সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক সুসমাচার রয়েছে, যা সকলের প্রয়োজন

এক সুসমাচার রয়েছে, যা সকলের প্রয়োজন

এক সুসমাচার রয়েছে, যা সকলের প্রয়োজন

“সুসমাচার . . . পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি।”—রোমীয় ১:১৬.

১, ২. কেন আপনি “রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করেন আর এটার কোন দিকগুলো সম্বন্ধে আপনি জোর দেন?

 ‘আমি প্রতিদিন সুসমাচার জানাতে পেরে আনন্দিত।’ সম্ভবত আপনার মনেও এই চিন্তাই এসেছে অথবা আপনিও একই কথা বলেছেন। যিহোবার একজন একনিষ্ঠ সাক্ষি হিসেবে আপনি “রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচার করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জানেন। আপনি হয়তো আমরা সেই কাজ করব বলে যিশু যে-ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, সেটা মুখস্ত বলতে পারেন।—মথি ২৪:১৪.

“রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করে আপনি সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা যিশু শুরু করেছিলেন। (পড়ুন, লূক ৪:৪৩.) কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি একটা যে-বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে থাকেন তা হল, ঈশ্বর শীঘ্র মানবজাতির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। ‘মহাক্লেশের’ মাধ্যমে তিনি মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করবেন এবং পৃথিবী থেকে দুষ্টতা দূর করে দেবেন। (মথি ২৪:২১) আপনি হয়তো এই বিষয়টাও তুলে ধরেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীতে পরমদেশ পুনর্স্থাপন করবে, যেন শান্তি ও সুখ বিরাজ করতে পারে। আসলে, “রাজ্যের সুসমাচার” হল সেই ‘সুসমাচারের’ অংশ, যা ‘অব্রাহামের কাছে আগেই প্রচার করা হইয়াছিল, যথা, “তোমাতে সমস্ত জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে”।’—গালা. ৩:৮.

৩. কেন আমরা বলতে পারি যে, পৌল রোমীয় পুস্তকে সুসমাচারের ওপর জোর দিয়েছেন?

কিন্তু, এমনটা কি হতে পারে যে, আমরা হয়তো সেই সুসমাচার, যা লোকেদের প্রয়োজন, সেটার একটা প্রধান দিকের প্রতি সামান্যই মনোযোগ দিচ্ছি? রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে পৌল “রাজ্য” অভিব্যক্তিটি কেবল এক বার উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু তিনি ‘সুসমাচার’ অভিব্যক্তিটি ১২ বার ব্যবহার করেছেন। (পড়ুন, রোমীয় ১৪:১৭.) পৌল এই পুস্তকে সুসমাচারের কোন দিকটা সম্বন্ধে এত বার উল্লেখ করেছিলেন? কেন সেই সুসমাচার অতীব গুরুত্বপূর্ণ? আর আমাদের ক্ষেত্রের লোকেদের কাছে “ঈশ্বরের সুসমাচার” প্রচার করার সময় কেন তা মনে রাখা উচিত?—মার্ক ১:১৪; রোমীয় ১৫:১৬; ১ থিষল. ২:২.

রোমের লোকেদের যা প্রয়োজন ছিল

৪. রোমে প্রথম বার কারাবন্দি থাকার সময় পৌল কোন বিষয়ে প্রচার করেছিলেন?

সেই বিষয়গুলো লক্ষ করা সাহায্যকারী, যেগুলো পৌল প্রথম বার রোমে কারাবন্দি থাকার সময় তুলে ধরেছিলেন। আমরা পড়ি যে, যখন বেশ কয়েক জন যিহুদি তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তখন তিনি ‘(১) ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়াছিলেন এবং (২) যীশুর বিষয়ে তাঁহাদিগকে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন।’ এর ফল কী হয়েছিল? “তাহাতে কেহ কেহ তাঁহার কথায় প্রত্যয় করিলেন, আর কেহ কেহ অবিশ্বাস করিলেন।” এরপর, পৌল ‘যত লোক তাঁহার নিকটে আসিত, সকলকেই গ্রহণ করিয়া (১) ঈশ্বরের রাজ্যের কথা প্রচার করিতেন, এবং (২) প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে উপদেশ দিতেন।’ (প্রেরিত ২৮:১৭, ২৩-৩১) স্পষ্টতই, পৌল ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি আর কোন বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন? এমন কিছুর ওপর, যা রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু—ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে যিশুর ভূমিকা।

৫. পৌল রোমীয় পুস্তকে এমন কোন বিষয় তুলে ধরেছিলেন, যা প্রকৃতই প্রয়োজন?

সমস্ত লোককে যিশু সম্বন্ধে জানতে ও তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। রোমীয় পুস্তকে পৌল এই প্রয়োজন সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন। আগে তিনি “ঈশ্বর” সম্বন্ধে এভাবে লিখেছিলেন যে, “যাঁহার আরাধনা আমি আপন আত্মাতে তাঁহার পুত্রের সুসমাচারে করিয়া থাকি।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি।” পরে তিনি সেই সময় সম্বন্ধে এভাবে উল্লেখ করেছিলেন, “যে দিন ঈশ্বর আমার সুসমাচার অনুসারে যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা মনুষ্যদের গুপ্ত বিষয় সকলের বিচার করিবেন।” আর তিনি বলেছিলেন: “যিরূশালেম হইতে ইল্লুরিকা পর্য্যন্ত চারিদিকে আমি খ্রীষ্টের সুসমাচার সম্পূর্ণরূপে প্রচার করিয়াছি।” * (রোমীয় ১:৯, ১৬; ২:১৬; ১৫:১৯) আপনি কী মনে করেন, কেন পৌল রোমীয়দের কাছে যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে জোর দিয়েছিলেন?

৬, ৭. কীভাবে রোমীয় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল এবং কারা এই মণ্ডলীর অংশ ছিল?

রোমীয় মণ্ডলী কীভাবে শুরু হয়েছিল, তা আমরা জানি না। যে-যিহুদি বা ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে উপস্থিত ছিল, তারাই কি খ্রিস্টান হয়ে রোমে ফিরে গিয়েছিল? (প্রেরিত ২:১০) নাকি খ্রিস্টান বণিকরা ও ভ্রমণকারীরা রোমে সত্য ছড়িয়ে দিয়েছিল? যেটাই হোক না কেন, পৌল যে-সময়ে অর্থাৎ সা.কা. প্রায় ৫৬ সালে এই বই লিখেছিলেন, তখন সেই মণ্ডলী ইতিমধ্যেই দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত ছিল। (রোমীয় ১:৮) কোন ধরনের পটভূমির লোকেদের নিয়ে সেই মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল?

কেউ কেউ যিহুদি পটভূমি থেকে এসেছিল। আন্দ্রনীক ও যূনিয়কে, পৌল “আমার স্বজাতীয়” বা সহযিহুদি বলে মঙ্গলবাদ করেছিলেন। রোমে তাঁবু নির্মাণকারী আক্বিলা এবং তার স্ত্রী প্রিষ্কিল্লাও যিহুদি ছিল। (রোমীয় ৪:১; ৯:৩, ৪; ১৬:৩, ৭; প্রেরিত ১৮:২) কিন্তু, পৌল যাদের মঙ্গলবাদ করেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেক ভাই ও বোন খুব সম্ভবত পরজাতীয় ছিল। কেউ কেউ হয়তো “কৈসরের বাটীর লোক” ছিল, হতে পারে কৈসরের দাস অথবা নিম্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা।—ফিলি. ৪:২২; রোমীয় ১:৫, ৬; ১১:১৩.

৮. রোমের লোকেরা কোন দুঃখজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল?

রোমের প্রত্যেক খ্রিস্টান এমন এক দুঃখজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, যেটার মুখোমুখি আমরাও হয়ে থাকি। পৌল বিষয়টাকে এভাবে তুলে ধরেছিলেন: “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩) স্পষ্টতই, পৌল যাদের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, তাদের সকলকে স্বীকার করতে হতো যে, তারা পাপী এবং তাদেরকে ঈশ্বরের মাধ্যমের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হতো, যাতে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়।

পাপপূর্ণ অবস্থাকে স্বীকার করা

৯. পৌল সুসমাচারের সম্ভাব্য কোন ফলাফলের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন?

রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা চিঠির শুরুর দিকে পৌল এমন এক চমৎকার ফলাফল সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন, যা সেই সুসমাচার থেকে আসে, যেটার বিষয়ে তিনি বার বার বলেছিলেন: “কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমতঃ যিহূদীর পক্ষে, আর গ্রীকেরও পক্ষে।” হ্যাঁ, পরিত্রাণ সম্ভব ছিল। কিন্তু, হবক্‌কূক ২:৪ পদ থেকে উদ্ধৃত এক গভীর সত্যের সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বাস আবশ্যক ছিল: “ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে।” (রোমীয় ১:১৬, ১৭; গালা. ৩:১১; ইব্রীয় ১০:৩৮) কিন্তু, কীভাবে সেই সুসমাচার, যা পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করতে পারে, তা এই বাস্তব বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে, “সকলেই পাপ করিয়াছে”?

১০, ১১. রোমীয় ৩:২৩ পদে উল্লেখিত ধারণাটা কেন কিছু লোকের কাছে অদ্ভুত নয় কিন্তু অন্যদের কাছে আবার অদ্ভুত?

১০ একজন ব্যক্তি জীবনরক্ষাকারী বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন, তবে তার আগে তাকে অবশ্যই এটা স্বীকার করতে হবে যে, তিনি একজন পাপী। এইরকম ধারণা সেই ব্যক্তিদের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হবে না, যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে বড়ো হয়েছে এবং যাদের বাইবেলের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় রয়েছে। (পড়ুন, উপদেশক ৭:২০.) তারা একমত হোক বা না-ই হোক, “সকলেই পাপ করিয়াছে” এই বিষয়টা বলার দ্বারা পৌল যা বুঝিয়েছেন, সেই সম্বন্ধে তাদের অন্ততপক্ষে একটা ধারণা রয়েছে। (রোমীয় ৩:২৩) কিন্তু, আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার সময় আমাদের হয়তো এমন অনেকের সঙ্গে দেখা হতে পারে, যারা এই উক্তি বুঝতে পারে না।

১১ কোনো কোনো দেশে একজন ব্যক্তি এইরকম ধারণা নিয়ে বড়ো হয়ে ওঠেন না যে, তিনি জন্ম থেকেই পাপী অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ পেয়েছেন। এটা ঠিক যে, তিনি হয়তো বোঝেন যে, তিনি ভুলত্রুটি করে থাকেন, তার বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং তিনি হয়তো কিছু মন্দ কাজ করেছেন। আর তিনি লক্ষ করেন যে, অন্যেরাও একই অবস্থায় রয়েছে। তা সত্ত্বেও, তার পটভূমির কারণে তিনি আসলেই বোঝেন না যে, কেন তার এবং অন্যদের অবস্থা এইরকম। আসলে, কিছু ভাষায় আপনি যদি একজন ব্যক্তিকে পাপী বলেন, তাহলে অন্যেরা হয়তো চিন্তা করবে যে, আপনি বলতে চাইছেন, তিনি একজন অপরাধী অথবা অনন্তপক্ষে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কিছু আইন ভঙ্গ করেছেন। নিশ্চিতভাবেই, এই ধরনের এক পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠা একজন ব্যক্তি হয়তো খুব সহজেই পৌল যে-অর্থে বুঝিয়েছিলেন, সেই অর্থে নিজেকে একজন পাপী হিসেবে চিন্তা করতে চাইবেন না।

১২. কেন অনেকে এই বিষয়টা বিশ্বাস করে না যে, সকলেই পাপী?

১২ এমনকী খ্রিস্টীয়জগতের দেশগুলোতেও অনেকে এই ধারণা বিশ্বাস করতে চায় না যে, তারা পাপী। কেন? এমনকী যদিও তারা মাঝে মাঝে গির্জায় যায় কিন্তু আদম ও হবা সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণকে কেবল এক নীতিগল্প অথবা পৌরাণিক কাহিনি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। অন্যেরা এক ঈশ্বর-বিরোধী পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠে। তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে থাকে আর তাই এই বিষয়টা বোঝে না যে, একজন সর্বোচ্চ সত্তা মানবজাতির জন্য বিভিন্ন নৈতিক মান স্থাপন করেন এবং সেই নীতিগুলো সমর্থন করতে ব্যর্থ হওয়াই পাপ। এক অর্থে, তারা প্রথম শতাব্দীর সেই ব্যক্তিদের মতো, যাদের বিষয়ে পৌল বর্ণনা করেছিলেন যে, তাদের “আশা ছিল না” এবং তারা “জগতের মধ্যে ঈশ্বরবিহীন।”—ইফি. ২:১২.

১৩, ১৪. (ক) যাদের ঈশ্বরের প্রতি এবং পাপে বিশ্বাস নেই, তাদের কোন একটা কারণে উত্তর দেওয়ার পথ নেই? (খ) অবিশ্বাস অনেককে কোন দিকে পরিচালিত করেছে?

১৩ রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে পৌল দুটো কারণ তুলে ধরেছিলেন যে, কেন সেই ধরনের পটভূমি এক অজুহাত হতে পারে না—তখনও না আর এখনও নয়। এর প্রথম কারণটা হল, সৃষ্টি নিজেই একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেয়। (পড়ুন, রোমীয় ১:১৯, ২০.) এই বিষয়টা পৌল রোম থেকে ইব্রীয়দের উদ্দেশে লেখার সময় যে-মন্তব্য করেছিলেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ৩:৪) সেই একই যুক্তি এমন একজন সৃষ্টিকর্তা থাকার বিষয়ে নির্দেশ করে, যিনি পুরো নিখিলবিশ্ব নির্মাণ করেছেন বা অস্তিত্বে এনেছেন।

১৪ তাই, পৌল রোমীয়দের উদ্দেশে লেখার সময় এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যে-ব্যক্তিরা—যাদের মধ্যে প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রাও অন্তর্ভুক্ত—নিষ্প্রাণ প্রতিমার কাছে ভক্তি প্রদান করে, তাদের “উত্তর দিবার পথ নাই।” সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় বলা যেতে পারে, যারা এমন অনৈতিক যৌন অভ্যাসগুলোর কাছে নতিস্বীকার করে, যে-অভ্যাসগুলো পুরুষ এবং স্ত্রীসঙ্গ লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষার বিপরীত আচরণকে প্রকাশ করে। (রোমীয় ১:২২-২৭) সেই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে, পৌল উপযুক্তভাবেই এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, “যিহূদী ও গ্রীক . . . সকলেই পাপের অধীন।”—রোমীয় ৩:৯.

এক ‘সাক্ষ্য দানকারী’

১৫. সমস্ত লোকের কী রয়েছে আর এর ফল কী?

১৫ রোমীয় পুস্তক আরেকটা কারণ শনাক্ত করে যে, কেন লোকেদের এটা স্বীকার করা উচিত যে, তারা পাপী এবং তাদের এই দুঃখজনক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য এক মাধ্যম প্রয়োজন। ঈশ্বর প্রাচীন ইস্রায়েলে যে-আইনবিধি দিয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “ব্যবস্থার অধীনে থাকিয়া যত লোক পাপ করিয়াছে, ব্যবস্থা দ্বারাই তাহাদের বিচার করা যাইবে।” (রোমীয় ২:১২) তিনি আরও যুক্তি তুলে ধরেন যে, সেই ঐশিক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত নয় এমন পরজাতীয় অথবা সাম্প্রদায়িক দলের লোকেরা প্রায়ই “স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে।” কেন এই ব্যক্তিরা সাধারণত অজাচার, নরহত্যা এবং চুরিকে নিষিদ্ধ করে? পৌল কারণটা শনাক্ত করেন: তাদের সংবেদ বা বিবেক রয়েছে।—পড়ুন, রোমীয় ২:১৪, ১৫.

১৬. কেন বিবেক থাকার অর্থ এই নয় যে, পাপ এড়িয়ে চলা যাবে?

১৬ কিন্তু, আপনি সম্ভবত লক্ষ করে থাকবেন যে, বিবেক, যেটা ভিতরে এক সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে কাজ করে, সেটা থাকার অর্থ এই নয় যে, একজন ব্যক্তি এর নির্দেশনা অনুসরণ করবে। প্রাচীন ইস্রায়েলের ঘটনা সেটাই দেখায়। যদিও ইস্রায়েলীয়দের কাছে ঈশ্বরদত্ত বিবেক এবং চুরি ও ব্যভিচার না করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন আইন ছিল, কিন্তু তারা বার বার তাদের বিবেককে উপেক্ষা করেছিল এবং যিহোবার ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করেছিল। (রোমীয় ২:২১-২৩) তারা দ্বিগুণ দোষী ছিল আর তাই তারা নিশ্চিতভাবেই পাপী ছিল, ঈশ্বরের মানদণ্ড ও ইচ্ছা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এটা তাদের নির্মাতার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।—লেবীয়. ১৯:১১; ২০:১০; রোমীয় ৩:২০.

১৭. রোমীয় পুস্তক থেকে আমরা কোন উৎসাহ লাভ করি?

১৭ রোমীয় পুস্তক থেকে আমরা যা বিবেচনা করেছি, তা হয়তো সর্বশক্তিমানের সামনে আমাদেরসহ মানুষের অবস্থা সম্বন্ধে এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে পারে বলে মনে হয়। কিন্তু, পৌল বিষয়টা সেখানেই শেষ করেননি। গীতসংহিতা ৩২:১, ২ পদে লিপিবদ্ধ দায়ূদের কথাগুলো উদ্ধৃতি করে প্রেরিত লিখেছিলেন: “ধন্য তাহারা, যাহাদের অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহাদের পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে; ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহার পক্ষে প্রভু [ঈশ্বর] পাপ গণনা করেন না।” (রোমীয় ৪:৭, ৮) হ্যাঁ, ঈশ্বর পাপ ক্ষমা করার জন্য এক বৈধ ও সঠিক মাধ্যমের ব্যবস্থা করেছেন।

সুসমাচার যিশুর ওপর কেন্দ্রীভূত

১৮, ১৯. (ক) পৌল রোমীয় পুস্তকে সুসমাচারের কোন দিকের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন? (খ) রাজ্যের আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য আমাদের কী স্বীকার করতেই হবে?

১৮ আপনি হয়তো উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে পারেন, “এটা আসলেই এক সুসমাচার!” সত্যিই তাই আর এই বিষয়টা আমাদেরকে আবারও সুসমাচারের সেই দিকের প্রতি ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যা পৌল রোমীয় পুস্তকে তুলে ধরেছিলেন। আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি লিখেছিলেন: “আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি।”—রোমীয় ১:১৫, ১৬.

১৯ সেই সুসমাচার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় যিশুর ভূমিকার ওপর কেন্দ্রীভূত। পৌল সেই সময়ের জন্য প্রতীক্ষা করেছিলেন, “যে দিন ঈশ্বর . . . সুসমাচার অনুসারে যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা মনুষ্যদের গুপ্ত বিষয় সকলের বিচার করিবেন।” (রোমীয় ২:১৬) সেটা বলার দ্বারা তিনি ‘খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যকে’ অথবা সেই রাজ্যের মাধ্যমে ঈশ্বর যা করবেন, সেটাকে খর্ব করছিলেন না। (ইফি. ৫:৫) কিন্তু, তিনি দেখিয়েছিলেন যে, আমরা যদি ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে বিরাজমান আশীর্বাদগুলো উপভোগ করার জন্য বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই দুটো বিষয় স্বীকার করতে হবে আর সেগুলো হল, (১) ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা এবং (২) আমাদের পাপের ক্ষমা লাভের জন্য যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা। যখন একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সেই অংশগুলো বুঝতে পারেন ও মেনে নেন এবং উপলব্ধি করেন যে, কীভাবে সেই বিষয়টা তাকে আশা প্রদান করে, তখন তিনি উপযুক্তভাবেই বলে ওঠেন, “হ্যাঁ, এটা আসলেই সুসমাচার!”

২০, ২১. আমাদের পরিচর্যায় কেন আমাদের সেই সুসমাচার সম্বন্ধে মনে রাখা উচিত, যেটার বিষয়ে রোমীয় পুস্তকে জোর দেওয়া হয়েছে এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল কী?

২০ আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যা সম্পন্ন করার সময় আমাদের অবশ্যই সুসমাচারের এই দিক সম্বন্ধে মনে রাখা উচিত। যিশু সম্বন্ধে উল্লেখ করে পৌল যিশাইয়ের কথা থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন: “যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।” (রোমীয় ১০:১১; যিশা. ২৮:১৬) যিশু সম্বন্ধে মৌলিক বার্তা হয়তো সেই ব্যক্তিদের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয় না, যাদের পাপ সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেই বিষয়ে ধারণা রয়েছে। তবে, অন্যদের কাছে এই বার্তা হয়তো একেবারে নতুন অর্থাৎ এমন বিষয়, যা তাদের সংস্কৃতিতে অজানা অথবা সাধারণত বিশ্বাস করা হয় না। এই ব্যক্তিরা যখন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং শাস্ত্রের ওপর নির্ভর করে, তখন আমাদের তাদের কাছে যিশুর ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে হবে। পরবর্তী প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, কীভাবে রোমীয় ৫ অধ্যায় সুসমাচারের একটা দিক সম্বন্ধে ধীরে ধীরে প্রকাশ করে। আপনি হয়তো সেই অধ্যয়নকে আপনার পরিচর্যার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী বলে মনে করবেন।

২১ রোমীয় পুস্তকে বার বার উল্লেখিত সেই সুসমাচার সম্বন্ধে সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের বুঝতে সাহায্য করা কতই না আনন্দদায়ক, যে-সুসমাচার “প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি।” (রোমীয় ১:১৬) সেই আনন্দ লাভ করা ছাড়াও, আমরা আরও দেখব যে, অন্যরাও রোমীয় ১০:১৫ পদে উদ্ধৃত এই অনুভূতির সঙ্গে একমত হয়: “যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।”—যিশা. ৫২:৭.

[পাদটীকা]

^ একইরকম অভিব্যক্তি অন্যান্য অনুপ্রাণিত পুস্তকেও রয়েছে।—মার্ক ১:১; প্রেরিত ৫:৪২; ১ করি. ৯:১২; ফিলি. ১:২৭.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• রোমীয় পুস্তক সুসমাচারের কোন দিক সম্বন্ধে তুলে ধরে?

• অন্যদেরকে কোন বিষয়টা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে হবে?

• কীভাবে “খ্রীষ্টের সুসমাচার” আমাদের ও অন্যদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

রোমীয় পুস্তকে তুলে ধরা সুসমাচারের সঙ্গে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশুর অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জড়িত

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের সকলের এক জন্মগত ত্রুটি—পাপ—রয়েছে!