সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করুন’

‘সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করুন’

‘সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করুন’

“সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন . . . যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি।”—যিশা. ৬১:১, ২.

১. শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য যিশু কী করেছিলেন এবং কেন?

 যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি।” (যোহন ৪:৩৪) ঈশ্বরদত্ত কার্যভার সম্পাদন করার ক্ষেত্রে যিশু তাঁর পিতার চমৎকার গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, লোকেদের প্রতি যিহোবার মহৎ প্রেম। (১ যোহন ৪:৭-১০) প্রেরিত পৌল সেই প্রেমের একটা প্রকাশ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি যিহোবাকে “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। (২ করি. ১:৩) যিশু সেই সময় এই প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন, যখন তিনি যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যা বলা হয়েছিল, তা পালন করেছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৬১:১, ২.) নাসরতের সমাজগৃহে যিশু সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী থেকে পাঠ করেছিলেন এবং এর কথাগুলো নিজের প্রতি প্রয়োগ করেছিলেন। (লূক ৪:১৬-২১) যিশু তাঁর সমগ্র পরিচর্যার সময়, প্রেমের সঙ্গে শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করেছিলেন, তাদের জন্য উৎসাহ এবং মনের শান্তি জুগিয়েছিলেন।

২, ৩. কেন খ্রিস্টের অনুসারীদেরকে অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করার ক্ষেত্রে তাঁকে অনুকরণ করতে হবে?

যিশুর সমস্ত অনুসারীকে, শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করার মাধ্যমে তাঁকে অনুকরণ করতে হবে। (১ করি. ১০:৩৪) পৌল বলেছিলেন: “পরস্পরকে আশ্বাস দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল।” (১ থিষল. ৫:১১) বিশেষভাবে অন্যদেরকে আমাদের আশ্বাস বা সান্ত্বনা প্রদান করতে হবে, যেহেতু মানবজাতি এখন ‘বিষম সময়ে’ বাস করছে। (২ তীম. ৩:১) দিনান্তপর, সারা পৃথিবীর সৎহৃদয়ের লোকেরা এমন ব্যক্তিদের মুখোমুখি হচ্ছে, যাদের কথা এবং কাজ তাদের জন্য তীব্র শোক, মর্মবেদনা এবং দুঃখ নিয়ে আসে।

বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষকালে অনেকে “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্‌বদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে।” এই ধরনের মনোভাব আগের চেয়ে এখন আরও বেশি খারাপের দিকে যাচ্ছে, কারণ ‘দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হচ্ছে।’—২ তীম. ৩:২-৪, ১৩.

৪. আমাদের দিনে জগতের অবস্থা কেমন?

এই সমস্তকিছু দেখে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়, যেহেতু ঈশ্বরের বাক্য এই বিষয়টা স্পষ্ট করে যে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) ‘সমস্ত জগতের’ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং বাণিজ্যিক বিষয়গুলো ও সেইসঙ্গে অপপ্রচার মাধ্যমগুলো। নিঃসন্দেহে, শয়তান দিয়াবলকে উপযুক্তভাবেই “জগতের অধিপতি” এবং “এই যুগের দেব” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। (যোহন ১৪:৩০; ২ করি. ৪:৪) পৃথিবীর অবস্থা দিন দিন মন্দ থেকে মন্দতর হচ্ছে কারণ শয়তান এখন অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে যে, তার হাতে মাত্র অল্পকিছু সময় বাকি রয়েছে আর এরপর যিহোবা তাকে ধ্বংস করে দেবেন। (প্রকা. ১২:১২) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, শয়তান এবং তার মন্দ বিধিব্যবস্থাকে ঈশ্বর আর বেশি দিন সহ্য করবেন না ও সেইসঙ্গে যিহোবার সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে শয়তান যে-বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল, তা মীমাংসা করা হবে!—আদি., ৩ অধ্যায়; ইয়োব ২ অধ্যায়।

পৃথিবীব্যাপী সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে

৫. কীভাবে প্রচার কাজ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণী এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে?

মানবইতিহাসের এই কঠিন সময়ে, যিশু যে-বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, তা পরিপূর্ণ হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার এই কাজ দিন দিন বেড়ে চলছে। বর্তমানে, ৭৫,০০,০০০-রও বেশি যিহোবার সাক্ষি, যারা পৃথিবীব্যাপী ১,০৭,০০০-রেরও বেশি মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করছে, তারা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করছে আর এমনকী যিশুও এটাকে তাঁর প্রচার ও শিক্ষাদানের মূল বিষয় করে তুলেছিলেন। (মথি ৪:১৭) বর্তমান দিনে আমাদের প্রচার কাজের ফলে শোকার্ত ব্যক্তিদেরকে প্রচুর সান্ত্বনা প্রদান করা হচ্ছে। বিগত দুই বছরে ৫,৭০,৬০১ জন ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তাইজিত হয়েছে!

৬. আমাদের প্রচার কাজের ব্যাপকতা সম্বন্ধে আপনি কী মনে করেন?

এই প্রচার কাজের ব্যাপকতা, এই বিষয়টা লক্ষ করার মাধ্যমে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করা যেতে পারে যে, যিহোবার সাক্ষিরা এখন ৫০০-রও বেশি ভাষায় বিভিন্ন সাহিত্য অনুবাদ এবং বিতরণ করছে। সারা মানবইতিহাসে আর কখনো এইরকমটা দেখা যায়নি! যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশের অস্তিত্ব, কাজ এবং বৃদ্ধি সত্যিই অসাধারণ। ঈশ্বরের শক্তিশালী পবিত্র আত্মার নির্দেশনা এবং সাহায্য ছাড়া, শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন এই জগতে এইরকম একটা বিষয় ঘটা কখনোই সম্ভব হতো না। যেহেতু সারা পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে, তাই কেবল আমাদের সহবিশ্বাসীরাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেইসমস্ত শোকার্ত ব্যক্তিরাও শাস্ত্র থেকে সান্ত্বনা লাভ করছে, যারা রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করে থাকে।

সহউপাসকদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করা

৭. (ক) কেন আমরা এইরকমটা আশা করতে পারি না যে, যিহোবা এখনই সমস্ত দুর্দশামূলক পরিস্থিতি দূর করে দেবেন? (খ) কীভাবে আমরা জানি যে, আমাদের পক্ষে তাড়না ও ক্লেশ সহ্য করা সম্ভব?

দুষ্টতায় পরিপূর্ণ এবং দুঃখকষ্টে ভরা এই জগতে নিশ্চিতভাবেই আমরা এমন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হই, যেগুলো দুর্দশা নিয়ে আসে। আমরা এইরকমটা আশা করতে পারি না যে, ঈশ্বর সেই সময়ের আগেই দুঃখ এবং শোকের সমস্ত উৎস দূর করে দেবেন, যতদিন পর্যন্ত না তিনি এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংস নিয়ে আসেন। সেই সময় না আসা পর্যন্ত, ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত তাড়নার মুখোমুখি হওয়ার সময়, তাঁর সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের সমর্থক হিসেবে যিহোবার প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। (২ তীম. ৩:১২) কিন্তু, আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য ও সান্ত্বনার মাধ্যমে আমরা প্রাচীন থিষলনীকীয়ের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মতো হতে পারি, যারা ধৈর্য এবং বিশ্বাস সহকারে তাড়না এবং ক্লেশ সহ্য করেছিল।—পড়ুন, ২ থিষলনীকীয় ১:৩-৫.

৮. যিহোবা যে তাঁর দাসদের সান্ত্বনা প্রদান করেন, সেই সম্বন্ধে কোন শাস্ত্রীয় প্রমাণ রয়েছে?

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা জোগান। উদাহরণস্বরূপ, দুষ্ট রানি ঈষেবলের কারণে ভাববাদী এলিয়ের জীবন যখন হুমকির মুখে ছিল, তখন সেই ভাববাদী সাহস হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং পালিয়ে গিয়েছিলেন, এমনকী এইরকম বলেছিলেন যে, তিনি মারা যেতে চান। কিন্তু, এলিয়কে তিরস্কার করার পরিবর্তে যিহোবা তাকে সান্ত্বনা এবং একজন ভাববাদী হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস প্রদান করেছিলেন। (১ রাজা. ১৯:১-২১) যিহোবা যে তাঁর লোকেদের সান্ত্বনা প্রদান করেন, তা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অভিজ্ঞতা থেকেও দেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এমন একটা সময় সম্বন্ধে পড়ি, “যখন যিহূদিয়া গালীল ও শমরিয়ার সর্ব্বত্র মণ্ডলী শান্তিভোগ করিতে ও গ্রথিত হইতে লাগিল।” অধিকন্তু, “মণ্ডলী . . . প্রভুর [ঈশ্বরের] ভয়ে ও পবিত্র আত্মার আশ্বাসে চলিতে চলিতে বহুসংখ্যক হইয়া উঠিল।” (প্রেরিত ৯:৩১) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, আমাদেরও ‘পবিত্র আত্মার আশ্বাস’ বা সান্ত্বনা রয়েছে!

৯. কেন যিশু সম্বন্ধে শেখা আমাদের জন্য সান্ত্বনাদায়ক হতে পারে?

খ্রিস্টান হিসেবে আমরা, যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে জানার এবং তাঁর পদচিহ্নের অনুগমন করার মাধ্যমে সান্ত্বনা লাভ করেছি। যিশু বলেছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৮-৩০) যিশু লোকেদের সঙ্গে যে-গঠনমূলক উপায়ে আচরণ করতেন, সেই সম্বন্ধে শেখা এবং এরপর তাঁর ইতিবাচক উদাহরণ অনুসরণ করাই সেইসমস্ত চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এক বিরাট সাহায্য, যেগুলোর মুখোমুখি আমরা হয়ে থাকি।

১০, ১১. মণ্ডলীতে হয়তো কারা সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে?

১০ এ ছাড়া, আমরা সহখ্রিস্টানদের মাধ্যমেও সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, যারা দুর্দশামূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তাদেরকে মণ্ডলীর প্রাচীনরা কীভাবে সাহায্য করে থাকে, তা বিবেচনা করুন। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ কি [আধ্যাত্মিকভাবে] রোগগ্রস্ত? সে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা . . . তাহার উপরে প্রার্থনা করুন।” এর ফলাফল কী? “বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু [ঈশ্বর] তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।” (যাকোব ৫:১৪, ১৫) মণ্ডলীর অন্য সদস্যরাও সান্ত্বনা জোগাতে পারে।

১১ নারীরা প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অন্য নারীদের সঙ্গে কথা বলতে সহজ বোধ করে। বিশেষভাবে বয়স্ক এবং আরও অভিজ্ঞ বোনেরা, যুবতী বোনদেরকে অনেক চমৎকার উপদেশ দিতে পারে। এই বয়স্ক পরিপক্ব খ্রিস্টীয় নারীরা হয়তো তাদের জীবনে ইতিমধ্যেই এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তাদের সহানুভূতি এবং নারীসুলভ গুণাবলি অনেক উপকারজনক হতে পারে। (পড়ুন, তীত ২:৩-৫.) অবশ্য, প্রাচীন এবং অন্যেরাও আমাদের মধ্যে অবস্থিত ‘ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা করিতে [‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বলতে,’ NW]’ পারে এবং তা বলা উচিত। (১ থিষল. ৫:১৪, ১৫) আর এই বিষয়টাও মনে রাখা উত্তম যে, ঈশ্বর “আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন, যেন আমরা . . . সমস্ত ক্লেশের পাত্রদিগকে সান্ত্বনা করিতে পারি।”—২ করি. ১:৪.

১২. কেন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

১২ সান্ত্বনা লাভ করার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত থাকা, যেখানে বাইবেলের আলোচনা আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আমরা পড়ি যে, যিহূদা ও সীল “অনেক কথা দ্বারা ভ্রাতৃগণকে আশ্বাস” বা উৎসাহ “দিলেন ও সুস্থির করিলেন।” (প্রেরিত ১৫:৩২) সভাগুলোর আগে এবং পরে, মণ্ডলীর সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে গঠনমূলক কথাবার্তা বলে থাকে। তাই, আমরা যদি এমনকী কোনো দুর্দশামূলক পরিস্থিতির কারণে কষ্টভোগ করে থাকি, তাহলে আসুন আমরা যেন নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে না ফেলি, কারণ তা করলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। (হিতো. ১৮:১) এর পরিবর্তে, আমাদের প্রেরিত পৌলের এই অনুপ্রাণিত পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।”—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

ঈশ্বরের বাক্য থেকে সান্ত্বনা লাভ করুন

১৩, ১৪. কীভাবে শাস্ত্র আমাদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে, তা তুলে ধরুন।

১৩ আমরা বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান অথবা সবেমাত্র ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে শিখছি এমন ব্যক্তি বিশেষ, যে-ই হই না কেন, আমরা ঈশ্বরের লিখিত বাক্য থেকে প্রচুর সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। পৌল লিখেছিলেন: “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) পবিত্র শাস্ত্র আমাদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করতে ও সেইসঙ্গে “পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” করতে পারে। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সত্য জানা এবং ভবিষ্যতের বিষয়ে এক অকৃত্রিম আশা রাখা নিশ্চিতভাবেই প্রচুর সান্ত্বনা জোগাবে। তাই, আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্য এবং সেইসমস্ত বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনার সদ্‌ব্যবহার করি, যেগুলো বিভিন্ন উপায়ে আমাদের জন্য সান্ত্বনা এবং উপকার নিয়ে আসতে পারে।

১৪ যিশু অন্যদেরকে শিক্ষা এবং সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য শাস্ত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেন। উদাহরণস্বরূপ, পুনরুত্থানের পর একবার তিনি যখন দেখা দিয়েছিলেন, তখন তাঁর দুজন শিষ্যের কাছে ‘শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিয়াছিলেন।’ তিনি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন তা তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। (লূক ২৪:৩২) যিশুর চমৎকার উদাহরণ অনুসরণ করে প্রেরিত পৌলও “শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গ” বা যুক্তি ‘করিয়াছিলেন।’ বিরয়াতে তার শ্রোতারা “সম্পূর্ণ আগ্রহপূর্ব্বক বাক্য গ্রহণ করিল, আর এ সকল বাস্তবিকই এইরূপ কি না, তাহা জানিবার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিতে লাগিল।” (প্রেরিত ১৭:২, ১০, ১১) তাই, প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করা ও সেইসঙ্গে এটি এবং অন্যান্য খ্রিস্টীয় প্রকাশনা থেকে উপকার লাভ করা আমাদের জন্য কতই না উপযুক্ত, যেগুলো এই সংকটময় সময়ে আমাদেরকে সান্ত্বনা এবং আশা প্রদান করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে!

অন্যদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করার আরও কিছু উপায়

১৫, ১৬. কিছু বিষয় কী, যা আমরা সহখ্রিস্টানদেরকে সাহায্য ও সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য করতে পারি?

১৫ আমরা বিভিন্ন ব্যবহারিক উপায়ে সহখ্রিস্টানদেরকে সাহায্য করতে আর এভাবে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, বয়স্ক অথবা অসুস্থ সহবিশ্বাসীদের জন্য আমরা হয়তো মুদির দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা করে দিতে পারি। আমরা হয়তো তাদেরকে ঘরের টুকিটাকি কাজে সাহায্য করতে পারি আর এভাবে তাদের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাতে পারি। (ফিলি. ২:৪) আমরা হয়তো সহউপাসকদের বিভিন্ন উত্তম গুণ, যেমন তাদের প্রেম, দক্ষতা, সাহস ও বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রশংসাসূচক কথা বলতে পারি।

১৬ বয়স্ক ব্যক্তিদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারি এবং তারা তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা এবং যিহোবার সেবার সুস্পষ্ট আশীর্বাদ সম্বন্ধে আমাদেরকে যা বলতে চায়, তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারি। এই বিষয়টা হয়তো প্রকৃতপক্ষে আমাদেরকে উৎসাহ ও সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে! যাদের সঙ্গে আমরা দেখা করতে যাই, তাদেরকে নিয়ে আমরা হয়তো বাইবেল অথবা বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পড়তে পারি। আমরা হয়তো সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন থেকে চলতি প্রবন্ধ অথবা সেই সপ্তাহের মণ্ডলীর বাইবেল অধ্যয়নে যে-বিষয়বস্তু আলোচনা করা হবে, তা বিবেচনা করতে পারি। আমরা হয়তো তাদেরকে নিয়ে শাস্ত্রীয় বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ডিভিডি দেখতে পারি। এরপর, আমরাও হয়তো আমাদের প্রকাশনাগুলোতে প্রাপ্ত বিভিন্ন উৎসাহজনক অভিজ্ঞতা পড়তে অথবা বলতে পারি।

১৭, ১৮. যিহোবার অনুগত দাস হিসেবে, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি আমাদের সমর্থন করবেন এবং সান্ত্বনা প্রদান করবেন?

১৭ আমরা যদি লক্ষ করি যে, যিহোবার কোনো সহউপাসকের সান্ত্বনার প্রয়োজন, তাহলে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনার সময় তার সম্বন্ধে উল্লেখ করতে পারি। (রোমীয় ১৫:৩০; কল. ৪:১২) আমরা যখন ব্যক্তিগতভাবে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে অন্যদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করার চেষ্টা করি, তখন আমরা গীতরচকের মতো একই বিশ্বাস এবং দৃঢ়প্রত্যয় রাখতে পারি, যিনি গেয়েছিলেন: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না।” (গীত. ৫৫:২২) সত্যিই, যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের সান্ত্বনা এবং সমর্থন জোগানোর জন্য সবসময়ই প্রস্তুত থাকবেন।

১৮ ঈশ্বর তাঁর প্রাচীনকালের উপাসকদের বলেছিলেন: “আমি, আমিই তোমাদের সান্ত্বনাকর্ত্তা।” (যিশা. ৫১:১২) আমাদের বেলায়ও যিহোবা একই বিষয় করবেন ও সেইসঙ্গে আমরা যখন শোকার্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা প্রদান করি, তখন আমাদের উত্তম কাজে এবং কথায় আশীর্বাদ করবেন। আমাদের আশা স্বর্গীয় অথবা পার্থিব, যা-ই হোক না কেন, আমরা প্রত্যেকে তার আত্মায় অভিষিক্ত সহখ্রিস্টানের উদ্দেশে বলা পৌলের এই কথাগুলো থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আপনি, ও আমাদের পিতা ঈশ্বর, যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, এবং অনুগ্রহ দ্বারা অনন্তকালস্থায়ী সান্ত্বনা ও উত্তম প্রত্যাশা দিয়াছেন, তিনি তোমাদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিউন, এবং সমস্ত উত্তম কার্য্যে ও বাক্যে সুস্থির করুন।”—২ থিষল. ২:১৬, ১৭.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• শোকার্ত ব্যক্তিদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করার বিষয়ে আমাদের কাজ কতটা ব্যাপক?

• কিছু বিষয় কী, যেগুলো আমরা অন্যদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করার জন্য করতে পারি?

• যিহোবা যে তাঁর লোকেদের সান্ত্বনা প্রদান করেন, সেটার কিছু শাস্ত্রীয় প্রমাণ কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি শোকার্ত ব্যক্তিদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করায় অংশ নেন?

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যুবক-বৃদ্ধ সকলেই উৎসাহ দিতে পারে