সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অব্রাহামের কি সত্যিই উট ছিল?

অব্রাহামের কি সত্যিই উট ছিল?

অব্রাহামের কি সত্যিই উট ছিল?

অব্রাহাম ফরৌণের কাছ থেকে যে-গৃহপালিত পশুগুলো লাভ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে উট ছিল, বাইবেল জানায়। (আদি. ১২:১৬) যখন অব্রাহামের দাস অরাম-নহরয়িমের (মেসোপটেমিয়ার) উদ্দেশে এক দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন তিনি ‘আপন প্রভুর উষ্ট্রদের মধ্য হইতে দশটা উষ্ট্র লইয়াছিলেন।’ তাই, বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে, অব্রাহামের উট ছিল আর সেই সময়টা হল, সা.কা.পূ. প্রায় দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুর দিকে।—আদি. ২৪:১০.

কেউ কেউ এটা স্বীকার করতে চায় না। নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন আর্কিওলজিক্যাল স্টাডি বাইবেল জানায়: “পণ্ডিত ব্যক্তিরা উটের এই উল্লেখ সম্বন্ধে ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে বিতর্কে জড়িত হয়েছে কারণ অনেকে মনে করে যে, খ্রিস্ট পূর্ব প্রায় ১২০০ সালের আগে পর্যন্ত এই পশুগুলোকে ব্যাপকভাবে পোষ মানানো হতো না, যে-সময়টা অব্রাহামের সময়ের অনেক পরে।” তাই, সেই সময়ের আগে উট সম্বন্ধে বাইবেলের যেকোনো উল্লেখকে কালের অসংগতি বা কালানুক্রমিক ভুল হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

কিন্তু, অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তি যুক্তি দেখায় যে, যদিও দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রায় শেষের দিকে উটকে পোষ মানানোর বিষয়টা গুরুত্ব লাভ করেছিল, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এর আগে কখনো উট ব্যবহার করা হয়নি। প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের বিভিন্ন সভ্যতা (ইংরেজি) বইটি বলে: “সাম্প্রতিক গবেষণা তুলে ধরেছে যে, [সা.কা.পূ.] তৃতীয় সহস্রাব্দের কোনো সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব আরবে উটকে পোষ মানানোর বিষয়টা শুরু হয়েছিল। প্রথমে, যদিও সম্ভবত এর দুধ, লোম, চামড়া ও মাংসের জন্য এটা পালন করা হতো কিন্তু খুব শীঘ্র মালবাহী পশু হিসেবে এটার কার্যকারিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।” বিভিন্ন দেহাবশেষ ও অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ অব্রাহামের সময়ের আগের এই সময়কালকে সমর্থন করে বলেই মনে হয়।

এ ছাড়া, লিখিত সাক্ষ্যপ্রমাণও রয়েছে। সেই একই তথ্যগ্রন্থ বলে: “মেসোপটেমিয়ার কীলকাকার লিপিগুলো এই প্রাণী [উট] সম্বন্ধে উল্লেখ করে এবং বেশ কিছু সিলমোহর এটাকে চিত্রিত করে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, সেই পশুটা হয়তো মেসোপটেমিয়ায় পৌঁছেছিল দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুর দিকে,” অর্থাৎ অব্রাহামের সময়কালের মধ্যে।

কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করে যে, সুগন্ধি দ্রব্যের ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত দক্ষিণ আরবীয় ব্যাবসায়ীরা মরুভূমির মধ্য দিয়ে উত্তর দিকের বিভিন্ন এলাকা যেমন, মিশর ও সিরিয়ায় তাদের মালামাল পরিবহন করার জন্য উট ব্যবহার করেছিল আর এভাবে এই এলাকাগুলোতে প্রথম উট নিয়ে গিয়েছিল। এই ব্যাবসা সম্ভবত সা.কা.পূ. ২০০০ সালের একেবারে শুরু থেকেই প্রচলিত ছিল। আগ্রহজনক বিষয় হল, আদিপুস্তক ৩৭:২৫-২৮ পদ ইশ্মায়েলীয় ব্যাবসায়ীদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যারা মিশরে সুগন্ধি দ্রব্য নিয়ে যাওয়ার জন্য উট ব্যবহার করত আর সেই সময়টা ছিল অব্রাহামের সময়কালের প্রায় এক-শো বছর পর।

সম্ভবত, সা.কা.পূ. দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরুর দিকে যদিও প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে এতটা ব্যাপকভাবে উট ব্যবহার করা হতো না, কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ এই বিষয়টা নিশ্চিত করে বলেই মনে হয় যে, এগুলো একেবারে অপরিচিত ছিল না। তাই, দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া এই উপসংহারে আসে: “কুলপতিদের বিবরণে উটের উল্লেখ সম্বন্ধীয় বিষয়টাকে আর কালের অসংগতি বলে মনে করার প্রয়োজন নেই, কারণ কুলপতিদের সময়ের আগে উটকে পোষ মানানোর বিষয়ে যথেষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ রয়েছে।”