সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি, সঙ্গে করিয়া আনিও”

“গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি, সঙ্গে করিয়া আনিও”

“গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি, সঙ্গে করিয়া আনিও”

ওপরের কথাগুলো বলার দ্বারা প্রেরিত পৌল তার সহমিশনারি তীমথিয়কে তার জন্য কিছু লিখিত বিষয় নিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলেন। পৌল কোন ধরনের গুটানো পুস্তক ও চর্মপুস্তকের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন? কী তাকে এই বিষয়টা বলার জন্য পরিচালিত করেছিল? এ ছাড়া, তার এই অনুরোধ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে, যখন পৌল ওই কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন ইব্রীয় শাস্ত্রের ৩৯টি পুস্তককে হয় ২২টি নতুবা ২৪টি পুস্তকে বিভক্ত করা হয়েছিল, যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সম্ভবত আলাদা আলাদা গুটানো পুস্তকের আকারে ছিল। অধ্যাপক অ্যালেন মিলার্ড বলেছেন যে, এই গুটানো পুস্তকগুলো যদিও অনেক দামি ছিল কিন্তু “মোটামুটি ধনী লোকেদের নাগালের বাইরে ছিল না।” কারো কারো কাছে সেগুলোর মধ্যে অন্ততপক্ষে একটা পুস্তক ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ইথিওপীয় নপুংসকের রথে একটা গুটানো পুস্তক ছিল আর তিনি “যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পাঠ” করছিলেন। তিনি “ইথিয়পীয়দের কান্দাকি রাণীর অধীন উচ্চপদস্থ” একজন ব্যক্তি ছিলেন, “যিনি রাণীর সমস্ত ধনকোষের অধ্যক্ষ।” তিনি নিশ্চয়ই নিজের কাছে শাস্ত্রের কিছু অংশ রাখার মতো যথেষ্ট ধনী ছিলেন।—প্রেরিত ৮:২৭, ২৮.

তীমথিয়ের কাছে অনুরোধ করার সময় পৌল লিখেছিলেন: “ত্রোয়াতে কার্পের কাছে যে শালখানি রাখিয়া আসিয়াছি, তুমি আসিবার সময়ে সেখানি এবং পুস্তকগুলি [“গুটিয়ে-রাখা বইগুলো,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি, সঙ্গে করিয়া আনিও।” (২ তীম. ৪:১৩) এটা ইঙ্গিত করে যে, পৌলের নিজের বেশ কিছু সংখ্যক পুস্তক ছিল। তার গ্রন্থাগারে ঈশ্বরের বাক্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্য আর কোন পুস্তকই-বা থাকতে পারে? এই পদের “চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি” শব্দগুলো সম্বন্ধে বাইবেল পণ্ডিত এ. টি. রবার্টসন মন্তব্য করেছিলেন: “বিশেষ করে এগুলো সম্ভবত চর্মপুস্তকের ওপর করা পুরাতন নিয়ম-এর বইগুলোর অনুলিপি আর চর্মপুস্তকগুলো প্যাপিরাসের চেয়ে আরও দামি ছিল।” অল্পবয়স থেকে পৌল “গমলীয়েলের চরণে মানুষ” হয়েছিলেন, যিনি তাকে মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন আর যাকে সমস্ত লোকেরা শ্রদ্ধা করত। তাই, এটা যুক্তিসংগত যে, ব্যক্তিগতভাবে পৌলের কাছে ঈশ্বরের বাক্যের গুটানো পুস্তকের কয়েকটা অনুলিপি ছিল।—প্রেরিত ৫:৩৪; ২২:৩.

খ্রিস্টানরা যেভাবে গুটানো পুস্তক ব্যবহার করেছিল

কিন্তু, অধিকাংশ লোকের কাছে পবিত্র শাস্ত্রের গুটানো পুস্তকগুলো ছিল না। তাহলে, কীভাবে সেই সময়ের অধিকাংশ খ্রিস্টান ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে জানতে পারত? তীমথিয়ের কাছে পৌলের আগের চিঠি আমাদেরকে এই বিষয়ে ধারণা দেয়। তিনি লিখেছিলেন: “আমি যত দিন না আসি, তুমি পাঠ করিতে [‘শাস্ত্র থেকে পড়ে শোনানোর কাজে,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] . . . নিবিষ্ট থাক।” (১ তীম. ৪:১৩) জনসমক্ষে পড়ে শোনানোর বিষয়টা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সভার কার্যক্রমের একটা অংশ ছিল, যা মোশির সময় থেকেই ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে পরম্পরাগত অভ্যাস ছিল।—প্রেরিত ১৩:১৫; ১৫:২১; ২ করি. ৩:১৫.

একজন প্রাচীন হিসেবে তীমিথিয়কে জোরে জোরে পড়ে শোনানোর কাজে ‘নিবিষ্ট থাকিতে’ হয়েছিল, যা সেই ব্যক্তিদের উপকৃত করত যাদের কাছে শাস্ত্রের নিজস্ব অনুলিপি ছিল না। নিশ্চিতভাবেই, জনসমক্ষে ঈশ্বরের বাক্য পড়ে শোনানোর সময় সকলেই গভীর মনোযোগ সহকারে শুনত, যেন একটা শব্দও বাদ না পড়ে এবং বাবা-মায়েরা ও সন্তানেরা নিশ্চয়ই ঘরে গিয়ে সভাতে যা পড়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করত।

যিশাইয় পুস্তকের সুপরিচিত ডেড সী স্ক্রোল প্রায় ২৪ ফুট (৭.৩ মিটার) দীর্ঘ। উভয় প্রান্তে একটা করে দণ্ড এবং সুরক্ষার জন্য প্রায়ই কোনো আবরক থাকায় একটা গুটানো পুস্তক ভারী হতো। আর খুব সম্ভবত অধিকাংশ খ্রিস্টান অনেকগুলো গুটানো পুস্তক প্রচারে নিয়ে যেতে পারত না। এমনকী পৌলের যদি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য শাস্ত্রের কিছু গুটানো পুস্তক থেকেও থাকে, তাহলে তিনি সম্ভবত যাত্রার সময় নিজস্ব সমস্ত গুটানো পুস্তক সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেননি। স্পষ্টতই তিনি ত্রোয়াতে তার বন্ধু কার্পের কাছে কিছু পুস্তক রেখে গিয়েছিলেন।

পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

অনুরোধ করার ঠিক আগে, পৌল যখন দ্বিতীয় বারের মতো রোমে কারারুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন, তখন তিনি লিখেছিলেন: “আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, . . . এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে।” (২ তীম. ৪:৭, ৮) তিনি সম্ভবত সা.কা. প্রায় ৬৫ সালে নিরোর কাছ থেকে আসা তাড়নার সময় ওই কথাগুলো লিখেছিলেন। এবারের কারারুদ্ধতা আরও কঠোর ছিল। আসলে, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার প্রাণদণ্ডের সময় উপস্থিত হয়েছিল। (২ তীম. ১:১৬; ৪:৬) তাই এটা বোধগম্য যে, পৌল সেই গুটানো পুস্তকগুলো নিজের কাছে পাওয়ার বিষয়ে তার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও তার এই আস্থা ছিল যে, তিনি নিরূপিত পথের শেষ পর্যন্ত উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করেছেন, কিন্তু তার পরও তিনি ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে নিজেকে ক্রমাগত শক্তিশালী করার ব্যাপারে আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন।

তীমথিয় সম্ভবত সেইসময়ও ইফিষে ছিলেন, যখন পৌল তার কাছে অনুরোধ করেছিলেন। (১ তীম. ১:৩) ইফিষ থেকে ত্রোয়া হয়ে রোম পর্যন্ত মোটামুটি ১,৬০০ কিলোমিটার (১,০০০ মাইল) পথ। সেই একই চিঠিতে পৌল তীমথিয়কে এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি শীতকালের পূর্ব্বে আসিতে যত্ন করিও।” (২ তীম. ৪:২১) পৌলের কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে রোমে পৌঁছানোর জন্য তীমথিয় একটা জাহাজ খুঁজে পেয়েছিলেন কি না, সেই সম্বন্ধে বাইবেল কিছু জানায় না।

“গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি” সম্বন্ধে পৌলের করা অনুরোধ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? তিনি তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন এই সময়েও ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা বজায় রেখেছিলেন। তিনি যে আধ্যাত্মিকভাবে সতেজ ও সক্রিয় ছিলেন এবং অনেকের কাছে উৎসাহের উৎস ছিলেন, সেই ক্ষেত্রে আপনি কি এটাকেই এক চাবিকাঠি বলে মনে করেন না?

বর্তমানে, আমাদের কাছে যদি সম্পূর্ণ বাইবেলের একটি ব্যক্তিগত কপি থেকে থাকে, তাহলে আমরা কতই না আনন্দিত! আমাদের মধ্যে কারো কারো কাছে এমনকী বাইবেলের কয়েকটি কপি ও সংস্করণ রয়েছে। পৌলের মতো, আমাদেরও শাস্ত্র সম্বন্ধে গভীর বোধগম্যতা লাভ করার জন্য উৎসুক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে। পৌলকে যে-চোদ্দোটি অনুপ্রাণিত পত্র লেখার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে শেষ পত্র ছিল তীমথিয়ের কাছে লেখা দ্বিতীয় পত্র। পৌলের ব্যক্তিগত অনুরোধ এই পত্রের শেষ দিকে লক্ষ করা যায়। আসলে, ‘গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি, সঙ্গে করিয়া আনিবার’ জন্য তীমথিয়ের কাছে করা পৌলের মিনতি ছিল তার লিপিবদ্ধ শেষ ইচ্ছাগুলোর মধ্যে একটা।

আপনিও কি নিরূপিত পথের শেষ পর্যন্ত উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী, যেমনটা পৌল করেছিলেন? আপনি কি আধ্যাত্মিকভাবে সক্রিয় থাকতে এবং প্রভু যতদিন পর্যন্ত চান, ততদিন পর্যন্ত প্রচার কাজে রত থাকার জন্য প্রস্তুত থাকতে চান? তাহলে পৌল খ্রিস্টানদের যা করতে উৎসাহিত করেছিলেন, তা-ই করুন না কেন? উৎসুক মনোভাব নিয়ে ও নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে ‘নিজের বিষয়ে ও নিজের শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হোন, এ সকলে স্থির থাকুন,’ যে-বাইবেল এখন গুটানো পুস্তকের চেয়ে আরও সুবিধাজনক আকারে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি লোকের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য।—১ তীম. ৪:১৬.

[১৮, ১৯ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ইফিষ

ত্রোয়া

রোম