সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবার সুস্পষ্ট সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেবেন?

আপনি কি যিহোবার সুস্পষ্ট সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেবেন?

আপনি কি যিহোবার সুস্পষ্ট সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেবেন?

“এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।”—যিশা. ৩০:২১.

১, ২. শয়তান কী করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে এবং ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?

 ভুল পথের দিকে নির্দেশ করছে এমন এক পথ নির্দেশক সংকেতচিহ্ন কেবল বিভ্রান্তিকর নয়; এটা বিপদজনকও হতে পারে। মনে করুন, আপনার কোনো বন্ধু আপনাকে সাবধান করেছে যে, একজন মন্দ লোক অসাবধান ভ্রমণকারীদের ক্ষতি করার জন্য ইচ্ছে করে কোনো পথ নির্দেশককে পরিবর্তন করে রেখেছে। আপনি কি সেই সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেবেন না?

নিশ্চিতভাবেই, শয়তান হল এক মন্দ শত্রু, যে আমাদেরকে ভুল নির্দেশনা দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। (প্রকা. ১২:৯) আগের প্রবন্ধে আলোচিত সমস্ত মন্দ প্রভাব তার কাছ থেকেই এসেছে এবং সেগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদেরকে সেই পথ পরিবর্তন করার জন্য পরিচালিত করা, যা অনন্তজীবনের দিকে নিয়ে যায়। (মথি ৭:১৩, ১৪) তবে, আনন্দের বিষয়টা হল, আমাদের সদয় ঈশ্বর আমাদেরকে শয়তানের বিভ্রান্তিকর ‘পথ নির্দেশক সংকেতচিহ্নগুলো’ অনুসরণ না করার জন্য সাবধান করেন। আসুন আমরা এখন শয়তানের আরও তিনটে নেতিবাচক প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা করি। ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়া এড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে, তা বিবেচনা করার সময় আমরা হয়তো এমনটা কল্পনা করে নিতে পারি যে, যিহোবা আমাদের পিছন পিছন হাঁটছেন এবং আমাদেরকে এই বলে সঠিক পথের দিকে নির্দেশনা দিচ্ছেন: “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশা. ৩০:২১) যিহোবার সুস্পষ্ট সাবধানবাণীগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদেরকে সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করবে।

‘ভাক্ত গুরুদের’ অনুসরণ করবেন না

৩, ৪. (ক) কীভাবে মিথ্যা শিক্ষকরা শুকিয়ে যাওয়া কুয়োর মতো? (খ) প্রায়ই কোথা থেকে মিথ্যা শিক্ষকদের উৎপত্তি হয় আর তারা কী চায়?

কল্পনা করুন যে, আপনি এক শুষ্ক অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করছেন। আপনি দূরে একটা কুয়ো দেখতে পান এবং আপনার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য কিছুটা জল পাওয়ার আশা নিয়ে সেটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু, সেখানে পৌঁছানোর পর আপনি দেখতে পান যে, কুয়োটা শুকনো। আপনি কতই না হতাশ হন! মিথ্যা শিক্ষকরা হচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া কুয়োর মতো। তাদের কাছে সত্যের জল লাভ করার জন্য আসা যেকোনো ব্যক্তি অত্যন্ত হতাশ হবে। যিহোবা প্রেরিত পৌল ও পিতরের মাধ্যমে আমাদেরকে মিথ্যা শিক্ষকদের সম্বন্ধে সাবধান করেন। (পড়ুন, প্রেরিত ২০:২৯, ৩০; ২ পিতর ২:১-৩.) এই মিথ্যা শিক্ষকরা কারা? এই দুজন প্রেরিতের অনুপ্রাণিত বাক্য আমাদেরকে মিথ্যা শিক্ষকদের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে এবং তারা কীভাবে কাজ করে, তা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

ইফিষ মণ্ডলীর প্রাচীনদের উদ্দেশে পৌল বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া . . . বিপরীত কথা কহিবে।” সহখ্রিস্টানদের উদ্দেশে পিতর লিখেছেন: “তোমাদের মধ্যেও ভাক্ত গুরুরা উপস্থিত হইবে।” তাহলে, কোথা থেকে ভাক্ত গুরু বা মিথ্যা শিক্ষকদের উৎপত্তি হয়? মণ্ডলীর মধ্য থেকে তাদের উৎপত্তি হতে পারে। এই লোকেরা হল ধর্মভ্রষ্ট। * তারা কী চায়? তারা শুধুমাত্র সেই সংগঠনকে পরিত্যাগ করেই সন্তুষ্ট থাকে না, যে-সংগঠনকে হয়তো একসময় তারা ভালোবাসত। পৌলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লওয়া।’ “শিষ্যদিগকে” অভিব্যক্তিটি লক্ষ করুন। বাইরে গিয়ে তাদের নিজেদের শিষ্য তৈরি করার পরিবর্তে, ধর্মভ্রষ্টরা খ্রিস্টের শিষ্যদেরকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ‘গ্রাসকারী কেন্দুয়ার’ মতো মিথ্যা শিক্ষকরা মণ্ডলীর নির্ভরযোগ্য দাসদের গ্রাস করার জন্য বের হয়, তাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে সত্য থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।—মথি ৭:১৫; ২ তীম. ২:১৮.

৫. মিথ্যা শিক্ষকরা কোন পন্থাগুলো ব্যবহার করে?

মিথ্যা শিক্ষকরা কীভাবে কাজ করে? তাদের বিভিন্ন পন্থা চাতুরীপূর্ণ মনোভাবকে প্রকাশ করে। ধর্মভ্রষ্টরা বিকৃত ধারণাগুলো ‘গোপনে উপস্থিত করে।’ চোরাচালানকারীদের মতো, তারা গোপনে কাজ করে, ধূর্ততার সঙ্গে ধর্মভ্রষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিগুলো তুলে ধরে। আর ঠিক যেমন একজন জালিয়াত জাল দলিলপত্র ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তেমনই ধর্মভ্রষ্টরা তাদের মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গিগুলো সত্য বলে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় “কল্পিত বাক্য” বা মিথ্যা যুক্তি ব্যবহার করে। তারা নিজেদের ধারণাগুলো কার্যকর করার জন্য ‘প্রেমভোজ [‘বঞ্চনা,’ পাদটীকা]’ ও ‘শাস্ত্রলিপির বিরূপ অর্থ’ ছড়িয়ে দিয়েছিল। (২ পিতর ২:১, ৩, ১৩; ৩:১৬) স্পষ্টতই, ধর্মভ্রষ্টরা আমাদের মঙ্গল কামনা করে না। তাদের অনুসরণ করা আমাদেরকে কেবল সেই পথ থেকেই সরিয়ে নিয়ে যাবে, যে-পথ অনন্তজীবনের দিকে নিয়ে যায়।

৬. মিথ্যা শিক্ষকদের বিষয়ে বাইবেল আমাদের কোন সুস্পষ্ট পরামর্শ দেয়?

কীভাবে আমরা মিথ্যা শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি? তাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করতে হয়, সেই ব্যাপারে বাইবেলের পরামর্শ সুস্পষ্ট। (পড়ুন, রোমীয় ১৬:১৭; ২ যোহন ৯-১১.) “তাহাদের হইতে দূরে থাক,” ঈশ্বরের বাক্য বলে। এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে অস্পষ্ট কিছু নেই। ধরুন, একজন ডাক্তার আপনাকে এমন কারো সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলেছেন, যিনি মারাত্মক কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। আপনি জানেন যে, ডাক্তার কী বুঝিয়েছেন এবং আপনি তার সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেবেনই। একইভাবে, ধর্মভ্রষ্টরা হল “রোগগ্রস্ত” এবং তারা তাদের মিথ্যা শিক্ষাগুলোর দ্বারা অন্যদের সংক্রামিত করার চেষ্টা করে। (১ তীম. ৬:৩, ৪) মহান চিকিৎসক যিহোবা আমাদেরকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এড়িয়ে চলতে বলেছেন। যদিও আমরা জানি যে, তিনি কী বুঝিয়েছেন কিন্তু আমরা কি সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

৭, ৮. (ক) মিথ্যা শিক্ষকদের কাছ থেকে দূরে থাকার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) কেন আপনি মিথ্যা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ?

মিথ্যা শিক্ষকদের এড়িয়ে চলার সঙ্গে কী জড়িত? আমরা তাদেরকে আমাদের ঘরে গ্রহণ করব না কিংবা তাদের সম্ভাষণ জানাব না। এ ছাড়া, আমরা তাদের সাহিত্যাদি পড়া, তাদের সম্বন্ধে তুলে ধরে এমন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা, তাদের ওয়েব সাইট ঘাঁটানো অথবা তাদের ব্লগে আমাদের মতামত যুক্ত করা প্রত্যাখ্যান করি। কেন আমরা এইরকম দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করি? প্রেমের কারণে। যেহেতু আমরা ‘সত্যের ঈশ্বরকে’ ভালোবাসি, তাই আমরা এমন বিকৃত শিক্ষাগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী নই, যেগুলো তাঁর সত্য বাক্যের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। (গীত. ৩১:৫; যোহন ১৭:১৭) এ ছাড়া, আমরা যিহোবার সেই সংগঠনকে ভালোবাসি, যেটার মাধ্যমে আমাদেরকে রোমাঞ্চকর সত্যগুলো—যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত যিহোবার নাম ও এর অর্থ, পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য, মৃতদের অবস্থা এবং পুনরুত্থানের আশা—সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আপনি যখন প্রথম বার এই বিষয়ে ও অন্যান্য মূল্যবান সত্য সম্বন্ধে শিখেছিলেন, তখন আপনার কেমন লেগেছিল, সেটা কি আপনি মনে করতে পারেন? তাহলে, কেন আপনি এমন কারো দ্বারা নিজেকে কলুষিত হতে দেবেন, যিনি সেই সংগঠনের মর্যাদাহানি করেন, যেটার মাধ্যমে আপনি এই সত্যগুলো শিখেছিলেন?—যোহন ৬:৬৬-৬৯.

মিথ্যা শিক্ষকরা যা-ই বলুক না কেন, আমরা তাদের অনুসরণ করব না! কেনই-বা শুধুমাত্র প্রতারিত ও হতাশ হওয়ার জন্য এইরকম শুকিয়ে যাওয়া কুয়োর কাছে যাবেন? এর পরিবর্তে, আসুন আমরা যিহোবা ও তাঁর সেই সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যে-সংগঠনের ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য থেকে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ এবং সতেজতাদায়ক জল দ্বারা আমাদের তৃষ্ণা মেটানোর দীর্ঘ নথি রয়েছে।—যিশা. ৫৫:১-৩; মথি ২৪:৪৫-৪৭.

‘গল্পের’ অনুসরণ করবেন না

৯, ১০. পৌল ‘গল্পের’ বা মিথ্যা গল্পের বিষয়ে তীমথিয়কে কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন আর পৌল সম্ভবত কোন বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন? (পাদটীকাও দেখুন।)

কখনো কখনো, এটা হয়তো সহজেই নির্ণয় করা যেতে পারে যে, কোনো পথ নির্দেশক সংকেতচিহ্নকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তা ভুল পথকে নির্দেশ করছে। আবার অন্যান্য সময়ে, প্রতারণার বিষয়টা নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে। শয়তানের নেতিবাচক প্রভাবগুলোও একইরকম; কয়েকটা অন্যগুলোর চেয়ে আরও স্পষ্ট। প্রেরিত পৌল আমাদেরকে শয়তানের একটা ছলনাপূর্ণ কৌশল—“গল্প” বা মিথ্যা গল্প—সম্বন্ধে সাবধান করেন। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ১:৩, ৪.) আমরা যেন জীবনের দিকে নির্দেশক পথ থেকে সরে না যাই, সেইজন্য আমাদের জানতে হবে যে: মিথ্যা গল্পগুলো কী এবং কীভাবে আমরা সেগুলোতে মনোযোগ দেওয়া এড়াতে পারি?

১০ খ্রিস্টান অধ্যক্ষ তীমথিয়, যিনি মণ্ডলীর শুদ্ধতা অক্ষুণ্ণ রাখার এবং সহবিশ্বাসীদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, তার উদ্দেশে লেখা প্রথম চিঠিতে পৌল মিথ্যা গল্পগুলো সম্বন্ধে সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। (১ তীম. ১:১৮, ১৯) পৌল এমন একটি গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেন, যেটি কাল্পনিক, পৌরাণিক বা মিথ্যা কাহিনিকে নির্দেশ করে। দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, এই শব্দের অর্থ “এমন এক (ধর্মীয়) গল্প, যেটার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।” সম্ভবত পৌল এমন ধর্মীয় মিথ্যা বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, যেগুলো রোমাঞ্চকর কল্পকাহিনী বা অবাস্তব লোককাহিনি থেকে তুলে ধরা হয়েছিল। * এই ধরনের গল্পগুলো কেবল “বিতণ্ডা উপস্থিত করে”—অর্থাৎ এমন মূর্খতাপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্থাপন করে, যেগুলো কেবল অর্থহীন গবেষণার দিকে পরিচালিত করে। মিথ্যা গল্পগুলো হল প্রধান প্রতারক শয়তানের কারসাজি, যে অসর্তক লোকেদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ধর্মীয় মিথ্যা ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস নেই এমন পৌরাণিক কাহিনিগুলো ব্যবহার করে। পৌলের এই পরামর্শ স্পষ্ট: মিথ্যা গল্পগুলোতে মনোযোগ দেবেন না!

১১. কীভাবে শয়তান লোকেদের বিভ্রান্ত করার জন্য ধূর্ততার সঙ্গে মিথ্যা ধর্মকে ব্যবহার করেছে এবং কোন সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেওয়া আমাদেরকে বিভ্রান্ত হওয়া এড়াতে সাহায্য করবে?

১১ কিছু মিথ্যা গল্প কী, যেগুলো অসাবধান ব্যক্তিদের বিপথে পরিচালিত করতে পারে? মূলত, “গল্প” বা মিথ্যা গল্প অভিব্যক্তিটি এমন যেকোনো মিথ্যা বা পৌরাণিক কাহিনির প্রতি প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা আমাদের “সত্য হইতে . . . ফিরাইয়া” বা সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। (২ তীম. ৪:৩, ৪) শয়তান, যে “দীপ্তিময় দূতের” ভান করে, সে লোকেদের বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা ধর্মকে ধূর্ততার সঙ্গে ব্যবহার করে। (২ করি. ১১:১৪) খ্রিস্টধর্মের নামে খ্রিস্টীয়জগৎ বিভিন্ন মতবাদ—যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ত্রিত্ব, নরকাগ্নি ও আত্মার অমরত্ব—শিক্ষা দিয়ে থাকে আর এগুলো পৌরাণিক কাহিনি এবং মিথ্যা গল্পে পরিপূর্ণ। এ ছাড়া, খ্রিস্টীয়জগৎ এমন ছুটির দিন যেমন, বড়দিন ও ইস্টার উদ্‌যাপন করতে উৎসাহিত করেছে, যেগুলোকে অক্ষতিকর প্রথা বলে মনে হলেও আসলে সেগুলো পৌরাণিক কাহিনি এবং পৌত্তলিকতা থেকে এসেছে। নিজেদেরকে পৃথক রাখার এবং ‘অশুচি বস্তু স্পর্শ না করিবার’ ব্যাপারে ঈশ্বরের সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা মিথ্যা গল্পগুলো দ্বারা বিভ্রান্ত হব না।—২ করি. ৬:১৪-১৭.

১২, ১৩. (ক) শয়তান কোন মিথ্যাগুলো ছড়িয়ে দিয়েছে এবং সেই প্রতিটা মিথ্যা সম্বন্ধে সত্য বিষয়টা কী? (খ) কীভাবে আমরা শয়তানের মিথ্যা গল্পগুলোর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া এড়াতে পারি?

১২ শয়তান এমন অন্যান্য মিথ্যা ছড়িয়ে দিয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারে, যদি আমরা সতর্ক না থাকি। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন। সবকিছুই চলে—তা সেটা সঠিক হোক বা ভুল হোক। আপনি কী মনে করেন, সেটাই মূল কথা। প্রচার মাধ্যম ও বিনোদনজগৎ এই ধারণাকে তুলে ধরে। ঈশ্বরের মানগুলো সম্বন্ধে এই ধরনের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ওপর এমন চাপ নিয়ে আসে, যেন আমরা সমস্ত নৈতিক বাধানিষেধ বাদ দিয়ে দিই। সত্য বিষয়টা হল যে, আমাদের নৈতিক নির্দেশনা একান্ত প্রয়োজন, যা একমাত্র ঈশ্বরই দিতে পারেন। (যির. ১০:২৩) পৃথিবীর বিষয়গুলোতে ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করবেন না। শুধুমাত্র বর্তমানের জন্য বেঁচে থাকার এইরকম এক মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া আমাদেরকে “অলস কি ফলহীন” করে ফেলতে পারে। (২ পিতর ১:৮) সত্য বিষয়টা হল যে, যিহোবার দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে এবং আমাদের এর জন্য প্রত্যাশা করতে হবে। (মথি ২৪:৪৪) ঈশ্বর ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আপনার জন্য চিন্তা করেন না। শয়তানের এই মিথ্যায় বিশ্বাস করা আমাদেরকে এইরকম মনে করে হাল ছেড়ে দেওয়ার জন্য চালিত করতে পারে যে, আমরা কখনো ঈশ্বরের প্রেম লাভের যোগ্য হতে পারব না। সত্য বিষয়টা হল যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে ভালোবাসেন এবং মূল্যবান বলে গণ্য করেন।—মথি ১০:২৯-৩১.

১৩ আমাদের শয়তানের জগতের সেই চিন্তাভাবনা ও মনোভাবগুলো সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে, যেগুলোকে ওপর ওপর যুক্তিসংগত বলে মনে হয়। কিন্তু, মনে রাখবেন যে, শয়তান হচ্ছে প্রতারণার গুরু। শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শ ও অনুস্মারকগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা শয়তানের “কৌশল-কল্পিত গল্পের [“নিপুণভাবে কল্পিত রূপকথার,” বাংলা জুবিলী বাইবেল]” দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া এড়াতে পারি।—২ পিতর ১:১৬.

“শয়তানের পশ্চাৎ” অনুসরণ করবেন না

১৪. পৌল কিছু যুবতী বিধবাকে কী সাবধানবাণী দিয়েছিলেন আর কেন আমাদের সকলকে তার বাক্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে?

১৪ এমন এক পথ নির্দেশক সংকেতচিহ্ন সম্বন্ধে কল্পনা করুন, যেটাতে লেখা আছে যে, “শয়তানকে অনুসরণ করার পথ।” আমাদের মধ্যে কেই-বা এইরকম এক সংকেতচিহ্নের প্রতি মনোযোগ দেবে? তা সত্ত্বেও, পৌল আমাদের এমন কিছু পথ সম্বন্ধে সাবধান করেন, যেগুলোর দ্বারা উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানরা “শয়তানের পশ্চাৎ বিপথগামিনী” হতে পারে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:১১-১৫.) যদিও পৌলের কথাগুলো কিছু ‘যুবতী বিধবাকে’ উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে কিন্তু তার উল্লেখিত নীতিগুলো আমাদের সকলের প্রতি প্রযোজ্য। প্রথম শতাব্দীর সেই খ্রিস্টান নারীরা হয়তো চিন্তাও করেনি যে, তারা শয়তানকে অনুসরণ করছিল কিন্তু তাদের কাজ ঠিক শয়তানকে অনুসরণ করার সমরূপ ছিল। কীভাবে আমরা শয়তানকে এমনকী অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও অনুসরণ করার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে পারি? আসুন আমরা গুজব সম্বন্ধে পৌলের সাবধানবাণী পরীক্ষা করি।

১৫. শয়তানের লক্ষ্য কী আর পৌল কীভাবে শয়তানের কলাকৌশলকে শনাক্ত করেন?

১৫ শয়তানের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের বিশ্বাসের কণ্ঠস্বরকে নিশ্চুপ করে দেওয়া—আমাদের সুসমাচার প্রচার করাকে থামিয়ে দেওয়া। (প্রকা. ১২:১৭) তা করার জন্য, সে আমাদেরকে দিয়ে এমন কাজগুলো করানোর চেষ্টা করে, যেগুলো সময় নষ্ট করে অথবা আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। লক্ষ করুন যে, পৌল কীভাবে শয়তানের কলাকৌশলকে শনাক্ত করেন। ‘অলস, ঘুরিয়া বেড়ায়।’ প্রযুক্তির এই যুগে, সহজেই নিজেদের ও অন্যদের সময় নষ্ট করা যায় যেমন, অপ্রয়োজনীয় এমনকী বিভ্রান্তিকর ই-মেইল পাঠানোর মাধ্যমে। “বাচাল” বা গুজব সৃষ্টিকারী। গুজব হয়তো কর্ণেজপ বা অপবাদের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা প্রায়ই বিবাদ সৃষ্টি করে। (হিতো. ২৬:২০) তারা বুঝতে পারুক বা না-ই পারুক, বিদ্বেষপরায়ণ অপবাদকরা শয়তান দিয়াবলকে অনুকরণ করে। * “অনধিকারচর্চ্চাকারিণী।” অন্যদেরকে আমাদের এটা বলার অধিকার নেই যে, কীভাবে তারা ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সম্পাদন করবে। এইসমস্ত অলস ও বিরক্তিকর আচরণ আমাদেরকে ঈশ্বরদত্ত রাজ্যের প্রচার কাজ থেকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে। আমরা যদি যিহোবার কাজকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করা বন্ধ করে দিই, তাহলে আমরা শয়তানকে অনুসরণ করতে শুরু করি। মধ্যবর্তী কোনো অবস্থান নেই।—মথি ১২:৩০.

১৬. কোন উপদেশে মনোযোগ দেওয়া আমাদেরকে ‘শয়তানের পশ্চাৎ বিপথগামি’ হওয়া এড়াতে সাহায্য করে?

১৬ বাইবেলের উপদেশে মনোযোগ দেওয়া আমাদেরকে ‘শয়তানের পশ্চাৎ বিপথগামি’ হওয়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে। পৌলের কিছু বিজ্ঞ পরামর্শ বিবেচনা করুন। “প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া” পড়ুন। (১ করি. ১৫:৫৮) রাজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকা আমাদেরকে অলস হওয়ার ও সময় নষ্টকারী বিষয়ের অনুধাবন করার বিপদ থেকে সুরক্ষা করবে। (মথি ৬:৩৩) “গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ” করুন। (ইফি. ৪:২৯) গুজব না শোনার ও তা ছড়িয়ে না দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। * সহবিশ্বাসীদের প্রতি নির্ভরতা ও সম্মান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন। এভাবে আমরা এমন কথাবার্তা বলতে পারব, যা অন্যদের ভেঙে ফেলার পরিবর্তে গেঁথে তোলে। ‘আপন আপন কার্য্য করিতে . . . সযত্ন হোন।’ (১ থিষল. ৪:১১) অন্যদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখান, তবে তা এমন উপায়ে দেখান যেন তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ের ব্যাপারে সম্মান দেখানো হয় এবং তাদের মর্যাদা নষ্ট না করা হয়। এটাও মনে রাখবেন যে, আমাদের এমন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যেগুলোর বিষয়ে তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।—গালা. ৬:৫.

১৭. (ক) কেন যিহোবা আমাদের কোন পথ অনুসরণ করা উচিত নয়, সেই বিষয়ে সাবধান করেন? (খ) আমরা যে-পথ গ্রহণ করব বলে যিহোবা চান, সেই পথের বিষয়ে আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?

১৭ আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, আমাদের কোন পথ অনুসরণ করা উচিত নয়, সেই বিষয়ে যিহোবা আমাদের স্পষ্টভাবে জানান! তবে, কখনো ভুলে যাবেন না যে, এই প্রবন্ধে ও আগের প্রবন্ধে আলোচিত যিহোবার সাবধানবাণীগুলো আমাদের জন্য তাঁর মহৎ প্রেম থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি চান যেন আমরা শয়তানের বিভ্রান্তিকর ‘পথ নির্দেশক সংকেতচিহ্নগুলো’ অনুসরণ করার ফলে যে-দুর্দশা ও ব্যথা আসে, তা থেকে রক্ষা পাই। আমরা যে-পথ গ্রহণ করব বলে যিহোবা চান, তা হয়তো দুর্গম হতে পারে কিন্তু সেটা সম্ভাব্য সর্বোত্তম গন্তব্যের—অনন্তজীবনের—দিকে পরিচালিত করে। (মথি ৭:১৪) আমরা যেন কখনোই যিহোবার এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দৃঢ়সংকল্প থেকে বিচলিত না হই: “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।”—যিশা. ৩০:২১.

[পাদটীকাগুলো]

^ “ধর্মভ্রষ্টতা” অর্থ হল সত্য উপাসনা থেকে সরে যাওয়া, পতিত হওয়া, দলত্যাগ করা, বিদ্রোহ করা, পরিত্যাগ করা।

^ উদাহরণস্বরূপ, অপ্রামাণিক গ্রন্থ তোবিত (তোবিয়াস), যেটি সা.কা.পূ. প্রায় তৃতীয় শতাব্দীতে লেখা হয়েছিল আর পৌলের সময়েও বিদ্যমান ছিল, সেটিতে সত্য হিসেবে তুলে ধরা অনেক কুসংস্কার এবং জাদুমন্ত্র ও ডাকিনীবিদ্যার অবাস্তব কাহিনি ছিল।—শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২২ দেখুন।

^ “দিয়াবল” শব্দের জন্য ব্যবহৃত গ্রিক শব্দটি হল ডায়াবোলোস, যেটির অর্থ “অপবাদক।” এই শব্দটি শয়তানের আরেকটা উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যে হল সর্বপ্রথম অপবাদক।—যোহন ৮:৪৪; প্রকা. ১২:৯, ১০.

^ “বাতাসে পালক ছড়িয়ে দেওয়া” শিরোনামের বাক্স দেখুন।

আপনি কী উত্তর দেবেন?

নীচে উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলোতে যে-সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আপনি কীভাবে ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগাতে পারেন?

২ পিতর ২:১-৩

১ তীমথিয় ১:৩, ৪

১ তীমথিয় ৫:১১-১৫

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

বাতাসে পালক ছড়িয়ে দেওয়া

একটা পুরোনো যিহুদি গল্প গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার পরিণতি সম্বন্ধে ভালোভাবে তুলে ধরে। বিভিন্ন উপায়ে বলা হলেও, সেই গল্পের সারমর্মটা নীচে উল্লেখিত বিষয়ের মতো।

এক ব্যক্তি শহরের বিজ্ঞ একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে শহরে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরে, সেই বিদ্বেষপরায়ণ গুজবকারী তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেই বিজ্ঞ ব্যক্তির কাছে এই বলে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলেন যে, ক্ষমা লাভ করার জন্য তিনি যেকোনো কিছু করতে রাজি আছেন। বিজ্ঞ ব্যক্তি একটা অনুরোধ করেছিলেন: গুজবকারীকে একটা পালকের বালিশ নিয়ে কেটে সেই পালক বাতাসে ছড়িয়ে দিতে বলা হয়েছিল। যদিও সেই গুজবকারী অনুরোধ শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তিনি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন এবং পরে সেই বিজ্ঞ ব্যক্তির কাছে ফিরে এসেছিলেন।

“এখন কি আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন?” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন।

“তার আগে একটা কাজ করুন, যান, সেইসমস্ত পালক সংগ্রহ করুন,” সেই বিজ্ঞ ব্যক্তি উত্তর দিয়েছিলেন।

“কিন্তু, কীভাবে আমি তা করতে পারি? বাতাসের কারণে সেগুলো ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে গিয়েছে।”

“আপনার কথা যে-ক্ষতিসাধন করেছে, সেটা পুনরুদ্ধার করা সেই পালক পুনরুদ্ধার করার মতোই কঠিন কাজ।”

শিক্ষাটা স্পষ্ট। এক বার বলে ফেলা কথা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না আর এর ফলে যে-আঘাত দেওয়া হয়, তা দূর করা অসম্ভব হতে পারে। ছোট্ট হলেও কোনো গুজব ছড়ানোর আগে, আমাদের জন্য এই বিষয়টা মনে রাখা বিজ্ঞতার কাজ হবে যে, আমরা আসলে বাতাসে পালক ছড়িয়ে দিতে যাচ্ছি।

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে কেউ কেউ ধর্মভ্রষ্টদের তাদের গৃহে আমন্ত্রণ জানাতে পারে?