযোগ এনে দেয়, সেই সম্বন্ধে প্রেরিত যোহন মনে করিয়ে দিয়েছেন। “যাহার সাংসারিক জীবনোপায় আছে, সে আপন ভ্রাতাকে দীনহীন দেখিলে যদি তাহার প্রতি আপন করুণা রোধ করে, তবে ঈশ্বরের প্রেম কেমন করিয়া তাহার অন্তরে থাকে?”—১ যোহন ৩:১৭.

আপনি হয়তো এই ধরনের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়েছেন এবং অন্যদের উদারভাবে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের ভ্রাতৃসমাজের প্রতি আমাদের আগ্রহ বস্তুগত সাহায্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কেউ কেউ হয়তো আর্তনাদ করতে বা সাহায্যের জন্য কাঁদতে পারে কারণ তারা নিঃসঙ্গ অথবা নিরুৎসাহিত। তারা হয়তো নিজেদের অযোগ্য বলে মনে করতে পারে, কোনো গুরুতর অসুস্থতায় ভুগতে পারে অথবা মৃত্যুতে প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট পেতে পারে। একটা যে-উপায়ে আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি তা হল, তাদের কথা শোনার ও তাদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে আর এভাবে আমরা তাদের আবেগগত এবং আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারি। (১ থিষল. ৫:১৪) এটা প্রায়ই আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে আমাদের প্রেমের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে।

আধ্যাত্মিক পালকরা বিশেষ করে সহানুভূতি সহকারে শোনার, বিবেচনা দেখানোর ও প্রেমপূর্ণ শাস্ত্রীয় পরামর্শ প্রদান করার অবস্থানে থাকতে পারে। (প্রেরিত ২০:২৮) এভাবে অধ্যক্ষরা প্রেরিত পৌলকে অনুকরণ করতে পারে, যিনি তার আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের জন্য “কোমল ভাব” দেখিয়েছিলেন।—১ থিষল. ২:৭, ৮.

কিন্তু, একজন খ্রিস্টান যদি পাল থেকে দূরে সরে যান, তাহলে সহবিশ্বাসীদের প্রতি তার দায়িত্বের কী হবে? এমনকী অধ্যক্ষরাও বস্তুবাদী অনুধাবনগুলোর প্রলোভন থেকে মুক্ত নয়। একজন খ্রিস্টান যদি এই ধরনের প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করে ফেলেন, তাহলে?

জীবনের উদ্‌বেগগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত

যেমন বলা হয়েছে, আমাদের পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করা প্রায়ই বিভিন্ন উদ্‌বেগ নিয়ে আসে এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে দুর্বল করে দেয়। (মথি ১৩:২২) আগে উল্লেখিত মারেক ব্যাখ্যা করেন: “যখন আমার ব্যাবসায় লোকসান হয়েছিল, তখন আমি বিদেশে ভালো বেতনের চাকরির সন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি প্রথমে মাত্র তিন মাসের জন্য, এরপর আরও তিন মাসের জন্য বিদেশে গিয়েছিলাম, শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য দেশে ফিরে আসতাম আর এভাবেই চলছিল। ফলে আমার অবিশ্বাসী স্ত্রী সবসময় আমার অভাব বোধ করত।”

কেবলমাত্র পারিবারিক জীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। “প্রখর রোদে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা ছাড়াও,” মারেক বলে চলেন, “আমি এমন দুষ্ট লোকেদের হাতে পড়েছিলাম, যারা অন্যদের ত্যক্তবিরক্ত করার চেষ্টা করত। তারা গুণ্ডা-বদমাসদের মতো আচরণ করত। আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম আর আমার নিজেকে পরাধীন বলে হতো। এমনকী আমি নিজের যত্ন নেওয়ার জন্যও সময় পেতাম না আর আমি অন্যদের সেবা করার বিষয়ে আমার যোগ্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলাম।”

মারেকের সিদ্ধান্তের দুঃখজনক পরিণতি, আমাদেরকে একটু থেমে চিন্তা করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে। যদিও বিদেশে যাওয়া আপনার আর্থিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবে বলে মনে হয়, কিন্তু এটা কি অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করবে না? উদাহরণস্বরূপ, আমাদের পরিবারের আধ্যাত্মিক ও আবেগগত মঙ্গলের কী হবে? বিদেশে চলে যাওয়ার কারণে কি মণ্ডলীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে? এটা কি সহবিশ্বাসীদের সেবা করার বিশেষ সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করবে না?—১ তীম. ৩:২-৫.

তবে, আপনি সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন যে, জাগতিক কাজ নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়ার জন্য নিজের দেশ ছেড়ে বাইরে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজন নেই। ইয়ারঅসোয়াভ ও বেয়াটার কথা বিবেচনা করুন। “সমস্তকিছু সাধারণভাবেই শুরু হয়েছিল,” তিনি বলেন। “নববিবাহিত দম্পতি হিসেবে, আমরা একটা ভালো জায়গায় ছোট্ট একটা হট-ডগের দোকান খুলেছিলাম। প্রচুর লাভ হওয়ায় আমরা আমাদের ব্যাবসাকে বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত হয়েছিলাম। কিন্তু, আমাদের হাতে বেশি সময় থাকত না, তাই আমরা খ্রিস্টীয় সভাগুলো বাদ দিতাম। অল্প সময়ের মধ্যে, আমি অগ্রগামীর কাজ এবং একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমাদের যে-আর্থিক লাভ হচ্ছিল, সেটার দ্বারা উচ্ছ্বসিত হয়ে আমরা একটা বড়ো দোকান খুলেছিলাম এবং একজন অবিশ্বাসী ব্যক্তির সঙ্গে যৌথ ব্যাবসা শুরু করেছিলাম। শীঘ্র আমি লক্ষ লক্ষ ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য বিদেশে যেতে শুরু করেছিলাম। আমি বলতে গেলে ঘরে থাকতামই না এবং আমার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। অবশেষে, সফল ব্যাবসা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। মণ্ডলী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, আমরা আমাদের ভাইবোনদের কথা এমনকী চিন্তাও করিনি।”

এখান থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? ব্যক্তিগত এক “পরমদেশ” তৈরি করার আকাঙ্ক্ষায় প্রলুব্ধ হয়ে একজন খ্রিস্টান আত্মতুষ্ট হতে পারেন—এমনকী “আপন বস্ত্র” অর্থাৎ তার খ্রিস্টীয় পরিচয়কে হারিয়ে ফেলতে পারেন। (প্রকা. ১৬:১৫) এটা আমাদেরকে সেই ভাইবোনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, যাদেরকে আমরা আগে সাহায্য করার মতো অবস্থানে ছিলাম।

সৎভাবে মূল্যায়ন করুন

‘আমার বেলায় এমনটা ঘটবে না,’ আমরা হয়তো এভাবে চিন্তা করতে পারি। কিন্তু, জীবনে আসলে কতখানি প্রয়োজন, সেই বিষয়টা আমাদের সকলের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। “আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না,” পৌল লিখেছিলেন। “কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।” (১ তীম. ৬:৭, ৮) এটা ঠিক যে, বিভিন্ন দেশে জীবনযাত্রার মান বিভিন্ন রকম। একটা উন্নত দেশে যেটাকে ন্যূনতম প্রয়োজন বলে গণ্য করা হয়, সেটাকে হয়তো অন্যান্য অনেক দেশে বিলাসদ্রব্য বলে মনে করা হতে পারে।

আমরা যেখানে বাস করি, সেখানকার মান যা-ই হোক না কেন, পৌলের পরবর্তী কথাগুলো বিবেচনা করুন: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে।” (১ তীম. ৬:৯) একটা ফাঁদ শিকারের কাছ থেকে লুকানো থাকে। এটা এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা শিকারকে অতর্কিতে ধরে ফেলতে পারে। কীভাবে আমরা ‘হানিকর অভিলাষের’ ফাঁদে পড়া এড়িয়ে চলতে পারি?

অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো স্থাপন করা আমাদেরকে রাজ্যের বিষয়গুলোর জন্য আরও বেশি সময় করে নিতে অনুপ্রাণিত করে, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অধ্যয়নও অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের প্রার্থনাপূর্ণ অধ্যয়ন একজন খ্রিস্টানকে অন্যদের সহযোগিতা করার জন্য “পরিপক্ব, . . . সুসজ্জীভূত” হতে সাহায্য করতে পারে।—২ তীম. ২:১৫; ৩:১৭.

বেশ কয়েক বছর ধরে, প্রেমময় প্রাচীনরা ইয়ারঅসোয়াভকে গেঁথে তোলার ও উৎসাহিত করার জন্য কাজ করেছিল। তিনি আমূল পরিবর্তন করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন: “অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনার সময়ে, প্রাচীনরা একজন ধনী যুবক সম্বন্ধীয় শাস্ত্রীয় উদাহরণটা উদ্ধৃত করেছিল, যে-যুবক অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার বস্তুগত সম্পদ পরিত্যাগ করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন না। এরপর, তারা কৌশলে এই বিষয়টা উত্থাপন করেছিল যে, সেই তথ্য আমার প্রতি প্রয়োগ করা যায় কি না। সেটা সত্যিই আমার চোখ খুলে দিয়েছিল!”—হিতো. ১১:২৮; মার্ক ১০:১৭-২২.

ইয়ারঅসোয়াভ তার পরিস্থিতিকে সৎভাবে মূল্যায়ন করেছিলেন এবং বড়ো ব্যাবসার সঙ্গে আর জড়িত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দু-বছরের মধ্যে তিনি ও তার পরিবার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন। তিনি এখন একজন প্রাচীন হিসেবে তার ভাইবোনদের সেবা করছেন। ইয়ারঅসোয়াভ বলেন: “ভাইয়েরা যখন ব্যাবসায় অতিরিক্ত মগ্ন হয়ে তাদের আধ্যাত্মিকতাকে উপেক্ষা করার পর্যায়ে চলে যায়, তখন আমি নিজের উদাহরণ ব্যবহার করি, এই বিষয়টা তুলে ধরার জন্য যে, অবিশ্বাসীদের সঙ্গে অসমভাবে জোয়ালে আবদ্ধ হওয়া কতটা মূর্খতাপূর্ণ কাজ। লোভনীয় প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দেওয়া এবং অসৎ কাজগুলো থেকে দূরে থাকা সহজ নয়।”—২ করি. ৬:১৪.

মারেকও তিক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। বিদেশে ভালো বেতনের চাকরি যদিও তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিল কিন্তু ঈশ্বর ও তার ভাইবোনদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে, তিনি তার অগ্রাধিকারগুলো পুনর্মূল্যায়ন করেছিলেন। “কয়েক বছরের মধ্যে, আমার পরিস্থিতি প্রাচীনকালের বারূকের সমতুল্য হয়ে গিয়েছিল, যিনি ‘আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা’ করে চলেছিলেন। অবশেষে, আমি হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে আমার উদ্‌বেগ সম্বন্ধে জানিয়েছিলাম এবং এখন আমার মনে হয় যে, আমি আবার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য ফিরে পেয়েছি।” (যির. ৪৫:১-৫) মারেক এখন মণ্ডলীতে একজন অধ্যক্ষ হিসেবে “উত্তম কার্য্য” করার ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী।—১ তীম. ৩:১.

যারা হয়তো ভালো বেতনের চাকরির সন্ধানে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছে, তাদেরকে মারেক এই সাবধানবাণী দেন: “বিদেশে থাকার সময় এই দুষ্ট জগতের বিভিন্ন ফাঁদে পড়ে যাওয়া খুব সহজ। স্থানীয় ভাষা ভালোভাবে না জানার কারণে অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা কঠিন হয়। আপনি হয়তো টাকাপয়সা নিয়ে দেশে আসতে পারেন কিন্তু সেইসঙ্গে আপনি এমন আধ্যাত্মিক ক্ষতও নিয়ে আসতে পারেন, যা আরোগ্য হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।”

চাকরি ও আমাদের ভাইবোনদের প্রতি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, যিহোবাকে খুশি করতে আমাদের সাহায্য করবে। আর আমরা জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠতে পারি, যা অন্যদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে। ভারগ্রস্ত ব্যক্তিদের, সমর্থন, সমবেদনা এবং তাদের ভাই ও বোনদের উত্তম উদাহরণ প্রয়োজন। মণ্ডলীর প্রাচীনরা ও অন্যান্য পরিপক্ব ব্যক্তি সহবিশ্বাসীদেরকে তাদের ভারসাম্য বজায় রাখার এবং জীবনের উদ্‌বেগগুলোর দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়া এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।—ইব্রীয় ১৩:৭.

হ্যাঁ, আমাদের চাকরিতে মগ্ন হয়ে আমরা যেন সহবিশ্বাসীদের কখনোই পরিত্যাগ না করি। (ফিলি. ১:১০, পাদটীকা) এর পরিবর্তে, আসুন আমরা আমাদের জীবনে রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রেখে “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” হই।—লূক ১২:২১.

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনার জাগতিক কাজ কি সভায় যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে থাকে?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি আপনার আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের সাহায্য করার সুযোগগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন?