সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশু তিনি যেখান থেকে এসেছিলেন

যিশু তিনি যেখান থেকে এসেছিলেন

যিশু তিনি যেখান থেকে এসেছিলেন

‘[পীলাত] আবার রাজবাটীতে প্রবেশ করিলেন ও যীশুকে বলিলেন, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? কিন্তু যীশু তাঁহাকে কোন উত্তর দিলেন না।’—যোহন ১৯:৯, ১০.

যিশু যখন এমন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাঁর কাছে যেটার অর্থ ছিল জীবন অথবা মৃত্যু, তখন রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাত এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। পীলাত জানতেন যে, ইস্রায়েলের কোন জায়গা থেকে যিশু এসেছিলেন। (লূক ২৩:৬, ৭) এ ছাড়া, তিনি এও জানতেন যে, যিশু কোনোভাবেই একজন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। পীলাত কি এই চিন্তা করছিলেন যে, যিশু পূর্বে জীবিত ছিলেন কি না? এই পৌত্তলিক শাসক কি প্রকৃতপক্ষেই সত্যকে গ্রহণ করতে এবং সেই অনুসারে জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক ছিলেন? যা-ই হোক না কেন, যিশু উত্তর দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আর শীঘ্র এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, পীলাত সত্য ও ন্যায়বিচারের চেয়ে নিজের পদমর্যাদা সম্বন্ধে বেশি আগ্রহী ছিলেন।—মথি ২৭:১১-২৬.

আনন্দের বিষয় হল, যারা আন্তরিকভাবে জানতে চায় যে, যিশু কোথা থেকে এসেছিলেন, তারা সহজেই তা জানতে পারে। যিশু খ্রিস্ট কোথা থেকে এসেছিলেন বাইবেল স্পষ্টভাবে তা প্রকাশ করে। নীচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন।

তিনি যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আধুনিক গণনা দেখায় যে, এখন যেটাকে সাধারণ কাল পূর্ব ২ সাল বলা হয়, সেই বছরের শরৎকালের শুরুর দিকে যিহূদিয়ার গ্রাম বৈৎলেহমে অতি সাধারণ পরিস্থিতির মধ্যে যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যিশুর মা মরিয়ম যখন “গর্ব্ভবতী,” তখন তিনি ও তার স্বামী যোষেফ আগস্ত কৈসরের আদেশে নাম লেখানোর জন্য যোষেফের পূর্বপুরুষদের জায়গা, বৈৎলেহমে যেতে বাধ্য হয়েছিল। লোকে পরিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে পান্থশালা না পেয়ে সেই দম্পতিকে এক আস্তাবলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল যেখানে যিশুর জন্ম হয়েছিল এবং তাঁকে এক যাবপাত্রে রাখা হয়েছিল।—লূক ২:১-৭.

বহু শতাব্দী আগে, বাইবেলের একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী যিশুর জন্মের স্থান সম্বন্ধে জানিয়েছিল: “তুমি, হে বৈৎলেহম-ইফ্রাথা, তুমি যিহূদার সহস্রগণের মধ্যে ক্ষুদ্রা বলিয়া অগণিতা, তোমা হইতে ইস্রায়েলের মধ্যে কর্ত্তা হইবার জন্য আমার উদ্দেশে এক ব্যক্তি উৎপন্ন হইবেন।” * (মীখা ৫:২) স্পষ্টতই, বৈৎলেহম এত ছোটো একটা গ্রাম ছিল যে, এটাকে যিহূদা অঞ্চলের নগরগুলোর মধ্যে তালিকাবদ্ধ করা হয়নি। তবুও, এই ছোটো গ্রামকে এক অদ্বিতীয় সম্মানে সম্মানিত করা হবে। প্রতিজ্ঞাত মশীহ বা খ্রিস্ট বৈৎলেহম থেকে আসবেন।—মথি ২:৩-৬; যোহন ৭:৪০-৪২.

তিনি যেখানে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন মিশরে অল্প কিছুদিন থাকার পর, যিশুর পরিবার নাসরতে চলে গিয়েছিল, যেটা যিরূশালেমের উত্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে গালীল প্রদেশের এক নগর ছিল। সেই সময়ে, যিশুর বয়স তিন বছরেরও কম ছিল। এই অপূর্ব অঞ্চলে, যেখানকার লোকেরা ছিল কৃষক, মেষপালক ও মৎসজীবি, সেখানে যিশু এক বড়ো পরিবারে অতি সাধারণ পরিস্থিতির মধ্যে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন।—মথি ১৩:৫৫, ৫৬.

বহু শতাব্দী আগেই, বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল যে, মশীহ “নাসরতীয়” হবেন। সুসমাচার লেখক মথি বলেন যে, যিশুর পরিবার “নাসরৎ নামক নগরে” বাস করেছিল “যেন ভাববাদিগণ দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয় যে, তিনি নাসরতীয় বলিয়া আখ্যাত হইবেন।” (মথি ২:১৯-২৩) নাসরীয় নামটি “চারা”-র জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে হয়। স্পষ্টতই, মথি যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রতি নির্দেশ করছিলেন যেটা মশীহকে যিশয়ের “এক চারা” বলে সম্বোধন করেছিল আর এর অর্থ হল, মশীহ রাজা দায়ূদের পিতা যিশয়ের উত্তরসূরি হবেন। (যিশাইয় ১১:১) বস্তুত, যিশু দায়ূদের বংশে আসা যিশয়ের উত্তরসূরি ছিলেন।—মথি ১:৬, ১৬; লূক ৩:২৩, ৩১, ৩২.

তিনি মূলত যেখান থেকে এসেছিলেন বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, বৈৎলেহমের সেই আস্তাবলে জন্মগ্রহণ করার অনেক আগেই যিশুর জীবন শুরু হয়েছিল। পূর্বে উদ্ধৃত মীখার ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে চলে যে, “প্রাক্কাল হইতে, অনাদিকাল হইতে” তাঁর “উৎপত্তি।” (মীখা ৫:২) পৃথিবীতে একজন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করার আগে, ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র হিসেবে যিশু স্বর্গে একজন আত্মিক প্রাণী ছিলেন। যিশু নিজেই বলেছিলেন: ‘আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছি।’ (যোহন ৬:৩৮; ৮:২৩) কীভাবে তা সম্ভব ছিল?

পবিত্র আত্মার দ্বারা যিহোবা ঈশ্বর তাঁর স্বর্গীয় পুত্রের জীবন যিহুদি কুমারী মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তর করার অলৌকিক কাজটা সম্পাদন করেছিলেন, যাতে তিনি একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। * এই ধরনের অলৌকিক কাজ পুরোপুরিভাবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্ষমতার মধ্যে। যে-স্বর্গদূত মরিয়মের কাছে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি বলেছিলেন, “ঈশ্বরের কোন বাক্য শক্তিহীন হইবে না।”—লূক ১:৩০-৩৫, ৩৭.

যিশু কোথা থেকে এসেছিলেন সেই সম্বন্ধে আমাদেরকে কিছু বলার চেয়ে বাইবেল আরও বেশি কিছু বলে। তিনি কীভাবে জীবনযাপন করেছিলেন সেই সম্বন্ধে চারটে সুসমাচার—মথি, মার্ক, লূক এবং যোহন—আমাদেরকে অনেক কিছু জানায়। (w১১-E ০৪/০১)

[পাদটীকাগুলো]

^ ইফ্রাথা (অথবা ইফ্রাথ্‌) স্পষ্টতই বৈৎলেহমের আগের এক নাম।—আদিপুস্তক ৩৫:১৯.

^ বাইবেল প্রকাশ করে যে, যিহোবা হল ঈশ্বরের নাম।