সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমি অনেক উত্তম বিষয় লাভ করেছি

আমি অনেক উত্তম বিষয় লাভ করেছি

আমি অনেক উত্তম বিষয় লাভ করেছি

বলেছেন আর্থার বোনো

সময়টা ছিল ১৯৫১ সাল। আমার স্ত্রী ইডিথ ও আমি একটা জেলা সম্মেলনে ছিলাম আর তখন আমরা এই ঘোষণা শুনতে পেয়েছিলাম যে, যারা মিশনারি সেবার বিষয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য একটা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

“চলো আমরা গিয়ে শুনি!” আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠি।

“সেটা আমাদের জন্য নয় আর্থ!” ইডিথ উত্তর দিয়েছিল।

“চলো না ইডি, আমরা শুধু শুনব।”

সেই সভার পর গিলিয়েড স্কুল-এর আবেদন পত্র দেওয়া হয়েছিল।

“চলো আমরা এগুলো পূরণ করি,” আমি অতি উৎসাহের সঙ্গে বলেছিলাম।

“কিন্তু আর্থ, আমাদের পরিবারের কী হবে?”

সেই সম্মেলনের দেড় বছর পর, আমরা গিলিয়েড স্কুল-এ যোগ দিয়েছিলাম এবং আমাদেরকে দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল।

সেই সম্মেলনে আমার স্ত্রী ও আমার কথোপকথন থেকে আপনারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, আমি দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলাম আর আমার বেশ আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু, ইডিথ শান্ত ও বিনয়ী স্বভাবের ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় এলিজাবেথ নামে এক ছোট্ট শহরে বড়ো হয়ে ওঠার সময়, সে কখনোই সাহস করে তার বাড়ি থেকে খুব দূরে যায়নি কিংবা কোনো বিদেশির সঙ্গে কথা বলেনি। তার পরিবারকে ছেড়ে যাওয়া তার পক্ষে অনেক কঠিন ছিল। তা সত্ত্বেও, সে মনেপ্রাণে বিদেশে সেবা করার সেই কার্যভার গ্রহণ করে নিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে আমরা ইকুয়েডরে পৌঁছেছিলাম আর তখন থেকে এই দেশে মিশনারি হিসেবে সেবা করছি। এখানে থাকার সময় আমরা অনেক উত্তম বিষয় লাভ করেছি। আপনারা কি সেগুলোর কয়েকটা শুনতে চান?

আনন্দময় বিভিন্ন স্মৃতি

আমাদের প্রথম কার্যভার ছিল রাজধানী কুইটোতে, যা আন্দিজ পর্বতমালার প্রায় ৯,০০০ ফুট (২,৮৫০ মাইল) উঁচুতে অবস্থিত। উপকূলীয় শহর গায়াকুইল থেকে ট্রেনে ও ট্রাকে করে সেখানে যেতে আমাদের দু-দিন সময় লেগেছিল—যেখানে এখন প্লেনে করে যেতে ৩০ মিনিট লাগে! আমরা কুইটোতে স্মরণীয় চারটে বছর সেবা করেছিলাম। এরপর, ১৯৫৮ সালে আরেকটা দারুণ বিষয় ঘটেছিল: আমাদের সীমার কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

সেই সময়ে, পুরো দেশে মাত্র দুটো ছোটো সীমা ছিল। তাই মণ্ডলী পরিদর্শন করা ছাড়াও, আমরা বছরের বহু সপ্তাহ কোনো সাক্ষি থাকে না এমন ছোটো ছোটো ইন্ডিয়ান শহরে প্রচার করে কাটাতাম। আদিবাসীদের সেই গ্রামগুলোতে সাধারণত থাকার ব্যবস্থা বলতে যা ছিল, তা হল জানালাবিহীন একটা ছোট্ট ঘর, যেখানে একটা বিছানা ছাড়া আর কিছুই থাকত না। আমরা সঙ্গে করে একটা কাঠের বাক্স নিয়ে যেতাম, যেটার ভিতরে একটা কেরোসিনের চুলা, একটা প্যান, কয়েকটা প্লেট, ধোয়ার জন্য একটা গামলা, কয়েকটা চাদর, একটা মশারি, পুরোনো খবরের কাগজ এবং আরও কিছু জিনিস থাকত। আমরা দেওয়ালের ছিদ্র বন্ধ করার জন্য খবরের কাগজগুলো ব্যবহার করতাম, যাতে ইঁদুরদের ভিতরে ঢুকতে একটু কষ্ট হয়।

যদিও সেই রুমগুলো অন্ধকার ও নোংরা ছিল কিন্তু আমাদের রাতের বেলা বিছানায় বসে কেরোসিনের চুলায় রান্না করা সাধারণ খাবার খেতে খেতে কথাবার্তা বলার আনন্দময় স্মৃতি ছিল। যেহেতু আমার অপরিণামদর্শী স্বভাবের কারণে আমি প্রায়ই চিন্তা না করেই কথাবার্তা বলে ফেলতাম, তাই আমার স্ত্রী সেই শান্ত মুহূর্তগুলোকে এমন কৌশলী উপায়গুলো সম্বন্ধে বলার জন্য ব্যবহার করত, যে-উপায়গুলোর মাধ্যমে আমি সেই ভাইবোনদের কাছে নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারতাম, যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হতো। আমি তার কথা শুনেছিলাম আর এর ফলে আমার পরিদর্শনগুলো আরও উৎসাহজনক হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়া, আমি যখনই অবিবেচকের মতো অন্য কারো সম্বন্ধে নেতিবাচক কিছু বলতাম, তখন সে সেই কথোপকথনে অংশ নিত না। এভাবে আমি আমার ভাইবোনদের সম্বন্ধে এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে শিখেছিলাম। তবে, অধিকাংশ সময়ই আমাদের রাতের আলোচনাগুলো প্রহরীদুর্গ পত্রিকার বিভিন্ন প্রবন্ধ থেকে আমরা যা-শিখেছি ও সেই দিনের ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের যে-অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত থাকত। আর আমাদের কত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাই না হয়েছিল!

আমরা যেভাবে কার্লোসকে খুঁজে পেয়েছিলাম

আমাদেরকে ইকুয়েডরের পশ্চিমাঞ্চলের জিপিজাপা শহরের একজন আগ্রহী ব্যক্তির নাম—কোনো ঠিকানা নয়, শুধু কার্লোস মেহিয়া নামটা—দেওয়া হয়েছিল। সেই দিন সকালে আমাদের ভাড়া করা রুম থেকে বের হওয়ার সময় আমরা জানতাম না যে, কোথা থেকে তাকে খোঁজা শুরু করতে হবে আর তাই আমরা একদিকে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। আগের দিন রাতের প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে আমাদেরকে খানাখন্দময় মাটির রাস্তায় সতর্কতার সঙ্গে হাঁটতে হয়েছিল। আমি যখন আমার স্ত্রীর আগে আগে হাঁটছিলাম, তখন পিছন থেকে “আর্থ” বলে ডেকে ওঠা করুণ আর্তনাদ শুনতে পেয়েছিলাম! আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি যে, ইডির পা হাটু পর্যন্ত কালো মাটির ভিতর ঢুকে গিয়েছে। সেই দৃশ্যটা এতই হাস্যকর ছিল যে, তার কাঁদো কাঁদো চেহারা না দেখলে আমি হেসেই ফেলতাম।

যদিও আমি তাকে সেই কাদা থেকে উঠাতে পেরেছিলাম কিন্তু তার জুতো জোড়া কাদার মধ্যে আটকে গিয়েছিল। একটা ছেলে ও একটা মেয়ে বিষয়টা দেখছিল আর তাই আমি তাদেরকে বলেছিলাম, “তোমরা যদি জুতো জোড়া কাদা থেকে বের করতে পার, তাহলে আমি তোমাদের কিছু টাকা দেব।” মুহূর্তের মধ্যেই জুতো জোড়া পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, তবে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য ইডির একটা জায়গার প্রয়োজন ছিল। সেই ছেলে-মেয়ের মা দৃশ্যটা দেখছিলেন এবং তিনি আমাদেরকে তার ঘরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যেখানে তিনি আমার স্ত্রীকে তার পা ধুতে সাহায্য করেছিলেন আর একইসময়ে তার ছেলে-মেয়ে নোংরা জুতো জোড়া পরিষ্কার করেছিল। সেই জায়গা ছেড়ে আসার আগে একটা দারুণ ঘটনা ঘটেছিল। আমি সেই মহিলাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, কার্লোস মেহিয়া নামে ব্যক্তিকে আমরা কোথায় খুঁজে পেতে পারি, তা তিনি জানেন কি না। অবাক চোখে তাকিয়ে তিনি বলেছিলেন, “সে আমার স্বামী।” পরে একটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল এবং অবশেষে সেই পরিবারের সকল সদস্য বাপ্তাইজিত হয়েছিল। কয়েক বছর পর কার্লোস, তার স্ত্রী ও তাদের ছেলে-মেয়ে বিশেষ অগ্রগামী হয়েছিল।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভ্রমণ—আন্তরিক আতিথেয়তা

সীমার কাজে ভ্রমণ করা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। আমরা বাস, ট্রেন, ট্রাক, গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি নৌকা ও ছোটো ছোটো প্লেন ব্যবহার করতাম। এক বার, জন ম্যাকলেনাকান, যিনি জেলা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করছিলেন, তিনি ও তার স্ত্রী ডরথি আমাদের সঙ্গে কলম্বিয়ান সীমান্তের কাছাকাছি জেলে পাড়াগুলোতে প্রচার করতে গিয়েছিল। আমরা একটা মোটর লাগানো গাছের গুঁড়ির তৈরি নৌকায় করে যাত্রা করেছিলাম। সেই নৌকার আকারের কয়েকটা হাঙর ঠিক আমাদের পাশ দিয়েই সাঁতার কাটছিল! এমনকী আমাদের সঙ্গে থাকা দক্ষ চালকও হাঙরগুলোর আকার দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন এবং দ্রুত নৌকাটা তীরের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু, আমরা সীমার কাজে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেগুলো সার্থক হয়েছিল। আমরা চমৎকার ও অতিথিপরায়ণ ভাইবোনদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলাম। আমরা যে-পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকতাম, তারা অনেক বার আমাদেরকে দিনে তিন বেলা খাবার খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করত, যদিও তারা নিজেরা মাত্র এক বেলা খাবার খেতে পারত। অথবা আমাদেরকে ঘরের একমাত্র বিছানায় ঘুমাতে দিত আর তারা মাটিতে ঘুমাত। আমার স্ত্রী প্রায়ই বলত, “এই প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমাকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছে যে, জীবনধারণের জন্য আমাদের আসলেই কত অল্প জিনিস প্রয়োজন।”

“আমরা পিছু হটতে চাই না”

উনিশ-শো ষাট সালে আমাদের জীবনে আরেকটা দারুণ ঘটনা ঘটেছিল—আমাদের গায়াকুইলের শাখা অফিসে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি প্রশাসনিক কাজ করতাম আর ইডি শাখা অফিসের কাছাকাছি একটা মণ্ডলীর সঙ্গে পরিচর্যা করত। আমি নিজেকে কখনো অফিস কর্মী হিসেবে চিন্তা করিনি আর তাই কিছুটা অযোগ্য মনে করতাম কিন্তু ইব্রীয় ১৩:২১ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয় যে, ঈশ্বর “আপনার ইচ্ছা সাধনার্থে সমস্ত উত্তম বিষয়ে” আমাদের পরিপক্ব করেন। দু-বছর পর, আমাকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বেথেলে অনুষ্ঠিত দশ মাসের গিলিয়েড কোর্সে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই সময়ে, আশা করা হতো যে, স্ত্রীরা তাদের নিজস্ব কার্যভারে রত থাকবে। আমার স্ত্রীর উদ্দেশে ব্রুকলিন থেকে একটা চিঠি এসেছিল। তাকে সতর্কতার সঙ্গে এই বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য বলা হয়েছিল যে, তিনি দশ মাসের জন্য তার স্বামীর অনুপস্থিতি মেনে নেওয়ার জন্য ইচ্ছুক আছেন কি না।

উত্তরে ইডিথ লিখেছিল: “আমি নিশ্চিত, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ কিন্তু আমরা জানি যে, যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন, যিহোবা অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন। . . . আমরা এমন যেকোনো বিশেষ সুযোগ থেকে পিছু হটতে চাই না, যা আমাদের সামনে আসতে পারে কিংবা আমাদের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করার জন্য আমাদেরকে আরও যোগ্য করে তুলতে পারে।” আমি ব্রুকলিনে থাকার সময় প্রতি সপ্তাহে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে একটা করে চিঠি পেতাম।

বিশ্বস্ত সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে সেবা করা

উনিশ-শো ছেষট্টি সালে, স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে ইডিথ ও আমি কুইটোতে ফিরে গিয়েছিলাম, যেখানে আমরা স্থানীয় ভাইবোনদের সঙ্গে আবারও মিশনারি সেবা শুরু করেছিলাম। তারা কতই না নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিল!

একজন বিশ্বাসী বোনের অবিশ্বাসী স্বামী ছিল, যিনি প্রায়ই তাকে মারধর করতেন। একদিন, ভোর ছয়টায় কেউ একজন এটা বলার জন্য আমাদের কাছে এসেছিল যে, তাকে আবারও মারধর করা হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি সেই বোনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি যখন তাকে দেখি, তখন আমি নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারিনি। তিনি বিছানায় শুয়ে ছিলেন আর তার পুরো শরীরে কালশিরে পড়ে ফুলে গিয়েছিল। তার স্বামী তাকে একটা ঝাড়ুর হাতল দিয়ে মেরেছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা ভেঙে দু-টুকরো হয়ে গিয়েছিল। পরে, সেই দিনই আমি তাকে ঘরে দেখতে পেয়েছিলাম এবং তাকে বলেছিলাম যে, তিনি একটা কাপুরুষোচিত কাজ করেছেন। তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

উনিশ-শো সত্তর সালের প্রথম দিকে, আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়ায় আমরা আবারও সীমার কাজ শুরু করেছিলাম। ইবারা শহরটা আমাদের সীমার অংশ ছিল। ১৯৫০ সালের শেষের দিকে আমরা যখন সেই শহর পরিদর্শন করেছিলাম, তখন সেখানে মাত্র দুজন সাক্ষি ছিল, একজন ছিল মিশনারি ও অন্যজন স্থানীয় ভাই। তাই আমরা এমন অনেক নতুন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য উদ্‌গ্রীব ছিলাম, যারা মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।

সেখানে আমাদের প্রথম সভায়, ভাই রোড্রিগো ভাকা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে এমন একটা অংশ পরিচালনা করছিলেন, যেটাতে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি যখনই প্রশ্ন করেছিলেন, তখনই যোগদানকারী ব্যক্তিরা তাদের হাত তোলার পরিবর্তে “ইয়ো, ইয়ো!” (“আমি, আমি!”) বলে উঠেছিল। ইডিথ ও আমি অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়েছিলাম। ‘এখানে কী হচ্ছে?’ আমি ভেবেছিলাম। পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, ভাই ভাকা যদিও অন্ধ কিন্তু তিনি মণ্ডলীর সদস্যদের কথা শুনে তাদের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করতে পারেন। তিনি এমন একজন মেষপালক, যিনি সত্যিকার অর্থেই তার মেষদের জানেন! এটা উত্তম মেষপালক এবং মেষেরা যে পরস্পরকে ভালোভাবে জানে, সেই বিষয়ে যোহন ১০:৩, ৪, ১৪ পদে বলা যিশুর কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়। আজকে, ইবারাতে ছয়টা স্প্যানীশভাষী মণ্ডলী, একটা কেচুয়াভাষী মণ্ডলী এবং একটা সাংকেতিক ভাষার মণ্ডলী রয়েছে। ভাই ভাকা একজন প্রাচীন ও বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলেছেন। *

যিহোবার মঙ্গলভাবের জন্য কৃতজ্ঞ

উনিশ-শো চুয়াত্তর সালে আমরা যিহোবার মঙ্গলভাবের আরেকটা প্রকাশ দেখতে পেয়েছিলাম, যখন আমাদের বেথেলে ফিরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে আমাকে আবার প্রথমে প্রশাসনিক কাজ ও পরে শাখা কমিটি-তে কাজ করার নিযুক্ত করা হয়েছিল। ইডিথ প্রথমে রান্নাঘরে কাজ করেছিল আর পরে সে অফিসে কাজ করতে শুরু করেছিল, যেখানে সে এখন চিঠিপত্র দেখাশোনার কাজ করে।

বছরের পর বছর ধরে আমরা গিলিয়েড থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেই শত শত মিশনারিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আনন্দ লাভ করেছি, যারা তাদের মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক উন্নতি ও উদ্যোগে অবদান রেখেছে। এ ছাড়া, আমরা সেই হাজার হাজার ভাই ও বোনদের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছি, যারা ৩০টারও বেশি দেশ থেকে এখানে সেবা করার জন্য এসেছে। তাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাব আমাদের কতই না অভিভূত করে! কেউ কেউ এখানে আসার জন্য তাদের বাড়িঘর ও ব্যাবসা বিক্রি করে দিয়েছে, যাতে যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করতে পারে। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচার করার জন্য যানবাহন নিয়ে এসেছে, নতুন নতুন মণ্ডলী স্থাপন করেছে এবং কিংডম হল নির্মাণে সহায়তা করেছে। অনেক অবিবাহিত বোন অগ্রগামীর কাজ করার জন্য বিদেশ থেকে এসেছে—আর তারা কতই না উদ্যমী ও দক্ষ কর্মী!

বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরকে সেবা করার সময়ে আমি অনেক উত্তম বিষয় লাভ করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এ ছাড়া, আমি এই বিষয়ে কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা আমার জন্য একজন “সহকারিণী” জুগিয়েছেন। (আদি. ২:১৮) আমি যখন আমাদের ৬৯ বছরের বেশি সময় ধরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে থাকার সময়টার দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমি হিতোপদেশ ১৮:২২ পদের বিষয় চিন্তা করি, যেটি বলে: “যে ভার্য্যা পায়, সে উৎকৃষ্ট বস্তু পায়।” ইডিথের সাহচর্যে থাকতে পারাটা অনেক আনন্দের। সে আমাকে অনেক উপায়ে সাহায্য করেছে। এ ছাড়া, সে তার মায়ের কাছেও একজন প্রেমময় মেয়ে হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা যখন ইকুয়েডরে এসে পৌঁছাই তখন থেকে ১৯৯০ সালে তার মা ৯৭ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত সে তার মায়ের কাছে প্রতি সপ্তাহে একটা করে চিঠি পাঠিয়েছে।

এখন আমার বয়স ৯০ বছর আর ইডিথের বয়স ৮৯ বছর। আমরা প্রায় ৭০ জন ব্যক্তিকে যিহোবা সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার মাধ্যমে যে-আনন্দ লাভ করেছি, সেটাকে আমরা উপলব্ধি করি। ৬০ বছর আগে গিলিয়েড স্কুল-এর আবেদন পত্র পূরণ করেছিলাম বলে আমরা সত্যি সত্যিই আনন্দিত। সেই সিদ্ধান্ত এমন এক জীবনের দিকে পরিচালিত করেছে, যা অনেক উত্তম বিষয়ে পরিপূর্ণ।

[পাদটীকা]

^ ভাই ভাকার জীবনকাহিনি ১৯৮৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় এসেছে।

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৮ সালে নিউ ইয়র্কের ইয়াংকি স্টেডিয়ামে আমাদের গিলিয়েড ক্লাসের সহমিশনারিদের সঙ্গে

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৯ সালে সীমার কাজে এক সাক্ষি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময়ে

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্র]

২০০২ সালে ইকুয়েডরের শাখা অফিসে