সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বিনোদন কি উপকারজনক?

আপনার বিনোদন কি উপকারজনক?

আপনার বিনোদন কি উপকারজনক?

“প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর।”—ইফি. ৫:১০.

১, ২. (ক) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবা চান যেন আমরা জীবন উপভোগ করি? (খ) বিনোদনকে “ঈশ্বরের দান” হিসেবে দেখলে, তা আমাদেরকে কী করতে অনুপ্রাণিত করবে?

 পুরো বাইবেলে আমরা এমন বিবৃতিগুলো পাই, যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবা চান যেন আমরা বেঁচে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবন উপভোগও করি। উদাহরণস্বরূপ, গীতসংহিতা ১০৪:১৪, ১৫ পদ বলে যে, যিহোবা “ভূমি হইতে ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন, আর মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস, মুখের প্রফুল্লতা-জনক তৈল, ও মর্ত্ত্যের চিত্তবল-সাধক ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন।” বস্তুতপক্ষে, যিহোবা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ফসল দিয়েছেন, যেন তা থেকে শস্য, তেল এবং দ্রাক্ষারস উৎপন্ন হয়। তবে, দ্রাক্ষারস ‘মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনকও’ বটে। এটা জীবনধারণের জন্য যে-বিষয়গুলো না হলেই নয়, সেগুলোর চেয়ে আরও বেশি কিছু ও সেইসঙ্গে এটা আমাদের আনন্দকে বৃদ্ধি করে। (উপ. ৯:৭; ১০:১৯) হ্যাঁ, যিহোবা চান যেন আমরা আনন্দিত হই এবং আমাদের হৃদয় “পরিতৃপ্ত” হয়।—প্রেরিত ১৪:১৬, ১৭.

তাই, আমরা যখন মাঝেমধ্যে “আকাশের পক্ষীদের” এবং “ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের” ‘প্রতি দৃষ্টিপাত করিবার’ অথবা আমাদের জীবনকে সতেজ ও সমৃদ্ধ করে এমন কোনো কিছু করার জন্য কিছুটা সময় করে নিই, তখন নিজেদেরকে দোষী মনে করার কোনো কারণই নেই। (মথি ৬:২৬, ২৮; গীত. ৮:৩, ৪) এক স্বাস্থ্যকর জীবন হল “ঈশ্বরের দান।” (উপ. ৩:১২, ১৩) অবসর সময়কে সেই দানের অংশ হিসেবে দেখলে, তা আমাদেরকে সেই সময়টা এমনভাবে ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করবে, যা এর দাতার জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে। *

বিভিন্নতা এবং সীমা

৩. বিনোদনের ব্যাপারে যে বিভিন্নতা রয়েছে, তা মেনে নেওয়া কেন যুক্তিযুক্ত?

বিনোদন সম্বন্ধে যাদের এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তারা যদিও এর বিভিন্নতাকে মেনে নেয় কিন্তু এই ক্ষেত্রে যে সীমা আরোপ করা প্রয়োজন, সেটাও তারা স্বীকার করে। কেন? এর উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা আমোদপ্রমোদকে খাবারের সঙ্গে তুলনা করি। জনপ্রিয় খাবারগুলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বস্তুতপক্ষে, একটা এলাকার লোকেরা যে-খাবারকে সুস্বাদু বলে মনে করে, সেই একই খাবারকে আবার অন্য জায়গার লোকেরা হয়তো সুস্বাদু বলে মনে না-ও করতে পারে। একইভাবে, পৃথিবীর এক প্রান্তের খ্রিস্টানরা যে-বিনোদনটাকে উপভোগ্য হিসেবে দেখে থাকে, অন্য জায়গার খ্রিস্টানদের কাছে সেটা হয়তো আবেদনময় না-ও হতে পারে। এমনকী একই এলাকায় বাস করে এমন খ্রিস্টানদের মধ্যে একজন ব্যক্তি যেটাকে হয়তো আনন্দদায়ক বলে মনে করে থাকেন (হতে পারে কোনো ভালো বই পড়া), অন্য ব্যক্তি হয়তো সেটাকে একঘেঁয়ে বলে মনে করেন; আবার একজন হয়তো যেটাকে সতেজতাদায়ক বলে মনে করেন (হতে পারে সাইকেলে চড়ে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা), অন্য জন হয়তো সেটাকে ক্লান্তিকর বলে মনে করেন। তা সত্ত্বেও, আমরা এটা মেনে নিই যে, খাবার এবং বিনোদনের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্নতা ও ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় রয়েছে।—রোমীয় ১৪:২-৪.

৪. বিনোদন বাছাইয়ের সময় কেন আমাদের সীমা আরোপ করতে হবে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

কিন্তু, আমরা এ-ও বুঝতে পারি যে, বিনোদনের ক্ষেত্রে বিভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার অর্থ এই নয় যে, একজন ব্যক্তি তার ইচ্ছেখুশিমতো যেকোনো বিনোদনই বেছে নিতে পারেন। এটা বোঝার জন্য, আবারও খাবারের উদাহরণটা বিবেচনা করুন। যদিও আমরা হয়তো বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে চাই, কিন্তু তাই বলে ইচ্ছা করে আমরা এমন কোনো খাবার খাব না, যেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই ধরনের খাবার খাওয়া বোকামীর কাজ ও সেইসঙ্গে এটা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকরও হতে পারে। একইভাবে, যদিও আমাদের সামনে হয়তো বিভিন্ন ধরনের গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ রয়েছে, তবুও আমরা অবসর সময়ে এমন বিষয়গুলোর অনুধাবন করব না, যেগুলো জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ, দৌরাত্ম্যপূর্ণ বা নৈতিক দিক দিয়ে কলুষিত। এই ধরনের কাজে রত হওয়া বাইবেলের নীতিবিরুদ্ধ ও সেইসঙ্গে আমাদের দৈহিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আমরা উপযুক্ত সীমা বজায় রাখছি কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের আগে থেকেই নির্ধারণ করা উচিত যে, আমাদের কাছে আবেদনময় বলে মনে হয় এমন কিছু বিনোদন উপকারজনক, নাকি উপকারজনক নয়। (ইফি. ৫:১০) কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

৫. আমাদের বিনোদন ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা আমরা কীভাবে নির্ধারণ করতে পারি?

আমরা যদি বিনোদন থেকে উপকার লাভ করতে চাই এবং সেটাকে যদি যিহোবার চোখে আনন্দদায়ক হতে হয়, তাহলে সেই বিনোদনকে ঈশ্বরের বাক্যে লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট মানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। (গীত. ৮৬:১১) আপনার পছন্দের কোনো বিনোদনের ক্ষেত্রে তা সত্য কি না, সেই বিষয়টা নির্ধারণ করার জন্য আপনি হয়তো একটা সাধারণ তালিকা বিবেচনা করতে পারেন। এই তালিকা এমন তিনটে প্রশ্ন নিয়ে গঠিত, যেগুলোকে এই শব্দগুলোর দ্বারা সারাংশ করা যেতে পারে যেমন, কী, কখন এবং কারা। আসুন আমরা এক এক করে তা বিবেচনা করে দেখি।

বিনোদনের অন্তর্ভুক্ত কী?

৬. কোন ধরনের আমোদপ্রমোদ আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং কেন?

কোনো আমোদপ্রমোদে রত হওয়ার আগে, প্রথম যে-প্রশ্নটা নিজেকে আপনার জিজ্ঞেস করতে হবে, তা হল, কী?—অর্থাৎ ‘অবসর সময়ের যে-বিষয়গুলোকে আমি আকর্ষণীয় বলে মনে করি, সেগুলোর ধরন কেমন?’ এই প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার সময়, এটা মনে রাখা উপকারজনক যে, মূলত দুই প্রকারের আমোদপ্রমোদ রয়েছে। প্রথমটার ক্ষেত্রে আমরা বলি, না; আর দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে বলি, হয়তো। প্রথমটা কী? এই দুষ্ট জগতে, বেশির ভাগ আমোদপ্রমোদের মধ্যে এমন বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে, যেগুলো পুরোপুরিভাবে বাইবেলের নীতিগুলোকে অমান্য করে অথবা ঈশ্বরের আইনগুলোকে লঙ্ঘন করে। (১ যোহন ৫:১৯) প্রকৃত খ্রিস্টানরা এই ধরনের আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে না বলে থাকে। এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেই আমোদপ্রমোদগুলো, যেগুলোর মধ্যে বিকৃত যৌনতা, ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ, সমকামিতা, পর্নোগ্রাফি অথবা দৌরাত্ম্য রয়েছে কিংবা যেগুলো অন্যান্য মন্দ এবং অনৈতিক অভ্যাসগুলোকে ফলাও করে তুলে ধরে। (১ করি. ৬:৯, ১০; পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.) আমরা যেখানেই থাকি না কেন, এই ধরনের আমোদপ্রমোদের ধারেকাছেও যাওয়ার বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে এই প্রমাণ দিই যে, আমরা “যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা” করি।—রোমীয় ১২:৯; ১ যোহন ১:৫, ৬.

৭, ৮. কীভাবে আমরা নির্দিষ্ট কোনো আমোদপ্রমোদের গুণগত মান মূল্যায়ন করতে পারি? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

দ্বিতীয় প্রকারের অবসর সময়ের বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেই ধরনের আমোদপ্রমোদ, যেগুলো ঈশ্বরের বাক্যে খোলাখুলিভাবে নিন্দা করা হয়েছে এমন অভ্যাসগুলোর ওপর কেন্দ্র করে নয়। এইরকম ক্ষেত্রগুলোতে, আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের আগে, আমাদেরকে সতর্কতা সহকারে বিষয়টাকে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যেটা গঠনমূলক, সেটার সঙ্গে তুলনা করা উচিত, যে-দৃষ্টিভঙ্গি বাইবেলের নীতিগুলোতে প্রকাশ করা হয়েছে। (হিতো. ৪:১০, ১১) এরপর আমাদের এমন ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যার ফলে আমাদের এক সৎসংবেদ বা উত্তম বিবেক বজায় থাকে। (গালা. ৬:৫; ১ তীম. ১:১৯) কীভাবে আমরা তা করতে পারি? এই বিষয়টা একটু চিন্তা করে দেখুন: একটা নতুন খাবার খাওয়ার আগে, আমরা প্রথমে জানতে চাইব যে, এর মূল উপাদানগুলো কী। একইভাবে, কোনো বিনোদনে রত হওয়ার আগে আমাদের ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কী।—ইফি. ৫:১৭.

উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো বিভিন্নরকম খেলাধুলা পছন্দ করেন আর এই ধরনের আকর্ষণ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। খেলাধুলা অনেক মজার ও রোমাঞ্চকর হতে পারে। কিন্তু, কী হবে, যদি আপনি এমন খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট হন, যেগুলোতে চরম প্রতিযোগিতা, মারাত্মক ঝুঁকি, আঘাত পাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা, উচ্ছৃঙ্খলতাপূর্ণ অনুষ্ঠান, তীব্র জাতীয়তাবাদ অথবা এই ধরনের “উপাদান” রয়েছে? খেলাধুলার সঙ্গে কী কী যুক্ত রয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখার পর, আপনি সম্ভবত এই সিদ্ধান্তে আসবেন যে, আপনার চিন্তাভাবনার সঙ্গে যিহোবার চিন্তাভাবনার এবং অন্যদের কাছে আমরা যে-শান্তি ও প্রেমের বার্তা প্রচার করি, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখাটা অনেক কঠিন। (যিশা. ৬১:১; গালা. ৫:১৯-২১) অন্যদিকে, অবসর সময়ের কোনো বিষয়ে যদি এমন “উপাদান” থাকে, যা যিহোবার দৃষ্টিতে গঠনমূলক, তাহলে এই ধরনের বিনোদন হয়তো আপনার জন্য অনেক উপকার ও সতেজতা নিয়ে আসতে পারে।—গালা. ৫:২২, ২৩; পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৮.

কখন আমি বিনোদনের অনুধাবন করি?

৯. ‘কখন আমি বিনোদনে রত হব?’ এই প্রশ্নের জবাবে আমাদের উত্তর কী প্রকাশ করে?

দ্বিতীয় যে-প্রশ্নটা নিজেকে আপনার জিজ্ঞেস করতে হবে, তা হল, কখন?—অর্থাৎ ‘কখন আমি বিনোদনে রত হব? এর পিছনে আমি কতটা সময় ব্যয় করব?’ কী? প্রশ্নের জবাবে আমাদের উত্তর আমাদের প্রবণতা সম্বন্ধে—কোনটাকে আমরা গ্রহণযোগ্য এবং কোনটাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি, সেই সম্বন্ধে—অনেক কিছু প্রকাশ করে। কিন্তু, কখন? প্রশ্নের জবাবে আমাদের উত্তরটা আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে—কোনটাকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটাকে আমরা গুরুত্বহীন বলে মনে করি, সেটাকে—প্রকাশ করে। তাই, কীভাবে আমরা নির্ধারণ করতে পারি যে, আমাদের বিনোদনের প্রতি আমরা যে-গুরুত্ব প্রদান করি, সেটার মাত্রা উপযুক্ত কি না?

১০, ১১. কীভাবে মথি ৬:৩৩ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো, বিনোদনের পিছনে আমরা কতটা সময় ব্যয় করব, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে?

১০ যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মার্ক ১২:৩০) তাই, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম আমাদের জীবনে প্রথমে থাকতে হবে। আর এটাই আমরা যিশুর এই উপদেশ অনুসরণ করার মাধ্যমে দেখিয়ে থাকি: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:৩৩) কীভাবে এই বিবৃতি আমাদেরকে, বিনোদনের পিছনে আমরা কতটা সময় ব্যয় করব এবং সেটাকে কতটা গুরুত্ব দেব, তা নির্ধারণ করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে?

১১ বিষয়টা বিস্তারিতভাবে বিবেচনা করুন: যিশু আমাদেরকে ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ উপদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে বলেননি যে, ‘কেবল রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা কর।’ স্পষ্টতই, যিশু জানতেন যে, রাজ্যের পাশাপাশি জীবনে আমাদেরকে অনেক বিষয়ের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, মৌলিক শিক্ষা, চাকরি, বিনোদন এবং এইরকম আরও অন্যান্য বিষয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, আমরা যেসমস্ত বিষয়ের চেষ্টা করে থাকি, সেগুলোর মধ্যে কেবল একটা বিষয়—রাজ্যের বিষয়—প্রথমে আসে। (১ করি. ৭:২৯-৩১) এই মৌলিক সত্যটা যেন আমাদেরকে আমাদের গৌণ বিষয়গুলোকে, যার মধ্যে বিনোদনও রয়েছে, এমনভাবে অনুধাবন করতে পরিচালিত করে, যার ফলে আমরা আমাদের প্রধান কাজ সম্পন্ন করতে—রাজ্যের বিষয়গুলোর যত্ন নিতে—সমর্থ হই। আমরা যদি তা করি, তাহলে পরিমিত মাত্রার বিনোদন উপকারজনক হতে পারে।

১২. কীভাবে লূক ১৪:২৮ পদে প্রাপ্ত নীতি, বিনোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে?

১২ তাই, যখন বিনোদনের পিছনে সময় ব্যয় করার বিষয়টা আসে, তখন আগে থেকেই আমাদের এর ব্যয় হিসাব করে দেখা উচিত। (লূক ১৪:২৮) আমাদের নির্ধারণ করে দেখতে হবে যে, অবসর সময়ের কোনো একটা বিষয়ের পিছনে আমাদের কতটা সময় ব্যয় হতে পারে। এরপর, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এর জন্য কতটা সময় ব্যয় করা উপযুক্ত। কোনো একটা বিনোদনের অনুধাবন করার কারণে যদি ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, পারিবারিক উপাসনা, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করা অথবা রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়ে থাকে, তাহলে এর পিছনে সময় ব্যয় করা উপযুক্ত নয়। (মার্ক ৮:৩৬) কিন্তু, মাঝেমধ্যে অবসর সময় কাটানো যদি আমাদেরকে রাজ্যের বিষয়গুলোর অনুধাবন করার ব্যাপারে কর্মশক্তি প্রদান করে, তাহলে আমরা হয়তো এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, সেই ধরনের বিনোদনের পিছনে আমরা যে-সময় ব্যয় করি, তা উপযুক্ত।

কারা আমার সঙ্গীসাথি?

১৩. আমরা কাদের সঙ্গে বিনোদন করব, তা কেন আমাদের সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত?

১৩ তৃতীয় যে-প্রশ্নটা নিজেকে আপনার জিজ্ঞেস করতে হবে, তা হল, কারা?—অর্থাৎ ‘কাদের সঙ্গে আমি আমার অবসর সময় কাটাতে চাই?’ বিনোদনের এই দিকটা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ আমাদের বিনোদনের গুণগত মান আমাদের সঙ্গীসাথিদের চারিত্রিক গুণের দ্বারা অনেকখানি প্রভাবিত হয়ে থাকে। ঠিক যেমন উত্তম বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কোনো একটা খাবার খেলে তা সাধারণত আরও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে, তেমনই উত্তম সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে কোনো বিনোদনে যোগ দিলে তা প্রায়ই আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। তাই, এটা বোধগম্য যে, আমাদের মধ্যে অনেকে, বিশেষভাবে যুবক-যুবতীরা যখন অন্যদের সঙ্গে বিনোদনে যোগ দেয়, তখন তারা তা উপভোগ করে থাকে। কিন্তু, কোনো একটা বিষয় উপকারজনক কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য, কোন ধরনের ব্যক্তিদেরকে আমরা সঙ্গীসাথি হিসেবে বাছাই করব এবং কোন ধরনের ব্যক্তিদেরকে আমরা এড়িয়ে চলব, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা বিজ্ঞতার কাজ।—২ বংশা. ১৯:২; পড়ুন, হিতোপদেশ ১৩:২০; যাকোব ৪:৪.

১৪, ১৫. (ক) সঠিক সঙ্গীসাথি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন? (খ) আমাদের সঙ্গীসাথিদের বিষয়ে নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৪ সঙ্গীসাথি বাছাই করার সময় যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করা অনেক উপকারজনক হবে। সৃষ্টির সময় থেকেই মানুষের প্রতি যিশুর প্রেম ছিল। (হিতো. ৮:৩১) পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি সমস্ত ধরনের লোকেদের প্রতি প্রেমের সঙ্গে বিবেচনা দেখিয়েছিলেন। (মথি ১৫:২৯-৩৭) কিন্তু, যিশু বন্ধুত্বপরায়ণ হওয়ার এবং কাউকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু করার মধ্যে একটা সীমা বজায় রেখেছিলেন। যদিও তিনি সাধারণ লোকেদের প্রতি বন্ধুত্বপরায়ণ ছিলেন, তবে তিনি কেবল সেই ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, যারা নির্দিষ্ট চাহিদাগুলো পূরণ করেছিল। তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের সঙ্গে কথা বলার সময় যিশু বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু।” (যোহন ১৫:১৪; এ ছাড়া, যোহন ১৩:২৭, ৩০ পদ দেখুন।) একমাত্র সেই ব্যক্তিদেরকেই যিশু বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, যারা তাঁকে অনুসরণ করত এবং যিহোবার সেবা করত।

১৫ তাই, কোনো ব্যক্তিকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বাছাই করা উচিত, কী উচিত নয়, সেই ব্যাপারে আপনি যখন বিবেচনা করেন, তখন যিশুর এই বিবৃতি মনে রাখা বিজ্ঞতার কাজ হবে। নিজেকে এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন, যেমন: ‘এই ব্যক্তি কি কথায় ও কাজে দেখায় যে, তিনি যিহোবা ও যিশুর আজ্ঞা পালন করছেন? তার কি আমার মতো একইরকম বাইবেলভিত্তিক মূল্যবোধ ও নীতিবোধ রয়েছে? তার সংস্পর্শে থাকা কি আমাকে রাজ্যকে প্রথমে রাখতে এবং যিহোবার একজন অনুগত দাস হিসেবে থাকতে উৎসাহিত করবে?’ আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ, তাহলে আপনি এমন একজন উত্তম সঙ্গী পেয়েছেন, যার সঙ্গে অবসর সময় উপভোগ করা যায়।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৬৩; ২ করি. ৬:১৪; ২ তীম. ২:২২.

আমাদের বিনোদন—এটা কি গ্রহণযোগ্য?

১৬. আমোদপ্রমোদ সম্বন্ধে আমাদের কোন বিষয়টা নির্ধারণ করতে হবে?

১৬ আমরা সংক্ষেপে আমোদপ্রমোদের তিনটে দিক বিবেচনা করেছি—গুণগত মান, পরিমাণ এবং সঙ্গীসাথি। আমরা যদি বিনোদন থেকে উপকার লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদের বিনোদনকে এই প্রতিটা দিক সম্বন্ধে বাইবেলভিত্তিক যে-মান রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তাই, কোনো বিনোদনে রত হওয়ার আগে আমাদের দেখতে হবে যে, সেটা গ্রহণযোগ্য কি না। গুণগত মানের ক্ষেত্রে আমরা জানতে চাই: ‘এর অন্তর্ভুক্ত কী? এটা কি গঠনমূলক, নাকি নিম্নমানের?’ (হিতো. ৪:২০-২৭) পরিমাণের বিষয়ে আমরা জানতে চাই: ‘এর পিছনে আমি কতটা সময় ব্যয় করব? সেই পরিমাণটা কি উপযুক্ত, নাকি অনুপযুক্ত?’ (১ তীম. ৪:৮) আর সঙ্গীসাথিদের বেলায় আমাদের এই বিষয়টা নির্ধারণ করতে হবে: ‘কাদের সঙ্গে আমি বিনোদনে রত হব? সেই সঙ্গীসাথিরা কি ভালো, নাকি খারাপ?’—উপ. ৯:১৮; ১ করি. ১৫:৩৩.

১৭, ১৮. (ক) আমাদের আমোদপ্রমোদ বাইবেলের মানগুলো পূরণ করে কি না, তা দেখার জন্য কীভাবে আমরা নিজেদেরকে পরীক্ষা করতে পারি? (খ) আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৭ কোনো আমোদপ্রমোদ যদি এই তিনটে দিক সম্বন্ধে বাইবেলভিত্তিক যে-মান রয়েছে, সেগুলোর একটাও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তা হলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে, আমরা যদি  এই বিষয়ে নিশ্চিত হই যে, আমাদের বিনোদন এই তিনটে দিক সম্বন্ধে বাইবেলভিত্তিক যে-মান রয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটা পূরণ করে, তাহলে আমাদের বিনোদন যিহোবার গৌরব নিয়ে আসবে এবং আমাদের উপকৃত করবে।—গীত. ১১৯:৩৩-৩৫.

১৮ তাই, যখন বিনোদনের বিষয়টা আসে, তখন আসুন আমরা সঠিক বিষয়টা করার, সঠিক সময়ে করার এবং সঠিক লোকেদের সঙ্গে করার প্রচেষ্টা করি। হ্যাঁ, বাইবেলের এই উপদেশ অনুসরণ করা যেন আমাদের সকলের আন্তরিক ইচ্ছা হয়: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।”—১ করি. ১০:৩১.

[পাদটীকা]

^ এই প্রবন্ধে “বিনোদন” এবং “আমোদপ্রমোদ” শব্দ দুটি সেই সময়কে নির্দেশ করার জন্য একটা অন্যটার বিকল্প শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা আমরা আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসে এমন অবসর সময়ের জন্য আলাদা করে রাখি।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

বিনোদনের ক্ষেত্রে কীভাবে আপনি এই শাস্ত্রপদের নীতিগুলো প্রয়োগ করতে পারেন, যেমন . . .

ফিলিপীয় ৪:৮?

মথি ৬:৩৩?

হিতোপদেশ ১৩:২০?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

কী

[১০ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

কখন

[১২ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

কারা

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের বন্ধুবান্ধব এবং অবসর সময়ের বিষয়গুলো বাছাই করার সময় কীভাবে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?