সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবাকে আপনার অংশ হতে দিচ্ছেন?

আপনি কি যিহোবাকে আপনার অংশ হতে দিচ্ছেন?

আপনি কি যিহোবাকে আপনার অংশ হতে দিচ্ছেন?

“তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” —মথি ৬:৩৩.

১, ২. (ক) গালাতীয় ৬:১৬ পদে উল্লেখিত ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ কাদেরকে চিত্রিত করে? (খ) মথি ১৯:২৮ পদে উল্লেখিত ‘ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ’ কাদেরকে চিত্রিত করে?

 আপনি যখন বাইবেলে ইস্রায়েল নামটি পড়েন, তখন আপনার মনে কোন বিষয়টা আসে? আপনার মনে কি ইস্‌হাকের পুত্র যাকোবের কথা আসে, যাকে নতুন করে ইস্রায়েল নাম দেওয়া হয়েছিল? নাকি তার বংশধর, প্রাচীন ইস্রায়েলের কথা মনে আসে? আত্মিক ইস্রায়েল সম্বন্ধে কী বলা যায়? ইস্রায়েল শব্দটি যখন রূপক অর্থে উল্লেখ করা হয়, তখন এটি সাধারণত ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে’ অর্থাৎ ১,৪৪,০০০ জনকে বোঝায়, যাদেরকে স্বর্গে রাজা ও যাজক হওয়ার জন্য পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়েছে। (গালা. ৬:১৬; প্রকা. ৭:৪; ২১:১২) কিন্তু, ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিষয়ে বিশেষ উল্লেখ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যা মথি ১৯:২৮ পদে পাওয়া যায়।

যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যত জন আমার পশ্চাদ্গামী হইয়াছ, পুনঃসৃষ্টিকালে, যখন মনুষ্যপুত্ত্র আপন প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” এই পদে, ‘ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ’ হল সেই ব্যক্তিরা, যাদেরকে যিশুর অভিষিক্ত শিষ্যরা বিচার করবে এবং যারা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভ করবে। তারা ১,৪৪,০০০ জনের যাজকীয় সেবা থেকে উপকার লাভ করবে।

৩, ৪. বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কোন চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করে?

প্রাচীনকালের যাজক ও লেবীয়দের মতো, বর্তমানে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের সেবাকে এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখে থাকে। (গণনা. ১৮:২০) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা আশা করে না যে, স্বত্ব হিসেবে তাদেরকে পৃথিবীতে কোনো অঞ্চল অথবা স্থান দেওয়া হবে। এর পরিবর্তে, তারা স্বর্গে যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা ও যাজক হওয়ার প্রত্যাশা করে। তারা সেই কার্যভারে থেকে যিহোবার সেবা করা চালিয়ে যাবে, যেমনটা প্রকাশিত বাক্য ৪:১০, ১১ পদে, স্বর্গীয় অবস্থানে থাকা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে আমরা যা পড়ি, তাতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।—যিহি. ৪৪:২৮.

পৃথিবীতে থাকাকালীন, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এমনভাবে জীবনযাপন করে থাকে, যা প্রমাণ দেয় যে, যিহোবাই হলেন তাদের অংশ। ঈশ্বরকে সেবা করার বিশেষ সুযোগ তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করে এবং তাঁকে ক্রমাগত অনুসরণ করে আর এভাবে ‘তাহারা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করে।’ (২ পিতর ১:১০) তাদের একেক জনের পরিস্থিতি এবং ক্ষমতা একেক রকম। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের সেবায় কেবলমাত্র অল্প পরিমাণ কাজ করার জন্য তারা কোনো সীমাবদ্ধতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে না। এর বিপরীতে, তারা ঈশ্বরের সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে এবং তাদের যথাসাধ্য করে। আর তারা সেই ব্যক্তিদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে, যারা এক পরমদেশ পৃথিবীতে বাস করার আশা রাখে।

৫. কীভাবে সমস্ত খ্রিস্টান যিহোবাকে তাদের অংশ হিসেবে লাভ করতে পারে আর কেন তা কঠিন হতে পারে?

আমাদের আশা স্বর্গীয় অথবা পার্থিব, যা-ই হোক না কেন, আমাদেরকে অবশ্যই ‘নিজেদেরকে অস্বীকার করিতে, আপন ক্রুশ তুলিয়া লইতে এবং খ্রিস্টের পশ্চাদ্গামী হইতে’ হবে। (মথি ১৬:২৪) পরমদেশ পৃথিবীতে জীবনের জন্য প্রত্যাশা করে আছে এমন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি ঈশ্বরের উপাসনা করছে এবং এভাবে খ্রিস্টকে অনুসরণ করছে। তারা যখন বুঝতে পারে যে, তারা আরও বেশি করতে সমর্থ, তখন তারা শুধুমাত্র সামান্য কিছু করেই সন্তুষ্ট থাকে না। অনেকে তাদের জীবনকে সাদাসিধে করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং অগ্রগামী হয়ে উঠেছে। অন্যেরা প্রতি বছর কয়েক মাসের জন্য অগ্রগামীর কাজ করার প্রচেষ্টা করে। অন্যদিকে, অগ্রগামীর কাজ করতে পারে না এমন ব্যক্তিরা পরিচর্যায় নিজেদের বিলিয়ে দেয়। এই ব্যক্তিরা একনিষ্ঠ মরিয়মের মতো, যিনি যিশুর ওপর সুগন্ধি তেল ঢেলে দিয়েছিলেন। যিশু বলেছিলেন: “এ আমার প্রতি সৎকার্য্য করিল। . . . এ যাহা করিতে পারিত, তাহাই করিল।” (মার্ক ১৪:৬-৮) আমাদের যথাসাধ্য করা হয়তো সহজ না-ও হতে পারে, কারণ আমরা এমন একটা জগতে বাস করছি, যেটা শয়তানের দ্বারা শাসিত। তা সত্ত্বেও, আমরা পূর্ণোদ্যমে নিজেদের বিলিয়ে দিই এবং যিহোবার ওপর নির্ভর করি। কীভাবে আমরা চারটে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তা করতে পারি, সেটা বিবেচনা করে দেখুন।

প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করা

৬. (ক) কীভাবে সাধারণ লোকেরা দেখায় যে, কেবল এই জীবনই তাদের অংশ? (খ) কেন দায়ূদের মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উত্তম?

যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে প্রথমে রাজ্য ও ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার শিক্ষা দিয়েছিলেন। জগতের লোকেরা সাধারণত এমন ‘সাংসারিক মনুষ্য’ হিসেবে ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার চেষ্টা করে, ‘যাহাদের দায়াংশ এই জীবন।’ (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৭:১, ১৩-১৫.) সৃষ্টিকর্তার প্রতি কোনো সম্মান না থাকায় অনেকের ধ্যানজ্ঞানই হল এক আরামদায়ক জীবনযাপন করা, পরিবার গড়ে তোলা এবং উত্তরাধিকার রেখে যাওয়া। তাদের দায়াংশ বা অংশ কেবল এই জীবন। অন্যদিকে, দায়ূদ যিহোবার কাছে “সুখ্যাতি” অর্জন করার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, যেমনটা তার ছেলে পরবর্তী সময়ে সবাইকে অর্জন করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। (উপ. ৭:১) ঠিক আসফের মতো, দায়ূদও দেখেছিলেন যে, যিহোবাকে তার বন্ধু হিসেবে লাভ করা, জীবনে নিজের আগ্রহগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেয়ে আরও ভালো। তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করে আনন্দিত ছিলেন। আমাদের দিনে, অনেক খ্রিস্টান তাদের জাগতিক কাজগুলোর চেয়ে বরং আধ্যাত্মিক কার্যকলাপকে প্রথমে রাখে।

৭. প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করার মাধ্যমে একজন ভাই কোন আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন?

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্ররে ঝাঁ-ক্লোদের কথা বিবেচনা করুন। তিনি একজন বিবাহিত প্রাচীন, যার তিন জন সন্তান রয়েছে। সেই দেশে, কাজ পাওয়া অনেক কঠিন আর অধিকাংশ লোকই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি থাকে। একদিন, ম্যানেজার ঝাঁ-ক্লোদকে রাতের বেলায় কাজ শুরু করার—সপ্তাহে সাত দিন সন্ধ্যা ৬:৩০ থেকে কাজ শুরু করার—কথা বলেন। ঝাঁ-ক্লোদ ব্যাখ্যা করেন যে, তার পরিবারের জন্য বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানোর পাশাপাশি তাকে তাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের যত্নও নিতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, তার মণ্ডলীকে সাহায্য করার দায়িত্বও রয়েছে। ম্যানেজার কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? “আপনার ভাগ্যে যদি কোনো চাকরি জোটে, তাহলে আপনাকে নিজের স্ত্রী, সন্তান ও সমস্যাগুলো ভুলে যেতে হবে। কাজকেই আপনার জীবনের ধ্যানজ্ঞান করতে হবে—অন্যকিছু নয় কিন্তু শুধুই আপনার কাজকে। কোনটা চান, আপনিই বেছে নিন: হয় আপনার ধর্ম নতুবা আপনার কাজ।” আপনি হলে কী করতেন? ঝাঁ-ক্লোদ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তিনি যদি তার চাকরি হারান, তাহলে ঈশ্বর তার যত্ন নেবেন। তখনও তার ঈশ্বরের সেবায় উপচে পড়ার মতো কাজ থাকবে আর যিহোবা তার পরিবারের বস্তুগত চাহিদাগুলোর যত্ন নিতে সাহায্য করবেন। তাই, তিনি পরবর্তী সপ্তাহের মাঝামাঝি যে-সভা ছিল, তাতে যোগ দেন। এরপর, তিনি কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন, তবে নিশ্চিত ছিলেন না যে, তার চাকরিটা থাকবে কি না। ঠিক সেই সময়ে, তিনি একটা ফোন পান। সেই ম্যানেজারকে বরখাস্ত করা হয়েছে—কিন্তু আমাদের ভাইয়ের চাকরিটা বেঁচে গিয়েছিল।

৮, ৯. যিহোবাকে আমাদের অংশ হিসেবে লাভ করার বিষয়ে কোন অর্থে আমরা যাজক ও লেবীয়দের অনুকরণ করতে পারি?

কিছু ব্যক্তি এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, যেখানে তাদের চাকরি ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে মনে হতে পারে আর তাই তারা ভাবতে পারে: ‘পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর ব্যাপারে কীভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব?’ (১ তীম. ৫:৮) আপনি একইরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হোন বা না-ই হোন, আপনার অভিজ্ঞতা থেকে আপনি হয়তো নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনি কখনোই হতাশ হবেন না, যদি ঈশ্বর আপনার অংশ হন এবং আপনি তাঁকে সেবা করার বিশেষ সুযোগকে উচ্চমূল্য দিয়ে থাকেন। যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা’ করতে বলেছিলেন, তখন তিনি তাদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন: “তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও”—যেমন খাদ্য, পানীয় অথবা বস্ত্র—“তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।”—মথি ৬:৩৩.

সেই লেবীয়দের কথা চিন্তা করুন, যারা অধিকার হিসেবে কোনো ভূমি লাভ করেনি। যেহেতু বিশুদ্ধ উপাসনাই ছিল তাদের প্রধান চিন্তার বিষয়, তাই ভরণপোষণের জন্য তাদেরকে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে হতো, যিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “আমিই তোমার অংশ।” (গণনা. ১৮:২০) যদিও আমরা এক আক্ষরিক মন্দিরে সেবা করছি না, যেমনটা যাজক ও লেবীয়রা করত, তবুও আমরা তাদের মনোভাবকে অনুকরণ করতে পারি, এই আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রতিপালন করবেন। যতই আমরা শেষকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, ততই আমাদেরকে প্রতিপালন করার জন্য ঈশ্বরের ক্ষমতার ওপর আমাদের নির্ভরতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।—প্রকা. ১৩:১৭.

প্রথমে ঈশ্বরের ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা

১০, ১১. কাজের ক্ষেত্রে কেউ কেউ কীভাবে যিহোবার ওপর নির্ভর করেছে? একটা উদাহরণ দিন।

১০ যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে এই জোরালো পরামর্শও দিয়েছিলেন যে, ‘প্রথমে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা’ করো। (মথি ৬:৩৩) এর অর্থ হল, কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল, সেই বিষয়ে মানুষের মানদণ্ডের চেয়ে বরং যিহোবার মানদণ্ডকে প্রথমে রাখা। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৮, ৯.) আপনার হয়তো স্মরণে আছে যে, অতীতে কিছু ব্যক্তি তামাক উৎপাদন অথবা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করায়, অন্যদেরকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদানে বা যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন এবং বিক্রি করায় জড়িত ছিল। সত্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করার পর, অধিকাংশ ব্যক্তিই তাদের কাজ পরিবর্তন করা বেছে নিয়েছিল এবং বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়েছিল।—যিশা. ২:৪; ২ করি. ৭:১; গালা. ৫:১৪.

১১ অ্যান্ড্রু হলেন তেমনই এক উদাহরণ। তিনি এবং তার স্ত্রী যখন যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারেন, তখন তারা তাঁকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও অ্যান্ড্রু তার কাজ নিয়ে অনেক পরিতৃপ্ত ছিলেন, তবুও তিনি সেই কাজ ছেড়ে দেন। কেন? কারণ তিনি যে-সংগঠনে কাজ করতেন, সেটা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল আর তিনি যিহোবার দৃষ্টিতে যা সঠিক, সেটা করতে চেয়েছিলেন। অ্যান্ড্রু যখন সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন তার দুজন ছেলে-মেয়ে ছিল, তার কোনো আয় ছিল না ও সেইসঙ্গে তার হাতে মাত্র কয়েক মাস চলার মতো টাকাপয়সা ছিল। একজন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে এমনটা মনে হতে পারে যে, তার কোনো “অধিকার” ছিল না। তিনি ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতা রেখে একটা চাকরি খুঁজেছিলেন। অতীতের কথা স্মরণ করে, তিনি এবং তার পরিবার এই বিষয়টা নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে, যিহোবার হস্ত খাটো নয়। (যিশা. ৫৯:১) তাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখার মাধ্যমে অ্যান্ড্রু ও তার স্ত্রী এমনকী পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করার বিশেষ সুযোগও লাভ করেছিল। “মাঝে মাঝে এমন সময়ও আসত, যখন টাকাপয়সা, বাসস্থান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় আর কেবল বয়স বেড়ে যাওয়ার বিষয়টাও আমাদের উদ্‌বিগ্ন করে তুলত,” তিনি বলেন। “কিন্তু যিহোবা সবসময়ই আমাদের পাশে ছিলেন। . . . আমরা এক বিন্দুও সন্দেহ না করে বলতে পারি যে, যিহোবাকে সেবা করা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহৎ ও পরিতৃপ্তিদায়ক মানবপ্রচেষ্টা।” *উপ. ১২:১৩.

১২. ঈশ্বরের মানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য কোন গুণ প্রয়োজন? একটা স্থানীয় উদাহরণ দিন।

১২ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “যদি তোমাদের একটী সরিষা-দানার ন্যায় বিশ্বাস থাকে, তবে তোমরা এই পর্ব্বতকে বলিবে, ‘এখান হইতে ঐখানে সরিয়া যাও,’ আর ইহা সরিয়া যাইবে; এবং তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না।” (মথি ১৭:২০, ২১) আপনি কি সেই সময়ও ঈশ্বরের মানকে অগ্রাধিকার দেবেন, যদি এর কারণে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হয়? আপনি যদি এই বিষয়ে অনিশ্চিত থাকেন, তাহলে মণ্ডলীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দেখুন। নিঃসন্দেহে, তাদের অভিজ্ঞতা শোনার মাধ্যমে আপনি আধ্যাত্মিকভাবে সতেজ হবেন।

যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোকে উপলব্ধি করা

১৩. আমরা যখন যিহোবার সেবায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিই, তখন আমরা কোন নির্ভরতা রাখতে পারি?

১৩ আপনি যদি যিহোবাকে সেবা করার ব্যাপারে আপনার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তাহলে আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তিনি আপনার দৈহিক ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো মেটাবেন, ঠিক যেমন তিনি লেবীয়দের ভরণপোষণ জুগিয়েছিলেন। দায়ূদের কথা চিন্তা করে দেখুন। যদিও তিনি একটা গুহাতে ছিলেন, তবুও তিনি তার প্রতিপালনের জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে পারতেন। আমরাও যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি, এমনকী সেই সময়ও যখন আমরা আর কোনো উপায় খুঁজে পাই না। স্মরণ করে দেখুন যে, আসফ যখন “ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে” প্রবেশ করেছিলেন, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, কোন বিষয়টা তাকে কষ্ট দিচ্ছে। (গীত. ৭৩:১৭) একইভাবে, আমাদের আধ্যাত্মিক পুষ্টির জন্য আমাদেরও ঐশিক উৎসের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই, আমরা ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের বিশেষ সুযোগের প্রতি উপলব্ধি দেখাই, তা সেটা আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন। আর এভাবে, আমরা যিহোবাকে আমাদের অংশ হতে দিচ্ছি।

১৪, ১৫. কোনো শাস্ত্রপদকে আমরা যেভাবে বুঝি থাকি, সেটাতে যদি রদবদল করা হয়, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? কেন?

১৪ সেই সময়ে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান, যখন আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোকের উৎস যিহোবা, বাইবেলে প্রাপ্ত ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ আরও স্পষ্ট করেন? (১ করি. ২:১০-১৩) আমরা প্রেরিত পিতরের সেই সময়ের প্রতিক্রিয়া থেকে এক চমৎকার উদাহরণ লাভ করি, যখন যিশু তাঁর শ্রোতাদের এই কথাগুলো বলেছিলেন: “তোমরা যদি মনুষ্যপুত্ত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই।” এই কথাগুলোকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করে অনেক শিষ্য বলেছিল: “এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” তারা ‘পিছাইয়া পড়িয়াছিল।’ কিন্তু, পিতর বলেছিলেন: “প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।”—যোহন ৬:৫৩, ৬০, ৬৬, ৬৮.

১৫ যিশু তাঁর নিজের মাংস ভোজন এবং রক্ত পান করার বিষয়ে যা বলেছিলেন, তা পিতর পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। কিন্তু, এই প্রেরিত আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোকের জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছিলেন। কিছু বিষয়ে আধ্যাত্মিক আলো যখন আরও উজ্জ্বল হতে থাকে, তখন আপনি কি সেই রদবদলের পিছনে যে-মূল শাস্ত্রীয় যুক্তিগুলো রয়েছে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করেন? (হিতো. ৪:১৮) প্রথম শতাব্দীর বিরয়াবাসীরা “সম্পূর্ণ আগ্রহপূর্ব্বক” বাক্য গ্রহণ করেছিল ‘আর প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিয়াছিল।’ (প্রেরিত ১৭:১১) তাদেরকে অনুকরণ করলে, যিহোবাকে সেবা করার বিশেষ সুযোগের প্রতি এবং তাঁকে আপনার অংশ হিসেবে লাভ করার বিষয়ে আপনার উপলব্ধি আরও বৃদ্ধি পাবে।

কেবল প্রভুতেই বিয়ে করা

১৬. প্রথম করিন্থীয় ৭:৩৯ পদে প্রাপ্ত আজ্ঞার ক্ষেত্রে কীভাবে ঈশ্বর আমাদের অংশ হতে পারেন?

১৬ আরেকটা যে-ক্ষেত্রে খ্রিস্টানদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো মনে রাখতে হবে, সেটা হল “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার ব্যাপারে বাইবেলের নির্দেশনা কাজে লাগানো। (১ করি. ৭:৩৯) অনেকে এই ঐশিক পরামর্শকে উপেক্ষা করার চেয়ে বরং অবিবাহিত থাকা বেছে নিয়েছে। ঈশ্বর এই ব্যক্তিদের সদয়ভাবে গ্রহণ করে নেন। সেই সময় দায়ূদ কী করেছিলেন, যখন তিনি একাকীত্ব বোধ করেছিলেন এবং তার কাছে কোনো সাহায্য নেই বলে মনে হয়েছিল? “আমি [ঈশ্বরের] কাছে আমার খেদের কথা ভাঙ্গিয়া বলি,” তিনি বলেছিলেন। “তাঁহাকে আমার সঙ্কট জানাই। আমার আত্মা যখন আমার মধ্যে অবসন্ন হইয়াছিল, তখন তুমিই আমার মার্গ জ্ঞাত ছিলে।” (গীত. ১৪২:১-৩) ভাববাদী যিরমিয়ের মধ্যেও একই অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছিল, যিনি দশকের পর দশক ধরে একজন অবিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করেছিলেন। আপনি হয়তো তার উদাহরণ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে চাইবেন, যা যিরমিয়ের মাধ্যমে আমাদের জন্য ঈশ্বরের বাক্য (ইংরেজি) বইয়ের আট অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১৭. একজন অবিবাহিত বোন যখন মাঝে মাঝে একাকিত্ব বোধ করেন, তখন সেটার সঙ্গে কীভাবে সফলভাবে মোকাবিলা করেন?

১৭ “আমি কখনোই অবিবাহিত থাকতে চাইনি,” যুক্তরাষ্ট্রের একজন বোন বলেন। “একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে আমি বিয়ে করতে রাজি আছি। আমার অবিশ্বাসী মা আমাকে যাকে পাওয়া যায়, তাকেই বিয়ে করার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করতেন। আমি তাকে বলেছিলাম যে, আমার বিয়ে যদি সফল না হয়, তাহলে সেটার দায়ভার তিনি বহন করবেন কি না। একসময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমার একটা স্থায়ী চাকরি রয়েছে, আমি নিজের যত্ন নিতে পারছি এবং সুখী। তখন তিনি আমাকে চাপ দেওয়া বন্ধ করে দেন।” এই বোন মাঝে মাঝে একাকীত্ব বোধ করেন। “সেই সময়,” বোন বলেন, “আমি যিহোবাকে আমরা আস্থা করে তোলার চেষ্টা করি। তিনি কখনো আমাকে পরিত্যাগ করেন না।” কী তাকে যিহোবার ওপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল? “প্রার্থনা আমাকে এই বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, ঈশ্বর হলেন একজন বাস্তব ব্যক্তি আর আমি কখনোই একা নই। যেহেতু নিখিলবিশ্বের পরাৎপর আমার কথা শুনছেন, তাহলে কেনই বা আমি নিজেকে সম্মানিত বলে মনে করব না ও সেইসঙ্গে আনন্দ বোধ করব না?” ‘গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা যে ধন্য হইবার বিষয়’ সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তিনি বলেন: “আমি অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি আর প্রতিদানে আমি কিছুই আশা করি না। আমি যখন চিন্তা করি যে, ‘এই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য আমি কী করতে পারি?’ তখন আমি মনের আনন্দ লাভ করি।” (প্রেরিত ২০:৩৫) হ্যাঁ, তিনি যিহোবাকে তাঁর অংশ হিসেবে লাভ করেছেন ও সেইসঙ্গে তাঁকে সেবা করার বিশেষ সুযোগকে উপভোগ করে যাচ্ছেন।

১৮. কোন অর্থে যিহোবা আপনাকে তাঁর অংশ করতে পারেন?

১৮ আপনি যে-পরিস্থিতিতেই থাকুন না কেন, আপনি যিহোবাকে আপনার অংশ হতে দিতে পারেন। আপনি যদি তা করেন, তাহলে আপনাকে তাঁর সুখী প্রজাদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করা হবে। (২ করি. ৬:১৬, ১৭) আর এটা আপনাকে যিহোবার দায়াংশ বা অংশ করে তুলবে, যেমনটা অতীতে অন্যদেরকে করে তুলেছিল। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৯, ১০.) ঠিক যেমন ইস্রায়েল অন্যান্য জাতির মধ্যে থেকে ঈশ্বরের অংশ হয়ে উঠেছিল, তেমনই তিনি আপনাকে তাঁর লোক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন এবং প্রেমের সঙ্গে আপনার যত্ন নিতে পারেন।—গীত. ১৭:৮.

[পাদটীকা]

^ ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১২-১৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে আপনি এই বিষয়গুলো করার দ্বারা যিহোবাকে আপনার অংশ হতে দিতে পারেন

• প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করার মাধ্যমে?

• আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রতি উপলব্ধি দেখানোর মাধ্যমে?

• কেবল প্রভুতেই বিয়ে করার বিষয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করার মাধ্যমে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যিহোবা সেই সময়ে আমাদের অংশ হয়ে ওঠেন, যখন আমরা তাঁর সেবাকে আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় করে তুলি

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরমিয়ের উদাহরণ উৎসাহজনক