সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশু তিনি যে-কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন

যিশু তিনি যে-কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন

যিশু তিনি যে-কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন

‘মনুষ্যপুত্ত্র অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।’—মার্ক ১০:৪৫.

যিশু জানতেন যে, তিনি কী আশা করতে পারেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারবেন না। এর পরিবর্তে তিনি জানতেন যে, যখন তাঁর বয়স ৩০-এর কোঠায় থাকবে, তখন তাঁর জীবনকালকে দুঃখজনকভাবে সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হবে আর তিনি তাঁর মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার জন্য পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত ছিলেন।

বাইবেল যিশুর মৃত্যুকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরে। একটি তথ্যগ্রন্থ বলে যে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র বা নূতন নিয়ম-এ যিশুর মৃত্যুর বিষয়ে প্রায় ১৭৫ বার সরাসরিভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, কেন যিশুকে দুঃখভোগ করতে এবং এরপর মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল? আমাদের তা জানা প্রয়োজন, কারণ যিশুর মৃত্যু আমাদের জীবনের ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

যিশু যা আশা করেছিলেন তাঁর জন্য যে-দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু অপেক্ষা করছিল, সেই সম্বন্ধে তাঁর জীবনের শেষ বছরে যিশু তাঁর শিষ্যদের বেশ কয়েকবার সাবধান করে দিয়েছিলেন। শেষবারের মতো নিস্তারপর্ব পালন করার জন্য যিরূশালেমে যাওয়ার পথে তিনি তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র প্রধান যাজক ও অধ্যাপকগণের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহার প্রাণদণ্ড বিধান করিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে। আর তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবে, তাঁহার মুখে থুথু দিবে, তাঁহাকে কোড়া মারিবে ও বধ করিবে।” * (মার্ক ১০:৩৩, ৩৪) কেন তিনি তাঁর প্রতি যা ঘটবে সেই ব্যাপারে এতটা নিশ্চিত ছিলেন?

কীভাবে তাঁর জীবন শেষ হবে, সেই সম্বন্ধে ইব্রীয় শাস্ত্র-এ যে-অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, সেগুলোর সঙ্গে যিশু পরিচিত ছিলেন। (লূক ১৮:৩১-৩৩) কয়েকটা ভবিষ্যদ্‌বাণী ও সেইসঙ্গে দেওয়া শাস্ত্র পদগুলো বিবেচনা করুন যেগুলো ব্যাখ্যা করে যে, কীভাবে ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পূর্ণ হয়েছিল।

মশীহের প্রতি এই বিষয়গুলো ঘটবে . . .

▪ ৩০টা রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে সমর্পণ করা হবে।—সখরিয় ১১:১২; মথি ২৬:১৪-১৬.

▪ প্রহার করা হবে ও মুখে থুতু ফেলা হবে।—যিশাইয় ৫০:৬; মথি ২৬:৬৭; ২৭:২৬, ৩০.

▪ দণ্ডে বিদ্ধ করা হবে।—গীতসংহিতা ২২:১৬; প্রেরিত ৫:৩০.

▪ তাঁর কোনো অস্থি ভগ্ন না করে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।—গীতসংহিতা ৩৪:২০; যোহন ১৯:৩৩, ৩৬.

▪ ধনবানের সঙ্গে কবরপ্রাপ্ত হবেন।—যিশাইয় ৫৩:৯; মথি ২৭:৫৭-৬০.

যিশু এগুলো এবং আরও অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পূর্ণ করেছিলেন। তিনি কোনোভাবেই নিজে থেকে এগুলো পূর্ণ করতে পারতেন না। যিশুর প্রতি এই সমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা প্রমাণ করে যে, বাস্তবিকই ঈশ্বর তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। *

কিন্তু, কেন যিশুর দুঃখভোগ এবং মৃত্যুবরণ করার প্রয়োজন হয়েছিল?

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়গুলোর মীমাংসা করার জন্য যিশু মৃত্যুবরণ করেছিলেন এদন উদ্যানে উত্থাপিত সর্বজনীন গুরুত্বের বিচার্য বিষয়গুলো সম্বন্ধে যিশু জানতেন। এক বিদ্রোহী আত্মিক প্রাণীর দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আদম ও হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিল। সেই দম্পতির বিদ্রোহ ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা অথবা শাসন করার পদ্ধতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এ ছাড়া তাদের পাপ করা, কোনো মানুষ পরীক্ষার মধ্যে বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে পারবে কি না, সেই বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছিল।—আদিপুস্তক ৩:১-৬; ইয়োব ২:১-৫.

যিহোবার সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের নীতিনিষ্ঠা—এই দুটো বিচার্য বিষয়েই যিশু সম্ভাব্য চূড়ান্ত উত্তর প্রদান করেছিলেন। “মৃত্যু পর্য্যন্ত” তাঁর পুরোপুরি বাধ্যতা দেখানোর দ্বারা যিশু ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরেছিলেন। (ফিলিপীয় ২:৮) এ ছাড়া, যিশু এও প্রমাণ করেছিলেন যে, একজন সিদ্ধ ব্যক্তি সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলো সত্ত্বেও নিখুঁত নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারে।

মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য যিশু মৃত্যুবরণ করেছিলেন ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, প্রতিজ্ঞাত মশীহের দুঃখভোগ এবং মৃত্যু মানুষের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত প্রদান করবে। (যিশাইয় ৫৩:৫, ১০) যিশু স্পষ্টভাবে তা বুঝেছিলেন আর তাই তিনি স্বেচ্ছায় “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে” প্রদান করেছিলেন। (মথি ২০:২৮) তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যু অসিদ্ধ মানুষের জন্য যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার লাভ করার পথ খুলে দিয়েছিল। যিশুর মৃত্যু আমাদের জন্য আদম ও হবা যা হারিয়েছিল তা—পৃথিবীতে এক নিখুঁত পরিস্থিতিতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা—আবারও ফিরে পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। *প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

আপনি যা করতে পারেন এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে আমরা পরীক্ষা করেছি যে, বাইবেল যিশুর বিষয়ে—তিনি কোথা থেকে এসেছিলেন, তিনি কীভাবে জীবনযাপন করেছিলেন এবং তিনি কেন মৃত্যুবরণ করেছিলেন—কী বলে। যিশুর বিষয়ে এই সত্যগুলো জানা, তাঁর সম্বন্ধে ভুল ধারণাগুলোকে দূর করার চেয়েও আরও বেশি কিছু করতে পারে। সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করা অনেক আশীর্বাদ—এখনই আরও ভালো এক জীবন এবং ভবিষ্যতে অনন্তজীবন—নিয়ে আসতে পারে। আমরা যদি এই ধরনের উপকারিতাগুলো লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদের কী করা প্রয়োজন, বাইবেল আমাদের তা জানায়।

▪ যিশু খ্রিস্ট এবং যিহোবার উদ্দেশ্যে তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে আরও শিখুন।—যোহন ১৭:৩.

▪ যিশুতে বিশ্বাস করুন, আপনার জীবনধারার মাধ্যমে দেখান যে, আপনি তাঁকে আপনার পরিত্রাতা হিসেবে গ্রহণ করেন।—যোহন ৩:৩৬; প্রেরিত ৫:৩১.

ঈশ্বরের ‘একজাত পুত্ত্র’ যিশু খ্রিস্ট, যাঁর মাধ্যমে আমরা হয়তো ‘অনন্ত জীবনের’ দান লাভ করতে পারি, তাঁর সম্বন্ধে আরও বেশি শিখতে আপনাকে সাহায্য করতে পেরে যিহোবার সাক্ষিরা খুশি হবে।—যোহন ৩:১৬. (w১১-E ০৪/০১)

[পাদটীকাগুলো]

^ যিশু প্রায়ই নিজেকে ‘মনুষ্যপুত্ত্র’ বলে উল্লেখ করতেন। (মথি ৮:২০) এই অভিব্যক্তিটি তিনি যে কেবল পুরোপুরিভাবে একজন মানুষ ছিলেন সেটাই দেখায় না কিন্তু সেইসঙ্গে এও দেখায় যে, তিনিই বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে উল্লেখিত ‘মনুষ্য-পুত্ত্র’ ছিলেন।—দানিয়েল ৭:১৩, ১৪.

^ যিশুর প্রতি পূর্ণ হয়েছিল এমন ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের “যিশু খ্রিস্ট—প্রতিজ্ঞাত মশীহ” পরিশিষ্টটি দেখুন।

^ যিশুর মৃত্যুর বলিদানমূলক মূল্যের বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের “মুক্তির মূল্য—ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার” শিরোনামক ৫ অধ্যায়টি দেখুন।