সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আত্মার ফল” ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে আসে

“আত্মার ফল” ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে আসে

“আত্মার ফল” ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে আসে

“ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও।”—যোহন ১৫:৮.

১, ২. (ক) অন্যদেরকে উৎসাহিত করার কোন কোন সুযোগ আমাদের রয়েছে? (খ) যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত কোন দান তাঁকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করে?

 দুটো দৃশ্য বিবেচনা করুন: একজন খ্রিস্টান বোন লক্ষ করেন, এক অল্পবয়সি বোনকে দেখে মনে হচ্ছে যে, সে উদ্‌বিগ্ন। ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তিনি তার সঙ্গে কাজ করবেন বলে ঠিক করেন। ঘরে ঘরে প্রচার করার সময় সেই অল্পবয়সি বোন বলতে শুরু করে যে, কোন বিষয়টা তাকে কষ্ট দিচ্ছে। পরে ওই দিনই প্রার্থনার সময় সেই অল্পবয়সি বোন ওই পরিপক্ব বোনের প্রেমময় আগ্রহের জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানায়; তার ঠিক এটারই প্রয়োজন ছিল। আরেকটা জায়গায়, এক দম্পতি সম্প্রতি ভিন্ন এক দেশে থেকে প্রচার করে এসেছে। মেলামেশার সময় তারা যখন রোমাঞ্চিত হয়ে অভিজ্ঞতা বলছিল, তখন একজন অল্পবয়সি ভাই চুপচাপ বসে তা শুনছিল। কয়েক বছর পর, সে যখন বিদেশের কার্যভারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন সে ওই দম্পতির এবং তাদের আলোচনার কথা চিন্তা করতে থাকে, যে-বিষয়টা তাকে একজন মিশনারি হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।

এই পরিস্থিতিগুলো হয়তো আপনাকে এমন কারো কথা মনে করিয়ে দিতে পারে, যিনি আপনার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছেন অথবা যে-ব্যক্তির জীবনের ওপর আপনি প্রভাব ফেলেছেন। অবশ্য, এটা ঠিক যে, যদিও শুধুমাত্র এক বারের কথোপকথন খুব কমই কারো জীবনকে পরিবর্তিত করে থাকে, তবে প্রতিটা দিনই অন্যদেরকে উৎসাহিত এবং শক্তিশালী করার বিভিন্ন সুযোগ আমাদের রয়েছে। কল্পনা করুন যে, আপনার কাছে এমন কিছু রয়েছে, যা আপনার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করেছে এবং বৈশিষ্ট্যগুলোকে উন্নত করেছে, যাতে আপনি আপনার ভাইবোনদের আরও বেশি করে সাহায্য করতে পারেন এবং ঈশ্বরের কাছে আরও কার্যকারী হয়ে উঠতে পারেন। সেটা কি এক অপূর্ব বিষয় হতো না? আসলে যিহোবা আমাদেরকে এইরকম একটা দান প্রদান করেন আর তা হল, তাঁর পবিত্র আত্মা। (লূক ১১:১৩) ঈশ্বরের আত্মা যখন আমাদের জীবনের ওপর কাজ করে, তখন এটা আমাদের মধ্যে এমন চমৎকার গুণাবলি উৎপন্ন করে, যেগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবার প্রতিটা দিককে আরও উন্নত করে। কতই না অপূর্ব এক দান!—পড়ুন, গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

৩. (ক) আমরা “আত্মার ফল” গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করলে, তা কীভাবে ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে আসে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

পবিত্র আত্মা যে-গুণাবলি উৎপন্ন করে, সেগুলো সেই আত্মার উৎস স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে। (কল. ৩:৯, ১০) যে-কারণে খ্রিস্টানদের ঈশ্বরকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করা উচিত, সেটার প্রধান কারণ সম্বন্ধে যিশু সেই সময় উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর প্রেরিতদের এই কথা বলেছিলেন: “ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও।” * (যোহন ১৫:৮) আমরা যখন “আত্মার ফল” গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি, তখন সেটা আমাদের কথায় ও কাজে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়; আর এর ফলে তা আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা নিয়ে আসে। (মথি ৫:১৬) কোন কোন উপায়ে আত্মার ফল শয়তানের জগতের বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে আলাদা? কীভাবে আমরা আত্মার ফল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি? কেন তা করা আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে? আমরা যখন আত্মার ফলের তিনটে দিক—প্রেম, আনন্দ ও শান্তি—নিয়ে আলোচনা করব, তখন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব।

যে-প্রেমের ভিত্তি হচ্ছে উচ্চ নীতি

৪. যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে কোন ধরনের প্রেম দেখিয়ে চলার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন?

পবিত্র আত্মার দ্বারা উৎপন্ন প্রেম, জগতে সাধারণত যে-প্রেম দেখা যায়, সেটা থেকে লক্ষণীয়ভাবে আলাদা। কীভাবে? এই প্রেমের ভিত্তি হচ্ছে এক উচ্চ নীতি। যিশু পর্বতেদত্ত উপদেশে এই পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন। (পড়ুন, মথি ৫:৪৩-৪৮.) তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, পাপীরা অনুরূপ আচরণের পন্থা অনুসরণ করে অর্থাৎ অন্যেরা তাদের সঙ্গে যেরকম আচরণ করে, প্রতিদানে তারাও সেইরকম আচরণ করে। এই ধরনের ‘প্রেমের’ সঙ্গে প্রকৃত ত্যাগস্বীকার জড়িত থাকে না বরং তা অনুগ্রহ বিনিময়ের সমরূপ হয়ে থাকে। আমরা যদি “স্বর্গস্থ পিতার সন্তান” হতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই আলাদা হতে হবে। লোকেরা আমাদের সঙ্গে যেরকম আচরণ করে, প্রতিদানে তাদের সঙ্গে সেইরকম আচরণ করার বিপরীতে, আমরা অন্যদেরকে যিহোবার মতো করে দেখি এবং তাঁর মতো করে তাদের সঙ্গে আচরণ করি। কিন্তু, কীভাবে আমাদের শত্রুদের প্রেম করা সম্ভব, যেমনটা যিশু আজ্ঞা দিয়েছিলেন?

৫. কীভাবে আমরা সেই ব্যক্তিদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি, যারা আমাদেরকে তাড়না করে?

বাইবেলের একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। ফিলিপীতে প্রচার করার সময় পৌল ও সীলকে গ্রেপ্তার করে প্রচণ্ড মারধর করা হয় এবং ভিতরের কারাগারে আটকে রেখে তাদের পায়ে হাড়িকাঠ দেওয়া হয়। সেখানে থাকাকালীন, কারারক্ষকও হয়তো তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন। ভূমিকম্পের কারণে তারা যখন অপ্রত্যাশিতভাবে মুক্ত হয়ে গিয়েছিল, তখন তারা কি সেই ব্যক্তির ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হয়েছিল? না। সেই ব্যক্তির মঙ্গলের ব্যাপারে আন্তরিক চিন্তা—তাদের আত্মত্যাগমূলক প্রেম—তাদেরকে অবিলম্বে তার জন্য কাজ করতে পরিচালিত করেছিল আর এভাবে কারারক্ষক এবং তার পরিবারের সকলের জন্য বিশ্বাসী হওয়ার পথ খুলে গিয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:১৯-৩৪) আধুনিক দিনেও, আমাদের অনেক ভাইবোন একইভাবে “যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ” করে।—রোমীয় ১২:১৪.

৬. কোন কোন উপায়ে আমরা আমাদের ভাইবোনদের প্রতি আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখাতে পারি? (২১ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

আমরা আমাদের সহবিশ্বাসীদের প্রতি আরও বেশি করে প্রেম দেখিয়ে থাকি। “আমরাও ভ্রাতাদের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণ দিতে বাধ্য।” (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৬-১৮.) কিন্তু, প্রায়ই আমরা ছোটোখাটো উপায়েও প্রেম দেখতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের কোনো কথায় বা কাজে যদি একজন ভাই অসন্তুষ্ট হয়ে থাকেন, তাহলে পুনরায় শান্তি স্থাপন করার জন্য আমরাই প্রথমে এগিয়ে গিয়ে প্রেম দেখাতে পারি। (মথি ৫:২৩, ২৪) কিন্তু, আমাদেরকে যদি কেউ অসন্তুষ্ট করে, তাহলে? আমরা কি “ক্ষমাবান্‌” বা ক্ষমা করতে প্রস্তুত, নাকি মাঝে মাঝে আমরা অসন্তোষ পুষে রাখি? (গীত. ৮৬:৫) পবিত্র আত্মার মাধ্যমে উৎপন্ন প্রগাঢ় প্রেম আমাদেরকে ছোটোখাটো ভুলগুলোকে আচ্ছাদন করতে এবং “প্রভু” যিহোবা “যেমন আমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন,” তেমনই সহজেই অন্যদের ক্ষমা করতে সাহায্য করে।—কল. ৩:১৩, ১৪; ১ পিতর ৪:৮.

৭, ৮. (ক) কীভাবে লোকেদের প্রতি ভালোবাসা ও ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কযুক্ত? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে গভীর করতে পারি? (নীচের ছবি দেখুন।)

কীভাবে আমরা আমাদের ভাইবোনদের প্রতি আত্মত্যাগমূলক প্রেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি? ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেমকে গভীর করার মাধ্যমে। (ইফি. ৫:১, ২; ১ যোহন ৪:৯-১১, ২০, ২১) বাইবেল পাঠ, ধ্যান ও প্রার্থনা করার সময় আমরা যিহোবার সঙ্গে যে-অন্তরঙ্গ সময় কাটাই, তা আমাদেরকে উৎসাহিত করে এবং আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি আমাদের প্রেমকে গভীর করে। তবে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমাদের সময় কিনে নিতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ: মনে করুন যে, আপনার পক্ষে প্রতিদিন কেবল একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঈশ্বরের বাক্য পড়া, তা নিয়ে ধ্যান করা এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা সম্ভবপর হতো। তাহলে, আপনি কি উদ্যোগের সঙ্গে সেই সময়টুকু বাঁচিয়ে রাখতেন না, যাতে কোনো কিছু যিহোবার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সময় কাটানোর ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে না পারে? অবশ্য, কেউই ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা করার বিষয়টাকে রোধ করতে পারে না আর সেইসঙ্গে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই নিজের ইচ্ছেমতো সময়ে বাইবেল পড়তে পারি। তবে, আমাদের হয়তো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে প্রতিদিন আমাদেরকে যে-কাজগুলো করতে হয়, সেগুলো ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সময় কাটানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আপনি কি প্রতিদিন যতটা সম্ভব সময় কিনে নেন?

‘পবিত্র আত্মার আনন্দ’

৯. পবিত্র আত্মার দ্বারা উৎপন্ন আনন্দের একটা বৈশিষ্ট্য কী?

আত্মার ফলের এক লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এর সুস্থিত অবস্থা। আনন্দ, যে-দ্বিতীয় দিকটা আমরা বিবেচনা করব, তা এই স্থিতিশীল অবস্থা সম্বন্ধে তুলে ধরে। আনন্দ হচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকা একটা উদ্ভিদের মতো, যা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও সতেজ থাকতে পারে। সারা পৃথিবীতে, ঈশ্বরের অনেক দাস “বহু ক্লেশের মধ্যে পবিত্র আত্মার আনন্দে বাক্যটী গ্রহণ” করেছে। (১ থিষল. ১:৬) আবার অন্যদেরকে কষ্ট এবং বঞ্চনার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাদেরকে “আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা” বজায় রাখার জন্য শক্তি দেন। (কল. ১:১১) এই আনন্দের উৎস কী?

১০. আমাদের আনন্দের উৎস কী?

১০ শয়তানের জগতের “ধনের অস্থিরতার” বিপরীতে যিহোবার কাছ থেকে আমরা যে-আধ্যাত্মিক ধনসম্পদ লাভ করেছি, সেগুলোর স্থায়ী মূল্য রয়েছে। (১ তীম. ৬:১৭; মথি ৬:১৯, ২০) তিনি আমাদের সামনে চির ভবিষ্যতের আনন্দপূর্ণ প্রত্যাশা রেখেছেন। আমাদের বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়ার আনন্দ রয়েছে। সর্বোপরি, আমাদের আনন্দের ভিত্তি হচ্ছে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। আমাদেরও দায়ূদের দ্বারা প্রকাশিত একই অনুভূতি রয়েছে, যিনি একজন পলাতক হিসেবে বাস করার জন্য বাধ্য হওয়া সত্ত্বেও এই গীতের মাধ্যমে যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন: “কারণ তোমার দয়া জীবন হইতেও উত্তম; আমার ওষ্ঠাধর তোমার প্রশংসা করিবে। এইরূপে আমি যাবজ্জীবন তোমার ধন্যবাদ করিব।” (গীত. ৬৩:৩, ৪) এমনকী যখন আমরা কষ্ট ভোগ করি, তখনও ঈশ্বরের প্রতি আমাদের হৃদয় আনন্দপূর্ণ প্রশংসায় ভরে ওঠে।

১১. কেন আমাদের জন্য আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করা গুরুত্বপূর্ণ?

১১ প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন: “তোমরা প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর।” (ফিলি. ৪:৪) কেন খ্রিস্টানদের জন্য আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে চলা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ শয়তান যিহোবার সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছে। শয়তান এইরকম দাবি করে যে, কেউই ইচ্ছুক মন নিয়ে ঈশ্বরের সেবা করে না। (ইয়োব ১:৯-১১) আমরা যদি দায়িত্ব সহকারে কিন্তু নিরানন্দ মনোভাব নিয়ে যিহোবার সেবা করি, তাহলে আমাদের প্রশংসাবলি অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তাই আমরা গীতরচকের এই মিনতিতে মনোযোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা করি: “সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা কর; আনন্দগানসহ তাঁহার সম্মুখে আইস।” (গীত. ১০০:২) আনন্দপূর্ণ ও ইচ্ছুক মনে সেবা করা ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে আসে।

১২, ১৩. নেতিবাচক অনুভূতিগুলোর সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১২ কিন্তু, বাস্তবিকপক্ষে এমনকী যিহোবার কিছু অনুগত দাসকেও মাঝে মাঝে এমন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে এবং এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য লড়াই করে। (ফিলি. ২:২৫-৩০) এই সময়গুলোতে কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করতে পারে? ইফিষীয় ৫:১৮, ১৯ পদ বলে: “আত্মাতে পরিপূর্ণ হও; গীত, স্তোত্র ও আত্মিক সঙ্কীর্ত্তনে পরস্পর আলাপ কর; আপন আপন অন্তঃকরণে প্রভুর [ঈশ্বরের] উদ্দেশে গান ও বাদ্য কর।” কীভাবে আমরা এই পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?

১৩ আমরা যখন নেতিবাচক অনুভূতির দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে পড়ি, তখন আমরা প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আন্তরিক অনুরোধ জানাতে পারি এবং কীর্তি বা প্রশংসাযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করার প্রচেষ্টা করতে পারি। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬-৯.) কেউ কেউ দেখেছে যে, আমাদের রাজ্যের গানগুলোর রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গুনগুন করে গান গাওয়ার ফলে তারা আরও বেশি আনন্দিত হতে পেরেছে এবং তা তাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে। একজন ভাই, যিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কারণে প্রায়ই হতাশায় ভুগতেন এবং নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তেন, তিনি স্মরণ করে বলেন: “নিয়মিতভাবে আন্তরিক প্রার্থনা করা ছাড়াও, আমি কয়েকটা রাজ্যের গান মুখস্থ করেছিলাম। যিহোবার উদ্দেশে এই চমৎকার প্রশংসাবাণীগুলো জোরে জোরে অথবা মনে মনে গাওয়া আমাকে মনের শান্তি প্রদান করত। এ ছাড়া, সেই সময়ে যিহোবার নিকটবর্তী হোন বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। পরের বছরের মধ্যেই আমি বইটি দু-বার পড়ে ফেলেছিলাম। এটা আমার হৃদয়ের জন্য ঠিক উপশমকারী মলমের মতো হয়েছিল। আমি জানি যে, যিহোবা আমার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেছিলেন।”

‘শান্তির যোগবন্ধনে ঐক্য’

১৪. পবিত্র আত্মার দ্বারা উৎপন্ন শান্তির এক উল্লেখযোগ্য দিক কী?

১৪ আমাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে, বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা অভ্যাগতরা তাদের ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করার মাধ্যমে আনন্দ লাভ করে থাকে। এই ধরনের দৃশ্যগুলো বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেরা যে-শান্তি উপভোগ করে, তার একটা দিক তুলে ধরে আর তা হল বিশ্বব্যাপী একতা। যে-লোকেদের মধ্যে শত্রুতা থাকবে বলে আশা করা হয়, তাদেরকে যখন প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্‌ হইতে’ দেখে, তখন তারা প্রায়ই অবাক হয়ে যায়। (ইফি. ৪:৩) অনেককে যে-বিষয়টা কাটিয়ে উঠতে হয়, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে এই একতা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।

১৫, ১৬. (ক) পিতরের পটভূমি কী ছিল আর কীভাবে এটা তার সামনে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা পিতরকে তার মনোভাব রদবদল করতে সাহায্য করেছিলেন?

১৫ বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা লোকেদের একত্রিত করা এক কঠিন বিষয়। এই ধরনের একতা লাভ করতে হলে আমাদেরকে কোন বিষয়টা কাটিয়ে উঠতে হবে, সেই বিষয়ে বোধগম্যতা লাভ করার জন্য আসুন আমরা প্রথম শতাব্দীর একটা উদাহরণ, প্রেরিত পিতরের কথা বিবেচনা করি। অচ্ছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয়দের প্রতি তার মনোভাব এই কথাগুলোর মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে: “আপনারা জানেন, অন্য জাতীয় কোন লোকের সঙ্গে যোগ দেওয়া কিম্বা তাহার কাছে আসা যিহূদী লোকের পক্ষে কেমন অবিধেয়; কিন্তু আমাকে ঈশ্বর দেখাইয়া দিয়াছেন যে, কোন মনুষ্যকে অপবিত্র কিম্বা অশুচি বলা অনুচিত।” (প্রেরিত ১০:২৪-২৯; ১১:১-৩) সেই সময়ের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, স্পষ্টতই পিতর এইরকম ধারণা নিয়ে বড়ো হয়েছিলেন যে, ব্যবস্থা অনুযায়ী তিনি কেবল সহযিহুদিদের প্রতিই প্রেম দেখাতে বাধ্য। পরজাতীয়দেরকে ঘৃণ্য শত্রু হিসেবে দেখা হয়তো তার কাছে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এক বিষয় ছিল। *

১৬ একটু কল্পনা করে দেখুন যে, পিতর যখন কর্ণীলিয়ের বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তিনি কত অস্বস্তি বোধ করেছিলেন। পরজাতীয় ব্যক্তিদের প্রতি আগে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন একজন ব্যক্তির পক্ষে কি কখনো “শান্তির যোগবন্ধনে” “সন্ধি” করা সম্ভব? (ইফি. ৪:৩, ১৬) হ্যাঁ, কারণ মাত্র কয়েক দিন আগে, ঈশ্বরের আত্মা পিতরের হৃদয় খুলে দিয়েছিল এবং তাকে তার মনোভাব ও প্রতিকূল ধারণা পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল। একটা দর্শনের মাধ্যমে যিহোবা এই বিষয়টা তার কাছে স্পষ্ট করেছিলেন যে, লোকেদের প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণ বা জাতীয়তার দ্বারা নির্ধারিত হয় না। (প্রেরিত ১০:১০-১৫) এই কারণে কর্ণীলিয়কে পিতর বলতে পেরেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) পিতর পরিবর্তন করেছিলেন আর তিনি সত্যিই ‘ভ্রাতৃসমাজের’ সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন।—১ পিতর ২:১৭.

১৭. ঈশ্বরের লোকেরা যে-একতা উপভোগ করে, তা কীভাবে উল্লেখযোগ্য?

১৭ পিতরের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে যে-উল্লেখযোগ্য রূপান্তর ঘটে থাকে, সেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। (পড়ুন, যিশাইয় ২:৩, ৪.) “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” লক্ষ লক্ষ লোক ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ,’ সেই অনুযায়ী চলার জন্য তাদের চিন্তাভাবনাকে রদবদল করেছে। (প্রকা. ৭:৯; রোমীয় ১২:২) শয়তানের জগতের ঘৃণা, শত্রুতা এবং দলভেদ একসময় এদের অনেকের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার এবং পবিত্র আত্মার সাহায্যের মাধ্যমে, তারা ‘যে যে বিষয় শান্তিজনক, সেই সকলের অনুধাবন করিতে’ শিখেছে। (রোমীয় ১৪:১৯) এর ফলে যে-একতা লাভ করা যায়, তা ঈশ্বরের প্রশংসা নিয়ে আসে।

১৮, ১৯. (ক) কীভাবে আমরা প্রত্যেকে মণ্ডলীর শান্তি ও একতায় অবদান রাখতে পারি? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৮ কীভাবে আমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে শান্তি ও একতার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারি? অনেক মণ্ডলীতে এমন ব্যক্তিরা রয়েছে, যারা একটা ভিন্ন দেশ থেকে সেখানে এসেছে। তাদের মধ্যে কারো কারো হয়তো ভিন্ন প্রথা রয়েছে অথবা তারা হয়তো আমাদের ভাষা ভালো করে বলতে পারে না। আমরা কি তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেছি? ঈশ্বরের বাক্য এটা করার জন্যই সুপারিশ করে। রোমের মণ্ডলী, যেখানে যিহুদি ও পরজাতীয় বিশ্বাসীরা ছিল, সেই মণ্ডলীর উদ্দেশে লেখার সময় পৌল বলেছিলেন: “যেমন খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন, তেমনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমরা এক জন অন্যকে গ্রহণ কর।” (রোমীয় ১৫:৭) আপনার মণ্ডলীতে কি এমন কেউ রয়েছে, যার সঙ্গে আপনি ভালোভাবে পরিচিত হতে পারেন?

১৯ পবিত্র আত্মা যেন আমাদের জীবনে কাজ করতে পারে, সেটার জন্য আমরা আর কী করতে পারি? পরবর্তী প্রবন্ধে পবিত্র আত্মার ফলের বাকি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় এই প্রশ্নটা বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিশু যে-ফলের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, সেটার সঙ্গে “আত্মার ফল” এবং “ওষ্ঠাধরের ফল” উভয়ই সম্পর্কযুক্ত, যেগুলো খ্রিস্টানরা রাজ্যের প্রচার কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরকে প্রদান করে।—ইব্রীয় ১৩:১৫.

^ লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদ বলে: “তুমি আপন জাতির সন্তানদের উপরে প্রতিহিংসা কি দ্বেষ করিও না, বরং আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” যিহুদি ধর্মীয় নেতারা এইরকমটা মনে করত যে, ‘আপন জাতির সন্তান’ এবং ‘প্রতিবাসী’ কেবল যিহুদিদেরকেই নির্দেশ করে। ব্যবস্থা অনুযায়ী ইস্রায়েলীয়দের অন্যান্য জাতি থেকে পৃথক থাকতে হতো। কিন্তু, এটা প্রথম শতাব্দীর ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা নির্ধারিত এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে না যে, মূলত সমস্ত ন-যিহুদি ব্যক্তিই তাদের শত্রু এবং তাদের প্রত্যেককে ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে ঘৃণা করতে হবে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে আমরা আমাদের ভাইবোনদের প্রতি আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখাতে পারি?

• কেন আমাদের জন্য আনন্দ সহকারে ঈশ্বরের সেবা করে চলা গুরুত্বপূর্ণ?

• কীভাবে আমরা মণ্ডলীর শান্তি ও একতার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার বাক্স]

“এরাই হল সত্য খ্রিস্টান”

সংগ্রাম ও শহীদত্বের মাঝে—নাতসি শাসনামলে যিহোবার সাক্ষিরা (ইংরেজি) বইটি একজন কারাবন্দি যিহুদি যুবকের মন্তব্য তুলে ধরে, যেখানে সে নয়েনগাম কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে এসে পৌঁছানোর পর যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতের বিষয়ে এভাবে বর্ণনা করে:

“আমরা যে-যিহুদিরা ডাকা থেকে সেই ক্যাম্পে এসেছিলাম, আমাদেরকে দেখেই সঙ্গেসঙ্গে অন্যান্য যিহুদি তাদের সমস্তকিছু লুকাতে শুরু করেছিল, যেন আমাদের সঙ্গে তাদের কিছু ভাগ করে নিতে না হয়। . . . [কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের] বাইরে আমরা একে অন্যকে সাহায্য করতাম। কিন্তু এখানে, জীবন-মরণের এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের প্রধান চিন্তা ছিল, অন্যদের ভুলে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করা। তবে, বাইবেল ছাত্ররা কী করেছিল, তা একটু কল্পনা করুন। সেই সময়ে তাদেরকে কিছু জলের পাইপ মেরামত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। আবহাওয়া ঠাণ্ডা ছিল আর তাদেরকে সারাদিন বরফের মতো ঠাণ্ডা জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। কেউই বুঝতে পারেনি যে, কীভাবে তারা সেটা সহ্য করছিল। তারা বলেছিল যে, যিহোবা তাদের শক্তি দেন। আমাদের মতো তাদেরও রুটির অনেক প্রয়োজন ছিল কারণ তারা ক্ষুধার্ত ছিল। কিন্তু তারা কী করেছিল? তারা তাদের সমস্ত রুটি সংগ্রহ করে সেগুলোর মধ্যে অর্ধেক নিজেরা খেয়েছিল আর বাকি অর্ধেক সেই সহবিশ্বাসীদের দিয়েছিল, যারা ডাকা থেকে সবেমাত্র এসে পৌঁছেছে। তারা তাদেরকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে চুম্বন করেছিল। খাওয়ার আগে তারা প্রার্থনা করেছিল। আর তারা সকলেই পরিতৃপ্ত ও আনন্দিত হয়েছিল। তারা বলেছিল যে, তাদের আর খিদে নেই। আপনারা বুঝতে পারছেন যে, ঠিক সেই সময়েই আমি চিন্তা করেছিলাম: এরাই হল সত্য খ্রিস্টান।”

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আপনি কি প্রতিদিন অন্যান্য কাজ থেকে সময় কিনে নেন?