সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন, তাঁহাদিগকে সম্মান করিও’

‘যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন, তাঁহাদিগকে সম্মান করিও’

‘যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন, তাঁহাদিগকে সম্মান করিও’

“যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন ও প্রভুতে তোমাদের উপরে নিযুক্ত আছেন [“তোমাদের পরিচালনা করেন,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], এবং তোমাদিগকে চেতনা দেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও [“সম্মান কোরো,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]।”—১ থিষল. ৫:১২.

১, ২. (ক) পৌল যখন থিষলনীকীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে প্রথম চিঠি লিখেছিলেন, তখন সেই মণ্ডলীর অবস্থা কেমন ছিল? (খ) পৌল থিষলনীকীয়দেরকে কী করতে উৎসাহিত করেছিলেন?

 নিজেকে প্রথম শতাব্দীর থিষলনীকীয় মণ্ডলীর একজন সদস্য হিসেবে কল্পনা করুন, যেটা ইউরোপে প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল এমন মণ্ডলীগুলোর মধ্যে একটা। প্রেরিত পৌল সেখানকার ভাইবোনদের গেঁথে তোলার জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছিলেন। তিনি হয়তো নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রাচীনবর্গকে নিযুক্ত করেছিলেন, ঠিক যেমনটা অন্যান্য মণ্ডলীর ক্ষেত্রে করেছিলেন। (প্রেরিত ১৪:২৩) কিন্তু, মণ্ডলী গঠিত হওয়ার পর, যিহুদিরা পৌল ও সীলকে নগর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে জড়ো করেছিল। যে-খ্রিস্টানরা রয়ে গিয়েছিল, তারা হয়তো নিজেদের অসহায় মনে করেছিল, এমনকী হয়তো ভয়ও পেয়ে গিয়েছিল।

থিষলনীকী থেকে চলে যাওয়ার পর, পৌল স্বভাবতই সেই নবগঠিত মণ্ডলী সম্বন্ধে চিন্তিত ছিলেন। তিনি সেখানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু “শয়তান” তার পথে “বাধা” দিয়েছিল। তাই, তিনি সেই মণ্ডলীকে উৎসাহিত করার জন্য তীমথিয়কে পাঠিয়েছিলেন। (১ থিষল. ২:১৮; ৩:২) তীমথিয় যখন ভালো সংবাদ নিয়ে ফিরে এসেছিলেন, তখন পৌল থিষলনীকীয়দের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে পৌল তাদেরকে উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা ‘যাঁহারা তাহাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন, তাঁহাদিগকে সম্মান করে।’—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১২-১৪.

৩. প্রাচীনবর্গকে অতিশয় সমাদর করার কোন কোন কারণ থিষলনীকীয়ের খ্রিস্টানদের ছিল?

যে-ভাইয়েরা থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তারা পৌল ও তার ভ্রমণ সঙ্গীদের মতো এত অভিজ্ঞ ছিল না; কিংবা তারা যিরূশালেমের প্রাচীনদের মতো আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল না। কারণ সেই মণ্ডলী স্থাপিত হওয়ার পর এক বছরও পার হয়নি! তা সত্ত্বেও, মণ্ডলীর সদস্যদের সেই প্রাচীনবর্গের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ ছিল, যারা “পরিশ্রম” করছিল এবং মণ্ডলীর ‘পরিচালনা করছিল’ ও সেইসঙ্গে ভাইবোনদেরকে “চেতনা” দিচ্ছিল। সত্যিই, ‘প্রাচীনদেরকে প্রেমে অতিশয় সমাদর করিবার’ উত্তম কারণ তাদের ছিল। এই অনুরোধ জানানোর পর পৌল এই পরামর্শ দিয়েছিলেন, “আপনাদের মধ্যে ঐক্য রাখ।” আপনি যদি থিষলনীকীর সেই মণ্ডলীতে থাকতেন, তাহলে আপনি কি প্রাচীনদের কাজের জন্য গভীর উপলব্ধি দেখাতেন? আপনি সেই ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষদেরকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন, যাদেরকে ঈশ্বর খ্রিস্টের মাধ্যমে আপনার মণ্ডলীতে জুগিয়েছেন?—ইফি. ৪:৮.

“পরিশ্রম করেন”

৪, ৫. পৌলের দিনের প্রাচীনবর্গের জন্য মণ্ডলীকে শিক্ষাদান করা কেন কঠিন কাজ ছিল আর বর্তমানেও কেন তা কঠিন?

পৌল ও সীলকে বিরয়াতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর, থিষলনীকীর প্রাচীনবর্গ কীভাবে ‘পরিশ্রম করিতেছিলেন’? পৌলকে অনুকরণ করে তারা নিঃসন্দেহে শাস্ত্র ব্যবহার করে মণ্ডলীকে শিক্ষা দিয়েছিল। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘থিষলনীকীয় খ্রিস্টানদের কি ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি উপলব্ধি ছিল? কারণ বাইবেল বলে যে, বিরয়ার লোকেরা ‘থিষলনীকীর যিহূদীদের অপেক্ষা ভদ্র ছিল; . . . প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিতেছিল।’ (প্রেরিত ১৭:১১) কিন্তু, এই তুলনাটা ছিল থিষলনীকীর সাধারণ যিহুদিদের সঙ্গে, খ্রিস্টানদের সঙ্গে নয়। যারা বিশ্বাসী হয়েছিল, তারা ‘মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিল।’ (১ থিষল. ২:১৩) সেই ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট করার জন্য প্রাচীনবর্গ নিশ্চয়ই পরিশ্রম করেছিল।

বর্তমানে, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী ঈশ্বরের পালকে “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” জোগায়। (মথি ২৪:৪৫) সেই দাসের নির্দেশনাধীনে স্থানীয় প্রাচীনরা তাদের ভাইবোনদের আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্ট করার জন্য পরিশ্রম করে। মণ্ডলীর সদস্যদের কাছে হয়তো প্রচুর বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি রয়েছে এবং কিছু ভাষায় এইরকম বিভিন্ন হাতিয়ার যেমন, ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স ও সিডি-রমে ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি পাওয়া যায়। মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য প্রাচীনরা সভার বিভিন্ন অংশ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে থাকে, যাতে তারা নির্ধারিত তথ্য এক কার্যকারী উপায়ে তুলে ধরতে পারে। প্রাচীনরা সভা ও সম্মেলনগুলোতে তাদের বিভিন্ন অংশ প্রস্তুত করার জন্য কতটা সময় ব্যয় করে থাকে, তা কি আপনি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন?

৬, ৭. (ক) থিষলনীকীয়ের প্রাচীনবর্গ পৌলের কোন উদাহরণের কথা মনে রেখেছিল? (খ) বর্তমানে পৌলকে অনুকরণ করা প্রাচীনদের জন্য কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে?

থিষলনীকীর প্রাচীনবর্গ পালকে পালন করার ব্যাপারে পৌলের স্থাপিত চমৎকার উদাহরণ সম্বন্ধে স্মরণ করেছিল। এটা গতানুগতিকভাবে অথবা নিছক কর্তব্যের খাতিরে সাক্ষাৎ করার মতো কোনো বিষয় ছিল না। আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে যে, পৌল ‘যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি কোমল ভাব দেখাইয়াছিলেন।’ (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ২:৭, ৮.) তিনি এমনকী ‘নিজ প্রাণও দিতে’ ইচ্ছুক ছিলেন! পালনের কাজ করার সময় প্রাচীনবর্গকেও তার মতো হতে হয়েছিল।

বর্তমানে খ্রিস্টান পালকরাও পালকে লালনপালন করার বা ভালোভাবে যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে পৌলকে অনুকরণ করে। কিছু মেষ হয়তো স্বভাবতই সদয় ও বন্ধুত্বপরায়ণ নয়। তা সত্ত্বেও, প্রাচীনরা তাদের প্রতি মনোযোগ প্রদর্শন করার এবং তাদের মধ্যে ‘মঙ্গল পাইবার’ বা ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করে। (হিতো ১৬:২০) এটা ঠিক যে, অসিদ্ধ হওয়ায় একজন প্রাচীনকে প্রত্যেক ব্যক্তি সম্বন্ধে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করতে হয়। তার পরও, তিনি যখন সকলের প্রতি কোমল হতে যথাসাধ্য করার চেষ্টা করেন, তখন খ্রিস্টের অধীনে একজন উত্তম মেষপালক হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছেন বলে তিনি কি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নন?

৮, ৯. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে বর্তমান দিনের প্রাচীনরা ‘আমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করে’?

আমাদের প্রত্যেকের প্রাচীনদের প্রতি ‘বশীভূত হইবার’ কারণ রয়েছে। পৌল যেমনটা লিখেছিলেন, ‘তাঁহারা আমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন।’ (ইব্রীয় ১৩:১৭) এই অভিব্যক্তি আমাদেরকে একজন মেষপালকের কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি তার পালকে সুরক্ষা করার জন্য নিদ্রা পরিহার করেন। একইভাবে, বর্তমানে প্রাচীনদের হয়তো সেই ব্যক্তিদের প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য কিছুটা নিদ্রা বিসর্জন দিতে হয়, যাদের দুর্বল স্বাস্থ্য অথবা আবেগগত বা আধ্যাত্মিক সমস্যা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হসপিটাল লিয়েইজন কমিটি-র ভাইয়েরা চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা দেখা দিয়েছে এমন সময়েও কাজ করার জন্য নিদ্রা থেকে উঠে এসেছিল। তাই, আমরা যখন এইরকম এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, তখন তাদের সেবার জন্য আমরা কতই না উপলব্ধি দেখাই!

স্থানীয় নির্মাণ কমিটি ও ত্রাণ কমিটির প্রাচীনরা ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্য পরিশ্রম করে থাকে। তারা আমাদের সর্বান্তঃকরণ সমর্থন লাভ করার যোগ্য! ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস মিয়ানমারে আঘাত হানার পর, যে-ত্রাণ কাজ করা হয়েছিল, সেই বিষয়ে বিবেচনা করুন। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ইরাবতি ব-দ্বীপের বোদিংগোন মণ্ডলীতে পৌঁছানোর জন্য ত্রাণকর্মীদের একটা দল মৃতদেহ ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা বিধ্বস্ত এলাকাগুলোর মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিল। স্থানীয় ভাইবোনেরা যখন প্রথম ত্রাণ দলকে, যে-দলের মধ্যে তাদের প্রাক্তন সীমা অধ্যক্ষ ছিলেন, বোদিংগোনে পৌঁছাতে দেখেছিল, তখন তারা চিৎকার করে বলেছিল: “দেখো, দেখো! আমাদের সীমা অধ্যক্ষ এসেছেন! যিহোবা আমাদের রক্ষা করেছেন!” প্রাচীনরা রাত-দিন যে-পরিশ্রম করে থাকে, সেটাকে কি আপনি উপলব্ধি করেন? কিছু প্রাচীন বিশেষ কমিটিতে সেবা করার জন্য নিযুক্ত হয়ে থাকেন, যাতে তারা গুরুতর বিচার সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর তত্ত্বাবধান করতে পারে। এই প্রাচীনরা, তারা যা সম্পাদন করেছেন, সেই বিষয়ে বড়াই করে কথা বলে না; কিন্তু যারা তাদের সেবা থেকে উপকৃত হয়, তারা সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকে।—মথি ৬:২-৪.

১০. প্রাচীনরা এমন কোন কাজগুলো করে থাকে, যেগুলো সম্বন্ধে খুব কমই জানা যায়?

১০ বর্তমানেও অনেক প্রাচীনকে লেখালেখির কাজ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর সাপ্তাহিক সভাগুলোর জন্য তালিকা প্রস্তুত করে থাকেন। মণ্ডলীর সচিব ক্ষেত্রের পরিচর্যার মাসিক ও বাৎসরিক রিপোর্টগুলো সংগ্রহ করে লিখে রাখেন। বিদ্যালয় অধ্যক্ষ স্কুলের তালিকার প্রতি সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ রাখেন। তিন মাস পর পর মণ্ডলীর হিসাবের নথিগুলো অডিট করা হয়। প্রাচীনরা শাখা অফিসের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন চিঠি পড়ে নির্দেশনা কাজে লাগিয়ে থাকে, যা ‘বিশ্বাসের ঐক্য’ বজায় রাখতে সাহায্য করে। (ইফি. ৪:৩, ১৩) এইরকম পরিশ্রমী প্রাচীনদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে “সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা” হয়ে থাকে।—১ করি. ১৪:৪০.

“পরিচালনা করেন”

১১, ১২. কারা মণ্ডলী পরিচালনা করে এবং তা করার সঙ্গে কী জড়িত?

১১ পৌল থিষলনীকীর পরিশ্রমী প্রাচীনবর্গ সম্বন্ধে এভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে, তারা মণ্ডলী ‘পরিচালনা করিতেছেন।’ মূল ভাষায় শব্দটির অর্থ হল “সামনে দাঁড়ানো” এবং এটিকে “নির্দেশনা দেওয়া; অন্যদের মধ্যে নেতৃত্ব নেওয়া” হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে। (১ থিষল. ৫:১২, পাদটীকা, NW) পৌল এই একই প্রাচীনদের সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, তারা ‘পরিশ্রম করিতেছেন।’ তিনি মণ্ডলীর পুরো প্রাচীনবর্গ সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। বর্তমানে, অধিকাংশ প্রাচীন মণ্ডলীর সামনে দাঁড়ায় এবং সভাগুলো পরিচালনা করে। “প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর” আখ্যাটি ব্যবহার করার জন্য সম্প্রতি যে-রদবদল করা হয়েছে, তা আমাদেরকে সমস্ত প্রাচীনকে একতাবদ্ধ এক গোষ্ঠী হিসেবে দেখতে সাহায্য করে।

১২ মণ্ডলী ‘পরিচালনা করিবার’ সঙ্গে কেবল শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। ১ তীমথিয় ৩:৪ পদেও একইরকম অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। পৌল বলেছিলেন যে, একজন অধ্যক্ষের এমন ব্যক্তি হওয়া উচিত, যিনি “আপন ঘরের শাসন [“পরিচালনা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] উত্তমরূপে করেন, এবং সম্পূর্ণ ধীরতা সহকারে সন্তানগণকে বশে রাখেন।” এখানে ‘পরিচালনা করা’ অভিব্যক্তিটির সঙ্গে স্পষ্টতই সন্তানদের কেবল শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পরিবারে নেতৃত্ব দেওয়ার এবং ‘সন্তানগণকে বশে রাখিবার’ বিষয়টা জড়িত। হ্যাঁ, প্রাচীনরা সকলকে যিহোবার প্রতি বশীভূত থাকতে সাহায্য করার মাধ্যমে মণ্ডলীতে নেতৃত্ব দেয়।—১ তীম. ৩:৫.

১৩. কেন প্রাচীনদের সভায় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন হতে পারে?

১৩ পালকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য, প্রাচীনরা মণ্ডলীর প্রয়োজনগুলো নিয়ে ও সেইসঙ্গে কীভাবে সর্বোত্তম উপায়ে মণ্ডলীকে সাহায্য করা যায়, সেই বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে থাকে। যদি একজন প্রাচীন সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে তা হয়তো আরও বেশি কার্যকারী হতে পারে। তা সত্ত্বেও, প্রথম শতাব্দীর পরিচালক গোষ্ঠীর উদাহরণ অনুসরণ করে আধুনিক দিনের প্রাচীনরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করে থাকে, শাস্ত্র থেকে নির্দেশনা খুঁজে থাকে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, স্থানীয় মণ্ডলীর প্রয়োজনগুলোর ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় নীতিগুলো কাজে লাগানো। এটা সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকারী হয়, যখন প্রত্যেক প্রাচীন শাস্ত্র এবং বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা বিবেচনা করে প্রাচীনদের সভার জন্য প্রস্তুতি নেন। অবশ্য এর জন্য সময় প্রয়োজন। যখন মতপার্থক্য দেখা দেয়, যেমনটা প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠী ত্বক্‌চ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার সময় দেখা দিয়েছিল, তখন শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে কোনো ঐক্যমতে পৌঁছানোর জন্য বাড়তি সময় এবং গবেষণা করা প্রয়োজন হতে পারে।—প্রেরিত ১৫:২, ৬, ৭, ১২-১৪, ২৮.

১৪. প্রাচীনরা যে ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে কাজ করে থাকে, সেই বিষয়টাকে কি আপনি উপলব্ধি করেন? কেন আপনি এইরকম মনে করেন?

১৪ কিন্তু, যদি কোনো প্রাচীন তার উপায়টা অবলম্বন করার জন্য জোরাজুরি করেন অথবা নিজস্ব ধারণাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তাহলে? কিংবা যদি কেউ—প্রথম শতাব্দীর দিয়ত্রিফির মতো—অনৈক্যের বীজ বপন করার চেষ্টা করেন, তাহলে? (৩ যোহন ৯, ১০) নিশ্চিতভাবেই পুরো মণ্ডলী তখন সমস্যা ভোগ করে থাকে। শয়তান যদি প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীতে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সে এখনও মণ্ডলীগুলোর শান্তিকে বিঘ্নিত করতে চায়। সে হয়তো বিভিন্ন স্বার্থপর মানব প্রবণতাকে যেমন, বিশিষ্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে উসকে দিতে পারে। তাই, প্রাচীনদের নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে এবং একটা গোষ্ঠী হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা সেই প্রাচীনদের প্রদর্শিত নম্রতাকে কতই না উপলব্ধি করি, যারা একটা গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করে থাকে!

‘আপনাদেরকে চেতনা দেন’

১৫. কোনো ভাই অথবা বোনকে চেতনা দেওয়ার সময় প্রাচীনদের কী উদ্দেশ্য থাকে?

১৫ পৌল এরপর প্রাচীনবর্গের একটা কঠিন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন আর তা হল পালকে চেতনা দেওয়া। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এ শুধুমাত্র পৌলই “চেতনা” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যদিও এই শব্দটি জোরালো পরামর্শকে বোঝাতে পারে কিন্তু এটি শত্রুতাকে ইঙ্গিত করে না। (প্রেরিত ২০:৩১; ২ থিষল. ৩:১৫) উদাহরণস্বরূপ, পৌল করিন্থীয়দের উদ্দেশে এই কথা লিখেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে লজ্জা দিবার জন্য নয়, কিন্তু আমার প্রিয় বৎস বলিয়া তোমাদিগকে চেতনা দিবার জন্য এই সকল লিখিতেছি।” (১ করি. ৪:১৪) চেতনা দেওয়ার পিছনে তার যে-উদ্দেশ্য ছিল, তা হল অন্যদের জন্য প্রেমময় চিন্তা।

১৬. অন্যদের চেতনা দেওয়ার সময় প্রাচীনদের কোন বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

১৬ প্রাচীনরা যে-উপায়ে অন্যদের চেতনা দিয়ে থাকে, সেটার গুরুত্ব সম্বন্ধে মনে রাখে। তারা সদয়, প্রেমময় ও সাহায্যকারী হওয়ার দ্বারা পৌলকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করে। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ২:১১, ১২.) প্রাচীনরা অবশ্যই ‘শিক্ষানুরূপ বিশ্বসনীয় বাক্য ধরিয়া থাকেন, এই প্রকারে যেন তাহারা নিরাময় শিক্ষাতে উপদেশ দিতে সমর্থ হন।’—তীত ১:৫-৯.

১৭, ১৮. আপনি যদি কোনো প্রাচীনের কাছ থেকে চেতনা লাভ করেন, তাহলে আপনার কী মনে রাখা উচিত?

১৭ অবশ্য, প্রাচীনরা অসিদ্ধ এবং তারা হয়তো এমন বিষয় বলতে পারে, যেটার জন্য পরে তারা আপশোস করে। (১ রাজা. ৮:৪৬; যাকোব ৩:৮) এ ছাড়া, প্রাচীনরা জানে যে, আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের কাছে পরামর্শ লাভ করার বিষয়টাকে সাধারণত “আনন্দের বিষয় বোধ হয় না, কিন্তু দুঃখের বিষয় বোধ হয়।” (ইব্রীয় ১২:১১) তাই, একজন প্রাচীন যখন কারো কাছে চেতনার বাক্য বলার জন্য যান, তখন সেই প্রাচীন সম্ভবত বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট সময় ধরে বিবেচনা ও প্রার্থনা করার পরই, তার কাছে যান। যদি আপনাকেই চেতনা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কি সেই প্রাচীনের প্রেমময় চিন্তাকে উপলব্ধি করেন?

১৮ ধরুন, আপনার এমন কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল, যেটাকে চিকিৎসাগত দিক দিয়ে ব্যাখ্যাতীত বলে মনে হয়েছিল। এরপর, যদিও একজন ডাক্তার সঠিকভাবে সমস্যাটা শনাক্ত করেছিলেন কিন্তু রোগনির্ণয় করে যা ধরা পড়েছিল, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন হয়েছিল। আপনি কি সেই ডাক্তারের প্রতি অসন্তোষ পুষে রেখেছিলেন? না! তিনি যদি এমনকী অস্ত্রোপচার করার জন্যও সুপারিশ করে থাকেন, তবুও আপনি সম্ভবত এই বিশ্বাস রেখে সেই চিকিৎসাপদ্ধতির সঙ্গে একমত হয়েছিলেন যে, সেটা আপনার উপকারের জন্যই করা হবে। সেই ডাক্তার যে-উপায়ে তথ্য তুলে ধরেছিলেন, তা যদিও হয়তো আপনার অনুভূতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু আপনি কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেই নেতিবাচক প্রভাবকে সুযোগ দিয়েছিলেন? সম্ভবত না। একইভাবে, আপনাকে যে-উপায়ে চেতনা দেওয়া হয়েছে, সেটা যেন সেই ব্যক্তিদের কথা শোনা থেকে আপনাকে বিরত না করে, যাদেরকে যিহোবা ও যিশু ব্যবহার করছেন, যাতে তারা আপনাকে জানাতে পারে যে, কীভাবে আপনি নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষা করতে পারেন।

যিহোবা প্রদত্ত প্রাচীনদের ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করুন

১৯, ২০. কীভাবে আপনি ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষদের জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারেন?

১৯ আপনি যদি এমন কোনো উপহার লাভ করেন, যেটা বিশেষভাবে আপনার কথা মনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে, তাহলে আপনি কী করবেন? আপনি কি সেটা ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার উপলব্ধি প্রকাশ করবেন? ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষরা হল ঠিক তা-ই, যা যিহোবা যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে আপনার জন্যই জুগিয়েছেন। একটা যে-উপায়ে আপনি এই উপহারের জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারেন তা হল, প্রাচীনদের দ্বারা উপস্থাপিত বক্তৃতাগুলো গভীর মনোযোগ সহকারে শোনার ও তারা যে-বিষয়গুলো তুলে ধরে সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করার মাধ্যমে। এ ছাড়া, আপনি সভাগুলোতে অর্থপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমেও আপনার উপলব্ধি দেখাতে পারেন। সেই কাজে সমর্থন করুন, যে-কাজে প্রাচীনরা নেতৃত্ব দিচ্ছে যেমন, ক্ষেত্রের পরিচর্যা। কোনো প্রাচীনের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ শুনে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে সেই বিষয়টা বলুন না কেন? তা ছাড়া, প্রাচীনদের পরিবারের প্রতি আপনার উপলব্ধি দেখান না কেন? মনে রাখবেন যে, একজন প্রাচীন যাতে মণ্ডলীতে কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন, সেইজন্য তার পরিবার তার সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয়টাকে বিসর্জন দিচ্ছে।

২০ হ্যাঁ, আমাদের সেই প্রাচীনদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যারা আমাদের মধ্যে পরিশ্রম করছে, আমাদের পরিচালনা করছে এবং আমাদের চেতনা দিচ্ছে। ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা এই দানরূপ মানুষরা সত্যিই যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত এক প্রেমময় ব্যবস্থা!

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• থিষলনীকীয় খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তাদের প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করার কোন কোন কারণ ছিল?

• কীভাবে মণ্ডলীর প্রাচীনরা আপনার জন্য পরিশ্রম করে থাকে?

• প্রাচীনরা যে আপনাকে পরিচালনা দিচ্ছে, সেটা থেকে আপনি কীভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন?

• আপনি যদি কোনো প্রাচীনের কাছ থেকে চেতনা লাভ করে থাকেন, তাহলে আপনার কী মনে রাখা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রাচীনরা যে-বিভিন্ন উপায়ে মণ্ডলীকে পালন করে থাকে, সেগুলোকে কি আপনি উপলব্ধি করেন?